পাপকে ঘৃণা কর, পাপীকে নয় (শিক্ষণীয় গল্প)

এটি ইসলামের একজন বুযুর্গ বায়েজিদ বোস্তামীর দাওয়াহ জীবনের গল্প যিনি একদিন একজন বিপথগামী মহিলার নিকট ইসলামের দাওয়াত পোঁছে দিতে তাঁর খদ্দরখানায় গিয়েছিলেন। সম্মানিত লেখক সেদিনের খদ্দরখানার ঘটনাটি এই গল্পে তুলে ধরেছেন।

পাপকে ঘৃণা কর, পাপীকে নয়!

পাপকে ঘৃণা করো পাপীকে নয়! ইসলামিক গল্প
ছবি: গল্পের প্রয়োজনে এই ছবিটি ডিজাইনার এআই দ্বারা তৈরি। বাস্তবতার সাথে গল্পের ছবির কোনো মিল নেই।

পরমা সুন্দরী এক মহিলা। আজ ক’মাস হল বোস্তাম নগরীতে আগমন করেছে। তার আগমনে বিত্তবান ও চরিত্রহীন যুবকেরা বেশ খুশি। কারণ নিজ নিজ অবৈধ মনোবাঞ্ছা পূরণের জন্য এ ধরণের রূপসী মেয়েই তাদের কাম্য ।

মেয়েটির দেহয়াবব সুন্দর হলেও হৃদয়টা সুন্দর ছিল না। সে ছিল চরিত্রহীনা, ভ্রষ্টা। আপন ইজ্জত বিলিয়ে দিয়ে সে উপার্জন করত প্রচুর অর্থ । অত্যধিক সুন্দরী হওয়ায় তার মূল্যও ছিল অনেক বেশী ।

প্রতিবার দেহ দানের বিনিময়ে সে আদায় করত দু’শ দিরহাম রূপ সৌন্দর্যের মোহে আচ্ছন্ন হয়ে শহরের বিত্তশালীরা নির্দ্বিধায় তার পিছনে খরচ করত অঢেল অর্থ-সম্পদ। এভাবে কয়েক মাসের মধ্যেই হারাম কর্ম এমন ধ্বংসাত্মক রূপ ধারণ করল, যা ভাবতে গেলেও গা শিউরে উঠে ।

মেয়েটির সান্নিধ্য লাভ করার জন্য প্রতি রাত্রেই পয়সাওয়ালা লোকজন তার বাড়ীতে ভীড় জমাত। বিপুল পরিমাণ খদ্দের পেয়ে মহিলার আনন্দ যেন আর ধরে না। মাসিক রুজির পরিমাণ হিসেব করে সে নিজেই বিস্মিত হয়। ভাবে, এ শহরে আগমণ করে বেশ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছি। এভাবে চলতে থাকলে প্রচুর সহায়- সম্পত্তির মালিক হতে বেশীদিন আমাকে অপেক্ষা করতে হবে না ।

দিন দিন নিজের উন্নতির কথা চিন্তা করে মেয়েটি মনে মনে বেশ পুলকিত। আনন্দের বন্যা বয়ে যায় তার সমস্ত হৃদয় জুড়ে। অঢেল সম্পদের মালিক হয়ে ভবিষ্যতে কি কি করবে, সেই সোনালী স্বপ্ন এখন প্রতি মুহূর্তেই সে দেখে। আগামী দিনের রঙ্গীন স্বপ্নে বিভোর হয়ে অতিবাহিত করে জীবনের মূল্যবান দিবা-নিশিগুলো। কিন্তু একথা চিন্তা করার অবকাশ কখনোই পায় না যে, তার দ্বারা জাতির কত বড় ক্ষতি হচ্ছে! লোকদের নৈতিক ও চারিত্রিক অবক্ষয় কত চরম আকার ধারণ করছে!! যুব সমাজ কত দ্রুত মান-সম্মান, ধর্ম-কর্ম ইত্যাদি বিসর্জন দিয়ে ধ্বংসের পথে এগিয়ে চলছে!!

এ অবকাশ সে পাবেই কি করে? তাকে তো এ পর্যন্ত কেউ সৎ পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করেনি। শিক্ষা দেয়নি আদর্শ জীবনের মৌলিক নীতিমালা । উৎসাহিত করেনি সবর-শোকর, তাকওয়া-পরহেযগারী ও সততা-সত্যবাদীতার ন্যায় মানবীয় গুণগুলো অর্জন করতে । কোন দিন কেউ আহবান করেনি মন্দ-খারাপ ও অসৎ কর্মগুলো পরিত্যাগ করতে। অবৈধ-অপকর্মের শাস্তি কি, এর ক্ষতিই বা কতটুকু একথা তো আজ পর্যন্ত কোন আদম সন্তান তাকে বুঝায়নি, এমনকি বুঝানোর চেষ্টাও করেনি। সুতরাং এমতাবস্থায় ঢালাওভাবে তার ঘাড়ে সমস্ত দোষ চাপিয়ে দেয়া উচিত হবে কি? সৎ পথে আহবান করার এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার দায়িত্ব পালন না করে ঘৃণাভরে তাকে প্ৰত্যাখ্যান করে দূরে সরিয়ে দেয়া ঠিক হবে কি? কখনোই নয় ।

হ্যাঁ, বারংবার বুঝানোর পরও যদি অবৈধ কর্ম থেকে সে বিরত না থাকত, মন্দ কাজ পরিত্যাগ করে সুস্থ-সুন্দর জীবনে ফিরে না আসত, তখন হয়ত তাকে দোষী সাব্যস্ত করা ঠিক হত । কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, এমতাবস্থায় তাকে অবজ্ঞা করে দূরে সরিয়ে দিতে হবে। বরং ‘পাপকে ঘৃণা কর, পাপীকে নয়’ -এ সূত্র অবলম্বন করে তার ভবিষ্যত মঙ্গলের আশায়, আখেরাতের কঠিন শাস্তি থেকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে অসৎ ও অবৈধ কর্ম থেকে ফিরানোর জন্য যথাসম্ভব সব ধরণের অভিনব কৌশল অবলম্বন করতে হবে। তবেই তো ‘তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য’ -পবিত্র কুরআনের এ আয়াতের যথার্থ বাস্তবায়ন হবে। মানুষ যে মানুষের জন্য একথার বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যাবে ।

মানুষের নৈতিক অবক্ষয় দেখে বোস্তাম নগরীর সৎ ও বিজ্ঞ লোকেরা অস্থির হয়ে পড়লেন। এ ঘৃণ্য অপকর্ম কি করে বন্ধ করা যায় এ নিয়ে তারা অনেক চিন্তা ফিকির করলেন। আপ্রাণ চেষ্টা করলেন। অবলম্বন করলেন নানাবিধ কলা-কৌশল । কিন্তু তাতে কোন কাজ হল না। ফলে কোন উপয়ান্তর না দেখে শেষ পর্যন্ত তারা তৎকালের প্রসিদ্ধ বুযুর্গ বিখ্যাত আল্লাহর ওলী হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (র.) এর শরণাপন্ন হলেন ৷

বিস্তারিত আলোচনা শেষে তারা সবিনয় আরজ করে বললেন, হযরত! অনুগ্রহ করে শহর থেকে এ পাপ দূর করুন । অন্যখায় অল্পকালের মধ্যে এ শহর ধ্বংস হয়ে যাবে !

হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (র.) সব কিছু মনযোগ সহকারে শুনলেন । তারপর বললেন, তোমরা এখন যাও। দেখি, এর প্রতিকারের কি ব্যবস্থা করা যায়। তারা সবাই চলে গেল ।

লোকজন চলে যাবার পর হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (র.) ভীষণ পেরেশান হলেন। চরম পর্যায়ের অস্থির হয়ে পড়লেন। মনে মনে বললেন, আমি জীবিত থাকতেই এ শহরে এত বড় মারাত্মক অপকর্ম! খোদা তায়ালার এত বড় নাফরমানি!! হায়, যদি হাশরের ময়দানে পরাক্রমশালী আল্লাহ প্রশ্ন করে বসেন, হে বায়েজিদ! তোমার উপস্থিতিতে বোস্তাম নগরীতে এত বড় ধ্বংসাত্মক কর্ম সংঘটিত হল, অথচ তুমি তা বন্ধ করার জন্য কোন চেষ্টাই করলে না। এর প্রতিকারের কোন ব্যবস্থাই তুমি নিলে না। পাপ-পঙ্কিলতায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত এক অবলা নারীকে সৎ পথে ফিরানোর জন্য কোন চিন্তাই তুমি করলে না। তাহলে আমি কি জবাব দিব। কিভাবে আমি আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের সামনে মুখ দেখাব। হায়, এমন জীবনের চেয়ে মৃত্যুই যে শ্রেয়!

এসব কথা চিন্তা করে তার পেরেশানীর মাত্রা আরও বৃদ্ধি পেল । নগরবাসীর উপর আসন্ন বিপদাশংকায় তিনি সীমাহীন ব্যাকুল হয়ে পড়লেন। শেষ পর্যন্ত অনেক চিন্তা-গবেষণা করে এই ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড বন্ধ করার একটি সুন্দর উপায়ও তিনি বের করতে সক্ষম হলেন ।

উপায় খুঁজে পেয়ে হযরত বায়েজিদ (র.) কালবিলম্ব করলেন না । মাগরিবের নামায আদায়ের পর দু’শ দিরহাম হাতে নিয়ে সোজা ঐ ভ্রষ্টা মহিলার বাড়ীতে পৌঁছলেন। তারপর তার বাড়ীর প্রধান ফটকের নিকট বসে রইলেন ।

ধীরে ধীরে রাত বাড়তে থাকল। চতুর্দিক থেকে নামী-দামী খদ্দেরদের আনাগোনা শুরু হল। কিন্তু কেউ ভিতরে প্রবেশ করার সাহস পেল না ৷ সকলেই ভীত-সন্ত্রস্থ হয়ে ফিরে যেতে যেতে ভাবল, হযরত বায়েজিদের মত এত বড় বুযুর্গ এ বাড়ীতে কেন? কি উদ্দেশ্যে তিনি এখানে আগমন করেছেন? তাহলে কি তিনিও এই সুন্দরী মহিলার পাতানো ফাঁদে আটকা পড়েছেন। নাহ! এ হতে পারে না। একজন আল্লাহর খাঁটি বান্দার ব্যাপারে এ ধরণের অবৈধ কল্পনা করাও অন্যায়। এরূপ সাত পাঁচ ভেবে সকলেই ঐ রাতের মত যার যার বাড়ীতে চলে গেল ।

এখন রাত প্রায় বারটা। এতক্ষণে কয়েকশ দিরহাম কামাই হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু একটি পয়সাও এ পর্যন্ত আসেনি। একটি খদ্দেরের দেখাও এ পর্যন্ত মিলল না। তাহলে নিশ্চয়ই কিছু ঘটেছে । এসব কথা ভাবতে ভাবতে মহিলা অস্থির হয়ে পড়ল । এক সময় খবর নেয়ার জন্য ভৃত্যকে বাইরে পাঠাল । ভৃত্য বাইরে এসে দেখল, ঘরের প্রধান ফটকে একজন দরিদ্র লোক বসে আছে। আর খদ্দেররা তাকে দেখে ভয়ে পালিয়ে জান বাঁচাচ্ছে ।

ভৃত্য ফিরে এল । ভয়ার্ত কন্ঠে সবকিছু খুলে বলল। মেয়েটি বুযুর্গকে চিনত না। সে ভৃত্যের মাধ্যমে অচেনা লোকটিকে জিজ্ঞেস করল, আপনি কে? কেন এখানে এসেছেন? আমার এখানে তো দরিদ্র লোকেরা আসে না। আসার সাহসও পায় না। কারণ আমার মূল্য অনেক বেশী ।

বুযুর্গ বললেন, আমি মেয়েটির সাথে দেখা করতে চাই। আমাকে একটু সুযোগ করে দাও ।

বুযুর্গের সাহস দেখে ভৃত্য হাসলো। তারপর ব্যাঙ্গ স্বরে বলল, জনাব! আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবর না নেয়াই ভাল। বেশী প্রয়োজন হলে অন্যত্র গিয়ে মনের খাহেশ পুরা করুন। ফকীর, মিসকিন আর দরিদ্র খদ্দেরের স্থান এ বাড়ীতে নেই ।

বুযুর্গ শান্ত কণ্ঠে বললেন, বাবা। এত কথার প্রয়োজন কি? তোমাদের প্রয়োজন দিনার-দিরহামের। তোমরা যা চাও, তা দিতে পারলেই তো আমার হল ।

: আপনি কি এত দিরহাম দিতে পারবেন?

: অবশ্যই দিতে পারব ।

: তার মূল্য কিন্তু প্রতি রাতে দু’শ দিরহাম।

: দু’শ দিরহাম কেন, তার বেশী হলেও আমার কোন আপত্তি নেই ৷

: ঠিক আছে, এখনই তাহলে সবকিছু ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

একথা বলে সে ভিতরে গিয়ে সবকিছু বর্ণনা করল । মেয়েটি বলল, আমার দিরহাম প্রয়োজন। সে যেই হোক আমার পকেটে নির্ধারিত পরিমাণ দিরহাম এলেই হল । সে যখন তা দিতে সম্মত আছে, দেরী না করে এখনই তাকে ভিতরে নিয়ে এসো ।

হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (র.) ধীরপদে ঘরে প্রবেশ করলেন । মেয়েটির সীমাহীন সৌন্দর্যের কথা আগেই তিনি শুনেছিলেন। ঘরে প্রবেশ করে স্বীয় দৃষ্টিকে কঠোরভাবে সংযত করলেন। তারপর দু’শ দিরহাম পরিশোধ করে মেয়েটিকে সম্বোধন করে বললেন,

: এখনতো তুমি আমার, তাই না?

: হ্যাঁ, তাই ৷

: আমি এখন তোমাকে যা ইচ্ছে তাই করতে পারি?

: হ্যাঁ, এখানে অন্যেরা এসে যা করেন, তা করার অধিকার আপনারও আছে ৷

: তোমার ক্ষতি কিংবা অসুবিধা হবে না -এমন কিছু যদি তোমাকে দিয়ে করাতে চাই?

: হ্যাঁ, তাতেও আমি রাযী । আমার কোন সমস্যা না হলেই হয় ৷ : না, তোমার কোন সমস্যা হবে না। বরং তোমার উপকারই হবে।

: জ্বি, তাহলে শুরু করুন। আমার কোন আপত্তি নেই। আজকে রাতের জন্য আমার সমস্ত দেহ-মন কেবল আপনার জন্য নিবেদিত। আপনি যা খুশি তাই করতে পারেন ।

: আমি যদি তোমাকে একটি নির্দেশ দেই, তবে কি তা মানতে পারবে?

: অবশ্যই। আমি তো বারবার বলছি, আজ আমি আপনার । আপনার যে কোন খেদমত করার জন্য আমি প্রস্তুত আছি । আপনার মনোরঞ্জনের জন্য যা করা প্রয়োজন, সবই আমি করব ।

: ঠিক আছে ।  তাহলে আমার নির্দেশ হল, এক্ষুনিই রেশমী কাপড় পাল্টে ওজু-গোসল সেরে সাদা কাপড় পরিধান করে একটি জায়নামাযসহ এখানে চলে এসো ।

এরূপ নির্দেশের জন্য মেয়েটি মোটেও প্রস্তুত ছিল না। এ যেন তার জীবনে এক নতুন অভিজ্ঞতা । এরূপ খদ্দের জীবনে সে কোন দিন দেখেনি । লোকটির কথা শুনে সে ভীষণ আশ্চর্য হল । ভাবল, এ আবার কেমন খদ্দের? আমার মত সুন্দরী ষোড়শী পেয়ে তার এখন কি করা উচিত, আর সে কি করছে! এতো দেখছি কোন মানুষ নয়, অন্য কিছু হবে। তবুও দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি দাঁড়ায় ।

একথা ভেবে সীমাহীন কৌতুহল নিয়ে সত্যিই সে বুযুর্গের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে তার সামনে এসে দাঁড়াল ।

হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (র.) মেয়েটিকে নিয়ে দু’রাকাত নফল নামায আদায় করলেন। তারপর তাকে জায়নামাযে বসিয়ে আল্লাহ পাকের দরবারে কেঁদে কেঁদে বললেন-

‘ওগো মাবুদ! তুমি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান। তুমি সবকিছু জান, সবকিছু দেখ। তাবৎ বিশ্বের সকল মানুষের হৃদয় তোমারই হাতে খোদা। হেদায়েত দানের মালিক একমাত্র তুমিই। এ কাজ কেবল তোমার পক্ষেই শোভা পায়। হে পরওয়ার দেগার! এ মেয়েটিকে সৎ পথে আনার জন্য আমার যতটুকু সাধ্য ছিল, তা আমি করেছি। ব্যভিচারের ঘৃণ্য পথ থেকে তুলে এনে নামাযীর বেশে তোমারই সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছি। হে খোদা! আমি তো তার দেহটিকে তোমার দিকে ফিরিয়ে দিলাম, বাকী কাজটুকু তুমি করে নাও। তার অন্তরটাকে তোমার দিকে ঘুরিয়ে দাও। হে রাহমানুর রাহীম! তুমি আমার দোয়া কবুল কর।’

হযরত বায়েজিদ বোস্তামীর দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হল । দোয়া সমাপ্ত হওয়ার সাথে সাথে মেয়েটির হৃদয়রাজ্যে তুমুল ঝড় শুরু হল। তার চেহারায় এক অভাবনীয় পরিবর্তন দেখা দিল। আল্লাহর ভয়ে তার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল। গোটা জীবনের পাপের কথা স্মরণ করে আক্ষেপ আর অনুতাপের অনলে তার অন্তররাজ্য দগ্ধ হল ।

ভাবল, আমার কারণে হাজারো মানুষ বিপদগামী হয়েছে । পাপ- পংকিলতায় নিমজ্জিত হয়েছে। সুস্থ ও আদর্শ জীবন পরিত্যাগ করে অন্যায় অপকর্মে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছে। খোদাই জানেন, আমার পরিণতি কত করুণ হবে!

এসব কথা ভাবতে ভাবতে সে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। চরম পর্যায়ের অস্থির হয়ে হযরত বায়েজিদের পদপ্রান্তে লুটিয়ে পড়ে কান্না বিজড়িত কন্ঠে বলল- মহাত্মন! এ জীবনে আমি অনেক পাপ করেছি। আমার পাপের কোন হিসাব-নিকাশ নেই ৷ উপরন্ত অসংখ্য মানুষকে আমি সৌন্দর্যের জালে আবদ্ধ করে বিপদগামী করেছি। আমার মত মহাপাপীয়সী বোধ হয় পৃথিবীতে কেউ নেই । হযরত! আপনি আমাকে রক্ষা করুন । আমাকে তাওবা করিয়ে পাপমুক্ত করিয়ে দিন । আমি চিরদিন আপনার নিকট কৃতজ্ঞ থাকব ।

মেয়েটির পরিবর্তনে হযরত বায়েজিদ (র.) অত্যন্ত খুশি হলেন । তিনি আল্লাহ পাকের শোকর আদায় করলেন এবং সাথে সাথে তাওবা পড়িয়ে দিলেন ।

এভাবেই একটি বেশ্যা মেয়ে বুযুর্গের আন্তরিক প্রচেষ্টায় পাপ- পংকিলময় জীবন পরিত্যাগ করে সুস্থ ও সুন্দর জীবনের দিকে ফিরে এল । তৎকালীন যুগের একজন প্রসিদ্ধ আবেদা, জাহেদা ও সাধ্বী মহিলার মর্যাদা লাভ করল ।

প্রিয় পাঠক! আলোচ্য ঘটনার মাধ্যমে একথা দিবালোকের মত পরিস্কার হয়ে গেল যে, আজ যারা অন্যায় কর্মে লিপ্ত তাদেরকে মন্দ বলে দূরে সরিয়ে দেয়া মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কেবল বুদ্ধিমত্তা নয়, মানবতার দাবীও এই যে, পাপীকে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান না করে তার সংশোধনের জন্য আন্তরিকতার সাথে সামর্থ অনুযায়ী সকল প্রকার চেষ্টা ফিকির করে যাওয়া। সাথে সাথে খোদার দরবারে চোখের পানি ফেলে দোয়াও করা । আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন। আমীন।  (সূত্র : তাযকিরাতুল আউলিয়া)

লেখক: মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম। লেখকের যে গল্প হৃদয় কাড়ে – হৃদয় গলে সিরিজ ৫ থেকে।

Leave a Comment

Discover more from Amar Bangla Post

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading