সর্বনাশা প্রেম (প্রেমের গল্প-কাহিনী)

সর্বনাশা প্রেম একটি বাস্তব প্রেমের গল্প। 

এই বাস্তব প্রেমের গল্পের নায়কের নাম শুভ ও নায়িকা সায়েমা। গল্পের শেষে ঘটনার স্থান উল্লেখ করা হয়েছে। 


সর্বনাশা প্রেম-গল্পের ছবিগ্রামের ছেলে। নাম শুভ। গায়ের রঙ শ্যামলা। বয়স বাইশ-তেইশ হবে। মা-বাবার অতি আদরের সন্তান। শুভর আর কোনো ভাই-বোন নেই।

ছাত্রজীবনে বেশ দুষ্ট ছিল শুভ। সেজন্য পড়ালেখায় বেশিদূর এগুতে পারে নি। কোনো রকম নবম শ্রেণী পাশ করেছে। মা-বাবা ওকে পড়ানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছেন।

এলাকার পরিস্থিতি মোটেও ভালো নয়। খুব খারাপ। বখাটে ছেলেদের উৎপাত সীমার বাইরে। শুভ’র ভবিষ্যত নিয়ে ওর মা-বাবা খুব চিন্তিত। বড় উদ্বিগ্ন। পাড়ার ছেলেদের সাথে মিশে সে আবার নষ্ট হয়ে যায় কি না! কোনো অঘটন ঘটিয়ে বসে কি না!

শুভ’র বাবা একজন গার্মেন্টস সুপার ভাইজার। তিনি ভাবলেন, ছেলের পড়াশুনা যখন আর হবেই না, তখন ওকে আর বসিয়ে রেখে লাভ কি! কোনো একটা কাজ শিখুক ও। নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াতে শিখুক। তাহলে ভবিষ্যতে জীবিকা নির্বাহের জন্য ওকে আর তেমন কষ্ট করতে হবে না। তিনি আরো ভাবলেন, আমি যখন গার্মেন্টস-এ আছি, তাহলে ও গার্মেন্টসে-ই আসুক। ওখানকার কোনো একটি কাজ শিখুক। তাতে আমিও ওকে গাইড করতে পারব। দেখতে পারব ওর সুবিধা-অসুবিধা।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একদিন তিনি শুভকে নিয়ে গার্মেন্টস-এ গেলেন। সেই সাথে বুঝিয়ে দিলেন তাঁর কাজও। শুভ তাঁর বাবার কথামত কাজ শুরু করে দিল।

কাজে যোগদানের পর শুভ’র জীবনে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন আসে। অবশ্য এ পরিবর্তনের পিছনে গার্মেন্টস কিংবা সেখানকার কাজের কোনো কৃতিত্ব নেই। বরং কৃতিত্ব হলো, তাবলীগ জামাতের। এ কৃতিত্ব হলো, ঐ সব তাবলীগি ভাইদের যারা শুভকে অনেক বুঝিয়ে সমঝিয়ে ১০ দিনের জন্য জামাতে পাঠাতে সক্ষম হয়েছিলেন।

জামাত থেকে ফেরার পরই শুভর জীবনে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে। সে এখন রীতিমত নামাজ পড়ে। মাতা-পিতাকে শ্রদ্ধা করে। বড়দের মান্য করে। ছোটদের স্নেহ করে। আর সমবয়সীদের সাথে মৈত্রিত্ব তো আছেই। সেই সাথে তাদেরকে নামাজের দাওয়াতও দেয়। সময় পেলে কুরআন-হাদিস পড়ে। রাস্তা-ঘাটে যাকেই পায়, সালাম দেয়। বাড়িতে এলে মা-বাবাকে নামাজ পড়ার অনুরোধ জানায়। ফাযায়েল আমাল ও অন্যান্য ধর্মীয় কিতাবাদী পাঠ করে শোনায়।

শুভ’র এই পরিবর্তন স্পর্শ করে ওর বাবা-মাকেও। তাঁর চেষ্টা বৃথা যায়নি। কারণ যে মা-বাবা একসময় ধর্মীয় অনুশাসন পালনের ব্যাপারে যথেষ্ট উদাসীন ছিলেন, নামাজের ব্যাপারে যাদের কোনো গুরুত্ব ছিল না, এক ওয়াক্ত পড়লে তিন ওয়াক্তের কোনো খবর থাকত না; কখনো দুই তিন ওয়াক্তের নামাজ একত্রে পড়ে নিতেন, কখনো বা একেবারে ছেড়েই দিতেন—সে মা-বাবাই আজ নিয়মিত নামাজ আদায় করেন। কোনো অবস্থাতেই নামাজ কাযা হতে দেন না। ধর্মীয় বিধি-বিধান পালনের ব্যাপারেও তারা এখন যথেষ্ট অনুরাগী।

