দশটি ইসলামিক মজার গল্প (মুচকি হাসির গল্প ৩)

দশটি ইসলামিক মজার গল্প পড়ুন যা আমরা এই ওয়েব পেইজে তুলে ধরেছি। এই ইসলামিক মজার গল্প সমূহ শুধু মজার নয় একই সাথে শিক্ষামূলকও।  আমরা সকলেই কম-বেশি গল্প শুনতে ও পড়তে ভালোবাসি। সেই গল্প যদি একইসাথে মজার ও শিক্ষণীয় হয় তাহলে তো কোনো কথায় নেই। তাহলে চলুন দেরি না করে এই শিক্ষণীয় ইসলামিক মজার গল্প ও ঘটনাগুলি উপভোগ করি….

০১. ওস্তাদের শিক্ষা! (এক হিন্দু সাধুর ঘটনা)

সুলতান নিজামউদ্দিন (রহঃ)-এর সময়কাল এক হিন্দু সাধু বাস করতেন। তিনি এমন এক অভ্যাস করেছিলেন যে রোগীর উপর দৃষ্টি দিলে রোগীর রোগ দূর হয়ে যেতো। একবার সুলতান নিজামউদ্দিন (রহঃ)-এর ভীষন অসুখ হলো। তিনি মাঝে মাঝে অজ্ঞান হয়ে পড়তেন। জ্ঞান হওয়ার পর খাদেমগণ একবার আরজ করলেন, যদি অনুমতি দান করেন তবে অমুক হিন্দু সাধুর কাছে আপনার কাঁধে উঠিয়ে নিয়ে যায়। সে দৃষ্টির মাধ্যমে রোগ দূর করে।

হরযত বললেন, ‘সাবধান! এরূপ করবে না । তাহলে লোকদের ঈমানী আকীদা নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু পীরের প্রতি মুরিদের মহব্বত হয়ে থাকে  এশকে পর্যায়ের। সুলতান নিজামমুদ্দিন যখন আবার বেহুশ হয়ে পড়লেন তখন মুরীদ্গণ এত পেরেশান হয়ে পরলো যে, তার খাট উঠিয়ে ছিল সাধুর বাড়িতে নিয়ে গেল এবং  এবং ভাবলেন এটা হযরতের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হওয়ার ক্ষমা চেয়ে নেওয়া যাবে।

সাধু দেখল এত বড় ব্যাক্তি ব্যক্তিত্ব তার বাড়িতে এসেছে। সাধু তখনই সব কাজ ফেলে দৃষ্টি ছুটে গেল যে সুলতান নিজামুদ্দিন (রহঃ)-এর খাটের কাছে এবং দৃষ্টি দিতেই এমন ভাবে রোগ দূর হয়ে গেল যে সুলতান নিজাম উদ্দিন একেবারে উঠে বসলেন। মনে হলো যেন তার কোন রোগই ছিল না। তিনি দেখলেন যে এটা হিন্দু সাধুর বাড়ি। বুঝতে পারলেন, এরা আমার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে।  তাই কাউকে কিছু বললেন না ।

তিনি সাধুকে  জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার মধ্যে এ শক্তি কিসের প্রভাবে সৃষ্টি হয়েছে; কোন আমলের মাধ্যমে এ যোগত্যা অর্জন করেছো  বল, দেখি’। সাধু বললো, “আমার মধ্যে শুধু একটি বস্তু আছে যা আমার ওস্তাদ আমাকে শিক্ষা দিয়েছিলেন। আর সেটা হল হলো, তিনি বলেছিলেন, ‘সব সময় নফসের বিরুদ্ধে চলবে; অর্থাৎ তোমার মন যে কাজ টি করতে চায় সে কাজটি করবে না আর যে করতে না চায় সে কাজটি করবে’। এ একটি মাত্র অভ্যাসের কারণে আমার নফসের এমন এক শক্তি সৃষ্টি হয়েছে যার কারণে আমি ‘তাছররূফ’ করে রোগ দূর করে দিতে পারি।”

একথা শুনে হযরত সুলতান নিজামউদ্দিন জিজ্ঞেস করলেন,  “আচ্ছা বল দেখি তোমার কি মুসলমান হতে ইচ্ছে করে?” সাধু বললো, ‘না, মুসলমান হতে ইচ্ছে করে না।” সুলতান নিজাম উদ্দিন বললেন, “তাহলে তোমার  ওস্তাদের শিক্ষার উপর আমল হলো না?

সাধু ভাবনায় পড়ে গেল। 

একথা শুনে হযরত সুলতান নিজাম-উদ্দিন উপকারের বদলে উপকারি জন্য দোয়া করতে লাগলেন, ‘হে আল্লাহ! সে আমার উপকার করেছে, আমিও তার উপকার করতে চায়। সে আমার শরীরের রোগ দূর করেছে, আমি তার অন্তরের রূহানী রোগ কুফুরী দূর করতে চায়। তুমি আমাকে সাহায্য কর’।

সাধু আর ঠিক থাকতে পারলেন না, একটি ঘূর্ণি ঝড় খেয়ে গেল তার অন্তরে।  তখন সে বলে উঠলোঃ আল্লাহ ব্যতিত কোন মাবুদ নেই, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তার বান্দা ও রাসুল। সুতরাং উপকারের বদলে অপকার বাস্তাবায়িত হলো। সাধু মুসলমান হয়ে ঈমানের সৌভাগ্য লাভ করলেন। উৎসঃ ( আল এফাযাতুল য়্যাওমিয়্যাহ)   

০২. কলস ভর্তি স্বর্ণ। (দুই ব্যক্তির এখলাছ)

পূর্ব যুগের উম্মাতের মধ্যে অনেক ভাল ভাল লোক অতিক্রম করে গেছেন। এরূপ একটি ঘটনা বর্ণিত আছেঃ

একজন লোক তার বাড়ি বিক্রী করেছিল। ক্রেতা বাড়ি দখল করার পর সেখানে (মাটির নীচে) সোনা ভর্তি একটি কলস দেখতে পেলো। তখন সে কলসটি নিয়ে পূর্বের মালিকের কাছে গিয়ে বললো, “ভাই আপনার কলস ফিরিয়ে নিন। কলস টি আমি আপনার বাড়িতে পেয়েছি।”

বিক্রেতা বললো, “আমি তো আপনার কাছে বাড়ি বিক্রী করে দিয়েছি। সুতরাং এ কলস টি আমার হয় কিভাবে? আপনি বাড়ি ক্রয় করেছেন। সুতরাং বাড়িও আপনার কলসও আপনার।”

লোকটি বলল, “তা হয় না। আমি বাড়ির জন্যে টাকা দিয়েছি, কিন্তু কলস ভর্তি স্বর্ণের জন্যে কোন টাকা দেইনি। সুতরাং স্বর্ণ ভর্তি কলস আপনারই হবে।”

অতঃপর আইনতঃ কলসটি যারই হোক এ ঘটনা থেকে তাদের এখলাছের এক জ্বলন্ত চিত্র ফুটে উঠেছে। বস্তুতঃ আমাদেরকে ও ঐরূপ হতে হবে। তাহলে আমাদের মধ্যে কোন গীবত বা পরনিন্দা থাকবে না, ঝগড়া-বিবাদ থাকবে না, মামলা-মকদ্দমা থাকবে না, শুধু থাকবে পরস্পর এখলাছ ও ভালবাসা। আর আল্লাহর রহমত ও শাস্তির অফুরান্ত প্রবাহ। উৎসঃ (তাসহীলুল মাওয়ায়েজ খন্ড-১, প্রিশ্তহা-৫৭)  

০৩. চোর হল দরবেশ। ( রাজকন্যা ও চোরের গল্প)

গুনাহ ছেড়ে দাও। ইবাদত শুরু কর। তারপর দেখ মনের মধ্যে কত রকম শান্তি ও সুখের ধারা প্রবাহিত হতে থাকে। আল্লাহপাকের ইবাদত এমন এক জিনিস যে অনিচ্ছা সত্বেও যদি তা সম্পন্ন হয়ে যায় তবু তার সুফল পাওয়া যায়। যেমন কোন কাপড় যদি ভুলে রঙের মধ্যে পড়ে যায় তবু কাপড়ে রং লেগে যাবে। বিষয়টি আরও পরিস্কার বুঝানো সম্ভব হবে একটি চোরের ঘটনা বর্ণনা করে।

একজন বাদশাহ ছিলেন। তার একজন পরমা সুন্দরী কন্যা। একজন চোর সে কন্যার প্রতি আশেক ছিল। কিন্তু রাজ কন্যাকে পাওয়া বড় কঠিন ব্যাপার ছিল। ঘটনাক্রমে একদিন সে চুরি করার উদ্দেশ্যে বাদশার খাশমহলে প্রবেশ করলো। তখন বাদশাহ ও বেগম তাদের এক মাত্র কন্যার বিবাহের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করছিলেন।

বাদশাহ বললেন, ‘আমাদের কন্যাকে বিবাহ দিব একজন আল্লাহওলা পরজেযগার লোকের সাথে।’ চোর এ কথা শুনে রাজার বাড়িতে চুরি করা ভুলে গেল এবং বাদশাহর সিদ্ধান্তের কথাকে এক বিরাট গণিমত মনে করলো যে তার প্রিয়তমাকে পাওয়ার সঠিক ব্যবস্থা জানা হয়ে গেছে। এখন আল্লাহ তায়ালার পরজেহগার হয়ে যাওয়াই ভাল।

চোর বাদশার ঘর থেকে বের হয়ে সে এক মসজিদে গিয়ে হাজির হলো এবং দিন রাত আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হয়ে পড়লো। তার খ্যাতি চারিদিক ছড়িয়ে পড়লে যে মসজিদে একজন কামেল দরবেশ এসেছে।

এদিকে বাদশাহ তার কন্যার বিবাহের পাত্র খোজার জন্যে বিভিন্ন জায়গায় লোক প্রেরণ করবেন। পরহেজগার পাত্র খোজার জন্যে চারিদিকে লোক ছুটে গেলো। অনেক খোজাখুজির পর অবশেষে জানা গেল যে, অমুক মসজিদে এমন এক আল্লাহওয়ালা অবস্থান করছেন যার চেয়ে অধিক পরহেজগার সারাদেশে একজনও নেই।

একথা শুনে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় বিবাহের পয়গাম নিয়ে বাদশার দূত তার কাছে গমন করলো। কিন্তু চোরের মন ততদিন পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। আল্লাহর ইবাদতের শান্তিতে তার অন্তর এত অধিক ভরপুর হয়ে গিয়েছিল যে, রাজকন্যা এবং সাত রাজার ধন-সম্পদ তার কাছে তখন তুচ্ছ মনে হতে লাগলো। সে রাজদূতকে বললো, আপনারা চলে যান, আমার মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন না। উৎসঃ (তাসহীলুল মাওয়ায়েজ খন্ড-১, প্রিশ্তহা-৪৯)  

