স্ত্রীকে ক্ষমা করার পুরস্কার

হাকীমুল উম্মত হযরত থানবী (রহঃ) স্ত্রীকে ক্ষমা করে দেওয়ার পুরস্কার সংক্রান্ত একটি চমৎকার ও শিক্ষনীয় ঘটনা বর্ণনা করেছেন। আমার বিশ্বাস , এই একটি ঘটনা যদি প্রতিটি স্বামী তাদের হৃদয়ে সব সময় গেঁথে রাখেন তাহলে তাদের পক্ষে স্ত্রীর দোষ-ক্রটি দেখেও স্ত্রীকে ক্ষমা করা অনেক সহজ ও আছান হয়ে যাবে। তাহলে চলুন স্ত্রীকে ক্ষমা করে দেওয়ার মূল ঘটনাটি পড়ি…

স্ত্রীকে ক্ষমা করে দেওয়ার ঘটনা ও প্রতিদান

স্ত্রীকে ক্ষমা করার পুরস্কারঘটনাটি হলো, একদিন এক শ্রমিক বাজার থেকে একটি মুরগি খরিদ করল। সেই সাথে ঘি এবং অন্যান্য মসলা পাতিও কিনল। শ্রমিক লোকটি নিজের মেহনতের পয়সা এবং দেহের রক্ত পানি করে উপার্জিত পয়সা দিয়েই এসব কিনেছিল। তার মনে বড় আশা ছিল, আজ অনেক দিন পর হলেও একটু ভালো খাবার খেতে পারবে। কিন্তু তার আশা আর পুরা হলো না। কারণ মুরগী রান্না করার সময় অনিচ্ছাকৃত ভাবে স্ত্রীর হাত থেকে তরকারীর মধ্যে এত বেশি লবণ পড়ে গিয়েছিল যে, কোনোক্রমেই তা আর খাওয়ার যোগ্য রইল না।

শ্রমিক টি ছিল খুবই নম্র-ভদ্র। সেই সাথে আল্লাহ ওয়ালা। তাই সে খেতে বসে স্ত্রীকে কোনো কিছু না বলে, গাল মন্দ না করে শুধু পানি পান করে উঠে চলে গেলেন। সে মনে মনে বলে, আমার নিজের মেয়ের দ্বারা যদি এমন কোনো ঘটনা ঘটত, লবণ বেশী পড়ে যেত, তবে নিশ্চয় আমি কখনো এটা চাইতাম না যে, আমার জামাতা তাকে এই অপরাধের কারণে গাল মন্দ করুক, জুতা মারুক, অপমান-অপদস্থ করুক। তদ্রুপ আমার স্ত্রীও তো কারো মেয়ে।

এ পর্যন্ত ঘটনা বর্ণনা করার পর হযরত থানবী (রহঃ) বলেন- বন্ধুগণ! আমরা আমাদের মেয়েদের জন্য হুজুরের কাছে গিয়ে তাবীজ চাই যে, হুজুর! আমার জামাতা আমার মেয়ের সাথে খুব খারাপ আচরণ করে। তাই আমাকে এমন একটি তাবিজ দিন যার দ্বারা জামাতা আমার মেয়েকে মায়া-মুহাব্বতের সাথে রাখে, কোনো ভুল-ক্রটি হয়ে গেলে ক্ষমা করে দেয়। গালগালাজ না করে, মারধর না করে এবং সুখে-শান্তিতে রাখে।

বলুন! বন্ধুগণ! আমরা আমাদের মেয়েদের জন্য এরূপ তাবিজ নেই কিনা? যদি নিয়ে থাকি তাহলে বলুন তো, আমাদের যে স্ত্রী আছে তারা কি কারো মেয়ে নয়? নাকি তারা আকাশ থেকে পতিত হয়েছে। নাকি জমিন থেকে  উত্থিত হয়েছে? না, তারা আকাশ থেকে পতিত হয় নি, জমিন থেকে উত্থিত হয়নি। তারা বরং আমার মেয়ের মতোই অন্য কারো মেয়ে। অতএব, আমরা আমাদের মেয়েদের বেলায় যেমনটি ভাবি, যেমনটি চিন্তা করি, তাদের বেলায়ও তেমন চিন্তা করা উচিত। মনে রাখবেন, আমরা আমাদের মেয়েদের দুঃখ- দুর্দশা ও জামাতার দুর্ব্যবহারের কথা শুনে যেমন কষ্ট পাই, আমাদের মনে যেমন ব্যাথা লাগে ঠিক তদ্রুপ আমাদের স্ত্রীদের পিতাগণও নিজ নিজ মেয়ের দুঃখ- দুর্দশা ও জামাতার দুর্ব্যবহারের কথা শুনে সীমাহীন কষ্ট ও ব্যাথা পান। তাই স্ত্রীকে কষ্ট দেওয়ার পূর্বে একথাটি অন্তত একবার হলেও ভেবে নিন।

যাহোক, আবার মূল ঘটনায় ফিরে আসি। বলছিলাম, শ্রমিক লোকটি আপন মেয়ের কথা চিন্তা করে স্বীয় স্ত্রীর প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে তাকে একটি কথাও না বলে ক্ষমা করে দিল। সেই সাথে বলল, হে দয়াময় প্রভু! আমার স্ত্রী তো আপনারই  বান্দী। মাত্র কিছুদিনের জন্য তার ও আমার জিন্দেগী। কয়েকদিন পর, না আমি থাকব, না সে থাকবে। সবাই কবরের বাসিন্দা হয়ে যাব। আয় আল্লাহ! আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আপনার বান্দী মনে করে তাকে আমি মাফ করে দিলাম।

এই ঘটনার বেশ কিছু দিন পর শ্রমিক লোকটি মারা গেল। মারা যাওয়ার পর একদিন জৈনিক বুজুর্গ তাকে স্বপ্ন যোগে দেখতে পেলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, ভাই ! আল্লাহ পাক তোমার সাথে কেমন ব্যবহার করলেন?

উত্তরে সে বলল, হুজুর! আমার তো অনেক বড় বড় গুনাহ ছিল। কিন্তু আল্লাহ পাক বললেন, একদিন তুমি আমার এক বান্দীর অপরাধ ক্ষমা করে দিয়েছিলে। এর বিনিময়ে আজ আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম।

আল্লাহ পাক পৃথিবীর সকল স্বামীকে এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে স্বীয় স্ত্রীর যাবতীয় দোষ – ক্রটি ও অপরাধ গুলোকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার তাওফীক দান করুণ। আমীন!!

লেখক : মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম। 

এরপর পড়ুন : স্ত্রী অসদাচরণ করলে আপনি কি করবেন?

For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.

Leave a Comment