ফুল নেবে গো ফুল (পথ শিশুর গল্প)

গল্পঃ ফুল নেবে গো ফুল। 

ফুল নেবেন গো ফুলকিশোরী মেয়ে যুবাইদা। বাড়ি পাবনা জেলায়। তিন বছর আগে বাবা মার সাথে ঢাকায় এসেছে। চুরির দায়ে বাবা জেলে। মা অসুস্থ। তাই সংসারের খরচ জোগাতে হয় কিশোরী যুবাইদাকে। পেশা হিসেবে যুবাইদা বেছে নিয়েছে ফুল বিক্রি। প্রতিদিন সকালে শাহবাগ এলাকার ফুলের দোকানের সামনে যে সব ফুল নষ্ট বলে ফেলে দেওয়া হয়, সেগুলো তুলে এনে যত্ন করে সাজিয়ে বিক্রি করে যুবাইদা। কখনো ১০/২০ টাকা দিয়ে ফুল কিনেও আনতে হয় তাকে। গোলাপ রজনীগন্ধা আরো অনেক নাম না জানা ফুল নিয়ে তার দিনভর ছুটে চলা।

গ্রামের স্কুলে ২য় শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছে যুবাইদা। নিজের ঠিকানাটা ও সুন্দর করে লিখতে পারে। ২য় শ্রেণী পাশ করার পরই ওকে ছুটে আসতে হয়েছে ঢাকায়। এরপরও আর লেখাপড়ায় সুযোগ পায়নি। ফুল বিক্রি করতে গিয়ে একবার এক ট্রাফিক পুলিশের মারও খেতে হয়েছে তাকে। তারপরও ফুল বিক্রি ছাড়েনি। পেটের দায়ে! প্রাণের মায়ায়!! মরণের ভয়ে!!!

যুবাইদা এখনো বয়সে ছোট। তাই ফুল বিক্রি ছাড়া অন্য কোনো কাজ সে করতে পারে না। ফুল বিক্রি করার সময় একবার এক গাড়িওয়ালা তাকে ফুল বিক্রি বাদ দিয়ে তার বাসায় কাজ করতে বলে। সে রাজি না হওয়ায় তাকে মারধর করে। এরপর দু’দিন সে অসুস্থ ছিল। এজন্য পূর্ণ একটি দিন তার পরিবারের সবাইকে না খেয়ে থাকতে হয়েছে। যেহেতু যুবাইদার উপার্জনেই চলে তাদের সংসার।

আরও পড়তে পারেন : যে ফুল ঝরে গেল অবেলায়

ফুল বিক্রি করে যুবাইদা দৈনিক ৮০-১০০ টাকা পায়। এ টাকা দিয়েই কোনোমতে চলে তার সংসার। যে বয়সে যুবাইদার হাতে থাকার কথা বই খাতা কলম, ঘুম থেকে উঠে যাওয়ার কথা শিক্ষাকেন্দ্রে, মুখে থাকার কথা পাঠ্যবইয়ের পড়া, সে বয়সে কাকডাকা ভোরেই তাকে ছুটতে হয় ফুলের দোকানে। হাতে নিতে হয় ফুল। মুখে উচ্চারণ করতে হয় ফুল নেবে গো ফুল!

আজ বুধবার। বেলা একটা। বিজয় স্মরণীর সিগন্যালে লালবাতি জ্বলতেই ফুল হাতে লাল রঙের একটি প্রাইভেট কারের দিকে ছুটল যুবাইদা। দরজার কাছে গিয়ে হাক ছাড়ল। বলল, ১০ টাকা মাত্র। নেবেন স্যার?

বেরসিক চালক যুবাইদাকে বকা দিয়ে গাড়ির দরজা লাগিয়ে দিল। ফুল হাতে যুবাইদা আবার ছুটল একটি রিক্সার দিকে। সকাল থেকে সন্ধ্যা এভাবেই ফুল বেঁচে চলে যুবাইদার দিন। কেউ ফুল কিনে। কেউ কিনে না। কেউ বকা দেয়। কেউ ধাক্কা দেয়। কেউ আবার ফুল না নিয়েই যুবাইদার হাতে ৫-১০ টাকা তুলে দেয় মানবতার খাতিরে। যুবাইদা মনে মনে ভাবে—আহা! আমার বাবা যদি ভালো হতো, জেলে না যেত, তাহলে আমাকে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ফুল বিক্রি করতে হত না। আমি অন্য সব বাচ্চাদের মত হাসতাম, খেলতাম, পড়াশোনা করতাম। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। বাবা চুরির দায়ে জেলে গেছেন! আমাকে পথে নামিয়েছেন!!

যুবাইদার খুব ইচ্ছে করে পড়াশুনা করতে। শিক্ষিত হতে। কিন্তু তার এ আশা কি কখনো পূরণ হবে? আর কত দিন তাকে এভাবে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ফুল বিক্রি করতে হবে, কে জানে?

আরও পড়ুন : যুবাইদা নামের অর্থ

প্রিয় বন্ধুরা! শুধু যুবাইদা নয়। যুবাইদার মত আরো অনেক কিশোর-কিশোরী ফুল বিক্রি করে পরিবার চালায়। রাজধানীর গুলশান, বিজয় স্মরণী, মিরপুর, বনানী, শাহবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় গেলে এদেরকে দেখা যায়।

এক সময় এসব কিশোর কিশোরীরাই জড়িয়ে পড়ে নানা অপকর্মে। পেটের দায়ে তারা হাত মিলায় প্রতারক-চক্রের সাথে। আর এদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে প্রতারক চক্র কিশোর-কিশোরীদের ব্যবহার করে তাদের মূল টার্গেটে। বড় লোক হওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কিশোরদের হাতে তুলে দেয় অস্ত্র। আর কিশোরীদেরকে পাঠায় পতিতালয়ে।

তাই সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো, এসব কিশোর-কিশোরী যেন অপরাধের পথে পা না বাড়াতে পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা এবং সম্ভব হলে তাদের পড়াশুনার ব্যবস্থা করা। সেই সাথে পিতা মাতা ও অভিভাবকদেরও উচিত এমন কোনো কাজ না করা যার কারনে কেবল তারা নিজেরাই নয়,  কোমলমতি সন্তানরাও ধ্বংসের মুখে পতিত হয়। আল্লাহ তাআলা সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।

এরপর পড়ুন >> সৃষ্টিশীল হও, চিন্তা করো ভিন্নভাবে 

লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম। আদর্শ কিশোর কিশোরী ৩ বই থেকে। 

[সহায়তায়ঃ মিজান বিন মোতাহার]

আরও পড়তে পারেনঃ মানবতা ভালোবাসায় ভরে উঠুক বাংলাদেশ!

For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.

Leave a Comment

Discover more from Amar Bangla Post

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading