শিশুরা গল্প পড়তে ও শুনতে ভালোবাসে। আপনার শিশুকে মজার ইসলামিক গল্প গুলো পড়ে শোনান যা আদর্শ, শিক্ষণীয় ও অনুপ্রেরণামূলক। শিশুরা নরম কাদা মাটির মতো এবং তারা বড়দেরকে অনুকরণ করতে ভালোবাসে। তাই শিশুদের পবিত্র নরম মননে ও চিন্তায়-চেতনায় ছোটকালেই সঠিক আদর্শ ও ইতিবাচক অনুকরণীয় ভালো কর্মপন্থা গুলো ঢুকিয়ে দিতে পারলে শিশুদের বিপথগামীতা থেকে রক্ষা করা যায়। আপনার শিশুর অনুকরণীয় জন্য এখানে কিছু শিশুতোষ ইসলামিক গল্প রয়েছে:
নবীজী ও কাঠুরিয়া : শিশুতোষ ইসলামিক মজার গল্প ১!
আরব দেশের মক্কা শহর। ৫৭০ খৃস্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল সেই শহরে জন্ম নেয় এক শিশু। তাঁর নাম রাখা হয় মুহাম্মদ—মানে প্রশংসিত। তাঁর পিতার নাম আবদুল্লাহ, মায়ের নাম আমিনা। তিনি আমাদের মহানবী। পৃথিবীর শেষ নবী। তিনি জানতেন, পরিশ্রম করা ছাড়া জীবনের উন্নতি করা যায় না। তাই পরিশ্রম করাকে তিনি খুব গুরুত্ব দিতেন।
একবার হলো কি, এক গরীব লোক তাঁর কাছে সাহায্য চাইতে এলো। নবীজী তাকিয়ে দেখলেন লোকটির পরনে ছেঁড়া কাপড়, চোখে-মুখে বেদনার ছাপ। লোকটি পঙ্গু বা বুড়ো নয়, ইচ্ছে করলেই কাজ করে খেতে পারে। তিনি বললেন, ‘তুমি ভিক্ষা করছো কেন?
খেটে খেতে পারো না?’
লোকটি বলল, ‘কি করবো হুজুর, কাজ পেলে কি আর ভিক্ষা করতাম? কাজ না পেয়েই তো পেটের দায়ে ভিক্ষায় নেমেছি।’
নবীজীর মায়া হলো। ভাবলেন, সাহায্য দিলে হয়তো একবেলা তাঁর আহার জুটবে। কিন্তু তারপর? সারাজীবন কি একটি লোক ভিক্ষা করে কাটাবে? এমন কিছু করা দরকার যাতে তাঁর অভাব দূর হয়। মানুষের কাছে হাত পেতে অপমান সইতে না হয়। মহানবী (সাঃ) তাঁকে বললেন, ‘তোমার বাড়িতে কি এমন কিছু আছে যা বিক্রি করতে পারবে?’
লোকটি বলল, ‘হুজুর, আমি গরীব মানুষ। তেমন কিছুই নেই। তবে ঘরে একটি কম্বল আছে, চাইলে ওটা বিক্রি করা যায়।’
নবীজী বললেন, ‘ঠিক আছে, তাই করো। তোমার একমাত্র সম্বল কম্বলটাই নিয়ে এসো।’
লোকটি তাই করলো। নবীর কথা মত চলে গেল বাড়ি। একটু পর ফিরে এলো কম্বল নিয়ে। নবীজী কম্বলটি সাহাবীদের দেখালেন। বললেন, ‘এটি বিক্রি হবে। কেউ কি উপযুক্ত মূল্য দিয়ে কম্বলটি কিনতে রাজি আছো?’
