দশজন জান্নাতি সাহাবীদের নাম অর্থসহ

ইসলামের ইতিহাসে দশজন জান্নাতি সাহাবী ছিলেন যারা জীবিত থাকাবস্থায় জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। তাদেরকে আশারায়ে মুবাশশারাহ বলা হয়। নবীজির একটি হাদিস থেকে এই সকল সাহাবীদের জান্নাত লাভের সুসংবাদের সত্যতা পাওয়া যায়। সেসকল জান্নাতি সাহাবীদের নাম ও তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় এই আর্টিকেলে তুলে ধরা হয়েছে।

জান্নাতি সাহাবীদের নামদুনিয়ায় জীবিত থাকাবস্থায় যেসব সাহাবী জান্নাত লাভের সুসংবাদ পেয়েছিলেন তাদেরকে জান্নাতি সাহাবী বলা হয়। ইসলামে এসকল সাহাবীদের শান-মর্যাদা ও গুরুত্ব অনেক বেশি। এই দশজন সাহাবী রাসূল (সাঃ) এর কাছে অনেক প্রিয় ছিলেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর আপদে বিপদে ও যুদ্ধে সর্বদায় পাশে ছিলেন। ইসলাম ও রাসূলের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতে সবসময় প্রস্তুত থাকতেন। নিজেদের স্ত্রী সন্তান এমনকি জীবনের চাইতেও বেশি রাসূলকে ভালোবেসেছিলেন। যার কারণে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জিবরাইল (আঃ) এর মাধ্যমে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নিকট তাদের জান্নাত লাভের সুসংবাদ পৌঁছে দিয়েছিলেন। অতঃপর আল্লাহর প্রিয় হাবিব রাসূলে পাক (সাঃ) সেসকল জান্নাতি সাহাবীদের নাম ঘোষণা করেন। তারপরেও এসকল সাহাবীগণ প্রতিনিয়ত মহান আল্লাহর দরবারে নিজেদের গুনাহ মাফের জন্য, আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া ভিক্ষা পাবার জন্য ফরিয়াদ করতেন, অঝোরে কাঁদতেন। নবী সাহাবীদের দুনিয়ার প্রতি কোন মুহাব্বত ভালোবাসা ছিলনা। ছিলনা কোনো লোভ ও লালসা। সাহাবীদের ভালোবাসার কেন্দ্রে ছিলেন আল্লাহ ও নবী মুহাম্মদ (সাঃ)

অতএব, আপনার নবজাতক ছেলে শিশুর জন্য ১০ জন জান্নাতি সাহাবীদের নাম গুলি হতে পারে সেরা নামগুলির একটি। আপনার শিশু ছেলের জন্য ভালো ও সুন্দর ইসলামিক নাম রাখতে রাসূলের শ্রেষ্ঠ ও জান্নাতী সাহাবায়ে কেরামেরগণের নামগুলির মধ্যে থেকে একটি নাম বিবেচনা ও চয়ন করতে পারেন। 

জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন সাহাবীদের নাম!

সুপ্রিয় পাঠক পাঠিকা, আমি সৈয়দ রুবেল। আজ আপনাদের সাথে ভাগ করতে চলেছি প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-মের বিশিষ্ট ১০ জন জান্নাতি সাহাবীদের নাম ও তাদের নামের অর্থ। জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন বিশিষ্ট সাহাবীদের সংক্ষিপ্ত পরিচয়সহ জান্নাতি সাহাবীদের নামের তালিকা নিচে উল্লেখ হলো। তাহলে চলুন শুরু করি: 

০১. আবু বকর (Abu bakar) অর্থ = কুমারীর পিতা।

পূর্ণ নাম : আবদুল্লাহ বিন আবি কুহাফা। তিনি আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) নামে পরিচিতি ছিলেন। তিনি ছিলেন নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর একজন প্রধান সাহাবী, ইসলামের সর্বপ্রথম খলিফা এবং প্রথম মুসলিমদের মধ্যে একজন। এছাড়াও আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-মের শ্বশুর ছিলেন। উম্মুল মুমিনিন মা আয়িশাহ সিদ্দিকা (রাঃ) কে পিতা আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-মের সাথে বিবাহ দেন। যার ফলে নবী করীম (সাঃ)-মের সাথে আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) এর সম্পর্ক আরও মজবুত ও গভীর হয়। রাসূল (সাঃ)-মের মৃত্যুর পর তিনি খলিফা হন এবং মুসলিমদের নেতৃত্ব দেন। নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-মের প্রতি সন্দেহাতীত অগাধ বিশ্বাসের জন্য মহানবী আবু বকর (রাঃ) কে “সিদ্দিক“(বিশ্বস্ত) উপাধি দেন। আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) মৃত্যুবরণ করার পরে উম্মুল মুমিনিন আয়িশাহ সিদ্দিকা (রাঃ) ঘরে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর পাশে তাকে কবর দেওয়া হয়। যার ফলে আবু বকর (রাঃ) রাসূলের কবরের সঙ্গী হবার সৌভাগ্য লাভ করেন। 

০২. উমর (Umar) অর্থ = আবাদকৃত।

পূর্ণ নাম : উমর ইবনুল খাত্তাব (umar ibn al khattab)। তিনি ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ও প্রধান সাহাবীদের অন্যতম একজন। উমর (রাঃ) ছিলেন ইসলামী আইনের একজন অভিজ্ঞ আইনজ্ঞ ছিলেন। তিনি সব সময় ন্যায়ের পক্ষাবলম্বন করার কারণে উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে “আল ফারুক” (সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী) উপাধি দেওয়া হয়। আমিরুল মুমিনিন উপাধিটি সর্বপ্রথম তাঁর ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-মের শ্বশর ও উম্মুল মুমিনিন হাফসা (রাঃ) এর পিতা। হযরত হাফসা (রাঃ) প্রথম স্বামীর থেকে তালাক প্রাপ্তা হলে পিতা উমর (রাঃ) ইদ্দত শেষ হবার পর আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-মের সাথে বিবাহ দেন।   

০৩. উসমান (Usman) অর্থ= সাহায্য উপকৃত ।

পূর্ণ নাম : উসমান ইবনে আফফান ( usman bin affan)। তিনি ছিলেন ইসলামের তৃতীয় খলিফা ও প্রথম দিকের ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে অন্যতম। ইসলাম গ্রহণ পর রাসুল (সাঃ) কন্যা রুকাইয়্যার সাথে উসমান (রাঃ) এর বিবাহ দেন। হিজরির দ্বিতীয় সনে বদর যুদ্ধের পরপর মদিনায় রুকাইয়্যা মারা যায়। এরপর মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর দ্বিতীয় কন্যা উম্মে কুলসুমের সাথে উসমান (রাঃ)কে বিয়ে দেন। আর এ কারণেই উসমান (রাঃ) তিনি মুসলিমদের নিকট জুন-নুরাইন বা দুই জ্যোতির অধিকারী হিসেবে খ্যাত ছিলেন। 

০৪. আলী (Ali) অর্থ= উন্নত ।

পূর্ণ নাম : আলী ইবনে আবি তালিব (Ali ibn abi talib)।  তিনি ছিলেন নবী মুহাম্মদ (সাঃ) চাচাতো ভাই ও জামাতা এবং ইসলামের চতুর্থ ন্যায়নিষ্ঠ খলিফা। হযরত আলী (রাঃ) মাত্র ৯ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং তিনি ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম পুরুষ যিনি খাদিজাতুল কোবরা (রাঃ) ইসলাম গ্রহণের পরেই দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। 

০৫. তালহা (Talhah) অর্থ= খেজুর গাছের ফুল।

পূর্ণ নাম : তাহলে ইবনে উবাইদুল্লাহ ( Talha bin ubaidullah)। তিনি ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম আটজন ব্যক্তির অন্যতম এবং তিনি রাসূলের ঘনিষ্ঠ সাহাবী ছিলেন। তিনি উহুদের যুদ্ধ ও উটের যুদ্ধে অংশগ্রণের কারণে অধিক পরিচিত ছিলেন। মাত্র পনেরো বছর বয়সে তালহা (রাঃ) আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) আহ্বানে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। 

০৬. যুবাইর (Jubayr) অর্থ= শক্তিশালী।

পূর্ণ নাম : জুবাইর ইবনুল আওয়াম। তিনি ইসলামের প্রথম যুগের মুসলমান ও নবী মুহাম্মদ (সাঃ)- সাহাবী ছিলেন। তিনি একাধারে রাসূল (সাঃ) এর ফুফাতো ভাই ও ভায়রা ছিলেন। তিনি মাত্র ১৬ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং তিনি ইসলামের গ্রহণের পর গুজব ছড়ালো যে অমুসলিমরা নবী মুহাম্মদ (সাঃ) কে হত্যা বা বন্দী করে ফেলেছে। এটা শুনে উন্মুক্ত তরবারি সাথে নিয়ে প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য যুবাইর (রাঃ) সাথে সাথেই নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-মের বাড়িতে যান। রাসূল (সাঃ) এর জীবনী লেখকদের মতে এটি হলো প্রথম তলোয়ার যা নিজেকে উৎসর্গ করার জন্য একজন বালক উন্মুক্ত করেছিল। তিনি ইসলাম গ্রহণের কারণে অনেক অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। 

০৭. আবদুর রহমান (Abdur Rahman) অর্থ= করুণাময়ের দাস।

পূর্ণ নাম : আবদুর রহমান ইবনে আউফ। তাঁর ইসলাম গ্রহনের পূর্বের নাম ছিল আবদুল আমর (আমরের দাস)। ইসলাম গ্রহণের পরে রাসূল (সাঃ) তাঁর নাম রাখেন আবদুর রহমান (সবচেয়ে দয়াবানের দাস)। আবদুর রহমান ইবনে আউফ ইসলাম গ্রহণকারী আটজন ব্যক্তির অন্যতম এবং তিনি আবিসিনিয়ায় হিজরত করা পনেরোজন মুসলিমের অন্যতম ছিলেন।

০৮. সা’দ (Sa’d) অর্থ = সৌভাগ্য।

পূর্ণ নাম : সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাঃ)। তিনি ছিলেন মহানবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর অন্যতম প্রধান সাহাবী। তিনি ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে ১৭তম ব্যক্তি ছিল। ৬৩৬ সালে পারস্য বিজয়ের নেতৃত্ব ও শাসনের জন্য তিনি অধিক পরিচিত পেয়েছিলেন।

০৯. সাইদ (Saeed) অর্থ=  সৌভাগ্যবান।

পূর্ণ নাম : সাইদ ইবনে যায়িদ। তিনি ছিলেন খলিফা উমর (রাঃ) এর ভগ্নিপতি অর্থাৎ উমর (রাঃ) এর বোন ফাতিমা বিনতে খাত্তাব এর স্বামী। সাইদ ইবনে যায়িদ (রাঃ) ছিলেন প্রাথমিক পর্যায়ের ইসলাম গ্রহণকারীদের সাহাবীদের মাঝে একজন। 

১০.  আবূ উবাইদাহ (Abu ubaidah) অর্থ= ছোট দাস।

পূর্ণ নাম : আবু উবাইদা আমর ইবনে আবদিল্লাহ ইবনুল জাররাহ। তিনি ছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একজন সাহাবী ও খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাবের সময় তিনি রাশিদুন সেনাবাহিনীর একজন সেনাপতি ছিলেন। রাসূল (সাঃ) ইসলাম প্রচারের শুরুতে নিজের কাছের সঙ্গীদের প্রথম ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানান। তখন আবু উবাইদাহ (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করেন। 

শ্রেষ্ঠ সাহাবীদের নাম!

সাহাবীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছেন চার খলিফা:

  • আবূ বাকর সিদ্দীক (রা:)
  • উমার বিন খাত্তাব (রা:)
  • উসমান বিন আফফান (রা:)
  • আলী বিন আবী তালীব (রা:)

হে আল্লাহ! ইসলামের জন্য যেসকল সাহাবীগণ নিজেদের জীবন উৎসর্গ ও সম্পদ ব্যয় করেছেন, মহান রাব্বুল আলামীন সেসব সাহাবীদেরকে জান্নাতের সুউচ্চ মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী করুন। তাদের উপর আপনার অশেষ রহমত, জান্নাতের অফুরন্ত নেয়ামত অবিরত বর্ষণ করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বোচ্চ প্রসংসিত ও সম্মানের অধিকারী। 

প্রিয় পাঠক পাঠিকা, আমি আশা করি দশজন জান্নাতি সাহাবীদের নাম ও তাদের নামের অর্থ গুলি পড়ে আপনার খুব ভালো লেগেছে এবং খুশি হয়েছেন। এবং তারই সাথে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন সাহাবীদের নাম থেকে যেকোনো একটি ইসলামিক নাম আপনার ছেলে বাবুর জন্য নির্বাচন করবেন। কারণ এই নামগুলো সেরা ও জনপ্রিয় নামগুলির মধ্যে অন্যতম যা আপনার ছেলে বাবুদের জন্য খুবই উপযোগী এবং এই সাহাবীদের নামগুলো সকলেই পছন্দ করে। 

এটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আজকের মতো বিদায়, আবার দেখা হবে নতুন কোনো আর্টিকেলে নতুন কোনো বিষয়ে। আল্লাহ হাফেজ।  

আরও পড়তে পারেনঃ

01. ৩১৩ জন বদরি পুরুষ সাহাবীদের নাম

02. মুহাম্মদ সাঃ এর গুণবাচক নাম সমূহ

03. বিশ্বজুড়ে ছেলেদের জনপ্রিয় ইসলামিক নাম

04. কোরআন থেকে ছেলেদের নাম বাংলা অর্থসহ

05. ম (M) দিয়ে ছেলেদের ইসলামিক নাম অর্থসহ

কিছু উপদেশমূলক আর্টিকেল যা আপনি পড়তে পারেনঃ

০১. ডিপ্রেশনঃ আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়!

০২. সাফল্যের ইতিকথাঃ সাফল্য বলতে আমরা কি বুঝি? 

০৩. নারীর সঙ্গে আপনার আচরণ যেমন হবে!

For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.

2 thoughts on “দশজন জান্নাতি সাহাবীদের নাম অর্থসহ”

Leave a Comment