মেয়েদের হায়েয (মাসিক) সম্পর্কে গোপনীয় মাসআলা
মাসআলা : ৩১. স্বাভাবিক নিয়মানুসারে প্রতিমাসে যে রক্ত বালেগা মেয়েদের পেশাবের রাস্তা দিয়ে বের হয় তাকে হায়েয বা ঋতু বলে। শরীয়তে এসম্পর্কে বিশেষ আহকাম রয়েছে।
মাসআলা : ৩২. ৯ বছর অপেক্ষা ছোট মেয়েদের হায়েয আসে না। এ কারণে ৯ বছরের পূর্বে কোন বালিকার রক্তস্রাব দেখা গেলে তা হায়েয নয় বরং ইস্তিহাযা অর্থাৎ রোগের কারণে প্রবাহিত রক্ত।
মাসআলা : ৩৩. সাধারণতঃ ৫৫ বছরের পরে মহিলাদের হায়েয আসে না। তবে যদি এ বয়সের পর রক্ত আসে এবং রক্তের রং একেবারেই লাল অথবা কালো হয় তবে তাকে হায়েযই ধরা হবে। আর যদি হলুদ, সবুজ বা মেটে রঙয়ের হয়, এবং পূর্বেও এ রঙের হায়েয আসার অভ্যাস থেকে থাকে তবে তাকে হায়েযের রক্তই ধরতে হবে। তবে অন্য কোন রঙ হলে উহা হায়েয নয় বরং ইস্তিহাযা।
মাসআলা : ৩৪. রক্ত থেকে শরীর ও কাপড়কে রক্ষা করার জন্য উত্তর ব্যবস্থা হলো লজ্জাস্থানের উপর তুলা অথবা কাপড় রেখে বেঁধে দেওয়া (যাকে আরবী ভাষায় কুরসুপ বলে)।
মাসআলা : ৩৫. কুরসুপ ব্যবহার করার পর রক্তের যে রঙ ধারণ করে সেটাই ধর্তব্য হবে। উদাহরণত কুরসুপ ভিজাবস্থায় লাল এবং শুকনাবস্থায় সাদা হলে হায়েয, আর যদি ভিজাবস্থায় সাদা এবং শুকানোর পর হলুদ রঙয়ের হয় তবে তা হায়েয নয় বরং ইস্তিহাযা।
মাসআলা : ৩৬. হায়েযের সর্বনিম্ন সীমা তিনদিন তিন রাত্রি। এর চেয়ে কম হলে তা হায়েয নয় বরং ইস্তিহাযা বা রোগ বলে গণ্য করা হবে।
মাসআলা : ৩৭. লাগাতার রক্ত আসতে থাকা জরুরী নয়, যদি শুরু থেকেই কিছু বিলম্বে করে রক্ত এসে তা বন্ধ থেকে পুনরায় দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিন আসে তবে শরীয়তে এ ধরনের রক্তকে লাগাতার রক্ত হিসেবে গণয় করা হবে।
মাসআলা : ৩৮. হায়েযের সর্বোচ্চ সীমা ১০ দিন দশ রাত্রী। তদপেক্ষা বেশি দিন রক্ত আসলে তা ইস্তিহাযা বা রোগ বলে গণ্য হবে।
হায়েজ অবস্থায় নামাজ
মাসআলাঃ-৩৯. মহিলাদের হায়েয অবস্থায় যেমন নামায ফরয হয় না তেমন পবিত্র হওয়ার পরও ঐ নামাযগুলো কাযা করতে হয় না।
মাসআলাঃ-৪০. কোন মহিলা নামাযে রত অবস্থায় হায়েয আসলে নামায নষ্ট হয়ে যাবে এবং তখন নামায আর আদায় করবেনা।। এ নামায যদি ফরয হয় তবে উহা মাফ আর সুন্নত বা নফল হলে পবিত্রতা অর্জনের পর কাযা করবে।
মাসআলাঃ-৪১. যে নামাযের ওয়াক্তের মধ্যে হায়েয শুরু হয়েছে, সে ওয়াক্তের নামায আদায় না করে থাকলে তা মাফ হয়ে যাবে।
মাসআলাঃ-৪২. কোন মহিলা হায়েয অবস্থায় সেজদায়ে তেলাওয়াতের আয়াত শুনলে তার উপর সেজদা করা ওয়াজিব নয়।
মাসিক অবস্থায় রোযা
মাসআলাঃ-৪৩. পবিত্র অবস্থায় কোন মহিলা রোযা রাখার পর দিনের একেবারে শেষপ্রান্তে হায়েয আসল, এমতাবস্থায় তার রোযা ভেঙ্গে যাবে; পুনরায় উক্ত রোযা আদায় করতে হবে। ফরয বা নফল যে কোন রোযা হোক না কেন সর্বত্রই এ নিয়ম প্রযোজ্য।
মাসআলাঃ-৪৪. রোযাদারদের সাথে সাদৃশ্যতা বজায় রাখার জন্য যেদিন হায়েয থেকে পবিত্র হবে ঐদিন পানাহার বর্জন করবে এবং পরবর্তীতে উক্ত রোযা আদায় করবে।
মাসআলাঃ-৪৫. রমযান মাসে সুবহে সাদিকের পর কোন মহিলার হায়েয বন্ধ হয়ে গেলে এবং সে এ সময়ের মধ্যে কোন কিছু পানাহার করে নাই তবে এমতাবস্থায় শুধু নিয়ত করে ঐ দিনের রোযা রাখলে তা শুদ্ধ হবে না বরং পরবর্তীতে উহার কাযা আদায় করতে হবে। কারণ সে দিনের শুরু লগ্নে অপবিত্র ছিল।
হায়েয অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত
মাসআলাঃ-৪৬. হায়েয অবস্থায় কুরআন শরীফ পাঠ করা জায়েয নেই। তবে ১ আয়াতের চেয়ে কম বা আয়াতের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ পাঠ করা কোন কোন উলামায়ে কেরামের মতে জায়েয আছে।
মাসআলাঃ-৪৭. এ অবস্থায় কোন মহিলা বাচ্চাদেরকে কুরআন শরীফ বানান করে শিক্ষা দিতে পারবে তবে একশ্বাসে পূর্ণ এক আয়াত পড়তে পারবে না বরং শ্বাস ভেঙ্গে ভেঙ্গে কিছু কিছু করে পাঠ করবে।
মাসআলাঃ-৪৮. পানাহারের শুরুতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এবং খানা শেষ করে আল-হামদুলিল্লাহ বলায় কোন অসুবিধা নেই। কারণ এখানে কুরআন তেলাওয়াত উদ্দেশ্য নয় বরং বরকত ও শুকরিয়া আদায় করাই উদ্দেশ্য।
মাসআলাঃ-৪৯. হায়েয অবস্থায় কুরআন শরীফ স্পর্শ করা যেমন জায়েয নেই। অনুরূপ ভাবে কোথাও কুরআনের আয়াত লিখিত থাকলে তা স্পর্শ করাও জায়েয নেই। তবে যদি এমন কোন কিতাব হয় যার মধ্যে কুরআনের আয়াত অপেক্ষা অন্য লিখা বেশি আছে তবে উহাতে হাত লাগান যাবে, তবে আয়াতের উপর হাত রাখবে না।
মাসআলাঃ-৫০. কোন বর্তন, পিরিচ অথবা কাগজের উপর শুধু মাত্র কুরআনের আয়াত লেখা থাকলে উহাতে হাত লাগান জায়েয নেই। তবে পৃথক কোন কাপড় দিয়ে উহা ধরা যাবে।
মাসআলাঃ-৫১. পবিত্র কুরআনের গেলাপ (জুঝদান) যদি কুরআন শরীফ থেকে আলাদা হয়, সাথে লাগান না থাকে তবে তা দ্বারা কুরআন শরীফ ধরা জায়েয। অনুরূপভাবে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন কাপড় দ্বারাও পবিত্র কুরআন ধরা জায়েয আছে।
মাসআলাঃ-৫২. কুরআন শরীফের সাথে সংযুক্ত জুঝদান এবং যে কাপড় শরীরের সঙ্গে যুক্ত আছে যেমন মেয়েদের দোপাট্টা, উড়না বা কুর্তার আস্তিন ইত্যাদি দ্বারা কুরআন শরীফ স্পর্শ করা বা ধরা জায়েয নেই।
মাসআলাঃ-৫৩. বিনা অযুতে কুরআন শরীফ হাত লাগানো সম্পর্কে এই একই হুকুম। তবে বে-অযু অবস্থায় কুরআন শরীফ পাঠ করা জায়েয আছে।
হায়েয অবস্থায় ধর্মীয় বই পুস্তক ও অজিফা পাঠ করা
মাসআলাঃ-৫৪. হায়েয অবস্থায় আল্লাহ পাকের জিকির, দরুদ শরীফ, ইস্তিগফার ইত্যাদি পাঠ করা জায়েয আছে। সমস্ত অজিফাগুলো যথারীতি আদায় করবে। অবশ্য কুরআন শরীফ পাঠ করবে না।
মাসআলাঃ-৫৫. সুযোগ মত বিভিন্ন সময় দোয়া, ইস্তিগফার পড়তে থাকবে। এভাবে কুরআন শরীফের বিভিন্ন আয়াতসমূহ দোয়া হিসেবে পাঠ করা জায়েজ আছে।
মাসআলাঃ-৫৬. যে কাগজের উপর এ দোয়া গুলো লিপিবদ্ধ থাকে তাতে হাত লাগানো যাবে কিন্তু দোয়ার আয়াত বা শব্দগুলোর উপর হাত রাখবেনা।
মাসআলাঃ-৫৭. হায়েয অবস্থায় দ্বীনী কিতাবাদী শিক্ষা করা, শিক্ষা দেওয়া সব কিছুই জায়েয বিনা প্রয়োজনে হাত লাগানো ভাল নয়।
হায়েয অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ
মাসআলাঃ-৫৮. হায়েয অবস্থায় মহিলাদের মসজিদে প্রবেশ করা বৈধ নয়। মসজিদে অবস্থান কালে হায়েয আসলে মসজিদের বাইরে চলে আসবে।
মাসআলাঃ-৫৯. হায়েয অবস্থায় কোন জিনিস মসজিদ থেকে হাত বাড়িয়ে নেওয়া বা দেওয়া জায়েয আছে।
মাসআলাঃ-৬০. হায়েয অবস্থায় দরূদ ও সালাম বলা জায়েয আছে তবে দরূদ ও সালাম বলার উদ্দেশ্যে কখনো মসজিদে নববীতে প্রবেশ করবে না।
মাসআলাঃ-৬১. ঈদগাহ ইত্যাদি (যেখানে পাঁচ নামায হয় না) যথা মসজিদের হুকুম রাখে না, নিজের কোন প্রয়োজন সেখানে গমন করা যাবে।
মাসআলাঃ-৬২. মসজিদের ছাদ এবং মসজিদের তলাগুলোও মসজিদের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত।
মাসআলাঃ-৬৩. মসজিদের নিকটবর্তী এমন কোন স্থান যেটা মসজিদের আওতার বাইরে, সেখানে নাপাকী অবস্থায় থাকাতে কোন অসুবিধা নেই।
হায়েয অবস্থায় স্বামীর খেদমত
মাসআলাঃ-৬৪. হায়েয অবস্থায় স্বামীর সঙ্গে উঠাবসা, চলাফের, খানাপিনা সব কিছুই জায়েয তবে সহবাস করা হারাম।
মাসআলাঃ-৬৫. হায়েয অবস্থায় স্বামীর সঙ্গে শয়ন করা, আদর-সোহাগ করা এবং সহবাসে লিপ্ত হওয়া সম্ভাবনা না থাকলে নাভী থেকে হাটু পর্যন্ত শরীর কাপড় দ্বারা আবৃত রেখে বাকী শরীর অনাবৃত শরীরের সঙ্গে লাগানোও জায়েয আছে। আরবীতে উহাকে ‘মুবাসারাত’ বলে। তবে যদি সহবাসে পতিত হওয়ার ভয় থাকে তবে এ সমস্ত কার্য থেকে একেবারেই দূরে থাকা জরুরী, কারণ এ অবস্থায় সহবাস করা হারাম।
মাসআলাঃ-৬৬. তবে যদি (আল্লাহ না করেন) এ অবস্থার মধ্যে সহবাস হয়ে যায় তবে তওবা ও ইস্তিগফার একান্ত জরুরী। আর সর্বোত্তম হলো তাওবার সাথে সাথে কিছু সদকাও প্রদান করা।
মাসআলাঃ-৬৭. যদি কোন মহিলার হায়েযের মুদ্দাতানুযায়ী হায়েযের দিন উপস্থিত হয় আর তার স্বামী যদি তখন স্ত্রীর সাথে সহবাস করতে চায় কিন্তু স্ত্রী স্বামীকে জানায় যে তার হায়েয শুরু হয়ে গেছে তবে এমতাবস্থায় স্ত্রীর কথা মেনে নেওয়া স্বামীর জন্য জরুরী যদিও স্ত্রী দ্বীনদার না হয়।
মাসআলাঃ-৬৮. পূর্ণ ১০ দিন হায়েয চলার পর যদি তা বন্ধ হয়ে যায় তবে গোসল করার পূর্বেই সহবাস করা জায়েয। কিন্তু উত্তম হলো গোসল করার পর সহবাস করা।
মাসআলাঃ-৬৯. ১০ দিনের পূর্বে রক্ত বন্ধ হয়ে গেলে গোসল না করা পর্যন্ত বা এক ওয়াক্তের নামায পরিমাণ সময় অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত সহবাস করা জায়েয নেই। তবে এক ওয়াক্ত নামায পরিমাণ সময় চলে গেলে গোসল ব্যতীতই তার সাথে সহবাস করা জায়েয।
মেয়েদের মাসিকের পরে গোসল করার নিয়ম
মাসআলাঃ-৭০. হায়েযের গোসলের শরীর এবং সতরের স্থানসমূহ খুব ভাল করে ডলে মলে ধোবে বিশেষত সমস্ত শরীর কাপড় ইত্যাদি দ্বারা পরিস্কার করবে যাতে শুকনা রক্তের কোন চিহ্ন অবশিষ্ট না থাকে। একজন আনছারী মহিলা হায়েযের গোসল সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে প্রশ্ন করলে তিনি তাকে একান্ত উত্তম ভাবে গোসল করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন।
মাসআলাঃ-৭১. লক্ষ্য রাখবে গোসলের সময় শরীরের সামান্য স্থানও যেন শুকনা না থাকে। নচেৎ শরীর পাক হবে না।
মাসআলাঃ-৭২. মাথার চুল বাঁধা অবস্থায় থাকলে গোসলের সময় তা খোলার প্রয়োজন নেই বরং চুলের গোছাগুলো ভালভাবে ভিজিয়ে ও ধুয়ে দিলেই যথেষ্ট। তবে বেনী খুলে ধুয়ে নেওয়া উত্তম।
মাসআলাঃ-৭৩. গোসলের পদ্ধতি হলো—প্রথমে হাত ধৌত করে শরীরের যে সমস্ত স্থানে নাপাকি রয়েছে তা পরিস্কার করে সুন্নাত তরীকায় অযু করবে তারপর সমস্ত শরীর ধৌত করে ফেলবে।
মাসআলাঃ-৭৪. ফরয গোসলের মধ্যে কুলি করা এবং নাকের নরম স্থান পর্যন্ত পানি পৌঁছান ফরয।
উৎস : নারীর শ্রেষ্ঠ উপহার বই থেকে।
প্রিয় পাঠক পাঠিকা, আশা করি মেয়েদের হায়েয সম্পর্কিত গোপন মাসআলাগুলি জেনে আপনার ভালো লেগেছে এবং হায়েযের দিনগুলি সাহায্য করবে। লেখাটি বন্ধুদেরকে পড়াতে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
Image by Azuan Hashim from Pixabay
For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.