স্বামীর পরশে বদলে গেল স্ত্রীর জীবন, লেখক এক মুসলিম স্বামী ও খৃষ্টান স্ত্রীর জীবনের ঘটনা তুলেছেন ধরেছেন, যিনি ইসলাম গ্রহণ না করেই এক মুসলিম যুবককে বিয়ে করেন। কিন্তু বিয়ের পরে মুসলিম স্বামীর পরশে বদলে গিয়েছিল স্ত্রীর জীবন। কি ছিল স্বামীর সেই পরশ? চলুন স্বামীর পরশে স্ত্রীর বদলে যাওয়া গল্পটি পড়া শুরু করি…
স্বামীর পরশে বদলে গেল স্ত্রীর জীবন ( এক খৃষ্টান তরুণীর গল্প)
যুবতী বেশ সুন্দরী। অনিন্দ্য সুন্দরী। ওর বাইরের রূপটা যে কোনো পুরুষকে মুগ্ধ করলেও ভিতরটা তার ঘোর অন্ধকারে ঢাকা। কারণ ইসলামের আলো এখনো তার অন্তর জগতে প্রবেশ করেনি। কালেমায়ে শাহদাত পড়ে মুসলমান হয়নি। ধর্মে ছিল সে খৃষ্টান। আর এ অবস্থায়ই নববধূ হয়ে চলে আসে জনাব ওয়াহহাবের স্ত্রী হয়ে।
রাইহানা ইসলাম গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত আবদুল ওয়াহহাব সাহেবকে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে। মোকাবেলা করতে হয়েছে মারাত্মক পরিস্থিতি। পাঠকবৃন্দ! চলুন, জনাব আব্দুল ওয়াহহাব সাহেবের মুখ থেকেই তাঁদের কাহিনীটা হৃদয়ঙ্গম করি। সেই সাথে নিজেরাও শিক্ষা গ্রহণ করে তদানুযায়ী নিজেদের জীবনকে ঢেলে সাজাতে চেষ্টা করি।
জনাব আবদুল ওয়াহহাব সাহেব বলেন, রাইহানাকে বিয়ে করার সময় আমি ছিলাম নামে মুসলমান। ইসলামী বিধি-বিধান পালনের কোনো গুরুত্ব আমাকে মধ্যে ছিল না। তাই সেগুলো রীতিমত পালনও করতাম না। এমনকি কোনো খৃষ্টান মেয়ের সাথে কোনো মুসলমান ছেলের বিয়ে সহীহ হয় না—একথাটিও আমার জানা ছিল না। রাইহানার অবস্থাও ছিল আমার মতো। সেও তার ধর্মের প্রতি আন্তরিক ছিল না। বরং বলা যায়, ধর্ম কিংবা ধর্মীয় বিধি-বিধান পালনের ব্যাপারে তার কোনো মনোযোগই ছিল না। আমি অবশ্য মাঝে মধ্যে মসজিদে যেতাম। নামাজ পড়তাম। কিন্তু সে কখনো চার্চে যেতো না।
কিছুদিন পর আমাদের একটা সন্তান হলো। তখন আমি সন্তানের ভবিষ্যত চিন্তায় বিভোর হলাম। ভাবলাম, আমি ও আর স্ত্রী যদি একই ধর্মের অনুসারী না হতে পারি, তবে সন্তান বড় হয়ে কোন ধর্মের অনুসারী হবে। তাই আমি রাইহানাকে মসজিদে যাওয়ার দাওয়াত দিলাম। কিন্তু আমার দাওয়াত সে স্পষ্ট ভাষায় কেবল অস্বীকারই করল না, উল্টো চার্চে যেতে শুরু করল। এমনকি এটি একটি অলিখিত নিময়ই হয়ে গেল যে, তাঁকে আমি যখনই মসজিদে যাওয়ার কথা বলি তখনই সে চার্চে ছুটে যায়।
এবার আমার বোধদয় হলো। আমি ভাবলাম, আমি মসুলমান, আমার স্ত্রী খৃষ্টান। হায়, এ আমাদের কেমন জিন্দেগী? মুসলমানের ঘরে খৃষ্টান বউ! তাছাড়া এতদিন তো অবস্থাটা এমন ছিল না যে, সে চার্চে যেত না। কিন্তু এখন? এখন তো সে চার্চেও যায়!
আমি বিষয়টি নিয়ে খুব ফিকির করলাম। তাঁকে মুসলমান বানানোর জন্য্ কী কৌশল অবলম্বন করা যায়, এ নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন হলাম। অবশেষে তাঁকে এই প্রস্তাব দিলাম যে, চলো এক রবিবারে আমরা উভয়ে চার্চে যাবো, আর আরেক রবিবারে যাব মসজিদে। সে খানিকটা চিন্তা করে আমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেল।
এই প্রস্তাব দ্বারা আমার উদ্দেশ্য ছিল, আমি চাচ্ছিলাম—সে কোনোভাবে ইসলামের পরিচয় তার সামনে প্রকাশিত হোক। সে ইসলামের কাছে আসুক।
আমি যখন আমার স্ত্রীকে মুসলমান বানানোর ফিকির তখন আমার মাঝেও আত্ম-সচেতনতার সৃষ্টি হলো। আমি মনে মনে নিজকে ধিক্কার দিয়ে বললাম, আমি কেমন ঈমানদার যে, মুসলমান হয়েও ইসলামী বিধি-বিধান ঠিকমত পালন করি না? ইসলামের রংঙে রঙিন হই না? তাছাড়া আমি তাছাড়া আমি নিজে ইসলাম পালন না করে, আরেকজনকে ইসলামের দাওয়াত দিলে তা কতটুকুই বা কার্যকর হবে? না, আমাকে আর এভাবে চললে হবে না। আমাকে পুরোপুরি মুসলমান হতে হবে। আমলদার হতে হবে। ইসলামের যাবতীয় বিধান একশ ভাগ পালন করতে হবে। তখন হয়তো আমার স্ত্রীকে আর ইসলাম গ্রহণের জন্য পীড়াপীড়ি করতে হবে না। কারণ সে যখন তার স্বামীর মধ্যে ইসলামের অপরূপ সৌন্দর্য অবলোকন করবে, অতি সহজে তখন ইসলামের প্রকৃতরূপ তার সামনে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠবে। ফলে তখন সে ইসলামের প্রতি আগ্রহী হবে এবং আল্লাহ চাহেত ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয়ও নিবে।
যে কথা সে কাজ। সেদিন থেকে আমি আমার জীবন বদলাতে শুরু করলাম। আলেম-উলামাদের সান্নিধ্যে যেতে লাগলাম। একান্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করতে লাগলাম, ইসলামের যাবতীয় বিধি-বিধান। প্রত্যেক কথা ও কাজে অনুসরণ করতে লাগলাম, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিটি সুন্নত। ঘরে বাইরে সকল ক্ষেত্রে ইসলামী অনুশাসণ মেনে চলতে লাগলাম। মোট কথা ইসলামী আচার-আচরণে রাঙিয়ে তুললাম—আমার জীবনের প্রতিটি অঙ্গন।
আমি যখন ধর্মের প্রতিটি বিধান একান্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করতে অভ্যন্ত হয়ে পড়লাম, তখন আমি মনের মধ্যে এমন এক প্রশান্তি অনুভব করলাম, যা কেবল অনুভব করা যায়, অন্যকে বলে বুঝানো যায় না। আর সে প্রশান্তি ছুঁয়ে গেল রাইহানার কোমল হৃদয়কেও। দেখা গেল, কিছুদিনের মধ্যেই সে ইসলামী আচার-আচরণ ও সভ্যতার সাথে পরিচিত হয়ে ওঠে। দুর্বল হয়ে পড়ে ইসলামের প্রতি। তাছাড়া ঘরে ইসলামী পরিবেশ, আর মসজিদ থেকে ইসলাম সম্পর্কে মূল্যবান আলোচনা শ্রবণ-এ দুই বস্তু ইসলামের প্রতি তার দুর্বলতা ও আগ্রহকে বহুমাত্রায় বাড়িয়ে তুলে। ফলে বেশিদিন আমাকে অপেক্ষা করতে হয়নি। ইসলামের সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ হয়ে একদিন সে কালিমায়ে শাহদাত পড়ে মুসলমান হয়ে যায়। আলহামদুলিল্লাহ্।
