পর্দাহীন যুবতী এবং লম্পট। (ইভটিজিং এর গল্প)
“হায়রে সোনার বাংলাদেশ! কী অবস্থা এ এদেশের? অশ্লীলতা আর নগ্নতায় ছেয়ে গেছে পুরো দেশ। একটু শান্তিতে বসবাস করার জায়গা যেন এ দেশের কোথাও নেই। যেদিকে তাকাই সেদিকেই উলঙ্গপনা আর বেহায়াপনা। এ অবস্থা আর কতদিন চলবে এদেশে? আর কতদিন চোখ বুজে সইব এসব আচরণ? এর কি কোনো সমাধান নেই? নেই কি কোনো প্রতিকার-প্রতিরোধ? হ্যাঁ, সমাধান একটা বের করতেই হবে। দেয়ালে এবার পিঠ ঠেকে গেছে। নিজকে রক্ষা করার জন্য, নিজের মাতৃভূমিকে বাঁচানোর জন্য কিছু একটা করতেই হবে। নচেৎ এভাবে বেঁচে থেকে কোনো লাভ নেই। যুবতী মেয়েরা সমান অধিকারের ধোঁয়া তুলে কোনো লাভ নেই। যুবতী মেয়েরা সমান অধিকারের ধোঁয়া তুলে সেজেগুজে আটঁসাট পোষাক পরে অর্ধউলঙ্গ হয়ে যুবসমাজকে নষ্ট করছে। ধ্বংসের অতল গহ্বরে নামিয়ে দিচ্ছে—এ অসভ্য জাতি। না, এসব আর করতে দেওয়া হবে না।”
আনমনে কথা কয়টি বলতে বলতে আমাদের ঘরে প্রবেশ করল নাজমুল ভাই।
পর্দার আড়াল থেকে আমি নাজমুল ভাইয়ের সবগুলো কথা শুনছিলাম। মুখ থেকে ‘এ অসভ্য জাতি’ কথাটি শুনে আমার মধ্যে সাংঘাতিক রকমের রাগ এসে যায়। কারণ আমিও একটি মেয়ে। তাই নাজমুল ভাইকে উদ্দেশ করে বলেই ফেললাম, নাজমুল ভাই! একি বলছেন আপনি? সব মেয়েই কি অসভব্য? সবাইকে এক করে কথা বলছেন কেন? কী ব্যাপার! কোনো কিছু ঘটেছে নাকি?
হ্যাঁ, ঘটেছেই তো! কোনো কিছু না ঘটলে কি এসব কথা সাধে বলি!
কী ঘটেছে? আমি জানতে চাইলাম।
সুন্নাহ! তুই কি জানিস?………….
কী জানব? জানালে তো জানব। নাজমুল ভাইয়ের কথাটা শেষ করতে না দিয়েই বলে ফেললাম।
আমাকে বলার সুযোগ দিবি তো! তবেই না জানতে পারবি।
ঠিক আছে বলুন।
নাজমুল ভাই বলতে লাগলেন—মানুষ যখন ভদ্রতার সীমা লঙ্ঘন করে, তখন তাকে অভদ্র ভলা হয়। আর যখন সভ্যতার সীমা অতিক্রম করে তখন তাকে অসভ্য বলে আখ্যায়িত করা হয়।
আমি বললাম, ও আচ্ছা! হয়তো কোনো মেয়ে সভ্যতার সীমা অতিক্রম করেছে। আর এ জন্যেই তাকে অসভ্য বলছেন। তাই না নাজমুল ভাই?
হ্যাঁ, ব্যাপারটি তাই। লম্পট ছেলেটির কবলে পড়া অসভ্য মেয়েটির সাহায্য আমি যদি এগিয়ে না যেতাম.. তাহলে কী যে….!
নাজমুল ভাইয়ের কথাটা আবারও শেষ করতে দিলাম না। ঘটনার আগা-গোড়া না বুঝেই তাঁর মুখ থেকে কথাটা কেড়ে নিয়ে বললাম, তাহলে হয়তো মেয়েটার সম্ভ্রমহানী হতো। তাই না?