নবীজীর কথা শুনে এক সাহাবী বললেন, ‘আমি কিনবো হুজুর।’
মহানবী (সাঃ) তাঁর কাছে উপযুক্ত দামে কম্বলটি বিক্রি করে দিলেন। কম্বল নিয়ে সাহাবী চলে গেলে নবীজী লোকটিকে ডাকলেন। তাঁর হাতে কিছু অর্থ তুলে দিয়ে বললেন, ‘এই অর্থ দিয়ে কিছু খাবার কিনে খাও।’ এরপর বাকী অর্থ দিয়ে তিনি একটি কুঠার কিনলেন। সেই কুঠারে নিজেই হাতল লাগালেন। লোকটিই বললেন, ‘এই কুঠার নিয়ে প্রতিদিন বনে যাবে। বন থেকে কাঠ কেটে বাজারে বিক্রি করবে।’
লোকটি তাই করলো। সে প্রতিদিন বন থেকে কাঠ কেটে সেই কাঠ বাজারে বিক্রি করতে থাকলো। এতে তাঁর খুব লাভ হলো। তাঁর অভাব দূর হয়ে গেল। এখন আর তাঁকে ভিক্ষা করতে হয় না; বরং অভাবী মানুষকে নিজেই সাহায্য করতে পারে।
কিছুদিন পর। সে মহানবীর সঙ্গে আবার এসে দেখা করলো। এবার তাঁর গায়ে নতুন জামা। মুখে হাসি। সে রাসূল (সাঃ) কে বলল, ‘আমি এখন মেহনত করে খাই। আমার আর কোন অভাব নেই। আপনার কথা শুনের আমার খুব উপকার হয়েছে। আপনি আমাকে সুন্দর জীবনের পথ দেখিয়েছেন।’
তাঁর কথা শুনে হাসলেন নবী। বললেন, ‘যে মেহনত করে খায় আল্লাহই তাঁকে সাহায্য করেন।’ তাইতো কবি বলেনঃ ‘নবীর শিক্ষা করো না ভিক্ষা, মেহনত করো সবে।’
এই ঘটনা আমাদের বলে, জীবনে উন্নতি করতে চাইলে পরিশ্রমী হও, জীবনকে সফল করতে চাইলে পরিশ্রমী হও। যে পরিশ্রমী নয় সে অলস, সে কখনো সফলতা লাভ করতে পারে না। একজন কবি চমৎকার ভাবে এ কথাটিই বলেছেন তাঁর কবিতায়। তিনি বলেনঃ
পরিশ্রমে ধন আনে, পুণ্যে আনে সুখ, আলস্যে দারিদ্র্য আনে, পাপে আনে দুঃখ।
ঈমানের জোর: শিশুতোষ ইসলামিক গল্প ২!
আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগের কথা। তখন মানুষ আল্লাহর নবীদের কথা মেনে চলতো। মানুষ সত্য কথা বলতো। ওয়াদা পালন করতো। বনি ইসরাঈলের এমনি এক লোক বাস করতো। নাম রুবায়া। সে দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াতো আর বন্দরে বন্দরে ব্যবসা করতো। একবার বাণিজ্যের যাবার আগে কিছু স্বর্ণমুদ্রার টান পড়লো। ভেবে দেখলো, কারো কাছ থেকে ধার নেয়া ছাড়া গতি নেই। তখনি তাঁর মনে পড়লো উদার হৃদয় সোলায়মানের কথা।
পরদিন সকালে সে সোলায়মানের বাড়ি গিয়ে হাজির হলো। সালাম বিনিময়ের পর সোলায়মান তাঁর আগমনের কারণ জানতে চাইলেন। রুবায়া বলল, ‘বাণিজ্যে যাচ্ছি, মালামাল কেনার জন্য আরো কিছু স্বর্ণমুদ্রা দরকার। আপনি যদি একহাজার স্বর্ণমুদ্রা ধার দেন তবে এক বছর পর তা শোধ করে দেবো।’
সোলায়মান বললেন, ‘ধার দিতে সমস্যা নেই, তবে জামিনদার দরকার।’
রুবায়া বলল, ‘আমার জামিনের জন্য একমাত্র আল্লাহই যথেষ্ট।’
রুবায়া যেমন পাক্কা ঈমানদার, সোলায়মানও তাই। রুবায়ার কথা শুনে বললেন, ‘আপনি ঠিকই বলেছেন, আল্লাহই জামিনের জন্য যথেষ্ট।’
