সমকাম! ইসলামে সমকামের শাস্তি

সমকাম বা পায়ুসঙ্গম কি? কোরআন ও হাদিসের আলোকে সমকাম ও পায়ুসঙ্গম সম্পর্কিত তথ্য জ্ঞানমূলক ও ইসলামের নীতি আদর্শ সম্পর্কে জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন। সম্মানিত লেখক সমকামের অপকার ও তাঁর ভয়াবহতা, সমকামের শাস্তি, সমকামের চিকিৎসা, রোগাক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা গুলি এই নিবন্ধনে তুলে ধরেছেন। 

সমকাম বা পায়ুগমন!

সমকাম বা পায়ুগমন বলতে পুরুষে পুরুষে একে অপরের মলদ্বার ব্যবহারের মাধ্যমে নিজ যৌন উত্তেজনা নিবারণ করাকেই বুঝানো হয়।

সমকাম একটি মারাত্মক গুনাহ’র কাজ। যার ভয়াবহতা কুফরের পরই। হত্যার চাইতেও মারাত্মক। বিশ্বে সর্বপ্রথম লূত্ব  (আঃ) এর সম্প্রদায় এ কাজে লিপ্ত হয় এবং আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে এমন শাস্তি প্রদান করেন যা ইতিপূর্বে কাউকে প্রদান করেননি। তিনি তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছেন। তাদের ঘরবাড়ী তাদের উপরই উল্টিয়ে দিয়ে ভূমিতে তলিয়ে দিয়েছেন। অতঃপর আকাশ থেকে পাথর বর্ষণ করেছেন।

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

“আর আমি লূত্ব (আঃ) কে নবুওয়াত দিয়ে পাঠিয়েছি। যিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেনঃ তোমরা কি এমন মারাত্মক অশ্লীল কাজ করছো যা ইতিপূর্বে বিশ্বের আর কেউ করেনি। তোমরা স্ত্রীলোকদেরকে বাদ দিয়ে পুরুষ ইতিপূর্বে বিশ্বের আর কেউ করেনি। তোমরা স্ত্রীলোকদেরকে বাদ দিয়ে পুরুষ কর্তৃক যৌন উত্তেজনা নিবারণ করছো। প্রকৃতপক্ষে তোমরা হচ্ছো সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়। (আ’রাফ : ৮০-৮১)

আল্লাহ তা’আলা উক্ত কাজকে অত্যন্ত নোংরা কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেনঃ 

“আর আমি লূত্ব (আ) কে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়েছি এবং তাঁকে উদ্ধার করেছি এমন জনপদ থেকে যারা নোংরা কাজ করতো। মূলতঃ তারা ছিলো নিকৃষ্ট প্রকৃতির ফাসিক সম্প্রদায়। (আম্বিয়া : ৭৪)

আল্লাহ তা’আলা অন্য আয়াতে সমকামীদেরকে যালিম বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেনঃ

“ফেরেশতারা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে বললেনঃ আমরা এ জনপদবাসীদেরকে ধ্বংস করে দেবো। এর অধিবাসীরা নিশ্চয়ই জালিম। ( আনকাবূত : ৩১)

হযরত লূত্ব (আঃ) এদেরকে বিশৃঙ্খল জাতি হিসেবে উল্লেখ করেন। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

“হযরত লূত্ব (আঃ) বললেনঃ হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে এ বিপর্যয় সৃষ্টিকারী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাহায্য করুণ। (আনকাবূত : ৩০)

হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তাদের ক্ষমার জন্য জোর সুপারিশ করলেও তা শুনা হয়নি। বরং তাঁকে বলা হয়েছেঃ

“হে ইব্রাহীম! এ ব্যাপারে আর একটি কথাও বলো না। (তাদের ধ্বংসের ব্যাপারে) তোমার প্রভুর ফরমান এসে গেছে এবং তাদের উপর এমন এক শাস্তি আসছে যা কিছুতেই টলবার মতো নয়। ( হুদ : ৭৬)

যখন তাদের শাস্তি নিশ্চিত হয়ে গেলো এবং তা ভোরে ভোরেই আসবে বলে লূত্ব (আঃ) কে জানিয়ে দেয়া হলো তখন তিনি তা দেরী হয়ে যাচ্ছে বলে আপত্তি জানালে তাঁকে বলা হলোঃ

“সকাল কি অতি নিকটেই নয়?! কিংবা সকাল হতে কি এতই দেরী?! ( হুদ : ৮১)

আল্লাহ তা’আলা  লূত্ব (আঃ) এর সম্প্রদায়ের শাস্তির ব্যাপারে বলেনঃ

“অতঃপর যখন আমার ফরমান জারি হলো তখন ভূ-খন্ডটির উপরিভাগকে নিচু করে দিলাম এবং ওর উপর ঝামা পাথর বর্ষণ করতে লাগলাম, যা ছিল একাধারে এবং যা বিশেষভাবে চিহ্নিত ছিলো তোমার প্রভুর ভাণ্ডারে। আর উক্ত জনপদটি এ যালিমদের থেকে বেশি দূরে নয়। (হুদ : ৮২-৮৩)

আল্লাহ তা’আলা অন্য আয়াতে বলেনঃ

“অতঃপর তাদেরকে সূর্যোদয়ের সকয়ই এক বিকট আওয়াজ পাকড়াও করলো। এরপরই আমি জনপদটিকে উল্টিয়ে উপর—নীচ করে দিলাম এবং তাদের উপর ঝামা পাথর বর্ষণ করলাম। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে পর্যবেক্ষণশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য। আর উক্ত জনপদটি (উহার ধ্বংস স্তুপ) স্থায়ী (বহু প্রাচীন) লোক চলাচলের পথি পার্শ্বেই এখনও বিদ্যমান। অবশ্যই এতে রয়েছে মু’মিনদের জন্য নিশ্চিত নিদর্শন। (হুদ : ৭৩-৭৭)

হযরত ‘আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ

“আল্লাহ তা’আলা সমকামীকে লা’নত করেন। আল্লাহ তা’আলা সমকামীকে লা’নত করেন। আল্লাহ তা’আলা সমকামীকে লা’নত করেন। (আহমাদ—হাদিস নং ২৯১৫, ইবনু হিব্বান-হাদীস নং ৪৪১৭, বায়হাক্বী—হাদীস ৭৩৩৭,১৬৭৯৪ ত্বাবারানী/কাবীর, হাদীস ১১৫৪৬ আবু ইয়া’লা, হাদীস ২৫৩৯ ‘আব্দুবনু’ হুমাইদ, হাদীস ৫৮৯ হা’কিম ৪/৩৫৬)

হযরত আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ

“সমকামীরাই অভিশপ্ত। সমকামীরাই অভিশপ্ত।সমকামীরাই অভিশপ্ত।( সহীহুত—তারগীবি ওয়াত—তারহীব, হাদীস ২৪২০)

বর্তমান যুগে সমকামের বহুল প্রচার ও প্রসারের কথা কানে আসতেই রাসূল (সাঃ) এর সে ভবিষ্যদ্বাণীর কথা স্মরণ এসে যায় যাতে তিনি বলেনঃ

“আমার উম্মতের উপর সমকামেরই বেশি আশঙ্কা করছি। (তিরমিযী, হাদীস ১৪৫৭ ইবনু মাজাহ, হাদীস ২৬১১ আহমাদ ২/৩৮২, সহীহুত তারগীবি ওয়াত-তারহীর, হাদীস ২৪১৭)

হযরত ফুযাইল ইবনু ইয়ায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ

“কোন সমকামী ব্যক্তি আকাশের সমস্ত পানি দিয়ে গোসল করলেও সে আল্লাহ তা’আলার সাথে অপবিত্রাবস্থায় সাক্ষাৎ করবে।( দূরী/যম্মুললিওয়াত্ব : ১৪২)

সমকামের অপকার ও তাঁর ভয়াবহতা!

সমককামের মধ্যে এতো বেশি ক্ষতি ও অপকার নিহিত রয়েছে যার সঠিক গণনা সত্যিই দুষ্কর। যা ব্যক্তি ও সমষ্টি পর্যায়ের এবং দুনিয়া ও আখিরাত সম্পর্কীয়। যার কিয়দংশ নিম্নরূপঃ

ধর্মীয় অপকার সমূহঃ

প্রথমতঃ তা কবীরা গুনাহ সমূহের একটি। তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অনেক অনেক নেক আমল থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। এমনকি তা যে কারোর তাওহীদ বিনষ্টে বিশেষ ভূমিকা রাখে। আর তা এভাবে যে, এ নেশায় পড়ে শ্মশ্রুবিহীন ছেলেদের সাথে ধীরে ধীরে ভালোবাসা জন্ম নেয়। আর তা একদা তাকে শির্ক পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়। কখনো ব্যাপারটি এমন পর্যায়ে দাঁড়ায় যে, সে ধীরে ধীরে অশ্লীলতাকে ভালোবেসে ফেলে এবং সাধুতাকে ঘৃণা করে। তখন সে হালাল মনে করেই সহজভাবে উক্ত কর্মতৎপরতা চালিয়ে যায়। তখন সে কাফির ও মুরতাদ হতে বাধ্য হয়। এ কারণেই বাস্তবে দেখা যায় যে, যে যত বেশি শিরকের দিকে ধাবিত সে তত বেশি এ কাজে লিপ্ত। তাই লুত্ব সম্প্রদায়ের মুশরিকরাই এ কাজে সর্ব প্রথম লিপ্ত হয়।

এ কথা সবারই জানা উচিৎ যে, শিরক ও ইশক্ব পরস্পর অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আর ব্যভিচার ও সমকামের পূর্ণ মজা তখনই অনুভূত হয় যখন এর সাথে ইশক্ব জড়িত হয়। তবে এ চরিত্রের লোকদের ভালোবাসা এক জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে না। বরং তা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবর্তনশীল। আর তা একমাত্র শিকারের পরিবর্তনের কারণেই হয়ে থাকে।

চারিত্রিক অপকার সমূহঃ

প্রথমতঃ সমকামই হচ্ছে চারিত্রিক এক অধঃপতন। স্বাভাবিকতা বিরুদ্ধ। এরই কারণে লজ্জা কমে যায়, মুখ হয় অশ্লীল এবং অন্তর হয় কঠিন, অন্যদের প্রতি দয়া—মায়া সম্পূর্ণ রূপে নিঃশেষ হয়ে একেবারেই তা এককেন্দ্রিক হয়ে যায়, পুরুষত্ব ও মানবতা বিলুপ্ত হয়, সাহসিকতা, সম্মান ও আত্মমর্যাদাবোধ বিনষ্ট হয়। নির্যাতন ও অঘটন ঘটাতে তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সাহসী করে তোলে। উচ্চ মানসিকতা বিনষ্ট করে দেয় এবং তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বেকুব বানিয়ে তোলে। তাঁর উপর থেকে মানুষের আস্থা কমে যায়। তাঁর দিকে মানুষ খিয়ানতের সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকায়। উক্ত ব্যক্তি ধর্মীয় জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হয় এবং উত্তরোত্তর সার্বিক উন্নতি থেকে ক্রমান্বয়ে পিছে পড়ে যায়।

মানসিক অপকার সমূহঃ

উক্ত কর্মের অনেকগুলো মানসিক অপকার রয়েছে যা নিম্নরূপঃ

১. অস্থিরতা ও ভয়—ভীতি অধিক হারে বেড়ে যায়। কারণ, আল্লাহ তা’আলার আনুগত্যের মধ্যেই রয়েছে সার্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা। যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহ তা’আলাকেই ভয় করবে আল্লাহ তা’আলা তাকে অন্য সকল ভয় থেকে মুক্ত রাখবেন। আর যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করবে না তাকে সকল ভয় এমনিতেই ঘিরে রাখবে। কারণ, শাস্তি কাজ্জের অনুরূপ হওয়াই শ্রেয়।

