আপনার প্রিয়তম ব্যক্তি কে? কিভাবে লোকেদের কাছে প্রিয়তম ব্যক্তি হবেন তা জানতে ও শিখতে সম্মানিত লেখকের প্রিয়তম ব্যক্তি হবার উপায় আর্টিকেলটি পড়ুন।
আপনার প্রিয়তম ব্যক্তি কে! Who are your darling person?
আচার-আচরণে ও কথাবার্তায় প্রত্যেককে যদি এ কথা অনুভব করাতে পারেন যে, সে আপনার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ তাহলে বলা যাবে, আপনি আচরণগত দক্ষতা ব্যবহারে সবচেয়ে পারদর্শী।
অনুরূপ আচরণ করুণ আপনার বাবার সঙ্গে, স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে, বন্ধু-বান্ধব সহ সবার সঙ্গে। এমনকি যাদের সঙ্গে জীবনে মাত্র একবার দেখা হয়েছে। যেমন কোনো দোকানের সেলসম্যান কিংবা পেট্রোল পাম্পের কর্মচারীর সঙ্গেও।
আপনি যদি প্রত্যেককে এ কথা বুঝাতে পারেন যে, সে আপনার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ তাহলে তাঁরা সবাই ভাববে, আপনি তাঁদের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। আমাদের রাসূল এ ক্ষেত্রেও ছিলেন আদর্শ স্থানীয়।
সীরাতে নববীতে এর উত্তম নমুনা রয়েছে। রাসূল (সাঃ) সবার সঙ্গে সর্বোচ্চ সুন্দর ব্যবহার করতেন। হাসিমুখে কথা বলতেন। এমন আচরণ করতেন যে, সবাই মনে করতো আমিই রাসূল (সাঃ)-এর সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। ফলে প্রত্যেকেই রাসূল (সাঃ)-কে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন।
আমর বিন আস (রাঃ) ছিলেন আরবের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের একজন। জ্ঞান-বুদ্ধি, মেধা ও দক্ষতায় তাঁর সমক্ষক ব্যক্তি আরবে কমই ছিল। গোটা আরবে চারজন এরূপ গুণধর ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। আমর (রাঃ) ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম।
ইসলাম গ্রহণের পর তিনি লক্ষ্য করলেন, কোথাও সাক্ষাৎ হলে আল্লাহর রাসূল তাঁর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসেন। মজলিসে উপস্থিত হলে রাসূল তাঁর আগমনে আনন্দ প্রকাশ করেন। সবসময় হাসিমুখে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন এবং সবচেয়ে সুন্দর অভিধায় তাঁকে ডাকেন। এমন আচরণ দেখে আমর রাযি (রাঃ)-এর মনে হলো, তিনিই হয়তো রাসূলের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। এ বিষয়ে সন্দেহমুক্ত হওয়ার জন্য একদিন তিনি রাসূলকে প্রশ্ন করলেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ কে?’
রাসূলঃ ‘আয়েশা’।
আমরঃ ‘আমি জানতে চাচ্ছিলাম-পুরুষদের মধ্যে আপনার সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি কে?’
রাসূলঃ ‘আয়েশার পিতা আবূ বকর সিদ্দীক’।
আমরঃ ‘তারপর?’
রাসূলঃ ‘ওমর ইবনুল খাত্তাব’।
আমরঃ ‘তারপর?’
রাসূল এবার ইসলাম গ্রহণ ও দ্বীনের জন্য জুলুম ও নিপীড়নের শিকার হওয়ার ক্ষেত্রে যারা অগ্রসর ছিলেন এক একজন করে এমন কয়েকজনের নাম বললেন।
আমর রাযি, বলেন, ‘আমার নাম সবার শেষে বলেন কি-না, এ ভয়ে আমি আর প্রশ্ন না করে নীরব হয়ে গেলাম।’
লক্ষ্য করে দেখুন, নবী করীম (সাঃ) কেমন মধুর আচরণের মাধ্যমে আমর (রাঃ)-এর মন জয় করে নিয়েছিলেন যে, তিনি মনে করছিলেন তিনিই রাসূল (সাঃ) এর সবচেয়ে প্রিয় মানুষ।
রাসূল এভাবেই প্রত্যেককে তাঁর মর্যাদা অনুযায়ী অবস্থান দিতেন; বরং তাঁর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করার জন্য প্রয়োজনে নিজের কাজ ছেড়ে দিয়ে তাঁর কথা শুনতে থাকতেন।
যখন ইসলামের বিজয় শুরু হলো, নবী করীম (সাঃ) সাহাবায়ে কেরামকে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে বিভিন্ন গোত্রে পাঠাতে লাগলেন। প্রয়োজনে কোথাও সেনাদলও পাঠানো হতো। এরই ধারাবাহিকতায় রাসূল ‘তাঈ’ গোত্রের উদ্দেশ্যে সাহাবিদের একটি প্রতিনিধি দল প্রেরণ করলেন। আদি বিন হাতেম ছিলেন ‘তাঈ’ গোত্রের সরদার। যুদ্ধের ভয়ে তিনি পালিয়ে গেলেন। দেশ ছেড়ে পালিয়ে শামে গিয়ে রোমানদের কাছে আশ্রয় নিলেন।
মুসলিম সেনাদল ‘তাঈ’ গোত্রের এলাকায় পৌঁছে প্রায় বিনা বাধায় তা জয় করে নিলেন। কারণ তাঁদের নেতৃত্ব দেয়ার মতো না কোনো সরদার ছিল’ না সুগঠিত কোনো সেনাবাহিনী ছিল।
মুসলমানগণ যুদ্ধের সময়ও বিজিতদের সঙ্গে সদাচরণ করতেন। এ যুদ্ধে মুসলমানদের উদ্দেশ্যে ছিল কেবল আদি গোত্রের লোকদের ষড়যন্ত্র বন্ধ করা এবং তাঁদের সামনে মুসলমানদের ক্ষমতা প্রদর্শন করা।
যুদ্ধক্ষেত্রে থেকে তাঁদের কয়েকজনকে বন্দী করা হলো। এদের মধ্যে আদি বিন হাতেমের বোনও ছিল। বন্দীদের সবাইকে মদিনায় নিয়ে আসা হলো। আদি’র পালিয়ে যাওয়ার সংবাদ রাসূলকে দেয়া হলে তিনি আশ্চর্য হলেন। একজন নেতা কীভাবে নিজের লোকদেরকে ছেড়ে পালিয়ে গেল? আদির কাছে যাওয়ার বা তাঁকে ফিরিয়ে আনার কোনো ব্যবস্থা ছিল না।
তাছাড়া শামে পালাইয়ে গিয়ে আদি সেখানে শান্তিতে ছিল না। অবশেষে সে নিজ দেশে ফিরে এলো। এরপর রাসূলের সাথে সমঝোতা বা সন্ধি করার উদ্দেশ্যে মদিনায় এসে রাসূলের দরবারে উপস্থিত হলো।
মদিনায় যাওয়ার ঘটনা আদি নিজেই বর্ণনা করেছেন।
‘রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একসময় আমার সবচেয়ে অপ্রিয় মানুষ ছিলেন। কারণ আমি ছিলাম খৃষ্টান। রাসূল (সাঃ) কর্তৃক ইসলামের দাওয়াত শুনে আমার মনে তাঁর প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হলো। পালিয়ে শামে গিয়ে রোমের কাইজারের কাছে আশ্রয় নিলাম। কিন্তু শামের দিনগুলো আমার ভালো লাগল না।
তাই মনে মনে ভাবলাম, এখানে না থেকে মুহাম্মদের কাছে ফিরে যাই। মিথ্যাবাদী হলে তিনি আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবেন না। আর বাস্তবেই তিনি যদি সত্যবাদী হন তাহলে তাঁর কাছে যেতে তো কোনো অসুবিধা নেই।
মদিনায় পৌঁছলে লোকেরা আমাকে দেখে বলাবলি করতে লাগল, ‘ঐ দেখ আদি বিন হাতেম! ঐ দেখ আদি বিন হাতেম।’
আমি আমার মতো করে হাটতে হাটতে রাসূলের (সাঃ) কাছে গিয়ে উপস্থিত হলাম।
রাসূল (সাঃ) আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি আদিন বিন হাতেম?’
আমি বললাম, ‘জ্বী, আমি দিন বিন হাতেম।’
নবী করীম (সাঃ) আদির আগমনে আনন্দিত হলেন। তাঁকে অভিনন্দন জানালেন। যদিও তিনি ইসলাম ও মুসলমানদের শত্রু, রণাঙ্গন থেকে পলায়নকারী এবং খৃষ্টান দেশে আশ্রয় গ্রহণকারী। তবুও হাসিমুখে তাঁকে বরণ করে নিলেন। তাঁর হাত ধরে বাড়ির দিকে রওয়ানা হলেন। আদি রাসূলের পাশে পাশে চলতে লাগলেন। তাঁর কাছে মনে হচ্ছিল, তাঁরা উভয়ই তো সমান। রাসূল হলেন মদিনা ও তাঁর আশপাশের অঞ্চলের রাজা। আর তিনি তাঈ-উপত্যকা ও তাঁর আশেপাশের অধিপতি।
রাসূল (সাঃ) প্রতিষ্ঠিত ঐশী ধর্ম ইসলামের ওপর। আর তিনিও আসমানি ধর্ম খৃষ্টবাদের ওপর।
মুহাম্মদের (সাঃ) কাছে আছে আসমানি গ্রন্থ ‘আল কুরআন’, তাঁর কাছেও আছে আসমানি কিতাব ‘ইনজিল’।
তাই আদি মনে মনে ভাবলেন, শক্তি ও সৈন্য-সামন্ত ছাড়া অন্য কোনো ক্ষেত্রে তাঁদের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই।
তাঁদের চলার পথে তিনটি ঘটনা ঘটলো।
তাঁরা উভয়ে হাঁটছিলেন। পথিমধ্যে একজন মহিলা তাঁদের সামনে এলো। রাসূলকে (সাঃ) দেখামাত্র মহিলা চিৎকার করে বললো, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনার সাথে আমার একটা কথা আছে।’ রাসূল আদি বিন হাতেমের হাত ছেড়ে দিয়ে মহিলার কাছে গেলেন। কী হয়েছে জানতে চাইলেন। মনোযোগ দিয়ে তাঁর কথা শুনলেন।
আদি বিন হাতেম জীবনে বহু রাজা-বাদশাহর আচরণ দেখেছেন। কিন্তু এমন আচরণ কখনো দেখেন নি। তাই তিনি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন এরপর ভাবলেন, ‘এমন চরিত্র কখনো রাজা-বাদশাদের হতে পারে না। এটা তো নববী চরিত্র! এ চরিত্র তো আম্বিয়ায়ে কিরামের!’
মহিলার কথা শেষ হলে রাসূল আদি বিন হাতেমের কাছে ফিরে এলেন এবং উভয়ে আবার হাঁটতে শুরু করলেন। কিছুদূর না যেতেই তাঁদের দেখা হলো আরেক ব্যক্তির সঙ্গে।
কী বলবো সে ব্যক্তি?
সে যদি বলত, ‘আল্লাহর রাসূল! আমার কাছে অনেক সম্পদ আছে। আমি সেগুলো দান করার জন্য দরিদ্র মানুষ খুঁজছি।’ কিংবা বলত, ‘আমার বাগানে ও শষ্য-ক্ষেতে অনেক ফল-ফসল হয়েছে। আমি সেগুলো কী করতে পারি?’
সে যদি এমন কিছু বলত, তাহলে আদি মুসলমানদের সচ্ছলতা ও মুসলমানদের স্বনির্ভরতা উপলব্ধি করতো।
কিন্তু লোকটি বললো, ‘আল্লাহর রাসূল! আমি ক্ষুধার্ত, খাবারের মতো কিছু নিই।’
লোকটি ছিল সীমাহীন দরিদ্র। ছেলে-মেয়েদের ক্ষুধা নিবারণের মতো কোনো খাবার তাঁর কাছে নেই। আশপাশে যেসব মুসলমান আছে তারাও কোনো মতে দিনাতিপাত করছে। তাঁকে সাহায্য করার মতো সামর্থ্য তাদেরও নেই।
রাসূল তাঁকে সান্ত্বনা দিলেন।
এরপর আবার তাঁরা হাঁটতে শুরু করলেন। কিছুদূর যাওয়ার পর আরেকজন লোক আসল। সে বললো, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের চারদিকে অনেক শত্রু। আমরা মদিনার বাইরে নিরাপদে বের হতে পারি না। মদিনা থেকে বের হলেই চোর-ডাকাত ও কাফেররা আমাদের ওপর হামলা করে।’
রাসূল তাঁর কথা শুনলেন। তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে আবার হাঁটতে লাগলেন।
আদি বিন হাতেম এ বিষয়গুলো নিয়ে এবার ভাবতে লাগলেন। তাঁর অর্থ-কড়ির অভাব নেই, তিনি নিজে তো যথেষ্ট মান-মর্যাদার অধিকারী। তাঁর কোনো শত্রু ওৎ পেতে বসে নেই।।…
অবশেশে উভয়ে ঘরে প্রবেশ করলেন। রাসূলের ঘরে প্রবেশ করে আদি বিন হাতেম দেখলেন, সেখানে বসার মতো একটাই গদি আছে। রাসূল সেটা সম্মানস্বরূপ আদির দিকে এগিয়ে দিলেন।
আদি বিন হাতেম সেটা রাসূলকে দিয়ে বললেন, ‘না, না, আপনি এতে বসুন।
রাসূল বললেন, ‘না, বরং তুমিই বস।’
শেষে আদি বিন হাতেম তাতে বসলেন।
রাসূল (সাঃ) ইসলাম ও আদি বিন হাতেমের মধ্যকার দূরত্ব দূর করতে শুরু করলেন।
রাসূল বললেন, ‘আদি! তুমি ইসলাম গ্রহণ করে নাও। তাহলে নিরাপত্তা পাবে।’
আদি বললেন, ‘আমি তো একটা ধর্ম অনুসরণ করছি।’
রাসূল বললেন, ‘আদি! তুমি কোনো ধর্ম অনুসরণ করছ তা আমি তোমার চেয়ে ভালো জানি’ আদি আশ্চর্য হয়ে বললেন, ‘আপনি আমার ধর্ম সম্পর্কে আমার চেয়ে বেশী জানেন?!’
রাসূল (সাঃ) বললেন, ‘হ্যাঁ, আমি তোমার চেয়ে বেশি জানি।’
আদি! তুমি কি ‘রুকূসিয়া’ ফেরকার অন্তর্ভুক্ত নও?’
‘রুকূসিয়া’ হলো খৃস্টধর্মের একটি শাখা। অগ্নিপূজারীদের ধর্মের সঙ্গে এর কিছুটা মিল আছে।
দেখুন, রাসূল তাঁদের অভ্যন্তররীণ সে বিশেষ শাখা সম্পর্কেও জানেন। এ জন্য তিনি বলেন নি যে, ‘তুমি তো খৃষ্টান;, বরং তাঁর ধর্মের আরো গভীরে গিয়ে বললেন, ‘তুমি তো রুকূসিয়া ফেরকাভূক্ত।’
মনে করুণ, ইউরোপের কারো সঙ্গে আপনার সাক্ষাৎ হলোল সে আপনাকে বললো, ‘তুমি খৃস্টান হয়ে যাও।’ আপনি বললেন, ‘আমি তো একটি দ্বীন অনুসরণ করে চলেছি।
প্রত্যুত্তরে সে আপনাকে এ কথা বললো না যে, হ্যাঁ, আমি জানি তুমি মুসলমান।’ অথবা ‘আমি জানি তুমি সুন্নী।’
বরং সে বললো, হ্যাঁ, তুমি তো শাফিঈ বা হাম্বলী মাজহাবের অনুসারী।’
তাঁর কথা শুনে আপনি অবশ্যই বুঝবেন, আপনার দ্বীন সম্পর্কে সে অনেক কিছুই জানে।
এ দক্ষতাটিই আদির সঙ্গে প্রয়োগ করেছিলেন আল্লাহর রাসূল। তিনি আদিকে বললেন, ‘তুমি কি রুকূসিয়া ফেরকাভুক্ত নও?’
আদি বললেন, ‘হ্যাঁ, আপনি ঠিক বলেছেন।’
রাসূল বললেন, ‘তুমি যখন দলবল নিয়ে কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর তখন যুদ্ধলব্ধ সম্পদের এক চতুর্থাংশ নিজে রেখে দাও। তাই না?’
আদি বললেন, ‘হ্যাঁ, আমি এমনই করি।’
রাসূল বললেন, ‘এটা তো তোমার ধর্মমতে বৈধ নয়।’
একথা শুনে আদি লজ্জিত হয়ে বললো, ;হ্যাঁ, আপনি যথাযথ বলেছেন।’
রাসূল এবার আদিকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘ইসলাম গ্রহণ করতে তোমার বাঁধা কোথায়, তা আমি জানি। তুমি মনে কর, দুর্বল, অসহায় ও দরিদ্র লোকেরাই ইসলাম গ্রহণ করেছে। আরবের প্রভাবশালীরা তো এই ধর্ম গ্রহণ করেনি; বরং তাঁরা একে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। আমি কিভাবে তা গ্রহণ করি?…’আদি! তুমি কখনো (ইরাকের) হিরায় গিয়েছ? আদি বললেন, ‘আমি হিরার নাম শুনেছি। তবে কখনো যাইনি।’
রাসূল বললেন, ‘কসম সেই সত্তার, যার হাতে আমার জীবন! এই দ্বীন একদিন পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। একজন নারী সেদিন সুদূর হিরা থেকে একা একা সফর করে বাইতুল্লাহর হজ্জ করবে। মাহরাম ছাড়া তাঁর কোনো দেহরক্ষী থাকবে না।’
কোনো দেহরক্ষীর সহায়তা ছাড়াই কেবল মাহরাম নিয়ে সে সদুর হিরা থেকে এসে হজ্জ করে যাবে। দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে বহু শহর-বন্দর অতিক্রম করে মক্কায় পৌঁছে যাবে। তখন তাঁর প্রতি হাত বাড়ানোর বা তাঁর ওপর জুলুম করার অথবা তাঁর সম্পদ কেড়ে নেয়ার সাহস কারো থাকবে না।
তখন মুসলমানরা থাকবে ঐক্যবদ্ধ। ফলে কোনো মুসলমানের প্রতি অন্য কেউ চোখ তুলে তাকানোর সাহসও পাবে না।
আদি বিন হাতেম রাসূলের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। কল্পনায় দেখতে লাগলেন দৃশ্যটি। একজন নারী সদূর হিরা থেকে মক্কা নগরীতে পৌঁছল। অথচ তাঁর কোনো দেহরক্ষী নেউ। তাঁর মানে নারীটি এ উপদ্বীপের উত্তর প্রান্ত তথা আদির গোত্রের পাশ দিয়ে পাহাড়ি এলাকা অতিক্রম করছে। আদি আশ্চর্য হয়ে ভাবতে লাগলেন, মরুভূমির ত্রাস তাঈ গোত্রের দুর্ধর্ষ যুবকরা তখন কোথায় থাকবে? সে তাঁদেরকে অতিক্রম করে কীভাবে আসবে?
এরপর রাসূল বললেন, ‘আদি! শোন, শুধু তাই নয়, মুসলমানরা একদিন কিসরা ইবনে হুরমুযের রাজকোষও দখল করে নেবে।’
আদি ইবনে হাতেম ছানাভরা চোখে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইবনে হুরমুযের রাজকোষ?!’
রাসূল বললেন, ;হ্যাঁ, কিসরা ইবনে হুরমুযের রাজকোষ। মুসলমানগণ তাঁর ধনভাণ্ডার দখল করবে এবং তাঁর সমস্ত সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করবে।’
রাসূল (সাঃ) আরো বললেন, ‘তুমি যদি বেঁচে থাক তাহলে একদিন তুমি দেখবে, ধনীরা হাতভরে সোনারূপা নিয়ে পথে পথে ঘুরবে। কিন্তু সদকা গ্রহণের মতো একজন গরীব মুসলমানও খুঁজে পাবে না।
মানুষের ধন-সম্পদ তখন এত বেশী হবে যে, দরিদ্র মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।
রাসূল এরপর আদিকে উপদেশ দিতে লাগলেন। আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে তাঁকে বললেন, ‘সেদিন কিছু লোক মহান আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। তাঁদের মাঝে কোনো দোভাষী থাকবে না। সে তাঁর ডান দিকে তাকাবে, কিন্তু জাহান্নাম ছাড়া কিছুই দেখবে না। বাম দিকে তাকাবে কিন্তু হায়! সেখানেও দেখবে জাহান্নামের লেলিহান শিখা।’
আদি বিন হাতেম নীরবে করতে লাগলেন।
হঠাৎ রাসূল তাঁকে চমকে দিয়ে বললেন, ‘আদি! কালেমা তাইয়্যেবা পাঠ করে মুসলমান হতে তোমার বাঁধা কোথায়? তুমি কি আল্লাহর চেয়ে মহান কোনো প্রভুর কথা জান?’
আদি নির্দ্বিধায় বলে উঠল, ‘আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহ।’
আদি বিন হাতেমের ইসলাম গ্রহণে রাসূল যারপরনাই খুশি হলেন। তাঁর পবিত্র চেহারা মোবারকে আনন্দের হিল্লোল বয়ে গেল।
জীবন সাহাহ্নে একদিন আদি বিন হাতেম (রাঃ) বললেন, আ;মি সে নারীকে দেখেছি, যে সুদূর হিরা নগরী থেকে একটি উটের পিঠে চড়ে একাকী পবিত্র মক্কা নগরী সফর করেছে।’ আর কিসরা বিন হুরমুযের রাজকোষ যারা হস্তগত করেছিল আমি তাদেরও সাথে ছিলাম। আল্লাহর কসম!
তৃতীয় ভবিষ্যদ্বাণীটিও সত্য প্রমাণিত হবে। কেননা, তিনি তো আল্লাহর সত্য নবী।’
গভীরভাবে চিন্তা করে দেখুন, আদির প্রতি রাসূলের আচরণ কত অমায়িক ছিল। কী মায়া আর ভালোবাসা দিয়ে নবী করীম (সাঃ) আদিকে বরণ করে নিয়েছিলেন। আর আদিও কিভাবে হৃদয় দিয়ে তা অনূভব করেছিলেন।
রাসূলের এ হৃদয়কাড়া আচরণ আদিকে ইসলাম গ্রহণ করতে কিভাবে আকর্ষণ করেছিল?
এমন ভালোবাসা এমন আন্তরিকতা আমরাও যদি উজাড় করে দিতে পারি, তাহলে আমরাও অন্যদের মন জয় করতে পারব।
আমরাও পারব মানবতাকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে আনতে। পারব হাজার হাজার ‘আদি….’ তৈরী করতে। একটু চিন্তা করে দেখুন…
কোমলতা ও উন্নত আচরণগত দক্ষতা প্রয়োগ করে আমরাও পৌঁছতে পারি অভীষ্ট লক্ষ্যে।
উৎস : আপনার জীবনকে উপভোগ করুন
এরপর পড়ুন : উপভোগ করুণ আচরণগত দক্ষতা
For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.