এ কথা বলে রুবায়াকে সোলায়মান এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা ধার দিল। যথাসময়ে জাহাজে চড়ে বিদেশে পাড়ি জমালো রুবায়া। বন্দরে বন্দরে ব্যবসা করে প্রচুর লাভ করলো। ব্যস্ততাঁর মধ্য দিয়ে কেটে গেল প্রায় পুরোটা বছর। স্বর্ণমুদ্রা ফেরত দেয়ার দিন ঘনিয়ে এলো। বাড়ি ফেরার জন্য বন্দরে এলো রুবায়া। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে বাড়ি ফেরার মত কোন জাহাজ পেলো না। জলপথ ছেড়ে স্থলপথে বাড়ি ফিরতে চাইল, কিন্তু কোন যানবাহন জোগাড় করতে পারল না। অনেক চেষ্টা করেও সে যখন দেখলো সময় মত ফেরার কোন উপায় নেই তখন ওয়াদাভঙ্গের আশংকায় সে অস্থির হুয়ে পড়লো। কি করা যায় ভাবতে গিয়ে তাঁর মাথায় এক অভিনব বুদ্ধি এলো। রুবায়া একটুকরো কাঠ ছিদ্র করে তাতে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা ও একটি চিঠি ভরলো। এরপর শক্ত করে ছিদ্রমুখ বন্ধ করে সে গেল সাগর পাড়ে।
তীরে দাঁড়িয়ে সে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো, ‘হে আল্লাহ, তুমি জানো আমি সোলায়মানের কাছ থেকে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা ধার নিয়েছি। সে জামিন চাইলে আমি তোমাকেই জামিন মেনেছিলাম। নির্দিষ্ট দিনে বাড়ি যাওয়ার জন্য আমি কোন যানবাহন পাচ্ছি না। তাই তোমার ওপর ভরসা করে স্বর্ণমুদ্রা ভরা এই কাঠের টুকরাটি সমুদ্রে ফেলে দিচ্ছি। তুমি সময়মত এটি তাঁর হাতে পৌঁছে দিও।’
রুবায়া এ কথা বলে কাঠের খন্ডটি সমুদ্রে ফেলে দিল। এরপর সে আবার বাড়ি ফেরার যানবাহন খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
এদিকে নির্দিষ্ট দিনে সোলায়মান বন্দরে এসে রুবায়াকে তালাশ করলো। তাঁকে না পেয়ে মন খারাপ করে বাড়ি ফেরার পথে সমুদ্র তীরে একখন্ড কাঠ দেখতে পেলো। কাঠটি রান্নার কাজে লাগবে ভেবে সে ওটা নিয়ে বাড়ি ফিরল। কুড়াল দিয়ে কাঠটি কাটতে গেলে বেরিয়ে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা ও চিঠি। সোলায়মান চিঠিটা পড়লো। জানতে পারলো রুবায়া তাঁর জন্যই এ স্বর্ণমুদ্রা গুলো পাঠিয়েছে।
কিছুদিন পরের কথা। রুবায়া দেশে ফিরে এলো। বাড়ি ফিরেই সে গেল সোলায়মানের বাসায়। সোলায়মান তাঁকে সমাদর করে শরবত, নাস্তা খেতে দিল। খেতে খেতে রুবায়া বলল, ‘বিশ্বাস করুণ, নির্দিষ্ট দিনে আপনার পাওনা ফিরিয়ে দিতে আমি অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোন জাহাজ না পাওয়ায় সময়মত ফিরে আসতে পারিনি। এই নিন আপনার স্বর্ণমুদ্রা। আমাকে দেনার দায় থেকে মুক্তি দিন।’ রুবায়া স্বর্ণমুদ্রার থলে সোলায়মানের দিকে বাড়িয়ে ধরলো।
সোলায়মান বলল, ‘এক পাওনা আমি কয়বার নেবো? নির্দিষ্ট দিনেই আমি আপনার পাঠানো স্বর্ণমুদ্রা ও চিঠি পেয়েছি। আমি আল্লাহর শোকর করছি এ জন্য যে, প্রকৃত ঈমানদারকে আল্লাহ এভাবেই সহায়তা করেন।’ রুবায়াও আল্লাহর শোকর আদায় করে খুশি মনে বাড়ির পথ ধরলো।
গল্প থেকে শিক্ষা!
এই গল্প থেকে আমরা জানতে পারলাম, আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস থাকলে আল্লাহ কাউকে নিরাশ করেন না। মুমিন কখনো ওয়াদা খেলাফ করেন না।
ইয়াতিমের হাসি : শিশুতোষ ইসলামিক গল্প ৩!
মুসলমানদের সবচেয়ে আনন্দের দিন হলো ঈদের দিন। বছরে দুই দিন ঈদ হয়। এক মাস রোযার শেষে আসে ঈদুল ফিতর। যারা আল্লাহর হুকুমে এম মাস রোযা রাখে এদিনটি তাঁদের জন্য সবচেয়ে আনন্দের। আর হচ্ছে ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদ। হযরত ইবরাহীম (আঃ) কে আল্লাহ বললেন, ‘তোমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কোরবানী করো।’ ইবরাহীম (আঃ) ভেবে দেখলেন, পুত্রের চেয়ে প্রিয় আর কিছু নেই তাঁর কাছে। তিনি পুত্রকে শোনালেন আল্লাহর হুকুম। পুত্র ইসমাঈল (আঃ) পিতাকে তাগাদা দিয়ে বললেন, ‘তবে আর দেরি করছেন কেনো? জলদি আমাকে কোরবানি করার ব্যবস্থা করুণ।’ আল্লাহর হুকুম মানার ব্যাপারে পিতা-পুত্রের এই যে আকুলতা সেই কথা স্মরণ করে পালন করা হয় ঈদুল আযহা বা কোরবানীর ঈদ। যিনি যত বেশি আল্লাহর হুকুম পালন করেন তাঁর কাছে এই ঈদ তত বেশি আনন্দময়।
তেমনি এক ঈদের দিন। মদিনার ঘরে ঘরে খুশির জোয়ার বইছে। মহানবী (সাঃ) নির্দেশ দিয়েছেন, সবাইকে ফিতরা দিতে হবে। ফিতরা মানে নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ অন্যকে দান করা। এর ফলে অর্থ শুধুমাত্র ধনীদের হাতেই জমা রইলো না, গরীবরাও প্রচুর অর্থ পেল। তারাও সুযোগ পেল পছন্দমত কেনাকাটার। ফলে সবাই আনন্দিত। ঈদের নামায শেষে মহানবী (সাঃ) সবার সাথে কোলাকুলি করলেন। কোলাকুলি শেষে সবাই বাড়ির পথ ধরলো। মহানবীও চললেন বাড়ির পানে। হঠাৎ কারো কান্নার আওয়াজ ভেসে এলো তাঁর কানে। থমকে দাঁড়ালেন তিনি। যেখান থেকে কান্নার আওয়াজ আসছিল সেদিকে এগিয়ে গেলেন তিনি। দেখলেন মলিন পোশাকের এক কিশোর বসে বসে কাঁদছে। দয়াল নবীর দয়া হলো। ছেলেটির কাছে এগিয়ে গেলেন তিনি। মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করলেন। আদর পেয়ে ছেলেটির কান্না আরো বেড়ে গেল। তিনি ছেলেটির কাছে জানতে চাইলেন তাঁর কান্নার কারণ।
ছেলেটি বলল, ‘আজ ঈদের দিন। মানুষের মনে কত আনন্দ। সবাই নতুন জামা কাপড় পড়েছে। মা-বাবা আদর করছেন সন্তানদের। কিন্তু আমাকে আদর করার কেউ নেই। আমার একটু খোঁজ নেয়ারও কেউ নেই দুনিয়ায়। আমার বাপ নেই, মা নেই। আমি যে ইয়াতিম।
কিশোরের কথা শুনে নবীর চোখে পানি চলে এলো। আহা! এই ছেলেটির মত আরো না জানি কত মায়ের সন্তান ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত। যদি তাঁদের খবর পেতাম! যদি তাঁদের মুখেও ফোটাতে পারতাম হাসি!
তিনি কিশোরকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। মা আয়েশার (রাঃ) হাতে ছেলেটিকে তুলে দিয়ে বললেন, ‘এ এক শহীদের সন্তান। ওর মা-বাপ কেউ নেই। আজ থেকে তুমিই ওর মা।’
মা আয়েশা (রাঃ) ছিলেন নবীর সহধর্মিনি। তিনি ছেলেটিকে বুকে টেনে নিলেন। নিজ হাতে গোসল করালেন। নতুন জামা এনে পরতে দিলেন। ভালবাসা পেয়ে কিশোরের মনটা ভালো হয়ে গেল। তাঁর মুখে ফুটে উঠলো মধুর হাসি। সে ভুলে গেল তাঁর দুঃখের কথা। ভুলে গেল সে এক অনাথ শিশু।
এ দুনিয়ায় এখন তাকেও ভালবাসার মত মানুষ আছে। আদর করার লোক আছে—এ কথা মনে হতেই তাঁর মুখে ছড়িয়ে পড়লো হাসি। সে আনন্দে বলে উঠলো—ঈদ মোবারক।
কৃপণের ধন – শিশুদের জন্য শিক্ষনীয় গল্প ৪!
বনি ইসরাঈল গোত্রে বাস করতো তিন ব্যক্তি। একজন কুষ্ঠরোগী, একজন টাকু আর অন্যজন অন্ধ। তাঁদের পরীক্ষা করার জন্য আল্লাহ এক ফেরেশ্তা পাঠালেন। মানুষের বেশে ফেরেশতা গেল কুষ্ঠরোগীর কাছে। বলল, ‘তুমি আল্লাহ কাছে কি চাও?’ সে বলল, ‘আমি এই কুৎসিত রোগ থেকে মুক্তি চাই। ফেরেশতা তার শরীরে হাত বুলিয়ে দোয়া করলো। সঙ্গে সঙ্গে সে ভালো হয়ে গেল। ফেরেশতা বলল, ‘তুমি কি কোন সম্পদ চাও” সে খুশি হয়ে বলল, ‘হ্যাঁ, আমি উট পেলে খুশি হই।’ ফেরেশতা তাঁকে একটি গর্ভবতী উট দিল। এরপর আল্লাহর দরবারে বরকতের জন্য দোয়া করে বিদায় নিল।
ফেরেশতা টাকমাথা লোকটির কাছে গিয়ে বলল, ‘তুমি আল্লাহর কাছে কি চাও?’ লোকটি বলল, ‘টাকের কারণে মানুষ আমাকে অপছন্দ করে। আমি এর নিরাময় চাই।’ ফেরেশতা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই নতুন চুলে তার মাথা ভরে গেল। ফেরেশতা বলল, ‘তুমি কি কোন সম্পদ চাও?’ সে বলল, আমি গরু পেলে খুশি হই।’
ফেরেশতা তাঁকে একটি গর্ভবতী গাভী দিল আর আল্লাহর দরবারে বরকতের জন্য দোয়া করে বিদায় নিল। এবার ফেরেশতা গেল অন্ধ লোকটির কাছে। বলল, ‘তুমি আল্লাহর কাছে কি চাও?’ লোকটি বলল, ‘অন্ধ বলে আমি আল্লাহর দুনিয়া দেখতে পারি না। আমি চাই চোখের আলো, যেন আল্লাহর সৃষ্টিয়ামি প্রাণভরে দেখতে পারি।’ ফেরেশতা তার চোখে হাত বুলিয়ে দিলে তার চোখ ভালো হয়ে গেল। ফেরেশতা বলল, ‘তুমি কি কোন সম্পদ চাও?’ সে বলল, ‘হ্যা,আমি একটি ছাগল পেলে খুশি হই।’
ফেরেশতা তাঁকে একটি গাভীন ছাগল দিল। এরপর আল্লাহর দরবারে বরকতের জন্য দোয়া করে বিদায় নিল। ফেরেশতার দোয়া কবুল করলেন আল্লাহ। তাঁদের দিলেন অনেক উট, গরু ও ছাগল। অল্পদিনেই তাঁরা ধনী হয়ে গেল। মানুষ তাঁদের এই অভাবিত উন্নতি দেখে হতবাক। কিছুদিন পর সেই ফেরেশতা আবার তাঁদের কাছে এলো। এলো অন্য মানুষের বেশে। প্রথমে গেল কুষ্ঠরোগীর কাছে। বলল, ‘আমি এক মুসাফির। পথ খরচ ফুরিয়ে যাওয়ায় আমি এখন নিঃস্ব। আমার বাহন উটটি মরে গেছে। আল্লাহ আপনাকে দিয়েছেন চমৎকার চেহারা, অঢেল সম্পদ। যে আল্লাহ আপনাকে এতকিছু দিয়েছেন তার নামে আপনার কাছে একটি উট চাই।’
লোকটি বলল, ‘হতভাগা কোথাকার! দূর হ এখান থেকে। সারাজীবন খেটে আমি তোর জন্য সম্পদ গড়েছি নাকি?’
ফেরেশতা বলল, ‘সম্পদের মালিক আল্লাহ। সম্পদ নিয়ে বড়াই করবেন না। আল্লাহ যা দিয়েছেন তা থেকে আল্লাহর বান্দার জন্য ব্যয় করুন।’
লোকটি এবার রেগে দিয়ে বলল, ‘কি, আমাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে? যা যা, কিছুই পাবি না। ভাগ এখান থেকে।’
ফেরেশতা বলল, ‘আপনাকে মনে হয় আমি চিনতে পেরেছি। আপনার খুব খারাপ কুষ্টরোগ ছিল। আপনি ছিলেম গরীব। পরে আল্লাহ আপনাকে সুস্থ করে দেন। আপনাকে দান করেন অঢেল সম্পদ।’
‘মিথ্যে কথা! লোকটি চেঁচিয়ে বলল, ‘এসব কাহিনী বানিয়ে তুমি আমার কাছ থেকে কিছুই আদায় করতে পারবে না।’
ফেরেশতা বলল, ‘আমি মোটেও মিথ্যা বলিনি। মিথ্যা বলছেন আপনি। আল্লাহ মিথ্যাবাদীকে ভালোবাসেন না। আপনি তওবা করুন, নইলে আপনার ভাগ্য আবার আগের মত হয়ে যাবে।’
লোকটি ফেরেশতার কথায় কান না দিয়ে তাঁকে তাড়িয়ে দিল। পরদিন ঘুম থেকে জেগে দেখতে পেলো,তার শরীর জুড়ে আবার কুষ্ঠরোগ থকথক করছে। সে শুয়ে আছে এক কুঁড়েঘরে। আর তার যে এত উট ছিল সেগুলোর কোন হদিস নেই।
ফেরেশতা এবার গেল টাকমাথা লোকটির কাছে। তাকেও বলল, ‘আমি এক মুসাফির। আমাকে আল্লাহরওয়াস্তে একটি গরু দান করুন।’ কিন্তু কুষ্ঠরোগীর মত সেও তাঁকে তাড়িয়ে দিল। বলল, ‘আমার মাত্র অল্প কয়টা গরু, তোমাকে কোথা থেকে গরু দান করবো?’
ফেরেশতা বলল, আল্লাহর নাশোকর বান্দা হবেন না। তাহলে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হবেন।’
‘না, হবে না। আমি এখানে দানছত্র খুলে বসেনি। কি আবদার! অন্তত একটা গরু দান করুন!’
ফেরেশতা বলল, ‘আপনাকে বোধহয় আমি চিনেছি। আপনার বিশাল টাক ছিল। লোকে সে জন্য আপনাকে ঘৃণা করতো। পরে আল্লাহ আপনাকে সুস্থ করে দেন এবং আপনাকে একটা গরু থেকে অনেক দান করেন।’
লোকটি বলল, ‘কি যা তা বলছো। যাও এখান থেকে।’
ফেরেশতা বলল, ‘যাচ্ছি, তবে মনে রাখবেন, যিনি সম্পদ দিতে পারেন তিনি সম্পদ নিতেও পারেন। আপনি মিথ্যা বললে আবার আগের মত হয়ে যাবেন।’ ফেরেশতা চলে গেল। দেখতে দেখতে লোকটি আবার আগের মত টাক মাথা ও গরীব হয়ে গেল।
এবার ফেরতেশতা গেল অন্ধ লোকটির কাছে। বলল, ‘আমি মুসাফির। আমাকে একটা ছাগল দিয়ে সাহায্য করুন।’
লোকটি বলল, ‘আমি ছিলাম অন্ধ ও গরীব। আল্লাহ আমাকে ভালো করে দিয়েছেন। ধন-সম্পদ দিয়েছেন। আমার যত সম্পদ সব আল্লাহরই দান। আপনার যে কয়টি বকরী দরকার ইচ্ছামত নিয়ে যান।’
ফেরেশতা বলল, ‘না, এসব আপনারই থাকবে। আল্লাহ আপনাদের তিনজনকে পরীক্ষা করার জন্য আমাকে পাঠিয়েছেন। দু’জন পরীক্ষায় পাস করেনি। তাঁরা অহংকারী হয়ে উঠেছিল। তাঁদের ওপর আল্লাহর গজব নাজিল হয়েছে। আপনি পাস করেছেন। আল্লাহ আপনার সম্পদ আরো বাড়িয়ে দিবেন।
গল্প থেকে শিক্ষা : এ গল্প থেকে আমার শিখেছি, কৃপণতা মহাপাপ। অহংকার করা ঠিক নয়। যারা আল্লাহর শোকর আদায় করে না তাঁদের ওপর গজব নাজিল হয়। মানুষের বিপদে সাহায্য করলে আল্লাহ খুশি হন এবং তার সম্পদ বাড়িয়ে দেন।
সত্যের জয় – শিশুদের জন্য শিক্ষনীয় ইসলামিক গল্প ৫!
হযরত আবদুল কাদের জিলানী। সবাই তাঁকে ডাকতো বড়পীর বলে। বড়পীর আবদুল কাদের জিলানীর শৈশবের একটি ঘটনা। ঘটনাটি এতই চমকপদ যে, আজো মানুষ শ্রদ্ধাভরে সে কথা স্মরণ করে।
তোমাদের মতই বয়স তখন তার। লেখাপড়ার প্রতি দারুণ আগ্রহ। গ্রামের বাড়ির পড়া শেষ করেছেন। এখন তার ইচ্ছা, বড় কোন শহরে গিয়ে নামকরা কোন মাদ্রাসায় পড়বে। কিন্তু তার বাপ নেই। বিধবা মায়ের অভাবের সংসার। কোথায় পাবেন তিনি ছেলের পড়ার খরচ? মা ভাবেন, এমন সোনার ছেলের আশা কি পূরণ হবে না? মানুষের কত রকম শখ থাকে। অথচ ছেলের একটাই শখ। সে অনেক পড়বে, অনেক জ্ঞানী হবে, মানুষের মত মানুষ হবে। মা দিনরাত ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবেন আর একটু একটু করে টাকা জমান ছেলের জন্য।
একদিন আবদুল কাদের জিলানী ছাদে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির শোভা দেখছিলেন। তিনি দেখলেন, একটি কাফেলা বাগদাদের দিকে যাচ্ছে। তার অনেক দিনের শখ বাগদাদ যাওয়ার। সেখানে গিয়ে পড়ালেখা করার। তিনি নিচে নেমে মাকে আবারও তার মনের কথা বললেন।
মায়ের বুক হাহাকার করে উঠল। যেখানে অন্যের ছেলেরা পড়তে চায় না সেখানে নিজের ছেলে পড়ার জন্য উতলা, এটা কি কম সৌভাগ্যের কথা! তিনি জমানো টাকাগুলো গুনে দেখলেন সেখানে আশিটি স্বর্ণমুদ্রা আছে। টাকাটা দুই ভাগ করে এক ভাগ রাখলেন সংসার খরচের জন্য আরেক ভাগ তুলে দিলেন ছেলের হাতে। ছোট মানুষ, পথে যদি টাকাগুলো হারিয়ে ফেলে এই ভয়ে মা বগলের নিচে পকেট বানিয়ে সেখানে মুদ্রাগুলো সেলাই করে দিলেন।
মায়ের দেয়া চল্লিশটি স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে পথে নামলেন আবদুল কাদের জিলানী। বিদায়ের সময় ছেলেকে বুকে জড়িয়ে মা বললেন, ‘বাবা, আমার সময় আর বেশি বাকি নেই। হয়তো কেয়ামতের আগে আর আমাদের দেখা হবে না। আমার অন্তিম উপদেশ, কখনো মিথ্যা কথা বলো না।’
মায়ের এ উপদেশ বুকে নিয়ে ছেলে গিয়ে শামিল হলো কাফেলার সাথে। কাফেলা এগিয়ে চললো বাগদাদের দিকে। যেতে যেতে তাঁরা গিয়ে পৌঁছালো হামদান নামক এক জায়গায়। এলাকাটি জনমানবহীন। চারদিকে গাছপালার গভীর জঙ্গল। হঠাৎ একদল ডাকাত ঝাঁপিয়ে পড়লো তাঁদের ওপর। কেড়ে নিল তাঁদের টাকা পয়সা, ধন-দৌলত। লোকেরা জীবন বাঁচাতে মালসামান রেখেই পালিয়ে গেল।
বালক আবদুল কাদের কি করবেন বুঝতে না পেরে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন। ডাকাতরা ভাবলো, ও ছোট মানুষ, ওর কাছে আর কি থাকবে? সবাই ওকে রেখে লুটপাটে মন দিল। এক ডাকাত তাঁকে বলল, ‘এই ছেলে, তোমার কাছে টাকা-পয়সা কিছু আছে?’
আবদুল কাদের জিলানী জবাব দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমার কাছে চল্লিশটি স্বর্ণমুদ্রা আছে।’
বিশ্বাস হলো না ডাকাতের। বলল, ‘কোথায় তোমার স্বর্ণমুদ্রা?’
তিনি বললেন, ‘বগলের নিচে আমার জামার সাথে সেলাই করা।’
এ কথা শুনে ডাকাত তাঁকে নিয়ে এলো সর্দারের কাছে। ডাকাত সর্দার তখন লুটের মাল ভাগ-বাটোয়ারায় ব্যস্ত। সব শুনে সর্দার বললেন, ‘জামা কেটে বগলের নিচ থেকে টাকাগুলো বের করো দেখি।’
জামা কাটা হলো। বের করে আনা হলো টাকাগুলো। গুনে দেখা গেল সত্যি সেখানে চল্লিশটি স্বর্ণমুদ্রা। ডাকাতরা ভাবলো, ছেলেটি কি বোকা! ডাকাত সর্দার বলল, ‘তুমি আমাদের বললে কেন তোমার কাছে টাকা আছে? তুমি না বললে তো আমরা ও স্বর্ণমুদ্রার কথা জানতেও পারতাম না।’
সত্যবাদী জিলানী দৃঢ়তার সাথে বললেন, ‘কেন বলবো না? আমার মা আমাকে মিথ্যা বলতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহর নবী বলেছেন, মিথ্যা হল সকল পাপের মা। আল্লাহ মিথ্যাবাদীকে ভালোবাসেন না। আল্লাহ যে কাজ অপছন্দ করেন আমি সে কাজ করতে যাবো কেন?’
‘কিন্তু তুমি না বললে তো এ টাকাগুলো হারাতে হতো না!’
তিনি বললেন, ‘তাতে আমার দুঃখ নেই। আমি আমার মায়ের আদেশ পালন করতে পেরেছি, আল্লাহর হুকুম পালন করতে পেরেছি, এতেই আমি খুশি।’ তিনি আরো বললেন, ‘কাল হাশরের মাঠে আমাকে লজ্জিত হতে হবে না, অপমান সইতে হবে না, এরচেয়ে আনন্দের আর কি আছে?’
সত্যবাদী বালকের দৃঢ়তায় চমকে উঠলেন ডাকাত সর্দার। তার মনে হল সে আত্মমর্যাদাহীন ও নির্বোধ একজন মানুষ। এই বালকের সমান বুদ্ধিও তার নেই। যদি থাকতো তাহলে হুকুম অমান্য করে সে মানুষের সহায়-সম্পদ লুট করতে পারতো না।
হঠাৎ হায় হায় করে উঠলো ডাকাত সর্দার। বলল, ‘কে না জানে, সবাইকে একদিন মরতে হবে। মরার পর আল্লাহ যখন জানতে চাইবেন, তোমাকে কি লুটপাট করার জন্য দুনিয়ায় পাঠিয়েছিলাম, তখন কী জবাব দেবো আমি?’
ডাকাত সর্দারের মনে তোলপাড় শুরু হল। অনুশোচনায় দগ্ধ হতে লাগলো মন। তিনি চিৎকার করে বলতে লাগলেন, ‘এই ছেলে মায়ের কথার অবাধ্য হচ্ছে না, আর আমরা মহান আল্লাহর অবাধ্য হয়ে ডাকাতি করছি? কী হবে আমাদের পরিণতি?’
আবদুল কাদের বললেন, ‘আল্লাহর কাছে তওবা করুণ। আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল।’
তক্ষুণি বড়পীরের হাত ধরে তওবা করলেন ডাকাত সর্দার। দলের অন্যরাও তওবা করলো। তাঁরা ওয়াদা করলো, ‘জীবনের আর ডাকাতি করবো না, লুটপাট করবো না। আল্লাহর অবাধ্য হবো না, পাপ কাজ করবো না।’ ডাকাতরা কাফেলার লোকজনকে ডেকে তাঁদের সব মালামাল ফিরিয়ে দিল। কাফেলা খুশি মনে বাগদাদের পথ ধরলো।
এই গল্প আমাদের শেখায়..
মিথ্যা কথা বলতে নেই, পাপের পথে চলতে নেই। থাকলে মনে আল্লাহর ভয়, জীবনটা হয় পুণ্যময়।
আশা করি এই শিশুতোষ ইসলামিক গল্প গুলো শুনে আপনার সোনামণিরা আনন্দিত হয়েছে এবং কিছু ইতিবাচক দিক রপ্ত করতে পেরেছে। আমরা আগামীতে আরও এমন মজার ইসলামিক গল্প ও ঘটনাগুলো এখানে নিয়ে আসবো। ইনশা আল্লাহ দেখা হবে শিশুতোষ ইসলামিক গল্পের ২য় পর্বে। ভালো থাকুন, বিদায়!
Please follow our Facebook, Twitter, Instagram, Linkedin, Pinterest, Tumblr, And Youtube channels for more updates.