রুচি দেখে লুচি দিন (Lifestyle Tips)

রুচি দেখে লুচি দিন বলতে লেখক লুচি খাদকের স্বাদের ভিন্নতা বুঝতে চান নি বরং লেখক মানুষের রুচি বোধ বুঝে আচরণতগত পার্থক্য বুঝতে চেয়েছেন। আপনি কিভাবে মানুষের রুচিবোধ বুঝে আচরণগত দক্ষতার মাধ্যমে তাদের মন ও মেজাজ জয় করতে পারবেন সম্মানিত লেখক নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জীবনের ঘটনাগুলি ও অন্যান্য উদাহরণের মাধ্যমে তা বর্ণনা করেছেন।

রুচি দেখে লুচি দিন (Lifestyle tips 17)

ছবি : লুচি। source: wikipedia

প্রকৃতিগতভাবেই কিছু বিষয়ে সব মানুষ একমত হয়ে থাকে। সবাই এগুলো ভালবাসে বা এগুলো পেলে খুশি হয়। আবার কিছু জিনিস এমন আছে যেগুলো অপছন্দ করার ব্যাপারে সবাই একমত। কেউ এগুলো পছন্দ করে না। আবার কিছু কিছু বিষয় এমন রয়েছে যেগুলোর ব্যাপারে মানুষের রুচিতে পার্থক্য দেখা যায়। কেউ কেউ তা পছন্দ করলেও অন্য কারো কারো কাছে তা বিরক্তিকর মনে হয়।

হাসিঝরা মুখ সবাই পছন্দ করে। মলিন বা রাশভারী চেহারা কেউ পছন্দ করে না। কিন্তু হাস্য রসিকতা? কেউ খুব পছন্দ করলেও অনেকের কাছে তা বিরক্তির কারণ বলে মনে হতে পারে। অনেক লোক এমন আছেন, যারা অন্যদের সাথে মিলেমিশে চলতে ভালবাসেন। আবার অনেক লোক আছেন আত্মকেন্দ্রিক। তারা একা থাকতে পছন্দ করেন। কেউ ভালবাসে আড্ডা, কথাবার্তা ও গল্প গুজবে ডুবে থাকতে আবার কেউ ভালবাসে নিজেকে নিয়েই মগ্ন থাকতে।

স্বভাবের এ ভিন্নতার কারণে প্রত্যেকেই সাধারণত এমন ব্যক্তির সঙ্গে চলতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করে, যার আচরণ তাঁর স্বভাবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। বস্তুতঃ মন ও রুচির মিল না হলে একসাথে শান্তিতে বসবাস করা যায় না।

কথিত আছে, জৈনিক ব্যক্তি একদিন একটি বাজপাখি ও একটি কাককে পাশাপাশি উড়তে দেখলো। পাখির রাজা বাজকে একটা কাকের সাথে উড়তে দেখে লোকটি বেশ অবাক হলো। সে মনে মনে ভাবল, এদের মধ্যে নিশ্চিয় কোনো বিষয়ে মিল আছে বলেই এরা একত্র হতে পেরেছে। সে পাখি দুটির প্রতি লক্ষ্য রাখতে লাগল। একসময় পাখি দুটি উড়তে উড়তে ক্লান্ত হয়ে মাটিতে নেমে এলো। লোকটি কাছে গিয়ে দেখলো, পাখি দুটি ল্যাঙড়া।

এজন্য প্রত্যেকের রুচি ও মেজাজ বুঝে আচরণ করা উচিৎ। মনে করুন, কারো পিতা নীরবতা ভালবাসেন, বেশি কথাবার্তা তাঁর ভাল লাগে না। তাহলে বাবার সঙ্গে কথা বলার সময় বিষয়টির প্রতি ছেলের খেয়াল রাখা উচিৎ। তাহলে বাবা সন্তুষ্ট হবেন। সে কাছে আসলে বাবা খুশি হবেন।

স্ত্রী যদি বুঝতে পারে, তাঁর স্বামী রসিকতা পছন্দ করেন তাহলে সে তাঁর সঙ্গে রসিকতা করতে পারে। নতুবা তা থেকে বিরত থাকবে। সহকর্মী, প্রতিবেশী তথা সবার ক্ষেত্রে রুচি ও স্বভাব বুঝে আচরণ করার এ কৌশল অবলম্বন করা দরকার। সব মানুষের স্বভাব ও রুচি, পছন্দ ও অপছন্দ এক নয়। মানুষের স্বভাব ও রুচির ভিন্নতার কোনো সীমারেখা নেই।

এক বৃদ্ধ ভদ্রমহিলার কথা আমি জানি। তিনি আমার এক বন্ধুর মা। ছেলেদের মধ্যে একজনকে তিনি খুব ভালবাসতেন। তাঁর খুব বেশি প্রশংসা করতেন।   এ ছেলে দেখা করতে আসলে বা তাঁর সাথে কথা বললে তিনি খুব খুশি হতেন। অন্য ছেলেরাও মায়ের সঙ্গে সদাচরণ করত। তবু বৃদ্ধা  তাঁর ঐ ছেলের প্রতি বেশি অনুরাগী ছিল।

আমি এর তাৎপর্য ও রহস্যটা উদঘাটন করতে উদ্যোগী হলাম। একদিন আমার বন্ধুটির কাছে এ সম্পর্কে জানতে চাইলাম। সে আমাকে বললো, “আসল কারণ হলো আমার ভাইয়েরা মায়ের রুচি ও মেজাজ বোঝে না। তাই তাদের উপস্থিতি মায়ের কাছে বিরক্তিকর ও ভারী মনে হয়।”

আমি একটু রসিকতা করে বললাম, ‘আচ্ছা! তাহলে আপনিই কি কেবল আপনার মায়ের রুচি ও মেজাজ বুঝতে পেরেছেন!’

সে হেসে বললো, হ্যাঁ। আমি এর রহস্যটা তোমাকে বলছি। আমার আম্মাও অন্যান্য বৃদ্ধাদের মত মেয়েলি বিষয়ে কথা বলতে ও শুনতে পছন্দ করেন। যেমন মনে করেন, আমাদের পাড়ার কোনো মেয়ের বিয়ে হলো? তাঁর স্বামী কেমন? অমুকের কয় সন্তান? তাদের মধ্যে বড় কে? তাদের প্রথম সন্তানের নাম কি? কার তালাক হলো? সে এখন কোথায় থাকে? এ জাতীয় আরও অনেক কথা যেগুলো আমরা অপ্রয়োজনীয় মনে করলেও আম্মা বারবার বলে ও শুনে আনন্দ পান। তাঁর কাছে এসব বিষয়ের সংবাদ ও তথ্য অনেক দামী। কারণ এগুলো তো আমরা বই পত্র, অডিও সিডি বা ইন্টারনেট কোথাও পাব না!

আমি মায়ের কাছে গেলে এসব প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলি। মা খুশি হয়ে আমার সঙ্গে এমনভাবে কথা বলেন যেন এসব তথ্য তিনিই প্রথম আমাকে সরবরাহ করছেন। গল্প করতে করতে মা খুশিতে আটখানা হয়ে যান। তাঁর মনের কথাগুলো আমার কাছে উজাড় করে দেন। আমিও একজন ভাল শ্রোতার অভিনয় করি। কিন্তু আমার ভাইয়েরা এসব মেয়েলি আলোচনা শুনতে বিব্রত বধ করে। তারা মায়ের সঙ্গে এমন সব বিষয় নিয়ে কথা বলতে যায় যা তাঁর ভাল লাগে না। তাই মা তাদের সাথে কথা বলতে পছন্দ করেন না। এ জন্য মা আমাকে পেলে খুশি হন। এটাই হলো গূঢ় রহস্য।’

আপনিও যদি কারো পছন্দ ও অপছন্দের বিষয়গুলো জেনে নিতে পারেন এবং তাঁর স্বভাব ও রুচিবোধ বুঝতে পারেন তাহলে আপনার জন্য তাঁর মন জয় করা একদম সহজ হয়ে যাবে। মানুষের সঙ্গে রাসূলের আচরণ নিয়ে কেউ চিন্তা করলে সহজেই বুঝতে পারবে, মহানবী (সাঃ) প্রত্যেকের রুচি ও প্রকৃতি জেনে তাঁর সঙ্গে সেভাবে আচরণ করতেন। এমনকি স্ত্রীগণের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রেও তা লক্ষ্য রাখতেন।

আয়েশা (রাঃ) একটু চপল স্বভাবের ছিলেন। এ জন্য রাসূল তাঁর সঙ্গে একটু বেশি রসিকতা করতেন। এক সফরে আয়েশা (রাঃ) রাসূলের সঙ্গে ছিলেন। ফেরার পথে কাফেলা যখন মদিনার কাছা-কাছি পৌঁছাল, রাসূল (সাঃ) অন্যান্য সাহাবীদের বললেন, ‘তোমরা আগে চলে যাও।’

রাসূলের আদেশে সবাই আগে চলে গেল। রাসূলের সাথে শুধু আয়েশা (রাঃ) থেকে গেলেন। তিনি ছিলেন অল্পবয়সী এক প্রাণচঞ্চল কিশোরী। রাসূল মজা করার জন্য বললেন, ‘আয়েশা! চলো, আমরা দৌঁড়ের প্রতিযোগিতায় নামি! আয়েশা (রাঃ) সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলেন। তিনি রাসূল (সাঃ) এর সঙ্গে দৌঁড়াতে শুরু করলেন। একপর্যায়ে তিনি রাসূলকে পেছনে ফেলে সামনে চলে গেলেন।

অনেক দিন পরের কথা। এক সফরে তিনি রাসূলের সঙ্গী হলেন। তখন আয়েশা (রাঃ) এর বয়স কিছু বেড়েছে। শরীরও যথেষ্ট ভারী হয়েছে। রাসূল (সাঃ) এবারও সঙ্গীদের বললেন, ‘তোমরা আগে চলে যাও।’

সবাই সামনে চলে গেল। রাসূল আয়েশাকে বললেন, ‘এসো, আজ আবার তোমার সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা হবে!’ সেদিনের মতো আজও আয়েশা দৌঁড়াল। কিন্তু আজ রাসূল (সাঃ) আয়েশাকে পেছনে ফেলে আগে চলে গেলেন। এরপর রসিকতা করে তাঁর দুই কাঁধের মাঝে হাত রেখে বললেন, ‘আয়েশা!’ এটা সেদিনের বিনিময়।’

অন্যদিকে খাদিজা (রাঃ) এর সঙ্গে রাসূলের আচরণ ছিল অন্যরকম। কারণ, বয়সে তিনি রাসূল (সাঃ)-এর চেয়ে পনেরো বছরের বড় ছিলেন।

সাহাবীদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রেও তিনি তাদের স্বভাবের প্রতি লক্ষ্য রাখতেন। তাই তিনি আবূ হোরায়ারা (রাঃ)-এর সঙ্গে সে আচরণ করেন নি যে আচরণ খালিদ (রাঃ) এর সঙ্গে করেছেন। আবূ বকর (রাঃ)এর সঙ্গে যেরূপ ব্যবহার করেছেন, তালহা (রাঃ) এর সঙ্গে সেরূপ ব্যবহার করেন নি। আর ওমর (রাঃ) এর সঙ্গে রাসূলের আচরণ ছিল একেবারে স্বতন্ত্র। তাকে এমন অনেক কাজে সমর্থন করতেন, যা অন্য কারো ক্ষেত্রে করতেন না। এমন অনেক কিছু তাঁর ওপর অপর্ণ করতেন, যা অন্য কারো ওপর অর্পন করতেন না।

রাসূল (সাঃ) সাহাবীদের নিয়ে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন। ইতোমধ্যে তিনি জানতে পারলেন, কোরাইশরাও অনেক লোকবল নিয়ে এগিয়ে আসছে। কিন্তু কোরাইশদের মধ্যে এমন কিছু লোকও আছে, যাদেরকে রণাঙ্গনে আসতে বাধ্য করা হয়েছে, মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই।

রাসূল (সাঃ) সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘আমি জানতে পেরেছি, বনু হাশেম ও অন্যান্য গোত্রের কিছু কিছু লোক অনিচ্ছা সত্ত্বেও রণাঙ্গনে আসতে বাধ্য হয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই। সুতরাং বনু হাশেমের কেউ তোমাদের সামনে পড়ে গেলে তাকে যেন হত্যা না করা হয়। আবূল বুখতারী বিন হিশামকে কেউ যদি দেখে তাহলে তাকে যেন হত্যা না করে। আব্বাস বিন আব্দুল মোত্তালিবকেও কেউ যেন হত্যা না করে। কেননা, সেও অনিচ্ছা সত্ত্বেও ময়দানে আসতে বাধ্য হয়েছে।’

আব্বাস (রাঃ) আগেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু তিনি যেন কোরাইশদের সঙ্গে থেকে তাদের বিভিন্ন কার্যক্রম ও সিদ্ধান্তসমূহ রাসূল (সাঃ) কে অবগত করাতে পারেন এ কারণে বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন। এ জন্য রাসূল (সাঃ) তাঁর ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি গোপন রাখতে চাচ্ছিলেন। আবার কোনো মুসলমান যেন তাকে হত্যা না করে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করলেন।

বদর যুদ্ধ ছিল মুসলমান ও কাফের কোরাইশদের মধ্যে সংঘটিত প্রথম যুদ্ধ। মুসলমানরা ছিল অপ্রস্তুত। দ্বীনের জন্য মুসলমানরা হাতিয়ার নিয়ে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে নিজের পিতা, পুত্র কিংবা কোনো আত্মীয়ের বিরুদ্ধে। এ চরম মুহূর্তে রাসূল বিশেষ কিছু লোককে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন।

আরও পড়ুন : ৩১৩ বদরী সাহাবীদের নাম

ওতবা বিন রাবিয়া ছিল কোরাইশদের অন্যতম নেতা ও বদর যুদ্ধে কাফের বাহিনীর অন্যতম সেনানায়ক। তাঁর পুত্র হোযায়ফা বিন ওতবা মুসলমান। আবু হোযায়ফা (রাঃ) হঠাৎ বলে ফেললেন, ‘আমরা আমাদের পিতা, পুত্র ও ভাইদেরকে হত্যা করব আর আব্বাসকে ছেড়ে দেব! আমার সামনে যদি সে পড়ে তাহলে তাকে আমি ছাড়ব না।

তাঁর একথাগুলো রাসূল (সাঃ) এর কানে গেল।

রাসূল (সাঃ) তাঁর দিকে তাকালেন। তাঁর চারপাশে তিনশত বীরযোদ্ধা। কিন্তু রাসূলের দৃষ্টি বিশেষভাবে ওমরের ওপর পড়ল। তিনি অন্য কারো দিকে না তাকিয়ে বললেন, ‘আবূ হাফস! আল্লাহর রাসূলের চাচার চেহারায় তরবারি দ্বারা আঘাত করা হবে?’

ওমর (রাঃ) বলেন, সেদিনই প্রথম রাসূল (রাঃ) আমাকে ‘আবূ হাফস’ উপনামে সম্বোধন করলেন।’

ওমর রাসূল (সাঃ)-এর ইঙ্গিত বুঝতে পারলেন। তিনি জানতেন, তারা এখন যুদ্ধের ময়দানে। সেনাপতির সিদ্ধান্তের বিরোধিতাকারীর সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে সামান্য শিথীলতারও কোনো সুযোগ নেই। সঙ্গে সঙ্গে ওমর একটি দৃঢ় সমাধানের পথ বেছে নিলেন। তিনি হুঙ্কার ছেড়ে বললেন, ‘আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে অনুমতি দিন, আমি তরবারি দিয়ে ওর মাথা উড়িয়ে দিই।’

রাসূল (সাঃ) ওমরকে নিষেধ করলেন। তিনি অনুভব করলেন, ওমরের এ হুঙ্কার পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য যথেষ্ট।

আবূ হুযায়ফা (রাঃ) ভাল মানুষ ছিল। পরবর্তীতে তিনি বলতেন, ‘সেদিন আমি যে কথা বলেছিলাম তাঁর কারণে আমি আজও নিজেকে নিরাপদ মনে করি না। আর আমি ততদিন ভীত সন্ত্রস্ত থাকব যতদিন না শাহদাত লাভের মাধ্যমে আমার এ অপরাধের কাফফারা হয়ে যায়।’ আল্লাহ তাআলা তাঁর আশংকা দূর করেছেন। তিনি ইয়ামামার যুদ্ধে শাহাদাতবরণ করেন।

এ হলেন ওমর। রাসূল ভালভাবেই জানতেন, কোনো ধরনের কাজের দায়িত্ব তাঁর ওপর অপর্ণ করতে হবে। বিষয়টি রাজস্ব আদায় করা, বিবাদমান দু’দলের মধ্যে মীমাংসা করা কিংবা কোনো অজ্ঞ ব্যক্তিকে শিক্ষা প্রদান করার মতো ছিল না; বরং এটি ছিল রণাঙ্গনের একটি কঠিন সিদ্ধান্তের বিষয়। এক্ষেত্রে প্রভাব ও দৃঢ়তার অধিকারী ব্যক্তির দরকার ছিল। এজন্য রাসূল ওমরকেই এ কাজের জন্য নির্বাচন করেছিলেন। পরামর্শ স্বরূপে তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলেন: “আবূ হাফস! আল্লাহর রাসূলের চাচার চেহারায় তরবারি দ্বারা আঘাত করা হবে?’

আরেকটি ঘটনা। রাসূল (সাঃ) খায়বারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। সামান্য প্রতিরোধের পর খায়বারের ইহুদিরা রাসূলের সঙ্গে সন্ধি করলো। রাসূল (সাঃ) খায়বারে প্রবেশ করলেন। রাসূল শর্ত দিলেন, ‘ইহুদিদের কেউ কোনো সহায়-সম্পদ, সোনা-রূপা, ধন-দৌলত লুকাতে পারবে না। সবকিছু উপস্থিত করতে হবে। এ ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) যে সিদ্ধান্ত দেবেন তা সবাই নির্দ্বাধায় মেনে নেবে। তবে কেউ যদি কিছু লুকিয়ে রাখে তাহলে মুসলমানগণ সন্ধিচুক্তি মানতে বাধ্য নয়।’

হুয়াই বিন আখতাব ছিল ইহুদিদের অন্যতম সরদার। নির্বাসিত হয়ে মদিনা থেকে খায়বারে আসার সময় সে ছাগলের চামড়া সেলাই করে থলে বানিয়ে তাতে স্বর্ণ রূপা ও অলঙ্কারাদি নিয়ে এসেছিল। এসব মাল রেখেই হুয়াই মারা যায়। কিন্তু ইহুদিরা সেগুলো লুকিয়ে রাখল। হুয়াই এর চাচাকে রাসূল (সাঃ) বললেন, ‘বনু নযীর থেকে হুয়াই যা নিয়ে এসেছিল, তা কোথায়?’

হুয়াই এর চাচা বললো, ‘যুদ্ধ ও পারিবারিক ব্যয়ের খাতে খরচ হয়ে গেছে।’ রাসূল (সাঃ) ভেবে দেখলেন, হুয়াই বিপুল পরিমাণে সম্পদ এনেছিল। আর সে তো মারা গেছে অল্প কিছুদিন আগে। ইহুদিরা মদিনা থেকে আসার পর খায়বারে কোনো যুদ্ধবিগ্রহও হয় নি। এতো বিশাল ধনভাণ্ডার এতো তাড়াতাড়ি শেষ হওয়ার কথা নয়।

রাসূল (সাঃ) তাকে বললেন, ‘তোমরা মদিনা থেকে এসেছ বেশি দিন হয়নি। আর সম্পদ তো সামান্য পরিমানে নয় যে এতো দ্রুত শেষ হয়ে যাবে।

হুয়াই এর চাচ জবাব দিল, ‘বিশ্বাস করুন, সব শেষ হয়ে গেছে। কিছুই নেই।’

রাসূল (সাঃ) স্পষ্ট বুঝে ফেললেন, লোকটি মিথ্যা বলছে। রাসূল সাহাবীদের দিকে তাকালেন। বহু সংখ্যক সাহাবী সেখানে উপস্থিত। সবাই তাঁর ইঙ্গিতের অপেক্ষায়। রাসূল (সাঃ) যুবাইর বিন আওয়ামকে নির্বাচন করলেন। বললেন, ‘যুবাইর! বেটা এমনিতে কিছু বলবে না, একটু শাস্তির প্রয়োজন। যুবাইর (রাঃ) সঙ্গে সঙ্গে তাঁর দিকে রুদ্র মূর্তি ধারণ করে এগিয়ে গেলেন।

যুবাইরের ভয়াঙ্ক রূপ দেখে ইহুদি ভয়ে কাঁপতে লাগল। সে বুঝতে পারল, সত্য না বলে উপায় নেই। অনন্যোপায় হয়ে সে বললো, ‘হুয়াইকে প্রায়ই দেখতাম, ঐ ধ্বংসস্তুপের কাছে আসা যাওয়া করত।’ সাহাবীরা সেখানে তল্লাশি চালালেন। অবশেষে বেরিয়ে এলো হুয়াই এর গুপ্তধন। রাসূল (সাঃ) যুবাইর (রাঃ)-কে এমন ক্ষেত্রেই ব্যবহার করতেন। ধনুক তাঁর হাতেই সাজে যে  এর সঠিক ব্যবহার জানে।

সাহাবায়ে কিরামও পারস্পরিক আচরণের ক্ষেত্রে এ নীতিরই অনুসরণ করে চলতেন।

রাসূল (সাঃ) তখন মৃত্যশয্যায় শায়িত। রোগযন্ত্রণায় নামাযের ইমামত করতে পারছেন্ না। এ অবস্থায় তিনি সাহাবীদের বললেন, ‘তোমরা আবূ বকরকে নামাযের ইমামত করতে বল।’

আবূ বকর (রাঃ) তো ছিলেন অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের মানুষ, তাছাড়া তিনি দুনিয়া ও আখেরাতে রাসূল (সাঃ)-এর একনি ‘সঙ্গী, নবুওয়ত পূর্ব  ও পরবর্তী উভয় যুগের পরম বন্ধু, নবী-পত্মী আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) এর পিতা। তাই রাসূলের রোগ যন্ত্রণা আবূ বকর সিদ্দীকের জন্য ছিল পাহাড়ের চেয়ে ভারী।  

রাসূল যখন আবূ বকর (রাঃ)-কে ইমামত করার নির্দেশ পাঠালেন, তখন উপস্থিত সাহাবীদের কেউ কেউ বললেন, আবূ বকর তো কোমল স্বভাবের মানুষ। তিনি আপনার স্থানে দাঁড়ালে বিশেষ করে বর্তমান অবস্থায় আবেগ ও কান্নার ভারে নামায পড়াতে পারবেন না।’

কিন্তু রাসূল (সাঃ) এ আদেশের মাধ্যমে এ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করতে যাচ্ছিলেন যে, তাঁর ইন্তেকালের পর খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করার অধিক উপযুক্ত ব্যক্তি কে? রাসূল (সাঃ) তাই আদেশ করলেন, ‘তোমরা আবূ বকরকে নামাযের ইমামত করতে বল।’ অবশেষে আবু বকর নামায পড়ালেন। স্বভাবগত কোমলতা থাকা সত্ত্বেও তিনি সঠিকভাবেই আপন দায়িত্ব পালন করলেন।

কোমল স্বভাবের হলেও আবূ বকর (রাঃ)-এর ব্যক্তিত্ব যথেষ্ট প্রভাবশালী ছিল। তাঁর কোমল স্বভাবের ভেতরে সময়মতো গর্জে ওঠার বিশেষ গুণ সুপ্ত ছিল। তাঁর সারা জীবনের সহযাত্রী ওমর (রাঃ) বিষয়টি বহুবার খেয়াল করেছেন।

ইতিহাসের পাতায় একটু নজর দিয়ে দেখুন। রাসূল (সাঃ) এর ইন্তেকালের পর মুহাজির ও আনসার সাহাবীগণ বনু সাঈদার আঙিনায় সমবেত হয়েছেন। এখন মুসলিম জাহানের খলিফা কে হবে তা নির্ধারণ করা হবে। ওমর রাযি আবূ বকর (রাঃ)-সহ সেখানে হাজির হলেন। ওমর (রাঃ) বলেন, আমরা বনু সাইদার প্রাঙ্গনে উপস্থিত হই। সেখানে গিয়ে দেখি একজন আনসারী সাহাবী বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি বললেন, ‘আমরা আল্লাহ তাআলার (দ্বীনের) সাহায্যকারী দল ও ইসলামের অগ্রসেনা। আমাদের মুহাজির ভাইয়েরা! আপনারা হলেন আমাদের সাহায্যকারী দল। আপনাদের কেউ কেউ আমাদের শেকড় উপড়ে ফেলতে চায় এবং খেলাফতের দায়িত্ব ছিনিয়ে নিতে চায়।’

সে তাঁর বক্তব্য শেষ করলে আমি কিছু বলতে চাইলাম। আমি মনে মনে সময়োপযোগী কিছু কথা সাজিয়ে নিলাম। বলার আগে আবূ বকরের মনোভাব বুঝতে চেষ্টা করলাম। তবে আমি তাকে কিছুটা উত্তেজিত ও ক্ষুদ্ধ দেখতে পেলাম। আবূ বকর আমার মনোভাব বুঝতে পেরে আমাকে বললেন, ‘ওমর! একটু থাম।’ আমি থেমে গেলাম। আমি তাকে আর উত্তেজিত করলাম না। এরপর তিনি বক্তব্য রাখলেন। নিঃসন্দেহে তিনি আমার চেয়ে জ্ঞানী ও প্রভাপশালী ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। আমি অনেক ভেবে-চিন্তে যে কথাগুলো বলার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, তিনি সে কথাগুলো বললেন। কিংবা তাঁর চেয়েও উত্তম ও অধিক প্রভাব সৃষ্টিকারী কথা বলে থামলেন।

আবূ বকর (রাঃ) তাঁর বক্তব্য বললেন, ‘হে আনসারী ভাইয়েরা! আপনারা আপনাদের যেসব গুণাবলি ও ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছেন, নিঃসন্দেহে আপনারা তাঁর যোগ্য। তবে আরবরা জানে যে, নেতৃত্বের গুণ কোরাইশদের মাঝেই আছে। তাছাড়া আরবদের গোত্রসমূহের মধ্যে বংশের বিবেচনায় কোরাইশরা সবচেয়ে কুলিন এবং তাদের আবাসস্থল আরবের কেন্দ্রভূমিতে। আমি তাদের মধ্যে থেকে দুজন ব্যক্তিকে পেশ করছি। আপনারা তাদের যে কারো হাতে বায়াত গ্রহণ করে নিন।’

তিনি তখন আমার ও আবূ ওবায়দা ইবনুল জাররার মাঝেখানে বসা ছিলেন। কথা শেষ করেই তিনি আমাদের হাত তুলে ধরলেন। আবূ বকর (রাঃ)-এর বক্তব্যের শেষের এ কথাটি ছাড়া সবই আমার ভাল লেগেছিল। আবূ বকর (রাঃ) জীবিত থাকা অবস্থায় খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করার চেয়ে মরে যাওয়া আমার কাছে বেশি প্রিয়।

আবূ বকরের প্রস্তাবনার পর পুরো বৈঠকে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করলো। এর মধ্যে নীরবতা ভেঙ্গে জনৈক আনসারী সাহাবী দাঁড়িয়ে বললেন, ‘আমি ভারসাম্যপূর্ণ একটি মত পেশ করছি এবং এর পেছনে আমার প্রভাবশালী গোত্র রয়েছে, যারা একে সমর্থন করে। হে কোরাইশ সম্প্রদায়! আমাদের মধ্যে হতে একজন নেতা নির্ধারিত হোক আর তোমাদের মধ্য হতে একজন নেতা নির্বাচিত হোক!’

ওমর বলেন, তাঁর এ প্রস্তাবের পর চারদিকে এত বেশি কোলাহল ও চেঁচামেচি শুরু হলো যে, আমি মুসলমানদের ঐক্য ও সংহতি বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করলাম। তাই আমি তাড়াতাড়ি বললাম, ‘আবূ বকর! আপনি হাত বাড়িয়ে দিন। তিনি হাত বাড়িয়ে দিলেন। সর্বপ্রথম আমি তাঁর হাতে বায়াত গ্রহণ করলাম। এরপর মুহাজিরগণ বায়াত গ্রহণ করলেন। তারপর আনসারগণও একে একে তাঁর হাতে বায়াত গ্রহণ করলো।

মোটকথা, প্রত্যেক মানুষের হৃদয়ের দরজা খোলার একটি চাবি আছে। সে চাবি দিয়ে আপনি তার হৃদয়ে প্রবেশ করে তাঁর ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন। তুমিও বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ বিষয়টি লক্ষ্য করে থাকবে। তুমি নিশ্চয় অনেক সময় তোমার সহকর্মীকে বলতে শুনে থাকবে, ‘আরে! স্যারকে বশ করার ‘চাবি’ হলো অমুক। দরকার হলে তাঁর মাধ্যমেই স্যারকে বশে আনবে। সে স্যারকে ম্যানেজ করতে পারবে।’

আপনি কোনো আচরণ কৌশলের চাবি দিয়ে মানুষের হৃদয়রাজ্য জয় করেছেন না? কারো লেজুড়বৃত্তি না করে শীর্ষস্থান দখল করুন। আপনি হবেন অনন্য, আপনি হবেন স্বতন্ত্র। আপনার মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান প্রত্যেকের হৃদয়ের চাবি খুঁজে বের করুন। কর্মক্ষেত্রেও আপনার উর্দ্ধতন কর্মকর্তার ও অফিস কলিগদের হৃদয়রাজ্যে প্রবেশের চাবিটি খুঁজে বের করুন।

কারো হৃদয় জয়ের চাবিটি খুঁজে পেলে তাকে সঠিক ও কার্যকরী পন্থায় উপদেশ দিতে পারবেন।  আর সেও নির্দ্বিধায় তা গ্রহণ করবে। কারণ নিজের ভুলের উপলব্ধি ও অন্যের মাধ্যমে নিজেকে সংশোধন করার ক্ষেত্রে সবার রুচি ও মেজাজ একরকম নয়।

রাসূলের জীবনচরিত দেখুন। রাসূল (সাঃ) একদিন সাহাবীদেরকে সম্বোধন করে কথা বলছিলেন। হঠাৎ অপরিচিত এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করলো। সে মজলিসে বসার পরিবর্তে এদিক-ওদিক তাকাতে লাগল। এরপর সোজা মসজিদের এক কোণায় চলে গেল এবং লুঙ্গি উঠাতে লাগল!

সবাই চমকে উঠল। মসজিদের ভেতরে লোকটা কী করবে?

সবাই অবাক হয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে রইল। লোকটা লুঙ্গির অগ্রভাগ উচু করে নিশ্চিন্তে বসে মসজিদে পেশাব করে দিল! তাঁর এ কাণ্ড দেখে সাহাবায়ে কিরাম ক্রোধে ফেটে পড়লেন। কেউ কেউ তাঁর দিকে দৌঁড়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু রাসূল সবাইকে শান্ত করলেন। সবাইকে বললেন, ‘তাকে বাঁধা দিয়ো না! তাকে তাঁর কাজ শেষ করতে দাও!’

সাহাবায়ে কিরাম লোকটির দিকে তাকিয়ে রইলেন। আর লোকটি নিশ্চিন্তে পেশাব করে গেল। সাহাবীদের এসব প্রতিক্রিয়ার কিছুই হয়তো তাঁর কর্ণগোচর হয়নি।

মসজিদে পেশাব করার মতো স্পর্শকাতর ও বিব্রতকর দৃশ্য রাসূল (সাঃ) চুপ করে দেখেছেন। আর সাহাবীদের শান্ত করছেন! আহ! কি চমৎকার ধৈর্যের উদাহরণ! সহনশীলতার কী উত্তম নমুনা!

বেদুঈন লোকটি পেশাব শেষ করলো। এরপর ধীরে সুস্থে লুঙ্গি ঠিক করলো। রাসূল (সাঃ) তাকে কোমল স্বরে ডেকে কাছে এনে বসালেন। এরপর খুব নরম স্বরে বললেন, ‘মসজিদ এ জাতীয় কাজের জন্য তৈরি করা হয় না। মসজিদ তো শুধু নামায ও কুরআন তিলাওয়াতের জন্য।’

একদম সংক্ষিপ্ত নসিহত করলেন। লোকটি রাসূলের কথা বুঝল। এরপর চলে গেল। নামাযের সময় হলে লোকটি সবার সঙ্গে জামাতে শরীক হলো। রাসূল (সাঃ) নামায পড়ালেন। নামাযের মধ্যে রুকু থেকে ওঠার সময় রাসূল (সাঃ) ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ (যে আল্লাহর প্রশংসা করে আল্লাহ তা শোনে) পড়লেন।

মুকতাদীগণ বললো, ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ (হে আমাদের প্রতিপালক! সকল প্রশংসা আপনার জন্যই।’ কিন্তু সে বেদুইন সাহাবী এর সঙ্গে আরো যোগ করলো, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রতি ও মুহাম্মদের প্রতি দয়া করুন। আপনি আমাদের সঙ্গে আর কাউকে দয়া করবেন না!’

রাসূল (সাঃ)-এর কানে তাঁর এ বাক্য পৌঁছাল। নামায শেষ করে তিনি সাহাবীর দিকে ইশারা করলো। রাসূল (সাঃ) তাকে কাছে ডাকলেন। রাসূলের কোমল আচরণ তাঁর হৃদয়ে রাসূলের প্রতি এমন ভালবাসা সৃষ্টি করেছিল যে, সে দোয়া করছিল, আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া যেন কেবল সে এবং আল্লাহর রাসূল (সাঃ) লাভ করেন। অন্য কেউ যেন তা না পায়। পাছে আবার তাদের ভাগে কম পেড়ে যায়। রাসূল (সাঃ) তাকে শিক্ষা দেয়ার জন্য বললেন, ‘তুমি তো একটি বিস্তৃত বিষয়কে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছ।’ অর্থাৎ আল্লাহর তাআলার রহমত তো সবাইকে পরিবেষ্টন করে আছে আর সেটাকে তুমি আমার ও তোমার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছ। এমন আর কখনো কর না।

দেখুন, আল্লাহর রাসূল কীভাবে কোমল আচরণের মাধ্যমে লোকটির হৃদয় জয় করে ফেললেন। তিনি জানতেন, একজন বেদুঈনের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হবে। গ্রাম থেকে আসা এক সাদা-সিধে বেদুঈনের জ্ঞানের পরিধি তো আবূ বকর, ওমর কিংবা মুআয ও আম্মারের মতো নয়। তাই তাকে অন্যদের মতো জবাবদিহিতার সম্মুখীন করা যাবে না।

আপনি চাইলে মুয়াবিয়া বিন হাকাম এর ঘটনা থেকেও শিক্ষা নিতে পারেন। তিনি ছিলেন সাধারণ সাহাবী। তিনি মদিনায় থাকতেন না বিধায় রাসূলের সার্বক্ষণিক সাহচর্যও লাভ করেন নি। তাঁর কিছু বকরি ছিল। বকরি চরানোর স্বার্থে সবুজ ঘাসের খোঁজে তিনি বিশাল মরুতে ঘুরে বেড়াতেন।

একদিন তিনি মদিনার মসজিদে উপস্থিত হলেন। রাসূল (সাঃ) সাহাবীদের সঙ্গে হাঁচি দেয়ার বিধান সম্পর্কে আলোচনা করছেন। রাসূল (সাঃ) সাহাবীদেরকে শেখালেন, ‘কোনো মুসলমান হাঁচি দিলে সে ‘আলমহাদুলিল্লাহ’ বলবে। আর যে তা শুনবে সে উত্তরে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলবে।’

মুয়াবিয়া বিষয়টি মুখস্থ করে নিজ কাজে চলে গেলেন। কিছুদিন পর তিনি কোনো এক প্রয়োজনে আবার মদিনায় এলেন। মসজিদে নববীতে প্রবেশ করে দেখলেন, রাসূল (সাঃ) সাহাবীদেরকে নিয়ে নামায  পড়ছেন। তিনিও নামাযে শরিক হলেন। নামাযের মধ্যে মুসল্লীদের কেউ একজন হাঁচি দিল। সঙ্গে সঙ্গে মুয়াবিয়ার মনে পড়ল, তিনি আল্লাহর রাসূলের কাছে শিখেছিলেন, মুসলমানের হাঁচির জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলতে হয়। হাঁচিদাতা ‘আলহামদুলিল্লাহ’ না বলতেই মুয়াবিয়া সজোরে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলে উঠল!

মুসল্লীরা চমকে উঠল। অনেকে বিরক্তিভাব নিয়ে আড়চোখে তাঁর দিকে তাকাল। সকলের বিরক্তিভাবে লক্ষ্য করে তিনি আর স্থির থাকতে পারলেন না। তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘তোমাদের কী হলো? তোমরা আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছ কেন?

 মুসল্লীদের কেউ কেউ উরুর উপর হাত মেরে শব্দ করে থাকে চুপ থাকার জন্য ইঙ্গিত করলো। ইঙ্গিত বুঝে মুয়াবিয়া চুপ করলেন।  নামাজ শেষে রাসুল (সাঃ) মুসল্লীদের দিকে ফিরলেন। মুসল্লিদের শোরগোল ও একজনের কথা আওয়াজ রাসূলের কানে পৌঁছে ছিল। কিন্তু এ নতুন কণ্ঠের সঙ্গে রাসূল (সাঃ) আগ থেকে পরিচিত ছিলেন না। তাই তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘নামাজের মধ্যে কে কথা বলল? ‘

সবাই মুয়াবিয়া (রাঃ) এর দিকে ইঙ্গিত করলো। রাসূল তাকে কাছে ডাকলেন।  তিনি ভয়ে ভয়ে  এগিয়ে গেলেন। তিনি সবার নামাজে বিঘ্ন ঘটিয়েছে।  নামাজের একাগ্রতা বাধা সৃষ্টি করেছে।  রাসুল এখন তাকে কী বলবেন। এ ভয়ে সে অস্থির। 

কিন্তু রাসুল (সাঃ) তাকে এমন ভাবে বুঝিয়ে দিলেন যে, তিনি বলতে বাধ্য হলেন যে, ‘আমার পিতা-মাতা আল্লাহর রাসূলের জন্য কুরবান হোক! আল্লাহর কসম! আমি জীবনে আগে বা পরে রাসুল (সাঃ) এর চেয়ে শ্রে ও কোমল প্রাণের কোন শিক্ষক দেখি নি। আল্লাহর কসম তিনি আমাকে প্রহার করেননি, ভর্ৎসনাও  করেননি এমনকি তিরস্কারও করেনি।’

রাসুল শুধু বলেছেন’ মুয়াবিয়া! নামাজের মধ্যে কথা বলা যায় না। নামাজের শুধু কেবল তাসবিহ, তাকবীর ও কোরআন তেলাওয়াত করতে হয়।’ শুধু এতোটুকুই বললেন। কত সংক্ষিপ্ত অথচ মোক্ষম উপদেশ। 

মুয়াবিয়া (রাঃ) বিষয়টি বুঝতে পারলেন। রাসূলের এতটুকু কথায় তার মন স্থির হয়ে গেল। রাসূলের উদারতায় সে গলে গেল। রাসূলের প্রতি সে দুর্বল হয়ে পড়লো। তিনি রাসূলকে নিজের ব্যক্তিগত বিভিন্ন প্রশ্ন করতে লাগলেন। 

তিনি বললেন, ‘আল্লাহর রাসূল! কিছুদিন আগেও আমরা মুর্খতার অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিলাম। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ইসলামের আলোতে আলোকিত করেছেন।  আমাদের মধ্যে অনেকে জ্যোতিষীর কাছে যায়। তারা তাদের কাছে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে চায়।’

রাসূল (সাঃ) বললেন, ‘তুমি তাদের কাছে যেয়ো না।’

তুমি একজন মুসলমান আর মুসলমান মাত্রই এ কথা বিশ্বাস করে যে, ভবিষ্যতের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। তাই তাদের কাছে যাওয়া তোমার জন্য সমীচীন নয়। এরপর মুয়াবিয়া বললেন, ‘আমাদের মধ্যে অনেকে শুভ-অশুভ লক্ষণে বিশ্বাস্ব করে।’ বিভিন্ন লক্ষণ দেখে শুভ অশুভ নির্ণয় করে।

রাসূল (সাঃ) বললেন, ‘এ জাতীয় নির্ণয় ও ফল গণনা কল্পনাবিলাস ছাড়া আর কিছু নয়। বাস্তবে এর কোনো প্রভাব কিংবা ক্ষমতা নেই।’

লাভ-ক্ষতির ক্ষেত্রে এগুলোর কোনো ভূমিকা নেই। এগুলো কারো কোনো লাভ বা ক্ষতি করতে পারে না। লাভ ক্ষতির ক্ষমতা কেবল আল্লাহর হাতে।

মসজিদে পেশাব করা এক বেদুইন এবং নামাযে কথা বলা এক ব্যক্তির সঙ্গে এই হলো রাসূলের আচরণ। ব্যক্তি হিসেবে তাদের সাথে এ আচরণই ছিল স্থান, কাল ও পাত্র উপযোগী। কারণ এ ধরনের অশিক্ষিত মানুষের ভুল হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার।

কিন্তু মুআয বিন জাবাল (রাঃ) ছিলেন রাসূলের কাছের একজন সাহাবী এবং ইলম অন্বেষণে অনেক অগ্রসর। তাই তাঁর সাথে রাসূলের আচরণ ও তাঁর ভুল সংশোধনের পদ্ধতি অন্যদের তুলনায় ভিন্ন ছিল।

মুআয (রাঃ) রাসূল (সাঃ)-এর পেছনে এশার নামায পড়তেন। এরপর নিজ লোকালয়ে গিয়ে এলাকাবাসীদের এশার নামাযের ইমামত করতেন। দ্বিতীয়বারের এ নামায মুআয (রাঃ)-এর জন্য নফল এবং অন্যদের জন্য ফরয হিসেবে গণ্য হতো।

একরাতের ঘটনা। মুআয (রাঃ) এলাকায় এসে তাকবির দিয়ে এশার নামাযের ইমামত শুরু করলেন। ইতোমধ্যে এক যুবক এসে নামাযে শরীক হলো। মুআয সূরা ফাতিহা শেষ করলেন। এরপর মুআয সূরা বাকারা শুরু করলেন!

সে সময় লোকেরা সারাদিন ক্ষেত খামারে কাজ করত, পশু চরাত, এরপর  এশার নামায পড়তে না পড়তেই শুয়ে পড়ত।

যুবকটি নামাযে দাঁড়িয়ে আছে, আর মুয কিরাত পড়েই যাচ্ছেন। যুবকটি আর স্থির থাকতে পারলেন না। একপর্যায়ে সে জামাত ছেড়ে দিয়ে একা একা নামায শেষ করে বাড়ি চলে গেল। নামায শেষ হলে মুসল্লীদের একজন মুআযকে বললো, ‘মুআয! অমুক তো আমাদের সঙ্গে নামাযে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু আপনার দীর্ঘ কিরাতের কারণে নামায ছেড়ে চলে গেছে।’

এ কথা শুনে মুআয (রাঃ) বললেন, ‘তাঁর মধ্যে নেফাক ও কপটপা আছে। আমি অবশ্যই রাসূল (সাঃ)-কে তাঁর বিষয়টি জানাব।’

যুবকটির কানে মুআযের এ মন্তব্য পৌঁছলে সে বললো, ‘আমিও রাসূল (সাঃ)-এর কাছে যাব। মুআযের বিষয়টি রাসূলকে জানাব। উভয়ে রাসূলের কাছে গিয়ে হাজির হলেন। মুআয রাযি যুবকটির আচরণ সম্পর্কে রাসূল (সা:)-কে জানালেন। যুবকটি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বললো, ‘আল্লাহর রাসূল! তিনি দীর্ঘসময় আপনার কাছে থাকার পর আমাদের এখানে আসেন। এরপর লম্বা লম্বা কিরাত দিয়ে নামায পড়ান। আল্লাহর কসম! মুআয নামায যেভাবে দীর্ঘ করেন, তাতে তো আমরা জামাতে এশার নামায পড়তেই যাব না।’

রাসূল (সাঃ) মুআযকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি নামাযে কি কিরাত পড়ে থাক? মুআয সূরা বাকারাসহ বিভিন্ন বড় বড় সুরার নাম বলতে লাগলেন। রাসূল (সাঃ) বুঝতে পারলেন মুআযের লম্বা লম্বা কিরাত মানুষকে জামাত থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। নয়তো নামায কেন তাদের জন্য ভারি হবে!

বিষয়টি বুঝতে পেরে রাসূল (সাঃ) খুব রেগে গেলেন। তিনি মুআযকে লক্ষ করে বললেন, ‘মুআয! তুমি কি মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাও?’ তোমার এ কাজ তো মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। আর পরিণামে তারা দ্বীন থেকে বিমুখ হয়ে যাবে।

‘তুমি সূরা তারিক, সূরা বুরূজ, সূরা শামস, সূরা লাইল এর মতো সূরাগুলো পড়বে।’ এরপর রাসূল (সাঃ)  যুবকটির দিকে তাকিয়ে কোমল স্বরে জানতে চাইলেন, ‘বেটা! তুমি নামায কীভাবে পড়?’

যুবকটি বললো, ‘আমি সুরা ফাতিহা দিয়ে নামায শুরু করি। নামায শেষে আল্লাহর কাছে জান্নাত প্রার্থনা করি, জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাই।’ এ সময়ে যুবকটির স্মরণ হলো, সে আল্লাহর রাসূল ও মুআযকে দীর্ঘ সময় ধরে দোয়া করতে দেখে। তাই সে বললো, ‘আমি বুঝি না, আপনি ও মুআয এতো দীর্ঘ সময় ধরে বিড়বিড় করে কী দোয়া করেন? আমি তো এত দীর্ঘ সময় ধরে দোয়া করতে পারি না।’

মুআয নেফাকের অপবাদ দেয়ায় যুবকটি খুব ব্যথা পেয়েছিল। তাই সে বললো, ‘যেদিন কোনো শত্রু আক্রমণ করবে, সেদিন মুআয জানতে পারবে আমি কী করব।’

জিহাদের ময়দানেই মুআযের কাছে আমার ঈমানের বিষয়টি স্পষ্ট হবে। সেদিন সে বুঝতে পারবে, কাকে সে নেফাকের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিল।

কিছুদিন পরই এক যুদ্ধে এ যুবক বীর বিক্রমে জিহাদ করে শাহদাতবরণ করেন। রাসূল (সাঃ) এ খবর শোনার পর মুআযকে বললেন, ‘তোমার সে বাদী যুবক যাকে তুমি মুনাফিক বলেছিলে, কী করেছে শুনেছ?’

মুআয রাযি বললেন, ‘আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ সত্য বলেছেন, আর আমি মিথ্যা বলেছি। তিনি তো আল্লাহর পথে শাহাদাতবরণ করেছেন।’

বস্তুতঃ মানুষের রুচি, স্বভাব ও সামাজিক অবস্থানের ভিন্নতার প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে। দেখুন, ব্যক্তি বিশেষে রাসূল (সাঃ)-এর আচরণ কেমন বৈচিত্রময় ছিল।

এবার দেখুন রাসূলের গৃহে লালিত আদরের পোষ্যপুত্র ওসামা বিন যায়েদের সঙ্গে রাসূলের আচরণ কেমন ছিল।

রাসূল (সাঃ) একবার জুহাইনা গোত্রের শাখা গোত্র ‘আল হুরাকা’এর বিরুদ্ধে সাহাবীদের একটি বাহিনী প্রেরণ করলেন। ওসামা বিন যায়েদও এ বাহিনীতে ছিলেন।

খুব ভোরে যুদ্ধ শুরু হলো। মুসলমানরা বিজয় লাভ করলেন। শত্রুবাহিনীর যোদ্ধারা পালাতে লাগল। শত্রুবাহিনীর এক যোদ্ধা সহযোদ্ধাদের পরাজিত হতে দেখে অস্ত্র ফেলে পলায়নে উদ্যত হলো। ওসামা ও একজন আনসারী সাহাবী তাঁর পিছু নিলেন। তাদেরকে দেখে লোকটি উর্দ্ধশ্বাসে দৌঁড়াতে লাগল। তারাও পিছু পিছু ধাওয়া করতে লাগলেন। এক পর্যায়ে লোকটি একটি গাছের পেছনে আত্মগোপন করলো। ওসামা ও আনসারী সাহাবী তাকে ঘেরাও করে তরবারি উঁচিয়ে ধরলেন। দু’দিক থেকে মাথার ওপর উদ্যত চকচকে দুটি তরবারির আলোকিত রেখায় সে যেন মৃত্যুর অন্ধকার ছায়া দেখতে পেল। ভয়ে তাঁর গলা শুকিয়ে গেল। তারপরও গলা থেকে থুথু এনে তা দিয়ে শুঙ্ক জিহ্বাকে কোনো রকমে ভিজিয়ে সে বারবার বলতে লাগল, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর তাআলার বান্দা ও রাসূল!’

আনসারী সাহাবী ও ওসামা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লেন। লোকটি কি আসলেই ইসলাম গ্রহণ করেছে, নাকি এটি আত্মরক্ষার কৌশল?

যুদ্ধের ময়দান। জীবন মৃত্যুর খেলা। সবকিছু এলোমেলো। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মানুষের চিন্ন-ভিন্ন দেহ। কর্তিত হাত-পা। চারপাশে আহত ও নিহতদের রক্তের বন্যা। আহতদের আর্তচিৎকার। মুমূর্ষূদের গোঙানি।

চোখের সামনে শত্রু। উভয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছেন। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যে কোনো সময় গায়ে বিঁধতে পারে লক্ষ্যভেদি কিংবা লক্ষ্যভ্রষ্ট তীর।

তখন ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করার মতো সুযোগ ছিল না। আনসারী সাহাবী আঘাত না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে তরবারি গুটিয়ে নিলেন। কিন্তু ওসামা মনে করলেন, এটা শত্রুর একটা কৌশল মাত্র। তাই তরবারির আঘাতে তিনি লোকটিকে হত্যা করে ফেললেন।

মুহাজিদ বাহিনী মদিনায় ফিরে এলো। সবার হৃদয়ে বইছে বিজয়ানন্দের তুমুল হিল্লোল।  

ওসামা (রাঃ) রাসূল (সাঃ)-এর কাছে বিজয়বার্তা নিয়ে আসলেন। যুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনা তাকে শোনাতে লাগলেন। রাসূল (সাঃ) আনন্দচিত্তে মুসলমানদের যুদ্ধ জয়ের কাহিনী শুনছিলেন। একসময় সে লোকটির কথা এল।

গল্পের শেষে ওসামা যখন  বললেন ‘তারপর আমি তাকে হত্যা করলাম, তখন সঙ্গে সঙ্গে রাসূলের চেহারার রঙ্গ পাল্টে গেল। রাসূল (সাঃ) বললেন, ‘লোকটি কালেমা শাহদাত পড়া সত্ত্বেও তুমি তাকে হত্যা করলে?!’

ওসামা (রাঃ) বললেন, ‘আল্লাহর রাসূল! সে তো মন থেকে কালেমা পড়ে নি। সে তো পড়েছিল অস্ত্রের মুখে, জীবন বাঁচাতে।’

রাসূল (সাঃ) আবার বললেন, ‘হায়! তুমি কী করলে! লোকটি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার পরও তুমি তাকে হত্যা করলে?, তুমি কেন তাঁর বুক ফেড়ে দেখলে না সে কি আত্মরক্ষার্থে কালিমা পড়েছিল না বাস্তবেই কালেমা পড়েছিল?!’

রাসূল (সাঃ) ওসামা (রাঃ)-এর দিকে তাকিয়ে বারবার বলছিলেন, ‘লোকটি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার পরও তুমি তাকে হত্যা করলে?’ লোকটি কালিমা পড়া সত্ত্বেও তাকে মেরে ফেললে?! কিয়ামতের দিন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ যখন তোমার বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে অভিযোগ করবে তখন তুমি কি করবে?’

রাসূল বারবার ওসামাকে এ কথা বলছিলেন। ওসামা বলেন, ‘রাসূল (সাঃ) এর বিবর্ণ চেহারা দেখে আমি আন্তরিকভাবে কামনা করছিলাম যদি আমি আগে মুসলমান না হয়ে সেদিনই মুসলমান হতাম! তাহলে তো আর এ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতাম না।

মন্তব্য…

আচরণের ক্ষেত্রে সবাইকে একরকম ভাববেন না। মানুষের স্বভাব-চরিত্র আকাশের রঙের চেয়েও বৈচিত্রময়।

উৎস : জীবনকে উপভোগ করুন

এরপর পড়ুন : স্থান-কাল-পাত্রভেদে কথা বলুন (শীঘ্রই প্রকাশিত হবে)

For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.

Leave a Comment