ত্বকের বলিরেখা দুর করার সহজ উপায়

বলিরেখা বা বয়সের ছাপ, নিজের অপরূপ সৌন্দর্য সবার সামনে তুলে ধরতে সবচেয়ে বড় বাঁধা। বলিরেখা দূর করার প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায় নিয়ে লিখেছেন মেহজাবিন তাবাসসুম!

চেহারার তারুন্য হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন! আয়নার সামনে দাড়ালে কেমন যেন মুখ অমলিন লাগছে। মুখের বাড়তি ব্রন, ব্ল্যাক হেডস, কালো ছাপ এসব তো আছেই, সাথে চেহারায় বিভিন্ন ধরনের বয়সের ছাপ গুলো যেন একদমই বেমানান। সমবয়সীদের সাথে কেন এতই বয়সের পার্থক্য মনে হচ্ছে। বয়সের মাপকাঠির সাথে এসব উপসর্গ একদমই মেনে নেয়া যায় নাহ্। মেকআপ করেও আর এই দাগসমুহ লুকানো যাচ্ছেনা। পড়ে যাচ্ছেন দুশ্চিন্তায়?? টিনেজাররাও আজকাল এমন ত্বকের উপসর্গ এর থেকে রেহাই পাচ্ছে নাহ্। ত্বকের লাবন্য ফের আসবে, দৈনিক সহজ কিছু ঘরোয়া টিপসের মাধ্যমে।

বলিরেখা দুর করার উপায় এর আগে বলিরেখা কি এবং কেন হয় তা জেনে নেয়া শ্রেয়।

বলিরেখা কি?

  বয়স বৃদ্ধির সাথে ত্বকের ভিতরকার কোষগুলোর কার্যক্ষমতা অনেকাংশে কমে যায়। ধীরে ধীরে শরীরে এনজাইম সমুহেরও হ্রাস ঘটে। যার ফলে চেহারার ত্বক অনেকটা প্রভাবিত হয় এবং ত্বকের উপর দৃশ্যমান হয়। ফলে চামড়া কুচকে গিয়ে অনেকটা বয়স্কদের মতন চেহারা অমলিন দেখায়।

বলিরেখা কেন হয়?

 সাধারনত, বয়সের সাথে চামড়া কুচকে গিয়ে ছাপ পড়ে যাওয়া অনেকটা সাধারন। তবে, তরুণ-তরুণী কিংবা প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে ও এই বলিরোখার উপসর্গ দৃশ্যমান হয়। কিন্তু কেন হয়?

বংশগতিঃ সাধারনত, আমাদের শরীরের কাঠামো থেকে শুরু করে জৈবিক কার্যাবলি অনেকটা আমাদের বংশগতির প্রভাবে হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে,  পরিবারের অন্য সদস্যদের বলিরেখার ছাপ দ্রুত পরলে আপনার ও সম্ভাবনা থাকতে পারে।

খাদ্যভাসঃ দৈনন্দিন খাবারের মেন্যুতে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, খনিজ, মিনারেলসহ অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদানসমুহ থাকছে কি? ফ্যাট, অয়েলসমৃদ্ধ অপুষ্টিকর খাবার  স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি হতে পারে! সাথে কোষসমুহ ও জৈবিক কার্যাবলির ব্যঘাত ঘটিয়ে ত্বকে বলিরেখার সৃষ্টির সম্ভাবনাও বেশি।

পানিঃ প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০লিটার পানি পান জরা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। পর্যাপ্ত ওানি পান করলে শরীরের কোষগুলো সজীব ও সতেজ থাকে, সাথে দেহের কার্যক্ষমতা ও সাবলীল থাকে। শরীরে পানির ঘাটতি আপনার কোষসমুহে পানি ও রক্ত সঞ্চালনে অক্ষম হয়ে পড়ে, যার ফলে কোষসমুহ মৃত হয়ে ত্বকের উপর কুচকানো ভাবের সৃষ্টি হয়।

ত্বকের অঙ্গভঙ্গিঃ অল্প  একটু বিরক্তিকর ভাব প্রদর্শনীতে মাঝে মাঝে ব্রু কুচকানো টা অনেকের স্বভাব বলা যেতে পারে। আবার, অনেকে অট্টহাসির সময় ত্বকের আশেপাশের অংশে ভাজ পড়ে। ধীরে ধীরে ভাজগুলো স্থায়ী রুপ নেয়। তাই, ত্বকের অঙ্গভঙ্গির সন্ঞ্চালন হতে পারে অারেকটি কারন।

এছাড়া, ত্বকে কোলাজেনের মাত্রার অসঙ্গতির পারনে ইলাস্টিসিটি কমে গিয়ে ত্বকে বলিরেখার সৃস্টি হয়।

অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাঃ বাড়তি দুশ্চিন্তায় আপনার ত্বকে ফেলতে পারে বয়সের ছাপ। দেহের পাশাপাশি চেহারার মলিনতা রোধে এটি অন্যতম কারন।

ঘুমঃ রাত জাগা ও সঠিক সময়ে ঘুম না হওয়া অন্যতম কারন। দৈনিক ৭-৮ ঘনৃটা ঘুম আপনার দেহ ও মন ফুড়ফুরে রাখে। ফলে ত্বকের সজীবতা ঠিক থাকে।

UV রশ্মিঃ  সুর্যের আলোতে আলট্রা ভায়োলেট রশ্মিরঘর আধিক্য আপনার ত্বকে মারাত্নক প্রভাব ফেলতে পারে। কালোছাপ সৃষ্টি ছাড়াও বলিরেখা সৃষ্টিতে এটি প্রভাব ফেলে।

ত্বকে বলিরেখার সমস্যা থেকে উত্তীরনে করনীয়ঃ

 ত্বকের  তারুন্য হারিয়ে যাওয়ার দুশ্চিন্তা আর সইছে না। বাড়তি কোন টিপস ও কাজে দিচ্ছেনা!!

এমনসব চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজন দৈনিক কিছু নিয়মমাফিক সচেতনতা। সেটি হতে পারে খাদ্যতালিকা, ফেস মাস্ক অথবা শারীরিক ব্যায়াম। তবে চলুন, জেনে নিই আজকের সহজ কিছু ঘরোয়া টিপস!

যেসব  খাবার খেলে দুর হবে বলিরেখা :

টমেটোঃ প্রতিদিন খাবার তালিকায় টমেটো থাকা অত্যাবশ্যক। টমেটোতে প্রচুর পরিমান অক্সিডেন্ট রয়েছে যা স্বাস্থ্য ভালোরাখার সাথে ত্বকের কোষসমুহে সজীবতা প্রদান করে।

সবুজ শাকসবজিঃ মোসুমী টাটকা  শাকসবজি খেলে দেহের রোগ-প্রতিরোধ তো কমেই, সাথে এর পুষ্টিগুনসমুহ ত্বকে রক্ত সন্ঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং বলিরেখা অনেকাংশে কমিয়ে আনে।

গ্রীন-টিঃ প্রতিদিন গ্রীন-টি খেলে ত্বকে আলট্রা-ভায়োলেট রশ্মির প্রভাব কমে যায় এবং বার্ধক্য হ্রাসে সহায়তা করে।

গাজরঃ গাজর ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। প্রতিদিন গাজর খাওয়ায় ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিসহ, ত্বকের ছোপগুলো দুর হবে।

কাঠবাদামঃ রোজ ২-৩টে কাঠবাদাম খেলে ত্বকের লাবন্য ফিরে আসবে। এতে থাকা ভিটামিন- সি, ভিটামিন-ই  এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট কোসে কোলাজেন তৈরিতে সহায়ক ভুমিকা রাখে, যা ত্বকের বলিরেখা সমুহ দুরীকরনে সহায়তা করে।

লেবুর রসঃ ত্বকের ক্ষত রক্ষার্থে প্রতিদিন সকালে লেবুর রস এবং চিনির মিশ্রন খাওয়া অত্যন্ত উপকারী।

বেদানাঃ বেদানায় থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্টসমুহ ত্বকের বলিরেখা দুর করতে সাহায্য করে।

 সহজ কিছু ঘরোয়া টিপস :

অ্যালোভেরা জেলঃ অ্যালোভেরা জেল ও ডিমের সাদা অংশ গন প্যাক বানিয়ে মুখে ফেস মাস্ক হিসেবে লাগান। আধঘন্টা পর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২দিন এই ফেস মাস্ক ব্যবহারে দাগমুক্ত ত্বক ফিরে পেতে পারেন।

নারকেল তেলঃ নারকেল তেল ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃন করতে যুগ যুগ ধরে মানুষ ব্যবহার করে আসছে। ত্বকের বলিরেখার অংশগুলোতে তেল ক্লক এবং অ্যান্টক্লক ওয়াইজ ২বার ম্যাসাজ করুন। সারারাত রেখে পরদিন মুখ দুয়ে নিন। ত্বকের লাবন্য ফিরে আনতে এর কার্যকারিতা প্রশংসনীয়।

মধুঃ দুয়েক ফোটা মধু তুলোতে লাগিয়ে দাগ সমুহে লাগান এবং সারারাত রেখে সকালে মুখ ধুয়ে ফেলুন।  এতে, ত্বকের ক্লান্তিভাব দুর হয় এবং সজীবতা ফিরে আসে।

পাকা পেঁপে ও কলার প্যাকঃ কয়েক টুকরো পাকা পেপের সাথে অর্ধেক পাকা কলার পেস্ট বানিয়ে ফেস মাস্ক হিসেবে মুখে লাগিয়ে নিন। ১৫মিনিট পর হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। পেঁপে তে থাকা এনজাইম সমুহ ত্বকের কোষ সমুহকে পুনরুজ্জীবিত করে এবং ত্বকের তারুণ্য ফিরিয়ে আনে।

 ত্বকের সৌন্দর্য অনেকাংশে সুস্বাস্থ্য ও সুস্থ মনের উপরও নির্ভরশীল। দৈনিক নিয়ম মাফিক খাদ্যাভাস, বাড়তি টেনশন পরিহার, নিয়মিত ঘুম ও বিশ্রাম,শরীর ও মন দুই ই নিয়ন্ত্রণ করে। এতে ত্বকের সজীবতা অক্ষুণ্ণ থাকে। ত্বকের লাবন্য ধরে রাখতে আর নয় বাড়তি পরিচর্যা!  আশা করি, আজকের পোস্টটি আপনাদের উপকারে আসবে। এমনসব তথ্যবহুল ও কার্যকরী পোস্ট পড়তে  আমার বাংলা পোস্ট.কম এ চোখ রাখুন। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। আসসালামু আলাইকুম! 

লেখিকার টাইমলাইন থেকে আরও কিছু…

For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.

Leave a Comment

Discover more from Amar Bangla Post

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading