যতো পারো কথা বলো, লেখক এক স্বামী স্ত্রীর কসমের ঘটনা গল্প আকারে তার বইতে তুলে ধরেছেন। স্বামী স্ত্রী ঝগড়ার এক পর্যায়ে একে অপরকে কসম দিয়ে বসে। অতঃপর ইমাম আবু হানিফা রহ নিকট শরাপন্ন হলে তিনি স্বামী স্ত্রীর এই কসমের ঘটনা মীমাংসা করে দেন। তাহলে চলুন স্বামী স্ত্রীর এই কসমের গল্প টি পড়া শুরু করি….
যতো পারো কথা বলো
ইমাম আবু হানিফা রহঃ-এর জামানার ঘটনা। একবার এক লোক তার স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করল। ঝগড়া যখন তুমুল পর্যায়ে চলে গেল তখন সে রাগের মাথায় কসম করে বলল, যতক্ষণ তুমি আমার সাথে কথা না বলবে, ততক্ষণ আমি তোমার সাথে কথা বলব না।
স্ত্রীর মেজাজও ছিল কড়া। এসময় তার উচিত ছিল, ঝগড়া আর আগে না বাড়িয়ে ধৈর্যধারণ করা এবং নিজের পক্ষ থেকে কথা বলে স্বামীকে কসম পুরা করার সুযোগ দেওয়া। কিন্তু যে স্ত্রীর মেজাজ গরম, সেই সাথে আবার আকলও কম–তার পক্ষে কি এরূপ করা সম্ভব!
স্বামীর কথা শেষ হতে না হতেই স্ত্রী আগুনের মতো জ্বলে ওঠল এবং স্বামীর ন্যায় কসম করে বলল, আপনি যতক্ষণ আমার সাথে কথা না বলবেন, আমি ততক্ষণ আপনার সাথে কথা বলবো না।
কসমের কী পরিণতি–রাগ বেশি হওয়ায় স্বামী-স্ত্রী কেউই বিষয়টি নিয়ে ভাবার সুযোগ পায়নি। কিন্তু পরে যখন হুঁশ ফিরে এলো এবং ক্রোধ প্রশমিত হলো, তখন তারা আফসোস করতে লাগল এবং এর সমাধানের জন্য এখানে সেখানে ছুটাছুটি করতে লাগল।
স্বামী বেচারা প্রথমে হযরত সুফিয়ান সাওরী রহঃ-এর শরণাপন্ন হলো এবং তার নিকট ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে সমাধান চাইল।
সুফিয়ান সাওরী রহঃ বললেন–স্বামী স্ত্রী যে-ই আগে কথা বলবে, তাকেই কসমের কাফফারা আদায় করতে হবে। কাফফারা আদায় ব্যতিত অন্য কোনো উপায় নেই।
হযরত সুফিয়ান সাওরীর ফতোয়ায় লোকটি একেবারে নিরাশ হয়ে গেল। তথাপি মাসআলাটির ব্যাপার নিশ্চিত হওয়ার জন্য ইমাম আবু হানিফা রহঃ এর খেদমতে উপস্থিত হলো।
ইমাম আবু হানিফা রহঃ লোকটির নিকট তার আগমনের কারণ জানতে চাইলে সে সব কিছুর বর্ণনা দিল এবং সবশেষে বলল, হযরত! আল্লাহর ওয়াস্তে আপনি একটু চিন্তা করে আমাকে একটা সমাধান বলে দিন।
ইমাম আবু হানিফা রহঃ বললেন–
যাও স্ত্রীর সাথে যত পারো মনভরে কথা বলো, কারো উপর কোনো কাফফার ওয়াজিব হবে না।
এ ফতোয়া শুনে সুফিয়ান সাওরী রহ. ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর খেদমতে হাজির হলেন এবং কীভাবে তিনি এই ফতোয়া দিলেন তার ব্যাখ্যা জানতে চাইলেন।
ইমাম আবু হানিফা রহ. বললেন–স্বামী কসম করার পর স্ত্রীও যখন কসম করল, তখন তো এই কসমের দ্বারাই তার কথা বলা হয়ে গেল। এখন যদি স্বামী আগে কথা বলে তাহলে সে যেমন কসম ভঙ্গকারী হবে না, তেমনি স্ত্রীও কসম ভঙ্গকারী হবে না। কেননা তখন তো স্ত্রীর আগেই স্বামীর কথা বলা হবে।
এ ব্যাখ্যা শুনে সুফিয়ান সাওরী রহ. বললেন–ইমাম আবু হানিফা উপস্থিত যে চিন্তা করেন, অন্যরা তার ধারে-কাছেও পৌঁছতে পারেনা। [সহায়তায়ঃ জীবনের পাতা থেকে।]
লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম (আদর্শ স্বামী স্ত্রী ১)
এরপর পড়ুন : চাঁদের চেয়েও সুন্দর
For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.