গল্পটি শাতিমে রাসূল কাব বিন আশরাফের যে তৎকালীন রাসূল (সাঃ)-এর যুগে রাসূল সাঃ-কে গালিগালাজ করতো ও মুসলমানদেরকে কষ্ট দিতো। সম্মানিত লেখক এই শাতিমে রাসূলের হত্যার কাহিনী তার বইতে বর্ণনা করেছেন। আমার বাংলা পোষ্ট.কমের পাঠক পাঠিকাদের জন্য হুবহু ভাবে দেওয়া হলো।
চরম শাস্তি (শাতিমে রাসূল এর শাস্তির কাহিনী)
ইহুদিরা মুসলমানদের গোড়ার শত্রু। মুসলমানদের বিরুদ্ধে এদের ষড়যন্ত্র এক মুহূর্তের জন্যও বন্ধ হয়নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে থেকে শুরু করে বর্তমান কাল পর্যন্ত এদের নানাবিধ চক্রান্ত ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ অব্যাহত গতিতে চলে আসছে। এরা আমাদের গৌরবময় অতীতকে যেমন আত্ম দ্বন্দ্বের যাতাকলে দলিত মথিত করেছে, ঠিক তেমনি এদেরই ষড়যন্ত্রে আমরা লহুসিক্ত হয়েছি জঙ্গে জামাল ও জঙ্গে সিফফীনে। এদের নির্মম আঘাতে যেমন সায়্যিদুনা হযরত ওমর (রাঃ) শহীদ হয়েছেন, ঠিক তদ্রুপ সর্বশ্রেষ্ঠ মাজলুম শহীদ হযরত উসমান (রাঃ)কেও হারিয়েছি চিরদিনের মত। শুধু তাই নয় নবীজীর নয়নের মনি, হযরত ফাতিমার কলিজার টুকরা, মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ের ধন সায়্যিদুনা হযরত হুসাইন (রাঃ) কারবালার প্রান্তরে নির্মমভাবে শহীদ হয়েছেন দুষ্ট ইহুদিদের গভীর কূট কৌশলের ফলেই।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ইসলাম বিদ্বেষী ইহুদিদের ষড়যন্ত্রের মুখে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাল ছেড়ে বসে থাকনেনি এবং নীরব নিশ্চুপ থেকে তা হজম করেও নেননি। বরং তাদের প্রতিটি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে যথাসময়ে কঠোর ও যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাদের সকল ষড়যন্ত্র ও কুমতলবকে গুড়িয়ে দিয়েছেন এবং তাদেরকে প্রদান করেছেন সমুচিত শাস্তিও।
কাব ইবনে আশরাফ (শাতিমে রাসূল) ছিল প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময়কার এক পাপিষ্ঠ ইহুদি। সে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে গালি গালাজ করত। কবিতা রচনা করে তার নির্মল ও নিঙ্কলুষ চরিত্রে কালিমা লেপনের চেষ্টা করত। তার শানের খেলাফ এমন অবমাননাকর শব্দ ব্যবহার করত যা প্রতিটি মুসলমানের ঈমানী চেতনায় শক্তভাবে আঘাত হানত।
তার কুকর্মের ফিরিস্তি এখানেই শেষ নয়। সে লোকজনকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিরুদ্ধে উত্তেজিত করত। মুসলমানদেরকে বিভিন্নভাবে কষ্ট দিত। এমনকি একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দাওয়াত দিয়ে এনে হত্যা করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র সেই এটেছিল।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাথমিক পর্যায়ে সাহাবায়ে কেরামকে ধৈর্য ধারণের আদেশ দিয়েছেন। কাব ইবনে আশরাফকে সৎ পথে ফিরে আসার অনেক সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যখন সে অসৎ পথ থেকে ফিরে আসল না, এমনকি তার অপকর্ম দিন দিন বাড়তে লাগল তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে হত্যার নির্দেশ দিলেন।
একদিন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, সে কাব ইবনে আশরাফকে হত্যা করতে পারবে? কেননা সে আল্লাহ ও তার রাসূলকে অনেক কষ্ট প্রদান করছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন—হে আল্লাহর রাসূল! আমি পারব। তবে আমাকে এমন কিছু অস্পষ্ট ও একাধিক অর্থবোধক প্রকৃত পক্ষে আমি অন্য অর্থের তা ব্যবহার করব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দিলেন।