আরো খুশি ও শুকরিয়ার ব্যাপার হলো, ইসলাম গ্রহণের পর রাইহানা আশ্চর্য রকমভাবে বদলে যায়। মুসলমান হয়ে ইসলামকে সে গ্রহণ করে প্রাণখুলে, পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও ভালোবাসার সাথে। সে তার জীবনের প্রতিটি কাজকে ইসলামের রঙ্গে রঙিন করে তুলতে প্রয়াসী হয়ে ওঠে। পর্দা করতে শুরু করে। তাও আবার অসম্পূর্ণ পর্দা নয়। অর্থাৎ মুখ কিংবা চোখ বের করা “ফ্যাশনী পর্দা” নয়। রাইহানা প্রায়ই বলে, মুসলমানের ঘরে জন্ম হওয়া সত্ত্বেও মুসলিম নারীরা কেন পর্দা করে না? আর করলেও কেন পুরোপুরি করে না? কেন তাঁরা ইসলামী কায়দায় মাথা ঢাকে না?। কেন তাঁরা শরীরটা ঢেকে সৌন্দর্যের উৎস “মুখখানা” খোলা রাখে? তাঁদের কি কোনো অনুভতি নেই? তাঁরা কি বুঝে না যে, মুখ কিংবা চোখ খোলা রেখে পর্দা করলে পর্দার বিধান সম্পূর্ণরূপে পালিত হয় না? তবে কি তাঁরা আল্লাহকে ভয় করে না? তাঁদের কি চিন্তা নেই যে, উত্তমরূপে পর্দার ব্ধান পালন না করলে মৃত্যুর পর কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে১ তাঁদেরকে? এমনকি দুনিয়াতেও সম্মুখীন হতে পারে নানাবিধ পেরেশানীর? তাছাড়া ইসলামী পোষাক তো নারীর ব্যক্তিত্ব বাড়িয়ে তোলে। তার মর্যাদাকে বিকশিত করে। আহ! ওরা না বুঝেই অন্যদের রঙ্গ চড়াতে চাচ্ছে নিজেদের গায়ে! কবির ভাষায়—
পোষাকে খৃষ্টান, কালচারে হিন্দু
হে নারী! আজব মুসলমান তুমি।
তুমি তো জানো না, তোমায় দেখে যে—
লজ্জায় অবনত হয় ইহুদির বাচ্চাও।
ইসলামের প্রতি রাইহানার বিশ্বাস ছিল পরম শাণিত। ইসলাম গ্রহণের পর ইসলামী শিক্ষার প্রতি তার ঝোঁক অতিমাত্রায় বেড়ে যায় । সে তখন অন্য ধর্মের কোনো বই-পুস্তক পড়ে না। বরং ইসলাম ধর্ম বিষয়ক বই-পুস্তক এনে দেওয়ার জন্য আমাকে সে বারবার অনুরোধ জানাতে থাকে। আমিও সানন্দে দেশের বিভিন্ন নামকরা লাইব্রেরী গুলো খোঁজে ইসলামের বিভিন্ন দিক নিয়ে নামকরা লেখকদের লেখা বই পুস্তক কিনে ওর হাতে তুলে দেই। এসব বই হাতে পেয়ে রাইহানা যেমন আনন্দিত হয়, তেমনি দারুণ পুলকিত হই আমিও। কারণ, আমি তো এমনটিই চাচ্ছিলাম। বড় কথা হলো, ইসলাম সম্পর্কে রাইহানা যা-ই জানতো, যা-ই শিখতো তার উপরই সে আমল শুরু করে দিত। আর আমাকে উদ্দেশ্য করে বলত-আপনার প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ। আপনার পরশ পেয়েই আমি এ পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছি। আল্লাহ পাক আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুণ।
সন্তানের ব্যাপারে রাইহানার বক্তব্য ছিল অসম্ভব। সে তার সন্তানকে ইসলামী স্কুলেই পড়াবে—এ যেন তার কঠিন প্রতিজ্ঞা। তার কথা হলো—ইসলামী শিক্ষা ছাড়া কেউ পরিপূর্ণ মুসলমান হতে পারে না। সে প্রায়ই বলত, পার্থিব শিক্ষায় কোনো ঘাটতি থাকলে সেটা পরবর্তীকালে পুষিয়ে নেওয়া যায় কিন্তু ধর্মীয় শিক্ষায় কোনো ঘাটতি থাকলে সেটা আর পুষিয়ে নেওয়া যায় না।
প্রিয় পাঠক-পাঠিকা! আবদুল ওয়াহহাব সাহেব ও রাইহানার দাম্পত্য জীবন আজ পরম আনন্দের, পরম সুখের। ইসলামের স্নিগ্ধ ছোঁয়ায় তাঁরা লাভ করে অপূর্ব প্রশান্তি। ইসলাম ধর্ম জানা ও মানার মধ্যে যে এত শান্তি আছে, এত সুখ আছে—তা যদি তাঁরা আরো আগে জানতো, আরো আগে বুঝতো, তবে-শান্তি-সুখের এই সুন্দরতম জীবনকে আরো আগেই তাঁরা গ্রহণ করত। হে আল্লাহ! ওরা যে কথাটি বুঝতে পেরেছিল, দাম্পত্য জীবনের কয়েকটি বসন্ত পেরিয়ে যাওয়ার পর—সে কথাটি আমাদেরকে বুঝার এবং সে অনুপাতে জীবন যাপন করার তাওফীক দাও আজই—এখন থেকেই। আমীন।
এরপর পড়ুন : পাপের সাজা
লেখকঃ মাওলানা মুফীজুল ইসলাম
প্রিয় পাঠক-পাঠিকা, লেখকের স্বামীর পরশে বদলে গেল স্ত্রীর জীবন গল্পটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে এটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করুন।
For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.