জেনে নিন দারুচিনি খেলে কি কি রোগের উপকার হয়

দারুচিনি খেলে কি হয়? দারুচিনির মসলার ওষুধি গুণাগুন

দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা

দারুচিনি আমরা অনেকেই চিনি, আবার অনেকেই চিনি না। তবে অনেকেই যে চিনি না তা’ কিন্তু ঠিক নয়। কারণ অনেকে একে “ডালচিনি” বলে। তাই অনেকের কাছে পরিচিতি ডালচিনি বা দারুচিনিই হলো এই দারুচিনি।

এটি আমাদের রান্নার একটি মসলা উপাদান। এর খ্যাতি গরম মসলা হিসেবে। এই দারুচিনি দেখতে ছোট গাছের বাকল বা ছালের মতো। গাছের ছালই তো বটে! এর স্বাদ একটু ঝাল ও মিষ্টি। একটু ঝাঁঝালো। কিন্তু গন্ধটা সুন্দর।

দারুচিনি গাছ মাঝারি ধরনের। অনেকটা গোলাপজাম গাছের মতোই। পাতাগুলি প্রায় তেজপাতার মতো। গাছের ছালের রঙ ধূসর। তবে বেশি মোটা হয় না। কাঠের রং ফিকে লাল হয়। কচি পাতা প্রথমে গাঢ় গোলাপি রঙের হয়। পরে সেটা সবুজ হয়ে যায়। গাছের ছাল তুলে রোদে দিলেই ওগুলো কুঁকড়ে যায়।

দারুচিনিঃ খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম!

রান্নার কাজে দারুচিনির ব্যবহার ছাড়াও দারুচিনির রয়েছে ঔষধি গুণ, যা আমাদের ছোট খাটো অসুখে কাজে লাগতে পারে।

০১. কণ্ঠস্বর বিকৃতিঃ আপনার যদি কফের কারণে বায়ু আটকে যায়, স্বর বদলে যায়, সেক্ষেত্রে দারুচিনি খুব ভালো ফল দেবে। এজন্য

খাওয়ার নিয়মঃ আপনার কণ্ঠের বিকৃতি ভালো করতে ১ গ্রাম দারুচিনি গুঁড়া আধা কাম গরম পানিতে পানিতে রাতে ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন সেটাকে ছেঁকে নিয়ে পানিটা খাবেন। এটা গলার স্বরকে স্বাভাবিক করে দেবে।

০২. গলার ক্ষতঃ আপনি হয়ত পিত্ত ও শ্লেম্মার কারণে অনেকদিন ধরে ভুগছেন। অল্প কিছু খেলেই গলাটা জ্বালা ও মাঝে মাঝে ব্যথা করে। স্বরটা দেবে যায়। এগুলো গলার ক্ষতের প্রাথমিক লক্ষণ। এক্ষেত্রে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগে একটি সাধারণ চিকিৎসা করে দেখতে পারেন। ১ গ্রাম দারুচিনি গুঁড়া, এক কাম গরম পানিতে রাতে ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন সেটাকে ছেঁকে সকালে ও বিকালে দু’বেলা অল্প অল্প করে খান। এতে গলার ক্ষত ভালো হয়ে যাবে।

০৩. মাথার যন্ত্রণাঃ পিত্ত ও শ্লেম্মার জন্য মাথায় যন্ত্রণা হতে পারে। জ্বর হল্ব কিংবা জ্বরের আগে এ যন্ত্রণা হতে পারে। এ অবস্থায় আপনি দারুচিনি গুঁড়া সিকি গারম পরিমাণ সকালে ও বিকালে দু’বার খান। আবার এই দারুচিনি মিহি গুড়া করে ২/১ বার নাকে দিয়ে শ্বাস নিন। এতে নাসাপথ পরিস্কার হবে। নাকের পানি পড়া ও মাথার যন্ত্রণাও কমবে।

০৪. মুখের মেছতাঃ কোনো কোনো ছেলে বা মেয়ের বিশেষ করে মেয়েদের মুখে কালো রঙের ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়।  এ রকম হলে প্রথমে দারুচিনি গুঁড়া এক বা দেড় গ্রাম আগের দিন রাতে গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন সেটাকে ছেঁকে নিয়ে সকালে ও বিকালে দু’বার পানিটা খান। আবার ৩/৪  গ্রাম দারুচিনি থেঁতো করে দু’কাপ পানিতে সিদ্ধ করে এক কাপ মতো হলে ঐ পানিটা সকালে ও বিকালে দু’বার খান। আর দুই এক চিমটি পরিমাণ দারুচিনির মিহি গুঁড়া একটু দুধের সরের সাথে মিশিয়ে ঐ মেছতার ওপরটায় আস্তে আস্তে ঘষে দিন। এতে করে ঐ মেছতার দাগটা মিলিয়ে যাবে।

০৫. দাদ ও একজিমাঃ দাদ ও একজিমার সাথে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কালো ও সাদা রঙের চাকা হয়। খুব বেশি চুলকায় এই চাকা চাকা জায়গা গুলো । এর ফলে ঐ জায়গাটা একটু ফুলে লাল হয়ে ওঠে। অনেক সময় পানি বের হয়। এক্ষেত্রে দারুচিনি ৩ গ্রাম পরিমাণ নিয়ে তাকে থেঁতো করে দু’কাপ পানিতে সিদ্ধ করতে হবে। এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে সকালে ও রাতে খাবার পর আধা কাম করে দু’বার খেতে হবে। আর এর সাথে ২/৩ গ্রাম দারুচিনি বেটে অল্প একটু দুধের সরের সাথে মিশিয়ে তা’ ঐ চাকা চাকা জায়গায় একদিন পর পর লাগাতে হবে। এতে করে ঐ দাদ বা একজিমাটা মিশে যাবে।

০৬. অর্শ ও ভগন্দর রোগঃ অর্শ ও ভগন্দর রোগে আজকাল কষ্ট পাচ্ছেন অনেকেই। মনে করা হয়, লিভারের দোষে অর্শ ও ভগন্দর রোগ হয়। এগুলোকে চর্ম রোগও বলা যায়। এক্ষেত্রে দারুচিনি খেলে এ দুইটি রোগেরই উপশম হবে। দারুচিনি গুঁড়া সিকিগ্রাম পরিমাণ সকালে ও বিকালে দু’বার একটু মাখনের সাথে মিশিয়ে খেতে হবে। ১৫ দিন ধরে এটি খেলে সমস্যা চলে যাবে।

০৭. রজঃরোধ ও কৃমিঃ নারীদের মাসিক (ঋতুস্রাব) বন্ধ হয়ে যাওয়া হলো রজঃরোধ। এই এই রজঃরোধ হলে পাণ্ডুরোগ দেখা দেয়। তার সাথে পেটে বায়ুও হতে পারে। এ রোগের হাত থেকে রেহাই পেতে হলে ৩/৪ গ্রাম দারুচিনি নিয়ে থেঁতো করে ২ কাপ পানিতে সিদ্ধ করতে হবে। এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে সকাল বিকাল ২ বেলা খেতে হবে। ৫ দিন খেলে মাসিক ঋতুস্রাবটা অল্পদিনের মধ্যেই হুয়ে যায়। এছাড়াও কৃমির উৎপাতে যারা কষ্ট পাচ্ছেন তারাও দারুচিনি গুঁড়া সিকি গ্রাম পানিসহ ৫ দিন সকালে এবং বিকালে খেলে কৃমি থেকে রেহাই পাবেন।

০৮.ক্ষুধামন্দাঃ অনেক সময় আমাদের ভালো ক্ষিধে পায় না। আর খেলেও ভালো হজম হয় না। পেটে বায়ু হয়। খাবারের পর দারুচিনি গুড়া সিকি গ্রাম গরম পানিসহ খেলে ঐ অসুবিধা চলে যায়।

০৯. দাঁতের ব্যথাঃ দাঁতের ব্যথা সারাতে দারুচিনি খুব উপকারি। ৩/৪ গ্রাম গ্রাম দারুচিনির গুঁড়া আধা কাপ পানিতে মিশিয়ে সেই পানি মুখে দিয়ে ৫/৭ মিনিট রাখলে দাঁতের যন্ত্রণার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

আরও পড়ুনঃ লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.

Leave a Comment