দু একদিন পর। হযরত মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা (রাঃ) অভিশপ্ত ইহুদি কাব ইবনে আশরাফের নিকট গেলেন। বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করলেন। এক পর্যায়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে আলাপ শুরু হলে কথা প্রসঙ্গে বলতে লাগলেন—
এই লোকটির কথা কি আর বলব। তিনি তো আমাদেরকে জ্বালিয়ে মারছেন। নানাবিধ কষ্টে নিপতিত করছেন। তার কথায় তো যাকাত সদকা আর দান খয়রাত করতে করতে একদম নিঃস্ব হয়ে গেছি। পড়ে গেছি বড় অভাবের মধ্যে। আর এজন্যেই আপনার কাছে ঋণ নেওয়ার জন্য চলে এসেছি।
উল্লেখ্য যে, যাকাত দিলে, দান খয়রাত করলে বাহ্যিক দৃষ্টিতে নফসের বড় কষ্ট হয় এতে কোন সন্দেহ নেই। আর উপরের বক্তব্যের দ্বারা হযরত মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা (রাঃ) এ বাহ্যিক অর্থটিই কাব বিন আশরাফকে বুঝাতে চেয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে দ্বীনদার ও নিষ্ঠাবান লোকেরা দান-সদকা প্রদান ও গরিবদের সাহায্য সহযোগিতা করার দ্বারা অন্তরে এক গভীর প্রশান্তি অনুভব করেন। এমনকি আল্লাহর রাহে মাল খরচ করতে না পারলে তারা কষ্ট অনুভব করেন।
মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা (রাঃ) এর কথায় কাব ইবনে আশরাফ বেশ পুলকিত হল। মনটা তার খুশিতে ভরে উঠল। কথাটিকে আরো জোড়ালো করার জন্য সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল, আরে-এ আর এমন কি দেখলে! দেখার সময় তো সামনে আসছে মাত্র। ভবিষ্যতে যে তোমাদের অবস্থা কি দাঁড়াবে সে চিন্তাই আমি করছি।
মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা (রাঃ) বললেন, আমরা যেহেতু তার [মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর] অনুসারী হয়ে পড়েছি কাজেই তাকে আপাতত ছেড়ে দিতে পারছি না। এজন্য পরিণামের অপেক্ষায় আছি। [এ কথা দ্বারা কাব ইবনে আশরাফ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মন্দ পরিণামের কথা বুঝলেও মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা (রাঃ) কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লামু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিজয় ও কাফিরদের পরাজয়ের কথাই বলেছেন]
কাব বিন আশরাফ বলল—
: তোমরা ঋণ নাও তাতে আমার কোন আপত্তি নেই। তবে বন্ধক হিসেবে কিছু রেখে যাও।
: বন্ধক হিসেবে আপনি কি চান?
যতদিন তোমরা ঋণ পরিশোধ না করবে ততদিন তোমাদের স্ত্রীরা আমার কাছে থাকবে। (লোকটির অন্তরটা যে কত খারাপ ও অপরিচ্ছন্ন এ কথাটিই তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ)
: দু’কারণে আমরা তা পারছি না। একে তো এর দ্বারা আমাদের আত্মমর্যাদার আঘাত লাগবে। দ্বিতীয়ত আপনি হলেন সুন্দর ও সুঠাম দেহের অধিকারী একজন নওজয়ান।
: তাহলে তোমাদের ছেলেদেরকে বন্ধক রাখ।
: এও সম্ভব নয়। কারণ লোকজন আমাদের ছেলেদেরকে এ বলে আজীবন ধিক্কার দিবে যে, তোমরা হলে ঐসব লোক যাদেরকে দু’তিন সের আটার জন্য মানুষের নিকট বন্ধক রাখা হয়েছিল।
: তাহলে তুমি কী রাখতে চাও?
: হাতিয়ারের প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও আমরা আপনার নিকট সেগুলো বন্ধক রাখতে পারি।
: ঠিক আছে। রাত্রে অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে এসো এবং ঋণ নিয়ে যেও।
: আচ্ছা, তাই হবে।
ওয়াদা অনুযায়ী হযরত মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা (রাঃ) রাতের বেলা তার কয়েকজন সঙ্গীসহ কাব বিন আশরাফের বাড়িতে গেলেন। অতঃপর তাকে ডাক দিলে সে দূর্গ থেকে নিচে নামতে লাগল। স্ত্রী বলল, এত রাত্রে কোথায় যাচ্ছ?
কাব বলল, মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা আর আমার দুধ শরিক ভাই আবু নায়েলার নিকট যাচ্ছি। তুমি চিন্তা করো না। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে আসব।
স্ত্রী বলল, আমি এই শব্দে রক্ত উদগীরণের আলামত অনুভব করছি।
কাব বলল, কোন শরীফ লোককে গভীর নিশীতে বর্শা মারার জন্যও যদি ডাকা হয় তবুও তার ডাকে সাড়া দেওয়া উচিৎ। একথা শুনে স্ত্রী কথা না বাড়িয়ে চুপ রইল।
ইত্যবসরে মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা (রাঃ) তার সাথীদের বলে দিয়েছেন কাব আসলে আমি তার চুলের ঘ্রাণ নেব। যখন দেখবে আমি তার চুল দৃঢ় করে ধারন করেছি তৎক্ষণাৎ তার মস্তক উড়িয়ে দিবে।
একটু পর কাব ইবনে আশরাফ আসল। মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা (রাঃ) বললেন, আজকের ন্যায় সুঘ্রাণ আমি আর কোনদিন আস্বাদন করি নি।
কাব বলল, আমার নিকট আরবের অনেক সুন্দরী রূপসী নারী আছে। এরা সুঘ্রাণ খুব পছন্দ করে। এজন্য আমি এগুলো ব্যবহার করে থাকি।
মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা (রাঃ) বললেন, যদি কিছু মনে না করেন, তবে আমাকে আপনার সুবাসিত মস্তক থেকে সুঘ্রাণ নেওয়ার অনুমতি দান করুণ।
কাব ঠিক আছে বলে মাথাটা সামান্য ঝুঁকিয়ে দিল। মুহাম্মদ বিন মাসলামা ও তার সঙ্গীগণ ঘ্রাণ আস্বাদন করলেন। কিছুক্ষণ পর মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা (রাঃ) পুনরায় বললেন—
আপনি কি আমাকে দ্বিতীয়বার মাথার ঘ্রাণ নেওয়ার সুযোগ দিয়ে বাধিত করবেন?
কাব ভাবল, আমার আজকের সুঘ্রাণটা এদের খুব পছন্দ হয়েছে বুঝি। তাই ভিতরে ভিতরে সে বেশ খুশি হল। বলল, ঠিক আছে, তুমি ইচ্ছামত সুঘ্রাণ আস্বাদন কর।
মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা (রাঃ) কাবের কাছে গেলেন এবং ঘ্রাণ গ্রহণে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। এক পর্যায়ে সুযোগ বুঝে মাথার চুল খুব মজবুত করে ধরলেন এবং সঙ্গীদেরকে ইঙ্গিত দিলেন।
সঙ্গীরা তৈরিই ছিল। ইঙ্গিত পাওয়া মাত্র একজন ধারাল তরবারীর এক আঘাতে কাবের মস্তক দ্বিখন্ডিত করে ফেললেন। অতঃপর তারা ইসলামের ও চির শত্রুর মাথা নিয়ে শেষ রাত্রে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে উপস্থিত হলেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের দেখেই বললেন, এরা সফলতা অর্জন করেছে। এদের চেহারা উজ্জ্বল হোক।
তারা উত্তরে বললেন, সর্বাগ্রে আপনার চেহারা মোবারক হোক, ইয়া রাসূলাল্লাহ।
এরপর তারা ঘৃণিত ইহুদি কাব ইবনে আশরাফের ছিন্ন মস্তক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে রাখলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলহামদু লিল্লাহ বলে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করলেন।
এদিকে কাব ইবনে আশরাফের নিহত হওয়ার সংবাদ শুনে ইহুদীরা বিচলিত হয়ে পড়ল। প্রভাতে তাদের একটি দল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বলল, আমাদের নেতাকে এভাবে হত্যা করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে মুসলমাদেরকে বিভিন্ন উপায়ে কষ্ট দিত এবং লোকদেরকে আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য উৎসাহিত করত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে এরূপ শুনে তারা নিরুত্তর হয়ে গেল। জবাব দেওয়ার মত কোন কথা খুঁজে পেল না। অতঃপর হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহুদিদের থেকে অঙ্গীকার নিলেন যে, ভবিষ্যতে কখনো তারা এমন কাজ করবে না।
প্রিয় পাঠক! কাব ইবনে আশরাফ মারা গেছে ঠিকই, কিন্তু সে রেখে গেছে তার দোসরদের। আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা নামে এক কুখ্যাত মুনাফিক ছিল সেসব দোসরদেরই একজন। এই অভিশপ্ত লোকটি হযরত উসমান (রাঃ)-এর শাসনকালে হিজরি ২৫ সনে ছন্মবেশ ধারণ করে মুসলমান হয় এবং ইসলামি খিলাফত ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার বহু সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তাকে সাহায্য করে অনেক সংখ্যক মুনাফিক যারা ইসলামের মূলে আঘাত হানার মানসে বাহ্যতঃ ইসলাম গ্রহণ করেছিল।
হযরত আবু বকর ও হযরত ওমর (রাঃ) এর খিলাফত কালে যেসব ইহুদি মুনাফিক কখনো চোখ খোলার সাহস পেত না, আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা তাদেরকে নিয়ে একটি গোপন দল গঠন করে এবং একের পর এক এমন নীল নকশা বাস্তবায়ন করে চলে যা ভাবতে গেলেও গা শিউরে উঠে। ইতিহাসে এরা খারেজী বা সাবায়ী গোষ্ঠী নামে পরিচিত।
প্রিয় বন্ধুগণ! সাবায়ী গোষ্ঠীর দুস্কর্মের খতিয়ান লিখতে গেলে আরেকটি স্বতন্ত্র পুস্তক রচনা করতে হবে। সেগুলো সুযোগ পেলে আল্লাহ চাহে তো অন্য সময় সংক্ষেপে আলোচনা করব। এখন শুধু একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চাই। কথাটি হল—
পূর্বেই বলা হয়েছে যে, সাবায়ী গোষ্ঠী ইসলামি খিলাফত ব্যবস্থাকে সমূলে ধ্বংস করার জন্য নানাবিধ ষড়যন্ত্র আটে এবং অপপ্রচার চালায়। এসব ষড়যন্ত্রের মধ্যে একটি মারাত্মক ষড়যন্ত্র এও ছিল যে, সত্যকে জীবন্ত কবর দিয়ে হাজারো মিথ্যার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে বিভিন্ন রকম বই পুস্তক রচনা করা। ইবনে সাবার দল এসব পুঁথি পুস্তকে মিথ্যার বহর এভাবে ছড়িয়ে দিয়েছিল যে, পরবর্তী অনেক ইতিহাস লেখক সেসব মিথ্যা গুজব সর্বস্ব পুঁথি পুস্তক দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়েন। ফলে এর অনিবার্য পরিণতি এই দাঁড়ায় যে, এসব ইতিহাস লেখকের তথাকথিত ইতিহাস পড়ে আজ বহু সরল প্রাণ মুসলমান হযরত উসমান (রাঃ) ও হযরত মুআবিয়া (রাঃ) সহ বিশিষ্ট কয়েকজন সাহাবীর ব্যাপারে বিরূপ মনোভাব পোষণ করেন। শুধু তাই নয়, এসব লেখনির বদঊলতে আজ মুসলিম উম্মাহর বহু লোক হযরত সাহাবায়ে কেরাম থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলেছে, আবার অনেকে হয়ে পড়েছে সাহাবী বিদ্বেষীও। (নাউযুবিল্লাহ)
আরো অধিক পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আধুনিক শিক্ষা অর্জনের জন্য যারা স্কুল, কলেজ ও ভার্সিটিতে গমন করেন, ইসলাম ও ইসলামের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে তাদের সম্যক ধারণা না থাকায় তারা আরো বেশি বিভ্রান্ত হচ্ছেন। কারণ ইসলামের ইতিহাস নামে যেসব বই তাদের পাঠ্য সূচিতে রয়েছে, তা বৃটিশ উপনিবেশিক কর্তৃক প্রণীত সিলেবাসেরই অংশ। আর বৃটিশরা যে কখনোই ইসলাম ও মুসলমানদের মঙ্গল চায়নি, তা বলাই বাহুল্য। তাই তাদের প্রণীত সিলেবাসে সঠিক ঐতিহ্যপূর্ণ ইসলামি ইতিহাসের পরিবর্তে ভ্রান্তিকর ইতিহাস স্থান পাওয়াই স্বাভাবিক।
