যুবতীর কবলে যুবক (প্রেমের গল্প)

যুবতি

রং নাম্বারে এক যুবতী মেয়ে’র সাথে পরিচিত হয় রাহাত। পরিচিত থেকে প্রেমে পরিণয়ে হয় তাদের সম্পর্কে। মোবাইলে চলতে থাকে তাদের প্রেমালাপন। রাহাত মনস্থির করে তার প্রেমিকাকে দেখার। বেঁছে নেয় একটি নির্জন পার্ক। তারপর…. 

গল্পঃ যুবতীর কবলে যুবক। 

লেখকঃ মাওলানা মুফীজুর ইসলাম। 

রাহাত। ইন্টার প্রথম বর্ষের ছাত্র। গত কয়েকদিন আগে কলেজে ভর্তি হয়েছে। আজ কোনো এক কারণে মনটা তাঁর ভালো নেই। খানিক আগে রুমের দরজা বন্ধ করে বিছানায় গেছে সে। তারপর ঘুমাবার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। কিন্তু ঘুম আসছে না। ঘুম যেন পালিয়ে গেছে শত মাইল দূরে। বালিশে মাথা রেখে শুধু এপাশ ওপাশ করছে রাহাত। স্বস্তি পাচ্ছে না কোনোভাবেই। এ মুহূর্তে কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধুই তাকে সান্ত্বনা দিতে পারে।

শরীফ রাহাতের অন্তরঙ্গ বন্ধু। সবচেয়ে কাছের বন্ধু। রাহাত ভাবল, ঘুম যখন আসছে না, তো মোবাইলে বন্ধু শরীফের সাথে একটু আলাপ করি। এরদ্বারা মনের গতিটা পরিবর্তন হতে পারে!

মোবাইল হাতে নিয়ে বাটন চাপতে থাকে রাহাত। তারপর সেন্ড বাটনে দিয়ে কল ঢুকায়। রিং হচ্ছে। কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। তাই মেজাজটা তারত আরো চটে যায়। মোবাইলটা ছুড়ে মারে অদূরের সোফায়।

বেশ কিছুক্ষণ পর মোবাইলটা তুলে এনে আবার চেষ্টা করল রাহাত। কিন্তু এবারও রিসিভ হচ্ছে না। তাই সে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বিড়বিড় করে বলতে লাগল, বেটা ঘুমাচ্ছিস! রাত দশটায় ঘুম! ঘুমাবার আর সময় পেলি না!

তৃতীয়বারের মত আবারও চেষ্টা করল রাহাত। হ্যাঁ, এবার কল রিসিভ হয়েছে। মনে আশার সঞ্চার হয়েছে। বন্ধুর সাথে কথা বলবে! মনের কষ্ট লাঘব করবে। কিন্তু একি! এ তো শরীফের কণ্ঠ নয়। এ দেখছি মেয়েলী কণ্ঠ! কী ব্যাপার ওপাশ থেকে মেয়েলি কণ্ঠ ভেসে আসছে কেন? আমি তো এমনটি চাই নি।

রাহাত কী উত্তর দিবে! সে তো দীর্ঘক্ষণ বেদনার সাগরে ডুবেছিল। তীর খুঁজতে গিয়ে এ কিসের কবলে পড়ল সে!

মেয়েলী কন্ঠটা কেমন যেন বিষের মত পীড়া দিচ্ছে রাহাতকে। এই মুহূর্তে সে কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে প্রস্তুত নয়। তাই রাগের সাথে তৎক্ষণাৎ লাইনটা কেটে দিল।

পরক্ষণেই ভাবল, এরকম হলো কেন? দেখিতো নাম্বারে কোনো গোলমাল হয়েছে কি না? ওফ! ঘটনাতো সেখানেই। যাক, ভুল যখন হয়ে গেছে, কি আর করার!