০৪. জীবিত লাশ। (ভন্ডপীরের গল্প)

অনেক পীর সাহেব আছেন যারা নিজের তালিকায় লোক ভিড়াবার জন্যে বিভিন্ন রকম ফন্দি আটতে থাকেন। এরূপ একজন পীর সাহেব নিজের পীরগীরি প্রচারের জন্যে এক মিথ্যা কেরামতির ব্যবস্থা করলেন। তিনি সেজে গুজে মাথায় দিয়ে এক নতুন রাজ্যে প্রবেশ করলেন। তার একজন শিষ্য’কে কাফনের কাপড় পরিধান করিয়ে লাশ-বাহী খাটে শোয়ায়ে দিলেন। মরা-কান্না কাদার জন্যে কয়েক জন লোক ঠিক করলেন। এরপর জানাযা পড়ার জন্যে লোকজন ডাকা হলো। বিশাল জনতা যখন জানাযা নামায পড়ার জন্যে অপেক্ষা করছে তখন পীর সাহেব হঠাৎ করে খাটের কাছে গিয়ে হাজির হলেন এবং লাশকে লক্ষ্য করে বললো, (কুম বি ইযনলিল্লাহ) ‘আল্লাহর ইচ্ছায় উঠ।’) একথা শুনা মাত্রই লাশটি কাফনের কাপড় ফেলে দিয়ে খাটের উপর উঠে দাড়ালো এবং হাত তুলে জনতাকে সালাম জানালো।

সরলমনা জনগণ পীরের কেরামতি দেখে চারিদিক ডঙ্কা বাজিয়ে দিল। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এসে পীর সাহেবের নিকট ভীড় করতে লাগলো। রাজ্যের রাজাও এ নবাগত পীরের কাহিনী শুনলেন। রাজা ছিলেন খুব বুদ্ধিমান। পীর সাহেবকে তার দরবারে ডেকে পাঠালেন।

পীর সাহেব মনে মনে ভাবলেন তার কৌশলটি কাজে লেগেছে। দেশের রাজাও তার ভক্ত হয়ে পড়েছেন। পীর সাহেব খুশী মনে রাজার দরবারে গিয়ে হাজির হলেন। রাজা বললেন, “যুদ্ধের আমার সেনা-বাহিনীর অনেক সদস্য মারা যায়। ফলে দেশের অপূরনীয় ক্ষতি হয়ে যায়। কারণ ঐরূপ ট্রেনিংপ্রাপ্ত সৈন্য সংগ্রহ করা যায় না। আপনি আমার দেশেই থাকুন। মৃত সৈন্যদের জীবিত করাই আপনার কাজ। আপনার ভরণ-পোষন এবং যাবতীয় খরচ আমি বহন করবো।”

রাজার কথা শুনে পীর সাহেবের কম্পন শুরু হয়ে গেলো পায়ের তলা থেকে যেন মাটি সরে গেল। তিনি দুই চোখে অন্ধকার দেখতে লাগলেন এবং সুযোগ বুঝে অতি গোপনে রাতারাতি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেন। উৎসঃ ( আল-এফাযাতুল য়্যাওুময়্যাহ খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৫৫)

সুধী পাঠক সমাজ প্রকৃত পীরের সংজ্ঞা জেনে নিন, পীরের নিম্নলিখিত গুণ অবশ্যই থাকতে হবেঃ

১। পীর আলেম হতে হবে। আলেমের সংজ্ঞা হলো। কমপক্ষে তিনটি কেতাব এমন ভাবে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে যেন তা’ সুন্দর ভাবে ছাত্রদেরকে পড়াতে পারেন এবং ছাত্ররা তার পড়াবার যোগ্যতার পক্ষে স্বাক্ষী দিবে। কেতাব তিনটি হলোঃ

(ক) তফসীরে জালালাইন,

(খ) মেশকাত শরীফ,

(গ) হোদায়া (উভয় খন্ড)

২। প্রত্যেক ফরয, ওয়াজিব এবং সুন্নতের পুরাপুরি অনুসারী হতে হবে এবং হারাম ও মাকরূহ কাজ সম্পূর্ণ ভাবে বর্জন করতে হবে।

৩। মানুষকে শিক্ষা দানের জন্য অপর এমন একজন পীর কর্তৃক অনুমতি প্রাপ্ত হতে হতে যার পর্যাক্রমিক পীরের প্রথম পীর স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কর্তৃক অনুমতি প্রাপ্ত হয়েছেন। আর সে পীরের দরবারে আলেমগণ গমন করেন কিনা দেখতে হবে। কারণ পীরের অবস্থান আলেমের উর্দ্বে। আলেম হওয়ার পূর্বে দীর্ঘদিন পীরের সান্নিধ্যে থেকে ‘এখলাছ’ লাভের জন্য সাধনা করতে হয়। এ জন্য আলেমগণও প্রকৃত পীরের দরবারে গিয়ে থাকেন। প্রকৃত পীরের মুরীদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা বা দুনিয়ার কোনরূপ সুযোগ –সুবিধা পাওয়ার ইচ্ছা থাকেনা। তিনি নিজের ইচ্ছায় কোন কেরামত প্রকাশ করেন না। এমনকি যদি অনিচ্ছাকৃত ভাবে তার থেকে কোন কেরামত প্রকাশ হয়ে যায় তবে তিনি মনে কষ্ট পেয়ে থাকেন। তার মজলিসে বসলে মনে আল্লাহর ভয় জেগে উঠে, আখেরাতের কথা মনে পড়ে যায় এবং মন অনাবিল শান্তিতে পূর্ণ হয়ে যায়। (সুত্রঃ যিয়াউল কুলূব ও কছদুস সাবীল)

০৫. বিনা পরিশ্রমের ব্যবসা।

একজন বুযুর্গের একটি ঘটনা বর্ণিত আছে। এক লোক তাকে প্রায়ই গালি দিত। যতবার গালি দিত বুজুর্গ ততবার তার বাড়িতে কিছু টাকা পাঠিয়ে দিতেন। একদিন লোকটি ভাবলো তিনি তো আমার উপকারই করছেন সুতরাং তাকে গালিগালাজ করা উচিত  নয়। একথা চিন্তা করে সে গালি দেওয়া বন্ধ করে দিল।

সে দিন থেকে বুজুর্গও তাকে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিলেন। লোকটি এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন বুজুর্গ বললেন, “ভাই, ব্যবসায়ের তো এটাই নিয়ম। দিতে হবে এবং নিতে হবে। তুমি এতদিন আমাকে মাল দিয়েছো, আমি তার বদলে তোমাকে টাকা দিয়েছি। এখন তুমি গাল দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছো তাই আমিও টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি”।

লোকটি বললো, “আমি তো কখনও আপনাকে গাল দিতাম না!” বুজুর্গ বললেন, ‘তুমি যতদিন আমাকে গালি দিয়েছো ততদিন তোমার ইবাদতের সওয়াব আমি পেতাম। বিনা পরিশ্রমে আমার অনেক সওয়াব জমা হতো। এখন তুমি গালি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছ ফলে আমার আর সে উপকার হয় না। তাই আমিও তোমার উপকার করা বন্ধ করে দিয়েছি।’ উৎসঃ ( আল ইয়াওনিয়্যাহ খন্ড-৪, প্রিশ্তহা-১৮৬)

০৬. শবে বরাত দুই ব্যক্তির কীর্তি।

ভারতের কানপুরের একটি ঘটনা। দুই ব্যক্তি শুনেছিল যে শবে বরাতে যে-দোয়া করা হয় তা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়। সুতরাং দুজনে একটি মাটির ঢেলা নিয়ে বসে গেল। ঢেলাটি একটি রুমাল দিয়ে ঢেকে রাখলো। তারপর দোয়া করতে লাগলো, “হে আল্লাহ! আমরা গরীব মানুষ, এ ঢেলাটি যেন স্বর্ণে পরিণত হয়ে যায়। হে আল্লাহ! শবে বরাতে তুমি দোয়া কবুল করে থাক। আজ শবে বরাত। সুতরাং আমাদেরকে বঞ্চিত করিও না।”

সারা রাত ধরে তারা দোয়া করলো। সকাল যতই ঘনিয়ে আসছিল তাদের দোয়ার জোর ততই শক্তিশালী হচ্ছিল। রুমালের নীচের ঢেলাটি স্বর্ণে পরিণত হয়েছে কিনা দেখার জন্য তাদের আগ্রহও বেড়ে যাচ্ছিল। অতঃপর অতি কষ্টে যখন সকাল হলো তখন ঢেলার উদ্ধার থেকে রুমাল খুললো। দেখে মাটির ঢেলাটিই পড়ে আছে। সকল অশান্ত আকাঙ্খা ধূলিসাৎ হয়ে গেল। মনটা এতটুকু হয়ে গেল, এ ভেবে সে শবে বরাত সম্পূর্ণ বৃথা হয়েছে। মনের মধ্যে নানারকম শয়তানী খেয়াল জমতে লাগলে- শবে বরাতে দোয়া কবুল হয়, আজ শবে বরাত, কিন্তু দোয়াতো কবুল হলো না। তাহলে যা-কিছু শুনছিলাম তা সবই মিথ্যা?

একজন দর্জি সেখান দিয়ে যাচ্ছিল, দুজন কে চিন্তাক্লিষ্ট বসে থাকতে দেখে ফিরে এসে দাড়াল। লোকটি আলেমদের ছোহবত পেয়েছিল তাই তাদের ঈমান বরবাদ হওয়া থেকে বাচিয়ে নিল। জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে ভাই, আপনারা এখানে এত চিন্তিত হয়ে বসে আছেন কেন?”

তখন তারা সকল ঘটনা খুলে বললো। একথা শুনে লোকটি বললো, “ভাই আপনারা আল্লাহ পাকের শুকুর আদায় করুণ। এর পিছনে তার অনেক হেকমত রয়েছে। তার মধ্যে একটি হেকমত আমার বুঝে এসেছে। তা হলো আল্লাহ আপনাদের মহব্বত করেন। তাই আপনাদের দুজনের জীবন রক্ষা করেছেন। তিনি যদি এ মাটির ঢেলাকে সোনা বানিয়ে দিতেন তবে সোনার ভাগাভাগি নিয়ে ঝগড়া সৃষ্টি হতো। এরপর শুরু হতো মারামারি তারপর মাথা ফাটতো এবং অবশেষে একজন নিহত হতো বিচারে অপর জনের ফাসি হতো। ফলে তোমাদের দুজনেরই মৃত্যু হতো এবং সোনার খন্ড পড়ে থাকতো। সুতরাং আল্লাহ পাক আপনাদেরকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেছেন।”

একথা শুনে লোক দুইটি খুব খুশি হলো এবং আল্লাহর শুকর আদায় করলো। সুতরাং হাক্কানী আলেমদের সংস্পর্শ পেলে যেমন নিজের ঈমান রক্ষা হয় তেমনি অন্যের ঈমান রক্ষা করতে সহায়তা করা যায়। উৎসঃ ( তাসহীলুল মাওয়ায়েজ খন্ড-১, প্রিশ্তহা-৫৭)  

০৭.দরবেশ ও বাঘের ঘটনা (ইঁদুরের বাঘ হবার ঘটনা)

 ইংরেজগণ পাক-ভারত উপমহাদেশের একটি অকৃতজ্ঞ জাতিকে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল। আর একটি কৃতজ্ঞ জাতিকে পিছনে ফেলে দিয়েছিল; কিন্তু এর ফল যা হয়েছিল তা দেখে পরবর্তী কালে এ ইংরেজগণ আফসোস আর দুঃখ প্রকাশ করেছে।

একজন উচ্চ পর্যায়ের ইংরেজ হাকিম গোরক্ষপুরে সফরে গিয়েছিলেন। সেখান কার জমিদারের ম্যানেজারের কাছে এ প্রসঙ্গে তিনি দুঃখ প্রকাশ একটি ঘটনা বর্ণনা করেছিল। ঘটনাটি নিম্নরূপঃ

একটি নির্জন কক্ষে একজন দরবেশ বাস করতেন। সে কক্ষে এক ইদুর এসে বাচ্ছা প্রসব করলো। পরে দরবেশকে দেখতে পেয়ে সব কয়টি বাচ্ছা পালিয়ে গেল। কিন্তু একটি ইঁদুরের বাচ্ছা রয়ে গেল। দরবেশের দয়া হলো। তিনি বাচ্ছাটিকে দুধ পান করাতে লাগলেন। একদিন দরবেশ দেখলেন বাচ্ছাটি মন ভার করে বসে আছে। তিনি তার দুঃখের কারণ জিজ্ঞেস করলেন।

ইঁদুরের বাচ্ছা বললো, “আজ একটা বিরাট ইঁদুর আমাকে ধাওয়া করেছিল, আজ কোন রকমে প্রাণ বাঁচিয়েছি; কিন্তু একদিন সে আমার উপর জয়ী হবে এবং আমাকে হত্যা করবে। তাই আমার মনে খুব দুঃখ।”

দরবেশ বললেন, “তাহলে আমি এখন তোর জন্যে কি করতে পারি?”

বাচ্ছাটি বললো, “আমাকে বিড়াল বানিয়ে দিন।” দরবেশ তখন আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন এবং ইঁদুরের বাচ্ছার শরীরে হাত বুলালেন, সঙ্গে সঙ্গে একটি বিড়ালে পরিণত হয়ে গেল। কয়েকদিন পর দরবেশ দেখলেন বিড়ালটি বিমর্ষ মনে বসে আছে। তিনি বিড়ালের দুঃখের কারণ জিজ্ঞেস করলেন।

বিড়াল বললো, “আজ মহল্লার গলিতে ঘুরতে গিয়েছিলাম। একটি কুকুর আমাকে তাড়া করেছিল। বড় কষ্ট করে প্রাণ বাঁচিয়ে এসেছি। কিন্তু এভাবে কতদিন প্রাণ বাঁচতে পারবো; তাই আমি খুবই চিন্তিত।” দরবেশ বললেন, “তাহলে তুই এখন কি করবি?” বিড়াল বললো, “আমাকে কুকুর বানিয়ে দিন।”

দরবেশ আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন এবং বিড়ালের গায়ে হাত বুলালেন অমনি বিড়াল কুকুর হয়ে গেল। পাঁচ সাত দিন পর দরবেশ দেখলেন কুকুরটি বিষন্ন মনে বসে আছে। তিনি কারন জিজ্ঞেস করলেন। কুকুর বললো, “আজ আমি জঙ্গলে গিয়েছিলাম সেখানে একটি নেকড়ে বাঘ আমার উপর হামলা করেছিল।”

দরবেশ বললো, “তাহলে তুই এখন কী করতে চাস?” কুকুর বললো, “আমাকে নেকড়ে বাঘ বানিয়ে দিন।” দরবেশ দোয়া করে তার শরীরে হাত বুলালেন। আর অমনি কুকুরটি নেকড়ে বাঘ হয়ে গেল। কয়েক দিন পর দরবেশ দেখলেন সে নেকড়ে বাঘটি মন খারাপ করে বসে আছে। দরবেশ জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার মন খারাপ হওয়ার কারণ কি?” নেকড়ে বাঘ বললো, “আমি জঙ্গলে গিয়েছিলাম সেখানে একটি বড় বাঘ আমাকে হত্যা করার জন্য তাড়া করেছিল।”

দরবেশ বললেন, “এখন তব্র কি করতে চাস?” নেকড়ে বাঘ বললো, “আমাকে বড় বাঘ বানিয়ে  দিন।” দরবেশ আল্লাহর দরবারে দোয়া করে তার গায়ে হাত বুলালেন তখন সে একটি বড় বাঘ হয়ে গেল। বাঘ হয়ে সে মনের আনন্দে জঙ্গলে গেল।

জঙ্গলে যেতেই আগের সে বাঘটি তাকে দেখে বলে উঠলো, “আরে বহুরূপী! খুব রূপ বদলিয়েছিস বটে, কিন্তু তোর মধ্যে আর আমার মধ্যে এখনও বিরাট পার্থক্য রয়েছে। তুই হলি মানুষের তৈরি বাঘ, আর আমি হলাম আল্লাহর তৈরি বাঘ। (দরবেশের তাছাররূফের মাধ্যমে তৈরি বাঘ আর) আল্লাহর তৈরি আসল বাঘের ক্ষমতা এখনই পরীক্ষা হবে। এখনই গোমর ফাস হয়ে যাবে দাড়া।”

একথা শুনে সে ভয়ে কাপতে কাঁপতে বললো, “তাহলে আমার প্রাণে বাচার কি কোন পথ নেই?” বাঘ বললো, “একটি মাত্র পথ আছে। আগে তুই তাকে হত্যা করে আয় যে আল্লাহর উপর তকাব্বরী করেছে, তোকে ইঁদুর থেকে বাঘ বানিয়েছে। আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে সে হস্তক্ষেপ করেছে তাকে হত্যা করলেই তোকে ছেড়ে দিব।”

নেকড়ে বাঘটি চললো। জঙ্গল থেকে দরবেশের কামরায় এসে হাজির হলো। দরবেশ দেখলেন সে নখ বের করে থাবা প্রস্তুত করে সামনে এসে ঘাড় করেছে। দরবেশ বললেন, “আজ তোর এ কি অবস্থা হয়েছে?” নেকড়ে বাঘ বললো, “আজ তোকে হত্যা করবো।” দরবেশ বললেন, “আমার আগের সকল দয়া এবং উপকারের  কথা কি ভুলে গেছিস?”

নেকড়ে বললো, ধ্যাৎ তোর উপকার! এখন আমার জান যায়, উপকারের কথা ভেবে জান হারাতে পারি না। সে বাঘের আজ আবার দেখা হয়েছে। সে হলো আসল বাঘ। আর আমি ইঁদুর থেকে বাঘের রূপ ধরেছি সে জানতে পেরেছে। সে বাঘ আমাকে বলেছে, “আল্লাহর সৃষ্টিতে যে হস্তক্ষেপ করে তোকে ইঁদুর থেকে বাঘ বানিয়েছে তাকে হত্যা করে আয় না হলে তোর রক্ষা নেই।

দরবেশ বললেন, “ও আচ্ছা এ কথা? ঠিক আছে তুমি স্থির হয়ে বস। তোমার জান রক্ষা হবে। আমি ব্যবস্থা করছি।” তখন বাঘ স্থির হয়ে বসলো। দরবেশ সুযোগ পেয়ে দোয়া করলেন এবং তার গায়ে হাত বুলালেন। অমনি বাঘ আবার ইঁদুর হয়ে গেল। সকল বিশৃঙ্খলা দূর হয়ে আবার শান্তি ফিরে আসলো।

এ ঘটনা বর্ণনা করে সে হাকিম সাহেব বললেন, “এটা আমাদেরই দোষ যে আমরা এ অকৃতজ্ঞ জাতিকে অগ্রসর করতে করতে এমন এক স্থানে নিয়ে পৌঁছিয়ে দিয়েছি যেখানে দাঁড়িয়ে আজ তারা আমাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে চলছে। এ জাতিটি বাস্তবিকই অকৃতজ্ঞ। সুতরাং এ ঘটনা থেকে মুসলমানদের শিক্ষা গ্রহন করা উচিৎ। উৎসঃ (আল-এফাযাতুলইয়াউমিয়্যাহ-খন্ড-৫, পৃষ্ঠা-১৯৮)

০৮. কসম খাওয়ার বিড়ম্বনা। (স্বামী স্ত্রীর তালাকের গল্প)

এক লোক তার স্ত্রীর কাছে কসম করে বললো। “যদি তোর সাথে আমি আগে কথা বলি তবে তুই তালাক।” স্ত্রী ও অভিমান করে কসম করলো, “যদি আমি আগে কথা বলি তবে আমার অমুক গোলাম আযাদ।” দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হয়ে যায়, কেউ কারো সাথে কথা বলে না। ফলে সংসার অচল। স্বামী আগে কথা বললে স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। সুতরাং সংসারকে রক্ষা করতে স্বামী ভীষন চিন্তায় পড়ে গেল।

অপর দিকে স্ত্রী আগে কথা বললে তার মূল্যবান গোলামটি আযাদ হয়ে যাবে, সুতরাং সেও গোলাম হারাতে রাজী নয়। লোকটি কসম করার জন্যে আফসোস করতে লাগলো এবং পেরেশান হয়ে আলেমদের কাছে গেল কিভাবে স্ত্রীর সাথে কথাও বলা যায় এবং তালাকও না হয়।

সকল আলেম একবাক্যে বলে দিলেন স্ত্রীর সাথে কথা বললে তালাক হওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। আবার স্ত্রী আগে কথা বললে গোলাম আযাদ হওয়া ছাড়া কোন পথ নেই। সুতরাং হয় স্ত্রীর তালাক, না  হয় গোলাম আযাআদ এ দুই পথ ছাড়া আর কোন পথ নেই।

আলেমদের এ ধরণের বক্তব্য শুনে লোকটির পেরেশানী আরও বেড়ে ফেল। অবশেষে তার মনে পড়ে গেল ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-এর কথা। ইমাম আযম আবু হানিফা (রহ) লোকটির সকল কথা শুনে বললেন, “যাও, তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে কথা বল। কোন ভয় নেই, তোমার স্ত্রীর তালাক হবে না।

একথা শুনে উপস্থিত সকল আলেম বিস্মিত পড়লেন। সকল আলেম বলতে লাগলেন, “ইমাম আবু হানিফা (রহ)-কে আমরা সর্বোচ্চ জ্ঞানী বলে জানতাম। অথচ তিনি এ নীতি-জ্ঞানহীন ফতোয়া দিলেন কিভাবে! তালাকের কর্ম হওয়ার পরও কিভাবে তালাক হয় না?’

আলেমগণ অবশেষে তার কাছে এসে এরূপ ফতোয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। ইমাম আযম আবু হানিফা (রহ) জবাব দিলেন, “স্বামীর কসম খাওয়ার পর পরই স্ত্রী স্বামীকে সম্বোধন করে কসম খাওয়াতে স্ত্রীর কথা বলা হয়ে গেছে। সুতরাং এখন স্বামী কথা বললে স্ত্রীর পরে কথা বলা হবে। সুতরাং তালাক হবে না। স্বামী কথা বলার পর স্ত্রীর কথা বললে তাতে স্ত্রীরও গোলাম আযাদ হবে না।ইমাম আবু হানিফা (রহ)-এর জ্ঞানের এ গভীরতার সবাই মুগ্ধ হলেন। তাদের আর কোন কথা শুনা গেল না। উৎসঃ (আল-এফাযাতুল ইয়াউমিয়্যাহ, খন্ড-৪, পৃষ্ঠা-২৩৫) 

আরও পড়তে পারেন : আদর্শ স্বামী স্ত্রী ১ বই টি। বইটিতে স্বামী স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনের ঘটনাগুলোকে গল্পের মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়েছে। 

০৯. জমিদারের আল্লাহ দেখার ঘটনা।

এক স্বনাম ধন্য জমিদার ছিল, তার কোন কিছুরই অভাব ছিল না। একদিন সে চিন্তা করল, জীবনে অনেক কিছু পেলাম, অনেক কিছুই দেখলাম। কিন্তু একটা জিনিস দেখলাম না। এ জিনিসটা দেখলেই আমার জীবনের সকল সাধ পূর্ণ হয়। যিনি আমাকে সৃষ্টি করলেন, আমাকে ধন-সম্পদ, স্ত্রী-পুত্র আর ভোগের সামগ্রী দান করলেন সে সৃষ্টিকর্তাকে দেখা হলো না। সুতরাং যেভাবেই হোক তাকে দেখতে হবে।

জমিদার বাড়ি থেকে বের হলেন। এক ব্রাক্ষণ পুরোহিতের কাছে গিয়ে বললেন, “আমি সৃষ্টিকর্তাকে দেখতে চাই। আপনি কি আমাকে দেখাতে পারেন? ব্রাক্ষণ বললো, ‘অবশ্যই! ভিতরে আসুন।” একথা বলে জমিদারকে মন্দিরের ভিতরে নিয়ে গিয়ে একটি মূর্তি দাড় করানো ছিল তার দিকে ইশারা করে বললো, “এই যে ইনি হলেন সৃষ্টিকর্তা।”

জমিদার বাবু বললেন, “এই সৃষ্টিকর্তা নয়। আসল সৃষ্টিকর্তাকে দেখতে চাই।” ব্রাক্ষণ বললো, “আমার কাছে এ সৃষ্টিকর্তাই আছে। এ ছাড়া আমি আর কিছু দেখাতে পারবো না।” জমিদার বাবু সেখান  থেকে বিদায় হলেন। তিনি শুনতে পেলেন অমুক জায়গায় এক সাধু আছে, বহুদিন থেকে সে সাধনা করছে। সে অবশ্যই সৃষ্টিকর্তা দেখাতে পারবে। সুতরাং জমিদার সেদিকে রওয়ানা হলেন। সাধুর আশ্রমে গিয়ে বললেন, “বহুদিন থেকে আমার সৃষ্টিকর্তা দেখার ইচ্ছা হয়েছে। আপনি যদি আমাকে সৃষ্টিকর্তা দেখান তবে আমার বহুদিনের একটি সাধ পূর্ণ হবে। সাধু বললেন, ঠিক আছে। এখনই সৃষ্টিকর্তা দেখিয়ে দিচ্ছি। ঐ যে দেখছেন পর্দা! ঐ পর্দা সরালেই সৃষ্টিকর্তা দেখতে পাবেন।

জমিদার পর্দা সরাতেই দেখেন বিশাল এক পাথরের মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে। তিনি সাধুকে বললেন, “এসব সৃষ্টিকর্তা তো ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি। আমি আসল সৃষ্টিকর্তা দেখতে চাই। সাধু বললেন, “এই সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আমার কাছে আর কোন সৃষ্টিকর্তা নেই। আপনি অন্যখানে চেষ্টা করুণ।”

অতঃপর জমিদার বাবু আরেক সাধুর সন্ধান পেলেন। অনেক দূর সফর করে সে সাধুর কাছে গিয়ে তার মনের বাসনা ব্যক্ত করলেন। সাধু বললেন, “এখন এখানেই অপেক্ষা করুণ। গভীর রাত্রে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়বে, চারিদিক নীরব নিস্তব্ধ হবে তখন সৃষ্টিকর্তা আগমন করবেন।”

জমিদার সাধুর কথামত অপেক্ষা করতে লাগলেন। রাত্রি যখন গভীর হলো তখন তাকে নিয়ে সাধু মন্দির থেকে বের হলেন। সাধু দূরে দিগন্তের দিকে আঙ্গুলি নির্দেশ করে বললেন, “ঐ যে দেখেন, একটা আলো এদিক থেকে ওদিকে যাচ্ছে ঐটাই পরমেশ্বরের জ্যোতি। জীবন্ত সৃষ্টিকর্তা, তিনি চলা-ফেরা করেন।”

জমিদার বাবু অবাক হলেন। কিন্তু তবু তার দ্বন্দ্ব রয়ে গেল। তিনি বললেন, “তাহলে কাছে গিয়ে দেখে আসি?” সাধু বললেন, খবরদার! কাছে যেয়ো না জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।”

জমিদার বাবু আগ্রহের আতিশয্যে ছুটে গেলেন পরমেশ্বরের জ্যোতি দেখতে। কাছে গিয়ে দেখেন একটি কচ্চপের পিঠের উপর সিমেন্টের ঢালাই করা সমতল একটা পাটাতান। তার উপর প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে। কচ্চপটি এদিক-সেদিক চলাফেরা করার সময় প্রদীপের আলো এদিক-সেদিক চলাফেরা করছে। একেই পরমেশ্বরের জ্যোতি নাম দিয়ে সাধু অনেক লোককে দেখিয়ে বেশ সুনাম অরজন করেছেন। জমিদার বাবু সাধুর কাছে এসে বললেন, “এটাতো একটা কচ্চপ মাত্র, সৃষ্টিকর্তা কোথায়?”

সাধু বললেন, “আমার কাছে এইটাই আছে আর কোন সৃষ্টিকর্তা নেই। তবে তোমার কাছে আমার অনুরোধ, কারো কাছে একথা প্রকাশ করবে না। তুমি কোথাও যেয়ো না। আমার কাছে থেকে যাও। হালুয়া রুটি এখানে প্রচুর আছে খেতে পারবে।”

জমিদার বললেন, হালুয়া রুটি আমার বাড়িতে অনেক আছে। হালুয়া চাই না। সৃষ্টিকর্তাকে দেখতে  চাই।” অবশেষে তিনি মুসলমানদের স্বরণাপন্ন হলেন। এক মসজিদে গিয়ে একজন মুসল্লিকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমাদের মধ্যে সব চেয়ে বড় আলেম কে?”

লোকটি আমার নাম বলে দিল যে তিনি হলেন মাওলানা আশরাফ আলী থানবী। অতঃপর জমিদার বাবু বহু রাস্তা অতিক্রম করে একদিন আমার কাছে এসে বললো, “আমি আল্লাহকে দেখতে চাই। বহু লোকের কাছে গেছি কেউ আমাকে আল্লাহ দেখাতে পারেনি। সাধু-সন্যাসী-পুরোহিতের কাছে গেলাম সবাই প্রতারণা করেছে। আমি আশা করি আপনি আমাকে আল্লাহ দেখাতে পারেন তবে আমি মুসলমান হয়ে যাবো।”

আমি বললাম, “তোমার মুসলমান হওয়াতে আমার কোন প্রয়োজন নেই। যদি তুমি মুসলমান হও তবে তুমি দোযখের আযাব থেকে বেঁচে যাবে এবং বেহেশ্তের অধিকারী হতে পারবে তাতে তোমারই লাভ হবে। আমার কোন প্রয়োজন নেই। তবে একটি কথা বলে দিচ্ছি, এ দুনিয়াতে কোনদিন আল্লাহকে দেখতে পাবে না। দুনিয়াতে আল্লাহকে দেখা সম্ভব না।

“আরেকটি সত্য কথা শুনে রাখ, তুমি যদি মুসলমান ও হও তবে অবশ্যই বেহেশ্তের প্রবেশ করবে। আর সত্য হলো একজন মুসলমান মৃত্যুর পরে যখন বেহেশ্তের প্রবেশ করবে তখন অবশ্যই সে আল্লাহকে দেখতে পারবে। লোকটির অন্তরে সত্য এত আছর করলো যে সে তখন বলে উঠলো, “হুজুর, আমি মুসলমান হতে চাই, আমাকে মুসলমান করে নিন।”

আমি তার আন্তরিকতা দেখে হাত বাড়িয়ে দিলাম। কালেমা পড়ে সঙ্গে সঙ্গে মুসলমান হয়ে গেল। সত্য কথার ওজন এত বেশী যে নিমষে পাথরও চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে ধুলায় পরিণত হয়ে যায়। উৎসঃ (আল-এফাযাতুল ইয়উমিয়্যাহ)  

১০. সৎ মায়ের আদর (শিক্ষামূলক গল্প)

গল্প প্রিয় পাঠক পাঠিকা, আশা এই দশটি ইসলামিক মজার গল্প ও ঘটনাগুলি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে এবং গল্পের মাধ্যমে ইসলামের কিছু বিষয়াদি জানতে ও বুঝতে পেরেছেন। এই গল্পগুলোর সম্পর্কে আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট বক্স আপনার আপনার মতামত লিখে পোস্ট করুন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.

Leave a Comment