সৎ মায়ের আদর, কিশোর কিশোরীদের জন্য রচিত মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলামের ইসলামিক শিক্ষামূলক গল্প।
সৎ মায়ের আদর! (কিশোর কিশোরীদের গল্প ৩)
সুপ্রিয় বন্ধুরা! তোমরা হয়তো জানো যে, জনগণের আরাম, শান্তি ও উপকারের জন্য বিশ্বের প্রায় সবক’টি সরকার সুদের প্রচলন করেছে। তাঁরা বিনা পরিশ্রমে তাদেরকে (সুদ নীতিতে) কখনও প্রাইজবন্ড, কখনও লাভ, কখনো বোনাস, কখনও ইন্টারেস্ট নাম দিয়ে রকম-রকম আর্থিক সুবিধা প্রদান করে চলেছে। এতে বাহ্যত মনে হয়, সরকার জনগণকে অত্যাধিক মুহাব্বত করে, সীমাহীন ভালোবাসে। আসলে কিন্তু তা নয়। কেননা বিনাশ্রমে এসব সুবিধা পেয়ে জনগণ অলস, অকর্মণ্য এবং অক্ষম হয়ে দিন দিন ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে এবং আত্মার মৃত্যু ঘটিয়ে দ্বীনী আগ্রহ-উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলছে।
আসলে, বর্তমান বিশ্বের প্রায় সব সরকারের উদাহরণ হলো সেই স্ত্রীলোকের মত, যে তার সতীনের ছেলেকে খুব আদর করত। সেই স্ত্রী লোকটির দু’টি ছেলে ছিল। একটি নিজের ছেলে অপরটি সতীনের ছেলে। সে সতীনের ছেলেটিকে সব সময় কোলে রাখত। উঠতে-বসতে, চলতে-ফিরতে ছেলেটিকে কখনও কোল থেকে নামাত না। এমনকি কোলে-কাঁধে নিয়েই সংসারের কাজ-কর্ম করত। পাড়ায় বেড়াতে গেলে সতীনের ছেলেটিকে কোলে এবং নিজের ছেলেটিকে হাত ধরে হাঁটিয়ে নিয়ে যেত।
তার এসব কর্মকান্ডে পাড়ার মেয়েরা তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠল। সবাই বলতে লাগল—আহা, মেয়েটি কত ভালো! তার মনে একটুও হিংসা-বিদ্বেষ নেই। সতীনের ছেলেকে কোলে আর নিজের ছেলেকে হাঁটিয়ে নিয়ে বেড়ায়। সতীনের ছেলেকে এত আদর করতে আর কোথাও দেখা যায় না। এরূপ সতী-সাধ্বী ও ভালো নারী আর হয় না!
একদিন পাড়ার একটি মেয়েলোক তার কাছে এসে গোপনে সহানুভূতি দেখিয়ে বলল, বোন! নিজের ছেলেকে অবহেলা করে সতীনের ছেলেকে এতটা আদর করা ঠিক নয়। এতে তোমার নিজেরই ক্ষতি হবে।
একথা শুনে মেয়েলোকটি বলল—না বোন! তুমি ভুল বুঝেছ! নিজের ছেলের প্রতি অবহেলা এবং সতীনের ছেলের প্রতি বেশি দরদের কারণে আমি এমনটি করছি না। আমি তো নিজের ছেলেকে হাঁটিয়ে নিয়ে বেড়াই, যেন তার পা শক্ত হয় এবং স্বাবলম্বী হয়ে সমাজে মজবুতভাবে দাঁড়াতে পারে। আর সতীনের ছেলেকে কোলে নিয়ে বেড়াই যেন সে কোনোদিন হাঁটতে না শেখে! সে যেন কোলে থাকতে থাকতে অলস, অচল এবং পঙ্গু হয়ে যায়, কোনোদিন যেন সে সমাজে মুখ তুলে দাঁড়াতে না পারে, এজন্যেই আমি এরূপ করছি। এটা আমার পক্ষ থেকে সতীনের ছেলের প্রতি মোটেও আদর নয়। কিন্তু মানুষ বুঝতে না পেরে আমার প্রশংসা করছে!
অনুরূপভাবে যে সরকার তার দেশে সুদপ্রথা চালু করে, সে সরকার মূলত জনগণের প্রকৃত কল্যাণ চায় না। বরং জনগণ যেন অলস, নিঙ্কর্ম ও শ্রমবিমুখ হয় সেটাই সে চায়। কিন্তু জনগণ না বুঝে সরকারের প্রশংসা করে বলে—দেখো আমাদের সরকার কত ভালো। আমাদের কোনো কাজ করতে হয় না। ব্যাংকে টাকা রাখলেই আমাদেরকে মাসে মাসে সুদ দেয়। ফলে আমরা স্বাচ্ছন্দে আরামের সাথে সংসার চালাতে পারি।
প্রিয় বন্ধুরা! সুদ কাকে বলে জানো? সুদ বলা হয় কাউকে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ঋণ প্রদান করে মূলধনের অতিরিক্ত নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করা। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে সুদ হারাম করেছেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ সুদদাতা, সুদগ্রহীতা, সুদের সাক্ষী এবং সুদ লেখকের উপর আল্লাহ তাআলার লানত। লানত মানে, আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়া।
তাই এসো, আমরা এখনই পাক্কা নিয়ত করি, আমরা নিজেরা তো কখনো সুদ খাবই না, বরং যারা খায়, তাদেরকে আমরা সুন্দরভাবে বুঝিয়ে এ থেকে বিরত রাখব এবং আমাদের সমাজকে সুদমুক্ত সমাজ হিসেবে গড়ে তুলব। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সুদের মতো এতবড় মহাপাপ থেকে হেফাযত করুন। আমীন।
[আল ইফাযাতুল ইয়াওমিয়্যাহ, খণ্ডঃ ৫, পৃষ্ঠাঃ ৪৯]
গল্পের উৎস : আদর্শ কিশোর কিশোরী ৩ বই থেকে।
লেখক : মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম
এরপর পড়ুন : ন্যায়পরায়ণতার অনুপম দৃষ্টান্ত। (কিশোর গল্প)
প্রিয় কিশোর বন্ধুরা, সৎ মায়ের আদর গল্পটি তোমার বন্ধুদেরকে পড়াতে এটি শেয়ার করে সবাইকে জানিয়ে দাও।
For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.