অবৈধ প্রেম : প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি (ভালোবাসার বেদনার গল্প)

অবৈধ প্রেম এর বাস্তব ঘটনার গল্পটি যুবক মাহবুব ও যুবতি মরিয়মের। তাদের জীবনের ভালোবাসার প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির বেদনার গল্প টি পড়ুন। 

অবৈধ প্রেম – মাহবুব ও মরিয়মের বাস্তব প্রেমের গল্প !

নীরব একটি এলাকা। যদিও এলাকাটি শহরের সন্নিকটে তথাপি এলাকার মানুষগুলো একদম শান্ত। কেউ কোন ঝগড়া-ঝাটি পছন্দ করে না। তবে যুগের পরিবর্তনে কিছু সংখ্যক যুবক উৎপাত করার চেষ্টা করলেও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কারণে পারে না। পাশেই একটি নদী। নদীর অনতিদূরে একটি কলেজ। কয়েকটি মাদরাসাও সেখানে রয়েছে। অনেক তালিবে ইলম দেশ-বিদেশ থেকে এসে ইলমে দ্বীন শিক্ষা করে সেখানে।

মাহবুব নামের এক ছাত্র। সেখানকার এক কলেজে পড়ে। অত্যন্ত অমায়িক। আদর্শ ছেলে হিসাবে যদি কাউকে চিহ্নিত করতে হয় তাহলে সেই অগ্রাধিকার পাবে। তাঁর চলা-ফেরা, কথা-বার্তা, লেন-দেন, আচার-ব্যবহার ইত্যাদি মুগ্ধ করেছে এলাকার সকল মানুষকে, তাঁর বুদ্ধিমত্তা জয় করেছে সকলের হৃদয়। ছোট হিসেবে তাঁর যোগ্যতাও কম নয়। তাঁর যোগ্যতা ও বুদ্ধির কাছে এলাকার ভাল ভাল লোকেরাও হার মানে। সকলেই এখন তাঁর ভক্ত। আপন সন্তানের চেয়েও বেশি ভালবাসে তাকে। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে তাঁর সুনাম। বয়স আনুমানিক ২০ হবে। এখনো বিয়ে-শাদি করে নি।

অবৈধ প্রেমঅনেক মেয়েরাও দুর্বল হয়ে পড়েছে তাঁর প্রতি। সে এসবের প্রতি কোনও ভ্রুক্ষেপ করে না। সে তাঁর নিজের মতই চলে। কিন্তু এমন দিন যায় না- যে, দিন কোন না কোন মেয়ে ফোন করে, সেই সাথে চিঠি পত্রও আসে মাঝে মধ্যে। কিন্তু তাতে মাহবুবের কিছু আসে যায় না। কারণ সে এসবকে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করে। সে চায় তাঁর ঘরে এমন একটি মেয়ে বধূ হয়ে আসুক যে হবে আল্লাহওয়ালা-পর্দানশীন। যার ব্যবহার হবে শান্ত কোমল, হবে স্বামী ভক্ত। এমন একটি মেয়েকে ঘরে এনে তাঁর ঘরকে আলোকিত করবে। গড়ে তুলবে একটি সুখের সংসার এবং পরকালেও হবে একে অপরের সাথী। এদিক শয়তানও বসে নেই। সে সর্বদা মাহবুবের পিছনে লেগে আছে। একটি পুরুষকে খারাপ পথে নেয়ার বড় অস্ত্র হলো একটি নারী। আর ইবলিশ বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে নারী দিয়েই পুরুষদের ধ্বংস করে থাকে।

একদিনের ঘটনা। একটি ছেলে মাহবুবের কক্ষে প্রবেশ করে সালাম দিল। মাহবুব তাঁর অভ্যাসানুযায়ী সালামের উত্তর দিয়ে স্নেহভরা কণ্ঠে ছেলেটির কুশলাদি জিজ্ঞাসা করল। অনেক কথাবার্তা হল দু’জনের কোন ভালো বই আছে? মাহবুব বলল, হ্যাঁ আছে। কেন তোমার লাগবে নাকি? ছেলেটি বলল, আপু একটি বই চেয়েছে আবার দিয়ে দিবে। মাহবুব বলল, না দেয়া লাগবে না। যদি তোমার আপু আমার বই পড়ে ভালো হতে পারে তাহলে দেয়া লাগবে না।   

