কিশোর শ্রমিকের দ্বীনদারী (ইসলামিক কিশোর গল্প)

গল্পটি এক কিশোর বালকের। গল্পের লেখক এক কিশোর শ্রমিকের দ্বীনদারী ও তাঁর একটি অলৌকিক ঘটনা তুলে ধরেছেন এবং আল্লাহর অলি হওয়ার প্রয়োজনীয় উপদেশ অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আমার বাংলা পোস্ট.কম পাঠক পাঠিকাদের জন্য গল্পটি এখানে উল্লেখ করা হলো। 

কিশোর শ্রমিকের দ্বীনদারী (ইসলামিক কিশোর গল্প)

কিশোর শ্রমিকের দ্বীনদারী

সোমবার। বেলা আটটা। প্রভাতের আলো এখন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পাখিরা নীড় ছেড়ে ডানা মেলে আকাশে উড়ছে। খন্ড খন্ড মেঘের ফাঁকে পৃথিবীটাকে ঠিক ছবির মতই মনে হচ্ছে।

শাইখ আবু আব্দুল্লাহর আম্মা সুবহে সাদিকের বেশ আগেই ঘুম থেকে জাগ্রত হয়েছেন । এ সময় উঠে তাহাজ্জুদ পড়া, রোনাজারী করা, অতঃপর কুরআন তিলাওয়াত শেষে ফজরের নামাজ আদায় করা তার নিয়মিত অভ্যাস। অসুস্থতা কিংবা বিশেষ কোন অসুবিধার সম্মুখীন না হলে এ নিয়মের ব্যতিক্রম কখনোই করেন না। তিনি বেশ সাদাসিধে মহিলা । স্বামী খুশিমত স্বেচ্ছায় যা কিছু এনে দেন তার উপরই সন্তুষ্ট থাকেন । অলংকার ও গয়না-ঘাটি থেকে শুরু করে ছোট-খাটো সদাই-পাতির ব্যাপারে স্বামীর পছন্দকেই প্রাধান্য দেন। স্বামীর মতের বাইরে কিছুই তিনি করতে যান না। ফলে তাদের দাম্পত্য জীবনের সুখ দিন দিন কেবল বেড়েই চলছে ।

ঐদিন ফজরের নামায আদায়ের পর হঠাৎ কেন জানি আবু আব্দুল্লাহর মায়ের মাছ খাওয়ার সখ জাগল। তবে ছোট মাছ নয়, বিশাল আকারের বড় মাছ। কিন্তু মাছ খাওয়ার সখ জাগার সাথে সাথে তিনি ভাবতে লাগলেন, কোন দিন তো স্বামীর কাছে কিছু চাইনি, আজ কি করে মাছের কথা বলব? না, থাক বলার প্রয়োজন নেই। এ বলে তিনি বিভিন্ন উপায়ে মনকে বুঝাতে চেষ্টা করলেন।

কিন্তু মন আজ কিছুতেই বুঝ মানতে চাইছে না। তাকে যতই বুঝানো হচ্ছে, বড় মাছের প্রতি তার আগ্রহ ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত মনের কাছে পরাজিত হয়ে স্বামীর নিকট তা ব্যক্ত করারই সিদ্ধান্ত নিলেন ।

আবু আব্দুল্লাহর আব্বা তখন ঘরে ছিলেন না। সেই যে ফজর পড়তে মসজিদে গেছেন এখনো ফিরেন নি। অবশ্য না ফেরার কারণও আছে। কারণ প্রতিদিন তিনি নামাজের পর তাসবীহ তাহলীল ও ইশরাক আদায় শেষে পাড়া-প্রতিবেশীদের খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়েন। অতঃপর তাদের কোন সমস্যা থাকলে তা সমাধান করার চেষ্টা করেন। এসব করতে করতে বাসায় ফিরতে প্রায় আটটা নয়টা বেজে যায় । সুতরাং আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি ।

স্বামী ঘরে আসলে স্ত্রী তাকে খেতে দিল। তারপর স্বামীর ইচ্ছানুযায়ী নির্জন কক্ষে প্রবেশ করে দু’জনই সুখ সাগরে ভেসে চলল। তারপর এক পর্যায়ে স্ত্রী যখন বুঝল মনের কথাটি প্রকাশ করার এখনই উপযুক্ত সময়, তখন বলল-

: ওগো প্রিয়তম! আজ সকাল থেকে একটা সখ মনের মধ্যে চেপে বসেছে। তা দূর করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু সফল হতে পারি নি । তাই শেষ পর্যন্ত আপনার নিকট বলার ইচ্ছা করলাম এখন আপনি অনুমতি দিলে বলতে পারি ।

: তুমি আমার প্রিয়তমা। নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসি তোমাকে । আর তুমি কিনা একটা সখের কথা বলতে এতটা ইতস্তঃ করছ? এ তো বড়ই আশ্চর্যের কথা!

: কোন সময় এমন কথা বলি নি তো, তাই এমন লাগছে ।

: যাক আর দেরী করে লাভ নেই । তাড়াতাড়ি বলে ফেল ।

: বিশাল আকৃতির একটি বড় মাছ খেতে চেয়েছিলাম ।

: ও তাই! এটুকু বলতেই তোমার এত ভয়। যাও কথা দিলাম, যেভাইে হোক তোমার আশা পূর্ণ করব, ইনশাআল্লাহ ।

এতক্ষণ আমি আবু আব্দুল্লাহ বলে যার নাম কয়েকবার উল্লেখ করেছি তিনি ছিলেন একজন আল্লাহ প্রেমিক ও উঁচু স্তরের বুযুর্গ। আলোচ্য ঘটনাটি তিনি নিজেই বর্ণনা করেছেন।

তিনি বলেন, একটু পর আব্বা বাজারে গেলেন। সাথে আমাকে ও নিলেন। আমি তখন ছোট ছিলাম। ভাগ্য আমাদের ভালই বলতে হবে। কারণ অন্য বাজারে যেতে হয়নি, এ বাজারেই আমাদের পছন্দমত একটি বিশাল আকৃতির মাছ পেয়ে যাই । আব্বা দাম দর করে মাছটি কিনে নেন । মাছটি এতই বড় ছিল যে, হাতে করে আনা সম্ভব ছিল না। বড় কোন পাত্রে রেখে মাথায় উঠিয়ে আনতে হবে। তাই আব্বাজান একজন মজদুর খুঁজতে লাগলেন ।

আমাদের পাশেই একটি অল্প বয়সের কিশোর দাঁড়ানো ছিল । সে বলল, আপনি কি কুলি খুঁজ করছেন? আব্বা হ্যাঁ বলতেই সে বলল, মাছটা আমার মাথায় তুলে দিন আমি বাড়ি পৌছে দিয়ে আসব ।

আমাদের বাড়ি থেকে বাজার ছিল বেশ দূরে। তাই সেখানে পৌছে মাছ কিনতে কিনতে প্রায় বারটা বেজে যায়। ছেলেটির মাথায় মাছ উঠিয়ে দেওয়ার পর সে আমাদের আগে আগে বাড়ি অভিমূখে চলছিল। বেশ কিছু পথ অতিক্রম করার পর পার্শ্ববর্তী একটি মসজিদ থেকে মুয়াজ্জিনের কন্ঠে আল্লাহু আকবার ধ্বনি শোনা গেল । আযানের আওয়াজ শোনার সাথে সাথেই ছেলেটি দাঁড়িয়ে গেল এবং মাছটি মাথার উপর থেকে নিচে নামিয়ে রাখল ।

ছেলেটির কাজ দেখে আমরা ভাবলাম, ছোট মানুষ, বড়জোর বার- তের বছর বয়স হবে। মাছ নিয়ে এত পথ চলতে চলতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। একটু জিরিয়ে নেওয়ার জন্যই বোধ হয় এরূপ করেছে।

কিন্তু পরক্ষণেই আমাদের ধারণা ভুল বলে প্রমাণিত হল। ছেলেটি বলল, চাচাজান! আপনাদের যদি বিলম্ব করা সম্ভব হয় তবে করুন, অন্যথায় অন্য কোন কুলির দ্বারা মাছটি নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন । ছেলেটির কথা শুনে আব্বা বললেন- কেন, কি হয়েছে তোমার?

: না, তেমন কিছুই হয়নি আমার। মসজিদে আযান হয়েছে। আযানের আওয়াজ আপনারাও নিশ্চয় শুনতে পেয়েছেন। আমি এখন মসজিদে যাব। জামাতের সাথে নামাজ পড়ব। কাজ যত গুরুত্বপূর্ণ হউক না কেন, আযানের পর আমার নিকট নামাজের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজ থাকে না। একথা বলে কোন উত্তরের অপেক্ষা না করে ছেলেটি দ্রুত মসজিদে চলে গেল ।

এ ছোট্ট ছেলের দ্বীনদারী দেখে আমরা আশ্চর্য হলাম। তার চলে যাওয়ার পথের দিকে কিছুক্ষণ হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। তারপর আব্বা আমাকে বললেন, এসো বাবা আমরাও নামাজ পড়ে নেই। মাছটা এখানেই থাক। আল্লাহ পাকের ইচ্ছা থাকলে আমরা পুনরায় মাছটি এখানেই পাব। এটা কত বড় লজ্জার কথা যে, শ্রমিক ছেলেটি নিজের পারিশ্রমিকের কথা না ভেবে আজান শোনার সাথে সাথে মসজিদে চলে গেল, আর আমরা মাছের কথা চিন্তা করে জামাত ছেড়ে দিব? এটা কিছুতেই হতে পারে না ।

ছেলেটির পিছনে পিছনে আমরাও মসজিদে গেলাম। ধীরস্থিরে নামাজ পড়লাম। তারপর ছেলেটিকে নিয়ে ফিরে এসে দেখলাম, মাছটি যেভাবে রেখে গিয়ে ছিলাম সেভাবেই পড়ে আছে ।

আমরা নামাজ পড়তে যাওয়ায় ছেলেটি বেশ খুশি হল। বলল, আল্লাহর হুকুম ঠিক ঠিক মত পালন করলে তিনিই বান্দার যাবতীয় প্রয়োজন পূর্ণ করেন । যাবতীয় সমস্যার সমাধান করে দেন। একথা বলে মাছটি মাথায় নিয়ে ছেলেটি আবার আমাদের সাথে চলতে লাগল এবং অল্প সময়ের মধ্যে বাসায় পৌঁছে গেল ।

আব্বাজান বাড়িতে পৌঁছেই ছেলেটির সব ঘটনা আম্মাকে শোনালেন । আম্মা তাতে বেশ আশ্চর্যবোধ করলেন এবং বললেন- হ্যাঁ, ছেলে হলে তো এমনই হওয়া চাই। ঐ মা কতই না ভাগ্যবান যিনি এ ছেলেটিকে গর্ভে ধারণ করেছেন। আমার মনে হয়, ছেলেটি বুযুর্গ হবে। আপনি তাকে থাকতে বলুন। অল্প সময়ের মধ্যে মাছ রান্না শেষ হয়ে যাবে। এরূপ দ্বীনদার ছেলেকে একবেলা খাওয়াতে না পারলে মনে স্বস্তি পাব না ।

আব্বা ছেলেটির কাছে এসে বললেন, বাবা! কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর । মাছ পাকানো হচ্ছে। খেয়ে যাবে ।

ছেলেটি শান্ত স্বরে বলল, চাচাজান আমার পক্ষে তা সম্ভব হবে না। কারণ আমি রোজা রেখেছি। তার রোযার কথা শুনে আমরা আরও আশ্চর্য হলাম । এরপর আব্বাজান তাকে বললেন, ঠিক আছে, আজ তাহলে আমাদের বাসায় ইফতার করবে।

ছেলেটি জবাবে বলল, ওয়াদা দিতে পারব না। তবে সন্ধ্যায় যদি কাছাকাছি কোন মসজিদে নামাজ পড়ি তাহলে ইনশাআল্লাহ অবশ্যই আপনার আশা পূর্ণ করব। এ বলে সে চলে গেল । আব্বাজান তাকে কিছু পারিশ্রমিক দিয়ে দিলেন ।

মেঘশূন্য আকাশ। বৈকালের শেষ সূর্যাস্তের আলোকরশ্মি ছড়িয়ে পড়ছিল সকলের চোখে মুখে। এলোমেলো বাতাসে দেহমন আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠছিল। আমরা ভেবেছিলাম, ছেলেটি আমাদের এখানে এসে ইফতার করবে। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হল, ছেলের যে দ্বীনদারী দেখলাম, তাতে বোধ হয় তাকবীরে উলা ছুটে যাওয়ার ভয়ে কিছুতেই এখানে ইফতার করতে আসবে না। তাই মসজিদে গিয়ে মাগরিবের নামাজ আদায় করে বাসায় এলাম এবং সকলে মিলে তার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম । আমরা এমন আগ্রহ সহকারে তার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, যেমন কোন সম্মানিত অতিথির জন্য অপেক্ষা করা হয় ।

নামাজের পর বেশি দেরী হল না। ফরজের পর সুন্নত ও ৬ রাকাত আউয়াবিন আদায় এবং বাড়ি পর্যন্ত আসতে যতটুকু সময় লাগার কথা ঠিক ততটুকু সময় পর ছেলেটি আমাদের নিকট উপস্থিত হল। আমরা তার আগমনে খুব খুশি হলাম এবং তাকে উত্তমভাবে খানা খাওয়ালাম । এরপর পাশের খালি কামরায় রাত্রি যাপনের আমন্ত্রণ জানালাম। সে আমাদের আমন্ত্রণ সানন্দে গ্রহণ করল এবং রাত্রি যাপনের জন্য কক্ষে প্রবেশ করল ।

পরদিন সকালে ঘটল এক আশ্চর্য জনক ঘটনা। আমাদের পাশের বাড়িতে বাস করত একজন মহিলা । তার উভয় পা ছিল সম্পুর্ণ বিকল । দু’ কদম হেঁটে কোথাও যাওয়ার শক্তি ছিল না তার। এক সময় এই মহিলাকে সুস্থ করে তোলার জন্য বহু টাকা পয়সা খরচ করা হয়েছে। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। অবশেষে আত্মীয়-স্বজনরা তার আরোগ্যের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিরাশ হয়ে চিকিৎসাই বন্ধ করে দিয়েছে। তার নিজের মনের মধ্যেও এ ধারণা জন্মেছে যে, হয়তো কোন দিন সে ভাল হবে না ।

ছেলেটির দ্বীনদারীর কথা উক্ত মহিলাটি রাতেই শুনেছিল। এতে তার মনে আশার সঞ্চার হল । ভাবল, নিশ্চয় ছেলেটি আল্লাহর আশেক বান্দা হবে। তার ওসীলায় দুআ করলে আল্লাহ পাক মেহেরবানী করে আমাকে সুস্থও করে দিতে পারেন ।

এ কথা মনে হতেই মহিলা দুআর জন্য হাত উঠাল। তারপর বড়ই কাকুতি মিনতি করে কেঁদে কেঁদে বলল, হে পরওয়ার দিগার! তোমার ঐ নেক বান্দার অসিলায় আমাকে সুস্থ করে দাও ।

আল্লাহ পাক মহাপরাক্রমশালী। যা ইচ্ছে তাই পারেন। তবে অনেক সময় কাউকে কিছু দেওয়ার জন্য বাহানা তালাশ করেন । মহিলার বেলাও তাই হল। সে যখন বালক বুযুর্গের অসিলায় দুআ করল তখন আল্লাহ পাকের রহমতের সাগরে জোশ উঠল । তাই সাথে সাথে তিনি মহিলার পা দুটো ভাল করে দিলেন ।

ভোর বেলা মহিলা আমাদের বাড়িতে এল। সে এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। তাকে দেখে বুঝার কোন উপায় নেই যে, সে কখনো রোগাক্রান্ত ছিল । তাকে এ অবস্থায় দেখতে পেয়ে আমাদের বিস্ময়ের অন্ত রইল না । সুতরাং প্রকৃত ঘটনা কি? কিরূপে সে এমন সুস্থ সবল হয়ে গেল- তা জানার জন্য সকলের মনে কৌতুহল জাগল ।

আমরা মহিলাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করার পর সে সবকিছু খুলে বলল। এতে ছেলেটির প্রতি আমাদের ধারণা আরো সুন্দর ও উঁচু হল । মনের মধ্যে বিশ্বাস জন্মাল, ছেলেটি নিশ্চয় আল্লাহর অলী- খাঁটি বান্দা । তাই তার কাছে গিয়ে আমাদের সকলের দুআ নেওয়া উচিত।

এসব কথা চিন্তা করে আমরা সবাই উঠে দাঁড়ালাম। তারপর হেঁটে গিয়ে ছেলেটির কামরার সামনে উপস্থিত হলাম । আমাদের ভাগ্য মন্দই বলতে হবে । কারণ সেখানে গিয়ে দেখি, কামরার দরজা বন্ধ এবং ভিতরে কোন লোক নেই । কখন যে সে চলে গেছে আমরা কেউ টেরও পেলাম না। তাকে না পেয়ে খুবই আফসোস করলাম এবং ব্যথিত মনে ফিরে এলাম ।

সুপ্রিয় পাঠক! আমরা অনেক সময় ভাবি, বয়স না হলে, দাড়ি না পাকলে আল্লাহর ওলী হওয়া যায় না। কিন্তু আমাদের এ ধারণা যে সম্পূর্ণ ভুল আলোচ্য ঘটনাই তার বাস্তব প্রমাণ। তাই আসুন, আমরা আমাদের অন্তরে এ কথার স্থান দেই যে, বুযুর্গ তথা আল্লাহ প্রেমিক হওয়া, বয়সের সাথে সম্পৃক্ত নয়। বালেগ হওয়ার পর যে কোন বয়সেই বুযুর্গ হওয়া যায়। অতএব আমাদের যার বয়স যতই হউক না কেন, আজ থেকে আমরা আল্লাহর ওলী হওয়ার জন্য এরাদা করি এবং সেজন্য যথাপোযুক্ত চেষ্টাও করতে থাকি ।

অনেকেই হয়তো ভাবেন, আল্লাহর ওলী হওয়া না জানি কত কঠিন কাজ, আমাদের পক্ষে ওলী-বুযুর্গ হওয়া কখনোই সম্ভব নয়। অথচ ব্যাপারটি মোটেও এমন নয়। যারা ওলী হয়েছেন তারাও তো মানুষ। সুতরাং তারা পারলে আমরা পারব না কেন? আসল ব্যাপার হল, এজন্য প্রথমে পাক্কা ইরাদা ও খাঁটি নিয়ত করতে হয়। তারপর নিম্ন লিখিত ৫টি কাজ আমলে আনতে পারলেই বুযুর্গ হওয়া যায়। আখ্যা পাওয়া যায় আল্লাহ প্রেমিক বা তাঁর খাঁটি বান্দা হিসেবে। তাই আসুন কাজগুলো জেনে নেই এবং তা আজ থেকেই পালন শুরু করে দিয়ে ধাপে ধাপে সম্মুখে অগ্রসর হই । মনে রাখবেন, আপনি যখন দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে এসব আমল পালন করতে শুরু করবেন তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে অবশ্যই সাহায্য প্রাপ্ত হবেন । অর্থাৎ এসব আমল বাস্তবায়ন করা আল্লাহ তাআলা আপনার জন্য অনেক সহজ করে দিবেন । কাজগুলো হল-

১। আল্লাহ ওয়ালাদের সোহবত অবলম্বন করা : অর্থাৎ যারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা, যাদের দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়, যারা সদা- সর্বদা আল্লাহর হুকুম ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নত মোতাবেক জীবন যাপনের চেষ্টা করেন তাদের সাথে মহব্বত রাখা, সময় সুযোগ করে সাক্ষাত করা এবং তাদের মজলিশে বেশী বেশী বসা ।

২। সকল প্রকার জাহেরী ও বাতেনী গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা : অর্থাৎ প্রকাশ্য গোপনীয় যত প্রকার গোনাহ আছে সব ধরনের গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা। যদি কোন সময় প্রবৃত্তির তাড়নায় কিংবা শয়তানের ধোকায় পড়ে কোন গোনাহ হয়েই যায় তবে সাথে সাথে তওবা করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া, গোনাহের জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হওয়া এবং ভবিষ্যতে গোনাহ না করার দৃঢ় সংকল্প করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন গোনাহ থেকে তাওবাকারী ঐ ব্যক্তির ন্যায় যার কোন গোনাহই নেই ৷

৩। গোনাহের উপকরণ থেকেও দূরে থাকা : অর্থাৎ যেসব জিনিস গোনাহ করতে প্ররোচিত করে, গোনাহের পথ সুগম করে ঐসব জিনিস থেকেও বেঁচে থাকা। ব্যাপারটি পরিস্কার রূপে হৃদয়ঙ্গম করার জন্য কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে ।

(ক) যেমন ধরুন, কেউ সখ করে কিংবা অন্য যে কোন কারণে একটি টেলিভিশন ক্রয় করে ঘরে নিয়ে এল। ঘরে টেলিভিশন থাকার কারণে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় এখন তাকে এমন সব দৃশ্যও দেখতে হয় বা গান বাজনা সহ এমন কথাও শুনতে হয় যা দেখা বা শুনা ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ না জায়েজ ও হারাম। অথচ যদি তার ঘরে এটি না-ই থাকত তবে টেলিভিশনকে কেন্দ্র করে এত লক্ষ-কোটি পাপ তার আমল নামায় লিখা হত না। তাছাড়া এর কারণে অন্যরা সবাই মিলে যত পাপ করবে তার সমপরিমাণ পাপও তার আমল নামায় লিখা হবে। কারণ টেলিভিশন নামক এ গোনাহের, বাক্সটি ঘরের আনার ব্যাপারে তার ভূমিকাই সর্বাধিক ছিল ।

(খ) কেউ হয়তো আয় উপার্জনের জন্য এমন এক স্থান বা পরিবেশ বেছে নিয়েছে যেখানে কারণে অকারণে মিথ্যা বলতে হয়, পর্দা-পুশিদার কোন বালাই নেই, মেয়ে ছেলেদের আনাগোনা বেশি, ইচ্ছা করলেই ঘুষ খাওয়া যায়, কামাই করা যায় অবৈধ পয়সা ইত্যাদি। অথচ সে যদি উক্ত পেশা বা স্থানে নিযুক্ত হওয়ার পূর্বে একটু চিন্তা করে নিত যে, সেখানে গিয়ে আমার ঈমান-আমল ঠিক রাখতে পারব তো? আমার উপার্জনগুলো একশ ভাগ বৈধ হবে তো? দৃষ্টির হেফাজত করা সম্ভব হবে তো? তাহলে তার জন্য আল্লাহপাক অবশ্যই অন্য কোন রাস্তা খুলে দিতেন। কেননা হাদীস শরীফে আছে, যে ব্যক্তি পবিত্র থাকতে চায় আল্লাহ পাক তাকে পবিত্র রাখেন ।

(গ) অথবা কেউ হয়তো এমন এক বন্ধু নির্বাচন করল, যে নাকি সর্বদা তাকে অন্যায় ও অবৈধ কাজে উদ্বুদ্ধ করে। এমনকি ভাল কাজে বাধা প্রদান করতেও দ্বিধাবোধ করে না । সুতরাং এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ঐ ব্যক্তির গোনাহের পাল্লাকে ভারী করার পিছনে ঐ বন্ধুটিও অনেকাংশে দায়ী ।

এক কথায় মাথা না থাকলে যেমন মাথা ব্যাথার কোন প্রশ্ন উঠে না, তেমনি গোনাহ করার উপায়-উপকরণগুলো কাছে না রাখলেও গোনাহের পরিমান উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে ।

৪ । কোন আল্লাহ ওয়ালার পরামর্শ অনুযায়ী দৈনন্দিন নিয়মিত কিছু জিকির করা : জিকির একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। ইবাদত সমূহের মধ্যে জিকিরই একমাত্র ইবাদত যার কোন সীমারেখা নেই। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক খুব বেশি পরিমাণে জিকির করার নির্দেশ দিয়েছেন। এক আয়াতে জিকিরকে অন্তরে প্রশান্তি আনয়নকারী বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে । জিকির মানে আল্লাহকে স্মরণ করা। প্রকৃত কথা হলো, জিকির সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসে যদি কোন প্রকার নির্দেশ নাও আসত তবুও সেই দয়ালু দাতার জিকির থেকে ক্ষণিকের জন্যও গাফেল থাকা কোন বান্দার জন্য সঙ্গত ছিল না। কেননা তার সীমাহীন দান ও অনুগ্রহ প্রতি মুহূর্তেই বান্দার উপর বর্ষিত হচ্ছে । তদুপরি এ সম্পর্কে যখন কুরআন হাদীস এবং বুযুর্গানে দ্বীনের অসংখ্য বাণী ও হালত বর্ণিত হয়েছে তখন উহার নূর ও বরকত যে অফুরন্ত তা বলাই বাহুল্য ।

জিকিরের প্রতি সম্মানিত পাঠক পাঠিকাদের উৎসাহ বৃদ্ধি ও গুরুত্ব সৃষ্টির জন্য নিম্নে উদাহরণ স্বরূপ কয়েকখানা আয়াত ও হাদীস উল্লেখ করা হল ।

আয়াত-১ : (হে আমার বান্দাগণ!) তোমরা আমি আল্লাহকে স্মরণ করতে থাক, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করতে থাকব। আমার শুকরিয়া আদায় কর, অকৃতজ্ঞ হইও না। (সূরা বাকারা : ৫২)

আয়াত-২ : তোমরা বেশী বেশী আপন প্রভুকে স্মরণ করতে থাক এবং সকাল বিকাল তার পবিত্রতা বর্ণনা কর । (সূরা আল ইমরান : ৪১)

আয়াত-৩ : (হে মুহাম্মদ সা.) আপনি ঐ সমস্ত লোকের সহিত বসতে অভ্যস্ত হউন যারা সকাল বিকাল আল্লাহকে ডাকে । (সূরা কাহাফ : ২৮)

আয়াত-৪ : (মুমিনদের বিভিন্ন গুনাবলির মধ্যে এটাও একটি যে) তারা পুরুষ হউক কিংবা নারী হউক বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করে থাকে। তাদের সকলের জন্য আল্লাহ পাক ক্ষমা এবং মহা প্রতিদানের ব্যবস্থা করে রেখেছেন

আয়াত-৫ : যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর জিকির থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয় আমি তার জন্য একটি শয়তান নিযুক্ত করে দেই, অতঃপর সেই হয় তার সঙ্গী (সূরা যুখরুফ : ৩৬)

আয়াত-৬ : ঈমানদারদের জন্য ঐ সময় কি এখনও আসেনি যে, তাদের অন্তর আল্লাহর জিকিরের দিকে ঝুঁকে পড়বে? (সূরা হাদীদ : ১৬)

আয়াত-৭ : হে ঈমানদারগণ! ধন সম্পদ এবং সন্তান সন্তুতি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর জিকির থেকে গাফেল না রাখে, যারা এরূপ করবে তারা নিশ্চয়ই ক্ষতিগ্রস্থ হবে । (সূরা মুনাফিকুন : ৯)

হাদীস-১ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে বুসর (রা.) বলেন, এক সাহাবী আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! শরীয়তের আহকাম তো অনেক আছে, তবে আপনি আমাকে এমন একটা জিনিস শিক্ষা দিন যার উপর আমি রীতিমত আমল করতে পারি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর জিকির দ্বারা তোমার জিহ্বা যেন সব সময় তরুতাজা থাকে । (তিরমিযি)

হাদীস-২ : হযরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার সাহাবীদেরকে বললেন, আমি তোমাদেরকে এমন একটি আমলের কথা বলব না যা যাবতীয় আমল হতে উত্তম, তোমাদের মালিকের নিকট সবচেয়ে বেশি পবিত্র, তোমাদেরকে সর্বাধিক মর্যাদা দানকারী, আর আল্লাহর রাস্তায় স্বর্ণ রৌপ্য খরচ করার চেয়েও অধিক উত্তম, আর শত্রুর সাথে জিহাদ করার সময় পরস্পর পরস্পরকে হত্যা করার চেয়েও অনেক ভাল । সাহাবাগণ বললেন, অবশ্যই বলুন । দয়াল নবী উত্তরে বললেন, তা হল আল্লাহর জিকির। (তিরমিযি, ইবনে মাজাহ)

হাদীস-৩ : হযরত আবু মূসা (রা.) থেকে বর্ণিত । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জিকির করে আর যে ব্যক্তি জিকির করে না, তাদের দৃষ্টান্ত জীবিত ও মৃতের সমতুল্য (অর্থাৎ প্রথমজন জীবিত আর দ্বিতীয়জন মৃত সদৃশ। (বুখারী, মুসলিম

জীবন সবার কাছে প্রিয় আর মৃত্যুকে সবাই ভয় করে। বর্ণিত হাদীস দ্বারা বুঝা যায়, যারা জিকির করে না, তারা জীবিত থেকেও মৃতের ন্যায় ।

হাদীস-৪ : হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বেহেশতবাসীগণ বেহেশতের মধ্যে কোন কিছুর জন্য আফসোস করবে না, তবে (দুনিয়াতে) যে সময়টুকু আল্লাহর জিকির ব্যতীত অতিবাহিত হয়েছে তার জন্য আফসোস করবে। (তাবরানী, বায়হাকী)

হাদীস-৫ : উপরি উক্ত সাহাবী থেকে বর্ণিত। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মানুষকে কবরের আজাব থেকে নাজাত দানকারী আল্লাহর জিকির থেকে বড় আর কোন আমল নেই । (আহমদ)

হাদীস-৬ : হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত । রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা এত বেশি পরিমানে আল্লাহর জিকির করতে থাক যেন লোকজন তোমাকে পাগল বলতে থাকে। (আহমদ)

হাদীস-৭ : হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, যেদিন আল্লাহর ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবে না, সেদিন আল্লাহ পাক সাত ব্যক্তিকে আপন রহমতের ছায়ার নীচে আশ্রয় দান করবেন। তম্মধ্যে একজন হল ঐ ব্যক্তি যে নীরবে বসে আল্লাহর জিকির করে এবং তার চক্ষু হতে অশ্রু প্রবাহিত হতে থাকে ।

হাদীস-৮ : উপরি উক্ত সাহাবী থেকে বর্ণিত অপর এক হাদীসে রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ পাকের এরশাদ নকল করে বলেন (হে আমার বান্দা!) তুমি ফজর ও আছর নামাজের পর কিছুক্ষণের জন্য আমার জিকিরে মশগুল থাক। আমি মধ্যবর্তী সময়ের জন্য তোমার যাবতীয় প্রয়োজন মিটিয়ে দেব । (আহমদ)

এ হাদীসের আলোচনায় শাইখুল হাদীস হযরত যাকারিয়া (র.) বলেন, দুনিয়ার স্বার্থের জন্য আমরা কতই না কষ্ট স্বীকার করে থাকি । ফজর এবং আছরের পর যদি সামান্যটুকু সময় আমরা জিকিরে কাটিয়ে দেই তবে এমন কি বিগড়ে যায়! উপরন্তু মহান আল্লাহ তাআলা যখন প্রয়োজন মেটানোর ওয়াদা করেছেন তখন আবার প্রয়োজনই বা থাকে কিসের?

হাদীস-৯ : হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (রা.) বলেছেন, শয়তান বনী আদমের অন্তরে জেকে বসে থাকে। অতঃপর-সে যখন জিকির করে তখন শয়তান পালিয়ে যায় । পক্ষান্তরে যখন সে গাফেল অর্থাৎ জিকির বিহীন অবস্থায় থাকে তখন শয়তান তার অন্তরে বিভিন্ন রকমের ওয়াসওয়াসা দিতে থাকে। (অর্থাৎ ধোকা ও নানাবিধ অশ্লীল চিন্তা-ভাবনার উদ্রেক করে।)

প্রিয় পাঠক! উল্লেখিত আলোচনা দ্বারা বুঝা যাচ্ছে, জিকির হল এমন এক আমল যদ্বারা অন্তরে শান্তি আসে, শয়তান পাপকর্মে লিপ্ত করানোর সুযোগ পায় না, আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার যাবতীয় হাজত পূর্ণ হয়ে যায় । তাছাড়া আরও হাজারো ফায়েদা তো আছেই । তাই আসুন, আল্লাহর ওলী হওয়ার চতুর্থ কাজ হিসেবে আমরা কোন বুযুর্গ ব্যক্তির পরামর্শ ক্রমে প্রতিদিন নিয়মিত কিছু সময় হলেও জিকির করি ৷

৫। সমস্ত কাজ সুন্নত মোতাবেক করা : আল্লাহর ওলী হওয়ার জন্য সর্বশেষ যে কাজটি আপনাকে করতে হবে তা হল, যাবতীয় কাজ সুন্নত মোতাবেক করা। অর্থাৎ সকাল থেকে সন্ধ্যা এবং সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত আপনি যতগুলো (বৈধ) কাজ করে থাকেন, সেসব কাজ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং হযরত সাহাবায়ে কেরাম যেভাবে, যে নিয়মে, যে তরীকায় সম্পাদন করেছেন আপনাকেও সেভাবে সেই নিয়মেই করতে হবে। তারা যেভাবে হেসেছেন, যেভাবে কেঁদেছেন, যেভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন, যেভাবে খানা-পিনা করেছেন, যেভাবে ঘুমিয়েছেন, যেভাবে পথ চলেছেন, যেভাবে লেনদেন ও আচার আচরণ করছেন, যেভাবে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের বিভিন্ন কর্মকান্ড সম্পাদন করেছেন আপনাকেও ঠিক সেভাবেই তা সম্পাদন করতে হবে। আর এটি মোটেও কোন কঠিন বা দূরহ কাজ নয়। এর জন্য শুধু আপনার সদিচ্ছা ও দৃঢ় সংকল্প প্রয়োজন। আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, হুজুর! এত সব সুন্নত পাব কোথায়? আমাদের তো সব কাজের সব সুন্নত জানা নেই ৷

এর জবাবে আমি খুশির সাথে বলব, বর্তমানে সুন্নতের উপর বাংলা ভাষায় অনেক বই বের হয়ে গেছে। যেমন- বয়ানুস্ সুনান, জাওয়ামিউস্ সুনান, গুলজারে সুন্নত, প্রিয় নবীর প্রিয় সুন্নত ইত্যাদি। আপনি ইচ্ছা করলেই এসব বই আপনার হাতের নাগালে চলে আসতে পারে। আর যদি একেও ঝামেলা মনে করেন, তবে আমার ঠিকানায় চিঠি লিখুন কিংবা ফোন করুন। ইনশাআল্লাহ আমি যেভাবেই হোক সেগুলো সংগ্রহ করে সুলভ মূল্যে ডাকযোগে আপনার ঠিকানায় পাঠিয়ে দেব।

মুহতারাম পাঠক! প্রকৃতপক্ষে সমস্ত বুযুর্গী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নত অনুসরণের মধ্যেই নিহিত । তাই আসুন, আমরা আজ থেকে প্রতিজ্ঞা করি, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নত ছাড়া কোন কাজ করব না। একটি ১২/১৩ বছরের বালক যদি মেহনত মোজাহাদা করে বুযুর্গ হতে পারে তাহলে আমাদের মত যুবক-যুবতী ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা তা পারবে না কেন? অবশ্যই পারব। ওগো বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক! তুমি আমাদের হিম্মত দাও, সাহস দাও, শক্তি দাও, বল দাও। আপন অনুগ্রহে আমাদেরকে তোমার খাঁটি বান্দা হিসাবে কবুল করে নাও । আমিন ।

বিঃ দ্রঃ এখানে ওলী হওয়ার জন্য যে পাঁচটি কাজের কথা উল্লেখ করা হল, তা আরেফ বিল্লাহ হযরত মাওলানা শাহ হাকীম মুহাম্মদ আখতার সাহেব (দামাত বারাকাতুহুম) এর কথা। আমি বিষয়গুলো উত্তমরূপে বুঝে আসার জন্য একটু ব্যাখ্যা করে দিলাম মাত্র । -লেখক

[সূত্র : ইন্তিখাব, রৌশন সেতারে, সহায়তায় : ফয়জুল কালাম, ফাযায়েলে জিকির, ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে, তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন ।]

লেখক: মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম। বই: হৃদয়স্পর্শী শিক্ষণীয় কাহিনী সিরিজ ১৩ বই থেকে।

 

Leave a Comment