মুহতারাম পাঠকবৃন্দ! আমি যখন মাদরাসা দারুর রাশাদ (মিরপুর ১২, ঢাকা) থেকে দাওরা ফারেগ হয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বি এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য আরবি, ইসলামি শিক্ষা ও ইসলামের ইতিহাস নিয়ে পড়াশুনা করতে থাকি, তখন কিছু বিকৃত ইতিহাস আমাকে দারুণভাবে পিড়িত করে। হৃদয়ের গভীরে অনুভব করি প্রচন্ড ব্যথা। বিশেষ করে ঐ সময় আমার বুক ফেটে কান্না আসে যখন দেখি ইতিহাসের প্রায় সব কটি বই ও গাইডে অকুতোভয় সিপাহসালার ওহী লেখক ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খাস দুআ প্রাপ্ত বিখ্যাত সাহাবী হযরত আমীরে মুআবিয়া (রাঃ) এর শানে ব্যবহার করা হয়েছে এমন কিছু মারাত্মক শব্দ যা উচ্চারণের সাথে সাথে দেহের লোমকুপগুলো খাড়া হয়ে উঠে। সেখানে এই মহান সাহাবীকে ধুরন্দর ধূর্ত, শঠ ও প্রতারক হিসেবে আখ্যায়িত করে এমনভাবে চিত্রায়িত করা হয়েছে যা ভাবতে গেলেও লজ্জায় মাথা নূয়ে আসে।
একদিন আমি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিশ্বকোষ বিভাগের পরিচালক, জগত বিখ্যাত মনীষী আল্লামা আবুল হাসান আলী নদভী (র.) এর অন্যতম খলীফা হযরত মাওলানা আবু সাঈদ মুহাম্মদ ওমর আলী (দা.) এর সাথে সাক্ষাৎ করে এ ব্যাপারে আলাপ করি। তার সাথে আমার বহুদিনের পরিচয়। স্নেহ করে তিনি আমাকে নাম ধরেই ডাকেন। সেদিন আমার মুখ থেকে এসব শুনে বললেন, হ্যাঁ, এ ব্যাপারটি আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলছে। মুফীজ! এ ব্যাপারে তুমি কিছু লেখালেখি কর।
সেদিন থেকে এরাদা করেছিলাম, যদি আল্লাহ পাক তাওফিক দেন তবে এসব বিষয়ে কিছু লিখব। আজ প্রসঙ্গক্রমে কিছু কথা লিখতে পেরে তার সেই নির্দেশ সামান্য পরিমান হলেও পালন করেছি। এজন্য আল্লাহ পাকের দরবারে জানাই লাখো কোটি শুকরিয়া। যদি পাঠকবৃন্দ দুআ করেন আর আল্লাহপাকের রহমত শামেলে হাল হয় তবে ভবিষ্যতে আরও কিছু লিখার পুর্ণ ইচ্ছা আছে। হে রাহমানুর রাহীম! তুমি তাওফীক এনায়েত কর।
[সূত্রঃ তাবাকাতে ইবনে সাদ। সহায়তা : সীরাতে মুস্তফা ২:১৭৫, ইসলামী খিলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস : ৩৪]
লেখক : মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম। সাড়া জাগানো সত্য কাহিনী (হৃদয় গলে ১৩) বই থেকে।
লেখকের বই থেকে আরও গল্প!
০১. স্ত্রীকে ক্ষমা করার পুরস্কার
০২. সৎ মায়ের আদর (শিক্ষামূলক গল্প)
০৩. কুরআনের বরকত (ইসলামিক গল্প)
০৪. ধন্য এ জীবন! হযরত হাসান বসরী (রঃ) গল্প
০৫. যুবতীর কবলে যুবক (প্রেমের গল্প)
০৬. ব্যথিত হৃদয় (ইসলামিক উপন্যাস ১)
০৭. কে অধিক দানশীল (তিন ব্যক্তির দানশীলতার গল্প)
০৮. হৃদয়স্পর্শী শিক্ষণীয় কাহিনী (হৃদয় গলে সিরিজ ১২)
০৯. আদর্শ স্বামী স্ত্রী ২ (শিক্ষণীয় গল্পের বই)
১০. অভিভূত জার্জিস কন্যা (ইসলামিক যুদ্ধের গল্প)
For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.