এক অনিন্দ্য সুন্দরী মেয়ে মুন্নি। সুদন্তী –সুকেশী নব যৌবনা। মিষ্টি – মধুর চেহারা।হাসি তাঁর মুক্তোঝরা। চঞ্চল মনে এ বাড়ী ও বাড়ী ঘুরে বেড়ায় সারাক্ষণ। গ্রামের অতি সাধারণ ঘরের মেয়ে সে। কিন্তু দেখতে যেন রাজকন্যা! এলাকার সবাই তাঁকে চিনে। রাস্তায় বের হলে সকলেই হা করে তাকিয়ে থাকে। ভূয়সী প্রশংসা করে তাঁর রূপ-সৌন্দর্যের । কিন্তু তারা জানে না, এভাবে বেগানা কোনো মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকা কবীরা গোনাহ।
এখানেও অনেক গোনাহ হলো। কবীরা গোনাহ। যা তাওবা ছাড়া মাফ হয় না। কারণ, ইসলামী বিধান অনুযায়ী বিয়ের পূর্বে কনেকে একমাত্র বর ছাড়া অন্য কোনো পুরুষ দেখতে পারে না।
এদিকে মুন্নির মনে আনন্দ আর ধরে না। অচিরেই তাঁর বিয়ে হতে যাচ্ছে-একথা ভাবতেই তাঁর মনটা খুশিতে ভরে যায়। স্বামীর ঘরে যেতে সে যেন ব্যাকুল প্রায়!!।
নির্ধারিত তারিখে নূরে আলম সিদ্দিকীর সাথে মুন্নির বিয়ে সম্পন্ন হয় এবং সেদিনই একবুক স্বপ্ন ও আকাশসম আশা নিয়ে স্বামীর বাড়ীর দিকে পা বাড়ায়।
মুন্নির স্বামীর বাড়ী শহরে এলাকায়। অপরিচিত জায়গা। এখানে যেভাবে খুশি চলা যাবে না। বাপের বাড়ীর চালচলন অবশ্যই তাঁকে পরিত্যাগ করতে হবে। বাদ দিতে হবে সারাদিন টুইটুই করে ঘুরে বেড়ানোর মানসিকতা।
মুন্নি জানে, স্বামীর বাড়ীই তাঁর আসল বাড়ী। এখানে আজীবন তাঁকে থাকতে হবে। বাকী দিনগুলো এখানেই তাঁকে কাটাতে হবে। তাই খুব সাবধানে চলতে হবে। স্বামীর কথামত চলতে হবে। তাঁর আনুগত্য করতে হবে। তাঁর মন সর্বদা খুশী রাখতে হবে।
শহরের ছেলে নূরে আলম সিদ্দিক। টাকা-পয়সার কোনো অভাব নেই।
ফুলের মত বউ পেয়ে সেও যারপরনাই আনন্দিত। সে তাঁর স্ত্রীকে ভীষণ ভালবাসে। তাই অল্পদিনের মধ্যেই স্বামী – স্ত্রী উভয়ের মাঝে গড়ে ওঠে অসীম প্রীতির বন্ধন। এভাবেই কয়েকমাস চলে তাদের সুখের সংসার।
মুন্নীর শ্বশুর-শাশুড়ী ছিল সম্পদ লোভী। সেও শ্বশুর বাড়ী থেকে মোটা দাগের কিছু আশা করেছিল। ভেবেছিল, বলা-কওয়া হয়নি তাতে কি? এর শ্বশুর অন্তত হাজার পঞ্চাশের টাকা তাঁর হাতে তুলে দিবে। কিন্তু বাস্তবে তাঁর কিছুই না হওয়ার সে আশাহত হয়।
নূরে আলম সিদ্দিক ও তাঁর পিতা-মাতার মনের আশা পূরণ না হওয়ায় তারা আশাহত হয়েছে সত্য , কিন্তু হাল ছাড়েনি। তারা এমন একটা ওসিলা তালাশ করছিল যাকে কেন্দ্র করে তাদের উদ্দেশ্য সহজে পূরণ হবে।
কিছুদিন পর নূরে আলম একটি চাকুরির খোঁজ পায়। কিন্তু চাকরীটা পেতে হলে ঘুষ দিতে হবে এক লক্ষ টাকা। অথচ এই মুহূর্তে নূরে আলমের নিকট এত টাকা নেই। এদিকে চাকুরিটা যে তাঁর চাই-ই।
ঘুষ খাওয়া ও ঘুষ দেওয়া উভটাই হারাম। অবশ্য কেউ যদি তাঁর বৈধ হক আনতে গিয়ে নিরুপায় হয়ে ঘুষ দিতে বাধ্য হয় তবে ঘুষ দাতার গোনাহ না হলেও ঘুষ গ্রহীতার অবশ্যই গোনাহ হবে। এটা শরীয়তের বিধান।
এখানে লক্ষ্য করার বিষয় হলো, নূরে আলম সিদ্দিক এমন নিরুপায় হয়ে যায়নি, তাঁকে ঘুষ দিয়ে এই চাকরীটিই নিতে হবে। কেননা চাকুরী ছাড়াও ব্যবসা কিংবা অন্য কোনো উপায়ে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করার যথেষ্ট সুযোগ ছিল তাঁর। কিন্তু তারপরেও চাকুরী করার শখ মেটানো; তদুপরি এ উসিলায় শ্বশুর বাড়ী থেকে কিছু খসিয়ে নেওয়ার অভিপ্রায় সে এক লাখ টাকা ঘুষ দিয়েই চাকুরী নিতে চায়। সে ভুলে যায়, গোনাহের কথা, ভুলে যায় হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার কথা। সেই সাথে এও ভুলে যায় যে, হারাম দিয়েই সূচনা যে কাজের , সে কাজের পরিণতি ও ফলাফল আর যাই হোক- অন্তত মঙ্গল জনক হবে না।
সেদিন রাতের বেলা নূরে আলম সিদ্দিক তাঁর স্ত্রীকে বলল, মুন্নি!
আগামীকাল তুমি বাপের বাড়ী যাবে। তোমার বাবার কাছে সব খুলে বলবে। আমার জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়ে আসবে। নইলে এত সুন্দর চাকুরিটা হাত ছাড়া হয়ে যাবে।
স্বামীর আদেশে মুন্নি পরদিন চলে যায় বাপের বাড়ী। স্বামীর মনরক্ষার জন্য দরিদ্র পিতার কাছে চেয়ে বসে পঞ্চাশ হাজার টাকা! কিন্তু কোত্থেকে দিবেন এত টাকা মুন্নির পিতা? ভাবনায় পড়ে গেলেন তিনি। অবশেষে কোনো কূলকিনারা করতে না পেরে মেয়ের সুখের জন্য নিজের একখণ্ড জমি ছিল, তা-ই বিক্রি করে দিয়ে পঞ্চাশ হাজার টাকা মেয়ের হাতে তুলে দিলেন। মুন্নি টাকা পেয়ে সীমাহীন খুশি হয় এবং তৎক্ষণাৎ টাকা নিয়ে স্বামীর বাড়ীতে ফিরে আসে।
এই নিন পঞ্চাশ হাজার টাকা, বলে মুন্নি নতজানু হয়ে স্বামীর হাতে তুলে দেয় পঞ্চাশ হাজার টাকার বান্ডেল। নূরে আলম সিদ্দিক টাকা পেয়ে মহা আনন্দিত। অতঃপর এর সাথে আরো পঞ্চাশ হাজার মিলিয়ে এক লাখ টাকা ঘুষ দেয়। তাতে তাঁর চাকুরীটা হয়ে যায়।
নূরে আলম সিদ্দিক এখন রীতিমত চাকুরি করছে। মাস প্রতি তাঁর বিশ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। পরম সুখেই সে দিনকাল অতিবাহিত করছে। এদিকে মুন্নিও স্বামীর প্রতি স্ত্রীর যথাযথ কর্তব্য পালন করে যাচ্ছে। ফলে বড় সুখেই চলছিল তাদের সংসার।
কিছুদিন পর মা হলো মুন্নি। প্রসব করল ফুটফুটে একটি পুত্র সন্তান। বাবা হলেন নূরে আলম সিদ্দিক। শখ করে নাম রাখলেন অনিক। ছেলে সন্তান হওয়ায় বাড়ীর সবাই খুব খুশী। মায়ের সোহাগ, বাপের আদর আর ঘরের সবার স্নেহের ছায়ায় দিনদিন বড় হতে থাকে অনিক।
অনিকের তখন দুই বছর। হঠাৎ সংবাদ এলো, অনিকের বাবা একসিডেন্ট করেছে। আঘাত পেয়েছে খুব বেশি। মারাত্মক আঘাত পেয়েছে কোমরে। সে এখন হাস্পাতালে। অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সংবাদ শুনে বাড়ীর সকলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। মুন্নি চলে যায় হাস্পাতালে। উপস্থিত হয় স্বামীর খেদমতে। নূরে আলম সিদ্দিকীর ছয়মাস চিকিৎসা চলে। মুন্নি জান-প্রাণ দিয়ে স্বামীর খেদমত করে। দীর্ঘ ছয়মাস বিছানার মধ্যেই স্বামী প্রস্রাব –পায়খানা করে। মুন্নি খুশিমনে সেসব পরিস্কার করে স্বামীর যথোপযুক্ত সেবা – যত্ন করে। ডাক্তারের পরামর্শ মতো প্রতিদিন ফজরের সময় স্বামীকে ধরে ধরে হাঁটায়। বিভিন্ন ওষুধ পত্র খাওয়ায়। তাঁর সেবা –যত্নে নূরে আলম সিদ্দিক সুস্থ হয়ে ওঠে। এভাবে অসুস্থ স্বামীর খেদমত করতে করতে এক সময় সে নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়ে। ফলে হাস্পাতালেই তাদের যায় সাত সাতটি মাস।
সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরে আসে নূরে আলম সিদ্দিক। বাড়ী এসেই সে একটি নোটিস হাতে পায়! চলে যায় তাঁর সেই ঘুষ দিয়ে নেওয়া শখের চাকুরিটা! শারীরিক অসুস্থতা থেকে সেরে ওঠতে না ওঠেতেই আবার এতবড় আঘাত! কথায় বলে পাপ বাপকেও ছাড়েনা! চাকুরী হারিয়ে নূরে আলম হতভম্ব। হঠাৎ তাঁর মাথাটা চক্কর দিয়ে ওঠে। সে সম্বিত হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
সম্বিত ফিরে পেয়ে নূরে আলম সিদ্দিক ভাবতে থাকে, এখন কী করা যায়? দীর্ঘ দিন অসুস্থ থাকায় অনেক টাকা – পয়সা খরচ হয় তাঁর। এদিকে চাকরীও নেই। তাহলে এখন সংসার চলবে কীভাবে? গভীর ভাবনায় পড়ে যায় নূরে আলম সিদ্দিক।
অনেক ভেবেচিন্তে অবশেষে ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেয় নূরে আলম সিদ্দিক। সেই সুবাদে পিতা-মাতার প্ররোচনায় ব্যবসার পুঁজির জন্য মুন্নীকে জোর করে আবারও বাপের বাড়ি পাঠায় সে। তবে এবার পঞ্চাশ নয়, ষাট হাজার টাকা এনে দিতে হবে তাঁকে।
মুন্নি এল বাপের বাড়ী। বাবাকে অনেক বুঝিয়ে সিঝিয়ে বলল টাকার কথা। সব শুনে দরিদ্র বাবা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন। বললেন, এই মাত্র ক’দিন হলো জমি বিক্রি করে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়েছি। আজ আবার ষাট হাজার টাকা! কোত্থেকে দেব এই টাকা? আমার কি কোনো চাকরি-বাকরি আছে? কোনো ব্যবসা আছে? এমনিতেই খুব কষ্ট করে সংসার চলে। তাঁর উপর আবার এই ষাট হাজার টাকা? বাড়ীর ভিটে-মাটিটুকু ছাড়া আর কী আছে আমার? এটুকু বিক্রি করে দিলে আমরা থাকব কোথায়? মাগো!
আমার দ্বারা এই টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। আমাকে ক্ষমা করো!
মুন্নি ফিরে গেল স্বামীর বাড়ীতে। হাত শূন্য। টাকা না পেয়ে শ্বশুর- শাশুড়ী তাঁকে যন্ত্রণা দিতে শুরু করে। তাদের রূপ-সম্পূর্ণ বদলে যায়। বদলে যায় নূর আলম সিদ্দিকীর রূপও। সেও এখন পিতা-মাতার মতো মুন্নীকে অকথ্য ভাষায় গালাগালাজ করে। এমনকি মারধরও করে।
টাকার জন্য অবশেষে সুখের একটি সংসারে অশান্তি শুরু হয়। মুন্নি ধীরে ধীরে বঞ্চিত হতে থাকে স্বামীর আদর থেকে। নূরে আলম সিদ্দিক এখন আগের মতো মুন্নিকে ভালোবাসে না। এমনকি কোনো কোনো রাত এমনও যায় যে, সে তাঁর স্ত্রীর দিকে ফিরেও তাকায় না। বরং উল্টো সোহাগের স্থলে মুন্নীকে সহ্য করতে হয় চড়-থাপ্পর আর লাঠি-সোটার আঘাত। অসহ্য যন্ত্রণা সয়েও স্বামীর খেদমত করতে চেয়েছিল মুন্নি। কিন্তু তা আর তাঁর ভাগ্যে জুটেনি। কিছুদিন পর শ্বশুর-শাশুড়ী কুকুরের মত তাড়িয়ে দেয় তাঁকে। সাথে দিয়ে দেয় তিন বছরের অনিককেও। শত কষ্টের পরও হতভাগা মুন্নি থাকতে পারেনি স্বামীর বাড়ীতে। সে অবুঝ শিশু অনিককে নিয়ে চলে আসে বাপের বাড়ী।
বাপের বাড়ীতে বহু কষ্টে একটি বছর পার করে মুন্নি। ভাই-বউয়ের দুঃখজনক আচরণে সেখানেও থাকতে পারেনি। অবশেষে বাধ্য হয়ে বাপের বাড়ী থেকেও চলে আসে।
অনিকের বয়স এখন পাঁচ বছর। তাঁর ভবিষ্যতের দিকে চেয়ে মুন্নী চাকুরি নেয় গার্মেন্টস – এ। প্রতিদিন সকাল আটটায় যায়, আর বাসায় ফিরে রাত দশটায়। এখন এভাবেই বহু কষ্টে দিন কাটায় মুন্নি।
এখন অনিক কিছুটা বুঝতে শিখেছে। সে তাঁর বাবার অনুপস্থিতি টের পেয়েছে। সে তাঁর মাকে গলায় জড়িয়ে বলে, মা! সুমনের আব্বু আছে, রাকিবের আব্বু আছে। তারা এদেরকে কত সুন্দর সুন্দর বল এনে দেয়।
কিন্তু আমার আব্বু কোথায়? খেলার জন্যে আমার যে একটিও বল নেই?
বলো মা! আমার আব্বু কোথায়? আমি তাঁকে বলবো, আমার জন্য একটি বল নিয়ে আসতে।
মুন্নি ছেলেকে সান্ত্বনা দেয়ার বলে, তোমার আব্বা আছেন। অনেক দূরে আছেন! এক সময় তাঁর সাথে তোমার দেখা হবে। তিনি আসবেন।
কবে আসবেন তিনি? আমার জন্য বল নিয়ে আসবেন তো? আব্বু যদি আমার জন্য বল না নিয়ে আসেন, তবে কিন্তু আব্বুর সাথে আমি রাগ করব।
তুমিও তাঁর সাথে কোনো কথা বলো না। ঠিক আছে আম্মু?
আচ্ছা বাবা! ঠিক আছে।
ছেলের এসব উক্তি শুনে দু’গন্ড বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে মুন্নীর। ভাবে, এভাবে আর কতদিন চলবে? কতদিন ছেলেকে এভাবে বুঝিয়ে রাখা যাবে?
মুন্নী এখন নীরবে বসে শুধু কাঁদে। চোখের জলে তাঁর বুক ভাসে। আর মনে মনে বলে- দীর্ঘ তিনটি বছর অতিবাহিত হলো, একটি বারও স্বামী আমাকে দেখতে এলো না? কীভাবে আছি? কেমন আছি? তা কোনোদিন জানতেও চাইল না। আমাকে না হয়, অন্তত অনিককে দেখার জন্যও তো একবার আসতে পারত! হায়রে স্বামী আমার। কতো নিষ্ঠুর তুমি! কতো পাষাণ তুমি!!
দীর্ঘ পাঁচ বছর হঠাৎ একদিন নূরে আলমের সাথে দেখা মুন্নীর। বোরকা পরিহিত থাকায় মুন্নিকে চিনতে পারেনি নূরে আলম সিদ্দিক। মুন্নী ডাক দেয়, এই জনাব! দাঁড়ান।
নূরে আলম বলে, আমাকে ডাকছেন?
জ্বী আপনাকেই ডাকছি।
কেন?
কেন আবার? আপনি কি আমাকে চিনতে পারছেন না?
মুন্নী বোরকার নেকাব খুলে নেয়। বলে, দেখেন তো চিনতে পারেন কি না?
কখনো এই হতভাগাকে চিনতেন কি না?
একি, মুন্নী! তুমি! কেমন আছ তুমি? তোমার এই অবস্থা কেন?
হ্যাঁ, আমি সেই মুন্নি। যে ছিল আপনার দুঃসময়ের সাথী। আপনার জন্য নিবেদিত সেবিকা। যে ছিল আপনার সেবা-যত্নে উৎসর্গিতা । আমিই আপনার সেই হতভাগা মুন্নি, যাকে বাপের বাড়ী থেকে প্রথববার পঞ্চাশ হাজার টাকা এনে দেওয়ার জন্য বলেছিলেন। অতঃপর আমার বাবা জমি বিক্রি করে সেই টাকা যোগাড় করে দিয়েছিলেন।
কিন্তু পরবর্তীতে আবার চেয়ে বসেন ষাট হাজার টাকা। সেই টাকা দিতে না পারায় বাড়ী থেকে আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন আপনারা। সেই সাথে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন অবুঝ শিশু অনিককেও। আমিই সেই দুর্ভাগা, হতভাগা মুন্নি। কি আর হবে আমার? আমি যে নিতান্তই এক কপালপোড়া। ভাগ্যে আমার যা ছিল, তাই হয়েছে, আর কি?
এসব শুনেও নূরে আলম পাষাণ হৃদয়ে কোনো দয়ার উদ্রেক হয়নি। হবেই বা কেন! সে তো এতদিনে মোটা যৌতুক নিয়ে ঘরে তুলেছে আরেক সুন্দরী ললনাকে! তাঁকে নিয়ে আপাতত সুখেই দিনাতিপাত করছে সে। হায়রে মানুষ! তোমার বিবেক গেল কোথায়?
দুঃখিনী মুন্নি চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারে না। টপটপ করে তাঁর গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে থাকে মাটিতে। সবশেষে বিনয়ের সাথে স্বামীকে বলে, ঠিক। আপনার মনে যা চায় তাই করুণ। তবু আমি আপনার মনে কষ্ট দিতে চাই না। এ বলে, বুকে পাথরচাপা দিয়ে আপন গন্তব্য চলে যায় মুন্নি!
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! দেখলেন তো, একমাত্র টাকার জন্য একজন নিরাপরাধ কোমলমতি নারীর কি অবস্থা হয়েছে? শ্বশুর-শাশুড়ী, স্বামী সবাই তাঁর সাথে কেমন দুর্ব্যবহার করেছে? কুকুরের মত কেমন করে বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে? নিস্পাপ একটি শিশুকে পর্যন্ত পিতাহারা করেছে? ধিক! শত ধিক!
এসব নূরে আলম ও পিতা-মাতাদের উপর। যারা টাকার লোভে একটি নিষ্পাপ পতিপরায়ণা নারীকে পথে বসিয়েছে। দোয়া করি, মুন্নীকে আল্লাহ পাক তাঁর সোনাঝরা দিনগুলো আবার ফিরিয়ে দিন এবং পৃথিবীর সকল নারীকে নূরে আলম সিদ্দিক ও তাঁর পিতা-মাতার মতো টাকা লোভী মানুষদের হাত থেকে হেফাযত করেন। আমীন। [সহায়তায়ঃ মুহাম্মদ সোহেল মিয়া, তেলিয়া পূর্বপাড়া, কুমরাদি, শিবপুর, নরসিংদী।
লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম (আদর্শ স্বামী স্ত্রী ২)
এরপর পড়ুন>> স্ত্রী যখন পাহারাদার
For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.