আপনার জীবনকে উপভোগ করতে আপনার সম্পর্কে লোকেদের ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করুন। ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করার মাধ্যমে কিভাবে লোকেদের হৃদয় ও মন জয় করা যায় তা জানতে ও বুঝতে সম্মানিত লেখকের এই আর্টিকেলটি পড়ুন। সম্মানিত লেখক ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করার কৌশলটি বর্ণনা করেছেন।
আপনার ব্যাপারে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করুণ (Life hacking Tips 25)
আপনি অন্যদেরকে একথা বোঝাতে চেষ্টা করুণ যে, আপনি তাঁদের কল্যাণ কামনা করেন এবং বাস্তবেও তেমন করুণ। আপনার অন্তরে যদি অন্যদের প্রতি ভালোবাসা ও কল্যাণ কামনা থাকে, আপনি যদি অন্যদের সঙ্গে আচার-ব্যবহারে আন্তরিক হন এবং তাঁদেরকে আপনার আন্তরিকতার বিষয়টি বোঝাতে সক্ষম হন তাহলে তারাও আপনাকে ভালবাসবে।
জনৈক মহিলা ডাক্তারের প্রাইভেট চেম্বারে সবসময় রোগীদের ভীড় উপচে পড়ত। রোগীরা সবসময় তাঁর কাছেই আসতে চাইত। প্রতিটি রোগী নিজেকে এ ডাক্তারের ঘনিষ্ঠ বলে মনে করত। বস্তুতঃ এ মহিলা ডাক্তার উপযুক্ত আচরণ কৌশল প্রয়োগ করে রোগীদের মন জয় করে ফেলত। তাঁর একটি কৌশল দেখুন। তাঁর একজন মহিলা সহকারী ছিল। তাঁর দায়িত্ব ছিল কোনো রোগী ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে বা রোগের ব্যাপারে পরামর্শের জন্য আসলে সে রোগীকে স্বাগত জানিয়ে তাঁর নাম জেনে নেবে এবং তাঁকে পাঁচ মিনিট পর সাক্ষাতের সময় জানিয়ে দেবে। এর মধ্যে সে এ রোগীর ফাইলটি ডাক্তারকে সরবরাহ করবে। ডাক্তার ফাইল দেখে রোগীর নাম, পেশা, সন্তানদের নাম ইত্যাদি সব তথ্য জেনে নিবে।
পাঁচ মিনিট পর রোগী যখন তাঁর কাছে আসতো তখন সে রোগীকে অভ্যর্থনা জানিয়ে তাঁর রোগের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করত। পাশাপাশি তাঁর সন্তান-সন্তুতি ও কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে খোঁজ খবর নিত। ফলে রোগী মনে করত, এই ডাক্তার তাঁকে খুব ভালনাসেন। তাই তাঁর সন্তানদের নাম মনে রেখেছেন, তাঁর রোগের বিষয়টিও তাঁর স্মরণে আছে। এমন কি তিনি তাঁর কর্মস্থলের কথাও জিজ্ঞেস করতে ভোলেন নি। ফলে রোগিরা সবসময় তাঁর কাছে আসতেই আগ্রহী থাকে। দেখলেন তো কত সহজে তিনি মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন।
অন্যদের প্রতি আপনার আন্তরিকতা ও ভালোবাসা সুস্পষ্ট ভাষায় প্রকাশ করুণ। পিতা-মাতা, স্ত্রী-সন্তান, সহপাঠী-সহকর্মী, প্রতিবেশি সবাইকে যে আপনি ভালবাসেন তা তাঁদেরকে পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিন। আপনি যাকে ভালোবাসেন তাঁকে স্পষ্ট ভাষায় বলুন, ‘আমি আপনাকে ভালবাসি।’ আমার অন্তরে আপনার প্রতি ভালবাসা ও সম্মানবোধ রয়েছে।
এমনকি সে যদি পাপাচারীও হয় তবুও তাঁকে বলুন, আপনি আমার কাছে অ-নে-কের চেয়ে প্রিয়। এ কথা বলার কারণে আপনি মিথ্যাবাদী হবেন না। কেননা, লোকটি আপনার কাছে অবশ্যই লক্ষ লক্ষ ইহুদির চেয়ে প্রিয়! বিষয়টি কি এমন নয়? এ ক্ষেত্রে আপনার মেধাকে কাজে লাগান।
আমার এখনও মনে পড়ে, একবার ওমরা করতে গিয়ে তাওয়াফ ও সায়ী করার সময় আমি মুসলিম উম্মাহর প্রতিটি সদস্যের জন্য নিরাপত্তা, সাহায্য ও সক্ষমতার দোয়া করলাম। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে, আমার বন্ধু-বান্ধব ও সকল প্রিয়জনকে মাফ করে দিন। কখনো কখনো এভাবেও দোয়া করেছি।
ওমরা শেষ করে আমি প্রথমে সহজে ওমরা আদায় করতে পারায় আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করলাম। এরপর রাত যাপনের জন্য হোটেলে উঠলাম। বিছানায় শুয়ে শুয়ে মোবাইলে একটি ক্ষুদেবার্তা লেখলাম।
‘আমি এইমাত্র ওমরা শেষ করেছি। দোয়ায় আমার প্রিয়জনদের কথা স্মরণ করেছি। আপনিও তাঁদের একজন। তাই আপনার জন্যও দোয়া করতে ভুলি নি। আল্লাহ আপনাকে রক্ষা করুণ, আপনাকেও ওমরা আদায়ে তওফিক দান করুণ।’
ক্ষুদেবার্তাটি আমি মোবাইলের ফোনবুকে সংরক্ষিত সকল নম্বরে পাঠিয়ে দিলাম। আমার মোবাইলের প্রায় পাঁচশত ব্যক্তির নাম ও মোবাইল নম্বর সংরক্ষিত ছিল। ক্ষুদেবার্তাটি তাঁদের মধ্যে এমন প্রভাব ফেলেছে যা আমি কল্পনাও করিনি।
তাঁদের একজন আমাকে লিখে পাঠিয়েছেন, আমি আপনার ক্ষুদেবার্তাটি বারবার পড়েছি ও কেঁদেছি। দোয়ায় আমাকে স্মরণ করেছেন জেনে আপনার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
আরেকজন লিখেছে, কী বলে আপনার জবাব দেব, জানি না। আল্লাহ আপনাকে সর্বোত্তম প্রতিদান করুণ।
তৃতীয় একজন লিখেছে, আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি যেন আপনার এ দোয়া কবুল করে নেন। আমি কখনও আপনাকে ভুলবো না।
এভাবে আমরা মাঝে মাঝে অন্যদেরকে আমাদের ভালবাসার কথা মনে করিয়ে দিতে পারি। এ জাতীয় সংক্ষিপ্ত বার্তায় মাধ্যমে জানিয়ে দিতে পারি যে জীবনের কর্মব্যস্ততা সত্ত্বেও আমরা তাঁদেরকে ভুলে যাই নি। তাঁদের প্রতি রয়েছে আমাদের মনের সুগভীর টান।
বন্ধুদের উদ্দেশ্যে আপনি লিখতে পারেন, আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে, জুমার দিনের দোয়া কবুলের বিশেষ মুহূর্তে আমি তোমাদের জন্য দোয়া করি। আপনার নিয়ত যদি ভাল হয় তাহলে এটা রিয়া বা লৌকিকতা হবে না। এটা তো মুসলমানদের পারস্পরিক ভালবাসা ও সম্প্রীতি বৃদ্ধির মাধ্যমে হতে পারে।
আমার এখনও মনে পড়ে, একবার আমি তায়েফ শহরে গ্রীম্মকালীন এক দাওয়াতি ক্যাম্পেইনে আলোচনা করছিলাম। শিফা পাহাড়ের পাদদেশে এক পার্কে অনুষ্ঠিত সে অনুষ্ঠানে অনেক যুবক উপস্থিত হয়েছিল। একদল যুবক পার্কের অন্য অংশে আনন্দ-ফুর্তিতে ব্যস্ত থাকলেও উপস্থিত শ্রোতাদের মধ্যে সততা ও ভালর লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল। অনুষ্ঠান শেষ হলে একদল যুবক এগিয়ে এসে সালাম করলো। তাঁদের একজন যুবকের চুল ভহিল বেদেশি স্টাইলে কাঁটা এবং তাঁর পরনে ছিল টাইট জিন্সের প্যান্ট। সে আমার সঙ্গে মোসাফাহা করলো, আমাকে ধন্যবাদ জানাল। আমিও খুব আন্তরিকতাঁর সঙ্গে তাঁর সালামের উত্তর দিলাম। এখানে উপস্থিত হওয়ার কারণে তাকে ধন্যবাদ জানালাম এবং তাঁর হাত ধরে নাড়া দিয়ে বললাম, তোমার চেহারা তো চমৎকার, একদম দাঈর চেহারার ন্যায়। সে হেসে চলে গেল। দু’সপ্তাহ পরে হঠাৎ ফোন করে সে বললো, শায়খ! আমাকে চিনতে পারছেন না? আমি সে যুবক, যাকে আপনি বলেছিলেন, তোমার চেহারা দাঈর চেহারার ন্যায়। আমি অবশ্যই দাঈ হব, ইনশাআল্লাহ। এরপর সে তাঁর অনুভূতি আমার কাছে ব্যক্ত করলো।
দেখলেন তো, আন্তরিকতা ও হৃদয় নিংড়ানো কথার মাধ্যমে মানুষ কীভাবে প্রভাবিত হয়!
রাসূল (সাঃ) চারিত্রিক মাধুর্য ও অকৃত্রিম ভালবাসা প্রকাশ করে মানুষের হৃদয় জয় করে নিতেন। আবূ বকর (রাঃ) ও ওমর (রাঃ) দু’জনেই মহা সাহাবী। তাঁরা সবসময় নেক কাজে প্রতিযোগিতা করতেন। কিন্তু আবূ বকর সাধারণত জয়ী হতেন। ওমর (রাঃ) তাহাজ্জুদ নামাযের জন্য শেষরাতে উঠে দেখতেন, আবূ বকর (রাঃ) তাঁর আগেই উঠেছেন। কোনো ক্ষুধার্তকে খাবার দিতে গিয়ে তিনি দেখতেন, আবূ বকর (রাঃ) এখানেও তাঁর চেয়ে অগ্রসর। যদি কোনো রাতে অতিরিক্ত নফল নামায পড়তেন, তাহলে দেখতেন আবু বকর (রাঃ) সেখানেও তাঁর ধরাছোয়ার বাইরে।
একবার রাসূল (সাঃ) মুসলমানদের বিশেষ প্রয়োজন পূরণ করার জন্য সবাইকে দান করতে বললেন। ঘটনাক্রমে সে সময় ওমর (রাঃ) এর পর্যাপ্ত পরিমাণে সম্পদ ছিল। তিনি মনে মনে ভাবলেন, কোনোদিন যদি আবূ বকর (রাঃ)-এর চেয়ে এগিয়ে যেতে পারি, তাহলে আজই সেই দিন। ওমর (রাঃ) তাঁর অর্ধেক সম্পদ রাসূল (সাঃ) বরাবর সমর্পণ করলেন। এতো সম্পদ পেয়ে রাসূল (সাঃ) ওমরকে সর্বপ্রথম কী জিজ্ঞেস করেছিলেন? তিনি কি সম্পদের পরিমাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন? সম্পদের প্রকৃতি তথা স্বর্ণ না রূপা তা জিজ্ঞেস করেছিলেন?
না তিনি এসব কিছুই জিজ্ঞেস করেন নি। তিনি ওমরকে এমন কিছু কথা বলেছিলেন, যা শুনে ওমর (রাঃ) বুঝলেন যে, রাসূল (সাঃ) তাঁকে ভালবাসেন। ওমর (রাঃ)-কে রাসূল (সাঃ) বলেছিলেন, ‘ওমর! পরিবারের জন্য কী রেখে এসেছ?’
ওমর (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তাঁদের জন্য এর সমপরিমাণ রেখে এসেছি।
ওমর (রাঃ) রাসূল (সাঃ)-এর কাছে আগ্রহ নিয়ে বসে রইলেন। আবূ বকর (রাঃ) কখন আসেন, কি নিয়ে আসেন তা দেখবেন। আবূ বকর (রাঃ) ও তাঁর সামর্থ অনুযায়ী সম্পদ নিয়ে আসলেন এবং রাসূলের কাছে তা অর্পণ করলেন। ওমর (রাঃ) দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আবূ বকর (রাঃ) এর দান দেখছেন এবং তাঁর ও রাসূল (সাঃ)-এর কথোপকথন শুনছেন। রাসূল (সাঃ) আবূ কবর (রাঃ)-এর সম্পদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আবু বকর! তুমি পরিবারের জন্য কী রেখে এসেছে?
রাসূল (সাঃ) আবূ বকর (রা;) কে, তাঁর পরিবার—পরিজনকে ভালোবাসেন, তাঁদের কল্যাণ কামনা করেন। সবদিয়ে তাঁরা কষ্ট করুক এটা তিনি চান না।
আবূ বকর বললেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি তাঁদের জন্য আল্লাহ ও এবং তাঁর রাসূলকে রেখে এসেছি!’
আর আমার যা কিছু ছিল তাঁর সব নিয়ে এসেছি। আমি অর্ধেক বা এক চতুর্থাংশ আনি নি বরং আমি সমস্ত সম্পদ নিয়ে এসেছি। তখন ওমর (রাঃ) এ কথা বলতে বাধ্য হলেন যে, ‘আমি কখনও আবূ বকরকে ছাড়িয়ে যেতে পারব না।
সাহাবীদের প্রত্যেকেই মনে করতেন যে, রাসূল (সাঃ) আমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন। তাই তারাও রাসূলকে অত্যন্ত ভালবাসতেন। একবার রাসূল (সাঃ) কিছুটা দ্রুত নামায পড়ালেন। নামায শেষে সাহাবায়ে কিরামকে আশ্চর্য হতে দেখে রাসূল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি নামায সংক্ষিপ্ত হওয়ায় আশ্চর্য হয়েছ?
সাহাবায়ে কিরাম বললেন, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলুল্লাহ!
রাসূল (সাঃ) বললেন, ‘নামাযের মধ্যে আমি একটি শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়েছি। তাঁর মায়ের কথা বিবেচনা করে আমি নামায সংক্ষেপে করেছি।’
দেখলেন তো অন্যের প্রতি কেমন ছিল তাঁর ভালোবাসা! তিনি যে অন্যদেরকে অনেক ভালবাসেন সেটা তিনি আচরণের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিতেন।
আপনি একা নন…….
আপনিও আপনার হৃদয়ের আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ করুন। স্পষ্ট করে বলুন, ‘আমি আপনাকে ভালবাসি। আপনার সাথে দেখা করে আমার অনেক ভালো লাগল। আমি মনে করি আপনি অনেক বড় মাপের মানুষ।’
উৎস : আপনার জীবনকে উপভোগ করুন
এরপর পড়ুন : অন্যের নাম মনে রাখুন (Life hacking Tips)
For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.