২. মানসিক বিশৃঙ্খলতা ও মনের অশান্তি তাঁর নিকট প্রকট হয়ে দেখা দেয়। এ হচ্ছে আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে সে ব্যক্তির জন্য নগদ শাস্তি যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহ তা’আলা ছাড়া অন্যকে ভালোবাসবে। আর এ সম্পর্ক যতই ঘনিষ্ট হবে মনের অশান্তি ততই বেড়ে যাবে।

আল্লামাহ ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ কথা সবারই জানা উচিৎ যে, কেউ কাউকে ভালোবাসলে (যে ভালোবাসা একমাত্র আল্লাহ তা’আলার জন্য নয়) সে প্রিয়্য ব্যক্তি অবশ্যই তাঁর অরেমিকের ক্ষতি সাধন করবে এবং এ ভালোবাসা অবশ্যই প্রেমিকের যে কোন ধরনের শাস্তির কারণ হবে।

৩. এ ছাড়াও উতক অবৈধ সম্পর্ক অনেক ধরনের মানসিক রোগের জন্ম দেয় যা বর্ণনাতীত । যার দরুন তাদের জীবনের স্বাদ একেবারেই নিঃশেষ হয়ে যায়।

৪. এ জাতীয় লোকেরা একাকী থাকাকেই বেশি ভালোবাসে এবং তাদের একান্ত শিকার অথবা উক্ত কাজের সহযোগী ছাড়া অন্য কারোর সাথে এরা একেবারেই মিশতে চায় না।

৫. স্বকীয়াতা ও ব্যক্তিত্বহীনতা জন্ম নেয়। মেযাজ পরিবর্তন হয়ে যায়। যে কোন কাজে এরা স্থির সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।

৬. নিজের মধ্যে পরাজয় ভাব জন্ম নেয়। নিজের উপর এরা কোন ব্যাপারেই আস্থাশীল হতে পারে না।

৭. নিজের মধ্যে এক জাতীয় পাপ বোধ জন্ম নেয়। যার দরুন সে মনে করে সবাই আমার ব্যাপারটা জেনে ফেলেছে। সুতরাং মানুষের ব্যাপারে তাঁর একটা খারাপ ধারণা জন্ম নেয়।

৮. এ জাতীয় লোকদের মাঝে হরেক রকমের  ওয়াসওয়াসা ও অমূলক চিন্তা জন্ম নেয়। এমনকি ধীরে ধীরে সে পাগলের রূপ ধারণ করে।

৯. এ জাতীয় লোক ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণহীন যৌন তাড়নায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে। সদা সর্বদা সে যৌন চেতনা নিয়েই ব্যস্ত থাকে।

১০. মানসিক টানাপড়েন ও বেপরোয়াভাব এদের মধ্যে এজন্ম নেয়।

১১. বিরক্তি ভাব, নিরাশা, কুলক্ষুণে ভাব, আহাস্মকি জযবাও এদের মধ্যে জন্ম নেয়।

১২. এদের দেহের কোষ সমূহের উপরও এর বিরাট একটা প্রভাব রয়েছে। যার দরুন এ ধরণের লোকেরা নিজকে পুরুষ বলে মনে করে না। এ কারণেই এদের কাউ কাউকে মহিলাদের সাজ—সজ্জা গ্রহণ করতেও দেখা যায়।

শারীরিক অপকার সমূহঃ

শারীরিক ক্ষতির কথা তো বলাই বাহুল্য। কারণ, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান কিছু দিন পর পরই এ সংক্রান্ত নতুন নতুন রোগ আবিস্কার করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা কোন একটি রোগের উপযুক্ত ওষুধ খুঁজতে খুঁজতেই দেখা যায় নতুন আরেকটা রোগ আবিস্কৃত হয়ে গেছে। এই হচ্ছে রাসূল (সাঃ) এর ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যিকার ফলাফল।

হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ

“কোন সম্প্রদায়ের মাঝে ব্যভিচার তথা অশ্লীলতা প্রকাশ্যে ছড়িয়ে পড়লে তাদের মধ্যে অবশ্যই মহামারি ও বহু প্রকারের রোগ—ব্যাধি ছড়িয়ে পড়বে যা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে ছিলো না। সুতরাং ব্যাধিগুলো নিম্নরূপঃ

১. নিজ স্ত্রীর প্রতি ধীরে ধীরে অনীহা জন্ম নেয়।

২. লিঙ্গের কোষগুলো একেবারেই ঢিলে হয়ে যায়। যদ্দরুন পেশাব ও বীর্যপাতের উপর কোন নিয়ন্ত্রণই থাকে না।

৩. এ জাতীয় লোকেরা টাইফয়েড এবং ডিসেন্ট্রিয়া রোগেও আক্রান্ত হয়।

৪. এরই ফলে সিফিলিস রোগেরও বিশেষ প্রাদুর্ভাব ঘটে। লিঙ্গ অথবা রোগীর হৃদপিণ্ড, আতঁ, পাকস্থলী, ফুসফুস ও অণ্ডকোষের ঘা এর মাধ্যমেই এ রোগের শুরু। এমনকি পরিশেষে তা অনগ বিকৃতি, অন্ধত্ব, জিহ্বা’র ক্যান্সার এবং অঙ্গহানীর বিশেষ কারণও হয়ে দাঁড়ায়। এটি ডাক্তারদের ধারণায় একটি দ্রুত সংক্রামক ব্যাধি।

৫. কখনো কখনো এরা গনোরিয়ায়ও আক্রান্ত হয় এবং এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা সাধারণতঃ একটু বেশি। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়, ১৯৭৫ সালে উক্ত রোগে প্রায় পঁচিশ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়। বর্তমানে ধারণা করা হয়, এ জাতীয় রোগীর হার বছরে বিশ থেকে পঞ্চাশ কোটি। যার অধিকাংশই যুবক।

এজাতীয় রোগে প্রথমত লিঙ্গে এক ধরনের জ্বলন সৃষ্টি হয়। এরই পাশাপাশি তাতে বিশ্রী পুঁজও জন্ম নেয়। এটি বন্ধ্যত্বের একটি বিশেষ কারণও বটে। এরই কারণে ধীরে ধীরে প্রস্রাবের রাস্তাও বন্ধ হয়ে যায়। প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়। উক্ত জ্বলনের কারণে ধীরে ধীরে লিঙ্গাগ্রের ছিদ্রের আশপাশে লাল হয়ে যায়। পরিশেষে সে জ্বলন মুত্রথলী পর্যন্ত পৌঁছোয়। তখন মাথা ব্যথা, জ্বর ইত্যাদি শুরু হয়ে যায়। এমনকি এর প্রতিক্রিয়া শরীরের রক্তে পৌঁছুলে তখন হৃদপণ্ডে জ্বলন সৃষ্টি হয়। আরো কত্তো কী?

৬. হেরপেস রোগও এ সংক্রান্ত একটি অন্যতম ব্যাধি। আমেরিকার স্বাস্থ্য মন্ত্রালয়ের একটি রিপোর্টে বলা হয়, হেরপেসের এখনো কোন চিকিৎসা উদ্ভাবিত হয়নি এবং এটি ক্যান্সার চাইতেও মারাত্মক। শুধু আমেরিকাতেই এ রোগীর হার বছরে দু’কোটি এবং ব্রিটিনে এক লক্ষ।

এরোগ হলে প্রথমে লিঙ্গাগ্রে চুলকানি অনুভূত হয়। অতঃপর চুলকানির জায়গায় লা ধরনের ফোসকা জাতীয় কিছু দেখা দেয় যা দ্রুত বড় হয়ে পুরো  লিঙ্গে এবং যার সাথে সমকাম করা হয় তাঁর গুহ্যদ্বারে ছড়িয়ে পড়ে। এগুলোর ব্যথা খুবই চরম এবং এগুলো ফেটে গিয়ে পরিশেষে সেস্থানে জ্বলন ও পুঁজ সৃষ্টি হয়। কিছু দিন পর রান ও নাভির নীচের অংশও ভীষণভাবে জ্বলতে থাকে। এমনকি তা পুরো শরীরেও ছড়িয়ে পড়ে এবং তাঁর মগজ পর্যন্তও পৌঁছোয়। এ রোগের শারীরিক ক্ষতির চাইতেও মানসিক ক্ষতি অনেক বেশী।

৭. এইডসও এ সংক্রান্ত একটি অন্যতম রোগ। এ রোগের ভয়ঙ্করতা নিম্নের ব্যাপার গুলো থেকে একেবারেই সুস্পষ্ট হয়ে যায়ঃ

ক. এ রোগে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি।

খ. এ রোগ খুবই অস্পষ্ট। যার দরুন এ সংক্রান্ত প্রশ্ন অনেক বেশি। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা সেগুলোর তেমন আশানুরূপ উত্তর দিতে পারছেন না।

গ. এ রোগের চিকিৎসা একাবারেই নেই অথবা থাকলেও তা অতি স্বল্প মাত্রা।

ঘ. এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে।

এইডসের কারণে মানুষের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই দুর্বল হয়ে পড়ে। যার দরুন যে কোন ছোট রোগও তাকে সহজে কাবু করে ফেলে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এ রোগে আক্রান্ত শতকরা ৯৫ জনই সমকামী এবং এ রোগে আক্রান্তদের শতকরা ৯০ জনই তিন বছরের মধ্যে মৃত্যু বরণ করে।

৮. এ জাতীয় লোকেরা “ভালোবাসার ভাইরাস” অথবা “ভালোবাসার রোগ” নামক নতুন ব্যাধিতেও কখনো কখনো আক্রান্ত হয়। তবে এটি এইডস চাইতেও অনেক ভয়ানক। এ রোগের তুলনায় এইডস একটি খেলনা মাত্র।

এ রোগে কেউ আক্রান্ত হলে ছয় মাস যেতে না যেতেই তাঁর পুরো শরীর ফোসকা ও পুঁজে ভরে যায় এবং ক্ষরণ হতে হতেই সে পরিশেষে মারা যায়। সমস্যার ব্যাপার হলো এই যে, এরোগটি একেবারেই লুক্কায়িত থাকে ততক্ষণ না যৌন উত্তেজনা প্রশমনের সময় এ সংক্রান্ত হরমোনগুলো উত্তেজিত হয়। আর তখনই উক্ত ভাইরাসগুলো নব জীবন পায়। তবে এ রোগ যে কোন পন্থায় সংক্রমণ করতে সক্ষম। এমনকি বাতাসের সাথেও।

সমকামের শাস্তি!

