স্ত্রী উদাসীন হলে স্বামীর করণীয়

প্রিয় পাঠক পাঠিকা, লেখকের আদর্শ স্বামী স্ত্রী ২ বইয়ের “স্ত্রী উদাসীন হলে, ঘরে কাজে স্ত্রীকে সাহায্য করা, হালাল টাকার দ্বারা স্ত্রীর ভরণ-পোষণ ও স্ত্রীকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা” আর্টিকেলগুলি এখানে একসাথে তুলে ধরেছি যাতে আপনারা এই আর্টিকেলগুলি সহজেই পড়তে পারেন। তাহলে চলুন পড়া শুরু করি…

৩১. আপনার স্ত্রী কি আপনার প্রতি উদাসীন?

কোনো কোনো লোককে  অনেক সময় আক্ষেপের সুরে বলতে শুনা যায় যে, ভাই! আমার স্ত্রী আমার সাথে দিনে যেমন দুর্ব্যবহার করে, রাতেও তেমন দুর্ব্যবহার করে। সে ভালোবাসা না দিতে জানে,  না নিতে জানে। আমার প্রতি সে সম্পূর্ণ উদাসীন। মানুষ বিয়ে করে শান্তি ও ভালোবাসার জন্য । সুতরাং এই শান্তি ও ভালোবাসাই যদি আমি নাই তবে কি বউ দিয়ে আমি ঘরের খুঁটি লাগাব?

প্রিয় ভাই! আপনার স্ত্রীর অবস্থা যদি এমন হয় যেমন উপরে বলা হলো, তাহলে আপনাকে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত শাসন পদ্ধতি অবলম্বনের পাশাপাশি আরো দুটি কাজ করতে হবে।

১। আপনার কোনো বন্ধু-বান্ধবের সাথে আপনার স্ত্রীকে যা চাই তা পর্দার আড়াল থেকেই হোক না কেন- কথা বলার কোনো সুযোগ দিবেন না। আর দেখা-সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়ার তো কোনো প্রশ্নই উঠেনা। কারন যখন আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে আপনার চেয়ে সাস্থ্যবান, সুন্দর, ফর্সা, স্মার্ট মিষ্টিভাষী বা বিত্তশালি কাউকে সে দেখবে, তখন তার মন খারাপ হবে। মনে মনে সে ভাববে, আহ, এই জীর্ণকায় ফকীরের সাথে আমার বিয়ে না হয়ে  যদি ঐ স্বাস্থ্যবান বিত্তশালী লোকটার সাথে হতো! তাহলে বেশ মজা হতো। জীবনটা কে তখন আচ্ছামত উপভোগ করতে পারতাম। সে আমার জন্য বেহিসাব খরচ করতে পারত।

তাছাড়া এর আরেকটি ক্ষতি এই যে, ঐ বন্ধু যখন কিছু কিনে আপনার বাড়ীতে নিয়ে আসবে তখন আপনার স্ত্রী হয়তো ভাববে, হা, লোকটার মন কত বড়! কত প্রশস্ত! আমাদের জন্য কত কি নিয়ে এসেছেন!!! দেওয়া-খাওয়াতে তার কোনো দ্বিধা নেই। আর আমার স্বামীর মন কতই না সংকীর্ণ !!

এসব ভাবতে ভাবতে  এক সময় আপনার উপর থেকে তার মন উঠে যাবে এবং সুযোগ পেলে বা ঐ বন্ধুর পক্ষ থেকে কোনো অফার আসলে তাতে হয়তো সে সাড়া দিবে এবং কোনো দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বসবে।

২। আপনাকে খুব ভালো করে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে, আপনার স্ত্রীর এমন কোনো বান্ধবী আছে কিনা কিংবা আপনার স্ত্রী এমন কোনো মহিলার সাথে মিশে কিনা যে, তার স্বামীকে মানে না, স্বামীর সাথে দুর্ব্যবহার করে এবং আপনার স্ত্রীকে বিভিন্ন প্রকার খারাপ পরামর্শ দেয়। যেমন, বলে যে-স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ী ও ননদকে সোজা করতে হলে, তাদের কে নাকে রশি বেঁধে মন মতো ঘুরাতে চাইলে এই এই কাজ তোমাকে করতে হবে, এই এই পথ তোমাকে অবলম্বন করতে হবে ইত্যাদি।

