ভোগে নয়, ত্যাগেই মুক্তি (ইসলামিক গল্প)

শীতের সকাল। চতুর্দিক কুয়াশায় আচ্ছন্ন। পথ-ঘাটে লোকজনের চলাফেরা এখনো শুরু হয়নি। প্রত্যেকেই নিজ নিজ বাসস্থানে টুকটাক কাজ কর্মে ব্যস্ত। কেউ সুললিত কন্ঠে কুরআনে পাক তিলাওয়াত করছে, কেউ বা জিকির অযীফায় নিমগ্ন।

তখন ছিল মুসলিম বিশ্বের চতুর্থ খলীফা হযরত আলী (রা.) এর শাসনকাল । এই সাত সকালে খলীফা কি একটা জরুরী কাজে আপন গৃহেই অবস্থান করছেন। এমন সময় কারও সবিনয় আহবান কানে আসতেই দরজার দিকে দৃষ্টি ফিরালেন তিনি। দেখলেন, দারুল খিলাফতের পুলিশ প্রধান দরবারে উপস্থিতির অনুমতি প্রার্থনা করছেন । তার পিছনে একদল মানুষ। প্রত্যেকেই কি যেন বলাবলি করছে । তন্মধ্যে একজনের হাতে বেড়ী লাগানো। পুলিশের চার ব্যক্তি তাকে ধরে রেখেছে। লোকটির উভয় হাত রক্তে রঞ্জিত। ডান হাতে একটি ধারালো ছুরি । ছুরি থেকে এখনো রক্ত টপকাচ্ছে।

ত্যাগেই মুক্তি

সকলের পিছনে একটি লাশ। লাশটির গায়ে মারাত্মক জখম ৷ কয়েকজন পুলিশ লাশটি বহন করে নিয়ে এসেছে। উপস্থিত জনতা জোর গলায় হত্যার পরিবর্তে হত্যার দাবী জানাচ্ছে ।

গ্রেফতারকৃত লোকটি যুবক বয়সের। ভয়ে তার চেহারা পাংশু বর্ণ ধারণ করেছে । পা দুটো কাঁপছে থরথর করে। সীমাহীন পেরেশান মনে হচ্ছিল তাকে । কি এক অব্যক্ত যন্ত্রণা যেন তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে ।

খলীফা পুলিশ প্রধানকে ভিতরে নিয়ে ঘটনার বিবরণ জানতে চাইলেন। বললেন, ঘটনা কি খুলে বলুন। পুলিশ প্রধান বলতে লাগলেন-

আমিরুল মুমিনীন! আজ ভোরে আমরা টহল দিচ্ছিলাম। হঠাৎ একস্থানে একটি লাশ দেখতে পেয়ে আমরা দ্রুত সেখানে যাই । কাছে গিয়ে দেখি এই যুবক ছুরি হাতে দাঁড়িয়ে। ছুরি থেকে তাজা রক্ত টপকে পড়ছে। এদিকে নিহত ব্যক্তির দেহ থেকেও অবিরাম ধারায় রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। আমরা ঘটনাস্থলে তাকে ছাড়া আর কাউকে খুঁজে পাইনি। ফলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস জন্মাল যে, গ্রেফতারকৃত যুবকই এই নৃশংস হত্যাকান্ডের মূল নায়ক। তাই বিচারের জন্য তাকে আপনার দরবারে উপস্থিত করেছি।

পুলিশ প্রধানের বক্তব্য শেষ হওয়ার পর হযরত আলী (রা. কিছুক্ষণ কি যেন ভাবলেন। তারপর গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বললেন-

: তুমি কি এই ব্যক্তিকে হত্যা করেছ?

: হ্যাঁ, আমি এই ব্যক্তিকে হত্যা করেছি। অকুণ্ঠচিত্তে যুবক উত্তর দিল ।

এতটুকু বলেই যুবক থেমে গেল। আর একটি কথাও তার মুখ থেকে বের হল না। কেন হত্যা করেছে, কিভাবে হত্যা করেছে ইত্যাদি জানার জন্য বারবার আপ্রাণ চেষ্টা করা হল । কিন্তু কোন ফল হল না ৷ কি এক অজ্ঞাত কারণে যুবকটি সম্পূর্ণ নিরবতা অবলম্বন করল ।

আমীরুল মুমেনীন হযরত আলী (রা.) হত্যার ব্যাপারে হত্যাকারীর স্বীকারোক্তি পেলেন। পেলেন বাহ্যিক প্রমাণাদিও। সুতরাং কেন বা কিভাবে হত্যা করেছে তা না জেনেও শরিয়তের ফায়সালা শুনিয়ে দেয়ার জন্য তার সামনে অন্য কোন বাধা ছিল না। তাই তিনি সকলের সামনে ফায়সালা শুনিয়ে দিলেন । বললেন-

হত্যার পরিবর্তে হত্যাই হল এই যুবকের শাস্তি। আসর পর্যন্ত তাকে কয়েদখানায় আটকে রেখে নামাযের পর সকল মানুষের সামনে তাকে কতল করা হবে।

যুবককে কয়েদ খানায় নেয়ার জন্য পুলিশের লোকজন উদ্যত হল । ঠিক এমন সময় উপস্থিত লোকদের ভীড় ঠেলে এক ব্যক্তি সামনে এগিয়ে এল। সে পুলিশের লোকদের থেমে যাওয়ার বিনীত অনুরোধ জানাল । তারপর হযরত আলী (রা.) কে লক্ষ্য করে বলল-

আমীরুল মুমেনীন! এ যুবক নিহত ব্যক্তির হত্যাকারী নয়। সে সম্পূর্ণ নির্দোষ। তার কোন অপরাধ নেই। সকল অপরাধ আমার ।

আমি এ নৃশংস হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী। আমিই প্রকৃত আসামী। আমিই তার হত্যাকারী। লোকটি এক শ্বাসে দ্রুত কথাগুলো বলে শেষ করল ।

হঠাৎ আগুন্তুকের মুখে এরূপ কথা শুনে সকলেই বিস্ময়ে হতবাক। ঘটনার আকস্মিতায় মনের অজান্তেই সকলে তাকবীর ধ্বনি দিয়ে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে তুলল । বিস্ফারিত নয়নে তাকিয়ে রইল আগুন্তুকের প্রতি । ভাবল, আমরা সবাই দিবা স্বপ্ন দেখছি না তো?

ক্ষণকাল পর। আমীরুল মুমেনীন আগুন্তুক লোকটিকে কাছে ডাকলেন। বললেন, তোমার দাবীতে আমরা সবাই আশ্চর্য বোধ করছি। এবার এর ব্যাখ্যা শুনাও দেখি ।

লোকটি বলল-

জনাব! আমি নিঃস্ব । অসহায়। নিতান্তই এক গরীব মানুষ। আজ দুই দিন যাবত ক্ষুধার যন্ত্রণায় পিষ্ঠ। ক্ষুধা নিবারণের মত সামান্য অর্থ-কড়িও আমার নিকট ছিল না। এমতাবস্থায় অভিশপ্ত শয়তান আমাকে অন্যায় কর্মে প্ররোচিত করল । বলল, সাত সকালে এই লোকটি কত উত্তম পোষাকে সজ্জিত হয়ে কোথাও যাচ্ছে। তার বেশ- ভূষা ও সাজ-সজ্জা দেখে অনুমান করা যায়, নিশ্চয় সে বড় কোন ব্যবসায়ী হবে। তার সঙ্গে অবশ্যই মূল্যবান অর্থ-সামগ্রী রয়েছে। যদি তুমি এ সুযোগে তাকে হত্যা করতে পার তবে কেউ জানতেও পারবে না যে, কে তার হত্যাকারী। অপর দিকে তুমি সহজেই তার টাকা- পয়সা হাতিয়ে নিতে পারবে। এতে তোমার ক্ষুধার জ্বালাতো নিবারণ হবেই, ভবিষ্যতেও বেশ কিছুদিন আরাম-আয়েশের জিন্দেগী যাপন করতে পারবে ।

আমীরুল মুমেনীন! ক্ষুধার যন্ত্রণায় অতিষ্ট হওয়ার কারণে আমি ভাল-মন্দ পার্থক্য করার জ্ঞানটুকু পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছিলাম । ফলে শয়তানের প্ররোচনায় ধন-সম্পদ লাভের এক প্রবল উন্মত্ততা আমাকে পেয়ে বসল । পর্বত পরিমাণ লোভ-লালসা চতুর্দিক থেকে ঘিরে ধরল। ভবিষ্যতে আয়েশী জিন্দেগীর সোনালী স্বপ্ন পাগল করে তুলল । দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে খঞ্জর কোষমুক্ত করে লোকটির অপেক্ষায় ক্ষণকাল দাঁড়িয়ে রইলাম । যখন সে আমার নিকটবর্তী নির্জন স্থানটিতে এল তখনি কালবিলম্ব না করে আমি তার উপর অতর্কিত হামলা করে বসি। খঞ্জরের আঘাতে তাকে হত্যা করে ফেলি ।

এরপর যেই টাকা-পয়সা তালাশ করার জন্য তার পকেটে হাত দেয়ার ইরাদা করি, অমনি দূ থেকে পুলিশের আওয়াজ শুনতে পাই । ফলে গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে টাকা-পয়সার লোভ-লালসা পরিত্যাগ করে সেখান থেকে খুব দ্রুত সরে পড়ি ।

আশে পাশেই লুকিয়ে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছিলাম আমি । দেখলাম, পুলিশের লোকেরা ঘটনাস্থলে পৌছে এই ব্যক্তিকে ছুরি হাতে পেয়ে গ্রেফতার করে নিয়ে এল। এবার আমি মানুষের সাথে চিৎকার করতে করতে আড়াল থেকে বেরিয়ে এলাম। তারপর সকলের সাথে এমনভাবে মিশে গেলাম যে, নিহত ব্যক্তির প্রকৃত হত্যাকারী যে আমিই, একথা বুঝার কোন উপায় রইল না ।

জনতার ভীড়ে মিশে গিয়ে সবকিছুই আমি অবলোকন করছিলাম ৷ যখন দেখলাম, সুঠাম দেহের অধিকারী অল্প বয়স্ক সুন্দর-সুশ্রী যুবককে বিনা অপরাধে কিসাসের ফায়সালা শুনানো হল তখন আমার চৈতন্য ফিরে এল । বিবেকের দংশন বারবার আমার হৃদয়াকাশকে ক্ষত-বিক্ষত করতে লাগল । ভাবলাম, আমি তো এখন দু’ব্যক্তির হত্যাকারী সাব্যস্ত হলাম। একদিকে নিজের হাতে একজন লোককে হত্যা করলাম, আবার অন্য দিকে আমারই কারণে আরেকজন নিরপরাধ লোকের জীবন প্রদীপ চিরকালের জন্য স্তব্দ হয়ে যাচ্ছে।

জনাব! এ কথাগুলো ভাবতেই আমার সমস্ত মানব সত্তাগুলো একত্রে জাগ্রত হয়ে উঠল। হাশরের ময়দানে আহকামুল হাকেমীন আল্লাহর সামনে কি জবাব দিব, এই চিন্তা আমাকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলল। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলাম, আখেরাতের যন্ত্রণাদায়ক মর্মন্তুদ শাস্তির তুলনায় দুনিয়ার শাস্তি যেহেতু কিছুই নয়, সেহেতু প্রকৃত সত্য আমি আপনার নিকট বলে দিবই ।

এ সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়নের জন্যই আমি আপনার দরবারে হাজির হয়েছি । হত্যার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন করে দিয়েছি। আসল হত্যাকারী আমিই। এ ব্যক্তি সম্পূর্ণ নির্দোষ । সুতরাং আমার বিচার করুন ।

লোকটির কথা শুনে সকলের মনেই একটি প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিল । তারা মনে মনে বলতে লাগল, এ ব্যক্তিই যদি প্রকৃত হত্যাকারী হয়, তাহলে গ্রেফতারকৃত যুবক কেন খলীফার নিকট হত্যার ব্যাপারে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিল? এরূপ করার কারণ কি? কি রহস্য এতে লুকায়িত আছে?

খলীফার মনেও একই প্রশ্ন তোলপাড় করছে। তিনি বিষয়টি পরিস্কার রূপে অনুধাবন করার জন্য গ্রেফতারকৃত যুবককে সম্বোধন করে বললেন-

: এ লোকটি যা কিছু বলল, তা কি ঠিক? তুমি কি নিহত ব্যক্তির হত্যাকারী নও?

: হ্যাঁ, তার কথা সম্পূর্ণ ঠিক। আমি প্রকৃত হত্যাকারী নই ।

: তাহলে কেন তুমি মিথ্যার উপর স্বীকারোক্তি দিলে? কেন তুমি হত্যার কথা ইতিপূর্বে স্বীকার করলে?

: জনাব! নিশ্চয় এর কারণ আছে। : কি কারণ, খুলে বল ।

: আমীরুল মুমেনীন! আমি একজন কসাই । আজ খুব ভোরে একটি গরু জবাই করে আমি ছুরি দিয়ে চামড়া ছিলছিলাম। এমন সময় আমার ইস্তেঞ্জার হাজত হলে আমি ছুরিসহ পার্শ্ববর্তী নির্জন স্থানে চলে যাই ৷ হাজত সেরে আমি দোকানের দিকে যাওয়ার জন্য ফিরে দাঁড়াতেই দেখি সামনে একটি তরতাজা লাশ রক্তে গড়াগড়ি খাচ্ছে। ফিনকি দিয়ে রক্ত প্রবাহ চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। এ অপ্রত্যাশিত দৃশ্য দেখে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। সবকিছু ভুলে আমি ছুরি হাতেই ঐ লাশের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। তখন আমার হাতের ছুরিখানা ছিল রক্তে রঞ্জিত । কোন লোকজনও সেখানে তখন উপস্থিত ছিল না। ইতিমধ্যে সেখানে পুলিশ এসে উপস্থিত হল। তখনও আমার হতভম্ব অবস্থা দূর হয়নি। আমি অপলক নেত্রে লাশের দিকে চেয়েই আছি। আমি তখনই সম্বিত ফিরে পেলাম, যখন আমাকে গ্রেফতার করা হল এবং লোকজন বলতে লাগল যে, এ ব্যক্তিই তাকে হত্যা করেছে ।

আমার হাতে রক্তমাখা ছুরি। পাশেই রক্তাক্ত লাশ। অন্য কেউ এখানে উপস্থিত নেই । এমতাবস্থায় আমার মনে এ ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গেল যে, আমি আর বাঁচতে পারব না। কেননা এ পরিস্থিতিতে আমি নিজের জন্য যতই সাফাই গাই না কেন, কেউ তা বিশ্বাস করবে না । সকলেই আমাকে মিথ্যাবাদী বলে ধিক্কার দিবে। বলবে, দেখ না, বেচারার সাহস কত? রক্তে রঞ্জিত ছুরিসহ লাশের পাশে হাতে-নাতে ধরা পড়ার পরও হত্যার কথা অস্বীকার করছে। এ এক জঘন্য লোক । তাকে ডবল শাস্তি দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হোক ।

আমীরুল মুমেনীন! যখন আমি বুঝলাম, একমাত্র মহান আল্লাহর কুদরত ছাড়া আমার বাঁচার কোন উপায় নেই, আমার কথা একটি শিশু বাচ্চাও বিশ্বাস করবে না, তখন আমি মিথ্যাই স্বীকার করে নিয়ে আল্লাহর আশ্রয়, দয়া ও সাহায্যের অপেক্ষায় প্রতিটি মুহূর্ত অতিবাহিত করছি। আমার বিশ্বাস ছিল, আমি যেহেতু প্রকৃতপক্ষে নির্দোষ, সেহেতু আল্লাহ তাআলা যে কোন উপায়ে আমাকে রক্ষা করবেন। আর যদি দুনিয়ার বিচার থেকে নিস্কৃতি নাও পাই, তথাপি পরকালীন জীবনে আল্লাহ তাআলা আমাকে এর উত্তম বদলা প্রদান করবেনই ।

যুবকের বক্তব্য শ্রবণ করে উপস্থিত সকলের সামনে মূল ঘটনার রহস্য উদঘাটিত হল । সকলেই বিষয়টি বুঝতে পারল । এবার বিচারের পালা ।

আমীরুল মুমেনীন হযরত আলী (রা.) বিষয়টি নিয়ে খানিক চিন্তা করলেন । তারপর স্বীয় পুত্র হযরত হাসান (রা.) এর নিকট এ ব্যাপারে তার মতামত জিজ্ঞাসা করলেন। হযরত হাসান (রা.) সামান্য চিন্তা- ফিকির করে বললেন-

আমীরুল মুমেনীন! দ্বিতীয় ব্যক্তি যদিও এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে কিন্তু হত্যার কথা স্বীকার করে সে এমন এক ব্যক্তির জীবন রক্ষা করেছে যার ব্যাপারে আপনি কেসাসের ফায়সালা করে ফেলেছিলেন। আর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন-

যে ব্যক্তি একটি সত্ত্বাকে জীবিত করল, সে যেন সকল মানুষকে জীবন দান করল। (সূরা মায়েদাহ : ৩২) সুতরাং এ ব্যাপারে আমার অভিমত হল, উভয়কে মুক্তি দেয়া হোক।

হযরত আলী (রা.) আপন ছেলের যুক্তিসংগত মতামত শুনে নিজেও এই মতের সাথে ঐক্যমত পোষণ করলেন এবং উভয়কে মুক্তি দিলেন। সাথে সাথে বাইতুল মাল তথা সরকারী কোষাগার থেকে নিহত ব্যক্তির রক্তপণও আদায় করলেন ।

প্রিয় পাঠক! আলোচ্য ঘটনা থেকে এ কথাটি পরিস্কার বুঝে আসে যে, মানুষ যখন মহান আল্লাহর নিকট নিজকে সমর্পণ করে দেয় এবং তাকেই একমাত্র মুক্তিদাতা বলে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে, তখন আল্লাহ তাআলা তার বিশ্বাস অনুযায়ী তাকে বিপদ থেকে মুক্ত করেন । উপরন্ত একথাটিও এখানে প্রণিধানযোগ্য যে, কোন ব্যক্তি যখন সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায় তখনই তার মুক্তির পথ সুগম হয় । ইতিহাসের সোনালী পাতায় অমর অক্ষয় হয়ে চিরকাল বেঁচে থাকে।

প্রকৃতপক্ষে গ্রেফতারকৃত যুবকের প্রশস্ত হৃদয় ও উদারতার প্রতি মুগ্ধ হয়েই আসল হত্যাকারী তার হত্যার কথা স্বীকার করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। জীবন বিলিয়ে দেয়ার মত তার সীমাহীন ত্যাগই প্রকৃত হত্যাকারীকে পূর্বে উল্লেখিত কথাগুলো চিন্তা করতে বাধ্য করেছিল । যদি এ যুবক নির্দ্বিধায় এরূপ ত্যাগ স্বীকার করার জন্য প্রস্তুত না হত তাহলে ঘটনা হয়ত অন্য দিকে মোড় নিত। তাকে জীবন দিতে হত ঠিকই। কিন্তু মূল হত্যাকারী ধরা ছোয়ার বাইরেই থেকে যেত । লোকজন হয়ত কোনদিন জানতেও পারত না যে, এই হত্যাকান্ডের মূল নায়ক কে? কেন, কিভাবে এই নৃশংস খুনে মদীনার জমীন রক্তাক্ত হয়েছিল । এ জন্যেই কথায় বলে “ভোগে নয়, ত্যাগেই মুক্তি ।” আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে কেবল ভোগ নয় ত্যাগের আদর্শও গ্রহণ করার তাওফীক দান করুন। দ্বীনের জন্য যে কোন কষ্ট অম্লান বদনে সহ্য করার মত হিম্মত ও মনোবল দান করুন। আমীন । -ইনসাফী আদালত

লেখক: মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম। লেখকের যে গল্প হৃদয় কাড়ে – হৃদয় গলে সিরিজ ৫ থেকে।

Please follow our Facebook, Twitter, Instagram, Linkedin, Pinterest, Tumblr, And Youtube channels for more updates.

Leave a Comment