স্ত্রী অসদাচরণ কিংবা খারাপ আচরণ ও ব্যবহার করলে স্বামীর কি করণীয় ও বর্জনীয় তা লেখক তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত লেখনির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। সুখময় দাম্পত্য জীবন উপভোগ করতে চলুন সম্মানিত লেখকের পরামর্শটি অধ্যয়ন করা যায়।
স্ত্রী অসদাচরণ করলে!
এ প্রসঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা মনে রাখা দরকার। তা এই যে, আমরা যেমন আমাদের বুকের বাঁকা হাড্ডি দ্বারা উপকৃত হচ্ছি এবং এই উপকৃত হতে গিয়ে কোন প্রকার সমস্যায় পড়ছি না বলে কোনোদিন ডাক্তারের কাছে গিয়ে একথা বলছি না যে, ডাক্তার সাহেব! আমার বাঁকা হাড়টি সোজা করে দিন। ঠিক তদ্রুপ স্ত্রীর মধ্যে যে বক্রতা রয়েছে তা সহই তার থেকে পূর্ণ উপকারিতা হাসিল করা সম্ভব। অর্থাৎ স্ত্রীর বাকামী স্বভাব সৃষ্টিগত ভাবে থাকা সত্ত্বেও তার দ্বারা শারীরিক, মানসিক সকল প্রকার আরাম –আনন্দ লাভ করা সম্ভব। এর কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। কারণ এটা তাদের কোনো রোগ নয়, বরং সৌন্দর্য।
বস্তুতঃ যারা আদর্শ স্বামী তারা একথা খুব ভালো করে উপলব্ধি করতে পারেন যে, দাম্পত্য জীবনে মাঝে মধ্যে স্ত্রীর মান-অভিমান দাম্পত্য সম্পর্ককে নড়বড়ে তো নয়ই বরং আরো গভীর করে। এ এক আলাদা মজা, আলাদা স্বাদ। অবশ্য এই স্বাদ সেসব স্বামীরাই আস্বাদন করতে পারেন যারা স্বীয় স্ত্রী থেকে কেবল নিজের আপনাটুকুও হাসিল করার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন না বরং স্ত্রীর পাওনাটুকুও একশত ভাগ পরিশোধ করার জন্য সবসময় সচেষ্ট থাকেন। সহজ কথায়- যারা-স্ত্রীর কাছ থেকে আমি কি পেলাম, সে হিসেব কড়াগন্ডায় না করে আমি তাকে কী দিলাম সেই হিসেব পরম বিশ্বস্ততার সাথে কড়ায়গন্ডায় করে – তারাই দাম্পত্য জীবনের প্রকৃত সুখ লাভ করতে পারে।
উপরের আলোচনার দ্বারা আমি যা বুঝাতে চাচ্ছি তা হলো, স্ত্রী তার স্বামীর সাথে অসদাচরণ করলে পাল্টা তার সাথে অসদাচরণ করা যাবে না। বরং তার এই আচরণকে তার সৃষ্টিগত বক্র-স্বভাবের বহিঃপ্রকাশ মনে করে ধৈর্য ধারণ করে তার সাথে সদাচরণ করতে হবে। তার সামনে তখন পেশ করতে হবে উত্তম আখলাকের অপূর্ব নমুনা। এতে আশা করা যায় , সে তার কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে এবং নিজের ভুল বুঝতে পেরে একদিন না একদিন স্বামীর কাছে ক্ষমা চাইবে। আর যদি তা না হয়, তাতেও স্বামীর কোনো লোকসান নেই। কেন লোকসান নেই সেকথা পরে বলছি।
আরও পড়ুন : অন্যের প্রশংসা করুন (লাইফস্টাইল টিপস)
প্রিয় ভাই! আপনি যদি আপনার স্ত্রীর বক্রতাকে মেনে চলতে পারেন, তাহলে হতে পারে তার গর্ভেই এমন ওলি আল্লাহ জন্ম নিবে, যে হাশরের ময়দানে আপনার মাগফেরাত ও নাজাতের ওসিলা হবে। যেমন আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে বলেছেন-
কোনো কোনো জিনিসকে তোমরা অপছন্দ কর, অথচ উহার মধ্যেই তোমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত থাকে।
ভাইজান! আপনি হয়তো ভাবছেন, আপনার স্ত্রীর নাক চ্যাপটা। রঙ কালো। দেখতে ভালো না। তাই সুন্দরী স্ত্রী চাই। কিন্তু আমি আপনাকে বলব, আপনি কি উপরোল্লেখিত আয়াতের দিকে খেয়াল করে একথা কখনো চিন্তা করেছেন যে, আল্লাহ পাক তার গর্ভেই এমন কোনো ওলি , হাফেয আলেম সৃষ্টি করে দিবেন যে কাল কিয়ামতে আপনার জন্য কল্যাণ ও মুক্তির ওসিলা হবে? অতএব, ওর সাথে যখন আপনার বিবাহ বন্ধন হয়েই গেছে তখন আর চেহারা-সূরত দেখতে যাবেন না। সুন্দর-কালোর প্রশ্ন উত্থাপন করবেন না। কারণ আপনি জানেন যে, কোন কোন জমিন কালো এবং খারাপ। কিন্তু উহা থেকেই উত্তম ফসলাদি উৎপন্ন হয়। ইতিহাস আজও সাক্ষী, অনেক কালো কালো মেয়েদের গর্ভ থেকে আল্লাহর বড় বড় ওলি জন্মগ্রহণ করেছেন। আবার অনেক সুন্দরী নারীর গর্ভ থেকে জন্ম লাভ করেছে সাক্ষাৎ শয়তান ও দুষ্ট – দুরাচার।
অতএব, স্ত্রীকে কখনোই হেয় মনে করবেন না। রূপ-লাবণ্যের ধাঁধাঁয় পড়বেন না। আপনার স্ত্রী যেমনই হউক, তাকেই বরণ করে নিন। তার সাথেই ক্ষণকালের এই জীবনটা কাটিয়ে দিন। পরিশেষে আবারো স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, স্বীয় স্ত্রী সুন্দর –কালো যেমনই হোক তার দ্বারা উপকৃত হতে চাইলে তার বক্রতাকে মেনে নিতেই হবে। কারন উপরে বর্ণিত হাদীসের শেষাংশে বলা হয়েছে-তার মধ্যে বক্রতা বিদ্যমান থাকা অবস্থায়ই তার সাথে ঘর-সংসার করবে এবং তার দ্বারা উপকৃত হবে।
আল্লামা কাসতালীন (রহঃ) এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন- এই হাদীসে নারীদের সাথে সদাচার করার, নরম ব্যবহার করার এবং তাদের বক্র আচরণের ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। কারন জ্ঞান-বুদ্ধি দুর্বল।
আসলে যাদের জ্ঞান-বুদ্ধি দুর্বল তারা খুব দ্রুত ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয়ে পড়ে। পুরুষদের মধ্যে এবং বাচ্ছাদের মধ্যে দেখবেন, যাদের বুদ্ধি কম তারা ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয়। মোটকথা, মেয়েদের বুদ্ধি-ক্রটি, খারাপ ব্যবহার, কষ্টদায়ক আচরণ সবকিছু বরদাশত করে নিন। দেখুন না, উপরে বর্ণিত হাদীসের মধ্যে কতবড় শিক্ষাদান করা হয়েছে যে, নারীদের কে সোজা করার চেষ্টা করো না। বরং তাদের বক্রতাকে বরদাশত করে নাও।
অবশ্য বক্র স্বভাবের কারনে স্ত্রী ত্যাড়ামী করতে থাকলে তাকে সোজা করার চেষ্টা একেবারে যে করা যাবে না তা নয়, বরং কঠোরতা না করে সহজ উপায়ে তাকে সঠিক পথে তুলে আনার প্রচেষ্টা অবশ্যই করতে হবে। যেমন বুখারী শরীফে বর্ণিত এক হাদীসের শেষাংশে নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, আর যদি তুমি তাকে ছেড়ে রাখ অর্থাৎ মনে কর যে, সোজা যখন হবেই না তখন চেষ্টা করে লাভ কি? তাহলে একেবারেই বাঁকা থেকে যাবে, একটুও সোজা হবে না।
তাই কিছুটা চেষ্টা করার পর যতটুকু সোজা হয়, তা নিয়েই চলতে হবে। এ হাদীসে নারীদেরকে শাসন করার ক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে । তা হলো, একেবারে শাসন ছেড়ে দিবে না এবং এরা কোনোদিন পুরোপুরি সোজা হবে না একথা স্মরণ রেখে পুরোপুরি সোজা করার চেষ্টাও করা যাবে না।
আমি খানিক পূর্বে বলেছি যে, আপনার সাথে খারাপ আচরণ করলেও আপনি তার সাথে ভালো আচরণ করবেন। এতে সে স্বীয় ভুল বুঝতে পেরে লজ্জিত হবে এবং আপনার কাছে ক্ষমা চাইবে। আর যদি এমন না-ও করে তবু আপনার কোনো লোকসান বা ক্ষতি হবে না। কথাটি বুঝার জন্য একটি উদাহরণ দেই। মনে করুণ, আপনার মেয়ে কটুভাষিণী, ভীষণ রাগী এবং অভদ্র। কিন্তু খোদার ফজলে আপনি এই মেয়ের ভালো জামাতা পেয়েছেন। বিয়ের কিছুদিন পর মেয়ে এসে আপনাকে জানাল, আব্বাজান!
আমি আপনার জামাতার সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করি, কটু কথা বলি, কথায় কথায় তাকে কষ্ট দেই। কিন্তু আব্বাজান! আপনার জামাতা একজন ফেরেস্তা ছাড়া আর কিছুই নয়। আমার এত দুর্ব্যবহারের পরও তিনি আমার থেকে কখনো কোনো প্রতিশোধ গ্রহন করেন না। এমনকি টু শব্দটি পর্যন্ত উচ্চারণ করেন না। বরং আমি যখন তাকে বিভিন্ন উপায়ে জ্বালা-যন্ত্রণা দিতে শুরু করি তখন তিনি মুচকি হেসে আস্তে করে ঘর থেকে বের হয়ে যান।
আচ্ছা, আপনি বুকে হাত রেখে বলুন তো, এই মেয়েটির বাপের মনে তখন কেমন লাগবে? তার মনে কি তখন এমন ভাবনা জাগবে না যে, আজ যদি আমার কোনো প্রসাদ থাকত তবে আমি তা জামাতার নামে লিখে দিতাম। প্রাইভেট কার থাকলে তাকে তা উপহার হিসেবে দিয়ে দিতাম।
অনুরূপভাবে আল্লাহ পাকের যেসব বান্দীরা কটু ভাষিণী হয়, রুক্ষ স্বভাবের হয় কিংবা বদ-মেজাজী হয় আর তাদের এই কুটুবাক্য ও রুক্ষ কিংবা অসদাচরণ স্বভাব যেসব স্বামীরা বরদাশত করে তাদের প্রতি আল্লাহ পাক এতটাই সন্তুষ্ট হন যে, তিনি তাদেরকে তার খাছ সম্পর্কের সুউচ্চ আসন দান করে দেন। এমন লোকদেরকে তিনি অনেক বড় অলী বানিয়ে দেন। এ সংক্রান্ত দুটি বাস্তব ঘটনা আমি হৃদয় গলে সিরিজে ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি। তাই এখানে আর সেগুলোর পুনরাবৃত্তি করলাম না। প্রয়োজনে আপনারা সেখান থেকে পড়ে নিবেন বলে আশা রাখি।
আলোচনার শেষ প্রান্তে এসে আরেকটি কথা মনে পড়ল। কথাটি হলো, কেউ কেউ প্রশ্ন করে, নারীদের মধ্যে স্বভাবগত বক্রতা রাখা হলো কেন? এই প্রশ্নের জবাব হলো, পুরুষদের কল্যাণের জন্যই এমনটি করা হয়েছে। যেমন, বক্র স্বভাবের কারণে নারীরা ত্যাড়ামী করতে থাকবে আর পুরুষগণ তাদের ইসলাহ করার চেষ্টা করতে থাকবেন। এই চেষ্টা তারা সফলও হতে পারেন আবার বিফলও হতে পারেন। যদি সফল হন অর্থাৎ স্ত্রী যে বিষয়ে বেঁকে বসেছিল, ত্যাড়ামী করেছিল যদি ভদ্র ও কোমলভাবে তাকে বুঝিয়ে সঠিক পথে আনা যায়, সংশোধন করা যায় তাহলে স্বামী ইসলাহ করণের সাওয়াব পাবেন। আর ইসলাহ বা সংশোধন না হলে ত্যাড়ামীর কারণে যে কষ্ট আসবে, তাতে সবর ও ধৈর্যধারণ করলে আল্লাহর কাছে মর্যাদা বাড়তে থাকবে। মোটকথা, প্রতিটি পুরুষকে একথা বিশ্বাস করতে হবে যে, আল্লাহ পাক নারী জাতীর মধ্যে বক্র স্বভাব দান করে পুরুষদের কল্যাণের পথই সুগম করেছেন- নারীদের সঙ্গে তোমরা ভালো ব্যবহার করবে। যদি তাদের কোনো কথা বা কাজ তোমাদের অপছন্দ লাগে, তাহলে মনে রেখো, হতে পারে তোমরা একটা বিষয়কে অপছন্দ করবে, অথচ তার মধ্যেই আল্লাহ তাআলা প্রচুর কল্যাণ রাখবেন। আল্লাহ পাক আমাদেরকে বুঝার তাওফীক দান করুণ। আমীন।
লেখক : মাওলানা মুহাম্মদ মফীজুল ইসলাম!
এরপর পড়ুন : এক জায়গার ক্ষোভ অন্য জায়গায় মেটাবেন না।
প্রিয় পাঠক পাঠিকা, আমরা আশা করি লেখকের আত্মশুদ্ধিমূলক আর্টিকেল “স্ত্রী অসদাচরণ করলে স্বামীর করণীয় কি” পড়ে নিশ্চয়ই আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। এটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.
খুব সুন্দর প্রবন্ধ তবে পয়েন্ট করে লেখলে পড়তে আরো বেশি ভালো লাগত ।