ত্যাগের শিক্ষা গল্পটি জাপানের একটি ৯ বছরের বালকের জীবনের ঘটনা যা কিশোর কিশোরীদেরকে আত্মত্যাগের উৎসাহ জোগাবে যার দ্বারা আমাদের সমাজ ও অসহায় মানুষের উপকারে আসবে। জাপানের ৯ বছরের এই ছোট্ট বালকের আত্মত্যাগের ঘটনাটি শিশুদেরকেও পড়ে শোনানো যেতে পারে।
ত্যাগের শিক্ষা! কিশোর কিশোরীদের গল্প ১৪
নীচের এই চিঠিটা বন্ধুকে উদ্দেশ্য করে এক উদ্ধারকর্মীর লেখা। সে এটি লিখেছিল তখন যখন সে জাপানের ফুকুশিমাতে ভূমিকম্প ও সুনামীতে বিপদগ্রস্থ লোকদের উদ্ধার কাজে তৎপর ছিল। এই চিঠিতে রয়েছে একটি মর্মস্পর্শী ঘটনা। এখানে ঘটনাসহ পুরো চিঠিটার অনুবাদ তুলে ধরা হলো, যাতে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি।
বন্ধু! তুমি এবং তোমার পরিবার কেমন আছে?
বিগত কয়েকদিন যাবত সবকিছু এলোমেলো ছিল। যখন আমি আমার চোখ বন্ধ করি তখন মৃতদেহ দেখতে পাই। যখন চোখ খুলি, তখনও আমি মৃতদেহ দেখি। আমাদের প্রত্যেককেই দৈনিক ২০ ঘন্টা কাজ করতে হয় তবুও আমি চাই একেকটা দিন ৪৮ ঘন্টা হোক, যাতে করে আমরা উদ্ধার কাজ আরো দ্রুত চালিয়ে যেতে পারি।
লোকজন এখানে শান্ত। তাদের আত্মমর্যাদা এবং আচার-আচরণ অত্যন্ত শালীন। সুতরাং অবস্থা যেরকম হওয়ার কথা সেরকম খারাপ নয়।কিন্তু পরবর্তী সপ্তাহে কি হবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলা যায় না।
সর্বোপরি, তারা মানুষ। যখন ক্ষুধা ও তৃষ্ণা তাদের মর্যাদায় আঘাত হানবে তখন মানুষ হিসাবে যা করতে হয় তাই করবে। সরকার চেষ্টা করছে আকাশ পথে খাদ্য এবং ওষুধ সরবরাহ করতে। কিন্তু এটা যেন সমুদ্রের মধ্যে সামান্য লবণ ছিটানো।।
বন্ধু! একটা হৃদয় কাঁপানো ঘটনা। এটা একটা ছোট জাপানি বালককে নিয়ে, যে আমার মত বয়স্ককে শিক্ষা দিল কেমন করে মানুষের মত আচরণ করতে হয়। গত রাতে আমাকে একটা ছোট গ্রামের স্কুলে পাঠানো হয় যেখানে ক্রাণকর্মীদেরকে আশ্রয় প্রার্থীদের মধ্যে খাবার বণ্টনে সাহায্য করতে হবে। এটা ছিল সুদীর্ঘ লাইন এবং আমি ৯ বছরের একটা বালককে দেখলাম । সে একটা টি শার্ট এবং এক জোড়া জুতো পরে ছিল।
তখন প্রচণ্ড শীত পড়ছিল এবং এই বালকটি লাইনের একবারে শেষ প্রান্তে ছিল। আমি চিন্তিত ছিলাম যে, যখন এই বালকটি খাবারের নিকটবর্তী হবে তখন খাবার সব শেষ হয়ে যাবে। তাই আমি তার সঙ্গে কথা বললাম। সে বলল, যখন ভুমিকম্প হয় তখন সে স্কুলে ছিল। তার বাবা নিকটেই কাজ করত এবং তাকে স্কুল থেকে নিয়ে যেতে আসছিল। বালকটি তখন ৩য় তলার ব্যালকনিতে ছিল এবং সে দেখতে পেল যে, তার বাবার গাড়িটি সুনামিতে ভেসে যাচ্ছে।
আমি তার কাছে তার মা সম্বন্ধে জানতে চাইলাম। সে বলল, তাদের বাসা সমুদ্রের উপকূলবর্তী এবং তার মা ও ছোট বোন মনে হয় বাঁচতে পারেনি। আমি যখন তার আত্মীয়দের কথা জিজ্ঞেস করলাম, তখন সে তার মাথা ঘোরাল এবং চোখের পানি মুছল।
বালকটি শীতে কাঁপছিল। আমি তাকে আমার পুলিশের জ্যাকেটটি পরিয়ে দিলাম। এ সময় আমার কাছে থাকা খাবারের ব্যাগটি পড়ে গেল। আমি সেটা তুলে নিয়ে তাকে দিলাম। সেইসাথে বললাম—যখন তোমার পালা আসবে তখন খাবার শেষ হয়ে যাবে, এটা আমার অংশ। আমি খেয়েছি। তুমি খাও।
বালকটি আমার খাবার নিল এবং মাথা নিচু করে সম্মান জানাল। আমি ভাবলাম, সে এখন খাবে। কিন্তু সে খেল না। বরং সে যেখান থেকে খাবার বন্টন করা হচ্ছিল সেখানে গিয়ে তা অন্যান্য খাবারের সঙ্গে রেখে দিল। আমি অবাক হলাম। জিজ্ঞেস করলাম, কেন সে না খেয়ে সমস্ত খাবারের সঙ্গে নিয়ে রাখল? সে বলল, “আমি দেখেছি যে, অনেক লোক আমার চেয়ে বেশি ক্ষুধার্ত। যদি আমি খাবারটি এক সঙ্গে রাখি তাহলে তারা সমানভাবে খাবার বন্টন করতে পারবে”।
যখন আমি সেটা শুনলাম তখন আমি ঘুরে দাঁড়ালাম, যেন লোকজন আমার কান্না না দেখে।
একটা এমন সমাজ যা তৈরি করতে পারে ৯ বছরের এমন একজন বালককে, “যে উৎসর্গ করার অর্থ বোঝে বৃহত্তর স্বার্থে”-এটা অবশ্যই একটা মহৎ সমাজ।
বালক হে! তোমাকে এবং তোমার পরিবারকে উষ্ণ অভিনন্দন। [সূত্রঃ ইন্টারনেট]
লেখক : মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম।
উৎস : আদর্শ কিশোর কিশোরী ৩ (গল্পের বই) বই থেকে।
এরপর পড়ুন :
ছোট্ট বন্ধুরা! আশা করি তোমাদের আত্মত্যাগের ঘটনাটি পড়ে ভালো লেগেছে এবং তুমিও অন্যদের ভালো ও সেবা করার জন্য এগিয়ে আসবে। ত্যাগের শিক্ষা গল্পটি তোমার বন্ধুদের সাথেও শেয়ার করো।
For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.