দাড়ি রাখার নগদ পুরস্কার

গল্পটি একজন সুদর্শন পুরুষ মাওলানা শরীফ ইসলামের যিনি দাড়ি রাখার নগদ পুরস্কার পেয়েছেন যা তাঁর দাম্পত্য জীবনের সুখ ও শান্তি বিনষ্ট করা থেকে রক্ষা করেছে। মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলামের লেখায় পড়ুন মাওলানা শরীফ ইসলামের দাড়ি রাখার নগদ পুরস্কার লাভ করার সম্পর্কের ঘটনাটি।

দাড়ি রাখার নগদ পুরস্কার (বিয়ের পাত্রী দেখার গল্প ও ঘটনা)

দাড়ি রাখার নগদ পুরস্কার

পঁচিশ বছর বয়সের এক যুবক। পূর্ণিমার চাঁদের মতই ফুটফুটে তার চেহারা। দূর থেকে দেখলে সদ্য ফোটা গোলাপের মতই মনে হয় । তার মসৃণ চুল, কাজল কালো চোখ আর মানানসই দেহয়াবব ছোট-বড় সকলেরই নযর কাড়ে। বিশেষ করে সদ্য গজিয়ে উঠা শত্রুগুলো যেন তার পৌরষত্বকে শতগুণে বাড়িয়ে তুলেছে ।

যুবকের নাম শরীফুল ইসলাম। সমসয়সী বন্ধু-বান্ধবরা তাকে শরীফ বলেই ডাকে। অবশ্য ইদানিং তারা নামের পূর্বে মাওলানা শব্দটি জুড়ে দিয়ে তাকে মাওলানা শরীফ বলেই সম্বোধন করে। কেননা আজ বছরখানেক হল একটি নামকরা মাদরাসা থেকে অত্যন্ত সুনামের সাথে তিনি দাওরা হাদীস পাস করে বের হয়েছেন ।

ছাত্র-জীবনে তিনি প্রতিটি পরীক্ষায় মেধার উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছেন । জীবনে ফেল করাতো দূরের কথা কোন পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয় স্থানও অধিকার করেননি। তার চলন-বলন, আচার-আচরণ হাস্য-রসিকতাসহ সকল কাজেই ভদ্রতার সুস্পষ্ট ছাপ বিদ্যমান ছিল। অতি সহজেই তিনি সকলের সাথে মিশে যেতে পারতেন। তার নম্র ও কোমল ব্যবহারে সকলেই সন্তুষ্ট ছিল । তাকওয়া-পরহেজগারীতেও তিনি ছিলেন অতুলনীয় । বালেগ হওয়ার পর থেকে কোন দিন তিনি ইচ্ছে করে নামায কাযা করেননি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযই তিনি মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে আদায় করেন। শুধু তাই নয়, তাহাজ্জুদ, ইশরাক ও আওয়াবিন নামাযও তার ছুটে না। প্রতিদিন সকালে কুরআন পাক তিলাওয়াত করেন। তার কোকিল কন্ঠের তিলাওয়াত সকলকেই মুগ্ধ করে ।

মাওলানা শরীফ যখন দশ বছরের বালক, তখনই তার স্নেহময়ী মাতা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। আজ পাঁচ বছর যাবত পিতৃস্নেহ থেকেও তিনি বঞ্চিত । কেননা গাড়ী দুর্ঘটনায় তার পিতা ইহজগত ত্যাগ করে পরজগতে পাড়ি জমিয়েছেন। বর্তমানে ছোট দুই ভাই ও এক বোন নিয়েই তাদের সংসার ।

তিনি পৈত্রিক সূত্রেই অগাধ ধন-সম্পদের মালিক হয়েছেন। এত বিশাল সম্পত্তির মালিক হয়েও তার মধ্যে কোন অহমিকা নেই। তার অবারিত দানে এলাকার লোকজন তো বটেই, বহু দুর দুরান্তের গরীব- দুঃখীরাও উপকৃত হয়।

মাওলানা শরীফের এক অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিল। নিজ এলাকায় সে রায়হান নামেই পরিচিত। ছোট বেলা থেকেই তাদের এ বন্ধুত্ব। ছোট বেলায় পড়াশুনাও হয়েছে এক সাথেই । বর্তমানে তিনি বি, এ ফাইনাল পরীক্ষার্থী । মাওলানার পিতা ইন্তিকালের পর তাদের বন্ধুত্ব আরও জোরদার হয়েছে।

আজ কয়েক মাস যাবত মাওলানা শরীফের বিয়ে সংক্রান্ত আলাপ- আলোচনা চলছে। বন্ধু রায়হানই এ ব্যাপারে বেশী তৎপর। বন্ধুকে একটি মনমতো স্ত্রী জুড়িয়ে দেয়ার জন্য সে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। পরিচিতজনের সাথে আলাপ-আলোচনা করেছে। কিন্তু মাওলানা শরীফের জন্য মনের মতো মেয়ে সে খুঁজে পাচ্ছে না। একদিক পছন্দ হলে তো তিনদিক পছন্দ হয় না । এভাবে আরও কয়েকমাস কেটে গেল ।

