আমার দ্বিতীয় বিয়ে! বিয়ের গল্প ১

“আমার দ্বিতীয় বিয়ে” দেশের জনপ্রিয় ইসলামিস্ট লেখক আরিফ আজাদ এর লেখিত একটি চমৎকার বিয়ের গল্প। লেখক তাঁর সুন্দর লেখনির মাধ্যমে এক বিধবা স্ত্রীর দ্বিতীয় বিয়ের গল্প তুলে ধরেছেন। তাহলে চলুন আমার দ্বিতীয় বিয়ে গল্পটি পড়া শুরু করি…

♥ আমার দ্বিতীয় বিয়ে! My second marriage

বাসা থেকে বের হবার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এমন সময় আমার এক বন্ধুর ফোন।
ফোনটা রিসিভ করতেই সে জানাল যে আমাদের বাল্যকালের বন্ধু জাহিদ আর বেঁচে নেই।
হার্ট এটাকে করে কিছুক্ষণ আগে মারা গেছে।
আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার জোগাড়।
আমি নিজের কানকে বিশ্বাসই করাতে পারলাম না।
এ আমি কি শুনলাম!
কাল বিকেলেও জাহিদের সাথে চৌ রাস্তার মোড়ে চা খেয়েছি,আর আজ সেই জাহিদ পৃথীবীতেই নেই?
এটা কি করে সম্ভব?
অফিসে আর যাওয়া হলনা।
জাহিদের লাশ দাফন করে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরছি।
এমন সময় দেখলাম,জাহিদের স্ত্রী তাদের একমাত্র মেয়ে মাঈশাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।
শান্ত্বনা দিব-সেই শক্তি বা ভাষা কোনটাই আমার নেই…
এশা’র নামাজটা পড়ে বাসায় ফিরলাম।
আমার স্ত্রী নিঝুম এসে আমাকে বলল- সব ঠিকঠাক হয়েছে?
আমি বললাম- হ্যাঁ।
সে বলল- ভাবীর অবস্থা কেমন?
– ভালনা।বেশ কয়েকবার অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল।আসার সময় দেখলাম মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।
– (সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল) আল্লাহ তাদের শোক কাটিয়ে উঠার তাওফিক দান করুক।
ঠিক এক সপ্তাহ পর একদিন নিঝুম আমাকে প্রশ্ন করল- ভাবীদের খোঁজ খবর কিছু নিয়েছেন?
আমি বললাম- হ্যাঁ,তিনি নাকি মেয়েটাকে নিয়ে তার বাবা’র বাড়ি চলে যাবেন।
– (সে প্রশ্ন করল) তার বাবা’র আর্থিক অবস্থা কেমন?
– জাহিদের কাছে একবার শুনেছিলাম তেমন ভালোনা।
নিঝুম কিছুক্ষণ চুপ থাকে।
এরপর বলল- একটা প্রস্তাব দিলে রাখবেন?
– কি প্রস্তাব?
– আগে বলুন রাখবেন কিনা?
– আচ্ছা।
আমার দ্বিতীয় বিয়েনিঝুম আমার হাত চেপে ধরে বলল- ‘আমি বলি কি,ভাবীকে আপনি বিয়ে করুন।বউয়ের মর্যাদা দিয়ে ঘরে তুলুন।তিনি একটা আশ্রয় পাবেন আর তার সন্তানটারও মাথার উপর একটা ছায়া হবে।প্লিজ না করবেন না’।
নিঝুম আমাকে এই প্রস্তাবটা দিবে আমি স্বপ্নেও ভাবিনি।
আমি বিস্মিত হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
সে আমাকে যে হাত দিয়ে চেপে ধরেছিল সেটা থর থর করে কাঁপতে লাগল। কিছুক্ষন দু’জনে চুপচাপ,কোন কথা নেই।
আমি স্থির হয়ে বললাম- ‘তুমি স্বাভাবিক আছ তো? তুমি কি বলছ তুমি জান?
সে বলল- জ্বী আমি স্বাভাবিক আছি,আর আমি সুস্থ মস্তিষ্কে কথাগুলো বলছি’।
আমার বিস্ময়ের ঘোর যেন কাটছেই না।
সে বলে যেতে লাগল- ‘আজ যে ঘটনা উনার জীবনে ঘটেছে,সেটা তো আমার সাথেও ঘটতে পারতো।
তখন আমি কি করতাম? ভিক্ষা? পরের দয়ায় বাঁচলে সেটা কি আপনার ভাল লাগত?
প্লিজ,আপনি প্রস্তাবটা সানন্দে গ্রহন করুন।
আমরা দু’জন বোনের মত থাকব।
আপনি রাজি থাকলে আমি ভাবী এবং তার অভিভাবকের সাথে কাল নিজে গিয়ে কথা বলব।
আমি বললাম- ‘আমরা চাইলে তাদেরকে টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করতে পারি’।
নিঝুম বলল- ‘না,এরকম করলে সেটা হবে দয়া।
আমি চাই তারা অধিকার নিয়ে বাঁচুক। অধিকার আর দয়া কখনোই এক নয়।
এটা তো খারাপ কিছু না।
শরীয়াহ সম্মত কাজ!
আর আমাদের আর্থিক অবস্থাও আলহামদুলিল্লাহ ভাল।
অসুবিধে কোথায়?’
আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
ভাবলাম- একজন নারী কতটা মহৎ প্রানের অধিকারী হলে নিজের স্বামীর অধিকার অন্য একজন নারীর সাথে ভাগাভাগি করতে পারে!
অবাক হলাম।
সে বলল- আপনি মত দিচ্ছেন?
– তুমি যা ভাল বুঝো!
আমার উত্তর শোনার পর তার ঠোটের কোণায় এক চিলতে হাসি দেখেছি, তবে অন্তরের গভীরে বয়ে যাওয়া ঘূর্নিঝড়ের আভাসটাও পেলাম চোখের কোণা বেয়ে জল পড়তে দেখে……
আমার দ্বিতীয় বিয়েটা হয়েছিল।
বিয়ের আগের রাতে নিঝুম আমাকে জড়িয়ে ধরে খুব কেঁদেছিল।
তাকে এভাবে আর কখনো কাঁদতে দেখিনি আমি।
একজন নারীর জীবনে এরচেয়ে কঠিন মূহুর্ত হয়ত আর কিছু হয়না।
আগে জানতাম পুরুষ মানুষের হৃদয় খুব শক্ত হয়।
তারা খুব সহজে কাঁদেনা।
কিন্তু আমি নিজেকে সেদিন ভুল প্রমানিত করলাম।
আমিও খুব কেঁদেছিলাম সেদিন।

লেখক : আরিফ আজাদ। 

গল্প আকারে শরীয়তের একটি বিধানকে তুলে ধরার চেষ্টা মাত্র। আর নারীদের মাঝে একটি ম্যাসেজ পাঠানোর লক্ষ্যে..

আরও পড়তে পারেন: বুদ্ধির তেলেসমাতি

For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.

Leave a Comment