কারোর ব্যাপারে সমকাম প্রমাণিত হয়ে গেল তাকে ও তাঁর সমকামী সঙ্গীকে শাস্তি স্বরূপ হত্যা কর‍তে হয়।

হযরত “আব্দুল্লাহ বিন” আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ

“কাউকে সমকাম করতে দেখলে তোমরা উভয় সমকামীকেই হত্যা করবে। (আবু দাউদ, হাদীস ৪৪৬২ তিরমিযী, হাদীস ১৪৫৬ ইবনু মাজাহ, হাদীস ২৬০৯ বায়হাক্কী, হাদীস ১৬৭৯৬ হা’কিম, হাদীস ৮০৪৯) 

উক্ত হত্যার ব্যাপারে সাহাবাদের ঐকমত্য রয়েছে। তবে হত্যার ধরনের ব্যাপারে তাদের পরস্পরের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে।

হযরত আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সা) ইরশাদ করেনঃ

“উপর—নীচের উভয়কেই রজম করে হত্যা করো।(ইবনু মাজাহ, হাদীস ২৬১০)

হযরত আবু বকর, ‘আলী, ‘আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর (রা) এবং হিশাম বিন আব্দুল মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) সমকামীদেরকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন।

হযরত মুহাম্মাদ বিন মুনকাদির (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ

“হযরত খালিদ বিন ওয়ালীদ (রা) হযরত আবু বকর (রা) এর নিকট এ মর্মে একটি চিঠি পাঠালেন যে, তিনি আরবের কোন এক মহল্লায় এমন এক ব্যক্তিকে পেয়েছেন যাকে যৌন উত্তেজনা নিবারণ করা হয় যেমনিভাবে নিবারণ করা মহিলা দিয়ে। তখন হযরত আবু বকর (রা) সকল সাহাবাদেরকে একত্রিত করে এ ব্যাপারে তাদের পরামর্শ চেয়েছেন। তাদের মধ্যে ‘আলী (রা)ও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেনঃ এ এমন একটি গুনাহ যা বিশ্বে শুধুমাত্র একটি উম্মতই সংঘটন  করেছে। আল্লাহ তা’আলা ওদের সঙ্গে যে ব্যবহার করেছেন তা সম্পর্কে আপনারা অবশ্যই অবগত। অতএব আমার মত হচ্ছে, তাকে আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হবে। উপস্থিত সকল সাহাবারাও উক্ত মতের সমর্থন করেন। তখন হযরত আবু বকর (রা) তাকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়ার ফরমান জারি করেন। (বায়হাক্কী/শু’আবুল ঈমান, হাদীস ৫৩৮৯)

হযরত ‘আব্দুল্লাহ বিন ‘আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ

“সমকামীকে মহল্লার সর্বোচ্চ প্রাসাদের ছাদ থেকে উপুড় করে নিক্ষেপ করা হবে। অতঃপর তাঁর উপর পাথর মারা হবে। (ইবনু আবী শাইবাহ, হাদীস ২৮৩২৮ বায়হাক্কী ৮/২৩২)

সমকামীর জন্য পরকালের শাস্তি হচ্ছে আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে কখনো তাকাবেন না।

হযরত ‘আব্দুল্লাহ বিন ‘আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সা) ইরশাদ করেনঃ

“আল্লাহ তা’আলা এমন ব্যক্তির প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে কখনো তাকাবেন না যে সমকামে লিপ্ত হয় অথবা কোন মহিলার মলদ্বারে গমন করে। (ইবনু আবী শায়বাহ, হাদীস ১৬৮০৩ তিরমিযী, হাদীস ১১৬৫)

সমকামের চিকিৎসা!

উক্ত রোগ তথা সমকামের নেশা থেকে বাঁচার উপায় অবশ্যই রয়েছে। তবে তা এ জাতীয় রোগীর পক্ষ থেকে সাদরে  গ্রহণ করার অপেক্ষায়। আর তা হচ্ছে দু’প্রকারঃ

রোগাক্রান্ত হওয়ার আগের চিকিৎসাঃ

তা আবার দু’ ধরনেরঃ

  • দৃষ্টিশিক্তি হিফাযতের মাধ্যমে।

কারণ, দৃষ্টিই হচ্ছে শয়তানের বিষাক্ত একটি তীর যা শুধু মানুষের আফসোসই বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং শ্মশ্রুবিহীন ছেলেদের প্রতি দৃষ্টিপাত করা থেকে একেবারেই বিরত থাকতে হবে। তা হলেই সমকামের প্রতি অন্তরে আর উৎসাহ জন্ম নিবে না। এ ছাড়াও দৃষ্টিশক্তি নিয়ন্ত্রণের অনেকগুলো ফায়দা রয়েছে যা নিম্নরূপঃ

১. তাতে আল্লাহ তা’আলার আদেশ মানা হয়। যা ইবাদতেরই একাংশ এবং ইবাদাতের মধ্যেই সমূহ মানব কল্যাণ নিহিত রয়েছে।

২. বিষাক্ত তীরের অরভাব থেকে অন্তর বিমুক্ত থাকে। কারণ, দৃষ্টিই হচ্ছে শয়তানের একটি বিষাক্ত তীর।

৩. মন সর্বদা আল্লাহ অভিমুখী থাকে।

৪. মন সর্বদা সন্তুষ্ট ও শক্তিশালী থাকে।

৫. অন্তরে এক ধরনের নূর তথা আলো জন্ম নেয় যার দরুন সে উত্তরোত্তর ভালোর দিকেই ধাবিত হয়।

  আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

“(হে রাসূল!) তুমি মু’মিনদেরকে বলে দাওঃ তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং নিজ লজ্জাস্থান হিফাযত করে।” (নূর : ৩০)

এর কয়েক আয়াত পরই আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

 “আল্লাহ তা’আলাই আকাশ ও পৃথিবীর জ্যোতি। (সত্যিকার ঈমানদারের অন্তরে) তাঁর জ্যোতির উপমা যেন একটি দীপাধার। যার মধ্যে রয়েছে একটি প্রদীপ।

৬. হক্ব ও বাতিল এবং সত্য ও মিথ্যার মাঝে বিশেষ প্রভেদজ্ঞান সৃষ্টি হয় যার দরুন দৃষ্টি সংযতকারীর যে কোন ধারণা অধিকাংশই সঠিক প্রমাণিত হয়। ঠিক এরই বিপরীতে আল্লাহ তা’আলা পূত্ব সম্প্রদায়ের সমকামীদেরকে অন্তরদৃষ্টিশূন্য বলে আখ্যায়িত  করেছেন।

আল্লাহ বলেনঃ

“আপনার জীবনের কসম! ওরা তো মত্ততায় বিমূঢ় হয়েছে তথা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।(হিজর : ৭২)

৭. অন্তরে দৃঢ়তা, সাহসিকতা ও শক্তি জন্ম নেয় এবং মানুষ তাকে সম্মান করে।

আল্লাহ তা’আল বলেনঃ

“সম্মান ও ক্ষমতা তো আল্লাহ তা’আলা, তদীয় রাসূল (সা) এ (সত্যিকার) ঈমানদারদের জন্য। কিন্তু মুনাফিকরা তো তা জানে না।” (মুনা’ফিকুন : ৮)

আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ

“কেউ ইযযত ও স্মমান চাইলে সেও যেন জেনে রাখে, সকল সম্মানই তো আল্লাহ তা’আলার। (অতএব তাঁর কাছেই তা কামনা করতে হবে। অন্যের কাছে নয়) তারই দিকে পবিত্র বাণীসমূহ তথা যিকির ইত্যাদি আরোহণ করে এবং নেক আমলই তা উন্নীত করে। (ফা’ত্বির : ১০)

সুতরাং আল্লাহ’র আনুগত্য, যিকির ও মেক আমলের মাধ্যমেই তাঁরই নিকট সম্মান কামনা করতে হবে।

৮. তাতে মানব অন্তরে শয়তানের ঢুকার সুগম পথ বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, সে দৃষ্টি পথেই মানব অন্তরে প্রবেশ করে খালিস্থানে বাতাস প্রবেশের চাইতেও অতি দেউত গতিতে। অতঃপর সে দেখা বস্তুটির সুদৃশ্য দৃষ্টি ক্ষেপণকারীর মানসপটে স্থাপন করে। সে দৃষ্ট বস্তুটির মূর্তি এমনভাবে তৈরি করে যে, অন্তর তখন তাকে নিয়েই ব্যস্ত হতে বাধ্য হয়। এরপর সে অন্তরকে অনেক ধরনের আশা ও অঙ্গীকার দিতে থাকে। অন্তরে উত্তরোত্তর কুপ্রবৃত্তির তাড়না জাগিয়ে তোলে। সে মনের মাঝে উত্তেজনার আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে তাতে বহু প্রকারের গুনাহ’র জ্বালানি ব্যবহার করে আরো উত্তপ্ত করতে থাকে। অতঃপর হৃদয়টি সে উত্তপ্ত আগুনে লাগাতার পুড়তে থাকে। সে অন্তর্দাহ থেকেই বিরহের উত্তপ্ত ঊর্ধ্ব শ্বাসের সৃষ্টি।

৯. অন্তর সর্বদা মঙ্গলজনক কর্ম সম্পর্কে চিন্তা করার সুযোগ পায়। অবৈধ দৃষ্টি ক্ষেপণে মানুষ সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকে। অন্তর গাফিল হয়ে যায়। প্রবৃত্তি পূজায় ধাবিত হয় এবং সকল ব্যাপারে এক ধরনের গোলযোগ সৃষ্টি হয়।

একারণেই আল্লাহ তা’আলা রাসূল (সা) কে এদের আনুগত্য করতে নিষেধ করেন।

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

“যার অন্তরকে আমি আমার স্মরণে অমনোযোগী করে দিয়েছি এবং যে তাঁর খেয়াল—খুশির অনুসরণ করে এমনকি যার কার্যকলাপ সীমাতিক্রম করেছে আপনি তাঁর আনুগত্য করবেন না। (কাহফ : ২৮)

১০. অন্তর ও দৃষ্টির মাঝে এমন এক সুগভীর সম্পর্ক রয়েছে যে, একটি খারাপ হলে অন্যটি খারাপ হতে বাধ্য। তেমনিভাবে একটি সুস্থ থাকলে অন্যটিও সুস্থ থাকতে বাধ্য। সুতরাং যে দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করবে তাঁর অন্তরও তারই নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

  • তা থেকে দূরে রাখে এমন বস্তু নিয়ে ব্যস্ততার মাধ্যমে।

আর তা হচ্ছে আল্লাহ তা’আলা সম্পর্কে অধিক ভয় বা অধিক ভালোবাসা। অর্থাৎ অন্যকে ভালোবাসার কারনে আল্লাহ তা’আলার ভালোবাসা না পাওয়ার আশঙ্কা করা অথবা আল্লাহ তা’আলাকে এমনভাবে ভালোবাসা যে, তিনি ভিন্ন অন্যকে আর ভালোবাসার সুযোগ না পাওয়া যার ভালোবাসা আল্লাহ তা’আলার ভালোবাসার অধীন নয়। কারণ, এ কথা একেবারেই সত্য যে, আল্লাহ তা’আলা মানব অন্তরে জন্মগতভাবেই এমন এক শূন্যতা রেখে দিয়েছেন যা একমাত্র তাঁরই ভালোবাসা পরিপূর্ণ করতে পারে। সুতরাং কারোর অন্তর উক্ত ভালোবাসা থেকে খালি হলে তিনি ভিন্ন অন্যদের ভালোবাসা তাঁর অন্তরে অবশ্যই জায়গা করে নিতে চাইবে। তবে কারোর মধ্যে নিমোক্ত দু’টি গুণ থাকলেই সে উপরোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। যা নিম্নরূপঃ

১. বিশুদ্ধ অন্তদৃষ্টি। যার মাধ্যমে সে প্রিয়—অপ্রিয়ের স্তরসমূহের মাঝে পার্থক্য করতে পারে। তখনই সে মূল্যবান বন্ধুকে পাওয়ার জন্য নিম্নমানের বন্ধুকে ছাড়তে পারবে এবং বড় বিপদ থেকে বাঁচার জন্য ছোট বিপদ মাথা পেতে মেনে নিতে পারবে।

২. ধৈর্য ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। যার উপর নির্ভর করে সে উক্ত কর্মসমূহ আঞ্জাম দিতে পারবে। কারণ, এমন লোকও আছে যাদের মধ্যে প্রথমক্ত গুণ রয়েছে। তবে সে তা বাস্তবায়ন করতে পারছে না তাঁর মধ্যে দ্বিতীয় গুনটি না থাকার দরুন। সুতরাং কারোর মধ্যে আল্লাহ তা’আলার ভালোবাসা এবং যার ভালোবাসা আল্লাহ তা’আলার ভালোবাসার অধীন নয় তাঁর ভালোবাসা একত্র হতে পারে না এবং যার মধ্যে আল্লাহ তা’আলার ভালোবাসা নেই সেই একমাত্র মহিলাদের অথবা শ্মশ্রুবিহীন ছেলেদের ভালোবাসায় মত্ত থাকতে পারে।

দুনিয়ার কোন মানুষ যখন তাঁর ভালোবাসায় কারোর অংশীদারী সহ্য করতে পারে না তখন আল্লাহ তা’আলা কেন তাঁর ভালোবাসায় অন্যের অংশীদারি সহ্য করবেন? এ কারণেই আল্লাহ তা’আলা তাঁর ভালোবাসায় শির্ক কখনোই ক্ষমা করবেন না।

ভালোবাসার আবার কয়েকটি স্তর রয়েছে। যা নিম্নরূপঃ

১. সাধারণ সম্পর্ক জাতীয় ভালোবাসা যার দরুন এক জনের মন অন্য জনের সঙ্গে লেগে যায়। আরবী ভাষায় এ সম্পর্কে “আলা’ক্বাহ’ বলা হয়।

২. ভালোবাসায় মন উপচে পড়া। আরবী ভাষায় এ জাতীয় ভালোবাসাকে ‘স্বাবা’বাহ’ বলা হয়।

৩. এমন ভালোবাসা যা মন থেকে কখনো ভিন্ন হয় না। আরবী ভাষায় এ জাতীয় ভালোবাসাকে ‘গারা’ম’ বলা হয়।

৪. নিয়ন্ত্রণহীন ভালোবাসা। আরবী ভাষায়  এ জাতীয় ভালোবাসাকে ‘ইশক্ব’ বলা হয়। এ জাতীয় ভালোবাসা আল্লাহ তা’আলার শানে প্রযোজ্য নয়।

৫. এমন ভালোবাসা যার দরুন প্রিয়ের সঙ্গে মিলনের আকাঙ্খা সৃষ্টি হয়। আরবী ভাষায় এ জাতীয় ভালোবাসাকে “শওক্ব”বলা হয়। এমন ভালোবাসা আল্লাহ তা’আলার শানে অবশ্যই প্রযোজ্য।

হযরত ‘উবা’দাহ বিন স্বা’মিত, ‘আয়েশা, আবু হুরাইরাহ ও আবু মূসা (রা) থেকে বর্ণিত তারা বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ

“যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার সাক্ষাৎ চায় আল্লাহ তা’আলাও তাঁর সাক্ষাৎ চাইবেন এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার সাক্ষাৎ চায় না আল্লাহ তা’আলাও তাঁর সাক্ষাৎ চাইবেন না। (বুখারী, হাদীস ৬৫০৭, ৬৫০৮ মুসলিম, হাদীস ২৬৮৩,২৬৮৪,২৬৮৫,২৬৮৬)

৬. এমন ভালোবাসা যার দরুন কোন প্রেমিক তাঁর প্রপেমিকার একান্ত গোলাম হয়ে যায়। এ জাতীয় ভালোবাসাই শিরকের মূল। কারণ, ইবাদতের মূল কথাই তো হচ্ছে, প্রিয়ের একান্ত আনুগত্য ও অধীনতা। আর এ কারণেই আল্লাহ তা’আলার নিকট মানুষের জন্য সর্বোচ্চ সম্মানজনক গুণ হচ্ছে তাঁর “আব্দ” বা সত্যিকার গোলাম হওয়ার তথা বিনয় ও ভালোবাসা নিয়েই আল্লাহ তা’আলার অধীনতা স্বীকার করা। এ জন্যই আল্লাহ তা’আলা জিন ও মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন এবং যা ইসলামের মূল কথাও বটে। আর এ কারণেই আল্লাহ তা’আলা রাসূল (সাঃ) কে বিশেষ স্থানগুলোতে “আব্দ” শব্দে উল্লেখ করেছেন।

আল্লাহ তা’আলা দা’ওয়াতী ক্ষেত্রে রাসূল (সা) কে “আব্দঃ শব্দে উল্লেখ করেন। তিনি বলেনঃ

“আর যখন আল্লাহর বান্দাহ (রাসূল সাঃ) তাঁকে (আল্লাহ তা’আলাকে) ডাকার (তাঁর ইবাদত করার) জন্য দণ্ডায়মান হলো তখন তারা (জিনরা) সবাই তাঁর নিকট ভিড় জমালো।” (জিন ১৯)

আল্লাহ তা’আলা নবুওয়াতের চ্যালেঞ্জের ক্ষেত্রেও রাসূল (সা) কে “আব্দ” শব্দে উল্লেখ করেন। তিনি বলেনঃ

“আমি আমার বান্দাহ’র (রাসূল সা) এর) প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি তোমরা যদি তাতে সন্দিহান হও তবে সেরূপ একটি সূরা নিয়ে আসো।”(বাক্বারাহ ২৩)

আল্লাহ তা’আলা ইসরা’র ক্ষেত্রেও রাসূল (সা) কে “আব্দ” শব্দে উল্লেখ করেন। তিনি বলেনঃ

“পবিত্র সে সত্তা যিনি নিজ বান্দাহকে (রাসূল সা)) রাত্রিবেলা ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আক্বসায় (বাইতুল মাক্বদিসে)।”(ইসরা/বনী ইসরাইল ১)

সুপারিশের হাদীসের মধ্যেও রাসূল (সা) কে “আব্দ” বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কিয়ামতের দিবসে হযরত ‘ঈসা (আঃ)’ এর নিকট সুপারিশ চাওয়া হলে তিনি বলবেনঃ

“তোমরা মুহাম্মাদ (সাঃ) এর নিকট যাও। তিনি আল্লাহ তা’আলার এমন এক বান্দাহ যার পূর্বাপর সকল গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন।”(বুখারী, হাদীস ৪৪৭৬ মুসলিম, হাদীস ১৯৩)

উক্ত হাদীসে সুপারিশের উপযুক্ততার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। আর তা হচ্ছে ক্ষমা প্রাপ্ত আল্লাহ তা’আলার খাঁটি বান্দাহ হওয়ার দরুন।

উক্ত নিরেট ভালোবাসা বান্দাহ’র নিকট আল্লাহ তা’আলার একান্ত প্রাপ্য হওয়ার দরুন আল্লাহ তা’আলা তিনি ভিন্ন অন্য কাউকে বন্ধু বা সুপারিশকারী হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন।

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

“তোমাদের জন্য তিনি ভিন্ন অন্য কোন বন্ধু নেই, না আছে কোন সুপারিশকারী।”(সাজদাহ ৪)

তিনি আরো বলেনঃ

“ওদের (মু’মিনদের) জন্য তিনি (আল্লাহ তা’আলা) ভিন্ন না আছে কোন বন্ধু আর না আছে কোন সুপারিশকারী।” (আন’আম ৫১)

তেমনিভাবে পরকালে তিনি ভিন্ন অন্য কোন বন্ধু কারোর কাজেও আসবে না।

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

“তাদের ধন-সম্পদ এবং আল্লাহ ভিন্ন অন্য কোন বন্ধু সে দিন তাদের কোন কাজে আসবে না। উপরন্ত তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি।”( জা’সিয়াহ ১০)

মূল কথা, ভালোবাসায় আল্লাহ তা’আলার সঙ্গে কাউকে শরীক করে সত্যিকার ইবাদত করা যায় না। তবে আল্লাহ তা’আলার জন্য কাউকে ভালোবাসা এর বিপরীত নয়। বরং তা আল্লাহ তা’আলাকে ভালোবাসার পরিপুরকও বটে।

হযরত আবু উমামাহ (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সা) ইরশাদ করেনঃ

“যে ব্যক্তি আল্লাহ’র জন্য কাউকে ভালোবাসলো, আল্লাহ’র জন্য কারোর সাথে শত্রুতা পোষণ করলো, আল্লাহ’র জন্য কাউকে দিলো এবং আল্লাহ’র জন্য কাউকে বঞ্চিত করলো সে যেন নিজ ঈমানকে পরিপূর্ণ করে নিলো।

এমনকি রাসূল (সা) এর ভালোবাসাকে অন্য সবার ভালোবাসার উপর প্রধান্য না দিলে সে ব্যক্তি কখনো পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না।

অতএব আল্লাহ তা’আলার জন্য কাউকে ভালোবাসা যতই কঠিন হবে ততই আল্লাহ তা’আলার ভালোবাসা কঠিন হবে।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে ভালোবাসা আবার চার প্রকার। যে গুলোর মধ্যে ব্যবধান না জানার দরুনই অনেকে এ ক্ষেত্রে পথভ্রষ্ট হয়। আর তা নিম্নরূপঃ

ক. আল্লাহ তা’আলাকে ভালোবাসা। তবে তা নিরেট ভালোবাসা না হলে কখনো তা কারোর ফায়দায় আসবে না।

খ. আল্লাহ তা’আলা যা ভালোবাসেন তাই ভালোবাসা। যে এ ভালোবাসায় যত অগ্রগামী সে আল্লাহ তা’আলার ভালোবাসায় তত অগ্রগামী।

গ. আল্লাহ তা’আলার জন্য ভালোবাসা। এ ভালোবাসা উক্ত ভালোবাসার পরিপূরক।

ঘ। আল্লাহ তা’আলার সাথে অন্য কাউকে তাঁর সমপর্যায়েই ভালোবাসা। আর এটিই হচ্ছে শির্ক।

আরো এক প্রকারের ভালোবাসা রয়েছে যা আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়। আর তা হচ্ছে স্বভাবগত ভালোবাসা। যেমনঃ স্ত্রী-সন্তানের ভালোবাসা।

৭. চূড়ান্ত ভালোবাসা। এমন ভালোবাসা যে, প্রেমিকের অন্তরে আর কাউকে ভালোবাসার কোন জায়গাই থাকে না। আরবী ভাষায় এ জাতীয় ভালোবাসাকে “খুল্লাহ” এবং এ জাতীয় প্রেমিককে “খালীল” বলা হয়। আর এ জাতীয় ভালোবাসা শুধুমাত্র দু’জন নবীর জন্যই নির্দিষ্ট। যারা হচ্ছেন হযরত ইব্রাহীম (আ) ও হযরত মুহাম্মাদ (সা) ।

হযরত জুনদাব (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ আমি রাসূল (সা) কে তাঁর মৃত্যুর পাঁচ দিন পূর্বে এ কথা বলতে শুনেছি। তিনি বলেনঃ

“তোমাদের মধ্য থেকে কেউ আমার খলীল হোক এ ব্যাপার থেকে আমি আল্লাহ তা’আলার নিকট মুক্তি চাচ্ছি। কারণ, আল্লাহ তা’আলা আমাকে নিজ খলীল হিসেবে চয়ন করেছেন। যেমনিভাবে চয়ন করেছেন ইব্রাহীম (আ) কে। আমি যদি আমার উম্মত থেকে কাউকে খলীল বানাতাম তা হলে আবু বকরকেই আমার খলীল বানাতাম।(মুসলিম, হাদীস ৫৩২)

খলীলের চাইতে হাবীব কখনো উন্নত হতে পারে না। কারণ, রাসূল (সা) কাউকে নিজ খলীল বানাননি। তবে হযরত ‘আয়েশা তাঁর হাবীবাহ ছিলেন এবং হযরত আবু বকর, ‘উমর ও অন্যান্যরা তাঁর হাবীব ছিলেন।

এ কথা সবার জানা থাকা প্রয়োজন যে, ভালোবাসার পাত্র আবার দু’ প্রকার। যা নিম্নরূপঃ

ক. স্বকীয়ভাবে যাকে ভালোবাসতে হয়। অন্য কারোর জন্য তাঁর ভালোবাসা নয়। আর তা এমন সত্তার ব্যাপারে হতে পারে যার গুণাবলী চূড়ান্ত পর্যায়ের ও চিরস্থায়ী এবং যা তাঁর থেকে কখনো ভিন্ন হয় না। তা একমাত্র আল্লাহ তা’আলার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কারণ, মানুষ কাউকে দু’কারণেই ভালোবাসে। আর তা হচ্ছে মহত্ত্ব ও পরম সৌন্দর্য। উক্ত দু’টি গুণ আল্লাহ তা’আলার মধ্যে চূড়ান্ত পর্যায়েরই রয়েছে। তাতে কোন সন্দেহ নেই। অতএব একান্ত স্বকীয়ভাবে তাঁকেই ভালোবাসতে হবে। তিনি ভিন্ন অন্য কাউকে নয়।

আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে সব কিছু দিচ্ছেন, সুস্থ রাখছেন, সীমাহীন করুণা করছেন, তাঁর শানে অনেক অনেক দোষ করার পরও তিনি তা লুকিয়ে রাখছেন এবং ক্ষমা করে দিচ্ছেন, তিনি আমাদের দো’আ কবুল করেছেন, আমাদের সকল বিপদাপদ কাটিয়ে দিচ্ছেন অথচ আমাদের প্রতি তাঁর কোন প্রয়োজন নেই বরং তিনি বান্দাহকে গুনাহ করার সুযোগ দিচ্ছেন, তারই ছত্রছায়ায় বান্দাহ তাঁর প্রবৃত্তির সকল চাহিদা মিটিয়ে নিচ্ছে যদিও তা তাঁর বিধান বিরুদ্ধ। সুতরাং আমরা তাঁকেই ভালো না বেসে আর কাকে ভালোবাসবো? বান্দাহ’র প্রতি তাঁর পক্ষ থেকে শুধু কল্যাণ নেমে আসছে অথচ তাঁর প্রতি বান্দাহ’র পক্ষ থেকে অধিকাংশ সময় খারাপ আমলই উঠের যাচ্ছে, ত্রিনি অগণিত নিয়ামত দিয়ে বান্দাহ’র প্রিয় হতে চান অথচ তিনি তাঁর মুখাপেক্ষী নন আর বান্দাহ গুনাহ’র মাধ্যমে তাঁর অপ্রিয় হতে চায় অথচ সর্বদা সে তাঁর মুখাপেক্ষী। তারপরও আল্লাহ’র অনুগ্রহ কখনো বন্ধ হচ্ছে না আর বান্দাহ’র গুনাহও কখনো কমছে না।

দুনিয়ার কেউ কাউকে ভালোবাসলে সে তাঁর স্বার্থের জন্যই ভালোবাসে কিন্তু আল্লাহ তা’আলা বান্দাহকে ভালোবাসেন একমাত্র তারই কল্যাণে। তাতে আল্লাহ তা’আলার কোন লাভ নেই।

দুনিয়ার কেউ কারোর সাথে কখনো লেনদেন করে লাভবান না হলে সে তাঁর সাথে দ্বিতিয়বার আর লেনদেন করতে চায় না। লাভ ছাড়া সে সামনে এক কদমও বাড়াচ্ছে না। কিন্তু আল্লাহ তা’আলা বান্দাহ’র সাথে লেনদেন করছেন একমাত্র তারই লাভের জন্য। নেক আমল একে দশ সাতশ পর্যন্ত আরো অনেক বেশী। আর গুনাহ একে এক এবং দ্রুত মার্জনীয়।

বান্দাহ’র সকল চাও্যা—পাওয়া একমাত্র তারই নিকটে। তিনিই সবচেয়ে বড় দাতা। তিনি বান্দাহ’র পক্ষ থেকে কম আমলে সন্তুষ্ট হয়েই তাঁর নিকট তা ধীরে ধীরে বাড়াতে থাকেন এবং গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন। তিনি তাঁর নিকট বার বার কিছু চাইলে বিরক্ত হন না। বরং এর বিপরীতে তিনি তাতে প্রচুর সন্তুষ্ট হন। তিনিতার নিকটে কেউ কিছু না চাইলে খুব রাগ করেন। আমাদের সবার জানা থাকা উচিৎ যে, আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি রক্ষা করে চলার নামই বিলায়াত। বান্দাহ’র খারাপ কাজে তিনি লজ্জা পান। কিন্তু বান্দাহ তাতে একটুও লজ্জা পায় না। তিনি বান্দাহ’র গুনাহ সমূহ লুকিয়ে রাখেন। কিন্তু বান্দাহ তাঁর গুনাহগুলো লুকিয়ে রাখতে রাজি নয়। তিনি বান্দাহকে অগণিত নিয়ামত দিয়ে তাঁর সন্তুষ্টি কামনার প্রতি তাকে উদ্বুব্ধ করেন। কিন্তু বান্দাহ তা করতে অস্বীকার করে। তাই তিনি এ উদ্দেশ্যে প্রতি শেষ রাতে দুনিয়ার আকাশে নেমে এসে বলতে থাকেনঃ কে আছো আমার কাছে চাইবে আমি তাকে সবই দেবো। কে আছো আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো। তিনি বান্দাহ’র প্রতি এতো মেহেরবান যে মাও তাঁর সন্তানের প্রতি এতো মেহেরবানী করে না। বান্দাহ’র তাওবা দেখে তিনি এতো বেশি খুশি হন যতটুকু খুশি সে ব্যক্তিও হয় না যে ধু ধু মরুভূমিতে খাদ্য–পানীয়সহ

 তাঁর সাওয়ারী হারিয়ে জীবনের আশা ছেড়ে দেয়ার পর আবার তা ফিরে পেয়েছে। তাঁর আলোকে দুনিয়া আলোকিত । তিনি সর্বদা জাগ্রত। তাঁর জন্য কখনো ঘুম শোভা পায় না। তিনি সত্যিকার ইনসাফগার। তাঁর নিকট রাত্রের আমল উঠে যায় দিনের আমলের পূর্বে। দিনের আমল উঠে যায় রাতের আমলের পূর্বে। নূরই তাঁর আচ্ছাদান।  সে আচ্ছাদান সরিয়ে ফেললে তাঁর ছেহারার আলোকরশ্মি তাঁর দৃষ্টির দূরত্ব পর্যন্ত তাঁর সকল সৃষ্টিকে জ্বালিয়ে ফেলবে। সুতরাং একমাত্র তাঁকেই ভালোবাসতে হবে।

জান্নাতের সর্ববৃহৎ নিয়ামত হবে সরাসরি আল্লাহ তা’আলার সাক্ষাৎ লাভ। আর আত্মার সর্বচূড়ান্ত স্বাদ তাতেই নিহিত রয়েছে। তা এখন থেকেই তাঁর ভালোবাসার মাধ্যমে অর্জন করতে হবে এবং তাঁর ভালোবাসার মধ্যেই দুনিয়াতে আত্মার সমূহ তৃপ্তি নিহিত। এটাই মু’মিনের জন্য দুনিয়ার জান্নাত। এ কারণেই আলিমগণ বলে থাকেনঃ দুনিয়ার জান্নাত যে পেয়েছে আখিরাতের জান্নাত সেই পাবে। তাই আল্লাহ প্রেমিকদের কখনো কখনো এমন ভাব বা মজা অনুভব হয় যার দরুন সে বলতে বাধ্য হয় যে, এমন মজা যদি জান্নাতীরা পেয়ে থাকেন তাহলে নিশ্চই তারা সুখে রয়েছেন।

খ. অন্যের জন্য যাকে ভালোবাসতে হয়। অর্থাৎ দুনিয়ার কাউকে ভালোবাসতে হলে তা একমাত্র আল্লাহ তা’আলার জন্যই ভালোবাসতে হবে। স্বকীয়ভাবে নয়। তবে এ কথা বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহ তা’আলার জন্য কোন বস্তু বা ব্যক্তিকে ভালোবাসা কখনো মনের বিপরীতও হতে পারে। তবে তা তাঁর জন্যই মেনে নিতে হবে যেমনিভাবে সুস্থতার জন্য অপছন্দ পথ্য খাওয়া মেনে নিতে হয়।

অতএব সর্ব নিকৃষ্ট ভালোবাসা হচ্ছে আল্লাহ তা’আলার সাথে কাউকে ভালোবাসা। আর সর্বোৎকৃষ্ট ভালোবাসা হচ্ছে এককভাবে আল্লাহ তা’আলাকে ভালোবাসা এবং তাঁর ভালোবাসার বস্তুকে সর্বদা প্রাধান্য দেয়। ভালোবাসাই সকল কাজের মূল। চাই সে কাজ ভালোই হোক বা খারাপ। কারণ, কোন ব্যক্তিকে ভালোবাসলেই তাঁর মর্জিমাফিক কাজ করতে ইচ্ছা হয় এবং কোন বস্তুকে ভালোবাসলেই তা পাওয়ার জন্য মানুষ কর্মোদ্যোগী হয়। সুতরাং সকল ধর্মীয় কাজের মূল হচ্ছে আল্লাহ তা’আলা ও তদীয় রাসূল (সা) এর ভালোবাসা যেমনিভাবে সকল ধর্মীয় ক্তহার মূল হচ্ছে আল্লাহ তা’আলা ও তদীয় রাসূল (সা) এর উপর দৃঢ় বিশ্বাস।

কোন ভালোবাসা কারোর জন্য লাভজনক প্রমাণিত হলে তাঁর প্রভাব তথা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও তাঁর জন্য লাভজনক হতে বাধ্য। আর কোন ভালোবাসা কারোর জন্য ক্ষতিকর হলে তাঁর প্রভাব তথা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও তাঁর জন্য ক্ষতিকর হতে বাধ্য। তাই আল্লাহ ত্তা’আলাকে ভালোবেসে তাঁকে পাওয়ার জন্য কান্না করলে বা তাঁকে না পাওয়ার দরুন হৃদয়ে ব্যথা অনুভূত হলে তা বান্দাহ’র কল্যাণেই আসবে। ঠিক এরই বিপরীতে কোন সুন্দরী মেয়ে অথবা শ্মশ্রুবিহীন  সুদর্শন কোন ছেলেকে ভালোবেসে তাঁকে পাওয়ার জন্য কান্না করলেই বা তাকে না পাওয়ার দরুন হৃদয়ে ব্যথা অনুভূত হলে তা কখনোই বান্দাহ’র কল্যাণে আসবে না। বরং তা তাঁর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বলেই প্রমাণিত হবে।

সুন্দরী কোন নারী অথবা শ্মশ্রুবিহীন সুদর্শন কোন ছেলেকে এমনভাবে ভালোবাসা যে, তার সন্তুষ্টিকে আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির উপর প্রাধান্য দেয়া হয়, কখনো আল্লাহ তা’আলার অধিকার ও তাঁর অধিকার পরস্পর সাংঘার্ষিক হলে তাঁর অধিকারকেই প্রাধ্নায় দেয়া হয়, তাঁর জন্য মূল্যবান সম্পদ ব্যয় করা হয় অথচ আল্লাহ তা’আলার জন্য মূল্যহীন সম্পদ, তাঁর জন্য মূল্যবান সময় ব্যয় করা হয় যা আল্লাহ তা’আলার জন্য করা হয় না, সর্বদা তাঁর নৈকট্যার্জনের চেষ্টা করা হয় অথচ আল্লাহ তা’আলার নৈকট্যার্জনের একটুও চেষ্টা করা হয় না এমন ভালোবাসা বড় শির্ক যা ব্যভিচার চাইতেও অত্যন্ত মারাত্মক।

রোগাক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা!

তাওহীদ বিরোধী উক্ত রোগে কেউ আক্রান্ত হলে তাকে সর্ব প্রথম এ কথা অবশ্যই বুঝতে হবে যে, সে উক্ত রোগে আক্রান্ত হয়েছে শুধু মূর্খতা এবং গাফিলতির দরুনই। অতএব সর্ব প্রথম তাকে আল্লাহ তা’আলার তাওহীদ তথা একত্ববাদ, তাঁর সাধারণ নীতি ও নিদর্শন সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে হবে। অতঃপর তাকে এমলন কিছু প্রকাশ ও অপ্রকাশ্য ইবাদত করতে হবে যার দরুন সে উক্ত মত্ততা থেকে রক্ষা পেতে পারে। এরই পাশাপাশি সে আল্লাহ তা’আলার নিকট সবিনয়ে সর্বদা এ দো’আ করবে যে, আল্লাহ তা’আলা যেন তাকে উক্ত রোগ থেকে ত্বরিত মুক্তি দেন। বিশেষ করে সম্মভাবনাময় স্থান, সময় ও অবস্থায় দো’আ করবে। যেমনঃ আযান ও ইক্বামতের মধ্যবর্তী সময়, রাত্রের শেষ তৃতীংশ, হিসদাহ এবং জুমার দিনের শেষ বেলা ইত্যাদি ইত্যাদি।

সংক্ষিপ্তাকারে প্রস্তাবিত চিকিৎসা সমূহঃ

১. প্রথমে আল্লাহ তা’আলার নিকট উক্ত গুনাহ থেকে খাঁটি তাওবা করে নিন। কারণ, কেউ আল্লাহ তা’আলা নিকট একমাত্র তাঁরই সন্তুষ্টি পাওয়ার জন্য অথবা তাঁরই কঠিন শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য তাওবা করে নিলে আল্লাহ তা’আলা অবশ্যই তা বকুল করবেন এবং তাকে সেভাবেই চলার তাওফীক দিবেন।

২. আল্লাহ তা’আলার প্রতি দৃঢ় একনিষ্ঠ হোন। এটিই হচ্ছে এর একান্ত মহৌষধ। আল্লাহ তা’আলা হযরত ইউসুফ (আঃ) এ একনিষ্ঠতার কারণেই ‘ইশক্ব এবং প্রায় নিশ্চিত ব্যভিচার থেকে রক্ষা করেন।

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

“তাকে (হযরত ইউসুফ (আ) কে) মন্দ কাজ ও অশ্লীলতা থেকে বিরত রাখার জন্যই এভাবে আমি আমার নিদর্শন দেখালাম। কারণ, তিনি তো ছিলেন আমার একান্ত একনিষ্ঠ বান্দাহদের অন্যতম।” (সূরা ইউসুফ : ২৪)

৩. ধৈর্য ধরুন। কারণ, কোন অভ্যাসগত কঠিন পাপ ছাড়ার জন্য ধৈর্যের একান্তই প্রয়োজন। সুতরাং ধৈর্য ধারণের বার বার কসরত করতে হবে।

এমনিভাবেই ধীরে ধীরে এক সময় ধৈর্য ধারণ অভ্যাসে পরিণত হবে।

হযরত আবু সা’ঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ  

“যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করার চেষ্টা করবে আল্লাহ তা’আলা অবশ্যই তাকে ধৈর্য ধারণ করার শক্তি দিবেন। আল্লাহ তা’আলা কাউকে এমন কিছু দেন নি যা ধৈর্যের চাইতেও উত্তম এবং বিস্তর কল্যাণকর।(বুখারী, হাদীস ১৪৬৯, ৬৪৭০ মুসলিম, হাদীস ১০৫৩)

এ কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, মনের কোন চাহিদা পুরণ করা থেকে ধৈর্য ধারণ করা অনেক সহজ তা পূরণ করার পর যে কষ্ট, শাস্তি, লজ্জা, আফসোস, লাঞ্ছনা, ভয়, চিন্তা ও অস্থিরতা পেয়ে বসবে তা থেকে ধৈর্য ধারণ করার চাইতে। তাই একেবারে শুরুতেই ধৈর্য ধারণ করতে হবে।

৪. মনের বিরোধিতা করতে শিখুন। যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জিনের জন্য মনের বিরোধিতা করবে আল্লাহ তা’আলা তাকে অবশ্যই সঠিক পথে পরিচালিত করবেন।

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

“যারা আমার উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করে আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করবো। আল্লাহ তা’আলা নিশ্চয়ই সৎকর্মশীলদের সাথেই রয়েছেন। (সুরাঃ আনকাবুত : ৬৯)

৫. আল্লাহ তা’আলা যে সর্বদা আপনার কর্মকাণ্ডের প্রতি দৃষ্টিপাত করেই আছেন তা অনুভব করতে শিখুন। সুতরাং উক্ত কাজ করার সময় মানুষ আপনাকে না দেখলেও আল্লাহ তা’আলা যে আপনার প্রতি দেখেই আছেন তা ভাবতে হবে। এরপরও যদি আপনি উক্ত কাজে লিপ্ত থাকেন তখন অবশ্যই এ কথা ভাবতে হবে যে, আল্লাহ তা’আলার সম্মান ও মর্যাদা আপনার অন্তরে নেই। তাই আল্লাহ তা’আলা আপনার উক্ত কর্ম দেখলেও আপনার এতটুকুও লজ্জা হয় না। আর যদি আপনি এমন বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহ তা’আলা আপনার কর্মকান্ড দেখছেনই না তা হলে তো আপনি নিশ্চয়ই কাফির।

৬. জামাতে নামায পড়ার প্রতি বিশেষভাবে যত্নবান হোন। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

“নিশ্চয়ই নামায অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।( সূরা আনকাবুত : ৪৫)

৭. বেশি বেশি নফল রোযা রাখতে চেষ্টা করুন। কারণ, রোযার মধ্যে বিশেষ ফযীলতের পাশাপাশি উত্তেজনা প্রশমনেরও এক বাস্তবমুখী ব্যবস্থা রয়েছে। যেমনিভাবে রোযা আল্লাহ ভীরুতা শিক্ষা দেয়ার জন্যও এক বিশেষ সহযোগী। হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাস’উদ (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ

“হে যুবকরা! তোমাদের কেউ সঙ্গমে সক্ষম হলে সে যেন দ্রুত বিবাহ করে নেয়। কারণ, বিবাহ তাঁর চোখকে নিম্নগামী করবে এবং তাঁর লজ্জাস্থানকে হিফাযত করবে। আর যে বিবাহ করতে সক্ষম নয় সে যেন রোযা রাখে। কারণ, রোযা তাঁর জন্য একান্ত উত্তেজনা প্রতিরোধক। (বুখারী, হাদীস ১৯০৫, ৫০৬৬ মুসলিম, হাদীস ১৪০০)

৮. বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করুন। কারণ, কুরআন হচ্ছে সর্ব রোগের চিকিৎসা। তাতে নূর, হিদায়াত, মনের আনন্দ ও প্রশান্তি রয়েছে। সুতরাং উক্ত রোগে রোগাক্রান্ত ব্যক্তির জন্য বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত, মুখস্থ ও তা নিয়ে চিন্তা—গবেষণা করা অবশ্যই কর্তব্য যাতে তাঁর অন্তর ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে যায়।

৯. বেশি বেশি আল্লাহ’র জিকির করুন। কারণ, আল্লাহ তা’আলার জিকিরে অন্তরের বিরাট একটা প্রশান্তি রয়েছে এবং যে অন্তর সর্বদা আল্লাহ’র জিকিরে ব্যস্ত থাকে শয়তান সে অন্তর থেকে বহু দূরে অবস্থান করে। সুতরাং এ জাতীয় ব্যক্তির জন্য জিকির অত্যন্ত উপকারী।

১০. আল্লাহ তা’আলার সকল বিধি—বিধানের প্রতি যত্নবান হোন। তা হলে আল্লাহ তা’আলাও আপনার প্রতি যত্নবান হবেন। আপনাকে জিন ও মানব শয়তান এবং অন্তরের কুপ্রবৃত্তি থেকে রক্ষা করবেন। তেমনিভাবে আল্লাহ তা’আলা আপনার ধার্মিকতা, সততা, মানবতা এবং সম্মানও রক্ষা করবেন।

১১. অতি তাড়াতাড়ি বিবাহ কার্য সম্পাদন করুন। তা হলে যৌন উত্তেজনা প্রশমনের জন্য সহজেই আপনি একটি হালাল ক্ষেত্র পেয়ে যাবেন।

১২. জান্নাতের ‘হুরের কথা বেশি বেশি স্মরণ করুন। যাদের চোখ হবে বড় বড় এবং যারা হবে অতুলনীয়া সুন্দরী লুক্কায়িত মুক্তার ন্যায়। নেককার পুরুষদের জন্যই আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং তাদেরকে পেতে হলে দুনিয়ার এ ক্ষণিকের অবৈধ স্বাদ পরিত্যাগ করতেই হবে।

১৩ শ্মশ্রুবিহীন সে প্রিয় ছেলেটি থেকে খুব দূরে থাকুন। যাকে দেখলে আপনার অন্তরের সে লুক্কায়িত কামনা—বাসনা দ্রুত জাগ্রত হয়। এমন দূরে থাকবেন যে, সে যেন কখনো আপনার চোখে না পড়ে এবং তাঁর কথাও যেন আপনি কখনো শুনতে না পান। কারণ, আপনি বাহ্যিক দূরত্ব অন্তরের দূরত্ব সৃষ্টি করতেই অবশ্যই বাধ্য।

১৪. তেমনিভাবে উত্তেজনাকর সকল বস্তু থেকেও দূরে থাকুন যেগুলো আপনার লুক্কায়িত কামনা—বাসনাকে দ্রুত জাগ্রত করে। অতএব মহিলা ও শ্মশ্রুবিহীন ছেলেদের সাথে মেলামেশা করবেন না। বিশ্রী ছবি ও অশ্লীল গান শুনবেন না। আপনার নিকট যে অডিও ভিডিও ক্যাসেট, ছবি ও চিঠি রয়েছে সবগুলো দ্রুত নস্যাৎ করে দিন। উত্তেজনাকর খাদ্যদ্রব্য আপাতত বন্ধ রাখুন। তা আর কিছু দিনের জন্য গ্রহণ করবেন না। ইতিপূর্বে যেখানে উক্ত কাজ সম্পাদিত হয়েছে সেখানে আর যাবেন না।

১৫. লাভজনক কাজে ব্যস্ত থাকুন। কখনো একা এ অবসর থাকতে চেষ্টা করবেন না। পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পারেন। আত্মীয়—স্বজনের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেন। ইত্যবসরে ঘরের প্রয়োজন সমূহ পূরণ করতে পারেন। কুরআন শরীফ মুখস্থ করতে পারেন অথবা অন্ততপক্ষে বেচাকেনা     নিয়েও ব্যস্ত হতে পারেন ইত্যাদি ইত্যাদি।

১৬. সর্বদা শয়তানের ওয়াসওয়াসা প্রতিরোধ করতে চেষ্টা করুন। কোন কুমন্ত্রণাকে একটুর জন্য অন্তরে স্থান দিবেন না।

১৭. নিজের মনকে দৃঢ় করুন। কখনো নিরাশ হবেন না। কারণ, এ ব্যাধি এমন নয় যে তাঁর কোন চিকিৎসা নেই। সুতরাং আপনি নিরাশ হবেন কেন?

১৮. উচ্চাকাঙ্খী হোন। উচ্চাভিলাসের চাহিদা হচ্ছে এই যে, আপনি সর্বদা উন্নত গুণে গুণান্বিত হতে চাইবেন। অরুচিকর অভ্যাস ছেড়ে দিবেন। লাঞ্চনার স্থান সমূহে কখনো যাবেন না। সমাজের সম্মানি ব্যক্তি সেজে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব হাআতে নিবেন।

১৯. অভিনব বিরল চিকিৎসা সমূহ থেকে দূরে থাকুন। যেমনঃ কেউ উক্ত কাজ ছাড়ার জন্য এভাবে মানৎ করলো যে, আমি যদি এমন কাজ আবারো করে ফেলি তা হলে আল্লাহ তা’আলার জন্য ছয় মাস রোযা রাখা অথবা দশ হাজার রিয়াল সাদাকা করা আমার উপর বাধ্যতামূলক হয়ে যাবে। তেমনিভাবে এ বলে কসম খেলো যে, আল্লাহ’র কসম! আমি আর এমন কাজ করবো না। শুরুতে কসমের কাফফারার ভয়ে অথবা মান্ত ওয়াজিব  হওয়ার ভয়ে উক্ত কাজ করা থেকে বেঁচে থাকলেও পরবর্তীতে তা কাজে নাও আসতে পারে।

কখনো কখনো কেউ কেউ কোন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই যৌন উত্তেজনা প্রশমনকারী কোন কোন ওষুধ সেবন করে। তা একেবারেই ঠিক নয়। কারণ, তাতে হিতে বিপরীতে হতে পারে।

২০. নিজের মধ্যে প্রচুর লজ্জাবোধ জন্ম দেয়ার চেষ্টা করুন। কারণ, লজ্জাবোধ একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। যা কল্যাণই কল্যাণ এবং তা ঈমানেরও একটি বিশেষ অঙ্গ বটে। লজ্জাবোধ মানুষকে ভালো করতে উৎসাহ যোগায় এবং খারাপ কাজ থেকে দূরে রাখে।

নিম্নোক্ত কয়েকটি কাজ করলে কারোর মধ্যে ধীরে ধীরে লজ্জাবোধ জন্ম নেয়ঃ

১. বেশি বেশি রাসূল (সা) এর জীবনী পড়বেন।

২. সাহাবায়ে কিরাম (রা) ও প্রসিদ্ধ লজ্জাশীল সালফে সা’লি’হীনদের জীবনী পড়বেন।

৩. লজ্জাশীলতার ফলাফল সম্পর্কে ভালোভাবে চিন্তা করবেন। বিশেষ করে লজ্জাহীনতার ভীষণ কুফল সম্পর্কেও সর্বদা ভাববেন।

৪. এমন কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকবেন যা বললে বা করলে লজ্জাবোধ কমে যায়।

৫. লজ্জাশীলদের সাথে বেশি বেশি উঠাবসা করবেন এবং লজ্জাহীনদের থেকে একেবারেই দূরে থাকবেন।

৬. বার বার লজ্জাশীলতার কসরত করলে একদা সে ব্যক্তি অবশ্যই লজ্জাশীলদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

বিশেষ করে বাচ্চাদের মধ্যে এমন গুণ থাকা অবশ্যই প্রয়োজনীয়। তখনই সে বড় হলে তা আর বিশেষ কাজে আসবে।

হযরত ওয়াহাব বিন মুনাব্বিহ (রাহিমাহুল্লাহু) বলেনঃ

“কোন বাচ্চার মধ্যে দু’টি গুণ থাকলেই তাঁর কল্যানের আশা করা যায়। তম্মধ্যে একটি হচ্ছে লজ্জা আর অপরটি হচ্ছে ভয়—ভীতি।”

ইমাম আসমা’য়ী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ

  “লজ্জা যার ভূষণ হবে মানুষ তাঁর দোষ দেখতে পাবে না।”

২১. যারা অন্য জন কর্তৃক এ জাতীয় নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন (বিশেষ করে তা উঠতি বয়সের ছেলেদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য) তাদের একান্তই কর্তব্য হচ্ছে সর্বদা সতর খোলা থেকে সতর্ক থাকা। চাই তা খেলাধুলার সময় হোক বা অন্য কোন সময়। কারণ, এরই মাধ্যমে সাধারণত অন্য জন তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকে।

২২. সাজ-সজ্জায় স্বাভাবিকতা বজায় রাখবেন। উঠতি বয়সের ছেলেদের ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবেই প্রযোজ্য। সুতরাং এদের জন্য কখনোই উচিৎ নয় যে, এরা কড়া সুগন্ধি ব্যবহার করবে। ব্যতিক্রমধর্মী আঁটসাঁট পোশাক পরবে। সাজ—সজ্জার ব্যাপারে কাফির ও মহিলাদের অনুসরণ করবে। মাথা আঁচড়ানো বা চুলের ভাঁজের প্রতি গুরুত্ব দিবে। এজন্যই যে, তা অন্যের ফিৎনার কারণ।

২৩. উঠতি বয়সের ছেলেদের আরেকটি কর্তব্য হচ্ছে, তারা যে কারোর সঙ্গে মজা বা রঙ্গ—তামাশা করা থেকে বিরত থাকবে। কারণ, অধিক কৌতুক মানুষের সম্মান বিনষ্ট করে দেয় এবং বোকাদেরকে তাঁর ব্যাপারে অসভ্য আচরণ করতে সাহসী করে তোলে। তবে জায়িয কৌতুক একেবারেই নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু তা নেককারদের সঙ্গেই হওয়া উচিৎ এবং তা ভদ্রতা ও মধ্যপন্থা বজায় রেখেই করতে হবে।

২৪. এটিএম সমালোচনা করতে শিখবেন। সময় থাকতে এখনই নিজের মনের সঙ্গে বুঝপড়া করে নিবেন। চাই আপনি ছোটই হোন অথবা বড়। সেই কর্মটি আপনিই করে থাকুন অথবা তা আপনার সাথেই করা হোক না কেন।

আপনি যদি বড় বা বয়স্কা হয়ে থাকেন তা হলে আপনি নিজ মনকে এ বলে প্রশ্ন করবেন যে, এখনো আমি কিসের অপেক্ষায় রয়েছি? এ মারাত্মক কাজটি এখনো ছাড়ছি না কেন? আমি কি সরাসরি আল্লাহ তা’আলার শাস্তির অপেক্ষা করছি? না কি মৃত্যুর অপেক্ষায় রয়েছি?

আর যদি আপনি অল্প বয়স্কা বা ছোট হয়ে থাকেন তা হলে আপনি নিজ মনকে এ বলে প্রশ্ন করবেন যে, আমি কি এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, আমি অনেক দিন বাঁচবো। না কি যে কোন সময় আমার মৃত্য আসতে পারে অথচ আমি তখনো উক্ত গোনাহে লিপ্ত। আর যদি আমি বেঁচেই থাকি তা হলে এমন ঘৃণ্য কাজ নিয়েই কি বেঁচে থাকবো? আমার যৌবন কি এ কাজেই ব্যয় হতে থাকবে? আমি কি বিবাহ করবো না? তখন আমার স্ত্রী ও সন্তানের কি পরিণতি হবে? আমি কি কোন এক দিন মানুষের কাছে লাঞ্ছিত হবো না? আমি কি কখনো কঠিন রোগে আক্রান্ত হবো না? আমার কারণেই কি এ পবিত্র সমাজ ধ্বংসের পথে এগুচ্ছে না? আমি কি আল্লাহ তা’আলার শাস্তিগ ও অভিশাপএর কারণ হচ্ছি না? কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলার সামনে আমার অবস্থান কি হবে?

২৫. উক্ত কর্মের পরিণতি নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তা করবেন। কারণ, কিছুক্ষণের মজার পরই আসছে দীর্ঘ আপসোস, লজ্জা, অপমান ও শাস্তি।

২৬. মনে রাখবেন, এ জাতীয় মজার কোন শেষ নেই। এ ব্যাধি হচ্ছে চুলকানির ন্যায়। যতই চুলকাবেন ততই চুলকানী বাড়বে। একটি শিকার মিললেই আরেকটি শিকারের ধান্ধায় থাকতে হবে। কখনোই আপনার এ চাহিদা মিটবে না।

২৭. নেককাদের সাথে উঠাবসা করবেন ও বদকারদের থেকে বহু দূরে থাকবেন। কারণ, নেককারদের সাথে উঠাবসা করলে অন্তর সজীব হয়, ব্রেইন আলোকিত হয়। আর বদকারদের থেকে দূরে থাকলে ধর্ম ও ইযযত রক্ষা পায়।

২৮. বেশি বেশি রুগ্ন ব্যক্তির শুশ্রুষা করবেন, বার বার মৃত ব্যক্তির লাশ দেখতে যাবেন, মৃত ব্যক্তির দাফন করবেন ও তাঁর কবর যিয়ারত করবেন। তেমনিভাবে মৃত্য ও মৃত্যুর পরের অবস্থা নিয়েও চিন্তা—ভাবনা করবেন। কারণ, তা যৌন উত্তেজনা প্রশমনের এক বিশেষ সহযোগী।

২৯. কারোর হুমকির সামনে কোন ধরনের নতি স্বীকার করবেন না। বরং তা দ্রুত প্রশাসনকে জানাবেন। বিশেষ করে এ ব্যাপারটি ছোটদের ক্ষেত্রেই বেশি প্রযোজ্য। কারণ, এ কথাটি আপনি বিশেষভাবেই জেনে রাখবেন যে, এ জাতীয় ব্যক্তিরা যতই কাউকে ভয় দেখাক না কেন তারা এ ব্যাপারে উক্ত ব্যক্তির কঠিনতা বা সিদ্ধান্তের দৃঢ়তা দেখলে অবশ্যই পিছপা হতে বাধ্য হবে।

কেউ এ ব্যাপারে নিজকে অক্ষম মনে করলে সে যেন দ্রুত তা নিজ পিতা, বড় ভাই, আস্থাভাজন শিক্ষক অথবা কোন ধার্মিক ব্যক্তিকে জানায়, যাতে তারা তাকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে পারে।

৩০. বেশি বেশি সাধুতা ও তাওবাকারীদের কাহিনী সম্ভার পড়বেন। কারণ, তাতে বহু ধরনের শিক্ষা, আত্মসম্মানের প্রতি উৎসাহ এবং বিশেষভাবে অসম্মানের প্রতি নিরুৎসাহ সৃষ্টি হবে।

৩১. বেশি বেশি করে গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী ক্যাসেট সমূহ মনযোগ সহ শ্রবণ করবেন এবং গানের ক্যাসেট সমূহ শুনা থেকে একেবারেই বিরত থাকবেন।

৩২. সমাজের যে যে নেককার ব্যক্তিরা যুবকদের বিষয় সমূহ নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তা—ভাবনা করছেন তাদের কারোর নিকট নিজের এ দুরবস্থা বিস্তারিত জানাবেন যাতে তারা আপনাকে এ ব্যাপারে সঠিক পরামর্শ দিতে পারেন। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নিকটও আপনার এ অবস্থার পূর্ণ বিবরণ দিতে পারেন যাতে তিনি আপনাকে উপযুক্ত চিকিৎসা দিতে পারেন অথবা উত্তেজনা প্রশমনের কোন পদ্ধতি বাতলিয়ে দিতে পারেন।

প্রত্যেক বিব বিবেকবান মানুষেরই এ কথা জানা উচিৎ যে,  শরীয়ত ও বিবেককে আশ্রয় করেই কোন মানুষ তাঁর সার্বিক কল্যাণ ও তাঁর পরিপূর্ণতা এবং সকল অঘটন অথবা অন্তরপক্ষে তাঁর কিয়দংশ থেকে নিষ্কৃতি লাভ করে থাকে।

সুতরাং বিবেকবানের সামনে যখন এমন কোন ব্যাপার এসে পড়ে যার মধ্যে ভালো ও খারাপ উভয় দিকই রয়েছে তখন তাঁর উপর দু’টি কর্তব্য এসে পড়ে। তাঁর মধ্যে একটির সম্পর্ক জ্ঞানের সাথে এবং অপরটি সম্পর্ক কাজের সাথে। অর্থাৎ তাকে সর্ব প্রথম এ কথা জানতে হবে যে, উক্ত উভয় দিকের মধ্যে থেকে কোনটি অধিক গুরুত্বপুর্ণ। অতএব সে সেটিকেই প্রাধান্য দিবে। আর এ কথা সবারই জানা যে, কোন মেয়ে বা শ্মশ্রুবিহীন ছেলের প্রেমে পড়ার মধ্যে দুনিয়াবী বা ধর্মীয় কোন ফায়দা নেই। বরং তাতে দীন—দুনিয়ার অনেকগুলো গুরুতরক্ষতি রয়েছে যার কিয়দংশ নিম্নরূপঃ

ক. আল্লাহ তা’আলার ভালোবাসা ও তাঁর স্মরণ থেকে বিমুখ হয়ে তাঁর কোন সৃষ্টির ভালোবাসা ও তাঁর স্মরণে নিমগ্ন হওয়া। কারণ, উভয়টি একত্রে সমভাবে কারোর হৃদয়ে অবস্থান করতে পারে না।

খ. তাঁর অন্তর আল্লাহ তা’আলা ছাড়া অন্যকে ভালোবাসার দরুন নিদারুণ কষ্ট ও শাস্তির সম্মুখীন হয়। কারণ, প্রেমিক কখনো চিন্তামুক্ত হতে পারে না। বরং তাকে সর্বদা চিন্তাযুক্তই থাকতে হয়। প্রিয় বা প্রিয়াকে না পেয়ে থাকলে তাকে পাওয়ার চিন্তা এবং পেয়ে থাকলে তাকে আবার কখনো হারানোর চিন্তা।

গ. প্রেমিকের অন্তর সর্বদা প্রিয় বা প্রিয়ার হাতেই থাকে। সে তাকে যেভাবেই চালাতে চায় সে সেভাবেই চলতে বাধ্য। তখন তাঁর মধ্যে কোন নিজস্ব ইচ্ছা অবশিষ্ট থাকে না। এর চাইতে আর বড় কোন লাঞ্চনা আছে কি?

ঘ. দীন—দুনিয়ার সকল কল্যাণ থেকে সে বঞ্চিত হয়। কারণ, ধর্মীয় কল্যাণের জন্য তো আল্লাহ তা’আলার প্রতি অন্তরের উন্মুখতা একান্ত প্রয়োজনীয়। আর তা প্রেমিকের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। অন্য দিকে দুনিয়াবী কল্যাণ তো দীনি কল্যাণের অধীন। দীনি কল্যাণ যার হাত ছাড়া হয় দুনিয়ার কল্যাণ সুস্থভাবে কখনো তাঁর হস্তগত হতে পারে না।

ঙ। দীন—দুনিয়ার সকল বিপদ তাঁর প্রতি দ্রুত ধাবিত হয়। কারণ, মানুষ যখন আল্লাহ তা’আলা ছাড়া অন্য কারোর প্রেমে পড়ে যায় তখন  তাঁর অন্তর আল্লাহ বিমুখ হয়ে পড়ে। আর কারোর অন্তর আল্লাহ বিমুখ হলে শয়তান তাঁর অন্তরে হাঁটু গেড়ে বসে। তখনই সকল বিপদাপদ তাঁর দিকে দ্রুত ধাবমান হয়। কারণ, শয়তান তো মানুষের আজন্ম শত্রু। আর কারোর কঠিন শত্রু যখন তাঁর উপর কাবু করতে পারে তখন কি সে তাঁর যথাসাধ্য ক্ষতি না করে এমনিতেই বসে থাকবে?   

চ. শয়তান যখন প্রেমিকের অন্তরে অবস্থান নিয়ে নেয় তখন সে উহাকে বিক্ষিপ্ত করে ছাড়ে এবং তাতে প্রচুর ওয়াসওয়াসা (কুমন্ত্রণা) ঢেলে দেয়। কখনো কখনো এমন হয় যে, সে একান্ত বদ্ধ পাগলে পরিণত হয়। লাইলী প্রেমিক ঐতিহাসিক প্রেমপাগল মজনুর কথা তো আর কারোর অজানা নয়।

ছ. এমনকি প্রেমিক কখনো কখনো প্রেমের দরুন প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে নিজের সকল অথবা কিছু বাহ্যেন্দ্রিয় হারিয়ে বসে। প্রত্যক্ষভাবে হারানো তো এভাবে যে, প্রেমে পড়ে তো অনেকে নিজ শরীরই হারিয়ে বসে। ধীরে ধীরে তাঁর শরীর অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন তাঁর কোন ইন্দ্রিয়ই আর সুস্থভাবে বাহ্যিক কোন কাজ সমাধা করতে পারে না।

 একদা জৈনিক যুবককে ‘আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) এর নিকট হাযির করা হলো। তখন তিনি ‘আরাফাহ’ ময়দানে অবস্থানরত। যুবকটি একেবারেই দুর্বল হয়ে হাড্ডিসার হয়ে গেলো। তখন ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) উপস্থিত জনতাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ যুবকটির কি হলো? লোকেরা বললোঃ সে প্রেমে পড়েছে। এ কথা শুনেই তিনি তখন থেকে পুরো দিন আল্লাহ তা’আলার নিকট প্রেম আশ্রয় কামনা করেন।

পরোক্ষভাবে বাহ্যেন্দ্রিয় লোপ পাউ তো এ ভাবেই যে, প্রেমের দরুন তার অন্তর যখন বিনষ্ট হয়ে যায় তখন তার বাহ্যেন্দ্রিয়গুলোও আর সঠিক কাজ করে না। তখন তার চোখ আর তার প্রিয়ের কোন দোষ দেখে না। কান আর প্রিয়কে নিয়ে কোন গান শুনতে বিরক্তি বোধ করে না। মুখ আর প্রিয়ের অযথা প্রশংসা করতে লজ্জা পায় না।

জ. ইশক্বের পর্যায়ে যখন কেউ পৌঁছে যায় তখন তার প্রিয় পাত্রই তার চিন্তা—চেতনার একান্ত কেন্দ্রবিন্দুতে রূপান্তরিত হয়। তখন তার সকল শারীরিক ও মানসিক শক্তিসমূহ অচল হয়ে পড়ে। তখন সে এমন রোগ—ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় যার চিকিৎসা একেবারেই দুষ্কর।

এছাড়াও প্রেমের আরো অনেক ক্ষতিকর দিক রয়েছে। যেমনঃ কোন প্রেমিক যখন লোক সমাজে তার প্রেমের কথা প্রকাশ করে দেয় তখন তার প্রিয়ের উপর সর্ব প্রথম বিশেষভাবে যুলুম করা হয়। কারণ, মানুষ তখন অনর্থকভাবে তাকে এ ব্যাপারে দোষারোপ করতে থাকে। এমনকি তার ব্যাপারে কোন মানুষ কোন কথা বানিয়ে বললেও অন্যরা তা বিশ্বাস করতে একটুও দেরি করে না। এমন কি শুধু প্রিয়ের উপরই যুলুম সীমাবদ্ধ থাকে না। বরং তা তার সমস্ত পরিবারবর্গের উপরও বর্তায়। কারণ, এতে করে তাদেরও প্রচুর মানহানী হয়। অন্যদ্যেরকেও মিথ্যারোপের গুনাহে নিমজ্জিত করা হয়। আর যদি প্রিয় বা প্রিয়াকে পাওয়ার জন্য অন্যের সহযোগিতা নেয়া হয় তখন তারাও গুনাহগার হয়। এ পথে যারা বাধা সৃষ্টি করে তাদের অনেককে কখনো কখনো হত্যাও করা হয়। কতো কতো গভীর সম্পর্ক যে এ কারনে বিচ্ছিন্ন করা হয় তার কোন ইয়ত্তা নেই। কতো প্রতিবেশী বা আত্মীয়ের অধিকার যে এ ক্ষেত্রে বিনষ্ট হয় তার কোন হিসেব নেই। আর যদি এ ক্ষেত্রে যাদুর সহযোগিতা নেয়া হয় তা হলে একে তো শিরক আবার এর উপুর কুফরী। আর যদি প্রিয় বা প্রিয়া মলেই যায় তখন একে অপরকে নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য অন্যের উপর যুলুম করতে সহযোগিতা করে এবং একে অপরকে সন্তুষ্টির জন্য কতো মানুষের কতো মাল যে হরণ করে তার কোন হিসেব নেই। আর যদি প্রিয় বা প্রিয়া অত্যন্ত চতুর হয়ে থাকে তখন সে প্রেমিককে আশা দিয়ে দিয়ে তার সকল সম্পদ বিনষ্ট করে দ এয়। কখনো সে এমন কাণ্ড  একই সঙ্গে অনেকের সাথেই করে বেড়ায়। তখন প্রেমিক রাগ করে কখনো তাকে হত্যা বা মারাত্মকভাবে আহত করে আরো কতো কি?

সুতরাং কোন বুদ্ধিমান এতো কিছু জানার পরও এ জাতীয় প্রেমে কখনো আবদ্ধ হতে পারে না।

আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে উক্ত অপরাধ সমূহ থেকে বাঁচার তাওফীক দান করুন। আ’মীন সুম্মা আ’মীন ইয়া রাব্বাল আ’লামীন!

সমাপ্ত।

উৎস : হারাম ও কবীরা গোনাহ (প্রথমাংশ) বই থেকে।

সম্পাদনায়ঃ মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ।    

আরও পড়তে পারেন : ব্যভিচার! ইসলামে ব্যভিচারের শাস্তি

প্রিয় পাঠক পাঠিকা, আশা করি সম্মানিত লেখকের সমকাম ও ইসলামে সমকামের শাস্তি নিবন্ধনটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে। এটি শেয়ার করতে ভুলবেন না।  

For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.

1 thought on “সমকাম! ইসলামে সমকামের শাস্তি”

  1. I was looking through some of your content on this website and I conceive this web site is really informative! Retain posting.

    Reply

Leave a Comment