রায়হানের ইচ্ছা হলো, বন্ধুকে সে একজন সুন্দরী-রূপসী মেয়ে এনে দিবে। এজন্য সে যে কোন কুরবানী দিতে প্রস্তুত। কোথাও কোন সুন্দরী মেয়ের খোঁজ পেলেই সে তৎক্ষনাত সেখানে ছুটে যায়। আশে পাশের লোকজনকে জিজ্ঞেস করে মেয়ে ও মেয়ের পরিবার পরিজন সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়।

এভাবে খোঁজতে খোঁজতে একদিন রায়হান সবদিক দিয়ে মানানসই একটি সুন্দরী মেয়ের খোঁজ পেয়ে যায়। অতঃপর বিভিন্ন দিকে খোঁজ-খবর নিয়ে তার ধারণা জন্মায় যে, এ মেয়েটিই মাওলানার জন্য উপযুক্ত হবে। এই হবে মাওলানার কাংখিত স্ত্রী ।

উপযুক্ত মেয়ে পেয়ে রায়হান খুশিতে বাগবাগ হয়ে বন্ধু শরীফের সাথে সাক্ষাত করে। বলে, মাওলানা! তোমার জন্য একটি সুন্দরী মেয়ে পেয়েছি। খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, তার মত সুন্দরী এ এলাকায় আর একটিও নেই। লোকজন বলেছে, সে নাকি পরীর মত সুন্দরী। তার পটলচেরা আঁখি, উন্নত নাসিকা, লম্বা কেশদাম আর হৃদপুষ্ঠ দেহ সব মিলিয়ে সে এক অনিন্দ্য সুন্দরী রূপসী মেয়ে। এমন মেয়ের সাথে তোমাকেই মানাবে ভাল ।

বন্ধুর কথা শুনে মাওলানা শরীফ মনে মনে খুশি হলেন। মুখে বললেন, বন্ধু! সুন্দরের বর্ণনা তো খুব দিলে । কিন্তু মেয়ের দীনদারী কেমন তা তো কিছুই বললে না ।

জবাবে রায়হান বলল, দীনদারী সম্পর্কে আমি ততটা খোঁজ নেইনি । তবে যতটা শুনতে পেরেছি, তাতে মনে হয়, দীনদারীর দিক দিয়েও মেয়েটি খারাপ হবে না। তাদের পরিবারের সবাই জেনারেল শিক্ষিত হলেও নামায রোজা সকলেই করে। যাহোক, দীনদারীর দিকটা তুমি না হয় যে কোন উপায়ে জেনে নিবে । আমি তো সুন্দরী মিলিয়ে দিয়েছি।

মাওলানা বললেন, রায়হান! দীনদারীর দিকটি খাটো করে দেখার কোন অবকাশ নেই। কেননা মেয়ে যত সুন্দরীই হোক, যদি তার মধ্যে তাকওয়া পরহেজগারী না থাকে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতকে যদি সে ভাল না বাসে, খোদার প্রকৃত ভয় যদি তার অন্তরে বিদ্যমান না থাকে তাহলে আর যাই হোক, তাদের দাম্পত্য জীবনে যে শান্তি আসবে না তা নিশ্চিত করেই বলা যায় ।

রায়হান! তুমি তো নিশ্চয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস অধ্যয়ন করেছ। তিনি বলেছেন পুরুষগণ মেয়েদের চারটি দিক দেখে বিবাহ করে । (১) রূপ লাবন্য (২) বংশকুল (৩) সহায় সম্পত্তি ( ৪ ) দ্বীনদারী। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিন্তু দ্বীনদারীকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। তিনি এক সাহাবীকে লক্ষ্য করে বলেছেন, হে সাহাবী ! তুমি কিন্তু দ্বীনদারীর দিকটিকেই প্রাধান্য দিও। এতেই তুমি কামিয়াব হবে। দাম্পত্য জীবনে তুমি সুখি হতে পারবে।

রায়হান! তুমি আমার চেয়ে কম বুঝ না। তুমি একথা ভাল করেই জান যে, দ্বীনদারী থাকার পর অন্যগুণগুলো যদি পাওয়া যায় তাহলে তো সোনায় সোহাগা। কিন্তু দ্বীনদারী ছাড়া কেবল রূপ লাবন্য, সহায় সম্পত্তি কিংবা শুধু ভাল বংশের মেয়ে হলেই দাম্পত্য জীবনে শান্তি আসবে না। আসতে পারেও না। যারা দ্বীনহীন কোন মেয়েকে নিয়ে ঘর সংসার করে আর বলে বেড়ায় যে, সে দাম্পত্য জীবনে খুব সুখি তার এ বক্তব্য মোটেও ঠিক নয়। আসল কথা হলো, এ ধরণের লোকেরা শান্তি কাকে বলে, শান্তির সংজ্ঞা কি তা তারা ভাল করে জানেই না। একজন দ্বীনদার মেয়ে তার স্বামীকে যে পরিমাণ শ্রদ্ধা করবে, যে পরিমাণ খেদমত করবে, যে পরিমাণ হৃদয় দিয়ে ভালবাসবে, যে পরিমাণ অনুগত হবে, যে পরিমাণ স্বামীকে খুশি করতে সচেষ্ট হবে একজন বদ্দীন মেয়ে থেকে তা কখনই আশা করা যায় না। সবচেয়ে বড় কথা হলো, স্বামী-স্ত্রীর দীনদারীর বদৌলতেই আল্লাহ তাআলা তাদের দাম্পত্য জীবনকে সুখময় করেন, তাদের সংসারে বইতে থাকে শান্তির ফল্গুধারা, তাদের সন্তান-সন্তুতিও হয় সভ্য, ভদ্র ও আল্লাহ ওয়ালা। মহান রাব্বুল আলামীন যেহেতু তাকওয়া, পরহেজগারী ও দ্বীনদারীর সাথে শান্তির সম্পর্ক জুড়ে দিয়েছেন, অর্থ্যাৎ যে যে পরিমাণ নেক আমল করবে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতগুলোকে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করবে সে সেই পরিমাণ শান্তি লাভ করবে- শরীয়তের মূল কথা যেহেতু এটাই সেহেতু একজন বদদীন মেয়ে ঘরে এনে প্রকৃত শান্তির প্রত্যাশা করা দূরাশা বৈ কিছুই নয় ।

যা হোক, এভাবে আরও কিছু আলাপ-আলোচনা পর শেষ পর্যন্ত সেদিনের মত তারা একে অপরের কাছ থেকে বিদায় নিল। এরপর কয়েকদিন উভয় পক্ষের লোকজন আলোচনা শেষে এ সিদ্ধান্ত উপনীত হলো যে, মাওলানা সাহেব আগামী বুধবার মেয়ের বাড়ীতে গিয়ে মেয়ে দেখে আসবে। যদি তার পছন্দ হয় তাহলে আর কারও কোন আপত্তি থাকবে না । আল্লাহ চাহেতো দিন তারিখ ধার্য করে বিবাহ হয়ে যাবে ।

নির্ধারিত দিনে মাওলানা শরীফ মেয়ে দেখতে গেলেন। তিনি মেয়েটিকে অভয় দিয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেন। মেয়েটি সাথে সাথে সন্তোষজনক উত্তর দিল । তিনি দেখলেন, বন্ধু রায়হান মেয়ের যে রূপ সৌন্দর্য বর্ণনা করেছিল, মেয়েটি তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশী সুন্দরী । বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে তিনি মেয়ের আচার-আচরণ, স্বভাব-প্রকৃতি সম্পর্কে অনেক কিছুই জানলেন। এতে তিনি মোটামুটি সন্তুষ্টও হলেন । কিন্তু প্রকৃত অর্থেই মেয়েটি দ্বীনদার কি-না, শরীয়তের যাবতীয় হুকুম আহকাম মানার জন্য সে আন্তরিক ভাবেই সচেষ্ট কিনা এ বিষয়টি মাওলানার নিকট অস্পষ্টই রয়ে গেল ।

মেয়েটির নাম রেশমা। তার চুলগুলো রেশমের মতই সুন্দর। বয়স আনুমানিক আঠার হবে। এক বছর আগে সে একটি নামকরা ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচ, এস, সি পাশ করেছে। কলেজে ঢোকার পরপরই সে রাজনীতির সাথেও কিছুটা সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে। ফলে স্বভাবতই সে অন্য দশটি মেয়ের চেয়ে একটু বেশী বাকপটু হয়ে পড়েছে। তার চলাফেরা, পোষাক-পরিচ্ছদ ও কথা-বার্তায় সবসময়ই একটা স্মার্টনেস ও আধুনিকতার ছাপ বিদ্যমান থাকতো ।

মেয়ে দেখার পালা শেষ হলে মাওলানা শরীফ পাশের রুমে বসা বন্ধু রায়হানের নিকট চলে গেল । রায়হান তাকে দেখেই বলে উঠল, কেমন দেখলি? পছন্দ হল তো?

জবাবে মাওলানা বললেন, মেয়ে তো পছন্দেরই । তবে….. ।

: তবে কি? রায়হান মাওলানার কথা শেষ হতে দিল না ।

বন্ধু !

: তবে মানে মেয়েটি প্রকৃত দ্বীনদার কিনা তাতো বুঝতে পারলাম না ।

: এজন্য তুমি কি করতে চাও?

: হ্যাঁ, এরও ব্যবস্থা আছে। আমরা একটু চেষ্টা করলেই তা জানতে পারব ।

: তা কিভাবে?

: এর পন্থা এই যে, …….. ।

এতটুকু বলতেই মাওলানা শরীফের এগার বছরের ছোট বোন শরীফা এসে ঘরে ঢুকল । ঘরে ঢুকেই সে একগাল দুষ্টমীভরা হাসি দিয়ে বলল-

: ভাইয়া! আপনাকে নিয়ে না ভিতরে চমৎকার কথা-বার্তা হয়েছে। এ কথা বলেই যে দৌড়ে পালাতে চেষ্টা করল ।

: কি কথা-বার্তা হয়েছে একটু বল না আমাদের কাছে। মাওলানা তাকে যেতে বাধা দিয়ে বললেন ।

: বলব । কিন্তু এর পুরস্কার কি হবে?

: তুমি যা চাও তাই পাবে। একথা বলে মাওলানা শরীফ তাকে কাছে বসাল ।

: আমি যা চাই তা কি আপনি দিবেন?

: হ্যাঁ, অবশ্যই দিব।

: আমি চাই, আপনি এখন যাকে দেখে আসলেন তাকে অচিরেই আমাদের ভাবী করে ঘরে তুলবেন ।

: তাকে খুব পছন্দ হয়েছে বুঝি?

: হবে না? এত সুন্দরী মেয়েকে ভাবী ডাকতে কার না ইচ্ছে হয়!

: ঠিক আছে। আমি তোমার আবদার রক্ষা করতে একশভাগ চেষ্টা করব। এবার আসল কথা বল ।

: রেশমা আপা আপনার রুম থেকে বের হওয়ার পরপরই তার বান্ধবীরা তাকে টেনে নিয়ে আরেকটি রুমে নিয়ে বসাল । তারপর নাসরীন নামের মেয়েটি হাসতে হাসতে বলল, কিরে রেশমা? হুজুরকে কেমন লাগল? আরেকজন বলল, এবার পছন্দ হল তো?

জবাবে রেশমা আপা বলল, হ্যাঁ, সবকিছুই তো ভাল লেগেছে। তার ব্যবহার খুবই সুন্দর ও মার্জিত। চেহারা সুরত তো তোরাও দেখেছিস । পছন্দ না হওয়ার কোন কিছুই তো তার মধ্যে দেখা গেল না। তবে…. ।

এতটুকু বলে রেশমা আপা থেমে গেল ।

বান্ধবীরা তার কথা রুদ্ধ শ্বাসে শুনছিল । রেশমা আপা থেমে যেতেই তারা একত্রে বলে উঠলো, তবে কি রে? কোন কিছু অপছন্দ হয়েছে তোর? : জবাবে একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে রেশমা আপা বলল, এমন সুন্দর সুদর্শন পুরুষকে অপছন্দ করবে কে?

: তাহলে তুই যে, বললি, তবে…..নিশ্চয় এর কোন হেতু আছে।

তখন রেশমা আপা আরেকবার একটি লম্বা শ্বাস ফেলে বলল, একটি জিনিষ ছাড়া তার সবই পছন্দ হয়েছে আমার । আর সেটি হল তার দাড়ি। দাড়ি-টাড়ি আমার একদম অপছন্দের জিনিষ। এই যৌবন বয়সে দাড়ি রাখলে কেমন দেখা যায়?

কেন? খারাপ কি? দাড়ির কারণে তো তাকে মন্দ লাগছে না ৷ এক বান্ধবী বলে উঠল ।

মন্দ না লাগলেও দাড়ি আমি দেখতেই পারি না। দাঁড়িওয়ালা মানুষ আমার একেবারেই অসহ্য। রেশমা আপা বলল।

দাড়িতে তোর কি অসুবিধা হলো। পুরুষদের জন্য তো দাড়ি রাখা ওয়াজিব। তাছাড়া ইনি একজন মাওলানা মানুষ। ইনি কি করে দাড়ি না রেখে থাকতে পারেন? বলল নাসরীন নামের মেয়েটি।

তাকে দাড়ি রাখতে আমি নিষেধ করিনি। আমি বলেছি আমার পছন্দ অপছন্দের কথা । আমার পরিস্কার কথা হল, দাড়ি আমার নিকট ভাল লাগে না ।

: তাহলে তুই কি বলতে চাস? তোর বক্তব্য কি তাহলে এই যে, তোকে বিয়ে করতে হলে দাড়ি ফেলে দিতে হবে? বলল, আরেক বান্ধবী ।

: হ্যাঁ, আমাকে পেতে হলে দাড়ি ফেলেই আসতে হবে। দাড়ি রাখার বেশী সখ হলে শেষ বয়সে না হয় চিন্তা ভাবনা করা যাবে ।

শরীফা এতটুকু বলার পর মাওলানা সাহেব তাকে থামিয়ে দিয়ে বন্ধু রায়হানকে সম্বোধন করে বললেন-

: বন্ধু! চল আর এক মুহূর্তও এখানে নয় ।

: কেন, কি হয়েছে তোর? দাড়ির কথা বলাতে রেগে গেলে নাকি?

: রেগে যাইনি । তার দ্বীনদারীর পরীক্ষা হয়ে গেছে ।

: শুধু দাড়ি দিয়েই তুই মেয়েটির দ্বীনদারীর পরীক্ষা নিয়ে নিলি? এটা কি করে সম্ভব ।

: হ্যাঁ, দাড়ি দিয়েই আমি তার দ্বীনদারীর পরীক্ষা নিয়েছি। আল্লাহ পাকের হাজারো শোকর যে, তিনি আমাকে দাড়ির উসিলায় এই বদদীন মেয়ে থেকে হেফাজত করেছেন ।

এতটুকু বলার পর মাওলানার কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে এল। কিছুক্ষণ তার মুখ থেকে কোন কথা বের হল না। বাকরুদ্ধ দৃষ্টিতে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকায় বন্ধু রায়হানের দিকে । রায়হানও ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক হয়ে যায় ৷ ফলে গোটা কক্ষে নেমে আসে এক অখন্ড নীরবতা ।

একসময় নীরবতা ভঙ্গ করে মাওলানা শরীফ বললেন, বন্ধু! আমি আবারো মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তিনিই আমাকে দাড়ির উসিরায় এ মহা বিপদ থেকে রক্ষা করেছেন। আমার জীবনকে ধংসের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। এ মেয়েকে বিবাহ করলে কিছুতেই আমি দাম্পত্য জীবনে প্রকৃত সুখী হতে পারতাম না। এই একমাত্র দাড়িকে কেন্দ্র করেই আমি তার ধার্মিকতার পরিমাণ নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছি ।

চাল সিদ্ধ হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য যেমন সবগুলো চাল টিপতে হয় না, একটি টিপলেই চলে, ঠিক তেমনি শরীয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান দাড়িকে কেন্দ্র করেই আমি মেয়েটির দ্বীনদারীর পূর্ণ পরিচয় লাভ করেছি।

রায়হান! তুমি ভাল করে শুনে রাখ। তোমার নিজের জীবনেও কথাগুলো কাজে লাগবে। কারণ তোমাকেও তো এ বছর না হয় আগামী ১/২ বছরের মধ্যে বিবাহ করতে হবে ।

দাড়ি ইসলামের একটি শিআর বা নিদর্শন। কেউ কেউ অজ্ঞতার কারণে দাড়ি রাখাকে সুন্নত বলে মনে করে। অথচ তা মোটেও ঠিক নয় । দাড়ি রাখার নির্দেশ সম্বলিত প্রচুর হাদীস থাকার কারণে সমস্ত ফকীহগণ এ ব্যাপারে ঐক্যমতে পৌঁছেছেন যে, যাদের দাড়ি লম্বা হয়, তাদের জন্য সকল দিক দিয়ে এক মুষ্টি পরিমাণ দাড়ি রাখা ওয়াজিব বা অপরিহার্য কর্তব্য। হেঁটে কেটে এক মুষ্টির কম করা বা এক মুষ্টির বেশী না হতেই কাট ছাট করা বা একেবারে মুন্ডিয়ে ফেলা হারাম, কবীরা গুনাহ ও ফাসেকী কাজ। এ ধরণের ব্যক্তির জন্য ইমামতি করাও জায়েজ নয়। এরূপ ব্যক্তি ইমামতী করলে এবং তার পিছনে নামায পড়লে মাকরুহে তাহরীমি হবে ।

হযরত ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাড়ি কখনো এক মুষ্টির কম করতেন না। কোন সময় ছাটতে হলে, এক মুষ্টির বেশীটা ছেটে ফেলতেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা দাড়ি বাড়তে দাও এবং মোচ খাট কর ৷

এ পর্যন্ত বলে মাওলানা একটু জিরিয়ে নিলেন। তারপর আবার বলতে শুরু করলেন-

এবার তুমিই বল, দাড়ি রাখা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান হওয়া সত্ত্বেও যে মেয়ের নিকট দাড়ি কেবল অপছন্দই নয় অসহ্যও বটে সে মেয়ে কি করে প্রকৃত দ্বীনদার হতে পারে?

দাড়িকে তো সে সুন্নতও মনে করতে পারে। যেমন অনেকেই মনে করে থাকে। তাহলে এক্ষেত্রেও কি সে দোষী? কথার মাঝখান দিয়ে রায়হান বলল ।

: হ্যাঁ, এক্ষেত্রেও দোষী। কারণ প্রকৃত মুমিন হতে হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মহব্বত করতে হবে। আর তাকে মহব্বত করার অর্থই হলো তার সুন্নতকে মহব্বত করা এবং তা নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করা ।

যদি তার ধারণায় দাড়ি রাখা সুন্নতও হয় তথাপি প্রকৃত মুমিন হওয়ার জন্য তো দাড়িকে পছন্দ করা, যারা রাখে তাদেরকে মনে প্রাণে ভালবাসা উচিত ছিল। কিন্তু কই, দাড়িকে তো সে বরদাশতই করতে পারে না । তাহলে এবার তুমিই বল, তার দ্বীরদারীটা কোন পর্যায়ের ।

: তাহলে তুই কি করতে চাস? এমন সুন্দরী মেয়েটিকে তুই বিয়ে করবি না?

: সুন্দরী কেন, সে যদি সাক্ষাত হুরও হতো তবু তাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি তোমাকে আগেই বলেছি যে, স্ত্রী দ্বীনদার না হলে শুধু সৌন্দর্য দিয়ে দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়া যায় না। জীবনে প্রকৃত শান্তি লাভ হয় না। বরং এরূপ সৌন্দর্য স্বামীর জন্য আরও কাল হয়ে দাঁড়ায় ।

বন্ধু! বিয়ে মানুষ বারবার করে না। ৪টি পর্যন্ত বিয়ে করা জায়েয থাকলেও আমাদের দেশের মানুষ বিভিন্ন কারণে একটির বেশী সাধারণত বিয়ে করে না। সুতরাং মেয়ে গরীব হোক, এত রূপ সৌন্দর্য তার না থাকুক, কিন্তু দ্বীনদারী অবশ্যই থাকতে হবে। এরূপ মেয়ে নিয়েই আমি স্বপ্নের সংসার গড়ে তুলতে চাই ।

অতঃপর রায়হান বিভিন্ন প্রকার যুক্তি দিয়ে মাওলানাকে বুঝানোর চেষ্টা করল। এবং এ মেয়েটিকেই বিয়ে করার জন্য উৎসাহিত করল । কিন্তু এতে কোন ফল না হওয়ায় তারা সেখান থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ীর পথে রওয়ানা দিল ।

পথিমধ্যে দুই বন্ধু বাসে চড়ল। তাদের সীট দুটো পাশাপাশি। কেউ কোন কথা বলছে না । একসময় রায়হানই কথা বলে উঠল । বলল সে-

: মাওলানা! কাজটি কি তুমি ভাল করেছ?

: হ্যাঁ, অবশ্যই ভাল করেছি। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসকে প্রাধান্য দিয়েছি। রূপ সৌন্দর্যের ফাঁদে পড়ে আমি ধোকা খাইনি । এজন্য খোদার শুকরিয়া ।

শরীফা মাওলানার পাশেই বসা ছিল । এত সুন্দর একটি মেয়েকে ভাবী বানাতে না পেরে তার মনে কোন আনন্দ ছিল না। অবশ্য ভাইয়ার কথা- বার্তা শুনে দাড়ির গুরুত্ব তার কচি মনে ভাল করেই গেঁথে বসেছে।

দুই বন্ধু কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর আবার রায়হান কথা শুরু করল । সে বলল, বন্ধু! দাড়ি সম্পর্কে তুমি আরও কিছু বল। আমার শুনতে খুব ইচ্ছে করছে। দাড়ি না রাখলে কি কি ক্ষতি হয় তা যদি তোমার জানা থাকে তাহলে তাও বলতে পার ।

পুরুষের দাড়ি না রাখলে কি কি ক্ষতি হয়?

মাওলানা সাহেব বললেন, তুমি ভাল কথাই স্মরণ করে দিয়েছ। দাড়ি না রাখার ক্ষতিগুলো কি তা যখন তুমি শুনতে চেয়েছ, তাহলে শুন- শরীফার ঘুম ঘুম ভাব এসে গিয়েছিল। ভাইয়ার কথা শুনে সে একটু নড়ে চড়ে সোজা হয়ে বসল। মনোযোগ দিল কথার দিকে । মাওলানা বললেন, দাড়ি না রাখলে মানুষ দ্বীন ও দুনিয়া উভয় দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় ৷ ফতোয়ার বিভিন্ন কিতাব অধ্যয়ন করে এ পর্যন্ত আমি ১৮টি ক্ষতি সম্পর্কে অবগতি লাভ করেছি। তা এই যে-

। দাড়ি না রাখলে শিআরে ইসলাম তথা মুসলমানদের জাতীয় নিদর্শন তরক করা হয় এবং এতে ফাসিক সাব্যস্ত হতে হয়।

। অন্য গোনাহ একবার করলে একবার লিখা হয়। কিন্তু দাড়ি না রাখলে ২৪ ঘন্টাই দাড়ি না রাখার গুনাহ লিখা হতে থাকে ।

। দাড়ি কাটলে ছাটলে বা মুন্ডন করলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্তরে আঘাত দেয়া হয়। দাড়ি কাটার জন্য মুখে ব্লেড বা ক্ষুর লাগানোর অর্থই হল তার অন্তরকে ধারালা অস্ত্র দিয়ে দিখন্ডিত করা। উল্লেখ্য যে, উম্মতের সকল আমলের সহিত এ আমলও প্রতি সপ্তাহে দুদিন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে পেশ করা হয় ৷

। দাড়ি কর্তন দ্বারা খোদায়ী সৃষ্টির বিকৃতি সাধন করা হয় । যা পবিত্র কুরআনে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, মোচ, বগলের নীচের পশম ইত্যাদি কর্তন করা খোদায়ী সৃষ্টিকে বিকৃত করা নয় । কেননা এগুলো কর্তন করা মানুষের স্বভাবজাত কাজ ।

। দাড়ি না রাখলে পুরুষের চেহারা মেয়েদের চেহারার সাথে মিলে যায়। অথচ হাদীস শরীফে নর-নারী উভয়কে একে অপরের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করতে কঠোরভাবে নিষেধ করে উহাকে হারাম বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

। দাড়ি ঈমান ও ইসলামের আলামত বা চিহ্ন। আর আলামতকে যদি বিলুপ্ত করা হয়, তখন সে ব্যক্তি মুমিন না কাফির তা অনেক সময় স্থির করা সম্ভব হয় না ।

। দাড়ি না রাখলে বা ছোট করে রাখলে তার ইমামতির যোগ্যতা থাকে না ।

। দাড়ি না রাখলে দৃষ্টি শক্তি কমে যায়। বর্তমানে এ কথা সকল অভিজ্ঞ ডাক্তারগণই স্বীকার করে থাকেন ।

। দাড়ি না রাখলে তার পৌরষ সৌন্দর্য্যের বিকৃতি ঘটে। একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে পারস্য বাদশাহের পক্ষ থেকে দাড়ি মুন্ডানো দুজন রাষ্ট্রদূত উপস্থিত হল, তাদের দিকে দৃষ্টি পড়তেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চেহারা ফিরিয়ে নিলেন এবং বললেন, তোমাদের চেহারাকে এমন বিশ্রী বানাতে কে বলেছে? এর দ্বারা বুঝা গেল, পুরুষদের সৌন্দর্য দাড়ি রাখার মধ্যে। কাট-ছাট কিংবা মুন্ডানোর মধ্যে নয়। কারণ পুরুষজাত তো সিংহের ন্যায়। আর সিংহের সৌন্দয তো দাড়ির মধ্যেই । এজন্য বহু বিধর্মীরা পর্যন্ত দাড়ি কাটে না ।

১০। দাড়ি বিহীন লোক রাস্তাঘাটে মারা গেলে, তার গোসল, কাফন ও জানাযা নিয়ে মুসীবতে পড়তে হয়। কেননা তখন তাকে দাফন করা হবে না শ্মশান ঘাটে নিয়ে যাওয়া হবে তা নির্ণয় করার জন্য কাপড় খুলে দেখা ছাড়া কোন উপায় থাকে না । আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।

১১। দাড়ি না রাখলে সেভের জন্য অর্থের যেমন অপচয় হয় তেমনি জীবনে মহামূল্যবান সময়ও নষ্ট হয় ।

১২। দাড়ি না রাখলে তার শরাফত ও বুযুর্গী নষ্ট হয়ে যায় এবং তার চেহারা থেকে নূর চলে যায়। এরুপ ব্যক্তি আমলের মাধ্যমে কখনোই আল্লাহর ওলীর মর্যাদা লাভ করতে সক্ষম হয় না ৷

১৩। দাড়ি না রাখলে সে মুসলমানদের সম্মান ও সালাম পাওয়ার যোগ্য থাকে না। কেননা সে মুসলমান না খৃষ্টান, হিন্দু না ইহুদী তা তো সবসময় নির্ণয় করাই সম্ভব হয় না ।

১৪ । দাড়ি রাখলে যেমন অনেক গুনাহ থেকে বাঁচা সম্ভব হয় তেমনি দাড়ি না রাখলে নানাবিধ অপকর্ম ও গুনাহের কাজ থেকে বাঁচাও মুশকিল হয়ে যায়। দাড়িবিহীন লোক অতি সহজেই যে কোন গোনাহের আসরে প্রবেশ করতে পারে। পক্ষান্তরে দাড়িওয়ালা ব্যক্তি স্বাভাবিক লজ্জার কারণেই সহজে কোন গোনাহের আসরে শরীক হতে পারে না। সে মনে করে, এত বড় দাড়ি নিয়ে কিভাবে এ গোনাহের কর্মে অংশ নেই ।

১৫। দাড়ি মুন্ডালে অতি সত্তর তা পেকে সাদা হয়ে যেতে পারে । তখন দাড়ি রাখতে চেষ্টা করলেও শরমে রাখতে পারে না ।

১৬। দাড়ি না রেখে বারবার সেভ করার ফলে মুখের কমনীয়তা নষ্ট হয়ে যায়। এতে দাড়ি বিহীন লোক অতি দ্রুত মুখের স্বাভাবিক সৌন্দর্য ও মসৃণতা থেকে বঞ্চিত হয় ।

১৭। দাড়ি বিহীন লোক প্রকৃত রুচি সম্পন্না স্ত্রীর নিকট প্রচন্ড বিরক্তি ও অস্বস্তির কারণও হয়ে দাঁড়ায় ।

১৮। উপরন্ত দাড়ি না রেখে হাশরের ময়দানে শাফায়াত লাভ কিংবা হাউজে কাউসারের পানি পানের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মত বলে দাবী করাও মুশকিল হয়ে যাবে। খোদা না করুন, সেদিন হয়ত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ উম্মত থেকে গোস্বাভরে চেহারাও ফিরিয়ে নিতে পারেন। কারণ তার চেহারার সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারায় কোন মিল নেই ৷

মাওলানা শরীফ দাড়ির ক্ষতিকর দিকগুলো এক এক করে বিস্তারিত বর্ণনা করার পর রায়হান বলল, বন্ধু! আমাকে ক্ষমা করে দিস্। আসলে দাড়ির গুরুত্ব সম্পর্কে আমার এতটা জানা ছিল না। তাই তোকে আমি বারবার পীড়াপীড়ি করেছি। তুই সত্যি কথাই বলেছিস যে, যে মেয়ে দাড়ি পছন্দ করে না বা দাড়ি যুক্ত ছেলেকে নিজের স্বামীরূপে বরণ করে নিতে অনীহা প্রকাশ করে তাকে কিছুতেই বিবাহ করা চলে না। আমি আজই এ বিয়ে হবে না বলে মেয়ের অভিভাবকদের জানিয়ে দিব ।

এমন সময় গাড়ি গন্তব্যে চলে আসায় তারা সকলেই নেমে পড়লো । রায়হান সালাম মোসাফাহা শেষে বাড়ী চলে গেলে মাওলানা শরীফ ছোট্ট বোন শরীফাকে নিয়ে বাড়ীতে চলে এলো ।

কিছুদিন পর রেশমার অন্যত্র বিবাহ হল। রেশমা নিজেই ছেলে পছন্দ করেছে। আলট্রা মর্ডান ছেলে। প্রতিদিন দাড়ি সেভ করে। এতে রেশমা খুবই খুশী ।

রায়হান প্রথমে রেশমার বিয়ের খবর জানতে পারে। একথা সে বন্ধু শরীফকেও জানায়। অতঃপর একদিন তারা খবর নিয়ে জানতে পারল যে, তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের হয়নি। রেশমা স্বামীর কথা মতো চলতে একেবারেই নারাজ। সে মনমতো চলতে চায়। স্বামীর কোন কথাই তার কানে ঢোকে না। স্বামীর খেদমত করা তো দূরের কথা তাকে একগ্লাস পানি এনে দিতেও সে কুণ্ঠাবোধ করে। স্বামী যে একজন শ্রদ্ধার পাত্র, একথা কোন দিন তার কল্পনায়ও আসেনি। উপরন্ত স্বামীকে এটা ওটা কিনে দেয়ার জন্য প্রতিদিন ফরমায়েশ দেয়। না দিলে মুখ ভার করে গাল ফুলিয়ে বসে থাকে । বাসার যাবতীয় কাজ কর্ম চাকর-বাকর দ্বারা করালেও যদি কখনো রেশমাকে বলে, রেশমা! ক্ষিধে পেয়েছে। ভাত দাও। সে তৎক্ষনাৎ মুখের উপর বলে দেয়, ক্ষিধে পেলে যার যার খানা সে নিজেই নিয়ে খেয়ে নিতে পারে। স্বামী বেচারা বাধ্য হয়ে তখন নিজের খাবার নিজেই গ্রহণ করে। তখন সে মনে মনে ভাবে, এরই নাম কি দাম্পত্য জীবনের সুখ? স্ত্রীর প্রেম-ভালবাসার নমুনা কি এই? এসব ঘটনা জানতে পেরে রায়হানের আজ ভাল করেই বুঝে এসেছে যে, রেশমাকে বিয়ে না করে মাওলানা শরীফ অনেক বুদ্ধিমানের কাজই করেছে। নইলে তার জীবন ও আজ দুর্বিসহ হয়ে উঠতো। পারিবারিক জীবন হয়ে উঠতো একটি জলন্ত অগ্নিকুন্ড । রেশমার মতো একটি দীনহীন মেয়ের খপ্পর থেকে বাঁচতে পারা মূলতঃ মাওলানা শরীফের দাড়ি রাখারই নগদ পুরস্কার ।

কারণ দাড়িকে কেন্দ্র করেই সে তাকে বিবাহ করেনি। না হয়, আলোচনা যদ্দুর গিয়ে গড়িয়েছিল, তা থেকে বেরিয়ে আসা তার পক্ষে হয়ত সম্ভব হতো না। আল্লাহপাক আমাদের সকলকে দাড়ি রাখার গুরুত্ব অনুধাবন করে তদানুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করুন ।

(সূত্র : আলোচ্য লেখাটি লেখকের নিজ কানে শুনা একটি বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে লিখিত)

লেখক: মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম। লেখকের যে গল্পে অশ্রু ঝরে – হৃদয় গলে সিরিজ ৮ বই থেকে।

Read more: ব্যথিত হৃদয় (ইসলামিক উপন্যাস ১)

Please follow our Facebook, Twitter, Instagram, Linkedin, Pinterest, Tumblr, And Youtube channels for more updates.

Leave a Comment