লেখক স্ত্রীর আকাঙ্খা ও প্রয়োজন পূরণ করার গুরুত্ব এবং স্ত্রীকে হাসিখুশি রাখার প্রয়োজনীয়তা তাঁর সুন্দর লেখনির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। আপনার স্ত্রীকে সন্তুষ্ট রাখতে লেখকের উপদেশমূলক আর্টিকেলটি পড়ুন।
স্ত্রীর আকাঙ্খা পূরণের প্রয়োজনীয়তা!
কতিপয় স্বামীর ব্যাপারে এরূপ অভিযোগ শুনা যায় যে, তারা ঘরে এসেই স্ত্রীর সাথে কোনো কথাবার্তা না বলে তাসবীহ হাতে নিয়ে এককোণে বসে জিকির জপতে শুরু করে। তাদের এ অবস্থা দেখে বাবা বায়েজীদ বোস্তামী এবং বাবা ফরীদুদ্দীন আত্তারও হয়তো মাথা নিচু করবেন! তদুপরি তারা ঘরেও প্রবেশ করেন এমন ভাবে যে, চোখ দু’টি গভীর মনোযোগ সহকারে তাসবীহ পাঠে রত, যেন খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ) আজমীর শরীফে তাশরীফ আনছেন।
প্রিয় ভাইটি আমার!! একটু চিন্তা করে বলুন তো, উপরোক্ত অবস্থা যেসব স্বামীর, তাদের দ্বারা কি স্ত্রীর হক আদায় হচ্ছে? তারা কি এই জিকির-তাসবীহ দ্বারা পার পেয়ে যাবেন? আমার তো মনে হয় না। কারণ ইসলামী শরীয়ত এটাকে সমর্থন করে না। এর প্রমাণ হলো, আম্মাজান হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাযি:) বলেন, হুজুর (সাঃ) যখন ঘরে তাশরীফ আনতেন তখন তিনি মুচকি হেসে তাশরীফ আনতেন। চোখ দুটি বন্ধ করে আরশে আজীমের উপর থাকতেন না। যমীনের অধিবাসিদের হকও আদায় করতেন। অথচ সবসময় তিনি উম্মতের জন্য কত চিন্তামগ্ন থাকতেন। সব সময় তাঁকে কাফেরদের মোকাবেলা করতে হতো। একটি জিহাদ শেষ হওয়ার পর অস্ত্রশস্ত্র রাখার মওকা এখনও হয়নি; এরই মধ্যে আরেকটি জিহাদের ঘোষণা হয়ে গেল। কিন্তু এতদসত্বেও কখনো এমন হয়নি যে, তিনি ঘরে প্রবেশ করেছেন, অথচ তাঁর চেহারা মোবারকে মুচকী হাসি ছিল না।
স্ত্রী যে ঘরে থাকে সে গৃহে মুচকি হেসে প্রবেশ করা, স্ত্রীর সাথে হাসিমুখে সাক্ষাত করার সুন্নত।
বলতে দ্বিধা নেই, বদদীন এবং দ্বীনদার উভয় শ্রেণী থেকেই এই সুন্নত আজ ছুটে যেতে শুরু করেছে। যারা বদদীন তারা বড় বড় মোচের মধ্যে মুখ দিয়ে চোখ লাল করে মুখ ভার করে ফেরাউন সেজে ঘরে আসে, যেন তাঁর ভয়ে স্ত্রী ভীত থাকে। যেন তাঁকে কোনো কিছু বলতে সাহস না পায়। পক্ষান্তরে যারা দীনদার তারা ঘরে প্রবেশ করেন বাবা বায়েজিদ বোস্তামী, বাবা ফরীদউদ্দীন আত্তার ও খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ) এর ছুরতে। মোরাকাবার সাথে ধ্যানমগ্ন হয়ে চক্ষু বন্ধ করে এমন ভাবে ঘরে আসেন, যেন তিনি আরশে মোয়াল্লায় আছেন! মাটির পৃথিবীর সাথে কোনো সম্পর্কই যেন তাঁর নেই।
আরও পড়ুন : সোনালী উপদেশ
মনে রাখবেন, এই উভয় শ্রেণীর লোকের জীবন ধারাই সুন্নত পরিপন্থী। তাই আজ থেকে এই ধারা বাদ দিন। স্বীয় স্ত্রীর কাছে যাওয়ার সময় মুখে মুচকি হাসি রাখুন। তাঁকে সময় দিন। আদর-সোহাগ দিয়ে তাঁর প্রাণের জ্বালা নির্বাপিত করুণ। তাঁর মনের কামনা-বাসনা পূরণ করুণ। সাধ্যমত সবকিছু দিয়ে তাঁর কলিজাকে ঠান্ডা করুণ। তাঁর সাথে হাস্য-রসিকতায় মেতে উঠুন। কারণ, এসময়টা তো এমন সময় যখন স্ত্রীর হক আদায়ের মধ্যে, তাঁকে হৃদয় উজার করে ভালোবাসা বিলিয়ে দেওয়ার মধ্যেই সাওয়াব। সুন্নত পালনের নিয়তে আপনি আপনার স্ত্রীকে যত আদর-সোহাগ দিবেন, যত ভালোবাসার বিনিময় করবেন, যত তাঁকে কাছে টানবেন ততই আপনার আমলনামায় সাওয়াব লিখা হতে থাকবে।
আরেকটি কথা। আপনি যদি আদর্শ স্বামী হতে চান তাহলে আপনাকে স্মরণ রাখতে হবে যে, আপনি আপনার স্ত্রীর অভিভাবক। স্ত্রী তাঁর পিতা-মাতার সংসার ও উহার মায়া-মুহাব্বত ছেড়ে আপনার সংসার ও পরিবারকে আপন করে নিয়েছে। তাই আপনাকে অবশ্যই তাঁর মৌলিক চাহিদা পূরণে যত্নবান হতে হবে। সাধ্যনুযায়ী তাঁর খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, তুমি যখন আহার করবে তাকেও আহার করাবে। তুমি যখন কাপড় পরিধান করবে তাকেও পরাবে।
আর্থিক অবস্থা অস্বচ্ছল হওয়ার কারণে অপারগতা হেতু স্ত্রীর মৌলিক চাহিদা গুলো পুরোপুরি পূরণ করতে সক্ষম না হলে অবশ্যই সান্ত্বনা দিতে হবে। তাঁকে বুঝিয়ে বলতে হবে। যাতে সে ধৈর্যধারণ করতে পারে। অনেক স্বামীর মধ্যে এটুকুও পাওয়া যায় না। এমনটি হওয়া মোটেও উচিত নয়। বাসস্থান ও মনোরঞ্জনের বিষয়ে যত্নবান হওয়া একজন আদর্শ স্বামীর একান্ত কর্তব্য। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে ইসলামী শরীয়তের মূল মেজাজ বুঝে তদানুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করুণ । আমীন!!
লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম। ( আদর্শ স্বামী স্ত্রী ২ )
এরপর পড়ুন >> স্ত্রীর উপর নির্যাতন নয়, সদাচরণ করুন!
প্রিয় পাঠক পাঠিকা, লেখক নির্যানিত স্ত্রীর ফরিয়াদ গল্পটি পড়তে ভালো লাগলে এটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করুন। আপনাদের সুন্দর মতামত ও উৎসাহ লেখকদের কে আরও ভালো লেখনিতে উৎসাহ যোগায়। – আমার বাংলা পোস্ট
For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.
Excellent.