সা’দ বিন হাসান। কতইবা বয়স তার! ৭-৮ বছরের অর্ধফোটা গোলাপ ফুল ।
সা’দ বিন হাসান সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই ভয়ে তটস্থ থাকে, এই বুঝি শুকুনের দল ওকে ছিনিয়ে নিতে এলো!
ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলে পাহাড়ের পাদদেশে উদ্ধাস্তু শিবিরে তার পৃথিবী সীমাবদ্ধ। রাতগুলো দুঃস্বপ্নের মত কেটে যায়। মাঝে মাঝে দুঃস্বপ্ন দেখে চিৎকার দেয় সা’দ; কিন্তু তার চিৎকারে কেউ এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে না-“খোকা, তোমার কি হয়েছে?”
প্রায় বছরখানেক আগে বোমায় বিধ্বস্ত হয় তাদের বাড়ি। পুরো পরিবার মারা যায় একসাথে। শুধু বেচে যায় সা’দ ও তার ছোট চাচা। সা’দের চাচা তাকে এই শিবিরে রেখে চলে যান জীবনবাজির খেলায়, যোগ দেন মুহাহিজদের দলে। সেই থেকে এই শিবিরই সা’দের পৃথিবী।
আজ সোমবার। সকাল থেকেই সা’দ পাহাড়ী পথের দিকে তাকিয়ে আছে। আজ তার চাচা মনসুরের আসার কথা। প্রতিমাসে একবার তিনি প্রিয় ভাতিজাকে দেখতে আসেন এবং তাকে নিয়ে পরিবারের সকলের কবর যিয়ারত করতে যান; শহীদদের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন।
সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে এল। মাথার উপর জ্বলন্ত সূর্যটা যেন আগুনের হল্কা ছড়াচ্ছে। একসময় দূর দিগন্তে ঝাপসা অবয়বে ভেসে উঠল মধ্যবয়সী একজন মানুষের চিত্র। লঘুপায়ে সে এগিয়ে এল সা’দের দিকে। ঘর্মক্লান্ত মুখে তার স্বর্গীয় আভা। সা’দ চাচাজান! চাচাজান! বলে ঝাঁপিয়ে পড়ল তার বুকে। পরম মমতার অনাথ শিশুটিকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন চাচা মনসুর। দু’জনের চোখেই অশ্রুসজল দৃষ্টি, কত চেনা আঁখি। কতই না আপন ওরা!!
ঘণ্টা দু’য়েক পরে চাচার হাত ধরে সা’দ তার বাবা-মায়ের কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো। আস্তে আস্তে বিকেল হয়ে এল। একসময় তারা পৌঁছে গেল শহীদদের কবরের কাছে। চিরনিদ্রায় শায়িত বাবা-মায়ের কবরের কাছে দাঁড়িয়ে সা’দের চক্ষুদ্বয় লোনা জলে ভেসে যায়। দু’হাত তুলে মহান প্রভুর কাছে দীর্ঘসময় দোয়া করে ওরা।
পড়ন্ত বিকেলের সুর্যটা পশ্চিম দিগন্তে। ঠিক এই সময় বাতাসে ভেসে আসে বোমারু বিমানের গর্জন। কিছু বুঝে উঠার আগেই ওদের সামনে বিস্ফোরিত হয় একটি বোমা। সা’দের মুখ থেকে ভেসে আসে একটি করুণ চিৎকার, আল্লাহ…তারপর সব শেষ। রক্তাস্নাত দেহ দু’টি প্রচণ্ড যন্ত্রণায় মাটিতে পড়ে কাতরাতে থাকে। গোধূলীর শেষ আলোটুকু ওদের মুখে এসে পড়ে। একসময় ডুবে যায় সূর্য, সেই সাথে ডুবে যায় ওদের বেঁচে থাকার স্বপ্ন। অবেলায়-অযত্নে পাশাপাশি দু’টি প্রাণহীন দেহ পড়ে থাকে। ঝরে যায় একটি অর্ধফোটা গোলাপ। ইরাকের হাজারো ফুল এভাবেই প্রতিনিয়ত ঝরে যায়। কিন্তু এভাবে আর কতদিন!
[সূত্রঃ ইন্টারনেট]
লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম।
বই : আদর্শ কিশোর কিশোরী ৩।
আরও পড়তে পারেন : মাতাব্বর! (সমাজতন্ত্রের অণুগল্প)
Please join our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Tumblr And Youtube channel.