বংশের প্রভাব! এটি একটি শিক্ষণীয় ঘটনা। গল্পের লেখক দুইটি বংশের ও পরিবারের চারিত্রিক গুণাবলি ও তাঁর প্রভাব সুন্দর লেখনির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।
বংশের প্রভাব (দুই বংশের শিক্ষণীয় ঘটনা)
হযরত বলেন-একবার আমি একা একা সফর করছিলাম। আমার কোনো সঙ্গি ছিল না। পথিমধ্যে ভীষণ ক্ষিধে পেল। খাবার যা নিয়ে এসেছিলাম, আগেই তা শেষ হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় একটি তাঁবু নযরে পড়ল। আমি সওয়ারি থেকে নামলাম। তাঁবুর ভিতরে একটি মহিলা বসা ছিল। আমি তাকে বললাম–বোন! ভীষণ ক্ষুধার্ত আমি। আমাকে কিছু খেতে দিবে?
সে রাগতঃ স্বরে বলল–আমি কি এখানে মুসাফিরদের জন্য খাবার রান্না করে বসে আছি নাকি? যান, নিজের রাস্তা দেখুন। খাবার-টাবারের কোনো ব্যবস্থা এখানে হবে না।
মহিলার কথায় মনে খুব আঘাত পেলাম। আমি তখন এতটা ক্ষুধার্ত ছিলাম যে, ওঠে দাঁড়াতেও পারছিলাম না। তাই বাধ্য হয়ে সেখানেই পড়ে রইলাম।
খানিক বাদে মহিলার স্বামী এল। আমাকে দেখেই হাসিমুখে বলল, মারহাবা! কে আপনি? আপনার আগমন শুভ হোক।
বললাম–আমি একজন মুসাফির।
তারপর তার ও আমার মাঝে নিম্নরূপ আলোচনা হলো–
-খানা খেয়েছেন?
-না, খাইনি।
-কেন খাননি?
-চেয়েছিলাম। পাইনি।
এরপর সে স্ত্রীকে সম্বোধন করে বলল–এ কেমন কথা যে, খানা চাওয়া সত্ত্বেও তুমি মুসাফিরকে খানা দাওনি?
-না, দেইনি। কীভাবে দেব আমি? আমি কি মুসাফিরের জন্য খাবার প্রস্তুত করে বসে আছি? ওদেরকে খানা খাইয়ে খাইয়ে আমার ঘর কি উজাড় করে দিব?
মহিলার স্বামী ছিল শরীফ বংশের লোক। তাই স্ত্রীর কথায় সে রাগ করল না, বরং শুধু বলল–তুমি তোমার ঘর খাবার দিয়ে বোঝাই করে রাখো। আল্লাহ পাক তোমাকে হেদায়েত দান করুন। তারপর সে একটি বকরি জবাই করে নিজেই রান্না করে আমাকে খাওয়াল এবং স্ত্রীর এই অযাচিত আচরণের জন্য খুব দুঃখ প্রকাশ করল।
খানাপিনা শেষ করে আমি পথ চলতে লাগলাম। এক মনজিল পথ অতিক্রম করার পর আবার আমার ক্ষিদে পেল। এবং আশ্চর্য! সেখানেও একটি তাঁবু নজরে পড়ল এবং সেই তাঁবুর নিকট এক মহিলাকে দেখা গেল। আমি মহিলার কাছে গিয়ে বললা, বোন! আমি একজন মুসাফির। খুবই ক্ষুধার্ত। আমাকে কিছু খেতে দিবে?
মহিলা বলল, স্বাগতম! আপনার আগমন শুভ হোক। আমার ঘরে আজ আল্লাহর রহমত এসেছে। আল্লাহর বরকত এসেছে। এ বলে সে একটি বকরি জবাই করে রান্না করল। তারপর অত্যন্ত তাযীমের সাথে যখন উহা আমার সামনে পেশ করল, তখনই তার স্বামী এসে উপস্থিত হলো।
-আমাকে জিজ্ঞেস করল–
-তুমি কে?
-বললাম, মুসাফির।
-খাবার কে দিয়েছে?
-আপনার স্ত্রী।
এ কথা শুনেই সে তার স্ত্রীর উপর চড়াও হলো এবং চিৎকার করে বলল, তোমার কি লজ্জা হয় না? তুমি কি এভাবে মেহমানদারী করে আমার ঘর খালি করে দিবে? পথের ভিখারী বানিয়ে ছাড়বে?
লোকটির কথা শুনে আমার দারুন হাসিল পেল। আমি কিছুতেই হাসিকে সংবরণ করতে না পেরে হো হো হেসে ওঠলাম।
আমার হাসি দেখে গৃহস্বামী আরো রেগে গেলেন। জিজ্ঞেস করলেন, হাসছ কেন?
আমি বললাম–এখানে আমি যে দৃশ্য দেখলাম, মাত্র এক মনজিল আগে এর উল্টো দৃশ্য দেখে দেখে এলাম। এখানে দেখছি, স্বামী তার স্ত্রীর উপর রাগ করছে, আর ওখানে দেখে এলাম, একই কারণে স্ত্রী তার স্বামীর উপর রাগ করছে। কি বিচিত্র মানুষের মন! কত পার্থক্য মানুষের আচরণ?
লোকটি বলল-জানো, সেই মহিলাটি কে?–যে তার স্বামীর উপর রাগ করেছিল?
আমি না সূচক জবাব দিলে সে বলল, ঐ মহিলা হলো আমার বোন। আর এ মহিলা হলো, ঐ পুরুষের বোন যিনি আপনাকে নিজ হস্তে বকরি জবাই করে রান্না করে খাইয়েছিলেন।
প্রিয় পাঠক-পাঠিকা! দেখলেন তো বংশের কি তাছীর। ভালো বংশের দুই ভাই-বোন দু’ জায়গায় থেকেও মানুষের সাথে উত্তম আচরণ করছে। পক্ষান্তরে খারাপ বংশের দুই ভাই-বোন ভিন্ন ভিন্ন স্থানে অবস্থান করে মানুষের সাথে খারাপ আচরণই করে যাচ্ছে। যা কারো কাম্য নয়। আসলে ঈমান কাকে বলে? ঈমান শুধু নামাজ রোজাকেই বলে না। অন্যের সাথে হাসিমুখে কথা বলা, অন্যকে আদর-আপ্যায়ন করা–এগুলোও ঈমান। অনুরূপভাবে দান-খয়রাত করা, সবর করা, মানুষকে ইজ্জত-সম্মান করা-এগুলোও ঈমানের অন্যতম অঙ্গ। এসব গুণ ছাড়া ঈমান পূর্ণ হয় না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, শ্রেষ্ঠ ঈমান কি? জাবাবে তিনি বলেছিলেন–উত্তম চরিত্র। আরেক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছিল–
হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমার ঈমানের পূর্ণতা চাই। উত্তরে তিনি বলেছিলেন–তোমার চরিত্রকে ভালো করো, তোমার ঈমান পূর্ণ হয়ে ওঠবে।
প্রিয় বন্ধুগণ! তাই আসুন, আমরা আমাদের চরিত্রকে সুন্দর করি, মানুষের সাথে সদাচরণ করি, নিজের প্রয়োজনের তুলনায় অপরের প্রয়োজনকে বড় করে দেখি। আর বিয়ে করার সময় ‘খান’ আর ‘পাঠান’ না খুঁজে এমন বংশের মেয়ে খুঁজি, যে বংশের মেয়েরা হবে দীনদার, পরহেযগার ও পর্দানশীন। স্বামী খুঁজার বেলায়ও আমরা একই নিয়ম অনুসরণ করি। তাহলে দেখবেন, দুনিয়াতেই আপনি জান্নাতের একখানা টুকরো হাতে পেয়েছেন। তখন সুখে-দুঃখে সর্বদাই পাবেন শান্তি আর শান্তি। শান্তির এক শীতল হাওয়া সর্বদাই বইতে থাকবে আপনার হৃদয় জগতে। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের সবাইকে নেককার স্ত্রী দান করো। আর মেয়েদেরকে দান করো নেককার স্বামী। সেই সাথে সবাইকে দান করো আখলাকে হাসানা-উত্তম চরিত্র। আমীন। [সুত্রঃ বেহনূঁ ছে খেতাব]
লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম (আদর্শ স্বামী স্ত্রী ১)
এরপর পড়ুন : সঞ্চয় নয়, দান করুন
For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.