কম সময়ে ঘর-বাড়ি পরিষ্কার করার সহজ উপায়-৭টি অভিনব পন্থা

কথায় আছে, গৃহ মন ও শরীরের একমাত্র আবাসস্থল। দেহ ও মনের সাথে গৃহের পরিবেশও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আপনি মানুন আর না মানুন, গৃহই হচ্ছে আপনার কিংবা আমাদের পরম নির্ভরতার জায়গা।

শুধু ঢাকা নয়, যেকোনো শহর এবং উপশহরে  ধুলা বালি পরিমাণ অনেক বেশি। হাজার ব্যস্ততার ভিড়ে যে কোন মানুষের জন্য ঘর বাড়ি পরিষ্কার করা আসলেই খুব বেশি চ্যালেঞ্জিং এবং কষ্টসাধ্য।  

নতুন ফ্ল্যাট ক্রয় করার পরে অনেকেই অনেক ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়। তার মধ্যে ঘর বাড়ি পরিষ্কার করা অন্যতম।  

কিন্তু এই ঘর কিংবা গৃহই যখন অগোছালো থাকে তখন যেমন নিজের কাছেও দেখতে বিরক্ত লাগে তেমনি একসাথে সব কাজ করতে গিয়ে দেহ ও মনে অবসন্নতা চলে আসে। 

তাহলে হয়তো ভাবছেন উপায় কি? জ্বী উপায় একটা অবশ্যই আছে। 

প্রতিদিন যদি কিছু বিশেষ অভিনব পন্থা অবলম্বন করতে পারেন তাহলে খুব সহজেই সেরে ফেলতে পারবেন আপনার গৃহস্থালীর গোছগাছের কাজগুলো।

কিন্তু কিভাবে করবেন? 

চিন্তা নেই, আজকের লেখাটিকে আমি সাজিয়েছি ঠিক এমনভাবে যাতে খুব সহজেই আপনি পরিপাটি ভাবে সাজিয়ে ফেলতে পারবেন আপনার গৃহশৈলীকে। এবং কোন ধরণের ঝক্কি বা ঝামেলা ছাড়াই। চলুন তবে জেনে নেই ঘর বাড়ি পরিস্কার পরিচ্ছন ও পরিপাটি রাখার ৭টি উপায়গুলি। 

১) অপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সরিয়ে ফেলুন

বাঙ্গালীদের ঘরে পুরনো আমলের আসবাবপত্র খুঁজে পাওয়া যাবেনা তা কি হয়, আসলে বাঙ্গালী মানেই আবেগপ্রবণ। কিন্তু আপনার আবেগপ্রবণ স্মৃতিচিহ্নটি যদি কোন কাজে না এসেই অহেতুক ঘরের এক কোণায় পরে থাকে। তাহলে নিশ্চয়ই খুব একটা ভালো দেখাবেনা। তাই ঘরের আশেপাশে যেখানেই অপ‍্রয়োজনীয় আসবাব আছে তা সরিয়ে ফেলুন। এই ধরণের আসবাব আপনার ঘরের ধূলোবালির পরিমাণ যেমন বাড়ায় তেমনি ঘরকে আরও বেশি সংকীর্ণ করে তোলে। 

২) কার্পেট ব‍্যবহার করা বাদ দিন 

কার্পেট ঘরের এমন একটি প্রয়োজনীয় দ্রব‍্য যা আপনার রুচিশীলতা ও মননশীলতার বর্ধনে সহায়তা প্রদান করে থাকে। কিন্তু বেশিরভাগ কার্পেটই ঘন তন্তু ও উলের তৈরি হয়ে থাকে। ফলে আপনি যখন মাসে অথবা সপ্তাহান্তে তা পরিষ্কার করতে যান তখন দেখতে পান যে, কার্পটের ময়লা একেবারে জেঁকে বসে আছে। কার্পেট যদি প্রতিদিন পরিষ্কার না করা হয় তাহলে তাতে রঙ্গ মলীন হয়ে যাওয়া এবং কার্পেটের তন্তু উঠে আসার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এখন আপনি যদি এটি প্রতিদিন পরিষ্কার করতে যান তাহলে কম করে হলেও আপনার ৩০-৪০ মিনিট সময় লাগবে। আর তাই যদি ঝামেলা পোহাতে না চান তাহলে কার্পেট ব‍্যবহার করা বাদ দিন। কার্পেট আপনার গৃহ পরিষ্কারের বাড়তি শ্রম ও ঝামেলাকে অনেকাংশেই কমিয়ে দিবে। 

৩) আলমারির কাপড় যথাসম্ভব গুছিয়ে রাখুন

ঘরের কোণায় বা ড্রেসিংরুমের কর্ণারে আগের দিনের পার্টিতে পড়া শাড়ি, ড্রেস কিংবা শার্ট যেটাই আপনি জমিয়ে রাখুন না কেন। চেষ্টা করুন যদি কাপড়গুলো কেঁচে ফেলার মতো অবস্থা হয় তাহলে কেঁচে ফেলুন। তাই আলমারির প্রতিদিনকার কাপড় প্রতিদিন গুছিয়ে ফেলুন, এতে করে জমে থাকা কাপড় আর আপনার গৃহের সৌন্দর্যকে ব‍্যহত করবেনা। আর কাপড়ের দাগ নিরোধ করতে চেষ্টা করুন চেইন সিস্টেম ব‍্যাগের ভেতরে কাপড় রাখার। 

৪) যথাস্থানে জুতা রাখা ও জুতার র‍্যাক ব‍্যবহার করা 

যথাস্থানে জুতা না রাখা আমাদের আরেকটি মুদ্রাদোষ। যথাযথ স্থানে জুতা গুছিয়ে রাখলে একদিকে যেমন আপনি এক সাথে অনেকগুলো কাজ শেষ করতে পারবেন অন‍্যদিকে কাজের প্রেশারও অনেকটাই কমে যাবে। কেননা পরিবারের সকল সদস‍্য যে সমানভাবে আপনার কথা মানবে তা কিন্তু কখনোই সম্ভব নয়। আর তাই আপনার কাজের ঝামেলা কমাতে আপনি বাইরে থেকে ঘরে ঢোকার সময়ই হাতে জুতা নিয়ে র‍্যাকে রাখার নির্দেশ দিন। এতে করে দিনশেষে ঘরের এদিকে সেদিকে ছড়ানো ছিটানো জুতা ও জুতার সোলে লেগে থাকা ময়লা আপনার গৃহের পরিবেশকে নষ্ট করতে পারবে না। 

৫) পাটের তৈরি দ্রব‍্যাদি পরিষ্কার রাখা 

পাট ও পাটজাত দ্রব‍্যাদির মধ‍্যে অনেক সময়ই আঁশ ও আঁশজাতীয় অংশ লেগে থাকে। এতে করে আপনার ঘরের সৌন্দর্য নষ্ট হতে বেশি সময় লাগবেনা। খালি চোখে দেখা না গেলেও আপনি প্রায়ই সময় যখন পরিষ্কার ন‍্যাকড়া বা কাপড় দিয়ে ঘর মুছতে যাবেন তখন দেখবেন আপনার কাপড়ের মধ‍্যে ছিঁটে ছিঁটে পশমের মতো ধূলো লেগে আছে। আর তাই প্রতিদিন না পারলেও সপ্তাহে অন্তত এক থেকে দুবার পাটের তৈরি দ্রব‍্যাদি যেমন পর্দা, কার্পেট, সোফার কভার প্রভৃতি পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করুন। 

৬) বাথরুমের সিঙ্ক, বেসিনের চারপাশ ব‍্যবহারের পরপরই পরিষ্কার করুন

বাথরুমের সিঙ্ক, বেসিন ও বেসিনের চারপাশ, গোসলখানার জালনি প্রভৃতি জায়গাগুলোতে শ‍্যাম্পু করা চুল অথবা ময়লা জমে অপরিচ্ছন্ন হয়ে থাকে। আর তাই যখন আপনি একবারে এগুলো পরিষ্কার করতে যান তখন দেখা যায় সেগুলো একবারে জমে ময়লার স্তম্ভ হয়ে গেছে। এজন‍্যে চেষ্টা করুন যখনই ব‍্যবহার করবেন, ব‍্যবহারের পরপরই পরিষ্কার করার। এতে করে আপনার গৃহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার কাজ অনেকটাই কমে আসবে। 

৭) টাইলসের ফাঁকে জমা ময়লা পরিষ্কার করুন গরম পানি দিয়ে 

গৃহের অভ‍্যন্তরীণ সজ্জায় মেঝে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কেননা নতুন কিংবা পুরাতন বাসাবাড়িতে টাইলসের মেঝের ফাঁকে ফাঁকে ময়লা জমে অনেকটাই বিচ্ছিরি পরিস্থিতির তৈরি করে। এজন‍্যে আপনি একটি অভিনব পদ্ধতিতে নিমিষেই তা পরিষ্কার করতে পারেন। এর জন‍্যে আপনার লাগবে এক গামলা গরম পানি, টাইলস ক্লিনার ও লিকুইড সোপ। টাইলস ক্লিনার টি প্রথমে পরিচ্ছন্ন মেঝেতে ছিটিয়ে দিন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন মেঝের কর্ণার থেকে ময়লা উঠে আসার। 

এরপর হালকা কুসুম গরম পানিতে লিকুইড সোপ মিশিয়ে ভালোভাবে নাড়ুন। যখন মিশ্রণটিতে ফেনা উঠতে দেখবেন তখনই একটি ভেঁজা কাপড় মিশ্রণটিতে চুবিয়ে পুরো ঘরের মেঝে ঘষে ঘষে পরিষ্কার করুন। এরপর গামলার পানি বদলে পুনরায় পরিষ্কার পানি দিয়ে মেঝে পরিষ্কার করে ফেলুন। 

ঘর বাড়ি পরিপাটি রাখার কিছু টিপস- 

সুসজ্জিত ঘর আপনার গৃহের আগন্তুক থেকে শুরু করে যে কারো নজর কাড়তে বাধ‍্য। তাই চটজলদি ঘরকে পরিপাটি করতে কাজে লাগান নিচে থাকা টিপসগুলোকে। 

  • সোফার এলেমেলো কুশনগুলোকে একটি সারিতে এনে সাজিয়ে রাখুন। চাইলে সোফার এক পাশটাতে একটি রঙ্গিন বিছানার চাদর একপেশে করে ভাঁজ করে ঝুলিয়ে দিন। তবে অবশ‍্যই চাদরটি যাতে সোফার রঙ্গের সাথে মানানসই এবং এক রঙ্গের হয়। ঝালরযুক্ত বিছানার চাদর হলে আরও ভালো হয়। এরপর কুশনগুলোকে চাদরের উপর সাজিয়ে দিন। ব‍্যস, একঘেয়ে সোফা দেখতে কিছুটা ক‍্যাজুয়াল লাগবে। 
  • বেডরুমে ভারী পর্দা সবসময় পরিষ্কার করতে না পারলে একটি পরিষ্কার ঝুলঝাড়ুর সাহায‍্যে হালকা ঝেড়ে নিন। পর্দার ভাজ নষ্ট হয়ে থাকলে ইলেকট্রিক ইস্ত্রী লো ভোল্টেজে গরম করে পর্দার ভাজগুলোতে আলতোভাবে চাপ দিয়ে দিয়ে ছেড়ে দিন। এতে করে এলেমেলো পর্দা অনেকটাই পরিপাটি হয়ে যাবে। 
  • বসার রুমে সেলফের বদলে বেতের তৈরি দেয়াল সোকেস ব‍্যবহার করতে পারেন। এতে দেখতেও সুন্দর লাগবে, বার বার সেলফের নিচ ও ঝাড় দিতে হবে না। 
  • বেডরুমে অতিরিক্ত ফার্নিচার না রেখে প্রয়োজনীয় দু থেকে তিনটে আসবাব দিয়ে ঘর সাজান। 
  • বেডের চাদর পরিষ্কার রাখতে একটি অতিরিক্ত রেক্সিন বিছিয়ে রাখতে পারেন। এতে নিশ্চিন্তে একমাস বেডের চাদর পরিবর্তন না করেই ব‍্যবহার করতে পারবেন। 

পরিশেষে 

এই তো হাতের কাছেই পেয়ে গেলেন কতগুলো টিপস। এবার এগুলোকে কাজে লাগিয়ে সেরে ফেলুন আপনার রোজকার ঘর পরিষ্কারের কাজটি। আসলে গৃহের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অনেকটাই নির্ভর করে গৃহের কর্তা গিন্নীদের উপর। রোজ রোজ ঘর ঝাড়ু মোছা তো আমরা সবাই করি। কিন্তু অন্তত ছুটির দিনটাতে পরিবারের ছোটদের মাঝেও কিছু কাজ আপনি ভাগ করে দিতে পারেন। এতে করে আপনার কাজও কম সময়ে হয়ে যাবে এবং পরিবারের ছোটরাও দায়িত্বশীল হতে শিখবে। মোট কথা শুধুমাত্র ঘরের কাজে যে শুরু থেকে শেষ গিন্নীর দায়িত্ব এমনটা আসলেই ঠিক নয়। আজকাল অনেক পরিবারেই কর্তা গিন্নী এমনকি ছোটরাও অনেক ধরণের কাজে সাহায্য করে থাকে। 

আর তাই কম সময়ে ঘর-বাড়ি পরিষ্কার করতে টিপসের চেয়ে আপনাকে আপনার সময় ভাগ করে নিজের বুদ্ধিমত্তা ও কৌশল খাঁটিয়ে গুছিয়ে কাজটা সেরে ফেলতে হবে।

Leave a Comment