নাজমুল ভাই বলল—হ্যা, তুই ঠিকই ধরেছিস।
আচ্ছা নাজমুল ভাই, আসল ঘটনাটি একটু খুলে বলুন তো?
নাজমুল নভাই বলতে লাগলেন—ঘটনাটি আমাদের শায়েস্তাগঞ্জেই ঘটেছে। আজ সকালে আমি শায়েস্তাগঞ্জ শহরে যাওয়ার জন্য রেলপথ ধরে হাঁটছিলাম। আমার হাতে একটি দৈনিক পত্রিকা। হঠাৎ কি এক কারণে আমি পিছনে তাকাই। দেখি একটি মেয়ে আমাকে অনুসরণ করে আমার পিছনে পিছনে আসছে। ওর হাতে একটি খাতা। ভাবসাব দেখে কলেজের ছাত্রী বলে মনে হলো।
মেয়েটির দিকে দৃষ্টি পড়তেই আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম। কারণ, তাঁর পোষাক আষাক ও সাজগোজ ছিল পশ্চিমা স্টাইলের। যা দেখে ইবলিশ শয়তানও বোধ হয় হার মানতে বাধ্য হবে। তাছাড়া বেগানা মেয়েদের প্রতি দৃষ্টি ফেলাকে ইসলাম কঠোরভাবে নিষেধ করেছে।
মেয়েটির পরণে কী ছিল নাজমুল ভাই? কথার মাঝখান দিয়ে আমি জিজ্ঞেস করলাম।
নাজমুল ভাই বললেন, জিন্সের প্যান্ট ও পাতলা শর্ট কামিজ। গলায় অবশ্য একটি ফিনিফিনে পাতলা উড়না পেঁচানো ছিল। যা থাকা না থাকা সমান। কারণ ওড়নার জায়গায় যদি ওড়না না থাকে, অথব ওড়নাটি যদি এমন হয়, যাদ্বারা ওড়না পরিধানের মূল উদ্দেশ হাসিল হয় না, তা পরিধান করে লাভ কি!
মেয়েটি কি খুব সুন্দরী ছিল?
খুব বেশি সুন্দরীও নয় আবার খুব একটা খারাপও নয়। তবে ওর চলার ধরনে বুঝা যাচ্ছিল ওর ভিতরে রয়েছে আকাশছোঁয়া অহঙ্কার। ভাবখানা এমন, যেন তার মত সুন্দরী এ নশ্বর পৃথিবীতে আর কেউ নেই। কেউ বোধ হয় তাঁর মত অ্যাকটিং করে হাঁটতেও পারবে না। বিশ্বাস কর সুন্নাহ! মেয়েটির এরূপ অবস্থা দেখে মনে মনে ভাবলাম, এভাবে বেপর্দা অবস্থায় নির্জন রাস্তায় চলাফেরা করলে কখন যে কোন অঘটনা ঘটে যায় বলা যায় না। সেই সাথে এও ভাবলাম যে, মেয়েটির অভিভাবকরাও কেমন যে, লাগামহীনভাবে বোরকা ছাড়া এভাবে ওকে ছেড়ে দিল?
আমি যখন কথাগুলো ভাবছিলাম, তখনই একটি ছেলে আমাকে পাশ কেটে চলে গেল। আমি কল্পনাও করতে পারি নি যে, আমি যা ভাবছিলাম তা এখনি ঘটতে যাচ্ছে।
ছেলেটি আমাকে পাশ কেটে পিছনে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটির ঝাঁঝালো কণ্ঠ শুনতে পেলাম। সে বলছিল, এই অসভ্য লম্পট! তোর কি মা-বোন নেই?
মেয়েটি কেন বা কী কথার পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা বলল তা অবশ্য আমি শুনতে পাই নি। তাঁর কথার জবাবে দুষ্টুমির হাসি হেসে ছেলেটি বলল, মা-বোন থাকলে কি আর তোমার কাছে এসেছি? এই বলে সে গলায় পেঁচানো ওড়নাটি ধরে টানতে শুরু করল।
এবার মেয়েটির গলার আওয়াজ আরো বাড়লো। সে বলতে লাগল, এই বদমায়েশ! আমার ওড়না ছেড়ে দে বলছি? না হয় এখনি চিৎকার দিয়ে মানুষ ডাকব।
ছেলেটি বলল, ওড়না ছাড়ার জন্য তো ধরি নি!
মেয়েটি যখন বুঝল, এ লম্পট তাকে ছাড়বে না, তখন সে উপায়ন্তর না দেখে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার শুরু করল।
ইতোমধ্যে কী হয়েছে কী হয়েছে বলে আমি ঘটনাস্থালে হাজির হই। লম্পট ছেলেটা আমাকে দেখেই বিদ্রুপের হাসি হেসে বলে, আপনি মোল্লা মানুষ। এসবের কিছুই বুঝবেন না। যে দিকে হাঁটছিলেন সেদিকেই হাঁটতে থাকুন। স্বাস্থ্য ভাল থাকবে।
আমি তাকে বললাম, কী বললে?
সে বলল, যা বলার বলেছি। আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবর নিয়ে লাভ নেই।
ছেলেটির কথায় আমার রাগ চরমে উঠল। তাই বললাম, আমার স্বাস্থ্যের জন্য তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। স্বাস্থ্য কিভাবে ভাল থাকে তা তোমার চাইতে ঢেড় ভালো জানি আমি। যাহোক, আমার পরিস্কার বক্তব্য হলো, আমার সামনে তুমি একটি অসহায় নারীর উপর হাত তুলবে তা কখনোই হতে পারে না। যদি এজন্য আমাকে জীবন দিতে হয় তাতেও আমি প্রস্তুত আছি।
এ বলে আমি বাম হাত দিয়ে তাঁর শার্টের কলার চেপে ধরলাম। সেই সঙ্গে ডান হাত দিয়ে গালে একটি শক্ত থাপ্পর লাগালাম। বললাম, এই ছোকড়া! আর কোনো দিন মেয়েদের পিছু নিবে কি না বল?
আমার অঙ্গভঙ্গি দেখে এবং কঠিন কণ্ঠ শুনে ছেলেটির মন থেকে প্রতিরোধ কিংবা পাল্টা আক্রমণের ইচ্ছা সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেল। তাই সে ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল, ঠিক আছে। আমাকে আজকের মতো ছেড়ে দিন। আমি আর কোনোদিন এমন করব না।
মনে রাখিস যদি তোকে আর কোনোদিন এরূপ করতে দেখি, তবে তোর হাত-পা ভেঙ্গে হাসপাতালে পাঠাব। এ বলে তাকে ছেড়ে দিলাম।
আমার হাত থেকে ছাড়া পেয়ে ছেলেটি সোজা হেঁটে চলে গেল। ভাব দেখে মনে হলো, সে যেন আজরাঈলের হাত থেকে ছাড়া পেল।
এদিকে মেয়েটি লজ্জা পেয়ে জড়সড় হয়ে কাঁদছে। ছেলেটি চলে যাওয়ার পর সে আমাকে বলল, ভাই! আপনার ঋণ আমি কোনোদিন শোধ করতে পারব না। আপনার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। আপনি যদি না আসতেন, তাহলে এ লম্পটের হাতে কী যে অবস্থা হতো আমার—তা আল্লাহই ভালো জানেন। ভাই! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।
আমার রাগ তখনও কমে নি। তাই রাগমাখা কণ্ঠেই বললাম, আমার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে না। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। কারণ পর্দা করা আল্লাহর বিধান। আর এ বিধানকে না মানার কারণেই আপনি আজ ভয়াবহ পরিস্থিতির সন্মুখিন হতে যাচ্ছিলেন। আমার বিশ্বাস, আপনি যদি নিজের সৌন্দর্যকে প্রকাশ না করে অভিভাবক সাথে নিয়ে বোরকা পরে বের হতেন, তাহলে আপনাকে আজ এ কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হতো না। লাঞ্চিত হতে হতো না এই লম্পট ছেলেটির হাতে।
এতটুকু বলে আমি প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে বললাম, আচ্ছা, আপনি কোথায় পড়াশুনা করেন? মহিলা কলেজে?
মেয়েটি মিনমিন করে বলল, জ্বী-না। আমি হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজে পড়ি।
আমি বললাম, ঠিক আছে আমি এবার যাই। তবে যাওয়ার আগে শুধু এতটুকু বলে যেতে চাই, স্কুল-কলেজ মূলত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এভাবে রঙ মেখে সং সেজে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। সিনেমার অভিনেত্রীদের মত সেজেগুজে অবাধে চলাফেরা করে আপনারাই যুবকদেরকে নষ্ট করছেন। ওদেরকে বিপদগামী করার জন্য আপনারাই দায়ী।
আমার কথা শুনে মেয়েটি লজ্জায় লাল হয়ে গেল। দু’হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলল। বলল, দেখুন! আপনাকে হাতজোড় করে বলছি, আমাকে ওসব বলে আর লজ্জা দিবেন না।
আরও পড়ুনঃ যুবতীর কবলে যুবক।
কিন্তু সুন্নাহ! আমি তো সহজে কাউকে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নই। তাই তাঁর কথার জের ধরে বললাম—লজ্জা! কিসের লজ্জা? লজ্জা কাকে বলে জানেন? জীবনে কখনো লজ্জা দেখেছেন? লজ্জা নামক কোনো বস্তু আপনি চেনেন? এ সম্পর্কে আপনার কোনো জানাশুনা আছে? যদি লজ্জা নামক কিছু আছে বলে জানতেন, তাহলে কি আর এভাবে রাস্তায় বের হতেন? নিজেকে সাজিয়ে রূপের প্রদর্শনী দেখাতেন? যা হোক। আজ যদি লজ্জাকিএ কিছুটা বুঝে থাকেন, চিনে থাকেন, তাহলে প্রতিজ্ঞা করে নিন যে, জীবনে আর কখনো বোরকা ছাড়া রাস্তায় বের হবেন না। পর পুরুষের সামনে পর্দাহীনভাবে কখনো আসবেন না। ইসলামী নিয়ম-নীতি মেনে চলবেন। এ-ই আমার অনুরোধ।
আমি আপনার অনুরোধ রক্ষা করতে চেষ্টা করব। তবে আপনার কাছে আমার আবদার হলো, ধর্মীয় বিধি-বিধান আমি কীভাবে জানতে পারি তা আমাকে বলবেন কি?
আমি বললাম—শুনুন। ইসলামের বিধি-বিধান সহজে জানার একটি উত্তম উপায় হলো, ধর্মীয় বই-পুস্তক পাঠ করা। আপনি যদি নিয়মিত ভালো ভালো লেখকের বই-পুস্তক পাঠ করেন, তাহলে দেখবেন, অল্পদিনেই আপনি অনেককিছু জেনে গেছেন; আপনার হৃদয়ে সৃষ্টি হয়েছে ইসলামী বিধান অনুযায়ী জীবন যাপনের এক অদম্য স্পৃহা।
এ মুহূর্তে আপনার মনে হয়তো এ প্রশ্ন জাগ্রত হয়েছে যে, ভালো ধর্মীয় বই পুস্তক পাব কোথায়?
হ্যাঁ, আপনি ঠিক ধরতে পেরেছেন। এ প্রশ্নটি এখন আমার মুখে এসে গিয়েছিল। আমি বলতে যাব, ঠিক তখনই আপনি নিজ থেকে বলে ফেলেছেন। এবার বলুন কোথায় কীভাবে আমি ভালো ধর্মীয় বই পেতে পারি। মেয়েটি বলল।
আমি বললাম—ধর্মীয় বই তো অনেক আছে। তবে আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন—আপনার জানামতে সবচেয়ে উপকারী, আকর্ষণীয়, যুগোপযোগী ও সুখপাঠ্য ধর্মীয় বই কোনটি? তাহলে আমি একটি বইয়ের নাম বলে দিতে পারি। এ বইটি বর্তমানে সিরিজ আকারে প্রকাশিত হচ্ছে। যার নাম—হৃদয় গলে সিরিজ। আপনি দেশের যে কোনো প্রান্তেই থাকুন না কেন, হৃদয় গলে সিরিজের বপি আপনার হাতের নাগালেই আছে। আপনি শুধু সামান্য কষ্ট করে কোনো ধর্মীয় অভিজাত লাইব্রেরীতে গিয়ে বলবেন—“ভাইজান! আপনাদের এখানে কি মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম লিখিত হৃদয় গলে সিরিজের বই আছে?’ আশা করি তিনি আপনাকে নিরাশ করবেন না।
তবে যদি কোনো কারণে লাইব্রেরীতে খুঁজে হৃদয় গলে সিরিজের বই না পান, তাতেও ব্যথা পাওয়ার কোনো কারোন নেই। কেননা তখন আপনি আরো সহজে ০১৭১২-৭৯২১৯৩ নম্বরে ফোন করে ভি,পি যোগে মুহতারাম লেখক থেকেও সুল্ভ মূল্যে বই সংগ্রহ করতে পারেন। যার প্রধান সুবিধা হলো আপনি ঘরে বসেই বই পেয়ে যাবেন এবং বই হাতে পাওয়ার পর পিয়নের হাতে টাকা পরিশোধ করবেন।
আপনি শুনে খুশী হবেন যে, হৃদয় গলে সিরিজের বই অন্যসব গল্পের বই থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। যা চাইবেন তাঁর সবই তাতে পাবেন। কোরআন-হাদীসের সারগর্ভ আলোচনা, প্রয়োজনীয় মাসআলা-মাসায়েল, দয়া-মানবতা, তাকওয়া-পরহেজগারী, রাসূল-প্রেম, অহঙ্কার-বিনয়, পিতা-মাতার খেদমত, স্বামী-স্ত্রীর অধিকার, সততা-সত্যবাদিতা—এক কথায় আপনার যা চাই, ন্তাই হৃদয় গলে সিরিজে বিদ্যমান। সুতরাং নো টেনশন। জলদি ওগুলো সংগ্রহ করুন । আর নিজেকে সে মতে গড়ে তুলুন।
এতক্ষণ সুন্নাহ তাঁর নাজমুল ভাইয়ের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছিল। এ পর্যায়ে আসার পর নাজমুলকে লক্ষ্য করে সে বলে উঠল, বাহ! বেশ সুন্দর তো। সুযোগ পেয়ে আমার প্রিয় সিরিজ—“হৃদয় গলে’ সংগ্রহ করার দাওয়াতও মেয়েটিকে দিয়ে এলেন।
আরে, সুযোগ হাতছাড়া করে লাভ কি! আমরা যদি আমাদের প্রিয় বইয়ের আলচনা সময়-সুযোগ মতো না করি; অবহেলা করে সুযোগ নষ্ট করি, তবে প্রিয় লেখক ও প্রিয় বইকে ভালোবাসার প্রামণ থাকল থাকলো কোথায়?
হ্যাঁ, ভাইয়া আপনি একদম খাঁটি কথা বলেছেন। হৃদয় গলে সিরিজের ব্যাপারে প্রতিটি পাঠক-পাঠিকার মনোভাব যদি এমন হতো! যাহোক, এবার বলুন তারপর কী হলো।
নাজমুল বলল—মেয়েটি আমার কথাগুলো খুব মনোযোগ সহকারে শুনে বলল, ভাইজান! আজ থেকে প্রতিজ্ঞা করছি যে, জীবনে আর কখনো বোরখা ছাড়া বের হব না। পর্দাহীনভাবে চলাফেরা করব না। আপনার সবগুলো কথাকে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পালন করার চেষ্টা করবো। আজই নিকটস্থ লাইব্রেরীতে খোঁজ নেব। অন্যথায় লেখক থেকে ডালযোগে সংগ্রহ করব। আপনি আমার জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন আমাকে ক্ষমা করে দেন।
সুন্নাহ! আমি এজন্য আশ্চর্য হলাম যে, আমার অল্পক্ষণের কথায় মেয়েটির মন সম্পূর্ণ পালটে গেল। এমনকি সে তাঁর কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা করে কাঁদতে লাগল। তখন আমি তাকে বললাম, বোন! আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন। হেদায়েত দান করুন। প্রকৃত মু’মিন হিসেবে কবুল করুন। এখন আপনি সোজা বাড়িতে চলে যান। এ বলে আমি তাকে বিদায় দিয়ে সেখান থেকে চলে এলাম।
প্রিয় পাঠকমহল! দেখলেন তো, পর্দাহীন চলাফেরা করার জন্য কেমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে একটি মেয়েকে। মনে রাখবেন, নামাজ-রোজা পালন করা যেমন ফরজ, তেমনি পর্দা করাও ফরজ। যা কখনো লংঘন করা যায় না। কেউ লঙ্খন করলে তাঁর পরিণতি বড় ভয়াবহ হয়।
আজ আমাদের সমাজে এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে। এক শ্রেণীর মেয়েরা প্রগতির শ্লোগানে গলা ফাটিয়ে জমিন কাঁপিয়ে তুলছে। সমান অধিকারের নামে রাজপথে অর্ধনগ্ন হয়ে চলাফেরা করছে। আধুনিকতার দোহাই দিয়ে উগ্র ফ্যাশন চলাফেরা করছে। যা কি না জাহেলী যুগকেও হার মানাচ্ছে। আর এসব কারণেই নারীরা ধর্ষিতা হচ্ছে। এসিডদগ্ধ হচ্ছে। শিকার হচ্ছে মানবরূপী হায়েনা-লম্পটদের।
এই মেয়েটি যদি আজ বোরকা পড়ে বের হতো, তাহলে তাকে কেউ দেখতও না। এবং এমন পরিস্থিতির শিকারও তাকে হতে হতো না। মনে রাখবেন, দর্শনই ধর্ষণের পথে আহবান করে। এ এক চিরন্তর সত্য কথা। পর্দানশীন মেয়েরা গোটা দেহ আবৃত করে চলাফেরা করে বিধায় ধর্ষণ তো দূরের কথা, পুরুষদের কুদৃষ্টির শিকারও তারা হন না।
তাই আমি বে-পর্দা নারীদেরকে সবিনয়ে অনুরোধ করছি, আপনারা লাগামহীন হয়ে আর চলাফেরা করবেন না। নিজেকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেবেন না। নিজের বিপদকে নিজে ডেকে আনবেন না। পর্দান বিধান মেনে চলুন। পর্দার প্রতি অবহেলা সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করুন। এর উপর সবিশেষ গুরুত্ব দিন। মনে রাখবেন, পর্দা হলো নারীর ভূষণ। পর্দায় চলা মানে বন্দী জীবন যাপন করা নয়, বরং পর্দা হলো নারীর নিরাপত্তার গ্যারান্টি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে শরয়ী বিধানাবলী শ্রদ্ধার সাথে পালন করার তাওফীক দিন। আমীন।
সহায়তায়ঃ মোসাম্মৎ সাজিদা আক্তার সুন্নাহ, কুতুবের চক, মুন্সিবাড়ি, শায়েস্তাগঞ্জ, হবিগঞ্জ।
লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম
Please join our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Tumblr And Youtube channel.