১০টি ইসলামিক মুচকি হাসির গল্প কাহিনী: পর্ব ৪

এটি “ইসলামিক মুচকি হাসির গল্প” একটি সংকলন, যেখানে ১০টি হালকা-ফুলকা, হৃদয়গ্রাহী এবং মুচকি হাসি এনে দেওয়া গল্প রয়েছে। প্রতিটি গল্পে ইসলামের নৈতিক শিক্ষা, হালকা ব্যঙ্গাত্মক পরিস্থিতি এবং চরিত্রের সরলতা ফুটে উঠেছে।

গল্পগুলোতে খৃষ্টান পাদ্রীর দেয়া “আল্লাহর পুত্র” হাসৌকর যুক্তি, শয়তানের টাকা, দুই অলসের কর্মকাণ্ড, মগের মুল্লুকের আসল ঘটনা সহ বেশ কিছু মুচকির হাসির ঘটনা রয়েছে।

গল্পগুলো যেমন আনন্দদায়ক, তেমনি পাঠকের মনেও ইসলামি মূল্যবোধ গভীরভাবে গেঁথে দেয়। এটি ধর্মীয়তা ও হাস্যরসের এক চমৎকার মিশেল।

৩১. আমার ছেলে এগারটি

বাহাছ বা বিতর্কের দ্বারা কোন সুফল পাওয়া যায় না। প্রতিপক্ষ বিতর্কে পরাজিত হওয়ার পরও সত্যটিকে মেনে নেয় না। ফলে বাহাছের দরুণ ঝগড়া-ফাসাদ আরও বেড়ে যায় ৷

শিক্ষিত লোকেরাও অনেক সময় তর্কের খাতিরে নিজেদের নবীর প্রশংসা করতে গিয়ে প্রতিপক্ষ কওমের নবীর প্রতি বেয়াদবী করে বসে। আর জাহেলদের বিতর্কে বেয়াদবীর মাত্রাটি আরও কঠিন ।

যেমনঃ পশ্চিমাঞ্চলের এক জায়গায় এক খৃষ্টান বক্তৃতা করছিল যে ঈসা আলাইহিস্ সালাম আল্লাহর পুত্র । ঐখান দিয়ে এক গাড়োয়ান মহিষের গাড়ী হাঁকিয়ে যাচ্ছিল। খৃষ্টানের এই কথা শুনে গাড়োয়ানটি স্থির থাকতে পারলো না। লাফ দিয়ে গাড়ী থেকে নেমে খৃষ্টানের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলোঃ আল্লাহর কি আরো কোন পুত্র আছে নাকি ঐ একটাই ?

খৃষ্টান বললো : আর নাই, ঐ একটাই ।

গাড়োয়ান বললো : ব্যাস? এতকালে ব্যাটা তোর আল্লাহর মাত্র একটা ছেলে হলো ? আমি মাত্র কয়েক বৎসর বিয়ে করেছি আমার ছেলে হয়েছে এগারটা–সামনে আরো হবে । তা’ হলে তোর খোদার চেয়ে তো আমিই ভাল হলাম!

এই গোঁয়ারের জওয়াব যদিও যুক্তি-সমৃদ্ধ ছিল যে সত্যিতো, যদি আল্লাহর সন্তান হওয়া সম্ভব হতো তবে এর কী কারণ যে এতকালে তাঁর মাত্র একটি ছেলে হলো ? অথচ তাঁর সামান্য একটি সৃষ্টিজীবেরও অনেকগুলি সন্তান হয়ে থাকে । কিন্তু তার বলার ভঙ্গিটি বড় অশ্লীল । সুতরাং বিতর্ক পরিত্যাগ করাই ভাল ।

উৎস: এলেম ও আমল, পৃষ্ঠা ২৭২।

৩২. শয়তানের টাকা !

দুনিয়ার জীবনটা একটা স্বপ্নের মত । সারাটা জীবন যদি সুখেও কেটে যাগ আর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে যদি শাস্তির জন্যে পাকড়াও করা হয় তবে দুয়ার এই সুখ-শান্তি স্বপ্নের মত মনে হবে। দুনিয়ার জীবনের সাথে নীচের ঘটনাটির বড় মিল রয়েছে :

এক ব্যক্তির অভ্যাস ছিল প্রত্যেক রাত্রে ঘুমন্ত অবস্থায় বিছানায় পেশাব করে দিত। তার স্ত্রী বেচারীকে প্রতিদিন সেগুলি ধুতে হতো। একদিন তার স্ত্রী বললো, “আমি প্রতিদিন পেশাব ধুতে ধুতে হয়রান হয়ে পড়েছি । আর পারি না! আপনার ঘাড়ে কি কোন ভূত চাপে নাকি রাত্রে ?”

লোকটি বললো, “রাত্রের বেলায় স্বপ্নের মধ্যে একটা শয়তান আসে । এসে বলে, “চল তোমাকে বেড়িয়ে নিয়ে আসি ।’ আমি যখন বেড়াতে যেতে উদ্যত হই তখন বলে, ‘পেশাব করে নাও! আগে পেশাবের কাজ সেরে পরে চল ।’ আমি তখন পেশাবখানাতেই পেশাব করছি ভেবে পেশাব করি । পরে দেখি সেটা শোয়ার বিছানা।”

স্ত্রী বললো, “শয়তান তো জিনদের বাদশাহ্। আমরা গরীব মানুষ । তুমি শয়তানকে বল আমাদেরকে কিছু টাকা এনে দিবে। আমাদের এই দুঃখের জীবন শিঘ্রি কেটে উঠবে ।”

স্বামী শয়তানকে বলতে রাজি হলো ।

রাত্রে যখন ঘুমালো তখন আবার স্বপ্নে শয়তান আসলো । শয়তান বললো, “চল বেড়িয়ে আসি।”

লোকটি বললো, “রোজ রোজ খালি হাতে বেড়াতে পারবো না । কোথাও থেকে কিছু টাকা এনে দাও তবে যাই” ।

শয়তান বললো, “এটা আবার এমন কী কঠিন কাজ। টাকা নিতে হলে আমার সঙ্গে চল, যত ইচ্ছা নিয়ে নিও।”

এই বলে সে লোকটিকে এক বাদশাহর ধন ভান্ডারের সামনে নিয়ে দাঁড় করিয়ে দিল । দেখে-শুনে টাকার একটা বিরাট বোচকা ওর মাথায় চাপিয়ে দিল । বোচকাটি এত ভারী ছিল যে তার চাপে লোকটার পায়খানা বাহির হয়ে পড়লো ।

যখন সকাল হলো, দেখে বিছানায় পায়খানার স্তুপ ।

স্ত্রী বললো, “এটা কেমন করে হলো ?”

বললো, “রাত্রে শয়তান আমার মাথায় টাকার তোড়া এত বেশী চাপিয়েছিল যে বোঝার ভারী সহ্য করতে না পেরে ত্রুটিপূর্ণ পায়খানা হয়ে গেছে।”

স্ত্রী বললো, “আগে পেশাব করতেন জনাব সেই ভাল ছিল । আল্লাহর ওয়াস্তে আর পায়খানা করবেন না । আমাদের টাকা-পয়সার দরকার নাই।”

ঘটনাটি অশ্লীল বটে; কিন্তু যদি চিন্তা করা যায় তবে আমাদের জীবনের সাথে লোকটির স্বপ্নের বড় মিল রয়েছে। জীবনটা যেন ঘুমন্ত অবস্থা। মৃত্যু এসে চোখ খুলে দিবে। আমরা তখন বাস্তব জীবনে ফিরে যাবো । নাপাক গুনাহ্ তখন আমাদের সারা অঙ্গে মাখানো থাকবে ।

উৎস: এলেম ও আমল, পৃষ্ঠা ৫৬৯ ।

৩৩.দুই অলস ও একটি কুকুর !

‘আল্লাহর নির্দেশ তাই সাংসারিক কাজগুলি করছি’ এই মনে করে প্রতি কাজের প্রারম্ভে সেই কাজের দোয়াটি পড়ে নিলেই আমরা সারাটা দিন ‘যাকের’ হিসাবে অতিবাহিত করতে পারি। এভাবে আল্লাহ্-ওয়ালা হওয়া খুব সহজ হয়ে যায় । স্ত্রী-পুত্র, ঘর-সংসার, আরাম-আয়েশ কিছুই ছাড়তে হয় না ।

কিন্তু অলসতা মানুষের সহজ কাজগুলিকে যে কত কঠিন করে দেয় তা’ নীচের ঘটনা থেকে বুঝা যাবে ।

বাদশাহ্ বিপদের আশংকা দেখা দিলেই শুধু দেহরক্ষীর প্রয়োজন । কিন্তু এরূপ আশংকা প্রায়ই হয় না। তবু এক বাদশাহ্ দুইজন দেহরক্ষী নিয়োগ করে রেখেছিলেন। এরা নিশ্চিন্তে বসে বসে শুধু বেতন খেতো । ফলে দেহ মোটা এবং অলস হয়ে পড়েছিল । ঘর থেকে বাহির হবে দূরের কথা অলসতার কারণে সামান্য নড়া-চড়াও করতো না । দুই চোখ বন্ধ করে শুধু চিৎ হয়ে পড়ে থাকতো। খাবারও এদেরকে মুখে তুলে দিতে হতো । ফলে শাহী-মহলের লোকেরা এদের উপরে খুব বিরক্ত হয়ে পড়লো ।

একদিন সবাই মিলে এদের ঘরে আগুন ধরিয়ে দিল যেন এরা ঘর ছেড়ে পালায় । কিন্তু পালালো না । আগুন যখন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো তখন চোখ পর্যন্ত খুলে দেখলো না। পুড়ে মরবে ভেবে লোকজন আবার এই মোটা-দুইটিকে অতি কষ্টে টেনে-ছেঁচড়িয়ে ঘরের বহিরে এনে রাখলো। আর সম্ভব নয় এদের খেদমত করা–দূরে এক জঙ্গলে নিয়ে রেখে আসলো ।

এই বিরাট জঙ্গলে দেখা-শুনা করার মত আর কেউ থাকলো না । স্থির হলো–একজন শুয়ে থাকবে দ্বিতীয়জন তাকে পাহারা দিবে। পরের দিন দ্বিতীয়জন শুবে প্রথমজন তার খেদমত করবে। এইভাবে পালাক্রমে দেখা-শুনার কাজ চলতে লাগলো ।

একদিন এক যোদ্ধা ঘোড়ায় চড়ে এদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। যে-লোকটি শুয়ে ছিল সে তাকে ডাকলো, “এই ভাই যোদ্ধা একটু এদিকে এসো তো!”

সিপাহী কাছে গিয়ে বললো, “কী হয়েছে ? বললো,

“আমার বুকের উপরে যে বরইটি রয়েছে একটু আমার মুখে তুলে দাও তো!”

সিপাহী বললো, “বেটা কমবখ্ত! আমি ঘোড়া থেকে নেমে তোর মুখে বরই দিতে যাবো ? তুই নিজ হাতে মুখে গুঁজে নিতে পারছিস্ না ?”

বললো, “এখন কে যাবে জনাব হাত নেড়ে বরই ধরতে !”

পাশে বসে থাকা অলসটিকে সিপাহী বললো, “তুই ওর মুখে এই বরইটা তুলে দে।” 

সে ঝটকা মেরে বললো, “এমন কথা বলবেন না জনাব! আপনি ভিতরকার ব্যাপার জানেন না। গতকাল আমার শুয়ে থাকার পালা ছিল আর সে তখন বসে ছিল। আমি হাই তুলেছিলাম। আমার হা করা মুখে একটা কুকুর এসে পেশাব করে গেল অথচ এই হতভাগাটা কুকুরটাকে তাড়ালো না পর্যন্ত! আর আজ আমি তার মুখে বরই তুলে দিব ?”

এই ঘটনাটি দেখুন। কত সহজ কাজটিকে অলসতার কারণে কঠিন করে রেখেছে এরা । আর আমরা যে কত সহজে আল্লাহ্ ওয়ালা হয়ে যেতে পারি তা’ একবার ভেবেও দেখি না। –এলেম ও আমল, পৃষ্ঠা ৬৪১ ৷

৩৪. মগের মুল্লুকের আসল ঘটনা!

‘আল্লাহ’ শব্দটির সঙ্গে সম্মান সূচক শব্দ যুক্ত না করা জায়েয আছে। কারণ শব্দটি তাঁর একত্ব নির্দেশনা করছে। দ্বিতীয়তঃ এই শব্দটির যিকির অধিক পরিমাণে করা হয়, অন্য শব্দ যুক্ত করলে যিকির কঠিন হয়ে যায় ।

তবে আল্লাহর ব্যাপারে তখনই বেয়াদবী হবে যখন কোন জোয়ান ব্যক্তির মৃত্যুর কারণে কেউ বলে, “হায়, হায়, কী অসময়ে লোকটির মৃত্যু হলো, ছোট ছোট বাচ্চা রয়ে গেছে এরা বড়ও হতে পারলো না!” এই কথার দ্বারা সে স্পষ্টতঃ আল্লাহকে দায়ী করে বসেছে যে এই মৃত্যুটি যথাসময়ে না হয়ে অযৌক্তিকভাবে অসময়ে ঘটে গেছে ।

তখন কোন ‘বুদ্ধিমান’ ব্যক্তি এসে বলে, “ভাই, তকদীরে যা’ ছিল তাই হয়েছে। তকদীরের লেখা থেকে বাঁচার কোন পথ নাই। আল্লাহ্ পাক বড় বে-পরোয়া ।’ “”

এই লোকটিও মৃত্যুর জন্যে আল্লাহ্ বে-পরোয়া হওয়াকে দায়ী করলো । নাউযুবিল্লাহ্! তবে কি আল্লাহ্ ব্যবস্থাপনায় কোন শৃঙ্খলা নাই ? তাঁর কি মানুষের উপরে রহম নাই ? তাঁর রাজত্ব কি মগের মুল্লুকের রাজত্বের ন্যায় ? ইনসাফ ও দয়া বলতে কিছু নাই ?

মগের মুল্লুকের ঘটনা নামে একটি গল্প সাধারণ লোকের মধ্যে প্রচলিত আছে ।

এক গুরু সফরে বাহির হয়েছিল । সঙ্গে তার চেলা ছিল ।

এক দেশের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় দেখে সেখানে সব জিনিষের একই দাম । দুধও এক টাকায় ষোল সের। ঘি-ও এক টাকায় ষোল সের। তেলও এক টাকায় ষোল সের।

গুরু তার চেলাকে বললো, “এটাই হলো সেই মগের মুল্লুক যেখানে ইনসাফ ও দয়া বলতে কিছুই নাই । সব জিনিষের একই দাম। তার মানে এখানে ছোটতে বড়তে কোন পার্থক্য নাই। সুতরাং এখানে বাস করা বিপদজনক হবে । চল এখান থেকে শিগগির পালাই ।’

চেলা বললো, “না। এখানে ঘি আর দুধ খুব সস্তা। এখানেই থেকে যান। দুধ-ঘি খুব খাওয়া যাবে।”

গুরু বললো, “ঠিক আছে । তবে বিপদ আছে।’

চেলা মজা করে কিছুদিন খুব খেলো। খেয়ে দেয়ে একেবারে মোটা হয়ে পড়লো । কিছুকাল পরে একদিন রাজ দরবার হয়ে অতিক্রম করার সময় দেখতে পেলো সেখানে একটি মকদ্দমা পেশ করা হয়েছে। মোকদ্দমাটি ছিল এইরূপঃ

দুই চোর চুরি করতে গিয়ে এক বাড়ীতে সিঁধ কাটলো। একজন বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিল আরেকজন সিঁধের ভিতরে ঢুকলো। সিঁধের উপরের দেওয়াল ধ্বসে পড়লো। ফলে চোরটি মারা গেল । বেঁচে থাকা চোরটি এই বলে বাদী হয়েছে যে ইঁট পড়ে আমার বন্ধু মারা গেছে সুতরাং বাড়ীওয়ালার ফাঁসী চাই । 
,
রাজা বাড়ীওয়ালাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলো, “এরকম বাড়ী বানানোর উদ্দেশ্য কী ছিল ? তোমার ফাঁসীর হুকুম হলো । কোন কথা থাকলে বল ।’

বাড়ীওয়ালা বললো, “হুজুর আমি নির্দোষ । কাজটি ছিল রাজমিস্ত্রীর। আমি এ কাজ করিনি।”

রাজা জল্লাদকে বললো, “একে ছেড়ে দাও। রাজ মিস্ত্রিকে ডাকো।” সুতরাং রাজমিস্ত্রীকে ডাকা হলো ।

রাজমিস্ত্রী বললো, “যোগানদার বালি মাখাতো। সে পাতলা ‘গারা’ এনেছিল যার দরুণ গাঁথুনি মজবুত হয়নি । আমি নির্দোষ।”

রাজা জল্লাদকে বললো, “একে খালাস দাও। যোগানদারকে ফাঁসী দাও।”

অতঃপর যোগানদারকে ফাঁসির মঞ্চে ডেকে জেরা করা হলো ।

যোগানদার বললো, “এটা পানিওয়ালার কাজ। সে পানি বেশী ঢেলে ফেলেছিল যার দরুণ ‘গারা’ পাতলা হয়ে গেছে। আমার কোন দোষ নাই ৷”

রাজা বললো, “জল্লাদ! একে ছেড়ে দাও। পানিওয়ালাকে ডাক । পানিওয়ালাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করা হলো ।

সে বললো, “আমার দোষ নাই। সে-সময় একটা হাতী ক্ষেপে গিয়েছিল; হাতীটি ছুটে আমার দিকে আসছিলো। আমি ভয়ে থতমত খেয়ে গিয়েছিলাম। তাই পানি বেশী পড়ে গিয়েছিল। সুতরাং হাতীর দোষ ।”

রাজা বললো, “একে খালাস দাও । হাতীর মাহুতকে ডাকো ।”

মাহুত বললো, “দোষ আমার নয়। একটি মেয়েলোকের দোষ। মেয়েলোকটি হাতীর পিছনে পিছনে আসছিল । তার চুড়ির আঘাত কাঁখের কলসে লেগে এমন এক আওয়াজ সৃষ্টি করেছিল যার দরুণ আমার হাতী ক্ষেপে গিয়েছিল”।

রাজা বললো, “এই মাহুতকে ছেড়ে দাও! মেয়েলোকটিকে ফাঁসি দাও।”

সুতরাং সেই মেয়েলোকটিকে ফাঁসির মঞ্চে ডাকা হলো ।

মেয়েলোকটি বললো, “আমার দোষ নয়। দোষ স্বর্ণকারের। সে-ই আমাকে চুড়ি বানিয়ে দিয়েছিল।”

রাজা মেয়ে লোকটিকে ছেড়ে দিতে বললো এবং স্বর্ণকারকে হাজির করতে নির্দেশ দিল।

স্বর্ণকারকে ডাকা হলো ।

স্বর্ণকার কোন জওয়াব দিতে পারলো না । তার বাপ-দাদা বেঁচে নাই । তাদের কাছ থেকে শেখা কাজ সে করে এসেছে এতকাল । আজ তাদেরকে এই কাঠগড়ায় হাজির করাও যাবে না, জিজ্ঞাসাও করা যাবে না—কেন তারা তাকে একাজ শিখিয়েছে। তাই সে চুপ করে রইল । সুতরাং বেচারার ফাঁসির হুকুম হয়ে গেল ।

তাকে ফাঁসির মঞ্চে নেওয়া হলো । জল্লাদ আসলো । ফাঁসি দিতে গিয়ে দেখে তার গলার চেয়ে দড়ির ফাঁস বড়। রাজাকে জানানো হলো ।

রাজা বললো, “ঠিক আছে, স্বর্ণকারকে ছেড়ে দাও। যার গলা মোটা তাকে ফাঁসি দিয়ে দাও।”

রাজদরবারে যত মানুষ ছিল তাদের মধ্যে সেই চেলাটিই ছিল সব চেয়ে মোটা। তাকেই ফাঁসির মঞ্চে আনা হলো ।

চেলা বড় বিপদে পড়ে গেল । সে গুরুকে ধরে বললো, “গুরু আমাকে গুরু বললো, “ব্যাটা আমি তোকে আগেই বলেছিলাম এদেশে থাকা খুব বিপদ হবে । এখন দুধ-ঘি খাওয়ার মজা দেখ ৷”

চেলা বললো, “আমি তাওবা করলাম, গুরু এবার আমাকে বাঁচিয়ে নিন। আর জীবনে কোন দিন আপনার কথার বিরুদ্ধে যাবো না। যা’ বলবেন তাই শুনবো ।

গুরু এইবার জল্লাদকে বললো, “ওকে ছেড়ে দাও। আমাকে ফাঁসি দাও।”

এই দেখে চেলা ভাবলো, আমাকে বাঁচানোর জন্যে গুরু ফাঁসিতে চড়বেন ? এটা কিছুতেই সম্ভব হতে পারে না। আমি বেঁচে থাকবো আর গুরুর ফাঁসি হবে ? তা’ আমি বেঁচে থাকতে হতে দিব না।

সে জল্লাদকে বললো, “কখনও না । ফাঁসি আমাকে দাও।”

গুরু বললো, “না। ফাঁসি আমাকে দিতে হবে” ।

এই নিয়ে দুইজনে তুমুল ঝগড়া। এ বলে আমাকে দাও, ও বলে আমাকে দাও ফাঁসি । এখন কাকে দিবে ফাঁসি ? জল্লাদ ব্যাপারটি রাজাকে জানালো ।

রাজা গুরুকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলো, “কি হয়েছে তোমার ? তুমি কেন ফাঁসিতে যেতে চাও ?”

গুরু বললো, “হুযূর, আমি জানতে পেরেছি, এখন এমন একটি লগ্ন যখন কেউ ফাঁসি লাভ করবে সঙ্গে সঙ্গে বৈকুণ্ঠ স্বর্গে চলে যাবে । এই জন্যে আমি চাই ফাঁসিটা আমাকেই দেওয়া হউক।”

রাজা বললো, “তাই যদি হয় তবে বৈকুণ্ঠে আমি যাবো সবার আগে । ফাঁসি আমাকে দাও ।

রাজার আগে বৈকুণ্ঠ যেতে কেউ সাহস করলো না। সুতরাং আর কোন ঝগড়া হলো না ।

রাজার ফাঁসি হয়ে গেল । দেশ ঠান্ডা হলো ।

গুরু চেলাকে বললো, “আর এক মুহূর্ত এদেশে নয়। চল এদেশ থেকে কেটে পড়ি। এদেশ নিরাপদ নয়।”

এটাকে যদিও একটি খামখেয়ালী গল্প বলে মনে হচ্ছে কিন্তু বিশৃঙ্খলা এবং অন্যায় অত্যাচারের একটি সুন্দর চিত্র আঁকা হয়েছে এখানে ।

মানুষ আজকাল আল্লাহকে প্রায় যেন সেই রকমই ভেবে রেখেছে। তাই আল্লাহ্ সম্পর্কে ‘বেপরোয়া’ শব্দটি ব্যবহার করে আল্লাহকে বলতে চায় তিনি সামঞ্জস্যহীন, উদ্দেশ্যহীন এবং বিনা প্রয়োজনে কোন কিছু করে থাকেন। যে-সকল ক্ষেত্রে এই শব্দটি ব্যবহার করা হয় তাতে কুফুরীতে পতিত হতে হয়। কিন্তু একমাত্র দেওবন্দী ওলামাদের উদারতা যে তারা এদেরকে কুফুরীর ফতোয়া দেন না। কারণ শব্দটির এইরূপ ব্যবহারের সময় তাদের কুফুরী করার নিয়ত থাকে না। আর এটা জানেও না কিসে কুফুরী হয় ।

উৎস: এলেম ও আমল, পৃষ্ঠা ৬২৫ ।

৩৫. প্রকৃত বোকা!

আজকাল মানুষকে যখন কেউ প্রশংসা করে তখন তাকে সে নির্ভরযোগ্য হিসাবে ধরে নিয়ে সত্যি সত্যি নিজেকে ভাল মনে করে বসে। একবার ভেবেও দেখে না যে সে আল্লাহর কাছেও ভাল কিনা ।

এক নাপিতনী তার প্রতিবেশী এক মেয়েলোককে নাকের নথ খুলে মুখ ধুতে দেখেছিল । নথ খুলতে দেখে ভাবলো মেয়েটি বিধবা হয়ে গেছে । দৌড়ে গিয়ে তার নাপিতকে বললো, “বসে দেখছো কী ? শিগগির গিয়ে মেয়েটির স্বামীকে খবর দাও– তার স্ত্রী বিধবা হয়ে গেছে ।

নাপিত তাড়াতাড়ি উঠি-পড়ি করে মেয়েটির স্বামীর কাছে গিয়ে বলতে লাগলো, “হুযূর, বরবাদ হয়ে গেছে! আপনার স্ত্রী বিধবা হয়ে গেছে।”

এই খবর শোনা মাত্র লোকটি ডুকরিয়ে কাঁদতে লাগলো, “হায় আমার কি হবে ?”

বন্ধুরা সব ছুটে আসলো। জিজ্ঞাসা করলো, “কাঁদছো কেন ? খুলে বল কী হয়েছে ?”

বললো, “সর্বনাশ হয়েছে । আমার স্ত্রী বিধবা হয়ে গেছে।

বন্ধু বললো, “জ্ঞান বুদ্ধি লোপ পেয়েছে নাকি তোমার ? তুমি সশরীরে জীবন্ত বসে আছ আর তোমার স্ত্রী বিধবা হয়েছে ?”

লোকটি বললো, “হাঁ, তা তো ঠিকই। জীবিতই তো আছি। কিন্তু খবর যে নির্ভরযোগ্য লোক দিয়েছে! না কেঁদে পারি না।”

সেইরূপ আজকাল মানুষ নিজের প্রশংসাকারীকে নির্ভরযোগ্য মনে করে আত্মভোলা হয়ে পড়ে এবং গুনাগার হওয়া সত্ত্বেও নিজেকে নেককার ভেবে থাকে।

আল্লাহ্ তাকে ভাল বললো কিনা সেদিকে লক্ষ্য নাই। এরা হলো প্রকৃত বোকা ।

৩৬. বিয়ের সাজে সজ্জিত বধূর উক্তি!

এ প্রসঙ্গে মুযাফ্ফর নগরের একটি ঘটনা আছে। সেখানে এক বিয়েতে কনেকে সুন্দর করে সাজিয়ে তার বান্ধবীরা পাল্কীতে তুলে দেওয়ার সময় চিবুক স্পর্শ করে বললো, “সখি আজ তোমাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।”

কনে বললো, “তোমরা শত শত বান্ধবীও যদি আমাকে সুন্দর বল তবু আমি সুন্দর হতে পারি না সখি, যতক্ষণ না সেই একজন আমাকে সুন্দর বলছে যার জন্যে আমার এত সাজ গোজ” ।

সত্যি, কত সত্য কথা! যার জন্যে আমাদের জীবন মরণ সেই আল্লাহ্ যদি আমাদেরকে ভাল না বলেন তবে লোকে ভাল বললে কী যায় আসে ?

উৎস: এলেম ও আমল, পৃষ্ঠা ২৯২ ।

৩৭. মুল্লা মাহমুদের জানাযা!

অনেক ‘মওলানা’ আছে যারা একেবারে জাহেল হয়। বরং কথাটি এইভাবে বলা যায় যে অনেক জাহেল আছে যারা মওলানা হিসাবে খ্যাতি লাভ করে বসে।

অথচ মওলানা শুধু তাকেই বলা যাবে যে আল্লাহ্-ওয়ালা হবে এবং আল্লাহওয়ালা হতে হলে শরীয়তের জ্ঞান থাকতে হবে ।
কিন্তু আজকাল যারা দুই চারটি আরবী উর্দু কেতাব পড়েছে তাকেই মওলানা হিসাবে প্রসিদ্ধ করে দেয়। যদিও সেই কেতাবগুলি সাহিত্য অথবা দর্শনের বিষয় হয়।

যদি শুধু দর্শন পাঠ করেই মওলানা হওয়া যেতো তবে এরিষ্টটল বড় মওলানা। অথচ তার একত্ববাদী হওয়ার ব্যপারেও প্রশ্ন আছে। আর যদি আরবী সাহিত্য পাঠ করে মওলানা হওয়া যেতো তবে আবু জেহেল সবচেয়ে বড় মওলানা। কারণ তার আরবী ভাষা ও সাহিত্যে অসাধারণ জ্ঞান ছিল। সুতরাং দর্শন বা আরবী সাহিত্য পড়ে মানুষ মওলানা হতে পারে না।

মুল্লা মাহমুদ জৌনপুরী তাঁর যুগে একজন বড় মওলানা হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। অথচ তিনি ছিলেন একজন দার্শনিক মাত্র। শরীয়তের এলেম তার ছিল না। কিন্তু প্রসিদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন খুব। এমন কি দিল্লীর বাদশাহও নিজের দরবারে ডেকে নিয়ে তাকে খুব সম্মান দেখালেন । এক ‘মৌলবী’ আগে থেকেই সেই দরবারে খুব প্রিয় ছিল । এই লোকটি ভাবলো মুল্লা মাহমুদ যদি বাদশাহর প্রিয় হয়ে যায় তবে আমার কোন মর্যাদা থাকবে না। তাই কিভাবে বাদশাহর কাছে প্রমাণিত করা যায় যে মুল্লা মাহমুদ একজন জাহেল সেই চেষ্টায় থাকলো। অল্প বিদ্যার মৌলবীদের যেমন হিংসা রোগ থাকে এই লোকটিরও তেমনি ছিল ।

একদিন একটি জানাযা আসলো। সবাই আগ্রহ করে নবাগত ‘মওলানা’ মুল্লা মাহমুদকে জানাযায় ইমামতি করতে দাঁড় করিয়ে দিল । মৌলবী সাহেব তার হিংসা চেপে রেখে পিছন থেকে এগিয়ে এসে মুল্লা মাহমুদের কানে কানে বলে দিল, “জানাযায় লোক অনেক বেশী হয়েছে দূরের লোক যেন শুনতে পায় কেরাত একটু জোরে পড়বেন।”

মুল্লা মাহমুদ “আল্লাহু আকবর” বলে জানাযার নিয়ত বেঁধে জোরে জোরে সূরা কেরাত ইত্যাদি পড়তে শুরু করে দিয়েছেন। পিছনের লোকজন নামায ছেড়ে দিয়ে হৈ চৈ শুরু করে দিল, “র্কে এইটা, জানাযার নামাযও পড়তে জানে না ? জানাযার নামাযে সূরা কেরাত পড়তে শুরু করে দিয়েছে”? ইত্যাদি ।

অবশেষে তাকে ইমামতি থেকে পিছনে আনা হলো এবং তার জাহালতির কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লো ।

মোটকথা অনেক জাহেল আছে তারা আলেম হিসাবে প্রসিদ্ধি লাভ করে দেশের বাদশাহ্র কাছেও মর্যাদা পেতে পারে ।

উৎসঃ এলেম ও আমল, পৃষ্ঠা ২০২ ।

৩৮. বিয়ে বড় মজার জিনিষ!

শরীয়তের বিধানগুলি এত সহজ এবং পরিচ্ছন্ন যে ওহী নাযেল না-ও যদি হতো তবু একজন স্বচ্ছ অন্তরের অধিকারী এই বিধানগুলি চিনে নিতে পারতো যে এগুলিই আল্লাহর বিধান । যারা এই বিধানগুলি চিনতে পারে না তাদের জীবনে বিপর্যয় নেমে আসে।

এক হাফেয তার ছাত্রদেরকে খুব মার-ধর করতেন। ছাত্ররা ভাবলো এই হাফেয সাহেবের বিয়ে করিয়ে দেওয়াই উচিৎ।

সবাই এক জোট হয়ে হাফেয সাহেবের সামনে বলাবলি করতে লাগলো, “বিয়ে বড় মজার জিনিষ ।”

“বিয়ে বড় মজার জিনিষ” কথাটি যেন হাফেয সাহেবের একেবারে অন্তরে গেঁথে গেল । তিনি সব সময় ভাবতে লাগলেন— ‘বিয়ে বড় মজার জিনিষ ।

একদিন বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্যে ছাত্রদেরকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোরা যে বলিস্ ‘বিয়ে বড় মজা’- সত্যি কি তাই ?”

ছাত্ররা সবাই এক সঙ্গে বলে উঠলো, “হাঁ হুযূর, বিয়ে বড় মজার জিনিষ ।”

হাফেয সাহেব অনেক চেষ্টা করে একটা মেয়ে বিয়ে করে আনলেন । রাত্রে যখন মেয়েটি ঘরে আসলো তখন তিনি মেয়ের গায়ে রুটি ভরিয়ে ভরিয়ে খেলেন। কিন্তু কোন মজা পেলেন না ।

পরদিন সকালে ছাত্রদের কাছে গিয়ে বললেন, “তোরা বললি, “বিয়ে খুব মজার জিনিষ’– আমি রুটি ভরিয়ে খেয়ে দেখলাম। কোন মজা পেলাম না।”

ছাত্ররা বললো, “মারতে হয় জনাব, মারতে হয় । মারলে মজা পাওয়া যায়।”

পরদিন রাত্রে হাফেয সাহেব বেচারী মেয়েটিকে খুব মারলেন । এত মারলেন যে পাড়ায় তোলপাড় শুরু হয়ে গেল । লোকজন ছুটে এসে হাফেয সাহেবকে খুব গালাগালি করলো। হাফেয সাহেব বিপদে পড়লেন । মজা কিছুই পেলেন না। শুধু গালাগালির চোটে অপমানে তার গা কাঁপতে লাগলো। অতঃপর সব আশা ছেড়ে দিয়ে নিরিবিলি মুখ ভার করে বসে
এক ব্যক্তির দয়া হলো। সে তাকে সাহায্য করলো। হাফেয সাহেবের কাছে গিয়ে তার কানে কানে বিবাহের হাকীকত বুঝিয়ে দিল ।

পরের রাত্রে হাফেয সাহেব আবার বউয়ের কাছে গেলেন । আজ তিনি বিবাহের হাকীকত অনুযায়ী আমল করলেন। দেখলেন সত্যি মজা! সারা দেহে যেন তার আনন্দের ঢেউ খেলে গেছে ।

কারণ এবার তিনি মনুষ্য প্রকৃতি অনুযায়ী আমল করেছেন ।

এই প্রাকৃতিক বিধান দেখানোর জন্যেই ওহী এসে মানুষকে সাহায্য করেছে। কারণ সব মানুষের অন্তর এত স্বচ্ছ নয় যে সে নিজের সঠিক প্রকৃতিটি বুঝে নিতে পারবে।

মানুষ তার জীবনের প্রতিটি কাজে এই ওহীর অনুসরণ করে এক বেহেশতী স্বাদ ভোগ করতে পারে। যা’ রাসূলের সুন্নত পালনের মাধ্যমে সম্ভব ।

উৎস: আল-এফাযাতুল য়্যাওমিয়্যাহ্; খন্ড ২, পৃষ্ঠা ২৭৩।

৩৯. হাতীর ঘটনা!

ইসলাম সম্পর্কে আমাদের অভিজ্ঞতা হলো ঠিক অন্ধ ব্যক্তির মতন । অন্ধ লোকদের শহরে একবার এক হাতী এসে পড়েছিল। হাতী দেখতে অন্ধের দল সব হাজির হলো। কিন্তু চোখ নাই হাতী দেখবে কি দিয়ে ?

হাতীর ছবি।
ছবিঃ হাতী। উৎস: উইকিপিডিয়া

অগত্যা সবাই হাত দিয়ে হাতড়িয়ে হাতী দেখতে লেগে গেল । কারো হাত লেজে, কারো হাত কানে, কারো হাত পায়ের উপর পড়লো । আবার কেউ হাতড়িয়ে শুধু শুঁড় ধরতে পারলো। এভাবে হাতী দেখা সমাপ্ত করে সবাই একটি জায়গায় মিলিত হলো হাতী কেমন ছিল দেখতে বলাবলি করতে লাগলো ।

কেউ বললো, “হাতী দেখতে একটা মোটা সাঁপের মত।” এই লোকটির হাত শুঁড়ের উপর পড়েছিল । আর যার হাত কানের উপর পড়েছিল সে বললো, “কখনও না, তুমি ভুল দেখেছো। হাতী দেখতে ঠিক একটা কুলার মত ।” যার হাত পায়ের উপর পড়েছিল সে বললো, “তোমাদের একজনের কথাও ঠিক নয় । হাতী দেখতে ঠিক যেন একটা মোটা খাম্বা । কিন্তু যে লেজ ধরতে পেরেছিল সে উত্তেজিত হয়ে বলে উঠেলো, “তোমরা কেউ হাতী দেখতে পাওনি। হাতী আমি দেখেছি । হাতী হলো ঠিক একটা ঝাঁটার মত ।”

এই কথা শুনে সবাই রেগে গেল। তুমূল ঝগড়া শুরু হয়ে গেল । এ বলে আমারটা ঠিক, ও বলে আমারটা ঠিক । কিন্তু কার কথা ঠিক ?

যদি চিন্তা করে দেখা যায় তবে সবাই সত্যবাদী। কারণ হাতড়ানোর ফলে ওরা যা’ জানতে পেরেছিল তাই বলেছিল। আবার সবাই মিথ্যাবাদী। কারণ হাতীকে নিজের হাতড়িয়ে পাওয়া আকৃতিতে কেন মেনে নিল ? হাতীর একটি অংশকে পূর্ণ হাতী হিসাবে কেন গ্রহণ করলো ? হাতী তো কোন একটা অংশের নাম নয় । যদি সবাই বলতো আমরা একটি মাত্র অংশ দেখেছি তবে সব ঝগড়া মিটে যেতো।

আমরাও ইসলাম সম্পর্কে এই পন্থাই অবলম্বন করেছি। ইসলামের এক একটি অংশ মাত্র গ্রহণ করে নিজেকে দীনদার ভেবে নিয়েছি। শুধু তাই নয়, গ্রহণ করা একটি অংশের মধ্যেই ইসলামকে সীমাবদ্ধ মনে করেছি। আমার গৃহীত অংশটি অন্যের মধ্যে যদি না থাকে তবে তাকে বে-দীন বলে গালি দিয়ে থাকি । কয়েকজন লোক জামার মালিক হতে চেয়ে যদি কেউ জামার হাতা পরে, কেউ গলা পরে, কেউ পীঠের কাপড় আর কেউ শুধু পেটের কাপড় পরে তবে এই খন্ড খন্ড করে গায়ে দিয়ে জামার মালিক হওয়া যাবে না। কারণ জামা বলা হয় এসব কিছুর মিলিত সমষ্টিকে। যে ব্যক্তি এসবের সমষ্টি একত্রে গায়ে দিয়েছে তাকেই বলা যাবে জামার মালিক ।

এভাবে ইসলামী তাকেই বলা হবে যার মধ্যে ইসলামের সকল অংশই একত্রে মিলিত হয়েছে।

উৎস: এলেম ও আমল, পৃষ্ঠা ৭০৩ ।

১০. ফাস্ট ক্লাস ও থার্ড ক্লাস!

অশিক্ষিত লোকেরাও অনেক সময় যুক্তির বলে শিক্ষিত প্রতিপক্ষকে স্তব্ধ করে দিতে পারে। সত্যের পক্ষে থাকলে এ রকমই হয়। আর মিথ্যার পক্ষ নিলে যত বড় শিক্ষিতই হোক পরাজিত হয়ে যাবে।

যেমনঃ এক বিত্তবান ব্যক্তি ছিল। সে লেখাপড়া কিছুই জানতো না । এমন কি দস্তখতও করতে জানতো না। শুধু একটি সীল বানিয়ে নিয়েছিল দস্তখতের জায়গায় সেই সীলের ছাপ মেরে দিত । এভাবেই তার চলতো ।

একদিন সে সফরের উদ্দেশ্যে তার গ্রাম থেকে রেল ষ্টেশনের দিকে যাত্রা করলো। পথে এক পাদরী তার খৃস্টান ধর্মটি সত্য হওয়ার যুক্তি দিয়ে বক্তৃতা শুরু করে দিয়েছিল ।

পাদরী বলতে লাগলো, “পৃথিবীর পাঁচ শ’ কোটি মানুষের মধ্যে খৃষ্টান জন সংখ্যাই বেশী । সুতরাং খৃষ্টানরাই আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় হবে। বাকী সবাই পথ ভ্রস্ট হয়েছে।”

এই কথা শুনে সেই অশিক্ষিত লোকটি তার সওয়ারী থেকে নেমে খৃষ্টানটির কাছে গিয়ে বললো, “আমার সঙ্গে রেল ষ্টেশনে চল । সেখানে আমি তোমাকে বুঝিয়ে দিব জনসংখ্যায় বেশী যারা তারাই ভাল না জনসংখ্যায় কম যারা তারা ভাল ।

পাদরী বললো, “কেমন করে বুঝা যাবে ?”

লোকটি বললো, “রেলগাড়ীতে ফাষ্টক্লাসে লোক বেশী থাকে না থার্ড ক্লাসে বেশী থাকে ?”

পাদরী বললো, “ফাষ্ট ক্লাসে কম আর থার্ড ক্লাসে বেশী লোক থাকে।”

লোকটি বললো, “তেমনি আমরা মুসলমান জনসংখ্যায় কম আমরা হলাম ফাষ্ট ক্লাস। আর তোমরা জনসংখ্যায় বেশী তোমরা হয়েছো থার্ড ক্লাস ।” পাদরী নির্বাক স্তব্ধ । আর কোন জওয়াব দিতে পারে না ।

উৎস: এলেম ও আমল,পৃষ্ঠা ২৬৩ ।

আরও ইসলামিক মুচকি হাসির গল্পের সংযুক্তি নিচে উল্লেখ করা হলো: 

01. দশটি ইসলামিক মজার গল্প (মুচকি হাসির গল্প ৩)

02. দশটি শিক্ষামূলক ইসলামিক হাসির গল্প (২)

03. ১০ টি ইসলামিক হাসির গল্প (মুচকি হাসির গল্প ১)

আপনি আরও পড়তে পারেন..

বুদ্ধিমতি মেয়ে (চোর ধরার মজার গল্প)

আবু গারিব কারাগারের নির্যাতনের গল্প

এক সাহসী বীরঙ্গনা (মহিলা সাহাবীর যুদ্ধের গল্প)

প্রিয় পাঠক পাঠিকা, আশা করি এই ইসলামিক মুচকি হাসির গল্প সংকলন টি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে এবং এটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ। 

Leave a Comment

Discover more from Amar Bangla Post

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading