নায়িকা হওয়া পেছনের গল্প ( শয়তানের ফাঁদ ৪)

যেসব তরুণীরা নায়িকা হবার স্বপ্ন দেখেন, এ জগতে পা ফেলার আগে এজগতের অন্ধকারের দিকটিকে আগে ভাবুন তারপরে না হয় পা ফেলবেন। গল্পের লেখক তাঁর গল্পের মাধ্যমে এই জগতের অন্ধকার দিকটি তুলে ধরেছেন। 

নায়িকাদের পেছনের নার্ভিশ্বাসের গল্প!

ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে আকাশ পানে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে মাহমুদা। হয়ত তারা গুনতে চেষ্টা করছে সে। অথবা এক তারা দিয়ে আরেক তারাকে সুতো দিয়ে বেঁধে কোন কিছু মিলানোর চেষ্টা করতেছেন। অথবা অন্য কিছু।
মাহমুদ এসে অনেক্ষন দাঁড়িয়ে আছে দরজারর পাশে। আর ভাবছে মাহমুদা কে নিয়ে, এই মেয়ে আকাশের দিকে এমন উদাস হয়ে কেন তাকিয়ে আছে। এ তো ভালো লক্ষন না। আমার নতুন নাটকের জন্য একে সিলেক্ট করেছি, এ যদি উদাস থাকে তাহলে তো হবেনা।

মাহমুদার ঘাড়ে হাত টা আলতো করে রাখতেই সে চমকে উঠে পিছনে তাকালো। মাহমুদ বলে উঠলো, ঘাবড়ে দিলাম নাকি? তুমি অনেক্ষন ধরে আকাশের দিকে উদাস মনে তাকিয়ে আছো। কি ব্যাপার, কি হয়েছে?
উদাস মনেই মাহমুদা জবাব দিল, না তেমন কিছুনা, ওই তারা গুলো দেখছেন। দেখতে কত সুন্দর, মিটমিট আলো দিচ্ছে। ওই তারাদের ওখানে কি আছে তা কিন্তু জানিনা। তাদের কোন দুঃখ আছে কিনা জানিনা, দূর থেকে কত সুন্দর।
মাহমুদ মনে মনে চিন্তাই পড়ে গেল, এ তো ভালো লক্ষন না। এ মেয়ে এসেছে নায়িকা হবে বলে। এই সেদিক কত উচ্ছ্বাস। কি সব বলছে এসব তারাদের দুঃখ। আউল ফাউল কথা
-তোমার সমস্যা কি হয়েছে মাহমুদা?
-তেমন কিছুনা মাহমুদ ভাই! এই অতীতের কথা গুলো মনে পড়ছিল। আপনি কিভাবে ঘরে ঢুকলেন, আর আসছেন কখন?
-এই ত, মারিয়া দরজাটা খুলে দিয়েছিল। ও বলল তুমি বারান্দায় বসে আছো। তাই এদিকে এসে পড়লাম। এসে দেখি তুমি উদাস হয়ে আকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছ। আর কি সব অতীত নিয়ে ভাবছো! তুমি বড় নায়িকা হবে, স্টার হবে। দেশ বিদেশে বাহবা দিবে। তুমি নিজেই ত নায়িকা হওয়ার জন্য এসেছিলে। উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এর চিন্তা করো। এসব ছাইপাঁশ ঝেড়ে ফেলো মাথা থেকে।
– মারিয়া কোথায় মাহমুদ ভাই! কিছুটা উদ্যোগ মাখা চোখে মাহমুদ কে জিজ্ঞেস করল মাহমুদা।
– ওর রুমেই মনে হয়। আমাকে চা বানিয়ে দিয়েছিল। কিছুক্ষণ ওর সাথে গল্প করেছিলাম। এরপর তোমার এদিকে আসলাম।
– তাহলে ত, অনেক্ষন হলো এসেছেন। আচ্ছা আপনি ড্রয়িং রুমে শোফার উপর বসুন আমি একটু আসছি।
-ড্রয়িং রুমে কেন! এখানেই ত ভালো লাগছিল।
মাহমুদা কিছু না বলেই বেরিয়ে গেল। এই লোকটা খুব বেহায়া।
খট খট খট, দরজা খোল মারিয়া।
ধড়াক করে দরজা টা খুলতেই মাহমুদা ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে মারিয়াকে নিয়ে বসলো খাটের উপর।
কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর, মাহমুদা বলল। তোকে না বললাম, এই লোকটা আসছে দেখলে কলিং বেল বাজলেও খুলবিনা। খুললে আমি খুলবো।
-আপু, আমি বুঝলাম না, তুমি আমার সাথে এমন কেন করো? উনি কত ভালো মানুষ, কত সুন্দর কথা বলেন। কত বড় ডিরেক্টর। নতুন ঈদের নাটকে তোমাকে নিচ্ছেন বললো। আর তুমি বলছো কথা বলতাম না, উনি আসলে দরজা খুলতাম না এ কেমন কথা।
-দেখ, তুই এত কিছু বুঝবিনা। যা বলি তাই শুনবি, করবি! কিছুটা রাগান্বিত স্বরে মাহমুদা কথাটা বলল।
মারিয়া চুপসে গিয়ে বলল। তুমি এমন করো কেন আপু। কেন? তুমি নায়িকা হয়ে বড় হবে, সেলিব্রেটি হবে। আমি হলে সমস্যা, হিংসে হয় তাই না?
মাহমুদা, মারিয়ার এমন কথা শুনে, কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে কিছু না বলে উঠে চলে আসলো বাহিরে।
এদিকে মেজাজ টা খুব খারাপ হচ্ছিল মাহমুদার। মাহমুদ ভাইকে নিষেধ করেছিল সে, যেন মারিয়াকে এসব বিষয়ে কখনো না বলে। এরপর ও এই লোকটা শুনলোনা। বড় বেহায়া এ লোক। দোষটা আমার ই! বড় একটা নিশ্বাস….
রুমে গিয়ে দেখে মাহমুদ ওখানেই বসে আছে।

রুমে ঢুকতেই মাহমুদ বলে উঠলো, আজকে নতুন নাটকের ব্যপারে আলোচনা আছে, এখন যেতে হবে। এরপর মধ্য রাতে পার্টি আছে। জমপেশ হবে। নতুন নাটক এর গল্পটা তো পড়েছো! আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে, বিশেষ করে ইন্ডিয়ার সাথে তাল মিলিয়ে করতে হবে। এর জন্য নতুন কিছু যোগ করব। তা নিয়ে আলোচনা হবে। মাহমুদা চুপচাপ শুনে রেডি হওয়ার জন্য উঠে মাহমুদ কে বলল। আপনি ড্রয়িং রুমে যান আমি রেডি হয়ে আসছি।

-আমি এখানে বসি তুমি রেডি হও সমস্যা কি? তোমার আর আমার মাঝে ব্যবধান কই। এমন হলে ত তুমি টিকতে পারবেনা। আরো ফ্রি হতে হবে। মুক্ত চিন্তার অধিকারী না হলে স্টার হবে কিভাবে।

আরও পড়ুন : বড় মেয়ে (বাস্তব গল্প)

মাহমুদা জানে সে যে জগতে এসে দাড়িয়েছে। চাইলেই ফিরে যাওয়া যায় না। সে নিজেই ত এ জগতে এসেছিল। তার ফ্যামিলি রাজি ছিল না কিন্তু তার জেদাজিদি তে কেউ আর কিছু বলতে পারেনি। সে একটা ছেলেকে ভালোবাসতো, সে ছেলেটাও এখন তার সাথে কথা বলেনা।
মাহমুদা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, মাহমুদ তার রুপের প্রশংসা করতে লাগলো। বড়ি স্টাকচার এর বর্ননা অশ্লীল ভাবে দিতে লাগলো।
কোন ছেলে যদি মেয়েদের রুপের বর্ণনা করে থাকে, উপর থেকে বিরক্ত দেখালেও ভিতরে ভিতিরে দারুন খুশি হয় মেয়েরা। এটা মনে হয় জেনেটিক্স প্রবলেম। মাহমুদা ও তাই হতে লাগলো। তখন আর মেয়েদের মাথায় এটা খুব কম কাজ করে এটা যে একটা শয়তানের ফাঁদ । 
নীল শাড়ীটা পরার জন্য মাহমুদা কে অনুরোধ করল। মহমুদা ও শাড়ীটা নিয়ে বাথরুমে ঢুকে শাড়িটা পরে বেরিয়ে এসে, বাকি রুপ চর্চা মাহমুদের সামনেই করল। আয়নায় নাকিয়ে নিজের সৌন্দর্য নিয়ে একটু রাগ হয়, আবার খুশি ও হয়। রাগ হয় কারন, এই সৌন্দর্য ই তাকে এখানে এনে দাড় করিয়েছে। কালো হলে যতই চাইতো মাহমুদ তাকে প্রথম এড এ নিতোনা ভুলেও। যদিও সুন্দর ই সব না তার কাছে। আরো কত কিছু দিতে হয়…
প্রায় মাহমুদার মনে পড়ে, সে ঢাকা ন্যাশনাল আইডিয়াল এ পড়ত। কত আনন্দ ছিল। কত বান্ধবী! সে অন্য সবার চেয়ে একটু বেশিইই সুন্দর ছিল। কত ছেলে যে পিছুপিছু ঘুরঘুর করতো। মা-বাবা সবাইকে নিয়ে আনেক অনন্দেই কাটতো। স্কুলে আসা যাওয়া। অনেক স্যার রা পর্যন্ত মাহমুদা কে প্রস্তাব দিয়েছিল প্রেমের। ওর মাঝেমাঝে হাসি পায় এসব মনে করে। ক্লাসে আর একটা মেয়েছিল ওর মতই সুন্দর কিন্তু পর্দা করে চলতো, ওর বিয়ে হয়ে গেছে S.S.C পরীক্ষার পর পর ই। একটা হুজুরের সাথে, আমরা কত মজা করেছি অকে নিয়ে। কিছু বললে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলত, তুই বুঝবিনা, ওটা আমার সুখ, আমার জান্নাত। এখন মাহমুদার মনে হয় ওই মেয়েই ভালো কাজ করেছে। আর আমি মাহমুদা, এই শরীর, আর সৌন্দর্য ই কাল। কিন্তু ওই মেয়ের জন্য ত কাল হলোনা, ও তো সুন্দর ছিল! প্রায় এই প্রশ্ন মাহমুদা নিজেকে নিজে করে। তাহলে দোষ কার? উত্তর খুজে পায়না। বুঝে, দোষ সব নিজের। মাঝেমাঝে সে স্রষ্টা কেও দোষ দেয়।
এই জগতে সে জড়িয়ে গেছে। মাঝেমাঝে খ্যতির নেশা খুব চেপে ধরে তাকে, তখন আর ফিছনের এসব তার মনে পড়েনা। সব কিছু যশ খ্যতির মাঝেই খুজে পায়। কিন্তু মানুষ তো, মাঝে মাঝে উদাস হয়ে যায়। এই জীবন কে মাঝে মাঝে তার জীবন মনে হয় না, আর মাঝে মাঝে একেই জীবন মনে হয়। যখন বড় বড় স্টার দের সাথে থাকে। মিডিয়া এই সেই নিয়ে থাকে। তখন অতীত নিতে চিন্তা আসেই না। মাঝে মাঝে মনে পড়ে মাহমুদ তাকে প্রথম এড করার পর একটা প্রস্তাব দিয়েছিল। কিছু চিন্তা করতে পারেনি মাহমুদা। মাহমুদ কেই সব ভাবছিল সে। তাকে ঘিরেই বড় হওয়ার স্বপ্ন। তাই মাহমুদ কে দিয়ে দিয়েছিল নারীত্বের বড় সম্পদ। তখন এ জগত খুব বুঝতোনা মাহমুদা। আস্তে আস্তে দেখতেছে, আর নিজের প্রতি ঘৃণা জন্মাতে শুরু করে তার। কিন্তু খ্যতির কাছে হার মেনে যায় ওসব।
আজকে মাহমুদ এসেছে নতুন নাটকের আলোচনা হবে বলে। মধ্যরাতে পার্টি আছে বলল। মাহমুদা জানে, আজকে তাকে অনেক নোংরামিতে মিশে যেতে হবে। যদিও এসব এখন তেমন নোংরামি মনে হয় না। সব কিছুই এখন তার কাছে খ্যাতি অর্জনের অংশ। কিন্তু সে বুঝে এটা নোংরামি, এটাই শয়তানের ফাঁদ। সে জানে শয়তানের মুখের ভাষা সুন্দর হয় বেশি। থাকে আকর্ষণ। তাই মাহমুদা তার বোন মারিয়াকে এসব থেকে দূরে রাখতে চায়। কিন্তু মারিয়া উল্টো ভুল বুঝে। মাহমুদা মুখ ফুটে বলতে পারেনা বোন কে এসব।
মেকাপ শেষ করে, কালো BMW তে চড়ে রওনা দিল মাহমুদা নাটকের আলোচনা অনুষ্ঠান এ। ছুটে চলল যশ আর খ্যতির পিছনে…….

লেখক : ভ্যাকটেস মাহমুদ। 

“পর্বঃ শয়তানের ফাঁদ ৪”

আরও পড়ুন : অবৈধ প্রেমের পরিণতি (শয়তানের ফাঁদ ২ – প্রেমের গল্প)

For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.

1 thought on “নায়িকা হওয়া পেছনের গল্প ( শয়তানের ফাঁদ ৪)”

Leave a Comment