কলঙ্ক (পালিয়ে বিয়ে করার ছোট গল্প)

কলঙ্ক : ভালোবাসার ছোট গল্প

গ্রামে প্রথম বারের মতো এক কলঙ্কময়, রসাত্মক ঘটনা ঘটেছে। মুখরোচক আর কুৎসাত্মক তো বেটেই। ঘটনাটি কয়েক মাস বিনোদন দিল গ্রামবাসীকে।

কলঙ্ককী বিষয়? গ্রামের সর্বাপেক্ষা বাদাইম্ম্যা ছেলের সঙ্গে পালিয়েছে মরহম আলী মেম্বারের সুন্দরী কলেজ পড়ুয়া মেয়ে সুরমা।

দবিরউদ্দিন বিধবার সন্তান, ভীষণ অধ্যবসায়ী কিন্তু মেধাহীন। আদু ভাইয়ের নব সংস্করণ, তবে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়ে ফেল করেছে। ক্লাস এইটে প্রমোশন পেয়ে মরেনি!

আদু ভাই সূত্রে মিনারার ক্লাসমেট। মিনারা খুব ভালো ছাত্রী। প্রথম বিভাগে পাস করে কলেজে ভর্তি হয়েছে। সরল আর চারিত্রিক দৃঢ়তার জন্য দবিরউদ্দিনের প্রতি তাঁর সহমর্মিতা। দবিরকে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়াবার জন্য তাঁর বড়ো গরজ। কিছু পরীক্ষার ফ্রি, স্কুলের দাবি মেটানো দবিরের পক্ষে সম্ভব না।

মিনারা তাঁর বাবাকে পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সাহায্যের অনুরোধ করে। বাবা তো অগ্নিশর্মা—এই ছোটোলোকের বাচ্চার জন্য দরদ কেন তোর? এমন কথা আর যেন তোর মুখে না শুনি।

এর পরেই মিনারা উধাও। দবিরও লাপাত্তা। শতরূপে বিষয়টি হাজারো গল্পের জন্ম দিয়ে পরে শেষ হলো মের রেশ। শুধু কলঙ্কের গাঢ় একটা দাগ বয়ে গেল মেম্বার সাহেবের পরিবারে।

১৫ বছর পর, গ্রামে এক পাজেরো জিপ এলো। থামলো দবিরের শূন্য ভিটের সামনে। দুজন সাহেব মেম, সঙ্গে দুটি দেবশিশুর মতো শিশু-কিশোর নিয়ে এসেছে। দেখছে বাড়ির আতিপাতি।

ড. দবিরউদ্দিন আর মিসেস মিনারা বেগম জিয়ারত করছেন নিজের আর শ্বশুরবাড়ির কবরস্থান।

খবরটা পৌঁছলো মিনারাদের বাড়িতে। ছুটে এলেন বৃদ্ধ মরহম আলী।

আমার মা কই; কই আমার মিনা?

মিনারা বাবাকে কদমবুসি করল। বাবা মেয়েকে জড়িয়ে কাঁদলেন।

মেয়ে বলে, ড. দবির, আপনার জামাই।

ওর একটা ইন্ডাস্ট্রি আছে চট্টগ্রামে। বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রফেসারি করে।

তোমার মিনাও একটা স্কুলের হেড-মিস্ট্রেস।

যদি পারো ওর কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নাও। হ্যাঁ, একটা মহান সাধকের কাছে ক্ষমা চাওয়া লজ্জার মনে করছি না আমি।

আমি ওকে নিয়ে গিয়েছিলাম ওর ভেতরের মানুষটাকে দেখে। দেখো সে আমাকে গড়েছে, আমিও গড়েছি তাঁকে।

মরহম আলী ধীর পদে এগুলেন জামাইয়ের দিকে।

দবির ঝঁকলো শ্বশুরকে কদমবুসি করতে। বুড়ো তা হুতে দিলেন না। বুকে জড়িয়ে কেঁদে ফেললেন হাউমাউ করে।

না, ক্ষমা তাকে চাইতে হয়নি। মানুষ যখন সত্যিকার বড়ো হয় তাঁদের ক্ষমা বা চাইতেই পেয়ে যায় অন্য মানুষ।

লেখকঃ কালাম আজাদ

আরও পড়তে পারেন : গল্প বুড়ি

প্রিয় পাঠক পাঠিকা, লেখকের কলঙ্ক গল্পটি পড়ে ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদেরকে পড়াতে এটি শেয়ার করুন।  

For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.

Leave a Comment