আপনার জীবনকে উপভোগ করতে হলে ব্যক্তিত্ব বিকশিত করতে হবে। কিভাবে আপনার ব্যক্তিত্ব বিকশিত করবেন তা জানতে ও শিখতে সম্মানিত লেখকের এই লেখাটি পড়ুন।
আপনার ব্যক্তিত্ব বিকশিত করুন।
সবার ব্যক্তিত্বের বিকাশ একরকম নয়। অনেকে তো এমন যে, এ ক্ষেত্রে তাঁর কোনো উন্নতিই নেই। চলছে তো চলছেই। এ রকম বিশ বছরের কোনো যুবকের সাথে আপনি কিছুক্ষণ বসলে দেখবেন তাঁর নির্দিষ্ট লাইফ স্টাইল,বাচনভঙ্গি ও চিন্তাধারা রয়েছে। দশ বছর পর আবার তাঁকে দেখুন। দেখবেন, তাঁর সার্বিক অবস্থা আগের মতোই রয়ে গেছে। তাঁর কোনো উন্নতিই হয়নি।
তবে এমন অনেক যুবকের দেখাও আপনি পাবেন, যাদের ব্যক্তিত্ব প্রতিদিনই বিকশিত হচ্ছে। আগের দিনের চেয়ে পরের দিন তাঁর ব্যক্তিত্ব উল্লেখ্যযোগ্য হারে উন্নত হচ্ছে; বরং বলা যায় প্রতি মুহুর্তেই সে আত্মোন্নয়নের ধাপ অতিক্রম করে চলছে। এমন কেন হয়? বিষয়টি নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।
মনে করুন, দু’জন ব্যক্তি নিয়মিত টিভি চ্যানেল দেখে। এদের একজন এমনসব প্রোগ্রাম দেখে যেগুলো তাঁর চিন্তাশক্তিকে সমৃদ্ধ করে ও মেধার বিকাশে সহায়তা হয় এবং জ্ঞানগর্ভ সংলাপ ও টকশো থেকে অন্যদের অভিজ্ঞতাসমূহকে জেনে তা নিজের জীবনে কাজে লাগায়। এর মাধ্যমে সে চমৎকার বিশ্লেষণী ক্ষমতা, ভাষাগত দক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব ও বিতর্কের কলা-কৌশল আয়ত্ত করতে পারে। অপরপক্ষে দ্বিতীয়জন শুধু প্রেম কাহিনী নির্ভর নাটক, সিরিজ, আবেগপূর্ণ চলচিত্র ও অ্যাকশনধর্মী ছায়াছাবি দেখে সময় কাটায়।
পাঁচ-দশ বছর পর দু’জনের চিন্তাধারা ও ব্যক্তিত্ব কেমন হবে? দু’জনের মধ্যে কার আত্মাশক্তি বেশি সমৃদ্ধ হবে? জেনারেল নলেজের দক্ষতা, বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানের পরিধি, অপরকে প্রভাবিত করার যোগ্যতা ও প্রতিকূল পরিবেশে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর সফলতার ক্ষেত্রে উভয়ের সক্ষমতা কি এক রকম হবে? কখনো নয়; বরং এসব ক্ষেত্রে প্রথমজনের দক্ষতা ও যোগ্যতা হবে দ্বিতীয়জনের তুলনায় অনেক বেশি ও ভিন্নরকম। প্রথমজন কুরআন, হাদিস, সঠিক তথ্য ও পরিসংখ্যানের মাধ্যমে উদ্ধৃতি দেবে। আর অপর দিকে দ্বিতীয় জন অভিনেতা ও নায়ক-নায়িকাদের সংলাপ ও গানের কলি দিয়ে উদ্ধৃতি দেবে।
এ ধরণের একজন ব্যক্তি একদিন আমার সঙ্গে কথা বলার সময় হঠাৎ বললো, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “হে বান্দা! তুমি চেষ্টা কর। আমিও তোমার সঙ্গে চেষ্টা করব’।
আমি তাঁকে সতর্ক করে দিয়ে বললাম, ‘ভাইজান, আপনি এটা কী বলছেন! এটা তো কুরআনের আয়াত তথা আল্লাহর কথা নয়।’
আমার কথা শুনে লোকটার চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। সে একেবারে থ বনে গেল। পরবর্তীতে তাঁর কথাটি উৎস নিয়ে আমি অনেক খোঁজা খুঁজি করলাম। আমার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এলো যে, এটা ছিল মিশরীয় একটি প্রবাদ বাক্য। যা কোনো ধারাবাহিক নাটক থেকে শুনে তাঁর মনে গেঁথে গেছে। বস্তুত যে পাত্রে যা থাকে তা থেকে তাই ঝরে।
আরেকটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য, পত্র-পত্রিকা তো অনেকেই পড়েন কিন্তু কয়জন পাঠক এমন আছেন যারা উপকারি সংবাদ, তথ্যবহুল ফিচার ও সম্পাদকীয় কলাম পড়েন, যা তাদের আত্মবিকাশ, দক্ষতাবৃদ্ধি ও প্রজ্ঞার উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে। এ ধরণের পাঠকের সংখ্যা খুবই কম। অথচ খেলার খবর ও বিনোদনের পাতা পড়ার মতো লোকের অভাব নেই। এ কারণেই পত্র-পত্রিকাগুলোতে বর্তমানে খেলার খবর ও বিনোদনের পাতার কলেবর বাড়ানোর প্রতিযোগিতা চলছে।
শুধু যে পত্র-পত্রিকা পাঠের ব্যাপারে এ মনোভাব বিরাজ করছে তা নয়; বরং আমাদের বিভিন্ন আলোচনায় আসরগুলোর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আমাদের সময় কাটানোর ক্ষেত্রগুলোতেও অনুরূপ অবস্থা বিরাজমান। সব জায়গায় আমরা অহেতুক বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকি।
আপনি যদি ‘লেজ’ না হয়ে ‘মাথা হতে চান, জীবনে বড় কিছু করতে চান তাহলে জীবনের প্রতি মুহুর্তে আপনাকে আত্মবিকাশে মনোযোগী হতে হবে। নিজের যোগ্যতা ও প্রতিভা বিকাশে সহায়ক এমন কাজ করতে হবে। এজন্য আপনাকে প্রচুর অনুশীলন করতে হবে।
আবদুল্লাহ নামে এক উদ্যমী ব্যক্তি ছিল। কিন্তু তাঁর মধ্যে অভিজ্ঞতার কিছুটা ঘাটতি ছিল। একদিন সে জোহরের নামায পড়ার জন্য মসজিদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো। নামাযের প্রতি তাঁর ছিল প্রচণ্ড আগ্রহ। দ্বীনের প্রতি সীমাহীন অনুরাগ তাঁকে মসজিদের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। পাছে জামাত মিস হয়ে যায় কি-না এ আশঙ্কায় সে দ্রুত হাঁটছিল। কিন্তু মসজিদে যাওয়ার পথে সে একজন লোককে দেখলো, লোকটি খেজুর গাছের ওপর বসে খেজুরের কাঁদি ঠিক করছে। ভাবখানা দেখে মনে হচ্ছিল যে, সে আযান শুনে নি কিংবা নামায পড়ার কোনো গরজ অনুভব করছে না। এটা দেখে তো আব্দুল্লাহ রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে গেল। সে ঝাঁঝাঁলো স্বরে বললো, ‘এ বেটা! নামাযের জন্য তাড়াতাড়ি গাছ থেকে নেমে আয়।’লোকটি শান্তভাবে উত্তর দিল, “ঠিক আছে ভাই, আসছি।’
আবদুল্লাহ বললো, ‘তাড়াতাড়ি কর। বেটা গাধা কোথাকার!’
গাধা শব্দটি শোনার সাথে সাথে লোকটির মাথায় রক্ত উঠে গেল। সে রাগে খেজুরের গাছ থেকে একটি শাখা কেটে নিয়ে বললো ‘কী বললে আমি গাধা? একটু দাঁড়াও তোমার বারোটা বাজিয়ে দেব।’
অবস্থা খারাপ দেখে লোকটি যেন তাঁকে চিনতে না পারে তাই সে রুমাল দিয়ে চেহারা ঢেকে মসজিদের দিকে দৌড় দিল। এদিকে লোকটি গাছে থেকে নেমে আব্দুল্লাহকে না পেয়ে বাড়ি চলে গেল এবং নামায পড়ে কিছুটা শান্ত হলো। হালকা বিশ্রাম নিয়ে অবশিষ্ট কাজ শেষ করার জন্য আবার গাছে চড়লো।
আসরের সময় আবদুল্লাহ নামায পড়তে বের হলো। লোকটিও আগের মতোই গাছের ওপর বসে কাজ করছিল। আবদুল্লাহ এবার দাওয়াতের রীতি পরিবর্তন করে ফেললো। সে লোকটিকে সালাম দিয়ে বললো, ‘ভাইজান! কেমন আছেন?’
লোকটি বললো, ‘আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি।’
এরপর আবদুল্লাহ জিজ্ঞেস করলো, ‘এবছর খেজুর কেমন হয়েছে?’
লোকটি বললো, ‘আলহামদুলিল্লাহ্, ভালো হয়েছে।
এর জবাবে আবদুল্লাহ লোকটির জন্য দোয়া করলো-‘আল্লাহ আপনাকে তৌফিক দান করুন। আপনার ফল ও ফসলে বরকত দান করুন। আপনার রিযিক বাড়িয়ে দিন। আপনার পরিশ্রমের উত্তম প্রতিদান দান করুন। আপনার সন্তানদেরকেও অনুরূপ দান করুন।‘ আবদুল্লাহর দোয়া শুনে লোকোটি খুশি হয়ে আমিন আমিন বলতে লাগলো। এরপর তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো।
এরপর আবদুল্লাহ বললো, মনে হচ্ছে, কাজের ব্যস্ততার কারণে আসরের আযান শুনতে পাননি। আসরের আযান তো হয়ে গেছে। একামতের সময়ও হয়ে গেছে। এখন একটু কাজে বিরতি দিয়ে নামাযটা পড়ে নিন। নামাযের পর অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে পারবেন। আল্লাহ আপনার শরীর সুস্থ রাখুন।’
লোকটি খুশি হয়ে বললো, ইনশাআল্লাহ, ইনশাআল্লাহ’।
এরপর সে আস্তে আস্তে গাছ থেকে নামলো। নীচে নেমে সে আবদুল্লাহর সঙ্গে করমর্দন করলো। এরপর বললো, ‘এমন চমৎকার ও অমায়িক ব্যবহারের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। তবে জোহরের সময় যে লোকটার সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল তাঁকে ধরতে পারলে বুঝিয়ে দিতাম গাধা কে?
ফলাফল……..
আপনি অন্যদের সাথে যেমন আচরণ করবেন, অন্যরাও আপনার সাথে তেমন আচরণ করবে।
উৎস: জীবনকে উপভোগ করুন
এরপর পড়ুন : পড়ে যাওয়া দুধের জন্য কাঁদা অনর্থক
For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.