সুন্নত অবমাননার নিষ্ঠুর পরিণতি এটি ইসলামিক শিক্ষণীয় গল্প। সম্মানিত লেখক এক ব্যক্তির সুন্নত অবমাননার নিষ্ঠুর পরিণতি ভোগ করার গল্প টি পাঠকদের সামনে তুলে ধরেছেন যাতে রয়েছে শিক্ষণীয় বার্তা! আসুন গল্পটি পড়া শুরু করি..
গল্প : সুন্নত অবমাননার নিষ্ঠুর পরিণতি!
ইরাকের প্রসিদ্ধ নগরী বসরা। এরই সীমান্তে বাস করত বদমেজাজী স্বভাবের এক ব্যক্তি। তার মূল নাম যাই হােক না কেন, সকলের নিকট সে আবু সালামা নামেই পরিচিত। এ নামেই সে সর্বত্র প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।
আবু সালামা ছিল খুবই খারাপ প্রকৃতির লােক। সে নামাজ-রােজার ধারে কাছেও যেত না। উপরন্তু মাঝে মধ্যে সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নূরানী সুন্নত নিয়েও উপহাস করত, ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত। সে মনে করত, বর্তমান এই প্রগতির যুগে সেই প্রাচীন যুগের সুন্নত আর চলবে না, চলতে পারে না। এজন্য সুন্নতের কথা শুনলেই তার গা জ্বালা শুরু হয়ে যেত। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে সুন্নতের বিরুদ্ধে মুখে যা আসতাে তাই অবলীলাক্রমে বলে ফেলতাে। একটি বারের জন্যেও সে চিন্তা করতাে
যে, সুন্নত নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করলে, সুন্নতের প্রতি তাচ্ছিল্য ভাব প্রদর্শন করলে শুধু গুনাহ যে হয় তা-ই নয়, ঈমানও চলে যায়। এমনকি কখনাে কখনাে মারাত্মক পরিণতির সম্মুখীন হতে হয়।
একদিনের ঘটনা।
আবু সালামা কোনাে এক মজলিসে বসে আছে। এমন সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত- মিসওয়াকের ফজিলত সম্পর্কে আলােচনা শুরু হলে সে বলে উঠল, খােদার কসম, আমি আমার পিছনের রাস্তা ব্যতীত অন্য কোথাও মিসওয়াক ব্যবহার করব না। -(নাউযুবিল্লাহ) এ কথা বলে সত্যি সত্যি সে একটি মিসওয়াক নিয়ে তার গুহ্যদ্বারে ঢুকিয়ে দেয় এবং পুনরায় বের করে আনে।
এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করে সকলেই হতবিহবল হয়ে পড়ে। কেউ কেউ সাহস করে তাকে ধিক্কার দিয়ে বলতে থাকে, আবু সালামা! একি করলে তুমি? নবীর সুন্নতের সাথে এমন বেয়াদবী! জানি, তুমি সুন্নতকে ভালবাস না, সুন্নতের কথা তুমি শুনতেই পার না। তাই বলে প্রকাশ্যে তুমি সুন্নতের এতবড় অবমাননা করতে পারবে, তা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি। এক্ষুণি তুমি তওবা কর। খােদার দরবারে কেঁদে কেটে মাফ চাও। নইলে, সেদিন হয়ত বেশি দূরে নয় যেদিন তােমাকে এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হবে। কঠিন ও মর্মন্তুদ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
আবু সালামা তাদের কথা মােটেও আমলে নিল না। উপরন্তু সে মুখ ভেংচিয়ে উদ্ধত ভাব নিয়ে বলল আরে, রাখ! তােমাদের এসব কথা। আমি এগুলােকে মােটেও ভয় পাই না। সামান্যতম পরওয়াও করি না। তােমরা দেখবে আমার কিছুই হবে না।
সুন্নতের সাথে এরূপ অশালীন আচরণ ও তার উদ্ধত্বপূর্ণ কথায় মজলিসের সকলেই তার উপর ক্ষুদ্ধ হল। তারা বিভিন্নভাবে তাকে বুঝাতে চেষ্টা করল। কিন্তু সকল চেষ্টাই ব্যর্থ হলাে। অবশেষে ভীষণ মনকষ্ট নিয়ে প্রত্যেকেই যার যার ঘরে ফিরল।
ঘটনার নয় মাস পরের কথা। একদিন আবু সালামার পেটে প্রচন্ড ব্যথা শুরু হলাে। ধীরে ধীরে পেট ফুলতে শুরু করে। দেখলে মনে হবে সে যেন অন্তসত্ত্বা, সন্তান সম্ভাবা। তার আর্ত চিৎকারে আকাশ বাতাস বিদীর্ণ হওয়ার উপক্রম। চারদিকে লােকজন ভীড় জমিয়েছে। ডাক্তার কবিরাজ বিরামহীন ভাবে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোনাে কাজ হচ্ছে। এমনকি তারা ব্যথার কোনাে কারণও উদঘাটন করতে পারছে না। ব্যথার প্রচন্ডতায় বারবার সে বেহুশ হয়ে পড়ছে।
নয় মাস পূর্বের ঘটনা যারা জানত, তাদের দৃঢ় বিশ্বাস, এই প্রচন্ড ব্যথা ঐ মারাত্মক পাপেরই নির্মম পরিণতি। ঐ দিন সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নতের সাথে যে বেয়াদবী করেছে এর ফলেই তার এই করুণ অবস্থা। কারণ যার কোনােদিন পেট ব্যথা হয়নি, তার কেন হঠাৎ করে এত বেশি পেট ব্যথা হবে যে, ডাক্তাররা ব্যথার কারণ পর্যন্ত উদঘাটন করতে সক্ষম হবে না?
ব্যথার দুঃসহ যন্ত্রণায় আবু সালামা বারবার কঁকিয়ে উঠছে। তার বিকট চিৎকার ধ্বনি ষাড়ের শব্দের ন্যায় শােনা যাচ্ছে। তার মর্মভেদী আর্তনাদ মর্তের মাটি ছাড়িয়া আল্লাহর আরশ বুঝি কাপিয়ে তুলল। কিন্তু হায়! সময়ের তালে তালে ব্যথার মাত্রা আরও বহুগুণে বৃদ্ধি পেতে লাগল। অভিজ্ঞ ডাক্তারদের কোনাে ঔষধই কাজ করছে না। বরং প্রতিটি ঔষধই যেন তার পেটে গিয়ে বিপরীত প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করছে এবং ব্যথার মাত্রাকে বাড়িয়ে তুলছে। এভাবে কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ার পর সে ইঁদুরের ন্যায় একটি বাচ্চা প্রসব করে।
বাচ্চাটির চারটি পা। মাথাটা ঠিক মাছের মতাে। দাঁতগুলাে মুখের বাইরে চলে এসেছে। পিছনে ছিল একটা লেজ। বিঘত পরিমাণ লম্বা। এর পিছনের অংশটুকু ছিল খরগােশের পশ্চাৎদেশ সদৃশ। অদ্ভুত ও ভয়ংকর আকৃতির এ বাচ্চাটি, বাইরে আসার সাথে সাথে বিকট স্বরে পরপর তিনটি আওয়াজ দেয়। অতঃপর আবু সালামার এক মেয়ে বাচ্চাটির মাথায় আঘাত করলে সেটি মারা যায়।।
বাচ্চা প্রসব হওয়ার পর দুদিন পর্যন্ত আবু সালামা বেঁচে ছিল। তৃতীয় দিনে সে মৃত্যুবরণ করে। মৃত্যুর আগের দুদিন, বারবার সে বলত, এই বাচ্চাটি আমার নাড়িভূড়ি কেটে টুকরাে টুকরাে করে ফেলেছে। আমি আর বেশি সময় বাঁচবাে না।
উক্ত ঘটনাটি সেখানকার উলামায়ে কেরাম ও জনসাধারণ স্বচক্ষে দেখেছেন। আর বাচ্চাটিকে কেউ দেখেছেন জীবিত থাকা অবস্থায় আর কেউ দেখেছেন মৃত্যুর পর।
আল্লামা ইবনে কাছীর (র.) ইবনে খালকান (র.) এর বরাত দিয়ে তার বিশ্ব বিখ্যাত গ্রন্থ আল বিদায়া ওয়াননিহায়া‘ নামক গ্রন্থে এ ঘটনাটি বর্ণনা করেন।
মুহতারাম পাঠকবৃন্দ! এ কথা দিবালােকের ন্যায় পরিস্কার যে, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিটি সুন্নত উম্মতের জন্য হেদায়েত। তার সুন্নতকে বাদ দিয়ে কারাে পক্ষে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছা সম্ভব নয়। আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে বলেন, “আপনি বলে দিন, যদি তােমরা আল্লাহকে ভালবাসতে চাও, তাহলে আমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুকরণ-অনুসরণ কর। এতে আল্লাহ তােমাদের ভালবাসবেন এবং তােমাদের যাবতীয় পাপ মার্জনা করে দিবেন।”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে মুহাব্বত করল, সে আমাকে মুহাব্বত করল, আর যে আমাকে মুহাব্বত করল, সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে। এজন্য প্রতিটি মুসলমানের উচিত জীবনের সর্বস্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিটি সুন্নত বাস্তবায়ন করা।
আজকে যারা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত মােতাবেক জীবন যাপন করে না, বরং উল্টো সুন্নতের উপর আমলকারী ব্যক্তিদের নানাভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে বেড়ায়, দাড়ি-টুপি-মিসওয়াক নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে, তারা যেন আলােচ্য ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সময় থাকতে সাবধান হয়ে যায়। কেননা খােদার পাকড়াও যেদিন শুরু হবে, সেদিন কিন্তু পালানাের কোনাে পথ খােলা থাকবে না। সব চেয়ে বড় কথা হলাে, যে নবীর শাফায়াত ছাড়া বেহেশতের আশা করা যায় না, সে নবীর সুন্নত ও নূরানী আদর্শকে পদদলিত করে, অবজ্ঞা করে, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, কিভাবে মুক্তির আশা করা যায়? সুতরাং সময় থাকতে সতর্ক হওয়া বুদ্ধিমানের পরিচয় নয় কি?
সম্মানিত ভাইগণ! আমাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়ত মিসওয়াকের সুন্নতটিকে তেমন একটি গুরুত্ব দেই না। অথচ মিসওয়াকের মধ্যে দুনিয়া ও আখেরাতের এতবেশি কল্যাণ নিহিত আছে যা কল্পনাকেও হার মানায়। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, মিসওয়াক করে যে নামাজ পড়া হয়, সেই নামাজ মিসওয়াক বিহীন নামাজের উপর সত্তরগুণ বেশি মর্যাদা রাখে।-বাইহাকী, মেশকাত।
হযরত আবু উমামা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তােমরা মিসওয়াক কর। কেননা মিসওয়াক মুখের পবিত্রতা আনে এবং এতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। হযরত জিবরাইল (আ.) আমার নিকট যখনই এসেছেন, তখনই আমাকে মিসওয়াকের জন্য উপদেশ দিয়েছেন। এতে আমার ভয় হলাে যে, আমার এবং আমার উম্মতের উপর মিসওয়াক করা ফরজ হয়ে যায় কিনা। যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা করতাম, তবে আমি তাদের উপর মিসওয়াক করা ফরজ করে দিতাম। আমি তাে এত অধিক পরিমাণে মিসওয়াক করে থাকি, যাতে আমার মুখের অগ্রভাগ ছিলে যাওয়ার ভয় হতাে।-ইবনে মাজাহ পৃঃ ২৫।
মিসওয়াকের ১০টি উপকারিতা!
একটি হাদীসে বর্ণিত আছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তােমরা মিসওয়াকের প্রতি বিশেষ যত্নবান হও। কারণ উহাতে দশটি উপকার নিহিত আছে। যথা (১) মুখ পরিস্কার করে (২) আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ (৩) শয়তানকে ক্রোধান্বিত করে (৪) আল্লাহ তাআলা এবং তদীয় ফেরেশতাগণ মেসওয়াককারীকে ভালবাসেন। (৫) দাঁতের মাড়ি শক্ত। হয় (৬) কফ দূর করে (৭) মুখে সুগন্ধি আনয়ন করে (৮) পিত্ত নষ্ট করে (৯) দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে (১০) মুখের দুর্গন্ধ দূর করে।
উলামায়ে কেরাম বলেছেন, মিসওয়াকের ভিতর ৭০টি উপকার নিহিত আছে। তন্মধ্যে একটি এই যে, মৃত্যুকালে কালেমা পড়া নসীব হয়। হযরত আলী (রা.) বলেন, মিসওয়াক করলে স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং কফ দূর হয়।
মিসওয়াক সংক্রান্ত তিনটি স্মরণীয় ঘটনা
এক. একদা হযরত শিবলী (র.) এর অজুর সময় মিসওয়াকের প্রয়ােজন হলাে। তিনি মিসওয়াক তালাশ করলেন। কিন্তু পেলেন না। শেষ পর্যন্ত তিনি এক দিনার দিয়ে একটি মেসওয়াক ক্রয় করে ব্যবহার করলেন। তবুও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত মেসওয়াক ত্যাগ করেননি। উপস্থিত লােকদের কেউ কেউ এক দিনারের পরিবর্তে একটি মিসওয়াক খরিদ করাকে অতিরিক্ত খরচ বলে মন্তব্য করলেন। একথা শুনে শিবলী (র.) বললেন পৃথিবী ও পৃথিবীর মধ্যে যা কিছু আছে, সব কিছুর মূল্য আল্লাহর কাছে মাছির ডানার মূল্যের সমানও নয়। এমতাবস্থায় আল্লাহ পাক যদি হাশরের ময়দানে আমাকে জিজ্ঞেস করেন, শিবলী! আমি তােমাকে যে ধন-সম্পদ দিয়েছিলাম যার মূল্য আমার নিকট একটি মাছির ডানার মূল্যের সমানও নয়, উহা তুমি সুন্নতের উপর আমলের জন্য ব্যয় করলে না কেন? তখন আমি কি জবাব দিব?
