“অনর্থক বিষয় পরিহার করা ইসলামের সৌন্দর্য্য।”
রাসূল (সাঃ) এর মুখ থেকে নিসৃত কত চমৎকার বাণী! অনেক অপদার্থ ব্যক্তি আছে যারা অনর্থক বিষয়ে নাক গলিয়ে আপনাকে বিব্রত করবে।
মনে করুণ আপনার হাতে একটি নতুন ঘড়ি। এটা দেখামাত্রই বিভিন্ন প্রশ্ন করে আপনাকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলবে।
: ‘ভাই! ঘড়িটি কত দিয়ে কিনলেন?’
: এটা আমি উপহারস্বরূপ পেয়েছি’। আপনি হয়তো উত্তরে এমন কিছু বললেন।
: ‘আচ্ছা! কে উপহার দিল?
: ‘আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে’।
: ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু, না এলাকার বন্ধু, নাকি অন্য কোথাকার?’
: ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের’।
: কী উপলক্ষে উপহার দিল?’
: এমনিই, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবনে…’।
: উপলক্ষ্যটা কী? কোনো সাফল্যের কারণে, নাকি ভ্রমণের সময়…, নাকি…?’
এভাবে তুচ্ছ কোনো বিষয়ে আপনাকে আদালতের সাক্ষীর মতো জেরা করতে থাকবে।। আপনার হয়তো অবশ্যই তখন চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করবে, ‘দয়া করে অনর্থক বিষয়ে নাক গলাবেন না।’ বিষয় করে জনাকীর্ণ কোনো আসরে এ ধরণের অবিরাম ও অর্থহীন জেরা নিশ্চয় আপনাকে বিব্রত করে।
আমি একবার মাগরিব নামাযের পর সহকর্মীদের সঙ্গে এক জায়গায় বসে ছিলাম। হঠাৎ একজনের মোবাইল বেজে উঠল। সে আমার পাশেই বসে ছিল। রিসিভ করে ‘কে? বলতেই অপর পাশ থেকে তাঁর স্ত্রীর ঝাঁঝালো কণ্ঠস্বর ভেসে এলো,
: ‘গাধা! তুই কই?’
মহিলা বেশ জোরে কথা বলছিল। এ কারণে আমি তাঁদের সব কথাই শুনতে পাচ্ছিলাম।
কথাবার্তায় মনে হলো, তাঁর স্ত্রীকে মাগরিবের পর শ্বশুরালয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। অথচ এখনো সে আমাদের সঙ্গে বসে আছে। স্বামী বেচারা গালি হজম করে শান্তস্বরে বললো, ‘আচ্ছা, আল্লাহ তোমাকে ভাল রাখুন!’
স্ত্রীর রাগ যেন আরো বেড়ে গেল। সে গলার স্বর আরো উঁচিয়ে জবাব দিল, ‘আল্লাহ তোকে ধ্বংস করুক! আমি অপেক্ষায় বসে আছি আর তুই তর বন্ধুদের নিয়ে ব্যস্ত! তুই একটা বলদ!’
স্বামী বললো, ‘আল্লাহ তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হোন! আমি এশার পরই আসছি।’
আমি দেখলাম, স্ত্রীর কথার সঙ্গে তাঁর কথার কোনো মিল নেই। আমি বুঝলাম, সে অনেক বুদ্ধিমান। গোঁয়ারের সাথে গোঁয়ার্তুমি করে নিজের শান্তি নষ্ট করেনি।
আমি উপস্থিত লোকদের দিকে তাকাতে লাগলাম। আমার মনে হয়েছিল তাঁদের কেউ হয়তো (নাক গলাবে) তাঁকে জিজ্ঞেস করবে, ‘আপনার সঙ্গে কে কথা বললো? সে কী বললো? কথোপকথনের পর আপনার চেহারা এমন বিবর্ণ হয়ে গেল কেন? ইত্যাদি ইত্যাদি, কিন্তু আল্লাহর মেহেরবানি, কেউ এ ব্যাপারে নাক গলায়নি।
কোনো রোগী দেখতে গিয়ে আপনি যখন তাঁকে তাঁর রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন তখন রোগী হয়তো এভাবে একটা উত্তর দেয় যে, ‘সামান্য রোগ। তেমন কিছু না।’ সে হয়তো এ জাতীয় অস্পষ্ট উত্তর দিয়ে মুক্ত হতে চায়। আপনি তখন খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে প্রশ্ন করে তাঁকে বিরক্ত করবেন না। ‘বেয়াদবী মাফ করবেন, আসলে আপনার রোগটি কী? একটু নির্দিষ্ট করে বলুন।’
এভাবে প্রশ্ন করে রোগিকে কষ্ট দেয়ার কী অধিকার আছে আপনার?
অনর্থক বিষয় পরিহার করা কত সুন্দর!। আপনি কি চান রোগি বলুক ‘আমি অর্শ্ব রোগে আক্রান্ত।’ কিংবা ‘আমার গুহ্যদ্বারে ক্ষত হয়েছে।’
যদি রোগি কোনো বিষয়ে অস্পষ্ট জবাব দেবে তখন তাঁর সঙ্গে সে বিষয়ে কথা দীর্ঘ করবেন না। আমার কথার অর্থ এটা নয় যে, রোগিকে তাঁর রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞেসই করা যাবে না; বরং আমার উদ্দেশ্য হলো, প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে যেন বাড়াবাড়ি না করা হয়।
তেমনই শত শত মানুষের সামনে কোনো ছাত্রকে ডেকে উচ্চস্বরে এরূপ জিজ্ঞেস করাও ঠিক নয়-
‘আহমদ! তুমি কি পাশ করেছ?’
