ডা. নূর আহমদ নূর বলেন, একদা জনৈক ডাক্তার শয়তানের ধোঁকা ও স্বীয় প্রবৃত্তির কুমন্ত্রণায় পড়ে ব্যভিচারের ন্যায় জঘন্য অপরাধ করে বসেন । এ কারণে তাকে যে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করতে হয়েছিল তা তিনি ব্যক্ত করেন এভাবে –
ব্যভিচারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি – ইসলামিক গল্প!
১৯৬১ সাল। আমি তখন এক হাসপাতাল ওয়ার্ডে কর্মরত। একদিন রাতে আমি ঘুমিয়ে আছি। হঠাৎ স্বপ্নে দেখি, কে যেন এসে আমাকে একটি কবরে নিয়ে গেল। সেখানে আমি জনৈক মৃত ব্যক্তিকে দেখতে পেলাম। সে ভয়াবহ শাস্তির অসহ্য যন্ত্রণায় বারবার ককিয়ে উঠছে। জবাইকৃত মুরগির মতোই ছটফট করছে। খোলা থাকা সত্ত্বেও মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। ব্যথার তীব্রতায় তার বাহুদ্বয় এবং পা দু’টি বিরামহীনভাবে নড়াচড়া করছে।
আমি দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত ব্যথিত হৃদয় নিয়ে তার এ করুণ অবস্থা প্রত্যক্ষ করছিলাম । কিন্তু তাকে সাহায্য করার মতো কোনো সুযোগ আমার ছিল না। কিছুক্ষণ পর ব্যথার পরিমাণ কিছুটা কমে এল। সে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। আমিও খুশি হলাম। কিন্তু অল্প সময় যেতে না যেতেই দেখলাম, নীল চক্ষু বিশিষ্ট কুৎসিত চেহারার এক অদ্ভুত লোক দৃঢ়পদে তার দিকে অগ্রসর হলো। লোকটির হাতে রয়েছে লৌহদণ্ডের ন্যায় নাম না জানা এক বিষাক্ত বস্তু । সে মৃতের কাছে এসেই তার মূত্রনালী দিয়ে সেই বস্তুটি এক ধাক্কায় সম্পূর্ণরূপে ঢুকিয়ে দিল । ফলে মৃত ব্যক্তিটি পূর্বের চেয়ে আরো বেশি পরিমাণে ছটফট করতে লাগল । তার এ সীমাহীন দুঃখ-দুর্দশা ও কষ্ট-যাতনা দেখে আমি আর নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই! তাকে এত কষ্ট দিচ্ছেন কেন? কী অপরাধ সে করেছে?
লোকটি জবাবে বলল, সে দুনিয়াতে ব্যভিচার করত। অন্যায়ভাবে মেয়েদের সম্ভ্রম লুটে নিত। পরস্ত্রীর সাথে নিজের নাপাক ইচ্ছাকে চরিতার্থ করত। তাই মৃত্যুর পর থেকেই তাকে এ ভয়ঙ্কর শাস্তি প্রদান করা হচ্ছে।”
আমি অনেকক্ষণ ধরে এ করুণ দৃশ্য অবলোকন করছিলাম । এ মর্মস্পর্শী ঘটনা আমার হৃদয়ে সীমাহীন করুণার সৃষ্টি করল। মৃতের প্রতি এ বেদনাদায়ক আচরণ প্রত্যক্ষ করে আমার অন্তরে অতীতের সমস্ত পাপের কথা জেগে উঠল । তাই আমিও আমার পরিণতির কথা ভেবে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লাম ।
আমার অন্তরে দুশ্চিন্তার কালো-স্রোত বয়ে চলছে। তার একটা ছাপ সুস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আমার মুখমণ্ডলে । কেমন যেন ভীত-বিহবল হয়ে পড়েছি আমি । অস্থিরতার কালো মেঘ ঢেকে নিয়েছে আমাকে। ঠিক এমন সময় হঠাৎ একটি শক্ত হাতের প্রচণ্ড আঘাত আমার চিন্তার জাল ছিন্ন করে দিল । আমি কিছু বুঝে না উঠতেই দেখলাম, একটি লোক আমাকে ধরে জোরপূর্বক মাটিতে শুইয়ে দিল । তারপর লৌহদণ্ডের ন্যায় সেই কঠিন বস্তুটি আমার মূত্রনালী দিয়েও প্রবেশ করিয়ে দিল। ফলে ব্যথার তীব্রতায় আমি পানিবিহীন মাছের মতোই লাফাতে শুরু করলাম। সেই স্বাপ্নিক ঘটনার কথা মনে হলে আজো আমার শরীর রীতিমত শিউরে উঠে।
যা হোক, দীর্ঘ সময়ব্যাপী অসহনীয় যন্ত্রণায় ছট্ফট্ করার পর সহসা আমার স্বপ্ন ভাঙ্গল । আমি অনুভূতি ফিরে পেলাম। ফিরে এলাম এ ধরাপৃষ্ঠে । কিন্তু তখনো আমার শরীরে ব্যথার যন্ত্রণা অনুভূত হচ্ছিল । মনে হচ্ছিল, বিষাক্ত তীরের আঘাতে মূত্রনালী ভেদ করে বিদ্যুৎ গতিতে যেন প্রস্রাবের পানিতে গোটা বিছানা ভিজে গেছে। ভিজে গেছে গৃহ শয্যার মধ্যমণি বালিশটি পর্যন্ত ।
