পড়ে যাওয়া দুধের জন্য কাঁদা অনর্থক

আপনার জীবনকে উপভোগ করতে মানুষের মনের গতি কিভাবে পরিবর্তন করবেন তা জানতে ও শিখতে সম্মানিত লেখকের পড়ে যাওয়া দুধের জন্য কাঁদা অনর্থক লেখাটি পড়ুন। 

পড়ে যাওয়া দুধের জন্য কাঁদা অনর্থক

মানুষের গায়ের রং দৈহিক কাঠামো যেমন পরিবর্তন সম্ভব নয়। তেমনি অনেকে মনে করেন, মানুষ যে প্রবৃত্তি ও মানসিকতা নিয়ে বেড়ে ওঠে এর পরিবর্তনও কখনো সম্ভব নয়। অথচ মেধাবীরা মনে করেন, মানসিকতার পরিবর্তন সম্ভবত কাপড় পরিবর্তনের চেয়েও সহজ।

মানুষের মানসিকতা ও অভ্যাস মাটিতে পড়ে যাওয়া দুধের মতো নয় যে, তা আর তোলা সম্ভব নয়; বরং যথাযথভাবে অনুশীলন করলে আমরা নিজেদের প্রবৃত্তি ও মানসিকটা পাল্টে ফেলতে পারি। শুধু তাই নয়, যথাযথ প্রক্রিয়ায় কখনো কখনো মানুষের চিন্তা-চেতনাও পরিবর্তন করা যায়।

ইবেন হাযম (রহঃ) ‘তওকুল হামামাহ’ নামক গ্রন্থে লিখেছেন-স্পেনে একজন ধনী ব্যবসায়ী ছিল। সেখানকার আরো চারজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে তার প্রতিযোগিতা ছিল। এক পর্যায়ে তাঁরা তার প্রতি বিদ্বেষী হয়ে উঠলো এবং তাঁকে চরমভাবে নাজেহাল করার ষড়যন্ত্র করলো।

একদিন সকালে সে ব্যবসায়ী তার দোকানে যাচ্ছিল। তার পরনে ছিল সাদা জুব্বা আর  মাথায় ছিল সাদা পাগড়ি। পথিমধ্যে সে চারজনের একজনের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হলো। সে তার সঙ্গে সালাম বিনিময়ে করে পাগড়ির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘আপনার হলুদ পাগড়িটা তো বেশ চমৎকার!’

ব্যবসায়ী বললো, ‘আরে! তুমি অন্ধ হয়ে গেলে নাকি? সাদা পাগড়িকে হলুদ পাগড়ি বলছ কেন?’

লোকটি বললো, ‘আপনি ভুল করছেন। পাগড়িটি আসলে হলুদ। তবে হলুদ হলেও আপনাকে বেশ চমৎকার লাগছে।’

ব্যবসায়ী আর বেশি কথা না বলে সামনের দিকে হাঁটতে লাগল। একটু অগ্রসর না হতেই ঐ চারজনের আরেকজন এসে সালাম দিয়ে তার পাগড়ির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘মাশাআল্লাহ! আপনি তো আজ চমৎকার পোশাক পরেছেন। পোশাকটি আপনাকে খুব মানিয়েছে। বিশেষ করে এ সবুজ পাগড়িটিতে আপনাকে অন্যরকম লাগছে।’

ব্যবসায়ী তখন নিজের পাগড়িকে দিকে তাকিয়ে ভালোভাবে দেখে নিশ্চিত হয়ে বললো, ‘আপনি ভুল দেখছেন। আমার পাগড়িটি সবুজ নয় সাদা।’

সে বললো, ‘না না, এটা সাদা নয় আমি হলফ করে বলছি এটা সবুজ। তবে সবুজ হলেও চিন্তার কারণ নেই। এটা বেশ সুন্দর।’

এরপর সে ব্যবসায়ী চিৎকার করে বললো, আমার পাগড়ি সবুজ নয় সাদা। এটা বলতে সে তার পাগড়ির বিভিন্ন অংশ নাড়াচাড়া করে দেখতে লাগল। পিঠের ওপর থেকে পাগড়ির প্রান্তদেশ টেনে নিয়ে ভালোভাবে দেখলো। নাহ সাদা-ই তো দেখা যাচ্ছে। এরপর সে সোজা তার দোকানের সামনে গিয়ে তালা খোলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল এর মধ্যেই তৃতীয়জন এসে বললো, ‘আজকের পোশাকটা তো আপনাকে বেশ ভালো লাগছে। বিশেষ করে আপনার এ নীল পাগড়িটার জুড়ি মেলা ভার।’

ব্যবিসায়ী তখন নিজের পাগড়ির দিকে আরেকবার তাকিয়ে বললো, ‘ভাই! আমার পাগড়ির রঙ সাদা।’ লোকটি বললো, ‘আপনি ভুল করছেন। আপনার পাগড়ির রঙ নীল। তবে এটা সুন্দর মানিয়েছে আপনাকে। এ নিয়ে কোনো চিন্তা করবেন না।’ এ কথা বলে সে চলে গেল।

এদিকে সে একা-একা বলে চললো, ‘আমার পাগড়ি সাদা। আমার পাগড়ি সাদা।’ বারবার সে পাগড়িটি নেড়ে-চেড়ে দেখতে লাগল। ব্যবসায়ী কোনোভাবেই তার দৃষ্টি পাগড়িটি থেকে সরাতে পারছিল না।

এর মধ্যে চতুর্থজন এসে বললো, ‘মাশাআল্লাহ! আপনাকে অভিনন্দন। এ লাল পাগড়িটি আপনি কোত্থেকে কিনেছেন?’

এটা শুনে সে ক্ষিপ্ত হয়ে বললো, ‘আরে ভাই! কী আবোল-তাবোল বকছেন? আমার পাগড়ি তো নীল।’

‘না, এ তো দেখছি লাল।’

ব্যবসায়ী তখন চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলো আর বলতে লাগল, ‘আমার পাগড়ি সাদা। না, আমার পাগড়ি লাল।’ একটু পরে সে আবার বললো, ‘আমার পাগড়ি সবুজ। না, বরং এটা নীল। না না, এটা তো কালো।’ কিছুক্ষণ চুপ থেকে সে হাসতে শুরু করলো। এরপর কাদঁতে লাগল। এরপর সে হঠাৎ লম্ফঝম্ফ দিতে লাগল।

ইবনে হাময বলেন, পরবর্তীতে আমি দেখেছি এ ব্যবসায়ী স্পেনের অলি-গলিতে পাগল হয়ে ঘুরছে আর ছোট ছোট বাচ্ছারা তার দিকে পাথর ছুঁড়ে মারছে।’

এ চারজন যদি তাঁদের দুরভিসন্ধিমূলক কূটকৌশল দিয়ে একজন মানুষের প্রকৃতি পরিবর্তন করে দিতে পারে, তার বিবেক-বুদ্ধি বিকৃত করে দিতে পারে তাহলে আপনি কেন ওহীর আলোয় আলোকিত ও নববী পাঠশালায় চর্চিত আচরণ দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে মানুষের মনের গতি আল্লাহর দাসত্বের দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারবেন না?

সফলতা অর্জন করতে নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতার সর্বোত্তম ব্যবহার করুণ।

যদি বলেন, ‘না, আমি পারব না।’

আমি বলব, ‘কমপক্ষে চেষ্টা তো করুণ।’

যদি বলেন, ‘কীভাবে চেষ্টা করতে হয় তা আমি জানি না।’

আমি বলবো, ‘তাহলে আগে শিখুন।’

নবী করীম (সাঃ) তো বলেছেন,

“জ্ঞান লাভ হয় কেবল শেখার মাধ্যম। আর সহনশীলতা অর্জিত হয় অধ্যবসায়ের মাধ্যমে। (আল মুজামুল কাবীর, তাবারানী; ১৬২৯৬। শুআবূল ঈমান, বাইহাকীঃ ১০৩৩৩)

দৃষ্টিভঙ্গি

দুঃসাহসীরা নিজেদের দক্ষতার উন্নতি করতে গিয়ে নিজের সক্ষমতাকেও ছাড়িয়ে যায়। কখনো কখনো অন্যের দক্ষতা বাড়িয়ে দেয় কিংবা পাল্টে দেয়।

উৎস : জীবনকে উপভোগ করুন

এরপর পড়ুন : আপনি হবেন অন্য

For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.

Leave a Comment