অন্যের প্রশংসা করুণ (লাইফস্টাইল টিপস)

কিভাবে অন্যের প্রশংসা করবেন? 

আমরা নিজের জন্য যেমন কাজ করি তেমনি অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যও অনেক কাজ করে থাকি। আপনাকে যখন কোনো বিবাহের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয়া হয়। তখন সে অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য আপনি আপনার সবচেয়ে দামী ও সুন্দর পোশাকটি পরিধান করেন। কেন এমন করেন? অবশ্যই অন্যের মনোযোগ আকর্ষণ করতেই এমন করেন। নিজের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য নয়।

আমাদের পোশাক ও আকারে-অবয়বের সৌন্দর্যে কেউ আকৃষ্ট হলে আমরা খুশি হই। ড্রইংরুমে বা অভ্যর্থনাকক্ষের সাজ—সজ্জার বিষয়টিতে আমরা কত গুরুত্ব দিই! এটাও আমরা করে থাকি শুধু অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য। নিজের জন্য নয়। এর প্রমাণ হলো, আমরা অভ্যর্থনাকক্ষের পরিপাটির ব্যাপার যতটা সচেতন, নিজেদের বেডরুম কিংবা বাচ্চাদের গোসলখানার ব্যাপারে ততটা সচেতন নই।

প্রশংসা । প্রশংসা করার নিয়ম

কোনো বন্ধুকে খাওয়ার জন্য দাওয়াত দিলে আপনার স্ত্রী এমনকি কখনও কখনো আপনি নিজেও খাবার প্রস্তুত ও পরিবেশন করতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মনোযোগ দিয়ে থাকেন। অতিথি যত বেশি গুরুত্বপূর্ন হয়, খাবারের মানের প্রতি তত বেশি গুরুত্ব দেয় হয়। কেউ আমাদের পোশাক-পরিচ্ছেদ বা ঘরের সাজ-সজ্জার প্রশংসা করলে কিংবা রান্নার তারিফ করলে আমাদের খুশির সীমা থাকে না।

রাসূল (সাঃ) বলেছেন,

‘অন্যের সঙ্গে তেমন আচরণ করুণ যেমন আচরণ আপনি অন্যদের কাছ থেকে পেতে চান।’

এটা কিভাবে করবেন?

কারও পরনে সুন্দর পোশাক দেখতে পেলেন, তাঁর প্রশংসা করুণ, আনন্দদায়ক কথা বলুন। মাশাআল্লাহ! পোশাকটি তো চমৎকার! এটা পরলে আপনাকে তো বরের মতো লাগে।

আপনার সাথে কেউ সাক্ষাৎ করতে এলো। তাঁর পোশাক থেকে আতরের সুঘ্রাণ আসছে। তাঁর সুরুচির প্রশংসা করুণ। তাঁর আবেগের সাথে আপনিও শরিক হোন। সে কিন্তু আপনার জন্যই সুগন্ধি ব্যবহার করেছে। তাই তাঁকে সুন্দর সুন্দর কথা বলে আনন্দ দিতে চেষ্টা করুণ। কী সুন্দর ঘ্রাণ! আপনার রুচি তো অনেক উন্নত!

কেউ আপনাকে খাবারের দাওয়াত দিলে তাঁর পরিবেশিত খাবারের প্রশংসা করুণ। কেননা, দাওয়াতদাতার মা অথবা স্ত্রী কেবল আপনার জন্য দীর্ঘক্ষণ রান্নাঘরে ছিল। কত কষ্ট করে তাঁরা খাবার প্রস্তুত করেছে! কিংবা রেষ্টুরেন্ট থেকে খাবার আনলেও এর জন্য পরিশ্রম করতে হয়েছে। তাই তাঁকে এমন কিছু কথা বলুন, যাতে সে উপলব্ধি করতে পারে যে, আপনি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ। যেন সে এ কথা মনে করে যে, আপনার জন্য তাঁর কোষ্ট-ক্লেশ বৃথা যায় নি।

কোনো বন্ধুর বাসায় সুন্দর সুন্দর আসবাবপত্র দেখতে পেলেন। অকুণ্ঠচিত্তে আসবাবপত্রের প্রশংসা করুণ এবং তাঁর সুরুচির  তারিফ করুণ। তবে প্রশংসা যেন অতিরিক্ত না  হয়ে যায় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখবেন। কেননা, তাহলে সে মনে করবে, আপনি তাঁর সঙ্গে ঠাট্টা করছেন।

কোনো সভা বা মজলিসে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন, একজন বক্তা খুব সুন্দর কথা বলছেন। কথার মাধ্যমে তিনি আসর জময়ে তুলেছেন এবং শ্রোতারাও তাঁর কথা মন্ত্রমুগ্ধের ব্যয় শুনছে। আপনি তাঁর প্রশংসা করুণ। মজলিসে শেষে ওঠার সময় তাঁর হাত ধরে বলুন, ‘মাশাআল্লাহ! আপনার কথা বলার ক্ষমতা তো চমৎকার! আপনার কারণে আজকের সভা খুব জমে উঠেছে!’ এভাবে বলে দেখুন, সে আপনাকে ভালবাসতে শুরু করবে।

আপনি পিতার সাথে পুত্রের কোনো সুন্দর আচরণ দেখলেন। ছেলে পিতার হাতে চুমু খেলো কিংবা পিতার জুতা এগিয়ে দিল। ছেলের প্রশংসা করুণ। কেউ নতুন পোশাক পরিধান করেছে, তাঁর প্রশংসা করুণ। বোনের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে তাঁর সন্তানদের লালন-পালন ও শিক্ষা-দীক্ষার প্রতি যত্নবান দেখলেন। তাঁর প্রশংসা করুণ। এভাবে অন্যের ভাল দিকগুলোই কেবল লক্ষ্য করুণ এবং প্রশংসা করুণ।

আপনি আপনার বন্ধুকে তাঁর সন্তানদের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে দেখলেন অথবা মেহমানদের আপ্যায়নের ক্ষেত্রে তাঁর নতুন কোনো কৌশল দেখলেন। আপনি বিচক্ষণতার সাথে তাঁর প্রশংসা করুণ। আপনার মুগ্ধতা প্রকাশ করুণ।

আপনি কারও সাথে তাঁর গাড়িতে উঠেছেন কিংবা ট্যাক্সি ভাড়া করেছেন। গাড়ির ভেতরটা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন দেখতে পেলেন। কিংবা গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে চালকের দক্ষতা আপনার নজর কাড়ল। আপনি এর প্রশংসা করুণ।

অনেকেই হয়তো বলবেন, এতো খুব সাধারণ বিষয়, এতে কোনো বিশেষত্ব নেই। কথাটি সত্য। তবে এ সাধারণ বিষয়ের মধ্যে যে অসাধারণ প্রভাব রয়েছে তাও সত্য। সমাজের নিম্ন-মধ্য-উচ্চ শ্রেণীর মানুষ, কুলি, মজুর, ছাত্র ও শিক্ষকসহ সবার সাথে আমি নিজে এটা পরীক্ষা করে দেখেছি। সমাজের অতি উঁচু স্তরের ব্যক্তিবর্গ ও পদস্থ কর্মকর্তাদের সাথেও আমি এর প্রয়োগ করেছি। আমি তাঁদেরকে যারপর নাই প্রভাবিত হতে দেখেছি। প্রভাবিত হবে না বা কেন? মানুষ যেসব ক্ষেত্রে অন্যের প্রশংসা কামনা করে। সেসব ক্ষেত্রে প্রশংসা পেলে সে খুশি না হয়ে পারবে না।

নব বিবাহিত কোনো ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ের এক সপ্তাহ পর আপনার দেখা হলো। বড় ডিগ্রী অর্জনকারী কোনো ব্যক্তির সঙ্গে আপনার সাক্ষাৎ হলো। আপনার প্রতিবেশী নতুন ডিজাইনের বাড়ি নির্মাণ করে উদ্বোধনের জন্য আপনাকে দাওয়াত দিতে এলো। এরা সকলেই আপনার মুখ থেকে প্রশংসার বাণী শোনার অপেক্ষা করবে। আপনি তাঁদের সঙ্গে আশানুরূপ করুণ।

আমার চাচাতো ভাই আবদুল মাজীদ উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ছাত্র। ফাইলান পরীক্ষার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য সে আমাকে সাথে নিয়ে যেতে চাইল। একদিন সকালে আমি  তাঁর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলাম। এরপর আমি গাড়ি নিয়ে তাঁর বাড়িতে গেলাম। আমরা একসাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাব।

তাঁর মনে আনন্দের ঢেউ খেলে যাচ্ছিল। সে শিক্ষা জীবনের নতুন এক স্তরে উত্তীর্ণ হতে যাচ্ছে। সে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ নিয়ে ভাবছিল। গাড়িতে ওঠার পর আমি তাঁর শরীর থেকে সুগন্ধির কড়া ঘ্রাণ পাচ্ছিলাম। আমার মনে হলো, সে আতরের পুরো কৌটা তাঁর কাপড়ে ঢেলে দিয়েছিল। আসলে, আতরের উৎকৃষ্ট গন্ধে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। তাই দম নেয়ার জন্য আমি গাড়ির জানালা খুলে দিলাম। বুঝতে পারছিলাম, বেচারা পোশাকের শোভাবর্ধন ও সুঘ্রাণের জন্য যথেষ্ট কসরত করেছে। আতরের গন্ধে আমার কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও তাঁর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম, ‘মা-শা-আল্লাহ! কী চমৎকার মিষ্টি ঘ্রাণ! আমার তো ভয় হচ্ছে অনুষদের দিন মহোদয়ের নাকে এই মিষ্টি ঘ্রাণ যাওয়ার সাথে সাথে খুশিতে বলে উঠবেন, ‘তোমার ভর্তি মঞ্জুর করা হলো!’

এ কথা শুনে সে যে কী পরিমাণ উল্লসিত হয়েছিল তা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। আনন্দে তাঁর পুরো চেহারা বিদ্যুৎ চমকের ন্যায় হঠাৎ জ্বলে উঠেছিল। সে আমার দিকে তাকিয়ে আনন্দভরা কণ্ঠে বললো, ‘ভাই আবূ আব্দুর রহমান! আপনাকে ধন্যবাদ। এটা অনেক দামী আতর। সবসময়ই আমি এ আতরটি ব্যবহার করি। কিন্তু কেউ এটা চিনে না। এরপর সে বারাবার তাঁর মাথার রুমালের ঘ্রাণ শুকতে লাগল আর বলতে লাগল, ‘কি বলেন, আমার রুচি চমৎকার না?’

অন্যের প্রশংসা করতে চেষ্টা করুণ। মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে তাঁকে প্রভাবিত করা এবং হৃদয় জয় করা অত্যন্ত সহজ কাজ। কিন্তু আমরা অধিকাংশ সময় সাধারণ এ কৌশলগুলো প্রয়োগ করে মানুষের মন জয় করতে চেষ্টা করি না। আমি যদি বলি সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী মহামানব রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মানুষের ভালবাসা অর্জনের জন্য এ সব কৌশল বরং এর চেয়েও উত্তম কৌশল প্রয়োগ করতেন।

ইসলামের সূচনাকালে মক্কায় নিরাপদ জীবনযাপন এবং দ্বীনের অনুশাসন মেনে চলা অসম্ভব হয়ে পড়লে মুসলমানরা বাড়ি-ঘর ও ধন-সম্পদ ত্যাগ করে মদিনায় হিজরত করলেন। আবদুর রহমান বিন আওফ রাঃ) ছিলেন মক্কার একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। শূন্য হাতে মদিনায় হিজরত করে তিনি নিঃস্ব হয়ে গেলেন। মুহাজিরদের অবস্থার ত্বরিত সমাধানের লক্ষ্যে রাসূল (সাঃ) মুহাজির ও আনসারদের অবস্থান অনুপাতে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ করলেন। আবদুর রহমান (রাঃ) হলেন সা’দ বিন রাবীয়া (রা:) –এর ভাই। সাহাবায়ে কিরামের মন ছিল স্বচ্ছ, হৃদয় ছিল আলোকিত। তাই সা’দ (রাঃ) আবদুর রহমান (রাঃ) কে বললেন, ভাই! মদিনার অধিবাসীদের মধ্যে আমি সবচেয়ে বেশি সম্পদের অধিকারী। আমরা ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি। তুমি আমার ভাই। আমার সমস্ত সম্পদ সমান দুই ভাগে ভাগ করে আপনি অর্ধেক নিন, আমার জন্য অর্ধেক রাখুন। আপনার তো বিয়েরেও প্রয়োজন। আর মদিনায় পাত্রী যেহেতু সহজলভ্য নয় তাই আমার স্ত্রীদের মধ্যে যাকে আপনার পছন্দ তাঁকে আমি তালাক দিয়ে দিচ্ছি। আপনি তাঁকে বিয়ে করে নিন।’

মদিনায় আব্দুর রহমানের কিছুই নেই। তবুও আব্দুর রহমান সা’দকে তাঁর প্রস্তাবের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বিনয়ের সাথে বললেন, ‘আল্লাহ আপনার পরিবার ও সম্পদে বরকত দান করুণ। আপনি দয়া করে আমাকে মদিনার বাজারটা দেখিয়ে দিন!

সা’দ (রাঃ) তাঁকে বাজার দেখিয়ে দিলেন। আব্দুর রহমান ছিলেন অনেক বুদ্ধিমান ও ব্যবসায়িক প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার অধিকারী। তিনি বাজারে গিয়ে বাকিতে কিছু পণ্য ক্রয় করে তা নগদে বিক্রি করলেন। এতে তাঁর অনেক লাভ হলো। ফলে ব্যবসা করার মত মূলধন তিনি পেলেন। বুদ্ধি ও ব্যবসায়িক প্রজ্ঞা কাজে লাগিয়ে অল্পদিনেই তিনি অনেক সম্পদ সঞ্চয় করতে সক্ষম হলেন। এরপর তিনি উপযুক্ত পাত্রী দেখে বিয়ে করলেন। বিয়ের পর আবদুর রহমান (রাঃ) রাসূলের সাথে দেখা করতে এলেন। নতুন স্ত্রীর কাপড় থেকে জাফরানের রং তাঁর কাপড়ে লেগে গিয়েছিল। তা রাসূল (সাঃ)-এর দৃষ্টি এড়াল না। তিনি এর কারণ বুঝে ফেললেন।

রাসূল (সাঃ) মানুষের মন ও মনন বুঝতেন। মানুষের মন আকর্ষণ করার জন্য এবং হৃদয় রাজ্য প্রবেশের জন্য তিনি সুযোগের অপেক্ষায় থাকতেন। আবদুর রহমানের প্রতি দৃষ্টি পড়া মাত্রই তিনি তাঁর পরিবর্তিত অবস্থা নিয়ে ভাবলেন। জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী খবর আব্দুর রহমান?’ আবদুর রহমান হাসিমুখে বললেন, ‘আল্লাহর রাসূল! আমি এক আনসারী মহিলাকে বিয়ে করেছি’। রাসূল (সাঃ) অবাক হলেন। মনে মনে ভাবলেন, এত তাড়াতাড়ি সে কিভাবে বিয়ে করে ফেলল? মাত্র কয়দিন আগে সে হিজরত করে মদিনায় এসেছে। তাই রাসূল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, ‘মোহর কত দিয়েছ?’ আবদুর রহমান (রাঃ) বললেন, ‘খেজুর বীজের ওজন পরিমাণ স্বর্ণ!’ রাসূল (সাঃ) আবদুর রহমানের (রাঃ) বিয়ের খুশিটাকে আরো বাড়িয়ে দিতে চাইলেন। তিনি বললেন, ‘একটি বকরি দিয়ে হলেও ওলিমা কর।’ এরপর রাসূল (সাঃ) তাঁর ধন-সম্পদ ও ব্যবসা বাণিজ্যে বরকতের দোয়া করলেন। ফলে তাতে অনেক বরকত হলো। আবদুর রহমান (রাঃ) তাঁর উপার্জন এবং ব্যবসা বাণীজ্যের প্রবৃদ্ধির বর্ণনা দিতে গিয়ে বলতেন আমি যদি পাথরও ধরতাম, তাতেও বিশাল লাভ হতো।

রাসূল (সাঃ) অসহায় ও নিঃস্বদের গুরুত্ব দিতেন। তিনি তাঁদের আত্মমর্যাদাবোধ জাগিয়ে দিতেন। তাঁদের মধ্যে এ প্রত্যয় জন্মাতেন যে, তিনি তাঁদের ব্যাপারে সচেতন এবং তাঁদেরকে ভালবাসেন। তিনি তাঁদের ছোট-খাটো কাজের মূল্যায়ন করতেন। তাঁদের কাউকে না দেখলে তিনি তার খোঁজ-খবর নিতেন এবং তাঁর ভাল কাজগুলোর প্রশংসা করতেন। ফলে অন্যরাও অনুরূপ কাজ করতে আগ্রহী হতো।

মদিনায় কৃষ্ণাঙ্গ জনৈক মুমিন নারী ছিল। সে মসজিদে নববী ঝাড়ু দিতো। রাসূল (সাঃ) প্রায় তাঁকে ঝাড়ু দিতে দেখতেন। মসজিদের খেদমতের প্রতি তাঁর এ আগ্রহ দেখে মুগ্ধ হতেন। বেশ কয়েকদিন যাবত তাঁকে দেখতে না পেয়ে রাসূল (সাঃ) সাহাবীদেরকে তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। সাহাবীগণ (রাঃ) জানালেন, ‘সে তো কয়েকদিন আগে মারা গেছে।’  রাসূল (সাঃ) বললেন, ‘তোমরা আমাকে তাঁর মৃত্যুর সংবাদ জানালে না কেন’?

আরও পড়ুন>> বরকতময়ী ৩১৩ জন বদরী সাহাবীদের নাম 

সাহাবীগণ মহিলার মৃত্যুর বিষয়টিকে তুচ্ছ বিষয় মনে করেছিলেন। একজন কৃষ্ণাঙ্গ নিঃস্ব মহিলা তো এত গুরুত্বপূর্ণ নয় যে, তাঁর মৃত্যু সংবাদ রাসূলকে দিতে হবে। সাহাবীগণ বললেন, ‘সে রাতে মৃত্যুবরণ করেছে। তাই আমরা আপনাকে জাগায় নি।’ তখন রাসূল (সাঃ) তাঁর জানাযা পড়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেন। তাঁর আমল মানুষের দৃষ্টিতে তুচ্ছ হলেও আল্লাহর দৃষ্টিতে ছিল অনেক বড়। তবে তাঁরা ভাবছিলেন  রাসূল (সাঃ) কিভাবে সমাহিত এ মহিলার জানাযা পড়বেন!

রাসূল (সাঃ) বললেন, ‘আমাকে তাঁর কবর দেখিয়ে দাও’। সাহাবায়ে কিরাম রাসূল (সাঃ) কে তাঁর কবরের কাছে নিয়ে গেলেন। রাসূল (সাঃ) তাঁর কবরকে সামনে রেখে জানাযার নামায পড়লেন। তারপর বললেন, ‘এ কবরগুলো অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল। আমার এ জানাযার নামাযের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা সেওগুলোকে আলোকিত করেছেন’। নিঃস্ব একজন মহিলার ক্ষুদ্র একটি আমলের কারণে তাঁর প্রতি রাসূলেরর এ ভালবাসা ও গুরুত্বের বহিঃপ্রকাশে সাহাবায়ে কিরামের হৃদয়জগত কেমন আলোড়িত হয়েছিল তা কে জানে! রাসূলের এমন আচরনে তাঁরা ঐ মহিলার ন্যায় কিংবা তাঁর চেয়েও বড় আমলের অনুপ্রেরণা কি লাভ করেন নি?

একটি মজার ঘটনা শুনুন। আমার পরিচিত জনৈক যুবক একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়েছিল। সেখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও অতিথি হয়েছিলেন। সে অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে একটি আতরের দোকানে প্রবেশ করলো এবং ভাবখানা এমন দেখাল যে, খুব দামী আতর কিনবে। দোকানদার তো খুব খুশি। সমাদর করে তাঁকে বিভিন্ন ধরনের মূল্যবান আতর দেখাতে লাগলেন। উন্নতমানের কিছু আতর তাঁর কাপড়ে ছিটিয়ে দিলেন। যেন এসব আতর থেকে ক্রেতা তাঁর পছন্দমত একটিকে বেঁছে নিতে পারে। বিভিন্ন ধরনের আতরের ছিটায় যখন তাঁর পোশাক সুঘ্রাণে ভরে গেল তখন সে বিক্রেতাকে কোমল সুরে বললো, ‘ধন্যবাদ! অনেক আতর তো দেখালেন। কিন্তু এখন নিতে পারছি না। পরে একদিন এসে নিয়ে যাব’! আতরের সুঘ্রাণ সঙ্গে নিয়ে সে দ্রুত অনুষ্ঠান স্থলে গিয়ে পৌঁছল যেম সুঘ্রাণ শেষ না হয়ে যায়। নৈশভোজে সে তাঁর বন্ধু খালেদের পাশে বসল। কিন্তু খালেদ তাঁর সুঘ্রাণের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করলো না এমনকি তা খেয়ালও করলো না। ফলে সে যুবক অবাক হয়ে খালেদকে জিজ্ঞেস করলো, ‘তুমি কি কোনো আতরের ঘ্রাণ পাচ্ছ না!?’ খালেদ বললো, ‘না’।

যুবক আবার বললো, আমি নিশ্চিত তোমার নাক বন্ধ হয়ে আছে। উত্তরে খালেদ বললো, ‘নাক বন্ধ থাকলে তো তোমার ঘামের দুর্গন্ধ পেতাম না!’

উপসংহার……

মানুষ উন্নতি ও সলফলতার যত উচ্চ স্তরেই উন্নীত হোক না কেন সে মাটিরই মানুষ। তাই সেও প্রশংসা কামনা করে, প্রশংসায় আনন্দিত হয়।

উৎসজীবনকে উপভোগ করুন (Enjoy your life in bangla)

এরপর পড়ুন>> কেবল সুন্দরের প্রশংসা করুন

For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.

Leave a Comment