আফসানা (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর জন্মদিনের গল্প)

আফসানা একটা ঝলমলে তরুণী।

আফসানাঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, রোকেয়া হলের আবাসিক ছাত্রী।
গরীব এক শিক্ষকের মেয়ে। তাঁরা দুটি ভাইবোনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। মাসে ৫  /৬ হাজার টাকা জোগানো বাবার জন্য কষ্টকর-আফসানা তা বুঝে। অন্যদিকে তাঁর অবুঝ অনুজ—বেপরোয়া, জেদি এবং বাপের আর্থিক কষ্টের প্রতি উদাসীন।

মেয়েটি একটা প্রাইভেট টিউশনি খোঁজে। সেখানেও ঠিকাদারি আছে। যারা টিউশনি জোগাড় করে দেয় তাদেরও একটা ভালো কমিশন দিতে হয়।

যা হোক, একটা টিউশন তাঁর জুটলো। বাচ্চাটি আমেরিকান স্কুলে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু স্কুল কর্তৃকপক্ষ শর্ত দিয়েছে বাচ্ছাটির মাকেও ভালো ইংরেজী বলা শিখে নিতে হবে—তিন মাসের মধ্যে। যাতে করে বাচ্চার Pronuciation ঠিক হয়। বাসায় এসে স্কুলের শিক্ষা মাটি হয়ে না যায়। তো আফসানা একটা ধনী ঘরের গিন্নি আর সন্তানের শিক্ষিকা হয়ে গেল। সপ্তাহে তিন দিন ঘড়ি ধরে মা ও মেয়েকে এক ঘন্টা এক ঘন্টা করে পড়াতে হয়।

ধানমন্ডির এই বাড়ির আলাদা বৈশিষ্ট্য—শাশুড়ি এখনও বাড়ির সর্বময় কর্ত্রী।

আফসানার সন্তুষ্টি মাস শেষে চার হাজার টাকা। উত্তম চা নাস্তা এবং রুচিশীল ব্যবহার।

৩১ আগস্ট, আফসানা গৃহকর্ত্রীকে জানায় ১ সেপ্টেম্বর তাঁর ছুটি চাই। বুড়ি বলেন, ঠিক আছে!

কিন্তু মুহূর্তেই তিনি ঘুরে দাঁড়ালেন। এবং বললেন, কেন মিস, কাল কী জন্য ছুটি চাচ্ছেন?

আফসানা বলতে চায় না, হে হুঁ করে, কিন্তু শেষে বলতে বাধ্য হয়—আমার জন্মদিন। হলের কজন বান্ধবী বিকেলে ছোট্ট একটা আয়োজন করে ফেলেছে।

কর্ত্রীর চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। বললেন, শোনেন মিস, জন্মদিন টন্মদিন এসব একজন টিউটরের জন্য ঘোড়ারোগ। কালকে আপনার আসতেই হবে। হলের অনুষ্ঠান আপনি রাতেও করতে পারেন।

থ হয়ে যায় আফসানা, কোনও কথা মুখে আসে না। নিজের দারিদ্র্যের ওপর প্রচন্ড রাগ হয় তাঁর। নিজে নিজেকেই মনে মনে বলে, মরে যাচ্ছি না কেন!

হলে পৌঁছে পেঁচার মতো মুখ করে রাখে।

বান্ধবীরা জিজ্ঞেস করে, কী হয়েছেরে?

বলবে না, বলবে না করেও বলে সকল বৃত্তান্ত।

জানায় সে আর টিউশনটা করবে না।

বান্ধবীরা বলে, সর্বনাশ। হারামিদের উপযুক্ত শাস্তি চাকরি ছাড়া নয়রে। যা, তুই কাল—আমরা রাতেই করব অনুষ্ঠান।

আফসানা সারারাত ঘুমাতে পারে না। তাঁর আত্মশ্লাঘায় ঘা লেগেছে। আফটার অল, ‘মফু’ হলেও সম্মানিত পরিবারের সদস্য সে।

১ সেপ্টেম্বরের দিনটা তাঁর To be or not to be বোধে কাটে।

বাস্তবতা জয়ী হলো শেষে। ৩ টা ৩০ মিনিটে সে নিজেকে ধানমন্ডির নির্দিষ্ট বাসার কলিংবেলের ওপরে তর্জনী রাখতে দেখে।

অন্যরকম দিন, ভিন্নরকম অনুভূতির মধ্যে খোলে দরজা। কাজের বুয়া দরজা খোলে। সে তাঁর নির্দিষ্ট আসনে বসে অপেক্ষা করে ছাত্রের। না, কেউ আসছে না তো।

তাঁর ভাবনার দীর্ঘতম সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে, উঠে যাবে সে—ঠিক এমন মুহূর্তে কেক আর কত কিছু (যা সে কখনও ভাবেওনি) আয়োজন নিয়ে এই পরিবারের সকলে হাজির হলো রুমে। বাড়ির কর্তা যাকে সে কখনও দেখেনি তিনিও হাসিমুখে দাঁড়িয়ে।

বুড়ি বললেন, মেয়ে তুমি আমাদের বড্ড পর ভাবো। ভালো মানুষের মেয়ে অথচ তুমি জন্মদিন পালন করছো হলে। আমাদের দাওয়াটাও দিলে না। আমার নাতি আর বউটাকে পড়াচ্ছো অথচ পর ভাবো। আমরা তোমার পর নইরে মা। আমরা তোমার জন্মদিনের উৎসব করছি দেখো।

হ্যাপি বার্থ ডে, কোরাস শুরু করেন অন্যরা।

বুড়ি বলেন, সময় পাইনি, আয়োজন বড়ো কম। তুমি কিছু মনে করো না মা।

তারপর কেক কাঁটা আরও কত কী।

আফসানার চোখে পানির জোয়ার। আহা কোনও কোনও ধনীও ভালো মানুষ হয়!

লেখকঃ কালাম আজাদ

আরও পড়তে পারেন : গল্প বুড়ি

For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.

Leave a Comment