স্বপ্নীল জগতে ঘটে যাওয়া এ ঘটনার পর হতে যখনই আমি প্রস্রাব করতাম, তখনই আমার মূত্রাশয় থেকে বেরিয়ে আসত এক প্রকার লাল রংয়ের রক্তিম পানি। ফলে রক্তশূন্যতার দরুন আমার শরীর অল্প দিনের মধ্যেই দুর্বল হয়ে পড়ল ।
এ রোগ থেকে মুক্তির জন্য আমি বড় বড় ডাক্তারদের শরণাপন্ন হয়েছি। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি অনুযায়ী বহু উন্নতমানের চিকিৎসা গ্রহণ করেছি। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। এমনকি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ডাক্তারগণ এ রোগ সৃষ্টির কারণ ও উৎস উদ্ঘাটনেও চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত আমি নিরাশ হয়ে চাকরি থেকে অব্যহতি নিয়ে বাড়ি চলে আসি। বাড়ি আসার পর আমার মনে একটি নতুন চিন্তা জাগল । ভাবলাম, জৈবিক কামনার নিয়ন্ত্রণহীনতাই আমার এ রোগের মূল কারণ । সুতরাং যে খোদা এ পাপের কারণে অসন্তুষ্ট হয়ে আমাকে এতবড় রোগ দিয়েছেন, যদি আমি তাঁকে সন্তুষ্ট করতে পারি, তবে তো তিনিই আমাকে ভাল করে দিতে পারেন ।
এ চিন্তা মাথায় আসার সাথে সাথে আমি বিছানায় লুটিয়ে পড়ে অবুঝ বালকের মতো কাঁদতে লাগলাম । অনুতপ্ত হৃদয়ে তাঁর কাছে নিজের গুনাহসমূহের জন্য ক্ষমা চাইলাম। তাঁকেই একমাত্র মুক্তিদাতা মনে করে রোগমুক্তির জন্য দোয়া করলাম । এভাবে কয়েকদিন আমার এই অশ্রুভেজা আর্তনাদ, অনুতপ্ত হৃদয়ের খালেস তওবা ও বিনীত প্রার্থনার বদৌলতে আল্লাহ পাক আমাকে এ দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি দিয়েছেন। আল্লাহর রহমত ও তাঁর অসীম করুণায় আমি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। এ জন্য আমি তাঁর দরবারে জানাই লাখো কোটি শুকরিয়া ।
মুহতারাম বন্ধুগণ! আলোচ্য ঘটনা পাঠ করে আমরাও যদি আমাদের জৈবিক কামনাকে নিয়ন্ত্রণ করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করি এবং এক্ষেত্রে কঠোর সংযম প্রদর্শন করি তবেই তো আমরা এই মারাত্মক অপরাধের কঠিন শাস্তি থেকে বাঁচতে পারব। মনে রাখবেন, জৈবিক কামনা নিয়ন্ত্ৰণ করার বিশেষ কয়েকটি উপায় হলো-
১) দৃষ্টির কঠোর হেফাজত করা।
২) নির্জন স্থান কিংবা লোকজনের উপস্থিতিতেও কোনো বেগানা মেয়ের সাথে অবস্থান না করা।
৩) অশ্লীল বই পুস্তক ও পত্র-পত্রিকা পাঠ না করা।
8 ) টিভি, ভিসিডি, সিনেমা না দেখা। এমনকি কোনো মেয়ের ছবির দিকেও না তাকানো।
৫) বিনা প্রয়োজনে কোনো মেয়ের সাথে কথা না বলা ।
৬) দাড়িবিহীন সুন্দর বালকদের প্রতি দৃষ্টিপাত না করা।
৭) চরিত্রহীন ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব না করা।
৮) সর্বদা আল্লাহর ভয় অন্তরে জাগ্রত রাখা ।
৯) ধর্মীয় জীবন যাপনে অভ্যস্ত হওয়া ।
আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে এ কথাগুলোর উপর আমল করার তৌফিক নসীব করুন। আমীন।
সূত্র: মওত আওর আযাবে কবরকে ইবরতনাক ওয়াকেয়াত ।
লেখকঃ মাওলনা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম। বইঃ অশ্রুভেজা কাহিনী – হৃদয় গলে সিরিজ ৮।
Please follow our Facebook, Twitter, Instagram, Linkedin, Pinterest, Tumblr, And Youtube channels for more updates.