যদি খোঁজ নেওয়ার পর এমন কোনো মহিলা বা বান্ধবীর সন্ধান পান তাহলে যে কোনো মূল্যে ঐ কদাচারিণীর সংসর্গ থেকে আপনার স্ত্রীকে দূরে রাখুন। সেই সাথে দীনদার মেয়েদের সাথে তাকে মিশতে দিন এবং বেশি বেশি করে ধর্মীয় বই পুস্তুক পড়তে অভ্যস্ত করে তুলেন। বই নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে ধরণের ধর্মীয় বই তার কাছে ভালো লাগে সেগুলোই আগে পড়তে দিবেন। কারণ পড়তে ভালো না লাগলে বা পড়ে মজা না পেলে সে কোনো বই-ই পড়বে না। মোটকথা কৌশলের সাথে মাথা খাটিয়ে তাকে পথে আনার চেষ্টা করতে হবে। কী কারণে সে আপনার প্রতি উদাসীন ও বিরাগ ভাজন তা তালাশ করে বের করতে হবে এবং সে কারণ গুলো যথাসাধ্য দূর করার চেষ্টা করতে হবে।

আরও পড়ুন৩২. দৃষ্টি কেবল স্বীয় স্ত্রী মাহরাম নারীদের দিকেই নিবদ্ধ রাখুন

৩৩. ঘরের কাজে মাঝে মাঝে স্ত্রীকে সহযোগিতা করুণ।

আপনার তুলনায় আপনার স্ত্রীর কাজ সহজ সাধ্য হলেও তা যে গৃহকেন্দ্রিক, বৈচিত্র্যহীন ও নীরস তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সর্বক্ষণ তাকে ঘরের নির্দিষ্ট কিছু কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। তার বিরাম নেই, বিশ্রাম নেই, অবকাশ যাপনের সুযোগ নেই। একজন  নারী সাধারণতঃ রান্না-বান্না, ধোয়া-মোছা, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা- এককথায় গৃহকর্ম বলতে যা বুঝায় তার সব কিছুই করে থাকে। তাকে যেমন তার নিজের কাজ নিজেই করতে হয়, তেমনি ঘরে কোনো বয়স্ক লোক থাকলে তার সেবা শুশ্রুষাও তাকেই করতে হয়। সন্তানদের লালন-পালন , খাওয়া-পরা ও পরিস্কার – পরিচ্ছন্নতার কাজ তাকেই সারতে হয়। অনুরূপ ভাবে দুগ্ধপোষ্য শিশুকে দুধপান করাতে হয়, তাকে এটা ওটা খাওয়াতে হয়। তার সার্বক্ষণিক সেবায় তাকেই নিয়োজিত থাকতে হয়। এতে সামান্য অবহেলা মারাত্মক কোনো বিপদের কারন হয়ে দাঁড়াতে পারে। এসব কাজ সমাধা করতে গিয়ে একজন নারীকে সারাক্ষণ ব্যস্ততার মাঝে কাটাতে হয়। এ ব্যস্ততা তার নিত্যদিনের, সব সময়ের। এতে তার কোনো ছুটি নেই, এমনকি এখানে হরতাল কিংবা ধর্মঘটও নেই! পৃথিবীতে এই গৃহিণীর কাজ ছাড়া যত কাজ আছে সব কাজেই ছুটি ও অবকাশ যাপনের কোনো না কোনো ব্যবস্থা আছে। কিন্তু একজন গৃহিণীর গৃহকর্মের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তার কোনো ছুটি নেই, নেই অবকাশ যাপনের কোনো ব্যবস্থা।

উপরন্তু পুরুষের ছুটির দিনে গৃহিণীর ছুটি তো দূরের কথা, বরং সেদিন তার কর্ম ব্যস্ততা আরো বেড়ে যায়। কারন স্বামী সেদিন বাজার থেকে নানা জাতের তরী তরকারী নিয়ে আসেন। কোনো কোনো সময় স্ত্রীকে নতুন আইটেমের তরকারী রান্নার নির্দেশ দেন। তদুপরী এতসব কর্ম সমাধা করার পরও স্বামীকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য সেদিন কিছু সময় তাকে আলাদা করে রাখতে হয়। মেহমান আসলে মেহমানদারী করতে হয়।

সুতরাং স্ত্রীর ব্যস্ততার বিষয়টি মাথায় রেখে তার গৃহকর্মে সহায়তা করা স্বামীর একান্ত কর্তব্য । তরী-তরকারী কাটাকুটিতে, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতায় এবং ঘরের অন্য যে কোনো কাজে স্ত্রীকে সাহায্য করলে সে দারুণ খুশি হয়, কাজে উদ্যমতা ফিরে পায়, মন প্রফুল্ল হয়। ফলে স্বামী – স্ত্রীর মধুর সম্পর্ক মধুর থেকে আরো মধুরতর হয়। ঘনিষ্ঠতা ও আন্তরিকতা আরো বৃদ্ধি পায় এবং এমন স্বামীর জন্য স্ত্রী যে কোনো খেদমত আঞ্জাম দিতে সর্বদা প্রস্তুত থাকে।   

৩৪. স্ত্রীর ভরণ-পোষণ হালাল উপার্জন দ্বারা করুণ।

স্ত্রীর ভরণ-পোষণ দেওয়া স্বামীর দ্বায়িত্ব । এটা যে স্বামীর দায়িত্ব তা আমরা সবাই জানি ও বুঝি। কিন্তু আমরা অনেকে জানি না যে, হালাল উপার্জন দ্বারা ভরণ-পোষণ না দিলে এ দায়িত্ব আদায় হবে না। হালাল জীবিকা দ্বারা স্ত্রীর ভরণ-পোষণ করতে হবে না। এর অন্যথা হলে আপনাকে দুই প্রকার গোনাহের ভাগী হতে হবে। এক প্রকার হলো, স্ত্রীর ভরণ-পোষণের যে দায়িত্ব ছিল, হারাম উপার্জন দ্বারা ভরণ-পোষণ দিলে সে দায়িত্ব আদায় হবে না। কাজেই দায়িত্ব পালন না করার গোনাহ হবে। দ্বিতীয় প্রকার গোনাহ হলো, হারাম উপার্জন করার গোনাহ। কাজেই স্ত্রী ও পরিবারের চাহিদা মেটানোর জন্য, তাদের নানাবিধ দাবী পূরণের জন্য অবৈধ উপায়ে টাকা কামাই করার কোনো সুযোগ নেই। শরীয়ত কোনোভাবেই তার অনুমতি দেয় না। যদি আপনার স্বচ্ছলতা না থাকে তাহলে তাদের সব বৈধ দাবীও পূরণ করা আপনার উপর জরুরী নয়। বরং যথোপুযুক্ত চেষ্টার পর যতুটুকু আপনি কামাই করতে পারেন এবং তা দিয়ে পরিবারের ব্যয় যেরূপ নির্বাহ করতে পারেন, ততটুকু  করলেই আপনি দায়িত্ব মুক্ত হয়ে যাবেন। যেমন পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ পাক বলেন, যার স্বচ্ছলতা যেমন সে তেমন ব্যয় করবে। আর যার জীবিকা সীমিত, তাকে আল্লাহ পাক যতুটুকু যতটুকু সামর্থ্য দিয়েছেন ততটুকুই ব্যয় করবে। আল্লাহ পাক কাউকে যা দিয়েছেন, তার বাইরে কোনো চাপ দেন না। [সূরাঃ তালাক, আয়াত ৭।

বাস্তবে দেখা যায় যে, সাধারণ ভাবে পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু দেয়ার সাধ্য আল্লাহ পাক দিয়েই থাকেন। এমন খুব  কম দেখা যায় যে, কেউ হালাল পথে থাকলে এবং আল্লাহর কাছে চাইলে আল্লাহ পাক তাকে একেবারেই অক্ষম করে রাখেন। হ্যাঁ, প্রয়োজনের বাইরে ডজন ডজন শাড়ী দিতে হবে, দশ-পনেরটা থ্রীপিছ থাকতে হবে, নানারকম অলঙ্কারদি দিতে হবে, এতটা নাও হতে পারে। যারা হালাল উপায়ে চলতে চায় তাদের অধিকাংশের বেলায়ই দেখা যায় যে, আল্লাহ পাক তাদেরকে দুনিয়াতে মোটামুটি চালিয়ে নেন। তাদের কে তিনি খুব বেশি একটা সম্পদ দেন না। বরং তাদের জন্য আখেরাতেই সব জমা রাখেন। তবে দু’চারজন যে ব্যতিক্রম থাকে না তা নয়। আল্লাহ পাক তাদেরকে দুনিয়াতেও অনেক সম্পদ দিয়ে থাকেন।

উল্লেখিত আলোচনা থেকে একটি বিষয় পরিস্কার যে, যেহেতু স্ত্রীর প্রয়োজনের অতিরিক্ত দাবী পূরণ  করা স্বামীর দায়িত্ব নয়, তাই স্ত্রীর জন্যও এটা বৈধ নয় যে, সে তার স্বামীকে অতিরিক্ত প্রয়োজন পূরণ না করার কারণে কোনো কটু কথা বলবে বা লজ্জা দিবে । আল্লাহপাক নারী-পুরুষ সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব ঠিকঠিক মতো আদায় করার তাওফীক দান করুণ। আমীন।   

৩৫. স্ত্রী ও অন্যান্যদের সাথে পরামর্শ করে কাজ করুণ।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেছেন, তোমরা বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ করো। আর (পরামর্শ করার পর) যখন কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলো তখন আল্লাহর উপর ভরসা করো। [সূরাঃ আল ইমরান, আয়াত আ৫৯]

পরামর্শ করে কাজ করলে ঐ কাজের মধ্যে আয়ের-বরকত হয় এবং মহান আল্লাহ পক্ষে থেকে সাহায্য সহযোগিতা ও মদদ পাওয়া যায়। উপরন্ত পরামর্শ করে কাজ করার প্রিয়নবী (সাঃ) এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নতও বটে।  তাই দাম্পত্য ও পারিবারিক জীবনসহ জীবনের সকল অঙ্গনে প্রয়োজনীয় সব বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে পরামর্শ করা উচিৎ।

কিন্তু দুঃখজনক হলে সত্য তা যে, কোনো কোনো লোক সব সময় নিজের মতকে সঠিক এবং অন্যের মতকে গুরুত্বহীন মনে করে। ফলে সে অন্যের কাছ থেকে কোনো পরামর্শ নেয় না, অন্যদেরকে কিছু জিজ্ঞেস করে না, জিজ্ঞেস করারও প্রয়োজন বোধ করে না। এমনকি না করে স্বীয় স্ত্রীকেও পরামর্শ দেওয়ার ব্যাপারে অযোগ্য মনে করে। এটি কোনোক্রমেই উচিৎ নয়।

বস্তুতঃ উল্লেখিত মনোভাবেরে লোকগুলো যদি পরামর্শ না করার ক্ষতি ও লোকসান সম্পর্কে অবগত থাকত তাহলে কোনোদিন তারা পরামর্শ না করে কোনো কাজ করত না। আর কারো সাথে না হোক, অন্তত স্ত্রীর সাথে তো অবশ্যই পরামর্শ করত।

পরামর্শ না করার সবচেয়ে বড় ক্ষতি হলো, যে কাজটি পরামর্শ ছাড়া করা হয় সফলতা ও ব্যর্থতার সব-দায়িত্ব তার একার ঘাড়েই পতিত হয়। আর এই সফলতা কিংবা ব্যর্থতা উভয়টিই তার জন্য ক্ষতির কারণ হয়। কেননা সফল হলে সে সফলতার আনন্দে অনেক সময় অহঙ্কারী ও দাম্ভিক হয়ে উঠে। পক্ষান্তরে ব্যর্থ হলে সেই ব্যর্থতার গ্লানিত একাই সে ভোগে। সফলতার কারণে অহঙ্কার ও গর্ব করা যেমন ক্ষতিকর তেমন ব্যর্থতার কারণে সৃষ্টি হীনমন্যতাও ক্ষতিকর। পক্ষান্তরে অন্যের সাথে পরামর্শ করা হলে কাজটির সফলতার অংশীদার সকলেই হয়। আবার ব্যর্থ হলে কারো একার ঘাড়ে সর্বদোষ চাপে না বলে কারো মনে পরাজয়ের মনোভাব ও ব্যর্থতার গ্লানি জাগে না।

দাম্পত্য জীবনে পরামর্শ করে কাজ করা খুবই প্রয়োজন। কেননা স্বামী-স্ত্রী পরামর্শ করে কাজ করলে সেই কাজ সুচারুরূপে সম্পন্ন হয়। উভয়ে তখন নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থাকে এবং সক্রিয়ভাবে কাজে অংশগ্রহন করে। এর ফলে স্ত্রীর মনে কখনো বঞ্চনার অনুভূতি জাগ্রত হয় না। সে মনে করে না যে, দাম্পত্য জীবনে সে অবজ্ঞা ও অবহেলার শিকার হয়েছে। বরং নিজের অবস্থানে থেকে সেও একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত বলে মনে করে। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে পরামর্শ নামক অতীব গুরুত্ব পূর্ণ সুন্নতটির উপর আমল করার তাওফীক দান করুণ। আমীন।

৩৬. যাকে পেয়েছেন তাকে নিয়েই সন্তুষ্ট থাকুন।

কোনো কোনো স্বামী একথা ভেবে মনে মনে সীমাহীন কষ্ট অনুভব করেন যে, আমার পিতা-মাতা আমার বিয়ের ক্ষেত্রে মারাত্মক ভুল করেছেন। তারা আমার জন্য উপযুক্ত স্ত্রী নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাদের ভুলের কারণেই যেরূপ সুন্দরী-রূপসী নারী আমার জীবনে আসার কথা ছিল তা আমি পাইনি। মেয়ে দেখার সময় আমার মা ১১ নম্বর চশমা পড়েছিলেন কিংবা তার চোখে ছানি পড়েছিল। নইলে আমার মতো যোগত্যা  সম্পন্ন রাজপুত্রের জীবনে এমন শ্রীহীন নারী আসবে কেন? অথচ দেখতে অসুন্দর ও কম যোগত্যা সম্পন্ন অমুক ছেলেটি কেনো সুন্দরী মেয়ে পেয়েছে! দেখলে মনে হয় রাজরানী!

কেউ কেউ আবার ঘটক কিংবা অন্য কাউকে এর জন্য দায়ী করে। বলে- ওর কারণেই আজ আমাকে এমন অসুন্দরী নারী নিয়ে ঘর-সংসার করতে হচ্ছে। ও যদি আমার বিয়ের ব্যাপারে নাক না গলাত তাহলে কখনোই এমনটি হতো না ইত্যাদি।

এ ব্যাপারে আমার কথা হলো, স্ত্রীর ব্যাপারে অন্যকে দোষারোপ করা মোটেই ঠিক নয়। কেননা কার স্ত্রী কে হবে, কার সাথে কার জোড়া-সেটা বহু আগেই আল্লাহ পাক নির্ধারণ করে রেখেছেন। যা কোনোভাবেই পরিবর্তন হওয়ার নয়। মনে রাখা উচিৎ, আল্লাহ পাকের লেখার বাইরে কিছুই হয় না। তিনি যা যার জন্য যে স্ত্রী ঠিক করেছেন, সে-ই তার জীবন সঙ্গিনী হবে, সে-ই তার স্ত্রী হবে, অন্য কেউ নয়। এখানে পিতা-মাতা,  ঘটক কিংবা অন্য কারো কোনো হাত নেই। তাই তারা যদি এই বিয়ের ব্যাপারে কোনো ধরণের চেষ্টা তদবীর না-ও করতেন, কিংবা সেই বিয়ের ব্যাপারে কিছু না-ও জানতেন তবু কোনো না কোনোভাবে এই মেয়েটিই তার জীবনে স্ত্রী হিসেবে আগমন করত। সুতরাং অন্যের উপর দোষ না চাপিয়ে আল্লাহ পাক যার কিসমতে যা লিখে রেখেছেন তাকে পেয়েই খুশি হওয়া উচিৎ। তবে  সান্ত্বনার কথা হলো, বেহেশ্তের মধ্যে এই অসুন্দর স্ত্রীকেই হুরের চেয়ে অধিক সুন্দরী বানিয়ে দেওয়া হবে; যদি সে সবর করতে পারে।

ভাই! দুনিয়াতে এ জিন্দেগী তো মাত্র কয়েক দিনের। তাই সমস্ত স্বাদ ও মজা এখানেই উপভোগ করতে চাইবেন না। আপনি হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন, অমুককে তাহলে সুন্দরী স্ত্রীর দেওয়া হলো কেন? আমাকে দেওয়া হলো না কেন? আমি কি দোষ করেছি। হ্যাঁ ভাই, আপনি কোনো দোষ করেননি। তারপরেও আপনাকে অসুন্দরী স্ত্রী এজন্যে দেওয়া হয়েছে যে, আপনি এ স্ত্রী পেয়েই সবর করবেন, ধৈর্যধারণ করবেন,  আর আল্লাহ পাক আপনাকে এই সবরের বিনিময়ে  ঐ সুন্দরী স্ত্রী প্রাপ্ত লোকটির তুলনায় বেহেশতের মধ্যে অনেক বেশি নেওয়ামত ও অনেক সুন্দরী হুর দান করবেন। আর ঐ লোকটি সুন্দরী হুর পেলেও আপনার মতো সুন্দরী হুর পাবে না। কেননা সে তো সুন্দরী স্ত্রীর নেয়ামত দুনিয়ায়তেই ভোগ করে এসেছে। মোটকথা, আপনার দুনিয়ার কমতিটুকু বেহেশতের মধ্যে পুষিয়ে দেওয়া হবে। অবশ্য একথা শুধু স্ত্রীর বেলায় নয়, দুনিয়াতে আপনি যে কোনো খারাপ অবস্থায়ই থাকুন না কেন, আপনি যদি এটাকে খোদায়ী ফয়সালা মনে করে উহার উপর ধৈর্যধারণ করতে পারেন তাহলে আল্লাহ পাক আখেরাতে আপনাকে অবশ্যই এর প্রতিদান দিবেন। সুতরাং আপনি কোনো বিষয়ে ঠকে গিয়েছেন, এমন ভাবার কোনো কারণ নেই।

যা হোক আমি বলছিলাম, দুনিয়ার অল্পদিনের জীবনের কথা। এ জীবন সুখে কাটুক বা দুঃখে কাটুক একদিন তা শেষ হয়েই যাবে। দুনিয়ার জীবনটাই একটা রেলষ্টেশনের সাথে তুলনা করা যায়। সফরের সময় রেলষ্টেশনে ভালো চা পাওয়া না গেলে লোকে যেমন বল, আরে ভাই! গরম – ঠান্ডা যা পেয়েছেন তাই পান করে নাও। সর্দি-কাশি দমনের কাজ তো কিছু করবে। বাড়িতে গিয়ে ভালো চা পান করো।

ঠিক তদ্রুপ দুনিয়াটা একটা রেল ষ্টেশন । এখানে যেমন স্ত্রী-ই পেয়েছেন তাকে নিয়েই জীবন কাটিয়ে দিন। এমন যেন অবশ্যই না হয় যে, স্ত্রী কম সুন্দরী হওয়ার দরুণ সর্বদা তাকে খোঁটা দিচ্ছেন, তিরস্কার করছেন, বিভিন্নভাবে তাকে নির্যাতন করছেন। আপনি একটু চিন্তা করে বুকে হাত রেখে বলুন তো, যদি আপনার মেয়ে কম সুন্দর হতো তবে আপনি কি কামনা করতেন? আপনি কি তখন এটা পছন্দ করতেন যে, আপনার মেয়ের উপর জামাতা নির্যাতন করুক? মারধর করুক। ডান্ডা মারুক বা গালি-গালাজ করুক? এবং এরূপে বলুক, এটা আমার কপালের লিখন যে, তোর মতো মেয়ে আমার ভাগ্য জুটেছে?

প্রিয় ভাই! আপনি যেমন আপনার মেয়ের বেলায় এমনটি চান না, তাহলে আপনার স্ত্রীও  তো অন্য কারোর মেয়ে। যিনি তার মেয়ের ব্যাপারে কখনোই এমনটি কামনা করেন না। সুতরাং আপনার উচিৎ এসব কথা মনে রেখে যেমন স্ত্রী-ই পেয়েছেন তাকে নিয়েই সন্তুষ্ট থাকা এবং তার সাথে সদাচরণ করা; কম সুন্দর কিংবা কম যোগ্যতাসম্পন্ন হওয়ার কারণে তার সাথে অসদ্ব্যবহার না করা। আল্লাহ পাক আমাদের সুমতি দিন এবং স্ত্রীর সাথে  ভালো ও সুন্দর আচরণ করার তাওফীক দান করুণ। আমীন।।   

লেখক : মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম। 

এরপর পড়ুন : এই গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলি স্মরণে রাখুন

For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.

Leave a Comment