১০ টি ইসলামিক হাসির গল্প (মুচকি হাসির গল্প ১)

১০ টি শিক্ষণীয় ইসলামিক হাসির গল্প যা আপনি পড়তে পারেন। প্রিয় বন্ধুরা, আমরা সকলেই গল্প পড়তে ও শুনতে ভালোবাসি। আর সেসব গল্প যদি হয় হাসির ও একই সাথে শিক্ষামূলক তাহলে তো এড়িয়ে যাওয়া দায়। আর তাই আজ আমি আপনাদের সামনে ১০ টি ইসলামিক হাসির গল্প বর্ণনা করবো যে গল্পগুলো পড়লে বা শুনলে সকলের মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠবে। তাহলে চলুন আমরা মুচকি হাসির গল্প গুলো পড়া শুরু করি….

০১. যার উস্তাদ নেই শয়তানই তার উস্তাদ।

অনেক লোক কোরআন শরীফের বাংলা তরজমা নিজে নিজেই পড়ে। কোন উস্তাদের কাছে যায় না শিক্ষার জন্য। ফলে এ গভীর জ্ঞান-সাগর পাড়ি দেওয়ার কৌশল জানা না থাকার কারণে নানা রকম সন্দেহ পড়ে যায়। আবার এ সন্দেহ দূর করার জন্য কোন ভালো আলেমকেও জিজ্ঞেস করে না, ফলে সন্দেহ আরো গভীরতর হয়ে একদিন ঈমান ধ্বংস হয়ে যায়। বাংলায় জ্যামিতির বই আছে। সেখানে জ্যামিতির চিত্রগুলো বাংলা ভাষায় পড়েছেন বুঝতে পারে না? বলা বাহুল্য, সেখানে শিক্ষকের প্রয়োজন হয়। শিক্ষক ছাড়া সেখানে ভুল করা স্বাভাবিক। এমন কি মানব রচিত কবিতার ছন্দও নিজে নিজে পড়তে গিয়ে ভুল করে থাকে।

যেরূপ এক  ব্যক্তি নীচের ছন্দটি পাঠ করার পর তার অর্থ এত ভুল ভাবে গ্রহন করেছিল যে তার বন্ধুকে উপকার করতে গিয়ে মারাত্মক বিপদে ফেলেছিল। ছন্দটি এইরূপঃ

“সেই হলো প্রকৃত বন্ধু যে বিপদে-পড়া বন্ধু হাত  ধরে।”

ছন্দটি পাঠ করার পর সে ভাবতে লাগলো এবার একটা উত্তম কৌশল শিক্ষা গ্রহন করছি। একদিন সে দেখলো তার বন্ধু অন্য এক লোকের সাথে ভীষন ভাবে মারামারি করছে। বন্ধু তার সাধ্যমত দুহাতে মার ঠেকাচ্ছিল। এ ব্যক্তিটি বন্ধুর বিপদ  দেখে দৌড়ে এসে বন্ধুর দুহাত ধরে রাখলো। ফলে বন্ধু একটি মারও ঠেকাতে পারলো না। বিপক্ষ লোকটি ইচ্ছামত মার দিয়ে যখন চলে গেল তখন সে হাত ছেড়ে দিল। বন্ধু জিজ্ঞেস করলো, “কি বন্ধু, তুমি আমার বিপদের সময় হাত ধরে রাখলে কেন?” বন্ধু জবাব দিল, “কেন তুমি শেখ সা’দীর এ কবিতাটি পড়নি?”

“সেই হলো প্রকৃত বন্ধু যে বিপদগ্রস্ত বন্ধুর হাত ধরে।”

ভাগ্য ভাল যে ফার্সি ‘দাসত্ব’ শব্দের অর্থ ‘হাত’ ধরেছে, দাস্ত (পায়খানা) ধরে নিয়ে আসিনি।

সুতরাং যারা কোরআন পাকের বাংলা তরজমা পড়ে নিজের জ্ঞান অনুযায়ী আমল করতে চায় তারা এ মূর্খটির চেয়ে কোন অংশে কম নয়।

উৎসঃ মুসলমানের হাসি বই থেকে। 

০২. এক বুড়ির কান্ড!

আরেকটি উদাহরণ হলো সে বৃদ্ধার ন্যায় যার বাড়িতে বাদশাহর পোষা বাজ পাখি উড়ে পড়েছিল। বৃদ্ধা পাখীটি ধরে আফসোস করে বলতে লাগলো, আহা! বাদশাহর বিলাসিতায় তোর এ দুর্দশা হয়েছে। এতদিন খাচায় আটকিয়ে রেখেছিল, নখগুলোও কেটে দেয়নি। কত বড় নখ হয়েছে। এ বলে বুড়ি সে পাখীর সব কয়টি নখ একেবারে গোড়া থেকে কেটে দিল।

বাজ পাখি।
ছবি : বাজ পাখি। Photo by manfredrichter from pixabay.

এরপর বাজ পাখির বাকা ঠোঁটটি দেখে বলে উঠলো, “আহা খাচার মধ্যে অযত্নে থাকতে থাকতে ঠোঁটটি কেমন বাকা হয়ে গেছে। তোর ঠোঁটটি সোজা করে দেই।’ এ বলে ঠোঁটের বাকা অংশ ছুরি দিয়ে চেঁছে ঠোঁটটি সম্পূর্ণ সোজা করে দিল।

ফলাফল দাঁড়ালো যে, বাজ পাখিটি আর কোন দিন পায়ের নখের সাহায্যে ছো মেরে শিকার ধরতে পারবে না এবং আর কোন দিন ঠোঁট দিয়ে ছিঁড়ে শিকারের মাংস খেতে পারবে না।

এ অবুঝ বৃদ্ধাটি বাজের উপকার করতে গিয়ে জীবনের মত তাকে পঙ্গু করে দিল। সেরূপ অনেক কোরআন পাকের বাংলা তরজমা পাঠ করে এ অবুঝ বৃদ্ধার মত মূল বস্তুকে পরিবর্তন করে ভুল অর্থ গ্রহন করে থাকে। (আল-এফাযাতুল ইয়াউমিল্যাহ, খন্ড-৪, পৃষ্ঠা-১০২-১০৩)

০৩. মন্ত্রী ও ছাত্রের বুদ্ধি।

পাশ্চাত্যের অনুসারী অনেক বুদ্ধিজীবি মোল্লাদেরকে তুচ্ছ জ্ঞানসম্পন্ন মনে করে। পূর্বের যুগেও তাই করা হতো। এক বাদশাহর ঘটনা এখানে উল্লেখ করছি। বাদশাহ বলতেন, “আলেমদের জ্ঞানের গভীরতার কোন তুলনা হয় না।” কিন্তু তার মন্ত্রী এ ব্যাপারে মতভেদ প্রকাশ করতেন।

একদিন বাদশাহ পুকুরে পাড়ে সান্ধ্য ভ্রমণে বের হলেন। তখন অযত্নে প্রতিপালিত মলিন বেশে বগলে কেতাব নিয়ে মাদ্রাসার একজন ছাত্র সেখান  দিয়ে যাচ্ছিল। বাদশাহ তাকে কাছে ডাকলেন এবং মন্ত্রীকে প্রশ্ন করলেন, “মন্ত্রী বলুন তো এ পুকুরে কত গ্লাস পানি আছে?’

মন্ত্রী বললেন, “প্রথমে এ পুকুরের পাশে অন্য একটি নতুন পুকুর খনন করতে হবে। তারপর গ্লাস ভরে ভরে পানি এনে সে পুকুরে রাখতে হবে। পানি নিঃশেষ হলে বুঝা যাবে এ পুকুরে কত গ্লাস পানি আছে।”

বাদশাহ তখন মাদ্রাসার ছাত্রটিকে জিজ্ঞেস করলেন, “মৌলভী সাহেব, আপনি বলতে পারবেন এ পুকুরে কত গ্লাস পানি আছে?” ছাত্রটি জবাব দিল, “এ প্রশ্নটি আসলে ক্রটি পূর্ণ। কারণ এখানে বলা হয়নি গ্লাসটি কত বড় । যদি গ্লাসটি পুকুরের সমান হয় তাহলে এখানে নিঃসন্দেহে এ পুকুরে এক গ্লাস পানি আছে। আর যদি গ্লাসটি পুকুরের অর্ধেক হয় তবে দুই গ্লাস পানি আছে। এভাবে পুকুর এবং গ্লাসে আনুপাতিক মাপ অনুযায়ী হিসাব করে নিন পুকুরে কত গ্লাস পানি আছে।”

বাদশাহ মন্ত্রীকে বললেন, “দেখুন জ্ঞান কাকে বলে। প্রশ্ন অনুযায়ী আপনার জবাবটি যথেষ্ট হয়নি। অথচ সাধারণ একজন মাদ্রাসার ছাত্র একটি সংক্ষিপ্ত জবাবে সমস্ত জটিলতা নিরসন করে দিয়েছেন। সুতরাং প্রকৃত জ্ঞানী কে একবার ভেবে দেখুন।”

বর্তমান যুগের বৃদ্ধিজীবিগণের ভুল এখানেই যে, অভিঞ্জতার (Experience) আলোকে তারা যেখানে পৌঁছাতে পারেন তাকে জ্ঞানের ফল কনে করেন। অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান কে তারা একই বস্তু মনে করেন অথচ এ দুইটি জিনিস সম্পূর্ণ পৃথক। অভিজ্ঞতার এক জিনিস আর জ্ঞান অন্য জিনিস। মোল্লাগণ যেহেতু অভিজ্ঞতার পালায় পড়েননি তাই তাদের অভিজ্ঞতা থাকে না। তবে তারা পরিপূর্ণ জ্ঞানের অধিকারী হয়ে থাকেন। তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ হলো জীবনের পরিণাম সম্পর্কে সচেতন, তারাই জ্ঞাণী লোক। (আল-এফাযাতুল এয়ামিউয়্যাহ; খন্ড-৫, পৃষ্ঠা-১০০)

০৪. ইঞ্জিল নয় কদু!

এক খ্রিস্টান বক্তা দেওবন্দে আগমন করতো। আমি তখন সে মাদ্রাসায় লেখাপড়া করতাম। এক দিন সে এসে মাদ্রাসার কাছে বক্তৃতা করলো। মহল্লার লোক এবং মাদ্রাসার ছাত্র মিলেত হয়ে বেশ বড় একটা সমাবেশের মত হলো।

খ্রিস্টান বক্তা দাঁড়িয়ে হাতে সুন্দর হরফে “ইঞ্জিল” খচিত একটি বই নিয়ে সমবেত লোকদের লক্ষ্য করে জিজ্ঞেস করলো, আপনারা বলুন, আমার হাতে এটা কি?”

তার উদ্দেশ্য ছিল এ যে, মুসলমানেরা যদি জবাব দেয় ‘এটা ইঞ্জিল’ তাহলে তাদের এ স্বীকারোক্তি দিয়ে প্রমাণিত হবে যে এটা ইঞ্জিল। আর ইঞ্জিলকে যেহেতু মুসলমানেরা আল্লাহর কিতাব বলে বিশ্বাস করে সুতরাং এ বইয়ের হুকুমকেও তারা মান্য করবে।

কিন্তু মুসলমানদের এরূপ জবাবের দ্বারা বিতর্কের সৃষ্টি হবে।

মুসলমানেরা বলবে, ‘এটা ইঞ্জিল হলেও এর হুকুম রহিত (মনসুখ) হয়ে গেছে। আর সে বলবে, ‘না, রহিত হয়নি।’ সুতরাং তার প্রশ্ন ‘এটা কি?’ এর জবাবে ‘ইঞ্জিল বললে একটা স্থায়ী বিতর্কের সৃষ্টি হবে; যা কখনও শেষ হবে না। সুতরাং কেউ কোন জবাব দেয়নি।

এমন সময় মাদ্রাসা কমিটির মেম্বার হাকিম মুশতাক আহমদ সেখানে আগমন করলেন। তিনি ছাত্রদের কে বললেন, “সরে যাও, এর জবাব দেওয়া তোমাদের কাজ নয়। আমি জবাব দিচ্ছি। তিনি বললেন, “তোমার প্রশ্নের জবাব আমি দিব। প্রশ্ন-যা করতে চাও কর।”

খ্রিস্টান বক্তা খুব উৎসাহের সাথে সে বইটি হাতে নিয়ে বললো, “বলুন, আমার হাতে এটা কি?”

তিনি বললেন, “এটা কদু।”

খ্রিস্টান বক্তা অসন্তুষ্ট হয়ে বললো, “তুমি বড় বেয়াদব দেখছি।

তিনি বললেন, “আমার যা বুঝতে পেরেছি তাই বলেছি। এতে আবার বেয়াদবির কি হলো? অবশ্য যদি ব্যাখ্যা চাও তবে আমরা ব্যাখ্যা দিতে পারি। পরবর্তীত করার পর এটা আর আল্লাহর কেতাব নয় যে বেয়াদবি হবে। কদু যে রূপ আল্লাহর কেতাব নয় এটাও সেরূপ আল্লাহর কিতাব (ইঞ্জিল) নয়। কদু আর এটার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সুতরাং এটাও একটা কদু। কদুকে কদু বললে কোন বেয়াদবী হয় না। (আল-এফাযাতুল ইয়াউমিয়্যাহ, খন্ড-৫, পৃষ্ঠা-১১৮)

০৫. মানুষকে সন্তুষ্ট করতে ঘোড়ার মালিকের বিপদ।

আল্লাহকে সন্তুষ্টি লাভের জন্যে যা কিছু করার করতে হবে। লোকে কি বলবে সেদিকে তাকানো যাবে না। কারণ এক সঙ্গে সবাইকে সন্তুষ্ট করা যাবে না। তাহলে ঘোড়ার মালিকের অবস্থা হবে। 

ছবিঃ ঘোড়া। photo by kudybadorota

এক ব্যক্তি ঘোড়ায় চড়ে সফরে বের হলো। সঙ্গে তার স্ত্রী এবং ছেলে হেঁটে যাচ্ছিল।  একটি গ্রাম অতিক্রম করার সময় লোকেরা বললো, ‘দেহ, দেখ। কত বড় নিষ্ঠুর লোক! স্ত্রী-সন্তানকে হাঁটিয়ে নিচ্ছে আর নিজে ঘোড়ার সওয়ার হয়ে যাচ্ছে।

লোকটি ভাবলো লোকেরা ঠিকই তো বলছে। এ ভেবে নীচে নেমে আসলো এবং ছেলেকে ঘোড়ার চড়িয়ে নিজে হেঁটে যেতে লাগলো। রাস্তায় ছেলেকে ঘোড়ার পিঠে দেখে গ্রামের লোকেরা বললো, “দেখ দেখ, ছেলেটা কত বড় বেয়াদব। নিজে ঘোড়ায় চড়ে যাচ্ছে আর বৃদ্ধ বাপকে হাঁটিয়ে নিচ্ছে।”

লোকটি ভাবলো, এরা ঠিকই বলছে। সুতরাং এবার স্ত্রীকে ঘোড়ায় বসিয়ে নিজেরা হেঁটে যেতে লাগলো। অতঃপর একটি গ্রাম অতিক্রম করার সময় লোকেরা বলতে লাগলো, একেই বলে বউয়ের মুরিদ। মনে হচ্ছে স্ত্রীর কাছে একেবারে দাস-খত লিখে দিয়েছে।

লোকটি ভাবলো আরাও ঠিক বলছে। একথা চিন্তা করে স্ত্রী- সন্তান সবাইকে নিয়ে আবার ঘোড়ার পিঠে চড়ে বসলো।” অতঃপর এক গ্রাম অতিক্রম করার সময় লোকেরা দেখে বললো, “আরো! ঘোড়াটাকে কেন তিলে তিলে মারছ? একটা গুলি করে দিলেই তো হয়ে যায়। একটা ঘোড়ায় একসাথে কতজন মানুষ সওয়ার হয়েছে।”

লোকটি দেখলো সবই ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি সবাই নেমে পড়লো এবং ঘোড়ার লাগাম ধরে হেঁটে চললো। পথে লোকেরা তাদেরকে দেখে বলতে লাগলো, “দেখ, না-শোকের বান্দা একেই বলে। আল্লাহর নেয়ামতের কোন কদর নেই। ঘরে নিজের যান-বাহন রয়েছে, অথচ সবাই হেঁটে যাচ্ছে। আরে পালাক্রমে এক একজন করে চড়লেও তো পারে। সওয়ার  হওয়ার যদি ইচ্ছাই না থাকতো তবে সঙ্গে নিয়ে আসার কি প্রয়োজন ছিল? ঘরে বেঁধে রেখে আসলেই তো ভালো হতো।”

লোকটি দেখলো ঘোড়ায় চড়ার কোন পদ্ধতিই আর বাদ রাখা হয়নি। সুতরাং ঘোড়ায় না চড়ে (এবং ঘোড়াকে হাঁটিয়ে না নিয়ে) অনস্য কোন পদ্ধতি আছে কিনা তাই করতে হবে।

হঠাৎ লোকটির মাথায় একটি বুদ্ধি খেললো। লোকটি একটি লম্বা বাঁশ নিয়ে আসলো। বাশে ঘোড়ার চার পা বেঁধে ঘোড়াকে ঝুলিয়ে বাঁশের দুই দিক থেকে দুই বাপ-বেটা ঘাড়ে করে চলতে লাগলো। ঘোড়ার মাথা নিচের দিকে থাকলো আর পা উপরের দিকে। একটি নদী পার হওয়ার জন্যে তারা যখন অউল পার হচ্ছিল এ অদ্ভুত দৃশ্য দেখে পাড়ার ছেলেরা সব চিৎকার দিয়ে উঠলো। এ চিৎকার শুনে ঘোড়ার ভয়ে এক ঝাকুনি মেরে ছিটকে নদীতে পড়ে গেল। বাঁশের বাড়ি খেয়ে দুই বাপ-বেটা উপুড় হয়ে পড়ে কারো মাথা ফাটলো কারো থুতলী ফেটে রক্ত ঝরতে লাগলো। লোকটি দেখলো মানুষকে সন্তুষ্ট করার বিপদ কত মারাত্মক। এত চেষ্টা করেও মানুষকে সন্তুষ্ট করা গেল না। মানুষকে খুশী করতে গিয়ে ঘোড়াও হারালাম মাথাও ফাটালাম।

সুতরাং মানুষের মন্তব্যে কর্ণপাত করবে না। শরীয়ত মতে যা সঠিক হয় তাই করতে থাক। মানুষকে সন্তুষ্ট এবং আল্লাহকেও সন্তুষ্ট এ দুটা এক সঙ্গে সম্ভব নয়। বরং মানুষের উক্তির প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে একমাত্র আল্লাহ পাকের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিলেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব। ( আল-এফাযাতুল ইয়াউমিয়্যাহ, খন্ড-৪, পৃষ্ঠা-৩৪৪)

০৬. মনছুরা বিবির অযু করা।

বর্তমানে ইসলামকে খুব সহজ একটা বিষয় মনে করা হয়। নিজের ইচ্ছামত যেভাবে খুশী সেভাবে ইসলামকে মানা যায়। আর যত দোষ আলেমদেরকে দেওয়া হয় যে, তারা ইসলামের খুটি জটিল করে ফেলেছে। এ ধরণের লোকদের ইসলাম হলো মনছুরা বিবির ওযুর ন্যায়।

যৌবনের প্রারম্ভে মনছুরা বিবির একবার অযু করার সৌভাগ্য হয়েছিল। এরপর সে উশৃঙ্খল জীবন স্থাপন করতে থাকে। একদিন এক ওয়াজ মাহফিলের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় এক বক্তাকে ওয়াজ করতে দেখলো। বক্তা তার নিজস্ব ভঙ্গিতে কি কি কারণে ওযু ভেঙ্গে যায় তার বর্ণনা করছিলেন। মনছুরা বিবিও একবার ওযু করেছিল তার মনে পড়ে গেল। কিন্তু এত সহজেই যে ওযু ভেঙ্গে যায় তা কখনও শুনেনি। সুতরাং বক্তার ওয়াজ শুনে তার গায়ে জ্বালা ধরে গেল, সে তখন মঞ্চে উঠে শ্রোতাদেরকে লক্ষ্যে করে বললো, “ভাইসব, এ মাওলানা সাহেব যা কিছু বলছেন সব মিথ্যা। এত সহজে কিছুতেই ওযু ভাঙ্গে না। তার প্রমাণ আমি নিজেই। আমি আজ ত্রিশ বছর যাবত যিনা করছি কিন্তু আজ পর্যন্ত আমার ওযু ভাঙ্গেনি।

ঐসব লোকদের ইসলামও ঠিক মনছুরা বিবির ওযুর ন্যায়। তারা যত নাফরমানী করবে তাদের ইসলামও ঠিকই থাকবে, তারা তবু মুসলমান হিসেবে দাবি করতে থাকবে। (আল-এফাযাতুল য়্যাওমিয়্যাহ)

০৭. বেগম সাহেবার জুতা সোজা করার বরকত।

সরলতা মানুষকে বেহেশতের পথে নিয়ে যায়। এরূপ সরলতা বিনয়ের এক ঘটনা মনে পড়েছে।

মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম সাহেব ভূপালে থাকতেন। একবার সে এলাকার নওয়াবের বেগম সাহেবা দীনা প্রয়োজনে তার সাথে দেখে করতে আসলেন। প্রয়োজন শেষে যখন তিনি বিদায় হবেন তখন মাওলানা সাহেব বেগম সাহেবাবার জুতা সোজা করে তার সামনে এগিয়ে দিলেন।

বেগম সাহেবা খুব লজ্জিত হলেন এবং বললেন, “আপনি দেখছি আমাকে গুনাহগার করলেন। মাওলানা সাহেব বললেন, “আপনাকে আমি জ্ঞানী ব্যক্তি ভেবেই এভাবে জুতাগুলো সোজা করে দিয়েছি।

বেগম সাহেবা বললেন, ‘কি ভাবে আমি জ্ঞানী হলাম?’

মাওলানা সাহেব বললেন, “আমি আপনার শহরে এতকাল যাবত (হিন্দু কু-সংস্কার অনুযায়ী নাবালিকা অবস্থায়) বিধবা বিবাহের জন্যে উৎসাহ দিয়ে ওয়াজ করছি; কিন্তু আজ পর্যন্ত একটি বিধবারও বিয়ে হয়নি এ হলো আমার কেরামতি। এখন আপনি একবার নিজের কেরামতি পরীক্ষা করে দেখুন। শুধুমাত্র একটি সাধারণ নির্দেশ ঘোষণা করে দিন।

তারপর দেখুন একজন বিধবাও বিবাহের বাকি থাকবে না। তখন আমার কেরামতি আপনার কেরামতির সাথে তুলনা করবেন। বেগম সাহেবা ছিলেন বুদ্ধিমতী এবং দীনদার। পরদিন সকালে তিনি দরবারে বসেই নির্দেশ দিলেন যে এ সময় –সীমার মধ্যে কোন সন্তানহীনা বিধবা বিবাহ না করে থাকতে পারবে না; অন্যথায় কঠোর শাস্তি হবে। তারপর দেখে গেল মাত্র দুই এক সপ্তাহের মধ্যেই সকল (সন্তানহীনা) বিধবার বিবাহ হয়ে গেল।

মাওলানা সাহেবের কৌশল কিভাবে কার্যকর হলো দেখুন। তার সরলতা হলো তিনি জুতা সোজা করে দিতে দ্বিধা করলেন না। ফলে বেগম সাহেবার দ্বারা এত বড় একটা দীনী খেদমত করালেন যা অন্য কোন ভাবে সম্ভব ছল না। (আল-এফাযাতুল য়্যাওমিয়্যাহ, খন্ড-৫, পৃষ্ঠা-২৫২)

০৮. জুনায়েদ বাগদাদীর কেরামত।

হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রহঃ)-এর খেদমতে এক ব্যক্তি এসে দশ বছর অবস্থান করলো। দশ বছর পর সে বললো, “হুজুর! এতকাল থেকে আপনার খেদমতে আছি কিন্তু আপনার কোন কেরামত দেখলাম না।”

লোকটি ছিল নির্বোধ। তা না হলে এতকাল পর্যন্ত তার খেদমতে থাকা স্বত্ত্বেও তার কামাআলাত কিছু চোখে পড়লো না কেন? তার কামালাতের সামনে কেরামতের কী-ই  বা মূল্য যে কেরামত দেখতে হবে?

হযরত জুনায়েদ (রহঃ) আবেগে ভরে উঠলেন। তিনি বললেন, “হে বৎস! এ দশ বছরে তুমি কি সুন্নতের বিরুদ্ধে আমার কোন কাজ করতে দেখেছো?”

লোকটি বললো, “হুজুর! সুন্নতের খেলাফকন কাজ তো আজ পর্যন্ত আমি আপনাকে করতে দেখেনি!”

জুনায়েদ বাগদাদী (রহঃ) বললেন, “তবে এর চেয়ে বড় কেরামত আর কী দেখতে চাও? দশ বছর সুন্নত বিরোধী কোন কাজ না হওয়াতেই তো বড় কেরামত। একথা শুনে লোকটির চোখ খুলে গেল। সে আর কখনও জুনায়েদ বাগদাদীর কেরামত দেখতে চায়নি। (ইলম ও অমর, পৃষ্ঠা-২৫০)

০৯. আল্লাহ ইচ্ছাই পূর্ণ হোক।

মহান আল্লাহর ইচ্ছার সাথে নিজের ইচ্ছাকে মিলিয়ে দেওয়ার মাঝেই আনন্দ। এ আনন্দ আল্লাহ ওয়ালাগণ পরিপূর্ণ ভাবে উপভোগ করে থাকেন। এরূপ এক বুজুর্গ ছিলেন শ দৌলাহ। তার গ্রামের লোকেরা একদিন তার খেদমত হাজির হয়ে বললো, “হুজুর! নদী ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে গ্রামের পানি আমাদের দিকে ছুটে আসছে। গ্রাম রক্ষা করা যাবে না। আপনি আল্লাহর দরবারে দোয়া করুণ যেন তিনি নদীর প্রবাহ অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেন।”

বুজুর্গ ব্যক্তি বললেন, “কাল সকালে কোদাল আর ঝুড়ি নিয়ে সবাই এখানে আসবে, এ ব্যবস্থা করবো।” হুজুরের কথামত পরদিন সকালে সবাই এসে হাজির হলো। হুজুর সবাইকে নদীর কাছে নিয়ে গেলেন। অতঃপর বললেন, “গ্রামের দিকে পানি যাওয়ার রাস্তা খনন করতে শুরু কর।”

লোকেরা বললো, “হুজুর! এভাবে তো নদী দুই দুই দিনের রাস্তা এক দিনেই অতিক্রম করে সম্পূর্ণ গ্রাম গ্রাস করবে।” তিনি বললেন, “নদী গ্রামের দিকেই যেতে চাচ্ছে। আল্লাহরও তাই ইচ্ছা। দৌলাহরও ইচ্ছা তাই। আল্লাহ যে দিকে আমিও সেদিকে। তোমরা খনন করতে শুরু কর।”

সে যুগের লোকেরা আল্লাহ ওয়ালাদের খুব অনুসরণ করতো। সুতরাং তারা বিনা দ্বিধায় গ্রামের দিকে নদীর রাস্তা খনন করতে শুরু করলো। খনন করে মাটি যেখানে ফেলা হলো আল্লাহর কুদরতে তা এমনভাবে স্থাপিত হলো যে অল্প সময়ের মধ্যে পানির গতি পরিবর্তন হয়ে গেল। নদীর প্রবাহ অন্যদিকে ঘুরে গেল। গ্রাম রক্ষা পেল। আল্লাহর ইচ্ছার সাথে নিজের ইচ্ছাকে এরূপ শর্তহীন ভাবে মিলিয়ে দিলে আল্লাহর সাহায্য নেমে আসে। এ অপূর্ব ঘটনা গ্রামবাসী স্বচক্ষে দেখলো। (এরশাদাতে হাকীমুল উম্মত, খন্ড-২, পৃষ্ঠা- ৫৭)

১০. অপব্যয়ের অভিনব সংজ্ঞা।

এক ব্যক্তির ব্যবসা-বানিজ্য ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় খুব অভাবে পড়েছিল। কষ্ট সহ্য করতে না পেরে এক বুজুর্গের কাছে গিয়ে সাহায্য চাইলো। বুজুর্গ তার অভাবের কথা শুনে খুব দুঃখিত হলেন এবং বললেন, “সাহায্য করার মত আমার কাছে কিছু নেই। তবে আমার এক সম্পদশালী বন্ধু আছেন তার কাছে গিয়ে আমার কথা বললে আশা করি তিনি সাহায্য করবেন।”

লোকটি সে বিত্তবান লোকের কাছে গমন করলো। যখন তার বাড়ির দরজায় পৌঁছলো তখন সন্ধ্যা হয়েছে। ভিতর থেকে একটি লোক তার স্ত্রীর সাথে রাগারাগি করছে, “তোমাকে কতদিন বলেছি বাতির সলতা মোটা করবে না। এ ছোট ঘরটিতে যতটুকু আলোর প্রয়োজন তার জন্য একটি চিকন সলতাই যথেষ্ট। মোটা সলতা দিয়ে বেশী তেল পোড়ানোর প্রয়োজন হয় না।”

আগতক লোকটি এ কথা শুনতে পেলো। ভাবলো-ভালো লোকের কাছে আমাকে পাঠিয়েছে। এত কৃপণের কাছে সাহায্য চাওয়ার আগেই এখান থেকে পালিয়ে যাওয়া উচিৎ। একথা চিন্তা করে সে ফিরে যেতে উদ্যত হলো। পরে আবার ভাবলো, সাহায্য না চেয়ে বুজুর্গের আদেশ পালনার্থে দেখা করে যাই। অতপর সে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো।

বাড়িওয়ালা বাহিরে আসলে সে বললো, “স্ত্রী-পুত্র নিয়ে খুব অভাবে ছিলাম। আপনার বন্ধুর কাছে গিয়ে ছিলাম সাহায্যের জন্য। কিন্তু তার কাছে সাহায্য করার মত কিছু না থাকায় আপনার কাছে পাঠিয়েছেন।” বাড়িওয়ালা বললো, “বেশ! আজ রাতেই মিশর থেকে আমার দুইশত উট বোঝাই মাল আসবে। মালসহ সমস্ত উট আপনি নিয়ে যান।”

লোকটি অবাক হয়ে বাড়িওয়ালার দিকে তাকিয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল। বাড়িওয়ালা বললেন, “রাত্রী গভীর হওয়ার আগেই কাফেলার কাছে পৌঁছে যান। ঐ উপত্যকায় গিয়ে দাড়ান। ওদের আসার সময় হয়ে গেছে।”

লোকটি বললো, “একটু আগে বাড়ির ভিতরে বাতির সলতা মোটা করার অপরাধে এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তিরস্কার করছিল। আপনি কি সে ব্যক্তি নন?”

বাড়িওয়ালা বললো, “হ্যাঁ, সে আমিই। সেখানে ছোট ঘরটিতে যতটুক আলোর প্রয়োজন ছিল তার জন্য চিকন সলতাই যথেষ্ট। মোটা সলতা ব্যবহার করে বেশী তেল পোড়ানোর প্রয়োজন ছিল না। বিনা প্রয়োজনে খরচ করাই অপব্যয়, তা যতো কমই হোক।

আপনার যেহেতু ব্যবসা ধ্বংস হয়ে অভাব গ্রস্থ হয়ে পড়েছেন তাই ব্যবসা শুরু করার জন্যে মাল বোঝাই দুই শত উট আপনার খুবই প্রয়োজন। বাঁচার প্রয়োজনে খরচ করার অপব্যয় নয়। তা যত বেশিই হোক।

লোকটি নতুন করে অপব্যয়ের অর্থ বুঝতে পারলো এবং উপত্যকার পথে যাত্রা করলো। এ ঘটনা একজন সাধারণ ব্যক্তি হযরত মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুলী (রহঃ)-এর কাছ থেকে শুনে এসে বর্ণনা করেছে। প্রথম বুজুর্গ হযরত রসূলুল্লাহ (সাঃ) এবং দ্বিতীয় (বাড়িওয়ালা বুজুর্গ) হযরত উসমান (রাঃ) কিনা তা ঠিক করে বলতে পারেনি। (আল-এফাযাতুল য়্যাউমিয়্যাহ)

প্রিয় গল্প পড়ুয়া পাঠিক-পাঠিকা, আশা করি, ১০ টি ইসলামিক হাসির গল্প গুলো পড়ে আনন্দিত হয়েছেন এবং আপনার ভালো লেগেছে। আমরা দশটি ইসলামিক হাসির গল্প – মুচকি হাসির গল্প ২ প্রকাশ করেছি। পড়ে নিতে পারেন।

এটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। 

Leave a Comment