‘হ্যাঁ, পাশ করেছি।’ আহমদ জবাব দিল।
‘তোমার গড় নম্বর কত? ক্লাসে তোমার রোল নম্বর কত?’
আপনি যদি আন্তরিকভাবেই তাঁর খোঁজ খবর নিতে চান, তাহলে তাঁকে একান্তে ডেকে প্রশ্ন করুণ। তাছাড়া ‘তোমার গড় নম্বর কত?’ ‘কেন আরো ভাল ফলাফল করতে পারলে না?’ ‘কেন তুমি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওনি? ইত্যাদি’ খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে এধরণের প্রশ্ন করার কোনো দরকার নেই। আপনি তাঁর সম্পর্কে জানতেই চান তাহলে তাঁকে নিয়ে একপাশে দাঁড়ান। তাঁর সঙ্গে একান্তে কথা বলে জানতে চেষ্টা করুণ। তাঁর দোষ-ক্রটি মানুষের সামনে প্রকাস করে দেয়া তো সমীচীন নয়।
সাবধান! তিলকে তাল করবেন না। কোনো বিষয়কে তাঁর প্রকৃত আকার থেকে বড় করে দেখাবেন না।
কিছুদিন আগে আমি মদিনায় গিয়েছিলাম। সেখানে আমার বেশ কয়েকটি বক্তৃতার প্রোগ্রাম ছিল। আমার সাথে আমার দুই ছেলে আবদুর রহমান এবং ইবরাহীম ছিল। সেখানে জনৈক যুবক আমার ছেলেদেরকে তাঁদের হেফজখানায় অথবা কোনো গ্রীম্মকালীন বিনোদন কেন্দে ঘুরিয়ে নিয়ে আসতে চাইল। আসরের পর যাবে আবার এশার পরে চলে আসবে। আমি তাঁকে অনুমতি দিলাম।
আব্দুর রহমানের বয়স তখন দশ বছর। আমি আশঙ্কা করছিলাম যুবকটি হয়তো তাঁকে অনর্থক ও অপ্রাসঙ্গিক কিছু প্রশ্ন করবে। যেমন; ‘তোমার আম্মুর নাম কি?’ তোমাদের বাড়ি কোথায়?’ ‘তোম্মরা কয় ভাই?’ তোমার আব্বু তোমাকে প্রতিদিন কত টাকা দেন?’ ইত্যাদি,
তাই আব্দুর রহমানকে বললাম, ‘বাবা! তোমাকে সে কোনো অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করলে তুমি তাঁকে বলে দিবে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘অনর্থক কাজ পরিহার করা মুসলমানের মহৎ গুণ।’ আমি বারবার তাঁকে হাদিসটি বললাম যাতে তাঁর মুখস্থ হয়ে যায়।
আব্দুর রহমান ও তাঁর ভাই যুবকটির সাথে গাড়িতে উঠল। আব্দুর রহমান দৃঢ়ভাবে গম্ভীর হয়ে বসে রইল। যুবকটি কোমলস্বরে বললো, ‘আব্দুর রহমান! আল্লাহ তোমাকে দীর্ঘজীবী করুণ!’ আব্দুর রহমান দৃঢ়তার সঙ্গে উত্তর দিল, ‘আল্লাহ আপনাকেও দীর্ঘজীবী করুণ!’
যুবক বেচারা পরিবেশটাকে প্রাণবন্ত করে তুলতে চাচ্ছিলো। তাই সে বললো, ‘আজ কি তোমার আব্বুর বক্তৃতার প্রোগ্রাম আছে?’
আব্দুর রহমান হাদিসটি স্মরণ করার চেষ্টা করলো। কিন্তু সে পারল না। তবে সে চিৎকার করে বলে উঠল, ‘আপনি অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে নাক গলাবেন না!’
যুবকটি বললো, ‘না, না, আমি তো কেবল শায়খের প্রোগ্রামে উপস্থিত হওয়ার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করেছি।’
আব্দুর রহমান ভাবল, যুবকটি হয়তো তাঁর সাথে চালাকি করছে। তাই সে পুনরায় বললো, ‘আপনি অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবেন না।’
যুবকটি বললো, ‘আব্দুর রহমান! আমি দুঃখিত! আসলে আমি বলতে চাচ্ছিলাম….
আবদুর রহমান যুবককে শেষ করতে না দিয়েই চিৎকার করে বলে উঠল, ‘না! আপনি অনর্থক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবেন না।’
ফিরে আসা পর্যন্ত তাঁরা এরূপ আচরণ করছিল। ফেরার পর আব্দুর রহমান আমাকে পুরো ঘটনাটি গর্বভরে শোনাল। তাঁর কথা শুনে আমি হাসলাম। তাঁকে বিষয়টি পুনরায় বুঝিয়ে দিলাম। আসলে সে তিলকে তাল বানিয়ে ফেলেছিল।
কর্মশালা…
অনধিকার চর্চা থেকে বিরত থাকার অনুশীলন শুরুতে খুবই কষ্টকর মনে হলেও এর পরিণাম অনেক আনন্দদায়ক।
এরপর পড়ুন>> অনধিকার চর্চাকারীর সাথে আচরণগত কৌশল
For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.