আরও পড়ুনঃ সর্বনাশা প্রেম (প্রেমের কাহিনী)

রাহাত মোবাইল রেখে ঘুমাবার চেষ্টা করল। কিন্তু পারল না। একটু পরেই মোবাইলটা বেজে উঠল। সে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল সেই মেয়েটিই কল ব্যাক করেছে। রাহাত রিসিভ করল না। লাইন কেটে দিল।

এভাবে কয়েকভার কেটে দেওয়ার পরও বারবার সেখান থেকে কল আসতে লাগল। অবশেষে রাগের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে যায় রাহাত। বন্ধ করে দেয় মোবাইল। নিশ্চিন্তে শুয়ে পড়ে বিছানায়।

পরের দিন রাহাত সব ঘটনা খুলে বলে শরীফকে। শরীফ বলল, দোস্ত! তুই মস্ত বড় ভুল করেছিস। মেয়েটির সাথে কিছু কথা বললেই পারতি। মেয়ে মানুষ কথা বললে আর কতটুকুই বা বলতে পারত। অল্পতেই ঠেকে যেত!

শরীফ ওসব কথা আর বলিস না। নাজায়েজ ও হারাম কাজে আমাকে পটাসনে। আমি ওসব বাজে  কাজে নেই।

পরিদন রাতে ঠিক সাড়ে বারটায় মেয়েটি আবার ফোন করল। রাহাত তাতে হালকা বিরক্তি বোধ করল। তবে আজকের অবস্থা গতকালের চেয়ে ভিন্ন। শরীরটা বেশ সুস্থ। মনটাও ভাল। সে ভাবল, দেখি মেয়েটা কী বলে?

রিসিভ করতেই মেয়েটি বেশ ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠল, কে বলছেন? কে আপনি?

এভাবে দু’বার প্রশ্ন করার পর রাহাত অপরাধীর ন্যায় বলল, আপা! রাগ করেছেন? প্লীজ রাগ করবেন না। গতকালের ঘটনার জন্য আমি দুঃখিত। কল করার সময় মনটা ভীষণ খারাপ ছিল। তাই কোড নাম্বার ভুল হয়ে যাওয়ায় কলটা আপনার কাছে চলে গিয়েছে। শুধু শুধু আমাকে ভুল বুঝবেন না।

রাহাতের কথাগুলো জ্বলন্ত অঙ্গারে পানি ঢালার মত কাজ করল। নিমিষেই মেয়েটির কণ্ঠ বদলে গেল। কোমল হয়ে গেল কথার সুর। এরপর দু’জনের পরিচয় হলো। মত বিনিময় হলো। দীর্ঘসময় আলাপচারিতা হলো। এরই মাঝে একে অপরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে নিল। বেগানা মেয়েদের সাথে এভাবে কথাবার্তা বলা, ফ্রেন্ডশিপ করা যে অন্যায়, নাজায়েজ ও হারাম, রাহাত তা ভুলে গেল। পড়ে গেল শয়তানের ওয়াস ওয়াসায়।

আরও পড়ুনঃ ছেঁড়া ব্লাউজ (নারী নিগ্রহের গল্প)

বহুদিন যাবত চলতে থাকে তাদের এই সম্পর্ক। মোবাইল ফোনের ফ্রি কল অফার তাদের সুযোগ সুবিধাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। রাত বারটার পর থেকে শুরু হয় প্রেমালাপ। কোনো কোনো সময় কথা বলতে বলতে রাত শেষ হয়ে যায় তবুও তাদের কথা শেষ হয় না। রাত যে শেষ হয়ে যাচ্ছে সেদিকেও তাদের খেয়াল থাকে না। এভাবেই তাদের মাঝে গড়ে উঠে এক অপবিত্র ও অবৈধ বন্ধন। প্রতি রাতেই মোবাইলে চলতে থাকে রাতভর দু’জনের প্রেমালাপ।

রাত জেগে জেগে রাহাতের স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে আক্রান্ত হয় বিভিন্ন প্রকার গোপন রোগে। ফলে সে এখন ভাল করে হাটতেও পারে না। চোখ দিটো গর্তের ভেতরে চলে গেছে। এসব দেখে একদিন ওর মা জিজ্ঞেস করলেন, রাহাত! তুমি দিনে দিনে এভাবে ভেঙ্গে পড়ছ কেন বাবা? এত রাত পর্যন্ত লেখাপড়া করার দরকার কি? স্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে পড়াশোনা করো। পরীক্ষার তো আরো কয়েকমাস বাকি। সহজ-সরল মা তাঁর স্নেহের সন্তানকে এ ছাড়া আর কী বলবেন!

রাহাত এ ব্যাপারে বন্ধু শরীফকে কিছুই জানায় নি। কে জানে, সে যদি আবার লজ্জা দিয়ে বসে যে, কিরে রাহাত! তুই না বলেছিস, এসব নাজায়িজ ও হারাম? ঐ পথে তুই যাবি না? এখন গেলি কী করে? তখন তাকে কী জবাব দেব!

দু’জনের কেউ কাউকে আজ পর্যন্ত দেখে নি। অথচ তাদের মাঝে দীর্ঘদিন যাবত বড় অভিনব পদ্ধতিতে চলছে অবৈধ সম্পর্ক, প্রেম-ভালবাসা। এ যেন নতুন যুগের নতুন কৌশল!

রাহাতের পরীক্ষার সময় ক্রমশ ঘনিয়ে আসছে। অথচ সেদিকে তাঁর ভ্রূক্ষেপ নেই। বরং আরো জঘন্য পথে পা বাড়াতে শুরু করে সে। ব্যাকুল হয়ে উঠে প্রেয়সীর প্রিয় মুখ দেখার জন্য।

রাহাত একদিন তাঁর মনের কথা মেয়েটির কাছে ব্যক্ত করে। বলে, দূর থেকে কথাবার্তা আমাদের মাঝে আর কতদিন চলবে? চলো না আমরা একদিন সামনাসামনি পরিচিত হই।

মেয়েটির নাম লাভলী। রাহাতের প্রস্তাব শুনে সে বলল, তোমার পরীক্ষা আগে শেষ হোক। তারপর এক মধুর ক্ষণে তোমার আমার সাক্ষাৎ হবে।

নির্ধারিত তারিখে পরীক্ষা শুরু হলো। কিন্তু রাহাত কী পরীক্ষা দেবে? সে তো পড়াশুনা করেনি বললেই চলে। রাতদিন কেবল ওর চিন্তায়ই সময় কাটিয়েছে। তাকে নিয়ে কল্পনার জাল বুনেছে। সুখ স্বপ্ন দেখেছে। তাঁর প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে লেখাপড়ার অবস্থা বারটা বাজিয়েছে।

পরীক্ষা শেষ হলো। কবে পরীক্ষা নামক মহা আপদটা শেষ হবে এ অপেক্ষায়ই ছিল রাহাত। কারণ পরীক্ষা শেষ না হলে তো লাভলীর সাথে সাক্ষাতের কোনো সুযোগ নেই!

পরীক্ষা শেষে রাহাত দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বহু প্রতীক্ষার সমাপ্তি ঘটিয়ে প্রেয়সীর সাক্ষাতের জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠল। রাহাতের আর তর সইছে না। একের পর এক কল দিতে লাগল লাভলীকে। কখন আসব? কোথায় থাকবে? তোমার সাক্ষাৎ কোথায় পাব? ইত্যাদি প্রশ্ন বারবার করতে থাকল।

সাক্ষাতের স্থান ও সময় ফোনেই নির্ধারিত হলো। স্থান নির্ধারণ হলো রমনা পার্কের নির্দিষ্ট এক জায়গায়। আজ তারা উভয়ে মহাখুশী। কারণ আজ তাদের বহু প্রতীক্ষিত—সাক্ষাৎ দিসব।

হঠাৎ রাহাতের মনে পড়ল বন্ধু শরীফের কথা। ভাবল, আজকের এই শুভক্ষণে বিষয়টিকে তাকে না জানালেই নয়। নয়তো বন্ধুর সাথে বড় গাদ্দারী হবে। ফোনটা হাতে নিয়ে—হ্যালো, দোস্ট! বিকেল পাঁচটায় তুই রমনা  পার্কে আসিস। অনেক কথা আছে। গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছু। সাথে তোর জন্য রয়েছে একটি অপূর্ব সারপ্রাইজ। তবে শোন, আমি যেখানে বসে থাকব, তুই সেখান থেকে কিছুটা নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করবি। দৃশ্যগুলো শুধু অবলোকন করবি। কাছে আসিসনে। এ ব্যাপারে পরে তোকে সব খুলে বলব।

রাহাত আজ নিজেকে সাজাতে ব্যস্ত। কী পড়বে? কোনটা পড়বে? প্রেয়সীর জন্য নিজেকে কেমন করে সাজাবে? কোন পোষাকে তাকে খুব স্মার্ট দেখাবে? নিজেকে কী ভাবে সেখানে উপস্থাপন করবে? এসব ভেবে সকাল গড়িয়ে দুপুর। দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকেল হয়ে গেল। কিছু ভেবে না পেয়ে রাহাত তাঁর বোনকে ডাকল। বলল, এই দেখতো, আমাকে কোন পোষাকটায় বেশি মানায়? শেষ পর্যন্ত ভাই-বোন মিলে পোষাক নির্বাচন করল। তারপর কাচু মাচু করে বোনকে আবার বলল, বোন আমার! তুই যদি কিছু মনে না করিস তাহলে কাছে একটি আবদার করব। বল রাখছি তো?

বলো। রাখার চেষ্টা করবো।

তোর গলার চেইন আর আংটিটা দে তো! একটু ঘুরে আসি। বেশিক্ষণ বাইরে থাকব না। যাব আর আসব।

ছোট বোন রোমানার কিছুই বলার ছিল না। বড় ভাই চাওয়ামাত্র চেইন ও আংটি এনে হাজির করল। রাহাত ঘড়ির দিকে তাকাল। হায় হায়, তৈরি হতেই চারটা! না, আর এক মুহুর্তও দেরি করা চলবে না। রোমানা! আসিরে। বড় দেরী হয়ে গেছে। হাতে সময় নেই। এই বলে রাহাত দিল এক ছুট।

পাঁচটা বাজতে এখনো পনের মিনিট বাকি। রাহাত নির্ধারিত স্থানে  পৌঁছে গেল। কিন্তু যেখানে সাক্ষাতের কথা ছিল সে স্থানটি আগেই অন্যদের দখলে চলে যাওয়ায় রাহাতের মনটা খারাপ হয়ে গেল। তাই বিষন্ন মনে পাশেই পায়চারী করতে লাগল সে।

খানিক পর লাভলি এল। সে রাহাতকে কিছুটা অনুমান করে কাছে এসে পিছন থেকে দু’বার মিসকল দিয়ে নিশ্চিত হলো যে, এ-ই রাহাত।

রাহাত এখনো লাভলীকে দেখতে পায় নি। সে আগের মতোই পায়চারী করছে। হঠাৎ সে পেছনে দিক থেকে দুটো নরম হাতের ছোঁয়া পেল। সঙ্গে সঙ্গে আৎকে উঠে ঘাড় ফিরিয়ে তাকাতেই লাভলি এক গাল হেসে বলল, আমার অনুমান  মিথ্যে না হলে তুমি নিশ্চয় মিঃ রাহাত।

রাহাত বলল, ঠিকই বলেছ। আর আমি রাহাত হলে তুমি নিশ্চয় লাভলী।

হ্যাঁ, তোমার অনুমানও মিথ্যে নয়। এ বলে রাহাতকে সাথে নিয়ে লাভলী একটি নির্জন স্থানে গিয়ে বসল।

রাহাত একজন মুসলমান। ইসলাম তাকে এ ব্যাপারে কী বলেছে তা সে ভালো করেই জানে। সে জানে যে—পরনারীকে দেখা, তাঁর সাথে এভাবে সামনাসামনি বসা, কথাবার্তা বলা, প্রেমালাপ করা ইত্যাদি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও হারাম। কিন্তু শয়তানের প্ররোচনায় আজ যেন সে সবকিছু ভুলে গেছে। ভুলে গেছে এই জঘন্য অপরাধের মর্মন্তুদ শাস্তির কথা।

লাভলীর সাথে রাহাতের আজ প্রথম দেখা। তাই সে প্রথম প্রথম একটু লজ্জাবোধ হলেও দীর্ঘক্ষণ আলাপ-আলোচনার পর ওদের মাঝে এক নববন্ধন সৃষ্টি হলো। ফলে কথা বলতে বলতে কখন যে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল এবং গোটা পার্ক জনশূন্য হয়ে পড়ল, তা তারা টেরও পেল না।

ওদিকে শরীফ যখন দেখল, রাহাত একটি মেয়ের সাথে দীর্ঘক্ষণ যাবত কথা বলছে, ফেরার কোনো নামগন্ধ নেই, এমনকি তাঁর দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না, তখন সে অস্থির হয়ে মনে মনে রাহাতকে গালমন্দ করতে লাগল। সেই সাথে বলল, রাহাত! এটাই কি তোর সারপ্রাইজ যে, আমি দীর্ঘ দুটি ঘন্টা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছি! আর তুই কোথাকার এক মেয়েকে নিয়ে আনন্দে মেতে আছিস? ঠিক আছে, আজ বাড়িয়ে আয়। আমিও তোকাএ সারপ্রাইজ দেব। এ বলে সে রাগে গদগদ করতে করতে বাসায় চলে এল।

রাহাত কিছু বলতে যাবে ঠিক এমন সময় একটি লোক দৈত্যের মতো তাদের সামনে হঠাৎ আবির্ভূত হল। অদূরে দেখা গেল, আরো কয়েকজন লোক। লোকগুলো যে তারই, এ ব্যাপারে রাহাতের কোনো সন্দেহ রইল না।

লোকটি বক্র হাসি হেসে বলল, কী দুলা মিয়া! মধুর প্রেমালাপ কি শেষ হয়েছে? হয়ে থাকলে দেরী না করে ঝটপট ট্যাক্সটা পরিশোধ করে ফেলুন!

লোকটির কথায় রাহাত যেন আকাশ থেকে পড়ল। সে মনে মনে বলল, প্রেমিকার সাথে কথা বললে ট্যাক্স দিতে হয়, তা তো আগে জানতাম না!

রাহাত এবার লাভলীর দিকে তাকাল। সে দেখল, লাভলীর চেহারায় দুষ্টুমীর হাসি। এ দৃশ্য দেখে তাঁর অন্তরটা ছ্যাৎ করে উঠল। এমনকি খানিক বাদে তাঁর সামনে একথা পরিস্কার হয়ে গেল যে, লাভলী মূলত তাঁর প্রেমিকা নয়, সে আসলে আধুনিক ছিনতাইকারী দলের একজন সক্রিয় সদস্য। আগত লোকগুলো তারই সঙ্গি-সাথী।

লোকটি রাহাতের গলা থেকে স্বর্ণের চেইন, হাতের আংটি, মোবাইল ও ঘড়িসহ টাকা-পয়সা যা ছিল সব হাতিয়ে নিল। ইতোমধ্যে তাঁর অন্যান্য সাথীরাও সেখানে এসে হাজির হলো।

সবকিছু ছিনিয়ে নেওয়ার পর এখন চলে যাওয়ার পালা। সবাই ধীর পায়ে সেখানে থেকে চলে আস্তে লাগল। এমন সময় ছিনতাইকারীদের একজন বলে উঠল, আরে! দোস্তের শার্টাটা তো বেশ সুন্দর দেখছি! এ বলে সে রাহাতের দেহ থেকে শার্টটাও খুলে নিল। এমন সময় আরেকজন বলল, প্যান্টটাও খুলে নাও। বস বলল, থাক। দুলা মিয়াকে এতটা অপমান করা ঠিক হবে না। চল এখন যাই। এ বলে রাহাতের দিকে মুখ করে বলল, দোস্ত আজ তাহলে বিদায়। আরেকদিন দেখা হবে। আজকের চেয়ে আরো ভালো প্রস্তুতি নিয়ে মাঝে মধ্যে এখানে এসো। কেমন?

এতক্ষণ লাভলী হাস্যোজ্জ্বল চেহারা নিয়ে ওদের কাণ্ডকীর্তি দেখছিল। সবশেষে ছিনতাইকারীরা যখন চলে যেতে লাগল, তখন সেও তাদের সাথে রওয়ানা দিল। তবে যাওয়ার আগে ঠোঁট দু’টি বাঁকা করে রাহাতের দিকে তাকিয়ে একটি ভ্যাংচি কাটল। সেই সাথে ফেটে পড়ল অট্টহাসিতে। আর বলল, গুড বাই! থ্যাংক ইউ! সুখে থেক বন্ধু। আবার কথা হবে। বাই!

প্রিয় পাঠক! এই হলো  বর্তমান মোবাইল ফোনের বেশকিছু খারাপ দিকের একটি। মোবাইল ফোনের কারণে কত যুবক-যুবতি যে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, কত মানুষ জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন প্রকার পাপে, তাঁর কোনো ইয়ত্তা নেই। আল্লাহ পাক আমাদের হেফাজত করুন। আমীন।

লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম। বইঃ আদর্শ যুবক যুবতি ১ থেকে। 

Please join our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Tumblr And Youtube channel .

Leave a Comment

Discover more from Amar Bangla Post

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading