লবঙ্গ সাধারণত গরম মসলা হিসাবে ব্যবহৃত হলেও লবঙ্গের আছে ওষুধি গুণাগুণ। সাধারণ অসুখ বিসুখে লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা পাওয়া যায়। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যায় লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা ও ব্যবহারের নিয়মগুলি।
আমরা প্রায় সকলেই ‘লং’ এর সাথে পরিচিত। আর গৃহিণীদের তো না-চেনার কোনো কারণ নেই। ‘লবঙ্গ’কেই অনেকে লং বলেন। এর আগার অংশ খাঁজকাটা, দেখতে অনেকটা ছোট নাকফুলের মতো। এর রং কালচে খয়েরি।
মাঝারি আকারের লবঙ্গ গাছ সাধারণ ১৫-২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। লবঙ্গের গন্ধযুক্ত এ গাছের পাতা দেখতে অনেকটা বকুল গাছের পাতার মতো। ডালের আগার দিকে থোকা ফুল আসে। বোঁটাসহ ফুলের কুঁড়ি শুকিয়ে গেলেই তা’ লবঙ্গে পরিণত হয়।
লবঙ্গের স্বাদ ও ব্যবহার
লবঙ্গের স্বাদ ঝাঁঝালো। এটি সাধারণত গরম মসলা হিসেবে বিভিন্ন ধরনের রান্নায় ব্যবহার করা হয়। যারা গান করেন, তারা গলায় স্বর পরিস্কার রাখার জন্য সবসময় একটি লবঙ্গ মুখে পুরে রাখেন। এমনকি মুখের দুর্গন্ধ থেকে রেখাই পাওয়ার জন্যও অনেকে লবঙ্গ মুখে পুরে রাখেন।
লবঙ্গের ঔষুধি গুনাগুন
লবঙ্গের রয়েছে নানা ঔষধি গুণ, যা নানা রোগের উপশম করে। আপনি পেট ফাঁপা, আমজ শুল, কাশি, পিপাসা, অরুচি ও দাঁতের ও মাথা ব্যথার মতো স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় লবঙ্গ ব্যবহার করে উপশম পেতে পারেন।
স্বাস্থ্য জনিত সমস্যায় লবঙ্গ ব্যবহারের নিয়ম
পেট ফাপাঃ অনেক সময় পেট ফেঁপে থাকে ও পেটের ভেতর গড় গড় করে শব্দ হয়। ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হয়। এ অবস্থায় কিছু পরিমাণ লবঙ্গ অল্প ভেজে গুঁড়া করে ৭ গ্রাম পরিমাণ সকাল-বিকাল দু’বেলা পানিসহ খেলে এ সমস্যা ভালো হয়ে যাবে।
আমজ শূলঃ পায়খানা হবার সময় পেটে মোচড় দিয়ে ব্যথা করলে তাকে আমজ শূল বলে। আমজ শূল হলে ২-৩ টি লবঙ্গ বেটে তাতে অল্প পরিমাণ গরম পানি মিশিয়ে সকাল বিকাল দু’বেলা খেতে হবে। এভাবে ৫ দিন খেলে আমজ শূল রোগের উপশম হবে।
কাশিঃ অল্প অল্প কাশির সাথে বুকে ব্যথা যদি থাকে, তাহলে নিউমোনিয়ার ভয় করাটাই স্বাভাবিক। এ রকম হলে ৪ গ্রাম লবঙ্গ গুড়া করে সামান্য গরম পানিসহ দু’বেলা খেলে কাশি ও বুকের ব্যথাটা চলে যাবে।
পিপাসা রোগঃ অনেকেরই পিপাসা রোগ হয়ে থাকে। এতে ঘন ঘন পানির পিপাসা লাগে। ধরে নিতে হবে এরা প্রায়ই চোরা অম্বলে ভোগেন। এর পরিণতি খুব একটা ভালো না। এরকম দেখা গেলে ৪ গ্রাম পরিমাণ লবঙ্গ গুড়া করে সাথে ২-৪ ফোঁটা মধু মিশিয়ে সকাল বিকাল জিভ দিয়ে চেটে খেলে পিপাসা রোগ সেরে যাবে।
অরুচিঃ কখনো কখনো ভাত, রুটি, মাছ, মাংস বা মিষ্টি জাতীয় খাবারসহ কোনো কিছুই খেতে ইচ্ছে করে না। সবকিছুতেই যেন অরুচি ভাব। এ রকম হলে লবঙ্গ ভেজে গুড়া করে নিন। ঐ গুঁড়া ৪ গ্রাম পরিমাণ হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে নিন। খালি পেটে ও দুপুরে খাবারের পর খেলে খাবারে রুচি আসবে।
মাথার যন্ত্রণাঃ যে কোনো কারণে মাথা যন্ত্রণা হতে পারে। ধোঁয়া, রোদ, ঠাণ্ডা লাগার ফলে বা অন্য কোনো কারণে কখনো কখনো মাথায় যন্ত্রণা শুরু হয়। এছাড়াও নানা কারণে এ রোগ হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে লবঙ্গ গুঁড়া ৪ গ্রাম পরিমাণ দিনে ২ বার , প্রয়োজনে ৩ বার গরম পানিসহ খেলে উপশম হবে।
দাত ব্যথাঃ দাঁতে ব্যথা হলে প্রথমে গরম পানি দিয়ে মুখটা ধুয়ে ২/৩ টি লবঙ্গ থেঁতো করে দাঁতের গোড়ায় চেপে রাখলে ব্যথা তাড়াতাড়ি সেরে যাবে।
Also read : অসুখে তেজপাতা খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম
নোটঃ তবে মনে রাখবেন, যাদের গ্যাস্ট্রিক আছে তাদের লবঙ্গ খাওয়া ঠিক না। লবঙ্গ দীর্ঘদিন খেলে চুল পড়ে যায়।
দেখলেই তো! ঝাঁঝালো লবঙ্গের কেমন মিষ্টি মিষ্টি সুখ! ছোট-খাটো অসুখে ব্যবহার করতে পারেন লবঙ্গের মতো উপকারি মসলা।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা, আশা করি লবঙ্গের উপকারিতা সমূহ জেনে আপনার ভালো লেগেছে এবং লবঙ্গের ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতিগুলি আপনার ও আপনার পরিবারের স্বাস্থ্য সমস্যায় উপকারে আসবে। আর আপনি যদি ইতোমধ্যে লবঙ্গ ব্যবহার দ্বারা উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
Please join our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Tumblr And Youtube channel .
আমি গ্যাস্ট্রিক এর জন্যে লবঙ্গ খেয়ে ভীষণ উপকার পেয়েছি।
আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ।