ব্যভিচার : ইসলামে যিনা ব্যভিচারের শাস্তি

বর্ণনাঃ ব্যভিচার কাকে বলে। কোরআন ও হাদীসের আলোকে জেনে নিন ইসলামে যেনা করার শাস্তি। ব্যভিচারের তওবা ও যিনা থেকে বাচার উপায়। পড়ুন ব্যভিচার সম্পর্কে কোরআনের আয়াত ও হাদিস। যেনা ব্যভিচার করার সম্পর্কে আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি করুণ।

যিনা ও ব্যভিচার : Islamic law on adultery

ব্যভিচার - যিনা কত প্রকার ও বাঁচার উপায়
ছবি: হাতুড়ি – আদালতে বিচারকার্য সমাপ্তের প্রতিকী।

ব্যভিচার একটি মারাত্মক অপরাধ। হত্যার পরই যার অবস্থান। কারণ, তাতে বংশ পরিচয় সঠিক থাকে না। লজ্জাস্থানের হিফাযত হয় না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সামাজিক সম্মান রক্ষা পায় না। মানুষে মানুষে কঠিন শত্রুতার জন্ম নেয়। দুনিয়ার সুস্থ পারিবারিক ব্যবস্থা এতটুকুও অবশিষ্ট থাকে না। একে অন্যের মা বোন, স্ত্রী, কন্যাকে সম্পূর্ণ রূপে বিনষ্ট করে দেয়। এ কারণেই তো আল্লাহ তা’আলা এবং তদীয় রাসূল (সাঃ) হত্যার পরই এর উল্লেখ করেছেন।

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ—

“আর যারা আল্লাহ তা’আলার পাশাপাশি অন্য কোন উপাস্যকে ডাকে না। আল্লাহ তা’আলা যাকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন যথার্থ (শরীয়ত সম্মত) কারণ ছাড়া তাকে হত্যা এবং ব্যভিচার করে না। যারা এগুলো করবে তারা অবশ্যই কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। কিয়ামতের দিন তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দেয়া হবে এবং তারা ওখানে চিরস্থায়ীভাবে লাঞ্চিতাবস্থায় থাকবে। তবে যারা তাওবা করে নেয়, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে; আল্লাহ তা’আলা তাদের পাপগুলো পুণ্য দিয়ে পরিবর্তন করে দিবেন। আল্লাহ তা’আলা অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।”-(সূরা—ফুরকান : আয়াত ৬৮-৭০)

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ—

আরবী…

অর্থাৎ জনৈক ব্যক্তি রাসূল (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলোঃ হে আল্লাহ’র রাসূল! কোন পাপটি আল্লাহ তা’আলার নিকট মহাপাপ বলে বিবেচিত? রাসূল (সাঃ) বললেনঃ আল্লাহ তা’আলার সাথে কাউকে শরীক করা; অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। সে বললোঃ অতঃপর কি? তিনি বললেনঃ নিজ সন্তানকে হত্যা করা ভবিষ্যতে তোমার সঙ্গে খাবে বলে। সে বললোঃ অতঃপর কি? তিনি বললেনঃ নিজ প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার করা।(বুখারী, হাদীস ৪৪৭৭, ৪৭৬১, ৬০০১, ৬৮১১, ৬৮৬১, ৭৫২০, ৭৫৩২ ও মুসলিম, হাদীস ৮৬)

আল্লাহ তা’আলা কোরআন মাজীদে ব্যভিচারের কঠিন নিন্দা করেন। তিনি বলেনঃ

“তোমরা যেনা তথা ব্যভিচারের নিকটবর্তীও হয়ো না। কারণ, তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ। (ইসরা/ বণী ইসরাঈলঃ ৩২)

তবে এ ব্যভিচার মুহরিমা (যে মহিলাকে বিবাহ করা শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম) এর সাথে হলে তা আরো জঘন্য। এ কারণেই আল্লাহ তা’আলা বাপ-দাদার স্ত্রীদেরকে বিবাহ করা সম্পর্কে বলেনঃ

“তোমরা নিজেদের বাপ-দাদার স্ত্রীদেরকে বিবাহ করো না। তবে যা গত হয়ে গেছে তা আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করে দিবেন। নিশ্চয়ই তা অশ্লীল, অরুচিকর ও নিকৃষ্টতম পন্থা।”(সূরা-নিসাঃ আয়াত-২২)

হযরত বারা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ একদা আমার চাচার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়। তার হাতে ছিল একখানা ঝাণ্ডা। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলামঃ আপনিও কোথায় যাচ্ছেন? তিনি বললেনঃ

“আমাকে রাসূল (সাঃ) এমন এক ব্যক্তির নিকট পাঠিয়েছেন যে নিজ পিতার স্ত্রী তথা তার সৎ মায়ের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। রাসূল (সাঃ) আমাকে আদেশ করেছেন তার গর্দান কেটে দিতে এবং তার সম্পদ হরণ করতে। (আবু দাউদ, হাদীস ৪৪৫৭, ইবনু মাজাহ, হাদীস ২৬৫৬)

মুহরিমাকে বিবাহ করা যদি এতো বড় অপরাধ হয়ে থাকে তা হলে তাদের সাথে ব্যভিচার করা যে কতো বড়ো অপরাধ হবে তা সহজেই বুঝা যায়।

আল্লাহ তা’আলা লজ্জাস্থান হিফাযতকারীকে সফলকাম বলেছেন। এর বিপরীতে অবৈধ যৌন সংযোগকারীকে ব্যর্থ, নিন্দিত ও সীমালঙ্ঘনকারী বলে আখ্যায়িত করেছেন।

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

“মু’মিনরা অবশ্যই সফলকাম। যারা নামাযে অত্যন্ত মনোযোগী। যারা অযথা ক্রিয়া-কলাপ থেকে বিরত। যারা যাকাত দানে অত্যন্ত সক্রিয়। যারা নিজ যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী। তবে যারা নিজ স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসীদের সঙ্গে যৌনকর্ম সম্পাদন করে তারা অবশ্যই নিন্দিত নয়। এ ছাড়া অন্য পন্থায় যৌনক্রিয়া সম্পাদনকারী অবশ্যই সীমালঙ্ঘনকারী।”(সূরা-মু’মিনূনঃ ১-৭)

আল্লাহ তা’আলা কুরআন মাজীদে ব্যাপকভাবে মানব জাতির নিন্দা করেছেন। তবে যারা নিন্দিত নয় তাদের মধ্যে যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী অন্যতম।

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

“আর যারা নিজ যৌনাঙ্গ হিফাজতকারী। তবে যারা নিজ স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসীদের সঙ্গে যৌনকর্ম সম্পাদন করে তারা অবশ্যই নিন্দিত নয়। এ ছাড়া অন্যান্য পন্থায় যৌনক্রিয়া সম্পাদনকারীরা অবশ্যই সীমালঙ্ঘনকারী।(সূরা-মা’আরিজঃ ২৯-৩১)

রাসূল (সাঃ) যৌনাঙ্গ হিফাযতকারীকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।

হযরত ‘আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ

রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ

“হে কুরাইশ যুবকরা! তোমরা নিজ যৌনাঙ্গ হিফাযত করো। কখনো ব্যভিচার করো না। জেনে রাখো, যে ব্যক্তি নিজ যৌনাঙ্গ হিফাযত করতে পেরেছে তার জন্যই তো জান্নাত।” (সা’হীহুত তারগীবি ওয়াত তারহীরি, হাদীস ২৪১০)

হযরত সাহল বিন সা’আদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ

“যে ব্যক্তি উভয় চোয়ালের মধ্যভাগ তথা জিহ্বা এবং উভয় পায়ের মধ্যভাগ তথা লজ্জাস্থান হিফাযত করার দায়িত্ব গ্রহণ করবে আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব গ্রহণ করবো।”(বুখারী, হাদীস ৬৪৭৪)

আল্লাহ তা’আলা শুধু যৌনকর্মকেই হারাম করেননি। বরং তিনি এরই পাশাপাশি সব ধরণের অশ্লীলতাকেও হারাম করেছেন।

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

“(হে মুহাম্মাদ) তুমি ঘোষণা করে দাওঃ নিশ্চয়ই আমার প্রভু হারাম করে দিয়েছেন প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল ধরণের অশ্লীলতা, পাপকর্ম, অন্যায় বিদ্রোহ, আল্লাহ তা’আলার সাথে কাউকে শরীক করা; যে ব্যাপারে তিনি কোন দলীল-প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহ তা’আলা সম্পর্কে অজ্ঞতাবশত কিছু বলা।(সূরা-আ’রাফঃ ৩৩)

আল্লাহ তা’আলা যখন ব্যভিচারকর্মকে নিষেধ করে দিয়েছেন তখন তিনি সে সকল পথকেও নীতিগতভাবে রোধ করে দিয়েছেন যেগুলোর মাধ্যমে স্বভাবতঃ ব্যভিচারকর্ম সংঘটিত হয়ে থাকে। এ জন্যই আল্লাহ তা’আলা পুরুষ ও মহিলা উভয় জাতিকে লজ্জাস্থান হিফাযতের পূর্বে সর্বপ্রথম নিজ দৃষ্টিকে সংযত করতে আদেশ করেন।

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

“(হে মুহাম্মাদ) তুমি মু’মিনদেরকে বলে দাওঃ যেন তারা নিজ দৃষ্টিকে সংযত ক্লরে এবং নিজ লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে। এটাই তাদের জন্য পবিত্র থাকার সর্বোত্তম মাধ্যম। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা তাদের কর্ম সম্পর্কে অধিক অবগত। তেমনিভাবে তুমি মু’মিন মহিলাদেরকেও বলে দাওঃ যেন তারা নিজ দৃষ্টিকে সংযত করে এবং নিজ লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে।”(সূরা-নুর-৩০-৩১)

আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ

“তিনি চক্ষুর অপব্যবহার এবং অন্তরের গোপন বস্তু সম্পর্কেও অবগত।(সূরা-গাফির/মু’মিনঃ ১৯)

আল্লাহ তা’আলা কাউকে অন্য কারোর ঘরে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন। যাতে চক্ষুর অপব্যবহার না হয় এবং তা সম্পূর্ণরূপে রক্ষা পায়।

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ছাড়া অন্য কারো গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে এবং তাদেরকে সালাম না করে প্রবেশ করো না। এটাই তো তোমাদের জন্য অনেক শ্রেয়। আশাতো তোমরা উক্ত উপদেশ গ্রহণ করবে। আর যদি তোমরা উক্ত গৃহে কাউকে না পাও তা হলে তোমরা তাতে একবারেই প্রবেশ করো না যতক্ষণ না তোমাদেরকে তাতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। যদি তোমাদেরকে বলা হয়ঃ ফিরে যাও, তা হলে তোমরা ফিরে যাবে। এটাই তো তোমাদের জন্য পবিত্র থাকার সর্বোত্তম মাধ্যম। আল্লাহ তা’আলা তোমাদের কর্ম সম্পর্কে বিশেষভাবে অবগত।(নূরঃ ২৭-২৮)

আল্লাহ তা’আলা বিশেষভাবে মহিলাদেরকে অপর পুরুষ থেকে পর্দা করতে আদেশ করেছেন। যাতে পুরুষের লোভাতুর দৃষ্টি তার অপূর্ব সৌন্দর্যের উগ্র আকর্ষণ থেকে রক্ষা পায় এবং ক্রমান্বয়ে সে ব্যভিচারের দিকে ধাবিত না হয়।

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

“ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।”(সূরা-নূর-আয়াতঃ ৩১)

কোন ব্যক্তি চারটি অঙ্গকে সঠিক ও শরীয়ত সম্মতভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই সত্যিকারার্থে সে অনেকগুলো গুনাহ বিশেষভাবে ব্যভিচার থেকে রক্ষা পেতে পারে। তেমনিভাবে তার ধার্মিকতাও অনেকাংশে রক্ষা পাবে। আর তা হচ্ছেঃ

১. চোখ ও দৃষ্টিশক্তি: তা রক্ষা করা লজ্জাস্থানকে রক্ষা করার শামিল। রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ

“তোমাদের চোখ নিম্নগামী করো এবং লজ্জাস্থান হিফাযত করো।”(আহমাদঃ৫/৩২৩ হাকিমঃ৪/৩৫৮, ৩৫৯ ইবনু হিব্বান, হাদীস ২৭১, বায়হাক্বীঃ ৬/২৮৮)

হঠাৎ কোন হারাম বস্তুত উপর চোখ পড়ে গেলে তা তড়িঘড়ি ফিরিয়ে নিতে হবে। দ্বিতীয়বার কিংবা একদৃষ্টে ওদিকে তাকিয়ে থাকা যাবে না।

রাসূল (সাঃ) হযরত ‘আলী (রাঃ) কে উদ্দেশ্য করে বলেনঃ

“হে ‘আলী! বার বার দৃষ্টি ক্ষেপণ করো না। কারণ, হঠাৎ দৃষ্টিতে তোমার কোন দোষ নেই। তবে ইচ্ছাকৃত দ্বিতীয় দৃষ্টি অবশ্যই দোষের। (আবু দাউদ, হাদীস ২১৪৯, তিরমিযী-হাদীস ২৭৭৭, আহমাদঃ৫/৩৫১, ৩৫৩,৩৫৭, হা’কিমঃ ২/১৯৪, বায়হাক্বীঃ ৭/৯০)

রাসূল (সাঃ০ হারাম দৃষ্টিকে চোখের যেনা বলে আখ্যায়িত করেছেন। যেমনিভাবে কোন ব্যক্তির হাত, পা, মুখ, কান, মনও ব্যভিচার করে থাকে। তবে মারাত্মক ব্যভিচার হচ্ছে লজ্জাস্থানের ব্যভিচার। যাকে বাস্তবার্থেই ব্যভিচার বলা হয়। রাসূল্ল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ

“ নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক আদম সন্তানের জন্য যেনার কিছু অংশ বরাদ্দ করে রেখেছেন। যা সে অবশ্যই করবে। চোখের যেনা হচ্ছে অবৈধভাবে কারোর দিকে দৃষ্টি ক্ষেপন, মুখের যেনা হচ্ছে অশ্লীল কথোপকথন, হাতও ব্যভিচার করে; তবে তার ব্যভিচার হচ্ছে অবৈধভাবে কাউকে হাত দিয়ে ধরা, পাও ব্যভিচার করে; তবে তার ব্যভিচার হচ্ছে কোন ব্যভিচার সংঘটনের জন্য রওয়ানা করা, মুখও ব্যভিচার করে; তবে তার ব্যভিচার হচ্ছে অবৈধভাবে কাউকে চুমু দেয়া, কানের ব্যভিচার হচ্ছে অশ্লীল কথা শ্রবণ করা, মনও ব্যভিচারের কামনা-বাসনা করে। আর তখনই লজ্জাস্থান তা বাস্তবায়িত করে অথবা করে না।” (আবু দাউদ, হাদীস ২১৫২, ২১৫৩, ২১৫৪)

দৃষ্টিই সকল অঘটনের মূল। কারণ, কোন কিছু দেখার পরই তো তা মনে জাগে। মনে জাগলে তার প্রতি চিন্তা আসে। চিন্তা আসলে অন্তরে তাকে পাওয়ার কামনা-বাসনা জন্মে। কামনা-বাসনা জন্মিলে তাকে পাওয়ার খুব ইচ্ছে হয়। দীর্ঘ দিনের ইচ্ছে প্রতিজ্ঞার রূপ ধারণ করে। আর তখনই কোন কর্ম সংঘটিত হয়। যদি পথিমধ্যে কোন ধরণের বাধা না থাকে।

দৃষ্টির কুফল হচ্ছে আফসোস, উর্ধ্বশ্বাস ও অন্তরজ্বালা। কারন, মানুষ যা চায় তার সবটুকু সে কখনোই পায় না। আর তখনই তার ধৈর্যচ্যুতি ঘটে।

অত্যন্ত আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে এই যে, দৃষ্টি হচ্ছে তীরের ন্যায়। অন্তরকে নাড়া দিয়েই তা লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছায়। একেবারে শান্তভাবে নয়।

আরো আশ্চর্যের কাহিনী এই যে, দৃষ্টি অন্তরকে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। আর এ ক্ষতের উপর অন্য ক্ষত (আবার তাকানো) সামান্যটুকু হলেও আরামপ্রদ। যার নিশ্চিত নিরাময় কখনোই সম্ভবপর নয়।

২. মন ও মনোভাব: এ পর্যায় খুবই কঠিন। কারণ, মানুষের মনই হচ্ছে ন্যায়-অন্যায়ের একমাত্র উৎস। মানুষের ইচ্ছা, স্পৃহা, আশা ও প্রতিজ্ঞা মনেরই সৃষ্টি। সুতরাং যে ব্যক্তি নিজ মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে সে নিজ কুপ্রবৃত্তির উপর বিজয় লাভ করবে। আর যে ব্যক্তি নিজ মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না নিশ্চিত ভাবে সে কুপ্রবৃত্তির শিকার হবে। পরিশেষে তার ধ্বংস একেবারেই অনিবার্য।

মানুষের মনোভাবই পরিশেষে দুরাশার রূপ নেয়। মনের দিক থেকে সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তি সে যে দুরাশায় সন্তুষ্ট। কারণ, দুরাশাই হচ্ছে সকল ধরণের আলস্য ও বেকারত্বের পুঁজি। এটিই পরিশেষে লজ্জা ও আফসোসের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দুরাশাগ্রস্ত ব্যক্তি আলস্যের কারণে যখন বাস্তবতায় পৌঁছতে পারে না তখনই তাকে শুধু আশার উপরই নির্ভর করতে হয়। মূলতঃ বাস্তবাদী হওয়াই একমাত্র সাহসীর পরিচয়।

মানুষের ভালো মনোভাব আবার চার প্রকারঃ

১ . দুনিয়ার লাভার্জনের মনোভাব।

২. দুনিয়ার ক্ষতি থেকে বাঁচার মনোভাব।

৩. আখিরাতের লাভার্জনের মনোভাব।

৪. আখিরাতের ক্ষতি থেকে বাঁচার মনোভাব।

নিজ মনোভাবকে উক্ত চারের মধ্যে সীমিত রাখাই যে কোন মানুষের একান্ত কর্তব্য। এগুলোর যে কোনটিই মনে জাগ্রত হলে তা অতি তাড়াতাড়ি কাজে লাগানো উচিৎ। আর যখন এগুলোর সব কটিই মনের মাঝে একত্রে জাগ্রত হয় তখন সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণটিকেই প্রাধান্য দিতে হবে। যা এখনই না করলে পরে করা আর সম্ভব পর হবে না।

কখনো এমন হয় যে, অন্তরে একটি প্রয়োজনীয় কাজের মনোভাব জাগ্রত হলো যা পরে করলেও চলে; অথচ এরই পাশাপাশি আরেকটি এমন কাজের মনোভাবও অন্তরে জন্মালো যা এখনই করতে হবে। না করলে ট্যাব পরবর্তীতে কখনোই করা সম্ভবপর হবে না। তবে কাজটি এতো প্রয়োজনীয় নয়। এ ক্ষেত্রে আপনাকে প্রয়োজনীয় বস্তুটিকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। কেউ কেউ অপরটিকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন যা শরীয়তের মৌলিক নীতি পরিপন্থী।

তবে সর্বোৎকৃষ্ট চিন্তা ও মনোভাব সেটিই যা একমাত্র আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি কিংবা পরকালের জন্যই হবে। এ ছাড়া যত চিন্তা-ভাবনা রয়েছে তা হচ্ছে শয়তানের ওয়াসওয়াসা অথবা ভ্রান্ত আশা।

যে চিন্তা-ফিকির একমাত্র আল্লাহ তা’আলার জন্য তা আবার কয়েক প্রকারঃ

১. কোর’আন মাজীদের আয়াত সমূহ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা এবং তাতে নিহিত আল্লাহ তা’আলার মূল উদ্দেশ্য বুঝতে চেষ্টা করা।

২. দুনিয়াতে আল্লাহ তা’আলার যে প্রকাশ্য নিদর্শন সমূহ রয়েছে তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা এবং তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। এরই মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলার নাম ও গুণাবলী, কৌশল ও প্রজ্ঞা, দান ও অনুগ্রহ বুঝতে চেষ্টা করবে। কোর’আন মাদীদে আল্লাহ তা’আলা এ ব্যাপারে মানুষকে মনোনিবেশ করার জন্য উৎসাহ প্রদান করেছেন।

৩. মানুষের উপর আল্লাহ তা’আলার যে অপার অনুগ্রহ রয়েছে তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা। তার দয়া, ক্ষমা ও ধৈর্য নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা।

উক্ত ভাবনা সমূহ মানুষের অন্তরে আল্লাহ তা’আলার একান্ত পরিচয়, ভয়, আশাও ভালোবাসার জন্য দেয়।

৪. নিজ অন্তর ও আমলের দোষ-ক্রটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা। এতদ চিন্তা-চেতনা খুবই কল্যাণকর। বরং একে সকল কল্যাণের সোপানই বলা চলে।

৫. সময়ের প্রয়োজন ও নিজ দায়িত্ব নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা। সত্যিকার ব্যক্তি তো সেই যে নিজ সময়ের প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

হযরত ইমাম শাফি’য়ী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আমি সূফীদের নিকট মাত্র দু’টি ভালো কথাই পেয়েছি। যা হচ্ছেঃ তারা বলে থাকে, সময় তলোয়ারের ন্যায়। তুমি তাকে ভালো কাজে নিঃশেষ করবে। নতুবা সে তোমাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত করবে। তারা আরো বলে, তুমি অন্তরকে ভালো কাজে লাগাবে। নতুবা সে তোমাকে খারাপ কাজেই লাগাবে।

মনে কোন চিন্তা—ভাবনার উদ্রেক তা ভালো অথবা খারাপ যাই হোক না কেন দোষের নয়। বরং দোষ হচ্ছে খারাপ চিন্তা-চেতনাকে মনের মনের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ স্থান দেয়া। কারণ, আল্লাহ তা’আলা মানুষকে দু’টি চেতনা তথা প্রবৃত্তি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। যার একটি ভালো অপরটি খারাপ। একটি সর্বদা একমাত্র আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টিই কামনা করে। পক্ষান্তরে অন্যটি গায়রুল্লাহ’র সন্তুষ্টিই কামনা করে। ভালোটি অন্তরের বামে অবস্থিত যা শয়তান কতৃর্ক নিয়ন্ত্রিত। পরস্পরের মধ্যে সর্বদা যুদ্ধ ও সংঘর্ষ অব্যাহত। কখনো এর জয় আবার কখনো ওর জয়। তবে সত্যিকারের বিজয় ধারাবাহিক ধৈর্য সতর্কতা ও আল্লাহভীরুতার উপরই নির্ভলশীল।

অন্তরকে কখনো খালি রাখা যাবে না। ভালো চিন্তা—চেতনা দিয়ে ওকে ভর্তি রাখতেই হবে। নতুবা খারাপ চিন্তা—চেতনা তাতে অবস্থান নিবেই। সূফীবাদীরা অন্তরকে কাশফের জন্য খালি রাখে বিধায় শয়তান সুযোগ পেয়ে তাতে ভালোর বেশে খারাপের বীজ বপন করে। সুতরাং অন্তরকে সর্বদা ধর্মীয় জ্ঞান ও হিদায়াতের উপকরণ দিয়ে ভর্তি রাখতেই হবে।

৩. মুখ ও বচন। কখনো অযথা কথা বলা যাবে না। অন্তরে কথা বলার ইচ্ছা জাগলেই চিন্তা করতে হবে, এতে কোন ফায়দা আছে কি না? যদি তাতে কোন ধরনের ফায়দা না থাকে তা হলে সে কথা কখনো বলবে না। আর যদি তাতে কোন ধরণের ফায়দা থেকে তাহলে দেখবে, এর চাইতে আরো লাভজনক কোন কথা আছে কি না? যদি থেকে থাকে তাহলে তাই বলবে। অন্যটা নয়।

কারোর মনোভাব সরাসরি বুঝা অসম্ভব। তবে কথার মাধ্যমেই তার মনোভাব সম্পূর্ণরূপে বুঝে নিতে হয়।

হযরত ইয়াহয়া বিন মু’আয (রাহিমাহুল্লাহু) বলেনঃ অন্তর হচ্ছে ডেগের ন্যায়। তাতে যা রয়েছে অথবা দেয়া হয়েছে তাই রন্ধন হতে থাকবে। বাড়তি কিছু নয়। আর মুখ হচ্ছে চামচের ন্যায়। যখন কেউ কথা বলে তখন সে তার মনোভাবই ব্যক্ত করে। অন্য কিছু নয়। যেভাবে আপনি কোন পাত্রে রাখা খাদ্যের স্বাদ জিহ্বা দিয়ে অনুভব করতে পারেন ঠিক তেমনিভাবে কারোর মনোভাব আপনি তার কথার মাধ্যমেই টের পাবেন।

মন আপনার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নিয়ন্ত্রক ঠিকই। তবে সে আপনার কোন না কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সহযোগিতা ছাড়া যে কোন কাজ সম্পাদন করতে পারে না। সুতরাং আপনার মন যদি আপনাকে কোন খারাপ কথা বলতে বলে তখন আপনি আপনার জিহ্বার মাধ্যমে তার কোন সহযোগিতা করবেন না। তখন সে নিজ কাজে ব্যর্থ হবে নিশ্চয়ই এবং আপনিও গুনাহ কিংবা তার অঘটন থেকে রেহাই পাবেন।

এ জন্যই রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ

“কোন বান্দাহ’র ঈমান ঠিক হয় না যতক্ষণ না তার অন্তর ঠিক হয়। তেমনিভাবে কোন বান্দাহ’র অন্তর ঠিক হয় না যতক্ষণ না তার মুখ ঠিক হয়।”-(আহমাদ ৩/১৯৮)

সাধারণর মন মুখ ও লজ্জাস্থানের মাধ্যমেই বেশি অঘটন ঘটায় তাই রাসূল (সাঃ) কে যখন জিজ্ঞাসা করা হলো কোন জিনিস সাধারণতঃ মানুষকে বেশির ভাগ জাহান্নামের সম্মুখীন করে তখন তিনি বলেনঃ

আরবী….

অর্থাৎ মুখ ও লজ্জাস্থান। (তিরমিযী, হাদীস ২০০৪, ইবনু মাজাহ, হাদীস ৪৩২২, আহমাদ ২/২৯১, ৩৯২, ৪৪২ হা’কিম ৪/৩২৪, ইবনু হিব্বান, হাদীস ৪৭৬, বুখারী/আদাবুল মুফরাদ, হাদীস ২৯২, বায়হাক্বী/শু’আবুল ঈমান, হাদীস ৪৫৭০)

একদা রাসূল (সাঃ) হযরত মু’আয বিন জাবাল (রাঃ) কে জান্নাতে যাওয়া ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার সহযোগী আমল বলে দেয়ার পর আরো কিছু ভালো আমলের কথা বলেন। এমনকি তিনি সকল ভালো কাজের মূল, কান্ড ও চূড়া সম্পর্কে বলার পর বলেনঃ

“আমি কি তোমাকে এমন বস্তু সম্পর্কে বলবো যার উপর এ সবই নির্ভলশীল? আমি বললামঃ হে আল্লাহ’র নবী! আপনি দয়া করে তা বলুন। অতঃপর তিনি নিজ জিহ্বা ধরে বললেনঃ এটাকে তুমি অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করবে। তখন আমি বললামঃ হে আল্লাহ’র নবী! আমাদেরকে কথার জন্যও কি পাকড়াও করা হবে? তিনি বললেনঃ তোমার কল্যাণ হোক! হে মু’আয! একমাত্র কথার কারণেই বিশেষভাবে সে দিন মানুষকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।”-(তিরমিযী—হাদীস ২৬১৬, ইবনু মাজাহ—হাদীস ৪০৪৪, আহমাদ ৫/২৩১, ২৩৭, আব্দু বিন হুমাইদ/মুনতাখাব—১১২, আব্দুর রাযযাক্ব—হাদীস ২০৩০৩, বায়হাক্বী/শু’আবুল ঈমান—হাদীস ৪৬০৭)

অনেক সময় একটিমাত্র কথাই মানুষের দুনিয়া ও আখিরাত এমনকি তার সকল নেক আমল ধ্বংস করে দেয়।

হযরত জুনদাব বিন ‘আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ

“জনৈক ব্যক্তি বললোঃ আল্লাহ’র কসম, আল্লাহ তা’আলা ওকে ক্ষমা করবেন না। তখন আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ কে সে? যে আমার উপর কসম খেয়ে বলে যে, আমি ওমুককে ক্ষমা করবো না। অতএব আল্লাহ তা’আলা তার উপর শপথকারীকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ আমি ওকেই ক্ষমা করে দিলাম এবং তোমার সকল নেক আমল ধ্বংস করে দিলাম।” (মুসলিম, হাদীস ২৬২১)

হযরত আবু হুরাইরাহ (রাঃ) উক্ত হাদীস বর্ণনায় করার পর বলেনঃ

“সে সত্তার কসম যার হাতে আমার জীবন! লোকটি এমন কথাই বলেছে যা তার দুনিয়া ও আখিরাত সবই ধ্বংস করে দিয়েছে।”(আবু দাউদ, হাদীস ৪৯০১)

রাসূল (সাঃ) আরো বলেনঃ

“বান্দাহ কখনো কখনো যাচবিচার ছাড়াই এমন কথা বলে ফেলে যার দরুন সে জাহান্নামে এতদূর পর্যন্ত নিক্ষিপ্ত হয় যতদূর দুনিয়ার পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের মাঝের ব্যবধান”।(বুখারী, হাদিস ৬৪৭৭, মুসলিম, হাদিস ২৯৮৮)

রাসূল (সাঃ) আরো বলেনঃ

“তোমাদের কেউ কখনো এমন কথা বল ফেলে যাতে আল্লাহ তা’আলা তার উপর অসন্তুষ্ট হন। সে কখনো ভাবতেই পারেনি কথাটি এমন এক মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছুবে; অথচ আল্লাহ তা’আলা উক্ত কথার দরুনই কিয়ামত পর্যন্ত তার উপর তার অসন্তুষ্টি অবধারিত করে ফেলেন।”(তিরমিযী—হাদীস ২৩১৯, ইবনু মাজাহ—হাদীস ৪০৪০, আহমাদ ৩/৪৬৯, হাকিম ১/৪৪-৪৬, ইবনু হিব্বান—হাদীস ২৮০, মা’লিক ২/৯৮৫)

উক্ত জটিলতার কারণেই রাসূল (সাঃ) নিজ উম্মতকে সর্বদা ভালো কথা বলা অথবা চুপ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেনঃ

“যার আল্লাহ তা’আলা ও পরকালের উপর বিশ্বাস রয়েছে সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।”(বুখারী—হাদিস ৬০১৮,৬০১৯, মুসলিম—হাদিস ৪৭-৪৮, ইবনু মাজাহ-হাদিস ৪০৪২)

সালফে সালি’হীনগণ আজকের দিনটা ঠান্ডা কিংবা গরম এ কথা বলতেও অত্যন্ত সঙ্কোচ বোধ করতেন। এমনকি তাদের জনৈককে স্বপ্নে দেখার পর তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেনঃ আমাকে এখনো এ কথার জন্য আটকে রাখা হয়েছে যে, আমি একদা বলেছিলামঃ আজ বৃষ্টির কতই না প্রয়োজন ছিলো! অতএব আমাকে বলা হলোঃ তুমি এটা কিভাবে বুঝলে যে, আজ বৃষ্টির খুবই প্রয়োজন ছিলো। বরং আমিই আমার বান্দাহ’র কল্যাণ সম্পর্কে অধিক পরিজ্ঞাত।

অতএব জানা গেলো, জিহ্বার কাজ খুবই সহজ। কিন্তু তার পরিমাণ অত্যন্ত ভয়াবহ। সবার জানা উচিৎ যে, আমাদের প্রতিটি কথাই লিপিবদ্ধ হচ্ছে। যা যতই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হোক না কেন। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

“মানুষ যাই বলুক না কেন তা লিপিবদ্ধ করার জন্য দু’জন অতন্দ্র প্রহরী (ফিরিশতা) তার সাথেই রয়েছে।”(ক্বা’ফঃ ১৮)

মানুষ তার জিহ্বা সংক্রান্ত দু’টি সমস্যায় সর্বদা ভুগতে থাকে। একটি কথার সমস্যা। আর অপরটি চুপ থাকার সমস্যা। কারণ, অকথ্য উক্তিকারী গুনাহগার বক্তা শয়তান। আর সত্য কথা বলা থেকে বিরত ব্যক্তি গুনাহগার বোবা শয়তান।

৪. পদ ও পদক্ষেপ। অর্থাৎ সাওয়াবের কাজ ছাড়া অন্য কোন কাজে পদক্ষেপণ করা যাবে না। মনে রাখতে হবে যে, প্রতিটি জায়িয কাজ একমাত্র নিয়্যাতের কারণেই সাওয়াবে রূপান্তরিত হয়।

উক্ত দীর্ঘ আলচনা থেকে আমরা সহজে এ কথাই বুঝতে পারলাম যে, কোন ব্যক্তি তার চোখ, মন, মুখ ও পা সর্বদা নিজ নিয়ন্ত্রণে রাখলে তার থেকে কোন গুনাহ বিশেষ করে ব্যভিচার কর্মটি কখনো প্রকাশ পেতে পারে না। কারণ, দেখলেই তো ইচ্ছে হয়। আর ইচ্ছে হলেই তো তা মুখ খুলে বলতে মনে চায়। আর তখনই মানুষ তা অধীর আগ্রহে পাওয়ার অপেক্ষায় থাকে।

বিচ্যুতি তথা স্খলন যখন দু’ধরণেরই তাই আল্লাহ তা’আলা উভয়টিকে কোর’আন মাজীদের মধ্যে একই সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেনঃ

“দয়ালু আল্লাহ’র বান্দাহ ওরাই যারা নম্রভাবে চলাফেরা করে এ পৃথিবীতে। মূর্খরা যখন তাদেরকে (তাচ্ছিল্যভাবে) সম্বোধন করে তখন তারা বলেঃ তোমাদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ! আমরা সবই সহ্য করে গেলাম; তোমাদের সঙ্গে আমাদের কোন দ্বন্দ্ব নেই। ” (ফুরক্বান : ৬৩)

যেমনিভাবে আল্লাহ তা’আলা দেখা ও ভাবাকে একত্রে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “তিনি চক্ষুর অপব্যবহার এবং অন্তরের গোপন বস্তু সম্পর্কেও অবগত।” (গাফির/মু’মিন : ১৯)

যিনা ও ব্যভিচারের অপকার ও তার ভয়াবহতার নমূনা !

১. কোন বিবাহিতা মহিলা ব্যভিচার করলে তার স্বামী, পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন মারাত্মকভাবে লাঞ্ছিত হয়। জনসমক্ষে তারা আর মাথা উঁচু করে কথা বলতে সাহস পায় না।

২. কোন বিবাহিতা মহিলার ব্যভিচারের কারণে যদি তার পেটে সন্তান জন্ম নেয় তা হলে তাকে হত্যা করা হবে অথবা জীবিত রাখা হবে। যদি তাকে হত্যাই করা হয় তা হলে দু’টি গুনাহ একত্রেই করা হলো। আর যদি তাকে জীবিতই রাখা হয় এবং তার স্বামীর সন্তান হিসেবেই তাকে ধরে নেয়া হয় তখন এমন ব্যক্তিকেই পরিবারভুক্ত করা হলো যে মূলতঃ সে পরিবারের সদস্য নয় এবং এমন ব্যক্তিকেই ওয়ারিশ বানানো হলো যে মূলতঃ ওয়ারিশ নয়। তেমনিভাবে সে এমন ব্যক্তির সন্তান হিসেবেই পরিচয় বহন করবে যে মূলতঃ তার পিতা নয়। আরো কত্তো কি?

৩. কোন পুরুষ ব্যভিচার করলে তার বংশ পরিচয়ে গরমিল সৃষ্টি হয় এবং একজন পবিত্র মহিলাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হয়।

৪. ব্যভিচারের কারণে ব্যভিচারীর উপর দরিদ্রতা নেমে আসে এবং তার বয়স কমে যায়। তাকে লাঞ্ছিত হতে হয় এবং তারই কারণে সমাজে মানুষে মানুষে বিদ্বেষ ছড়ায়।

৫. ব্যভিচার ব্যভিচারীর অন্তরকে বিক্ষিপ্ত করে দেয় এবং ধীরে ধীরে তাকে রোগাক্রান্ত করে তোলে। তেমনিভাবে তার মধ্যে চিন্তা, ভয় ও আশঙ্কার জন্ম দেয়। তাকে ফিরিশতা থেকে দূরে সরিয়ে নেয় এবং শয়তানের নিকটবর্তী করে দেয়। সুতরাং অঘটনের দিক দিয়ে হত্যার পরেই ব্যভিচারের অবস্থান। যার দরুন বিবাহিতের জন্য এর শাস্তিও জঘন্য হত্যা।

৬. কোন ঈমানদারের জন্য এ সংবাদ শ্রবণ করা সহজ যে, তার স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এ সংবাদ শ্রবণ করা তার জন্য অবশ্যই কঠিন যে, তার স্ত্রী কারোর সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছে।

হযরত সা’দ বিন উবাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ

“আমি কাউকে আমার স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার করতে দেখলে তৎক্ষনাৎই আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেবো”।

উল্লেখিত উক্তিটি রাসূল (সাঃ) এর কানে পৌঁছুতেই তিনি বললেনঃ

“তোমরা কি আশ্চর্য হয়েছো সা’দের আত্মসম্মানবোধ দেখে? আল্লাহ’র কসম খেয়ে বলছিঃ আমরা আত্মসম্মানবোধ তার চেয়েও বেশি এবং আল্লাহ তা’আলার আরো বেশি। যার দরুন তিনি হারাম করে দিয়েছেন প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল ধরণের অশ্লীলতাকে”। (বুখারী-হাদীস ৬৮৪৬, মুসলিম-হাদীস ১৪৯৯)

রাসূল (সাঃ) আরো বলেনঃ

“হে মুহাম্মাদ এর উম্মতরা! আল্লাহ’র কসম খেয়ে বলছিঃ আল্লাহ তা’আলার চাইতেও আর কারোর আত্মসম্মানবোধ বেশি হতে পারে না। এ কারণেই তার অসহ্য যে, তাঁর কোন বান্দাহ অথবা বান্দি ব্যভিচার করবে।”(বুখারী—হাদীস ১০৪৪, মুসলিম-হাদীস ৯০১)

৭. ব্যভিচারের সময় ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীর ঈমান সঙ্গে থাকে না।

হযরত আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ

“যখন কোন পুরুষ ব্যভিচার করে তখন তাঁর ঈমান তাঁর অন্তর থেকে বের হয়ে মেঘের ন্যায় তাঁর উপরে চলে যায়। অতঃপর যখন সে ব্যভিচার কর্ম সম্পাদন করে ফেলে তখন আবারো তাঁর ঈমান তাঁর নিকট ফিরে আসে।” (আবু দাউদ, হাদীস ৪৬৯০)

হযরত আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ

“যে ব্যক্তি ব্যভিচার অথবা মদ পান করলো আল্লাহ তা’আলা তাঁর ঈমান ছিনিয়ে নিবেন যেমনিভাবে কোন মানুষ তাঁর জামা নিজ মাথার উপর থেকে খুলে নেয়।” (হা’কিম ১/২২, কানযুল-হাদীস ১২৯৯৩)

৮. ব্যভিচারের কারণে ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীর ঈমানে ঘাটতি আসে।

হযরত আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ

“ব্যভিচারী যখন ব্যভিচার করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। চোর যখন চুরি করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। মদ পানকারী যখন মদ পান করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। তবে এরপরও তাদেরকে তাওবা করার সুযোগ দেয়া হয়।” (আবু দাউদ-হাদিস ৪৬৮৯,ম ইবনু মাজাহ-হাদীস ৪০০৭)

৯. ব্যভিচারের প্রচার-প্রসার কিয়ামতের অন্যতম আলামত।

রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ

“কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছেঃ ‘ইলমে উঠিয়ে নেয়া হবে, মূর্খতা ছেয়ে যাবে, (প্রকাশ্যে) মদ্য পান করা হবে এবং প্রকাশ্য ব্যভিচার সংঘটিত হবে। (বুখারী, হাদীস ৮০, মুসলিম, হাদীস ২৬৭১)

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) বর্ণিত তিনি বলেনঃ

“কোন এলাকায় সুদ ও ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়লে আল্লাহ তা’আলা তখন সে জনপদের জন্য ধ্বংসের অনুমতি দিয়ে দেন।”

১০. ব্যভিচারের শাস্তির মধ্যে এমন তিনটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অন্য কোন দণ্ডবিধিতে নেই। যা নিম্নরূপঃ

ক. বিবাহিত ব্যভিচারীর শাস্তি তথা হত্যা খুব ভয়ানক ভাবেই প্রয়োগ করা হয়। এমনকি অবিবাহিত ব্যভিচারীর শাস্তি কমানো হলেও তাতে দু’টি শাস্তি একত্রেই থেকে যায়। বেত্রাঘাতের মাধ্যমে শারীরিক শাস্তি এবং দেশান্তরের মাধ্যমে মানসিক শাস্তি।

খ. আল্লাহ তা’আলা এর শাস্তি দিতে গিয়ে ব্যভিচারী অথবা ব্যভিচারিণীর প্রতি দয়া করতে নিষেধ করেছেন।

গ. আল্লাহ তা’আলা এর শাস্তি জনসমক্ষে দেয়ার জন্য আদেশ করেছেন। লুক্কায়িতভাবে নয়।

১১. ব্যভিচার থেকে দ্রুত তাওবা করে খাঁটি নেক আমল বেশি বেশি করতে না থাকলে ব্যভিচারী অথবা ব্যভিচারিণীর খারাপ পরিমাণের বিপুল আশঙ্কা থাকে। মৃত্যুর সময় তাদের ঈমান নসীব নাও হতে পারে। কারণ, বার বার গুনাহ করতে থাকা ভালো পরিমাণের বিরাট অন্তরায়। বিশেষ করে কঠিন প্রেম ও ভালোবাসার ব্যাপার গুলো এমনই।

প্রসিদ্ধ একটি ঘটনায় রয়েছে, জনৈক ব্যক্তিকে মৃত্যুর সময় কালিমা পড়তে বলা হলে সে বলেঃ

“মিনজাবের গোসলখানায় কিভাবে যেতে হবে। কোন পথে?”

এর ঘটনায় বলা হয়, জনৈক ব্যক্তি তাঁর ঘরের দরোজায় দাঁড়ানো ছিলো। এমতাবস্থায় তাঁর পাশ দিয়ে জনৈকা সুন্দরী মহিলা যাচ্ছিলো। মহিলাটি তাকে মিনজাব গোসলখানার পথ জিজ্ঞাসা করলে সে তাঁর ঘরের দিকে ইশারা করে বললোঃ এটিই মিনজাব গোসলখানা। অতঃপর মহিলাটি তাঁর ঘরে ঢুকলে সেও তাঁর পেছনে পেছনে ঘরে ঢুকলো। মহিলাটি যখন দেখলো, সে অন্যের ঘরে এবং লোকটি তাকে ধোকা দিয়েছে তখন সে তাঁর প্রতি খুশি প্রকাশ করে বললোঃ তোমার সঙ্গে একত্রিত হতে পেরে আমি খুবই ধন্য। সুতরাং কিছু খাবার—দাবার ও আসবাবপত্র জোগাড় করা প্রয়োজন যাতে করে আমরা উভয় একত্রে শান্তিতে বসবাস করতে পারি। দ্রুত লোকটি ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র খরিদ করে আনলো। ফিরে এসে দেখলো, মহিলাটি ঘরে নেই। কারণ, সে ভুলবশত ঘরে তালা লাগিয়ে যায়নি। অথচ মহিলাটি যাওয়ার সময় ঘরের কোন আসবাবপত্র সঙ্গে নেইনি। তখন লোকটি আধ পাগল হয়ে গেলো এবং গলিতে গলিতে এ বলে ঘুরে বেড়াতে লাগলোঃ

“হে অমুক! যে একদা ক্লান্ত হয়ে বলেছিলে, মিনজাবের গোসলখানায় কিভাবে যেতে হয়। কোন পথে?”

একদা সে উক্ত ছন্দটি বলে বেড়াতে লাগলো এমন সময় জনৈকা মহিলা ঘরের জানালা দিয়ে প্রত্যুক্তি করে বললোঃ

“কেন তুমি তাকে পাওয়ার সাথে সাথে দ্রুত দরোজা বন্ধ করে ফেলোনি অথবা ঘরে তালা লাগিয়ে যাওনি?

তখন তাঁর চিন্তা আরো বেড়ে যায় এবং প্রথমোক্ত ছন্দ বলতে বলতেই তাঁর মৃত্যু হয়। নাঊযু বিল্লাহ।

১২. কোন জাতির মধ্যে ব্যভিচারের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার তাদের উপর আল্লাহ তা’আলার ব্যাপক আযাব নিপতিত হওয়ার এক বিশেষ কারণ।

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ

“কোন জাতির মধ্যে ব্যভিচারের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার ঘটলে তারা নিজেরাই যেন হাতে ধরে তাদের উপর আল্লাহ তা’আলার আযাব নিপতিত করলো।”(সা’হীহুত তারগীবি ওয়াত তারহীবি, হাদীস ২৪০২)

হযরত মাইমূনাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ

“আমার উম্মত সর্বদা কল্যাণের উপর থাকবে যতক্ষণ না তাদের মধ্যে জারজ সন্তানের আধিক্য দেখা না দিবে। যখন তাদের মধ্যে জারজ সন্তান বেড়ে যাবে তখনই আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে ব্যাপক আযাব দিবেন। (সা’হীহুত তারগীবি ওয়াত তারহীবি, হাদিস ২৪০০)

ব্যভিচারের স্তর বিন্যাসঃ

১. অবিবাহিতা মেয়ের সঙ্গে ব্যভিচার। এতে মেয়েটির সম্মানহানি ও চরিত্র বিনষ্ট হয়। কখনো কখনো ব্যাপারটি সন্তান হত্যা পর্যন্ত পৌঁছোয়।

২. বিবাহিতা মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার। এতে উপরন্ত স্বামীর সম্মানও বিনষ্ট হয়। তাঁর পরিবার ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছোয়। তাঁর বংশ পরিচয়ে ব্যাঘাত ঘটে। কারণ, সন্তানটি তারই বলে বিবেচিত হয়; অথচ সন্তানটি মূলতঃ তাঁর নয়।

যেন এমন ঘটনা ঘটতেই না পারে সে জন্য রাসূল (সাঃ) স্বামী অনুপস্থিত এমন মহিলার বিছানায় বসা ব্যক্তির এক ভয়ানক রূপ চিত্রায়ন করেছেন।

হযরত ‘আব্দুল্লাহ বিন ‘আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ

“যে ব্যক্তি স্বামী অনুপস্থিত এমন কোন মহিলার বিছানায় বসে তাঁর দৃষ্টান্ত সেই ব্যক্তির ন্যায় যাকে কিয়ামতের দিন কোন বিষাক্ত সাপ দংশন করে।”( সা’হীহুত তারগীবি ওয়াত তারহীবি, হাদীস ২৪০৫)

৩. যে কোন প্রতিবেশী মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার। এতে উপরন্ত প্রতিবেশীর অধিকারও বিনষ্ট হয় এবং তাকে চরম কষ্ট দেয়া হয়।

হযরত মিক্বাদাদ বিন আসওয়াদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ

“সাধারণ দশটি মহিলার সাথে ব্যভিচার করা এতো ভয়ঙ্কর নয় যতো ভয়ঙ্কর নিজ প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করা”। (আহমদ ৬/৮, সা’হীহুত তারগীবি ওয়াত তারহীবি, হাদীস ২৪০৪)

রাসূল (সাঃ) আরো ইরশাদ করেনঃ

“যার অনিষ্ট থেকে তাঁর প্রতিবেশী নিরাপদ নয় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না”।(মুসলিম, হাদীস ৪৬)

৪. যে প্রতিবেশি নামাযের জন্য অথবা ধর্মীয় জ্ঞানার্জনের জন্য কিংবা জিহাদের জন্য ঘর থেকে বের হয়েছে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার।

হযরত বুরাইদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ

“মুজাহিদদের স্ত্রীদের সম্মান যুদ্ধে না গিয়ে ঘরে বসে থাকা লোকদের নিকট তাদের মায়েদের সম্মানের মতো। কোন ঘরে বসে থাকা ব্যক্তি যদি কোন মুজাহিদ পুরুষের পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে তাদের তত্ত্বাবধানের ব্যাপারে আমানতের খিয়ানত করে তখন তাকে মুজাহিদ ব্যক্তির প্রাপ্য আদায়ের জন্য কিয়ামতের দিন দাঁড় করিয়ে রাখা হবে। অতঃপর মুজাহিদ ব্যক্তি ঘরে বসা ব্যক্তির আমল থেকে যা মনে চায় নিয়ে নিবে। রাসূল (সাঃ) বলেনঃ তোমাদের কি এমন ধারণা হয় যে, তাকে এতটুকু সুযোগ দেয়ার পরও সে এ প্রয়োজনের দিনে ওর সব আমল না নিয়ে ওর জন্য এতটুকুও রেখে দিবে? (মুসলিম, হাদিস ১৮৯৭)

৫. আত্মীয়া মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার। এতে উপরন্ত আত্মীয়তার বন্ধনও বিনষ্ট করা হয়।

৬. মাহরাম বা এগানা (যে মহিলাকে বিবাহ করা শরীয়তের দৃষ্টিতে চিরতরের জন্য হারাম) মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার। এতে উপরন্ত মাহরামের অধিকারও বিনষ্ট করা হয়।

৭. বিবাহিত ব্যক্তির ব্যভিচার। আর তা মারাত্মক এ জন্য যে, তাঁর উত্তেজনা প্রশমনের জন্য তো তাঁর স্ত্রীই রয়েছে। তবুও সে ব্যভিচার করে বসলো।

৮. বুড়ো ব্যক্তির ব্যভিচার। আর তা মারাত্মক এ জন্য যে, তাঁর উত্তেজনা তো তেমন আর উগ্র নয়। তবুও সে ব্যভিচার করে বসলো।

হযরত আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ

“তিন ব্যক্তির সঙ্গে আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তাদেরকে গুনাহ থেকে পবিত্র করবেন না, তাদের দিকে দয়ার দৃষ্টিতেও তাকাবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তিঃ বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যুক রাষ্ট্রপতি এবং অহঙ্কারী গরীব।” (মুসলিম, হাদীস ১০৭)

৯. মর্যাদাপুর্ণ মাস, স্থান ও সময়ের ব্যভিচার। এতে উপরন্ত উক্ত মাস, স্থান ও সময়ের মর্যাদা বিনষ্ট হয়।

কোন ব্যক্তি শয়তানের ধোকায় পড়ে ব্যভিচার করে ফেললে এবং তা কেউ না জানলে অথবা বিচারকের নিকট না পৌঁছুলে তাঁর উচিৎ হবে যে, সে তা লুকিয়ে রাখবে এবং আল্লাহ তা’আলার নিকট কায়মনোবাক্যে খাঁটি তাওবা করে নিবে। অতঃপর বেশি বেশি নেক আমল করবে এবং খারাপ জায়গা ও সাথি থেকে দূরে থাকবে।

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

“তিনিই (আল্লাহ তা’আলাহ) তাঁর বান্দাহদের তাওবা কবুল করেন এবং সমূহ পাপ মোচন করেন। আর তোমরা যা করো তাও তিনি জানেন”। (শূরাঃ ২৫)

হযরত ‘আব্দুল্লাহ বিন উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ

তোমরা ব্যভিচার থেকে দূরে থাকো যা আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এরপরও যে ব্যক্তি শয়তানের ধোকায় পড়ে তা করে ফেলে সে যেন তা লুকিয়ে রাখে। যখন আল্লাহ তা’আলা তা গোপনই রেখেছেন। তবে সে যেন এ জন্য আল্লাহ তা’আলার নিকট তাওবা করে নেয়। কারণ, যে ব্যক্তি তা আমাদের নিকট প্রকাশ করে দিবে তাঁর উপর আমরা অবশ্যই আল্লাহ তা’আলার বিধান প্রয়োগ করবো।” (হাকিম ৪/২৭২)

উক্ত কারণেই হযরত মা’য়িয বিন মা’লিক (রাঃ) যখন রাসূল (সাঃ) এর নিকট বার বার ব্যভিচারের স্বীকারোক্তি করছিলেন তখন রাসূল (সাঃ) তাঁর প্রতি এতটুকুও ভ্রূক্ষেপ করেননি। চার বারের পর তিনি তাকে এও বলেনঃ হয়তো বা তুমি তাকে চুমু দিয়েছো, ধরেছো কিংবা তাঁর প্রতি দৃষ্টিপাত করেছো। কারণ, এতে করে তিনি তাকে ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহ তা’আলার নিকট খাঁটি তাওবা করার সুযোগ করে দিতে চেয়েছিলেন।

হযরত আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ

“রাসূল (সাঃ) এর নিকট জনৈক মুসলমান আসলো। তখনো তিনি মসজিদে। অতঃপর সে রাসূল (সাঃ) কে ডেকে বললোঃ হে আল্লাহ’র রাসূল! আমি ব্যভিচার করে ফেলেছি। রাসূল (সাঃ) তাঁর প্রতি কোন রূপ ভ্রূক্ষেপ না করে অন্য দিকে তাঁর চেহারা মুবারক মুড়িয়ে নিলেন। সে রাসূল (সাঃ) এর চেহারা বরাবর এসে আবারো বললোঃ হে আল্লাহ’র রাসূল! আমি ব্যভিচার করে ফেলেছি। রাসূল (সাঃ) আবারো তাঁর প্রতি কোন রূপ ভ্রূক্ষেপ না করে অন্য দিকে তাঁর চেহারা মুবারক মুড়িয়ে নিলেন। এমন কি সে উক্ত স্বীকারোক্তি চার চার বার করলো। যখন সে নিজের উপর ব্যভিচারের সাক্ষ্য চার চার বার দিয়েছে তখন রাসূল (সাঃ) তাকে ডেকে বললেনঃ তুমি কি পাগল? সে বললোঃ না। রাসূল (সাঃ) বললেনঃ তুমি কি বিবাহিত? সে বললোঃ জী হ্যাঁ। অতঃপর রাসূল (সাঃ) সাহাবাদেরকে বললেনঃ তোমরা একে নিয়ে যাও এবং রজম তথা প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করো”। (বুখারী, হাদিস ৫২৭১, মুসলিম, হাদিস ১৬৯১)

হযরত বুরাইদাহ (রাঃ) এর বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল (সাঃ) হযরত মা’য়িয বিন মা’লিক কে বলেছিলেনঃ

“আহা! তুমি ফিরে যাও। অতঃপর আল্লাহ তা’আলার নিকট ক্ষমা চাও এবং তাঁর নিকট তাওবা করে নাও। (মুসলিম, হাদিস ১৬৯৫)

হযরত ‘আব্দুল্লাহ বিন’ আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ

“যখন মা’য়িয বিন মা’লিক (রাঃ) নবী (সাঃ) এর নিওট আসলো তখন তিনি তাকে বললেনঃ হয়তো বা তুমি তাকে চুমু দিয়েছো, ধরেছো কিংবা তাঁর প্রতি দৃষ্টিপাত করেছো। সে বললোঃ না, হে আল্লাহ’র রাসূল! (বুখারী, হাদিস ৬৮২৪)

তবে বিচারকের নিকট ব্যাপারটি (সাক্ষ্য সবুতের মাধ্যমে) পৌঁছুলে অবশ্যই তাকে বিচার করতে হবে। তখন আর কারোর ক্ষমার ও সুপারিশের সুযোগ থাকে না।

এ কারণেই রাসূল (সাঃ) সাফওয়ান বিন উমাইয়াহকে চোরের জন্য সুপারিশ করতে চাইলে তাকে বললেনঃ

“আমার নিকট আসার পূর্বেই কেন তা করলে না”। (আবু দাউদ, হাদিস ৪৩৯৪, ইবনু মাজাহ, হাদিস ২৬৪৪, নাসায়ী ৮/৬৯, আহমাদ ৬/৪৬৬ হা’কিম ৪/৩৮০ ইবনুল জারূদ, হাদিস ৮২৮)

তেমনিভাবে হযরত উসামাহ (রাঃ) জনৈকা ক্বুরাশী চুন্নি মহিলার জন্য সুপারিশ করতে চাইলে রাসূল (সাঃ) তাকে অত্যন্ত রাগতস্বরে বললেনঃ

“তুমি কি আল্লাহ তা’আলার দণ্ডবিধির ব্যাপারে সুপারিশ করতে আসলে?!”( বুখারী, হাদিস ৬৭৮৮ মুসলিম, হাদিস ১৬৮৮ আবু দাউদ, হাদিস ৪৩৭৩ তিরমিযী, হাদিস ১৪৩০ ইবনু মাজাহ, হাদিস ২৫৯৫)

হযরত ‘আব্দুল্লাহ বিন’ আমর বিন আস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ

“তোমরা দন্ডবিধি সংক্রান্ত ব্যাপারগুলো একে অপরকে ক্ষমা করো। কারণ, আমার নিকট এর কোন একটি পৌঁছুলে তা প্রয়োগ করা আমার উপর আবশ্যক হয়ে যাবে।”( আবু দাউদ, হাদিস ৪৩৭৬)

শুধুমাত্র তিনটি পদ্ধতিতেই কারোর উপর ব্যভিচারের দোষ প্রমাণিত হয়। যা নিম্নরূপঃ

১. ব্যভিচারী একবার অথবা চারবার ব্যভিচারের সুস্পষ্ট স্বীকারোক্তি করলে। কারণ, জুহাইনী মহিলা ও উনাইস (রাঃ) এর রজমকৃত মহিলা ব্যভিচারের স্বীকারোক্তি একবারই করেছিল। অন্য দিকে হযরত মা’য়িয বিন মা’লিক (রাঃ) রাসূল (সাঃ) এর নিকট চার চারবার ব্যভিচারের স্বীকারোক্তি করেছিলো। কিন্তু সংখ্যার ব্যাপারে হাদিসটির বর্ণনা সমূহ মুযতারিব তথা এক কথার নয়। কোন কোন বর্ণনায় চার চার বারের কথা। কোন কোন বর্ণনায় তিন তিন বারের কথা। আবার কোন কোন বর্ণনায় দু’দু বারের কথারও উল্লেখ্য রয়েছে। তবুও চার চারবার স্বীকারোক্তি নেয়াই সর্বোত্তম। কারণ, হতে পারে স্বীকারোক্তিকারী এমন কাজ করেছে যাতে সে শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত হয় না। যা বার বার স্বীকারোক্তির মাধ্যমে প্রকাশ পেতে পারে। আর এ কথা সবারই জানা যে, ইসলামী দণ্ডবিধি যে কোন যুক্তি সঙ্গত সন্দেহ কিংবা অজুহাতের কারণে রহিত হয়। যা হযরত ‘উমর, আব্দুল্লাহ বিন’ আব্বাস এবং অন্যান্য সাহাবা (রাঃ) থেকেও বর্ণিত। ‘আল্লামা ইবনুল মুনযির্‌ (রাহিমাহুল্লাহ) এ ব্যাপারে ‘উলামায়ে কিরামের ঐকমত্যেরও দাবি করেছেন। তেমনিভাবে চার চারবার স্বীকারোক্তির মাধ্যমে ব্যভিচারীকে ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহ তা’আলার নিকট খাঁটি তাওবা করারও সুযোগ দেয়া হয়। যা একান্ত ভাবেই কাম্য।

তবে স্বীকারোক্তির মধ্যে ব্যভিচারের সুস্পষ্ট উল্লেখ এবং দন্ডবিধি প্রয়োগ পর্যন্ত স্বীকারোক্তির উপর স্বীকারকারী অটল থাকতে হবে। অতএব কেউ যদি এর আগেই তাঁর স্বীকারোক্তি পরিহার করে নেয় তা হলে তাঁর কথাই তখন গ্রহণযোগ্য হবে। তেমনিভাবে স্বীকারকারী জ্ঞানসম্পন্নও হতে হবে।

২. ব্যভিচারের ব্যাপারে চার চার জন সত্যবাদী পুরুষ এ বলে সুস্পষ্ট সাক্ষ্য দিলে যে, তারা সত্যিকারার্থে ব্যভিচারী ব্যক্তির সঙ্গম কর্ম স্বচক্ষে দেখেছে।

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

“তোমাদের স্ত্রীদের মধ্য থেকে কেউ ব্যভিচার করলে তোমরা তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য থেকে চার চার জন সাক্ষী সংগ্রহ করো।” (নিসাঃ ১৫)

৩. কোন মহিলা গর্ভবতী হলে, অথচ তাঁর স্বামী নেই।

হযরত ‘উমর (রাঃ) তাঁর যুগে এমন একটি বিচারে রজম করেছেন। তবে এ প্রমাণ হেতু যে কোন মহিলার উপর দন্ডবিধি প্রয়োগ করতেই হবে ব্যাপারটি এমন নয়। এ জন্য যে, গর্ভটি সন্দেহবশত সঙ্গমের কারণেও হতে পারে অথবা ধর্ষণের কারণেও। এমনকি মেয়েটি গভীর নিদ্রায় থাকাবস্থায়ও তাঁর সঙ্গে উক্ত ব্যভিচার কর্মটি সংঘটিত হতে পারে। তাই হযরত ‘উমর (রাঃ) তাঁর যুগেই শেষোক্ত দু’টি অজুহাতে দু’জন মহিলাকে শাস্তি দেননি। তবে কোন মেয়ে যদি গর্ভবতী হয়, অথচ তাঁর স্বামী নেই এবং সে এমন কোন যুক্তি সঙ্গত অজুহাতও দেখাচ্ছে না যার দরুন দন্ডবিধি রহিত হয় তখন তাঁর উপর ব্যভিচারের উপযুক্ত দন্ডবিধি প্রয়োগ করা যেতে পারে।

হযরত ‘উমর (রাঃ) তাঁর এক দীর্ঘ খুতবায় বলেনঃ

“নিশ্চয়ই রজম আল্লাহ তা’আলার বিধানে এমন পুরুষ ও মহিলার জন্যই নির্ধারিত যারা ব্যভিচার করেছেন, অথচ তারা বিশুদ্ধ বিবাহের মাধ্যমে ইতিপূর্বে নিজ স্ত্রী অথবা স্বামীর সাথে সম্মুখে পথে সঙ্গম করেছে এবং স্বামী-স্ত্রী উভয় জনই তখন ছিলো প্রাপ্তবয়স্ক ও স্বাধীন যখন ব্যভিচারের উপযুক্ত সাক্ষী-প্রমাণ মিলে যায় অথবা মহিলা গর্ভবতী হয়ে যায় অথবা ব্যভিচারী কিংবা ব্যভিচারিণী ব্যভিচারের ব্যাপারে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি দেয়।

যিনা – ব্যভিচারের শাস্তি

কেউ শয়তানের ধোকায় পড়ে ব্যভিচার করে ফেললে সে যদি অবিবাহিত হয় তাহলে তাকে একশ’টি বেত্রাঘাত ও এক বছরের জন্য দেশান্তর করা হবে। আর যদি সে বিবাহিত হয় তা হলে তাকে রজম তথা পাথর মেরে হত্যা করা হবে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

আরবি : ﴾ اَلزَّانِیَۃُ وَ الزَّانِیۡ فَاجۡلِدُوۡا کُلَّ وَاحِدٍ مِّنۡهُمَا مِائَۃَ جَلۡدَۃٍ ۪ وَّ لَا تَاۡخُذۡکُمۡ بِهِمَا رَاۡفَۃٌ فِیۡ دِیۡنِ اللّٰهِ اِنۡ کُنۡتُمۡ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ ۚ وَ لۡیَشۡهَدۡ عَذَابَهُمَا طَآئِفَۃٌ مِّنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۲

“ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী; তাদের প্রত্যেককে তোমরা একশ’ করে বেত্রাঘাত করবে। আল্লাহ’র বিধান কার্যকরী করণে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে প্রভাবিত করতে না পারে যদি তোমরা আল্লাহ তা’আলা ও পরকালে বিশ্বাসী হয়ে থাকো এবং মু’মিনদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে”। (নূরঃ ২)

হযরত আবু হুরাইরাহ ও হযরত যায়েদ বিন খালিদ জুহানী (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তারা বলেনঃ

“জনৈক বেদুঈন ব্যক্তি রাসূল (সাঃ) এর নিকট এসে বললোঃ হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আমাদের মাঝে কোর’আনের ফায়সালা করুন। তাঁর প্রতিপক্ষও দাঁড়িয়ে বললোঃ সে সত্য বলেছে। আপনি আমাদের মাঝে কোর’আনের ফায়সালা করুন। তখন বেদুঈন ব্যক্তিটি বললোঃ আমার ছেলে এ ব্যক্তির নিকট কামলা খাটতো। ইতিমধ্যে সে এর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করে বসে। সবাই আমাকে বললোঃ তোমার ছেলেটিকে পাথর মেরে হত্যা করতে হবে। তখন আমি আমার ছেলেকে ছাড়িয়ে নেই একে একটি বান্দি ও একশ’টি ছাগল দিয়ে। অতঃপর আলিমদেরকে জিজ্ঞাসা করলে তারা বললোঃ তোমার ছেলেকে একশ’টি বেত্রাঘাত ও এক বছরের জন্য দেশান্তর করতে হবে। এরপর নবী (সাঃ) বললেনঃ আমি তোমাদের মাঝে কোর’আনের বিচার করছি, বান্দি ও ছাগলগুলো তোমাকে ফেরত দেয়া হবে এবং তোমার ছেলেকে একশ’টি বেত্রাঘাত ও এক বছরের জন্য দেশান্তর করতে হবে। আর হে উনাইস! তুমি এর স্ত্রীর নিকট যাও। উতপর তাকে রজম করো। অতএব উনাইস তাঁর নিকট গেলো। অতঃপর তাকে রজম করলো।” (বুখারী, হাদিস ২৬৯৫, ২৬৯৬ মুসলিম, হাদিস ১৬৯৭, ১৬৯৮ তিরমিযী, হাদিস ১৪৩৩ আবু দাউদ, হাদিস ৪৪৪৫ ইবনু মাজাহ, হাদিস ২৫৯৭)

হযরত ‘উবাদা বিন স্বামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ

“তোমরা আমার নিকট থেকে বিধানটি সংগ্রহ করে নাও। তোমররা আমার নিকট থেকে বিধানটি সংগ্রহ করে আন্ব। আল্লাহ তা’আলা তাদের জন্য একটি ব্যবস্থা দিয়েছেন তথা বিধান অবতীর্ণ করেছেন। অবিবাহিত যুবক-যুবতীর শাস্তি হচ্ছে, একশ’টি বেত্রাঘাত ও এক বছরের জন্য দেশান্তর। আর বিবাহিত পুরুষ ও মহিলার শাস্তি হচ্ছে, একশ’টি বেত্রাঘাত ও রজম তথা পাথর মেরে হত্যা”। (মুসলিম, হাদিস ১৬৯০ আবু দাউদ, হাদিস ৪৪১৫, ৪৪১৬ তিরমিযী, হাদিস ১৪৩৪ ইবনু মাজাহ, হাদিস ২৫৯৮)

উক্ত হাদীসে বিবাহিত পুরুষ এ মহিলাকে একশ’টি বেত্রাঘাত করার কথা থাকলেও তা করতে হবে না। কারণ, রাসূল (সাঃ) হযরত মা’য়িয ও গা’মিদী মহিলাকে একশ’টি করে বেত্রাঘাত করেননি। বরং অন্য হাদিসে তাদেরকে শুধু রজম করারই প্রমাণ পাওয়া যায়।

আরেকটি কথা হচ্ছে, শরীয়তের সাধারণ নিয়ম এই যে, কারোর উপর কয়েকটি দন্ডবিধি একত্রিত হলে এবং তাঁর মধ্যে হত্যার বিধানও থাকলে তাকে শুধু হত্যাই করা হয়। অন্যগুলো করা হয় না। হযরত ‘উমার ও উসমান (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) এটির উপরই আমল করেছেন এবং হযরত ‘আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকেও ইহা বর্ণিত হয়েছে। তবে হযরত আলী (রাঃ) তাঁর যুগে কোন এক ব্যক্তিকে রজমও করেছেন এবং বেত্রাঘাতও। হযরত ‘আব্দুল্লাহ বিন’ আব্বাস, উবাই বিন কা’ব এবং আবু যরও এ মত পোষণ করেন।

হযরত আব্দুল্লাহ বিন’ উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ

“রাসূল (সাঃ) মেরেছেন (বেত্রাঘাত করেছেন) ও দেশান্তর করেছেন, হযরত আবু বকর (রাঃ) মেরেছেন ও দেশান্তর করেছেন এবং হযরত ‘উমার (রাঃ) মেরেছেন ও দেশান্তর করেছেন।”(তিরমিযি, হাদিস ১৪৩৮)

হযরত ‘ইমরান বিন ‘হুস্বাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ

“একদা জনৈক জুহানী মহিলা রাসূল (সাঃ) এর নিকট আসলো। তখন সে ব্যভিচার করে গর্ভবতী। সে বললোঃ হে আল্লাহ’র নবী! আমি ব্যভিচারের শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত। অতএব আপনি তা আমার উপর প্রয়োগ করুন। অতঃপর রাসূল (সাঃ) তাঁর অভিভাবককে ডেকে বললেনঃ এর উপর একটু দয়া করো। এ যখন সন্তান প্রসব করবে তখন তুমি তাকে আমার নিকট নিয়ে আসবে। লোকটি তাই করলো। অতঃপর রাসূল (সাঃ) আদেশ করলে তাঁর কাপড় শরীরের সাথে শক্ত করে বেধে দেয়া হলো। এরপর তাকে রজম করা হলে রাসূল (সাঃ) তাঁর জানাযার নামায পড়ান। হযরত ‘উমর (রাঃ) রাসূল (সাঃ) কে আশ্চর্যান্বিতের স্বরে বললেনঃ আপনি এর জানাযার নামায পড়াচ্ছেন, অথচ সে ব্যভিচারিণী?! রাসূল (সাঃ) বললেনঃ সে এমন তাওবা করেছে যা মদীনাবাসীর সত্তরজনকে বন্টন করে দেয়া হলেও তা তাদের জন্য যথেষ্ট হবে। তুমি এর চাইতেও কি উৎকৃষ্ট কিছু পেয়েছো যে তাঁর জীবন আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির জন্য বিলিয়ে দিয়েছে।”(মুসলিম, হাদিস ১৬৯৬ আবু দাউদ, হাদিস ৪৪৪০ তিরমিযি, হাদিস ১৪৩৫ ইবনু মাজাহ, হাদিস ২৬০৩)

হযরত ‘উমার (রাঃ)’ তাঁর এক দীর্ঘ খুতবায় বলেনঃ

“নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা মুহাম্মাদ (সাঃ) কে সত্য ধর্ম দিয়ে পাঠিয়েছেন এং তাঁর উপর কোর’আন অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহ তা’আলা তাঁর উপর যা অবতীর্ণ করেছেন তাঁর মধ্যে রজমের আয়াতও ছিলো। আমরা তা পড়েছি, মুখস্থ করেছি ও বুঝেছি। অতঃপর রাসূল (সাঃ) রজম করেছেন এবং আমরাও তাঁর ইন্তেকালের পর রজম করেছি। আশঙ্কা হয় বহু কাল পর কেউ বলবেঃ আমরা কোর’আন মাজীদে রজম পাইনি। অতঃপর তারা আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত একটি ফরয কাজ ছেড়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।” (বুখারী, হাদিস ৬৮২৯ মুসলিম, হাদিস ১৬৯১ আবু দাউদ, হাদিস ৪৪১৮)

হযরত ‘উমর (রাঃ) যে আয়াতের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন তা হচ্ছেঃ

“বয়স্ক (বিবাহিত) পুরুষ ও মহিলা যখন ব্যভিচার করে তখন তোমরা তাদেরকে সন্দেহাতীতভাবে পাথর মেরে হত্যা করবে। এটি হচ্ছে আল্লাহ তা’আলার পক্ষে থেকে তাদের জন্য শাস্তিস্বরূপ এবং আল্লাহ তা’আলা পরাক্রমশালী ও সুকৌশলী।

উক্ত আয়াতটির তিলাওয়াত রহিত হয়েছে। তবে উহার বিধান এখনও চালু। কোন অবিবাহিত ব্যভিচারী কিংবা ব্যভিচারিণী যদি এমন অসুস্থ অথবা দুর্বল হয় যে, তাকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে একশ’টি বেত একত্র করে একবার প্রহার করা হবে।

হযরত সা’ঈদ বিন সা’দ বিন ‘উবা’দাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ

“আমাদের এলাকায় জনৈক দুর্বল ব্যক্তি বসবাস করতো। হঠাৎ সে জনৈকা বান্দির সাথে ব্যভিচার করে বসে। ব্যাপারটি সা’ঈদ (রাঃ) রাসূল (সাঃ) কে জানালে তিনি বললেনঃ তাকে তাঁর প্রাপ্য শাস্তি দিয়ে দাও তথা একশ’টি বেত্রাঘাত করো। উপস্থিত সকলে বললোঃ হে আল্লাহ’র রাসূল! সে তো তা সহ্য করতে পারবে না। তখন রাসূল (সাঃ) বললেনঃ একটি খেজুর বিহীন একশ’টি শাখাগুচ্ছ বিশিষ্ট থোকা নিয়ে তাকে তা দিয়ে এক বার মারবে। অতএব তাঁর তাই করলো।”(আহমাদ ৫/২২২, ইবনু মাজাহ, হাদিস ২৬২২)

অমুসলমানকেও ইসলামী বিচারাধীন রজম করা যেতে পারে।

হযরত জা’বির বিন ‘আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ

“নবী (সাঃ) আস্‌লাম বংশের একজন পুরুষকে এবং একজন ইহুদী পুরুষ ও একজন মহিলাকে রজম করেন।”(মুসলিম, হাদিস ১৭০১)

ব্যভিচারের কারণে কোন সন্তান জন্ম নিলে এবং ভাগ্যক্রমে সে জীবনে বেঁচে থাকলে তাঁর মায়ের সন্তান সন্তান রূপেই সে পরিচয় লাভ করবে। বাপের নয়। কারণ, তাঁর কোন বৈধ বাপ নেই। অতএব ব্যভিচারীর পক্ষ থেকে সে কোন মিরাস পাবে না।

হযরত আবু হুরাইরাহ ও হযরত ‘আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তারা বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ

“সন্তান মহিলারই এবং ব্যভিচারীর জন্য শুধু পাথর তথা রজম।”(বুখারী, হাদিস ২০৫৩, ২২১৮, ৬৮১৮ মুসলিম, হাদিস ১৪৫৭, ১৪৫৮ ইবনু হিব্বান, হাদিস ৪১০৪ বায়হাক্বী, হাদিস ১৫১০৬ আবু দাউদ, হাদিস ২২৭৩ ইবনু মাজাহ, হাদিস ২০৩৫, ২০৩৭ আহমাদ, হাদিস ৪১৬, ৪১৭)

হযরত ‘আব্দুল্লাহ বিন ‘আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ)

“যে ব্যক্তি কোন বান্দি অথবা স্বাধীন মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার করলো তাঁর সন্তান হবে ব্যভিচারের সন্তান। সে মিরাস পাবে না এবং তাঁর মিরাসও কেউ পাবে না”। (ইবনু মাজাহ, হাদিস ২৭৯৪)

যে কোন ঈমানদার পবিত্র পুরুষের জন্য কোন ব্যভিচারিণী মেয়েকে বিবাহ করা হারাম। তেমনিভাবে যে কোন ঈমানদার সতী মেয়ের জন্যও কোন ব্যভিচারী পুরুষকে বিবাহ করা হারাম।

“একজন ব্যভিচারী পুরুষ আরেকজন ব্যভিচারিণী অথবা মুশরিকা মেয়েকেই বিবাহ করে এবং একজন বুভিচারিণী মেয়েকে আরেকজন ব্যভিচারী পুরুষ অথবা মুশ্‌রিকই বিবাহ করে। মু’মিনদের জন্য তা করা হারাম”।(নূরঃ ৩)

যিনা ব্যভিচারের দণ্ডবিধি সংক্রান্ত কিছু কথাঃ

কাউকে লুক্কায়িতভাবে ব্যভিচার কিংবা যে কোন হারাম কাজ করতে দেখলে তা তড়িঘড়ি বিচারককে না জানিয়ে তাকে ব্যক্তিগতভাবে নসীহত করা ও পরকালে আল্লাহ তা’আলার কঠিন শাস্তির ভয় দেখানো উচিৎ।

হযরত আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ

“কোন মুসলমানের দোষ লুকিয়ে রাখলে আল্লাহ তা’আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তাঁর দোষও লুকিয়ে রাখবেন”। (তিরমিযী, হাদিস ১৪২৫ ইবনু মাজাহ, হাদিস ২৫৯২)

দণ্ডবিধি প্রয়োগের সময় চেহারার প্রতি লক্ষ্য রাখবেঃ

কারোর উপর শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত কোন দণ্ডবিধি প্রয়োগ করার সময় তাঁর চেহারার প্রতি অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে তা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ক্ষত-বিক্ষত না হয়ে যায়।

হযরত আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ

“কেউ কাউকে (দন্ডবিধি প্রয়োগের ক্ষেত্রে) মারলে তাঁর চেহারার প্রতি অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে রাখবে যাতে তা আঘাতপ্রাপ্ত না হয়।”(বুখারী, হাদিস ৫৫৯ মুসলিম, হাদিস ২৬১২ আবু দাউদ, হাদিস ৪৪৯৩)

যে কোন দণ্ডবিধি মসজিদে প্রয়োগ করা যাবে না।

হযরত ‘আব্দুল্লাহ বিন’ আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ

“মসজিদে কোন দণ্ডবিধি কামেয় করা যাবে না।”(ইবনু মাজাহ, হাদিস ২৬৪৮)

হযরত ‘হাকিম বিন’ হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ

“রাসূল (সাঃ) মসজিদে কারোর থেকে প্রতিশোধ নিতে, কবিতা আবৃত্তি করতে ও দন্ডবিধি কামেয় করতে নিষেধ করেছেন।” (আবু দাউস, হাদিস ৪৪৯০)

দুনিয়াতে কারোর উপর শরীয়তের কোন দন্ডবিধি কায়েম করা হলে তা তাঁর জন্য কাফফারা হয়ে যায় তথা তাঁর অপরাধটি ক্ষমা করে দেয়া হয়। পরকালে এ জন্য তাকে কোন শাস্তি দেয়া হবে না।

হযরত ‘উবা’দাহ বিন স্বা’মিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ০ ইরশাদ করেনঃ

“যে ব্যক্তি (শয়তানের ধোকায় পড়ে) এমন কোন হারাম কাজ করে ফেলেছে যাতে শরীয়তের নির্দিষ্ট কোন দণ্ডবিধি রয়েছে। অতঃপর তাকে দুনিয়াতেই সে দণ্ড দেয়া হয়েছে। তখন তা তাঁর জন্য কাফ্‌ফারা হয়ে যাবে। আর যদি তা তাঁর উপর প্রয়োগ না করা হয় তা হলে সে ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলাই ভালো জানেন। চায়তো আল্লাহ তা’আলা তাকে পরকালে শাস্তি দিবেন নয়তো বা ক্ষমা করে দিবেন। (তিরমিযী, হাদিস ১৪৩৯ ইবনু মাজাহ, হাদিস ২৬৫২)

কোন এলাকায় ইসলামের যে কোন দন্ডবিধি একবার প্রয়োগ করা সে এলাকায় চল্লিশ দিন যাবত বারি বর্ষণ থেকেও অনেক উত্তম।

সমাপ্ত।

সূত্রঃ হারাম ও কবীরা গুনাহ বই থেকে নেওয়া। 

সম্পাদনায়ঃ মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ

আরও পড়তে পারেনঃ আদর্শ স্বামী স্ত্রী ১ (দাম্পত্য জীবনের গল্প) 

প্রিয় পাঠক পাঠিকা, আপনিও হোন ইসলামের বাণী প্রচারক। যিনা ব্যভিচারের শাস্তি সম্পর্কে আপনার বন্ধুদেরকে জানাতে এটি আপনার ফেসবুক, টুইটার সহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে অন্যদেরকে যেনা ব্যভিচারের ক্ষতি ও শাস্তি ও আযাব সম্পর্কে জানিয়ে তাদেরকে সতর্ক করুণ।

For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.

Leave a Comment