ভাই! আমার তাে মনে হয়, যদি বিক্রেতা তােমার নিকট মেসওয়াকের মূল্য, অর্ধ দিনারও চায়, তথাপি তুমি সে মূল্য দিয়ে আদৌ তা খরিদ করবে না, বরং মিসওয়াকের সুন্নত ছেড়ে দিয়ে বসে থাকবে।এতদ্বসত্বেও তুমি নিজেকে আল্লাহর দোস্ত ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আশেক বলে দাবি কর। এটা কি প্রমাণহীন দাবি নয়?
দুই. বর্ণিত আছে, হযরত ইব্রাহীম নাখায়ী (র.) যা কিছু পড়তেন এবং মুখস্থ করতেন সবই ভুলে যেতেন। অনেক চেষ্টা করেও মনে রাখতে পারতেন না। এক রাতে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জেয়ারত করে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি যা পড়ি, তার কিছুই মনে রাখতে পারি না।
তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, হে ইব্রাহীম! কয়েকটি জিনিসের উপর আমল করবে। (তাহলে তােমাদের স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি পাবে) কম খাবে। কম ঘুমাবে। বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করবে। অধিক পরিমাণে নফল নামাজ আদায় করবে। প্রত্যেক নামাজের জন্য অজু করবে এবং প্রত্যেকবার অজুর সময় মিসওয়াক করবে।
হযরত ইব্রাহীম নাখায়ী (র.) বলেন। আমি ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাতানাে আমলগুলাে পালন করতে শুরু করে দেই। ফলে আমার কেবল স্মরণ শক্তিই বৃদ্ধি পায়নি, অল্প দিনের মধ্যে আল্লাহ তা’আলা আমাকে সকলের মুরুব্বী বানিয়ে দিলেন।
তিন. একদা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মােবারক মারুজী (র.) এক যুদ্ধে শরিক হয়েছিলেন। সেখানে কাফিরদের দুর্গ জয় করা কোনাে মতেই সম্ভব হচ্ছিল না। রাতের বেলায় তিনি চিন্তিত মন নিয়ে শুয়ে পড়লেন। হঠাৎ তিনি স্বপ্নে দেখেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে লক্ষ্য করে বলছেন, হে আব্দুল্লাহ! কি চিন্তা করছ?
তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কাফেরদের ঐ দুর্গটি জয় করতে পারছি না, তাই চিন্তিত আছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, অজুর সঙ্গে মিসওয়াক করবে।
আব্দুল্লাহ ইবনে মােবারক (র.) ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে অজু করলেন। এবং অন্যান্য মুসলিম সৈন্যকেও মিসওয়াক করার নির্দেশ দিলেন।
সকলেই মিসওয়াক সহকারে অজু করলেন। দুর্গের পাহারাদাররা পাহাড়ের উপর থেকে মুসলিম মুজাহিদগণকে মিসওয়াক করতে দেখল। এ দৃশ্য অবলােকন করে তারা ভাবল, এরা নিশ্চয়ই মানুষ খেকো হবে। তাই তারা দৌড়ে গিয়ে দুর্গের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের বলল, আমরা যাদের সাথে যুদ্ধ করতে এসেছি, তারা বােধ হয় মানুষ নয়। বরং মানুষ খেকো অন্য কোনাে প্রাণী হবে। কারণ তারা সকলেই দাঁত ধার করছে। এতে বুঝা যায়, তারা যদি আমাদের উপর বিজয় লাভ করে, তবে আমাদেরকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে।
আল্লাহ পাক সবকিছুই পারেন। তিনি সর্বশক্তিমান। একটি সুন্নত মিসওয়াককে কেন্দ্র করে সত্যি সত্যিই তিনি সকল কাফেরের অন্তরে ভয় ঢুকিয়ে দিলেন। ফলে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে তারা মুসলমানদের নিকট এ বলে দূত পাঠাল যে, তােমরা কি সম্পদ চাও, না প্রাণ চাও? জবাবে মুসলমানগণ বললেন, আমরা সম্পদ চাই না, প্রাণও চাই না, আমরা চাই তােমরা সকলে ইসলাম গ্রহণ কর। তাহলে তােমরা উভয় জাহানে নাজাত পাবে। অতঃপর তারা সকলেই মুসলমান হয়ে গেল। আল্লাহপাক আমাদের সকলকে মিসওয়াকের উপর আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম। যদি এমন হতাম (সিরিজ ৬) গল্পের বই থেকে নেওয়া।
For more updates please follow our Facebook, Twitter, Instagram, Linkedin, Pinterest, Tumblr And Youtube channel.
একজন মুসলিম মানুষের জীবনে মিসওয়াক করা একটি প্রতিদিনের প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসাবে পরিগণিত হয়।