আমাদের একশ্রেণী মুসলিম ভাইয়েরা আছেন যাহারা স্ত্রীর সাথে দুর্ব্যবহার, অকথ্যগালিগালাজ সহ স্ত্রীকে মারপিট করে শারীরিক ও মানসিকভাবে কষ্ট দিয়ে থাকেন। সেসব মুসলমান ভাইদেরকে জিজ্ঞাসা করা হলে তাহারা উত্তর দেন রাগে পাগল হয়ে যায় ফলে হুশ জ্ঞান থাকেন না। সেসব দাড়ি টুপিওয়ালা মুসলিম ভাইদের উদ্দেশ্যে লেখক তাঁর সুন্দরতম লেখনির মাধ্যমে কিছু উপদেশ ও পরামর্শ তুলে ধরেছেন। তাহলে চলুন স্ত্রীকে খুশি রাখতে লেখকের সোনালী উপদেশ টি পড়া শুরু করি…
স্ত্রীর সাথে দুর্ব্যবহার করবেন না!
কেননা কোনো দাড়ি-টুপি ওয়ালা ব্যক্তি যার ইশারাক, আওয়াবিন ও তাহাজ্জুদও কাযা হয় না তিনি যখন স্বীয় স্ত্রীকে অহেতুক ধমক দেয়, মারধর এবং অন্যায় ভাবে তাকে কষ্ট দেয় তখন ঐ স্ত্রী মনে মনে ভাবে, আমার এই দাড়ি-টুপি ওয়ালা স্বামীর চেয়ে তো অনেক ভালো ঐ শার্ট-প্যান্ট ওয়ালাকে দেখতে পায় যে, সে তার স্ত্রীর সাথে সুন্দর, কত মধুর ব্যবহার করছে তখন সে গভীর আক্ষেপের সাথে বলে, হায় আল্লাহ! স্বামী হিসেবে তো ঐ শার্ট-প্যান্ট লোকটিই উত্তম। হায়, কত ভালো হতো যদি আমি এই দাড়ি-টুপিওয়ালার পাল্লায় না পড়তাম!!
উপরের আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার বুঝে আসছে যে, অনেক দাড়ি-টুপিওয়ালা স্বামী দুর্ব্যবহারের মাধ্যমে স্বীয় স্ত্রীদের অন্তরে দাড়ি-টুপির ব্যাপারে ঘৃণা সৃষ্টি করছে। যা আরেকটি স্বতন্ত্র মারাত্মক গোনাহ। তাই দাড়ি রাখার পর, নেক লোকদের বেশ ধারণ করার পর, ইশরাক-তাহাজ্জুদ আদায়ের পর, যিকির –অযীফা নিয়মিত আদায়ের পর এবং বুজুর্গদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের পর স্ত্রীদের হকের ব্যাপারে যত্নবান হওয়ার দায়িত্বটি আমাদের উপর আরো কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
সুতরাং এমতাবস্থায় স্ত্রীদের সাথে আমাদের এমন ব্যবহার করা উচিত যাতে তাদের অন্তরে দ্বীনের প্রতি আগ্রহ ও অনুরাগ পয়দা হয়। তারা যেন মহল্লার বিবাহিতা মহিলাদের নিকট একথা বলতে বাধ্য হয় যে, আরে, কত ভালো হতো যদি তোমাদের বিয়ে কোনো আল্লাহওয়ালা দ্বীনদার ও বুজুর্গদের সাথে সম্পর্ক রাখে এমন কারো সাথে হতো। এবং মহল্লার অবিবাহিতা মেয়েদের যেন উৎসাহ দিয়ে বলে, আরে তোমরা কেন অফিসার ও স্মার্ট স্বামী তালাশ করছ, কেন উচ্চাভিলাষী ছেলের অপেক্ষায় রয়েছ, তোমাদের তো বরং জীবন সঙ্গী হিসেবে দ্বীনদার দাড়ি ওয়ালা নামাজী ছেলে কামনা করা উচিত। দেখ না, আমি দ্বীনদার স্বামী পেয়ে কেমন আরামে আছি! আমার স্বামী তো কোনো অফিসার কিংবা বড় কোনো পদে অধিষ্টিত নয়, নয় বিশাল অর্থবিত্তের মালিকও, কিন্তু দেখো আমাদের পরিবারে কত শান্তি! কত আরাম !!
কোনো ঝগড়া-ঝাটি নেই, মনোমালিন্য নেই, গালিগালাজ নেই, নেই কোনো অশান্তি ও যন্ত্রনা!! নেই কষ্ট ও বঞ্চনা।
রাগে পাগল হয়ে যাই- কথাটি ঠিক নয়!
অনেকে বলে – হুজুর! আমার রাগ খুব বেশী। রাগে আমি পাগল হয়ে যাই। বিবেক-বুদ্ধি হারিয়ে ফেলি। আর তখনই স্ত্রীর উপর জুলুম করে বসি। তাকে মারধর করি, মুখে যা আসে তা-ই বলি’।
আসলে তাদের একথাটা ঠিক নয়। এর প্রমাণ হলও- মনে করুণ, কোনো এক শক্তিশালী লোক মামুন নামক এক দুর্বল ব্যক্তির উপর রাগ করল এবং বলল, তুমি এক্ষুণি আমার সামনে থেকে সরে যাও। কারণ এখন আমার হুঁশ –জ্ঞান ঠিক নেই। ঠিক এই মুহূর্তেই যদি সেরের উপর সোয়া সের পড়ে অর্থাৎ তার চেয়ে আরো শক্তিশালী কোনো লোক তার মোকাবেলায় এসে দাঁড়ায় তখন সে অধিক শক্তিশালী লোকটির সামনে হাত জোড় করে বলতে থাকে- সাহেব! দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি আর কখনো এমন করব না।
পাঠক! বলুন তো, লোকটি যদি সত্যিকার অর্থেই হুঁশ-জ্ঞান হারিয়ে ফেলত তাহলে কেন সে দ্বিতীয় লোকটির কাছে করজোড়ে ক্ষমা চাইছে।
সুতরাং বুঝা গেল, রাগে মানুষ হুঁশ-জ্ঞান হারায় না, পাগলও হয় না। যদি হতো তাহলে দুর্বল – সবল সবার সাথেই একই আচরণ করত। মোটকথা, নারী জাতি স্ত্রীরা সৃষ্টিগত ভাবে পুরুষের তুলনায় কম শক্তিশালী বলেই স্বামীরা তাদের উপর জুলুম করে এবং হুঁশ-জ্ঞান হারিয়ে ফেলার অজু হাত দেখিয়ে নিজকে বিচারের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। যদি নারীরাও পুরুষের মতো শক্তিশালী হতো তাহলে কোনোদিন কোনো পুরুষ বলত না যে, আমি রাগে হুঁশ-জ্ঞান হারিয়ে স্ত্রীকে মারপিট করি।
রাগের চিকিৎসা
একবার জেদ্দা থেকে এক ব্যক্তি হযরত হাকীম আখতার সাহেব দামাত বারাকাতুহুম এর কাছে এই মর্মে চিঠি পাঠাল যে, হযরত! আমার ঘরে সর্বদা ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকে। আর ঝগড়ার মূল কারণ হলো, রাগ। অর্থাৎ আমরা স্বামী-স্ত্রী, সন্তানাদি- সকলের মধ্যে রাগ খুব বেশী। যার ফলে কেউ কাউকে ছাড় দিতে চায় না। তাই কী কাজ করলে আমাদের রাগ কমবে তা বলে দিলে চিরদিন আমরা আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।
উত্তরে তিনি লিখলেন-রাগ কমানোর জন্য আপনাদেরকে নিম্নলিখিত (আমল ও দোয়া) কাজ গুলো করতে হবে।
১। খানা খাওয়ার সময় যখন দস্তরখান বিছানো হয় এবং খানা সম্মুখে রাখা হয় তখন সাতবার বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পড়ে খাদ্যের উপর দম করে তারপর খাবেন। বাচ্ছাদের খাবারের উপরও দম করে নিবেন।
অনুরূপ ভাবে খাবার তৈরী এবং রুটি বানানোর জন্য যে পানি ব্যবস্থার করা হয় তাতেও উল্লেখিত নিয়মে দম করুণ এবং ঐ পানির দ্বারা খানা পাকান ও খামীর বানিয়ে রুটি তৈরী করুণ। এতে ইনশা আল্লাহ ঘরের লোকদের মধ্যে মায়া-মুহাব্বত ও কোমল স্বভাব সৃষ্টি হবে।
২। চলতে – ফিরতে ইয়া আল্লাহ, ইয়া রাহমান, ইয়া রাহীম যথা সম্ভব বেশী বেশী করে পড়বেন।
৩। প্রতিদিন ঠাণ্ডা পানির সাথে একটি লেবুর রস, সামান্য গ্লুকোজ ও তিন চামচ ইসুবগুলের ভূষি মিশিয়ে তা পান করবেন।
প্রত্যহ এরূপ করলে রক্ত ও মেজাজ থেকে রুক্ষতা, কঠোরতা ও গরম ভাব চলে যাবে।
একমাস পর জেদ্দা থেকে হযরতের কাছে আরেকটি চিঠি এল। তাতে লেখা ছিল, হুজুর! আলহামদুলিল্লাহ্! আপনার কথা অনুযায়ী আমল করার পর আমার ঘরে এখন শান্তির সুবাতাস বইছে । সকলের মধ্যে কোমলতা ও মমত্ব দেখা দিয়েছে। ক্রোধ চলে গেছে। আমাদের সকলের মেজাজ এখন খুব নরম। সত্যি আল্লাহর নাম অনেক বরকতময়।
প্রিয় পাঠক পাঠিকা, আশা করি রাগ কমানোর আমল ও দোয়া গুলি আপনাদের ক্ষেত্রেও কাজে লাগবে। আমল করে দেখুন ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ পাক কবুল করবেন।
লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মদ মফীজুল ইসলাম (আদর্শ স্বামী স্ত্রী ২)
এরপর পড়ুন : স্ত্রীকে ক্ষমা করার পুরস্কার
For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.