শুভ’র মধুর ব্যবহারে এলাকাবাসী মুগ্ধ হয়। এলাকার একটি অনন্য ও অসাধারণ ছেলে হিসেবে সকলের সুদৃষ্টি তাঁর প্রতি নিবন্ধ হয়। সবাই তাঁর প্রশংসা করে। বলে-এমন ছেলে এ যুগে পাওয়া খুবই কঠিন। সে কত নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর হুকুমের পাবন্দী করে। নবীজির তরীকা মত চলাফেরা করে। আসলে তাঁর সাথে অন্য কোনো ছেলের তুলনাই চলে না।

শুভ দাড়ি রেখেছে। খুব সুন্দর দাড়ি। এজন্য কিছু বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়স্বজন মশকারাও করে। বিভিন্নজন বিভিন্ন কথা বলে। এত বাধা-বিপত্তির পরও সে দাড়িতে হাত দেয়নি। কাটে নি। কামায়ও নি। কারণ সে জানে, দাড়ি রাখা ওয়াজিব। দাড়ি না রাখলে কবীরা গুনাহ হয়। যা তাওবা ছাড়া মাফ হয় না। দাড়ি কাটার অর্থ হচ্ছে নবীজীর কলিজায় আঘাত দেওয়া। আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের নাফরমানী করা। তাঁর ভয় হয়, দাড়ি না থাকলে হাশরের ময়দানে যদি রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে না চিনেন! যদি আমার জন্য শাফায়াত না করেন, তাহলে আমার কী উপায় হবে? সেদিন কে আমার জন্য সুপারিশ করবেন?

শুভদের বাড়ি অবস্থা  বেশ স্বচ্ছল। তাদের সংসারে কোনো কিছুর অভাব নেই। সবাই স্বাচ্ছন্দে চলাফেরা করে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! হঠাৎ অযাচিত একটি অশুভ দৃষ্টি  শুভ-এর পিছু নেই। ঘায়েল করে শুভকে। বইয়ে দেশুভদের বাড়ি অবস্থা  বেশ স্বচ্ছল। তাদের সংসারে কোনো কিছুর অভাব নেই। সবাই স্বাচ্ছন্দে চলাফেরা করে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! হঠাৎ অযাচিত একটি অশুভ দৃষ্টি  শুভ-এর পিছু নেই। ঘায়েল করে শুভকে। বইয়ে দে তাঁর জীবনে মরু সাইমুম। উল্টিয়ে দেয় জীবনের সেই সোনালী পাতা। ঘুরিয়ে দেয় জীবনের মোড়। দিগভ্রান্ত করে দেয় ওকে। ঘটে যায় তাঁর জীবনে এক করুণ কাহিনী।

শুভর এক ঘনিষ্ট বন্ধু ছিল। একদিন সে তাঁর বন্ধুর সাথে ওদের বাড়িতে যায়।

হঠাৎ সে তাঁর সামনে দিয়ে একটি ষোড়শী মেয়েকে কোমর দুলিয়ে হেঁটে যেতে দেখে। মেয়েটি খুবই সুন্দরী। দৈহিক গঠন অসাধারণ। মায়াবী চাহনী। যে কেউ তাকে একবার দেখবে, সে তাকে পছন্দ করবেই।

শুভ মেয়েটিকে দেখে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। ভুলে যায় অতীতকে। পাল্টে যায় তাঁর মন-মগজ। মেয়েটির দিকে অপলক নেত্রে চেয়ে থাকে। মুহুর্তের মধ্যে সে কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যায়। ভাবতে থাকে, এত সুন্দরী মেয়ে! তাকে জীবনসঙ্গীনী বানাতে পারলে জীবনটা স্বার্থক হবে। হ্যাঁ, তাকে যে কোনো উপায়ে বধূ বানিয়ে ঘরে তুলতেই হবে।

শুভ’র চিন্তা-চেতনায় এখন শুধু সেই মেয়েটি। সারাক্ষণ কেবল একই ভাবনা। একই জল্পনা-কল্পনা। মেয়েটি কে? কী নাম তাঁর? কোথায় তাঁর বাড়ি? কী করে মেয়েটি? এসব জানার জন্য সে মরিয়া হয়ে উঠে। দ্রুত তাঁর খোঁজ-খবর নেয়। অবশেষে জানতে পারে, মেয়েটির নাম সায়েমা। তাঁর বন্ধুর ফুফাত বোন।

শুভ দুর্বল হয়ে পড়ে সায়েমার প্রতি। সে তাকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসতে শুরু করে। এখন তাঁর একটাই ভাবনা, যেমন করে হোক সায়েমার মন জয় করতেই হবে! বানাতে হবে—অর্ধাঙ্গিনী।

একদিন শুভ তাঁর বন্ধুকে নিয়ে সায়েমাদের বাড়িতে যায়। ওদের বাড়ি-ঘরও তাঁর বেশ পছন্দ হয়। এতে সায়েমার প্রতি তাঁর অনুরাগ-আকর্ষণ আরো বেড়ে যায়।

শুভ সায়েমার পিতা-মাতার সাথে নম্র ভাষায় কথা বলে। তাঁর ব্যবহারে তারাও মুগ্ধ হয়।

শুভদের নিয়ে সায়েমার বাবা জুমার নামাজ পড়তে যান। নামাজ শেষে একত্রেই বাড়ি ফিরেন। অতঃপর খানা-পিনা করেন ওদেরকে নিয়েই।

খানার পর্ব শেষে সায়েমার বাবা ঘর থেকে বেড়িয়ে যান। এ সুবাদে ক্ষণিকের মধ্যেই সায়েমার সাথে শুভর পরিচয় হয়। পরিচয় করিয়ে দেয় ওরই বন্ধুই। ওদেরকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে কী এক কাজের কথা বলে শুভর বন্ধুও বাইরে বেরিয়ে যায়। যাওয়ার সময় বলে যায়—তোমরা একটু কথা বলো, আমি কিছুক্ষণ পরেই ফিরে আসব।

এমন একটি সুযোগের অপেক্ষায় ছিল শুভ। এ সুযোগ পেয়ে তাঁর আনন্দ আর দেখে কে!

নির্জন কক্ষে শুভ আর সায়েমার মধ্যে অনেক আলাপ আলোচনা হয়। এক পর্যায়ে শুভ তাঁর মনের কথাটি ব্যক্ত করার সুযোগ পেয়ে যায়। তাই সে সুযোগটিকে হাতছাড়া না করে সায়েমার কাছে প্রেম নিবেদন করে বসে। বলে-সায়েমা! তোমাকে আমি জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসি।

শুভর প্রস্তাবকে সায়েমা মনপ্রাণ দিয়ে গ্রহণ করে। তারপর উভয়ের মাঝে প্রেমালাপ শুরু হয়। সূচনা হয় একটি অবৈধ সম্পর্কের।

সায়েমা বড় লোকের মেয়ে। খুবই আধুনিকা। বৈধ-অবৈধতার তমীজ তাঁর মাঝে নেই। তাই তো সহজেই সে শুভ’র সাথে প্রেমে জড়িয়ে পড়ে।

প্রথমবারেই দীর্ঘ আলাপচারিতা চলে। চলে যায় অনেক সময়। এবার বাড়ি যাবার পালা। কিন্তু পাগল মন শুভকে সেখান থেকে আসতে দেয় না। মন চায় শুধু সেখানেই থাকতে। অনেক কষ্টে সেখান থেকে রওয়ানা দেয় সে। আসার সময় সায়েমা তাকে একটি ছবি এবং মোবাইল নাম্বার দিয়ে দেয়। আর বলে-মোবাইলে কিন্তু অবশ্যই যোগাযোগ রাখবে।

বাড়িতে আসার পর থেকে সায়েমার সাথে শুভ’র মোবাইলে কথাবার্তা শুরু হয়। রাত জেগেও সে কথা বলে। অনেক সময় খানা-পিনার কথাও স্মরণ থাকে না। সময়ে অসময়ে শুধু আলাপ আর আলাপ। এভাবে পার হয়ে যায় বেশ কয়েকটি মাস।

ছেলের এই আকস্মিক পরিবর্তন বাবার চোখকে ফাকি দিতে পারে নি। তিনি টের পেয়ে যান। জেনে ফেললেন সব কিছু। এসব কথা শুভ’র মাকে জানালে একদিন মা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কিরে বাবা! আমরা যা কিছু শুনছি তা কি সত্যি?

 শুভ’র সোজা উত্তর—হ্যা মা। সব সত্য।

বাবা! এম কাজ তোমার দ্বারা হবে, তা তো কখনোই আমরা ভাবতে পারি নি। যা হোক, যা করার তো করেই ফেলেছ, এবার এ ধংসাত্মক পথ থেকে ফিরে এসো।

না মা। এ পথ থেকে ফিরে আসা আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। ওকে ছাড়া আমি বাচব না। এই একটি মাত্র কাজ ছাড়া তোমরা আমাকে আর যা-ই বলো—আমি তা বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নিব। দ্বিতীয় একটি কথাও বলব না।

বাবা তুমি জানো না যে, বিবাহ-পূর্ব প্রেম-ভালোবাসা মানব জীবনে অকল্যাণ ডেকে আনে? সুস্থ মানুষকে অসুস্থ করে তোলে।  জ্ঞানবান মানুষ হয়ে যায় জ্ঞানহীন।

হ্যাঁ মা তা জানি। এ পথ যে কতটা বন্ধুর ও ভয়ঙ্কর তা আমার অজানা নয়। কিন্তু কী করব? আমি যে অপারগ। আমি যে মনকে কোনোভাবেই ফিরিয়ে আনতে পারছি না। তবে দোয়া করো মহান আল্লাহ পাক যেন আমাকে এ পথ থেকে ফিরিয়ে আনেন।

শুভর পিতার নাম আজমল হোসেন। রাতে তিনি বাসায় ফিরলে শুভর মা সবকিছু তাকে অবহিত করেন। তারপর বলেন—দেখুন, আমার যা মনে হয়, শুভকে এ পথ থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। তাই আমার পরামর্শ হলো, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওর বিয়ের ব্যবস্থা করুন। বিয়ে হয়ে গেলে সায়েমাকে সে ভুলে যাবে।

স্ত্রীর প্রস্তাবটি আজমল সাহেবের কাছে ভালই মনে হলো। তাই সেদিনই তিনি শুভর বিয়ের ব্যাপারে ঘটকের সাথে আলোচনা করলেন। ঘটক কয়েকটি মেয়ের খোঁজ দিলেন।

পরদিন শুভ জানতে পারে যে, বাবা তাকে অচিরেই অন্যত্র বিবাহ দিতে যাচ্ছেন। এ কথা শুনে ওর মাথা খারাপ হওয়ার অবস্থা। সে এখন কী করবে? কিছুই বুঝতে পারছে না।

শুভর দাদা এখনো বেঁচে আছেন। তিনি তাকে খুব স্নেহ করেন। আদর করেন। তাই সবশেষে অনন্যোপায় হয়ে দাদার কাছে সব খুলে বলল শুভ। বলল, দাদা! আব্বা যখন আমাকে বিয়ে দিতেই চাচ্ছেন, তো সে বিয়েটি যেন সায়েমার সাথেই হয়। এজন্য কিভাবে কী করতে  হবে তা আপনিই ভালো জানেন।

দাদা বললেন, তুমি কোনো চিন্তা করো না। দেখি কী করা যায়।

দাদা নাতির ইচ্ছাকে পূরণ করতে চাইলেন। তাই তিনি সায়েমার মামার কাছে প্রস্তাব রাখলেন। কিন্তু সায়েমার মামা সরাসরি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন। বললেন—সায়েমার সাথে শুভর বিয়ে—এ এক অসম্ভব কথা!

সেখান থেকে ব্যর্থ হয়ে শুভর দাদা আজমল হোসেনের সাথে এ ব্যাপারে আলাপ করলেন। অবশেষে উভয়ে পরামর্শ করে অন্যত্র পাত্রী দেখার সিদ্ধান্ত নিলেন।

ওদের সিদ্ধান্ত শুনে শুভর অবস্থা শোচনীয় আকার ধারণ করে। ভীষণ পেরেশান হয় সে। খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেয়। রাতেও ঘুমাতে পারে না। এখানে সেখানে নানাজনের কাছে ধর্ণা দেয়। কিন্তু কোথাও ইতিবাচক সাড়া মিলে না। হঠাৎ শুভর মনে পড়ে, তাঁর এক প্রতিবেশি নানার কথা। যিনি সম্পর্কে সায়েমারও নানা হন। শুভ তাঁর কাছে যায়। তারপর সব্লকিছু খুলে বলে বহু অনুনয় বিনয় করে। সায়েমার বাবার সাথে আলাপ করে কাজ সমাধা করে দেওয়ার জন্য মিনতি জানায়। শুভর ব্যবহারে নানার কোমল মনটা গলে যায়। তাই তিনি তাকে আশ্বাস দেন। বলেন, যেভাবেই হঊক, আমি তোমার মননের আশা পূরণ করতে চেষ্টা করব।

সায়েমার নানা পরদিনই আজমল হোসেনের বাড়িতে আসেন। তারপর বহু কষ্টে মেয়ে ও মেয়ের জামাতাকে এই বিয়েতে রাযী করাতে সক্ষম হন।

কয়েক দিন পর সায়েমাদের বাড়ি থেকে কয়েকজন লোক শুভদের বাড়িতে যায়। এরও কয়েকদিন পর বরপক্ষ আসে সায়েমাদের বাড়িতে। খাওয়া দাওয়ার পর পাত্রীপক্ষের সাথে আলাপ-আলোচনা শেষে বিয়ের দিন-তারিখইও ঠিক করে। তারপর তারা বিদায় নিয়ে বাড়ির পথে রওয়ানা দেয়।

এদিকে মোবাইলের মাধ্যমে এ খবর জানতে পেরে শুভর আনন্দ আর ধরে না। সে কেবল অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে। 

সায়েমাদের বাড়ি থেকে বেশকিছু পথ হেঁটে এসে বাসে চড়তে হয়। তাই তারা হাঁটতে লাগল। পথিমধ্যে বৃষ্টি শুরু হলে বরপক্ষের লোকজন একটি চা স্টলে বসে। সেখানে চা-ও পান করে। ইতিমধ্যে বৃষ্টি থেকে যায়। তারা স্টল থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নেয়। ঠিক এমন সময় হঠাৎ কোত্থেকে যেন তিনটি অভদ্র ছেলে সেখানে উপস্থিত হয়। তারা এসেই সবার সামনে সায়েমা সম্পর্কে অশ্লীল কথাবার্তা বলতে শুরু করে। ওদের একজন তো জঘন্য এক বাক্য উচ্চারণ করে। সে নির্লজ্জের মতো বলে—সায়েমার পেটে আমার চার মাসের বাচ্চা আছে!

এসব কথা বরপক্ষের লোকেরা মোটেও বিশ্বাস করে নি। তাদের ধারণা হলো, এ ছেলেগুলো সায়েমার সাথে শুভর বিয়ে ভেঙ্গে দেওয়ার জন্যই এসব কথা বলছে। হয়তো সায়েমা বা সায়েমাদের পরিবারের কারো সাথে ওদের শত্রুতা আছে। যার কারণে ওরা এসব আবোল-তাবোল প্রলাপ বকছে।

এদিকে ছেলেরা যখন দেখল, ওদের এ ঔষধ বরপক্ষের উপর তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করল না, তখন তারা আরো শক্তিশালী ঔষধ ব্যবহার করল। একজন বরপক্ষের সামনে সায়েমার কয়েকটি আপত্তিকর ছবি দেখাল।

হ্যাঁ, এবারের ঔষধটি বেশ কাজ দিল। এসব অশ্লীল ছবি দেখে ওরা বলতে লাগল, ছি! এমন খারাপ মেয়েকে আমরা বিয়ে করাতে চাচ্ছি। না, এ বিয়ে কিছুতেই হতে পারে না। এ বলে তারা বাড়িতে চলে এল।

যে তিনটি ছেলে স্টলে এসে সায়েমার ব্যাপারে খারাপ মন্তব্য করেছে ওদের একজনের সাথে সায়েমার আসলেই সম্পর্ক ছিল। সায়েমা দীর্ঘদিন যাবত ওর সাথে প্রেমখেলা খেলেছে। ঐ ছেলের পক্ষ থেকে বিয়েও প্রস্তাবও এসেছে। কিন্তু চেহারা ভাল না হওয়ার কেউ এ বিয়েতে রাজি হয়নি। ফলে শেষ পর্যন্ত ওর সাথে সায়েমার বিয়ে হয়নি। তখন থেকেই ছেলেটির আক্রোশ। সে পণ করে বসে যে, আমি বেঁচে থাকতে  দেখে নেব, সায়েমাকে তাঁর বাবা-মা কি করে বিবাহ দেয়! তাই কিছু যুবক ছেলে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে আজকের এই ঘটনা ঘটিয়েছে সে। যার ফলাফল শেষ পর্যন্ত এই দাঁড়িয়েছে যে, সায়েমার সাথে শুভর বিবাহও সম্পন্ন হয়নি।

এ ঘটনা বাতাসের গতিতে গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ল। সবাই এখন সায়েমাদের ঘৃণা করতে শুরু করল। তাদেরকে এখন আর কেউ সম্মান করে না। শুধু ছি ছি বলের নাক ছিটকায়।

হ্যাঁ, বহুদিন পরে হলেও সায়েমার আজ বুঝে এসেছে—আল্লাহর হুকুম পর্দার বিধান লঙ্ঘন করে অবৈধ প্রেমে জড়িয়ে পড়ার কারণেই তাঁর ও তাঁর পরিবারকে আজ লাঞ্চনা ও অবমাননার সম্মুখীন হতে হয়েছে। হারাতে হয়েছে সম্মান, সুনাম সবকিছু। সেই সাথে তাঁর ভবিষ্যত হয়ে পড়েছে নিকষ কালো অন্ধকার। তাঁর এ অবৈধ প্রেমের ফলে এক প্রেমিকের মনে জ্বলছে প্রতিশোধের আগুন, আর আরেক প্রেমিকের মনে জমা হয়েছে একরাশ ঘৃণা।

অতীতের অ্যালবাম প্রায়ই ভেসে ওঠে সায়েমার মনের ক্যানভাসে। যা দেখে এখন তাঁর নিজের মনেও ঘৃণা  জন্মায়। চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে বাঁধভাঙ্গা অশ্রু। কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে বলতে থাকে—হায়, আমি কেন খোদার বিধান লঙ্ঘন করলাম। কেন পর্দার বিধানকে উপেক্ষা করে চললাম। যদি পর্দা করতাম তাহলে আমাকে কেউ দেখতে পেত না।  আমার প্রতি প্রেম নিবেদন করত না। আমার জীবনে কলংকের দাগ পড়ত না। আজ আমাকে এমন পরিস্থিতির শিকারও হতে হতো না। একজন সফল নারী হিসেবে বিবেচিত হতাম। উভয় জাহানে সুখের জিন্দেগী পেতাম। হায় আফসোস, হায় আমার নিয়তি!

 প্রিয় পাঠক-পাঠিকা! কী হলো অবৈধ প্রেমের শেষ ফলাফল? কী  দাঁড়াল এর পরিণতি! শোক, অনুতাপ আর সীমাহীন অনুশোচনা—সে তো এই নাজায়েয প্রেমের জন্যেওই! ওর মা-বাবা ও গোটা পরিবারের ইজ্জত আজ ভুলণ্ঠিত-সে তো এই অবৈধ প্রেমের কারণেই!!

তাই আসুন, আজ থেকে আমরা শরীয়তের বিধানাবলীকে শ্রদ্ধা করি। পর্দার বিধান মেনে চলি। অবৈধ প্রেমে জড়িয়ে নিজের দুনিয়া আখিরাত বরবাদ না করি। যারা এখনো অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত, আজ এবং এ মুহুর্তেই তা থেকে তাওবা করি। বেগানা নারী-পুরুষের প্রতি কেউ না তাকাই। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এসব পাপকর্ম থেকে হেফাজত করুন। আমীন। 

বেপর্দা নারী তুমি করছ কত মজা!

মরার পড়ে পাবে তুমি অতি কঠিন সাজা।

ছেলেদের মন নিয়ে করছ কত খেলা

একদিন ভাঙ্গবে তোমার সকল রঙীন মেলা।

জীবনের যে সময়টুকু চলেছ ভুল পথে

তাওবা করে ফিরে এসো, চলো দীনের পথে।

[এটি নরসিংদী জেলার শিবপুর থানার একটি সত্য ঘটনা। পাঠিয়েছেন—মুহাম্মদ সোহেল মিয়া, শিবপুর, নরসিংদী]

আপনি পড়ছেনঃ আদর্শ যুবক যুবতি ১ বই থেকে। 

আপনি আরও পড়তে পারেন >> অভিভূত জার্জিস কন্যা!যুদ্ধের গল্প

Please join our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Tumblr And Youtube channel .

1 thought on “সর্বনাশা প্রেম (প্রেমের গল্প-কাহিনী)”

Leave a Comment