এভাবে একেক করে অনেক বই নিয়ে পড়েছে মেয়েটি। মাঝে মধ্যে প্রসংশামূলক অনেক লেখাও পাঠাতো মাহবুবের কাছে। এক পর্যায়ে মাহবুব বুঝতে পারল মেয়েটি তাঁর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। মেয়েটির নাম মরিয়ম। সে আর মাহবুব যেন একই চরিত্রের। অন্য মেয়েরা যেভাবে খোলামেলা স্কুল কলেজে আসা যাওয়া করে। মরিয়ম কিন্তু একেবারে ভিন্নধর্মী। বোরকা পরে কলেজে আসা যাওয়া করে। কারো সাথে কোন প্রকার বেহুদা কথা-বার্তা বলে না। মরিয়মের চলাফেরায় মাহবুব মুগ্ধ হয়। এরকম একটি মেয়েই চেয়েছিল মাহবুব। তাঁর সমস্ত গুণই মরিয়মের মধ্যে বিদ্যমান। মরিয়মও চায় একটি আলেম ছেলেকে স্বামী হিসেবে বরণ করতে।

কিন্তু চাইলে কি হবে? মরিয়মের বাবা আধুনিক যুগের একজন আধুনিক মানুষ। তাই মাহবুব চিন্তার সাগরে ডুবে গেল। চিন্তা করলো, এমন একটি ভাল মেয়ে যদি আজ মুসলমানরূপী একটি খৃষ্টানের ঘরে চলে যায় তাহলে ইহকাল-পরকাল সবই বরবাদ হয়ে যাবে। আর মেয়েটিও এখন অসহায়। তাই একে উছিলা স্বরূপ রক্ষা করার দায়িত্ব একমাত্র আমারই। তাই তাঁর ডাকে সাড়া দেয়া দরকার। ইবলিশ এসে কাঁধে বসল মাহবুবের। কোন দিকে তাকাল না সে, একবার সে ভেবে দেখলো না সে, কি এর পরিণাম। কত লাঞ্চিত ও অপমানিত হতে হবে ভবিষ্যতে। যদিও মাহবুবের খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না; সে চেয়েছিল তাঁর জীবনকে সুন্দর করে সাজাতে। একটি মেয়ে যদি তার উছিলায় সুন্দর করে তার জীবন গড়ে তুলতে পারে তাতেই সে স্বার্থক। তাই এক সময় মরিয়মের ডাকে সাড়া দিল মাহবুব। নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করল এ মেয়েটিকে নিয়ে। শেষ পর্যন্ত তাকে জীবন সঙ্গী করে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিল।

একদিন দু’জনের মুখোমুখি সাক্ষাৎ হল। অনেক কথাবার্তা হলো তাদের মধ্যে। এক সময় দু’জন দু’জনের প্রেমে ডুবে গেল। বহুদিন পর্যন্ত পত্র বিনিময় হল। এখন একে অপরকে ছাড়া কিছুই বুঝে না। দু’জন দু’জনকে না দেখে এক মুহুর্তও থাকতে পারে না। গভীর সম্পর্কে আটকে গেল তারা। এক পর্যায়ে অভিভাবকদের না জানিয়ে শরিয়তের দৃষ্টিতে একটি ছেলে এবং একটি মেয়ের বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার জন্য যতুটুকু কথা-বার্তা এবং শর্তাবলী দরকার তা তারা শেষ করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হল। এর কারণ একটাই ছিল যে, যদি মেয়ের গার্ডিয়ান জেনে ফেলে তাহলে কখনো তারা এ সম্পর্ক মেনে নিবে না। তাই তারা এমন কাজ করতে বাধ্য হয়েছে।

এক সময় তারা সিদ্ধান্ত নিল, প্রমান স্বরূপ কাবিন করার প্রয়োজন। যেমন সিদ্ধান্ত তেমন কাজ। ঠিক এমন সময় মেয়ের ছোট চাচা যে কোনভাবে ঘটনাটি জেনে ফেলে। কাবিন আর করা হলো না, তখন থেকেই তাদের দু’জনের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন। এত দিনে মাহবুব মরিয়মের পিছনে অগণিত টাকা খরচ করেছে। যতদিক থেকে যত টাকা আসত তাঁর অধিকাংশই মরিয়মের পিছনে  খরচ করেও মনে বড় আনন্দ পেত।

যা হোক, ইবলিশের বাসনা এবার পূর্ণ হল। শুরু হল বেইজ্জতির পালা। পর্যায়ক্রমে এলাকার আরও কিছু লোক ঘটনাটি জেনে গেল। কেউ বিশ্বাস করছে, কেউ করছে না। কেউ কেউ কল্পনাও করতে পারছে না যে, এমন ছেলের দ্বারা এমন কাজ কি করে সম্ভব। মুহূর্তের মধ্যে সমস্ত মান-সম্মান ধূলিস্যাত গেল। গণপিটুনী ও ধিক্কার থেকেও রেহাই পেল না মাহবুব। অবশেষে কলংকের বোঝা মাথায় নিয়ে ঐ এলাকা থেকে চলে যেতে হল। এখন মরিয়ম কি করবে?  দুঃখের অনলে পরে ছারখার হয়ে গেল দু’জনের অন্তর। বিশেষ করে মরিয়ম এখন একেবারে নিরুপায়। সে এখন মা বাবার ভয়ে মুখ খুলতে পারছে না। তাই বাধ্য হয়ে সব কিছু অস্বীকার করে ফেলে।

মাহবুব এসব কথা শুনে হতবাক, চিন্তা করল, হায় এখন মেয়েটার কি হবে? সেতো একেবারে ধ্বংস হয়ে যাবে।

তাই সে মরিয়মের প্রেরিত পত্রগুলোর মধ্য থেকে বাছাই করে কয়েকটি পত্র তার পিতার নিকট পাঠাল। যে পত্রের মধ্যে মরিয়ম মাহবুবকে স্বামী বলে আখ্যায়িত করছে। কিন্তু তাতে তারা কর্ণপাত করল না। কারণ তারা তো আর শরিয়ত বুঝে না যে, মেয়ের বিবাহ হয়েছে, এখন তাকে অন্য কোথাও বিবাহ দেয়া যাবে না। পূর্বের বিবাহে থাকা অবস্থায় অন্যত্র বিবাহ দিয়ে স্বামী-স্ত্রী রূপী নারী-পুরুষের যাবতীয় কর্ম যেমন হারাম হবে তেমনি তাদের দৈহিক সম্পর্কের কারণে জন্ম নেওয়া সন্তানও হবে জারজ সন্তান।। ইহকাল-পরকাল সবকিছুই ধ্বংস হবে। কিন্তু এ কথা কে বুঝাবে এদেরকে? একমাত্র মেয়েই প্রমাণ করতে পারে এর সত্যতা। রক্ষা করতে পারে এসব গুনাহর কাজ থেকে। না হয় এরা অবৈধ প্রেম প্রীতির ভেলায় উঠে ধ্বংসের সাগরে ডুবে মরবে নিশ্চিত।

প্রিয় পাঠকবৃন্দ! আজ পর্যন্ত এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি যে, অবৈধ সম্পর্কের দ্বারা মানুষ পুরোপুরি সুখি হতে পেরেছে। পক্ষান্তরে এ অবৈধ সম্পর্কের দ্বারা মান-ইজ্জত, সুনাম ইত্যাদি হারাতে হয়। হতে হয় লাঞ্চিত ও অপমানিত। মাহবুব-মরিয়মই এর উৎকৃষ্ট প্রমাণ। তাই আসুন, আমরা আজ থেকে দীপ্ত শপথ নেই, আমরা কোন দিন অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলব না। অবৈধ প্রেমের পরিণতি লাঞ্চনা ও অপমান ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না। নফছ ও শয়তানের ধোকা থেকে হুঁশিয়ার থাকতে হবে। কারণ যত বড় পীর দরবেশই হই না কেন শয়তান আমাদের পিছে লেগেই আছে। হে আল্লাহ! আমাদেরকে উপরোক্ত ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহন করে এসব কুকর্ম থেকে দূরে থাকার তাওফীক দাও। আমীন। ছুম্মা আমীন

ঘটনার উৎস ও সহায়তাঃ ঘটনাটি চাঁদপুরস্থ রঘুনাথপুর এলাকার ২০০৫ ইং সালে সংগঠিত একটি সত্য ঘটনা। সংগ্রহ করে পাঠিয়েছেন মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মিছবাহ, কুয়াকাটা, পটুয়াখালী)।   

লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম। সাড়া জাগানো সত্য কাহিনী (হৃদয় গলে সিরিজ ১৩) বই থেকে।

হৃদয় গলে সিরিজের আরও গল্প যা আপনি পড়তে পারেন।

০১. মায়ের অবাধ্য হয়ে হজে যাওয়ার পরিণতি

০২. মায়ের অভিশাপ : সন্তানের করুণ পরিণতি গল্প

০৩. ভয়ংকর সাপ (কবরের আজাবের গল্প ১)

০৪. যুবতীর কবলে যুবক (প্রেমের গল্প)

০৫. ব্যথিত হৃদয় (ইসলামিক উপন্যাস ১)

প্রিয় পাঠক পাঠিকা, আশা করি হৃদয় গলে সিরিজের অবৈধ প্রেম এর বাস্তব ঘটনা পড়ে আপনার ভালো লেগেছে। এটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। 

For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.

Leave a Comment