লেখক এক নারীর দাম্পত্য জীবনে স্বামীর মন জয় করার গল্প তাঁর সুন্দর লেখনির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। গল্পটিতে নববিবাহিত নারীদের জন্য আছে স্বামীর মন জয় করার এক শক্তিশালী কৌশল, যা প্রয়োগ করলে স্বামীর হৃদয়রাজ্য সহজেই জয় করা যাবে এই আশা করি। তাহলে চলুন গল্পটি পড়া শুরু করা যাক…
স্বামীর মন জয় করার মর্মস্পর্শী কাহিনী (বিবাহিত নারীর জীবনের গল্প)
বরং বলতে গেলে ও সময়টুকুর পুরোটাতেই দুঃখ, কষ্ট ও অশান্তি তার নিত্যসঙ্গী ছিল। দাম্পত্য জীবনে সে ছিল চরম অসুখী।
দীর্ঘ চার বছর পর তার জীবনের মোড় ঘুরে। সুখ-শান্তি তার সঙ্গী হয়। দাম্পত্য জীবন মধুময় হয়ে ওঠে। সে খুঁজে পায় সুখ-শান্তির আসল ঠিকানা। তবে কিভাবে এটা সম্ভব হয়েছিল, কীভাবে সে সুখ-শান্তির মুখ দেখেছিল তা এক হৃদয়স্পর্শী কাহিনী, এক শিক্ষণীয় ঘটনা। প্রিয় পাঠক-পাঠিকা! চলুন, আমরা মুসলিমার মুখ থেকেই সে ঘটনাটা শ্রবণ করি এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষা গ্রহন করি। মুসলিমার ভাষায়-
প্রিয় ভাই ও বোনেরা! দাম্পত্য জীবনে আমি কী পরিমাণে অসুখী ছিলাম, কত দুঃখ-কষ্টে আমার জীবন কাটছিল তা আমি আপনাদের কে কলমের আঁচড়ে লিখে বুঝাতে পারব না। তবু কিছুটা অনুমান করার জন্য দুঃখের দু’চারটি কথা অবশ্যই আমি লিখব। তবে যে কথাটি আমি অতি গুরুত্ব দিয়ে আপনাদেরকে বলতে চাই তা হলো- সেই দুঃখ-কষ্টের দিনগুলোর পর কীভাবে আমার জীবনে সোনালি প্রভাত আগমন করেছিল, কীভাবে আমি আমার স্বামীর হৃদয়ের রাণী হতে পেরেছিলাম। কেননা, এ অংশটুকুই আপনাদের বেশী কাজে লাগবে। আমার ঘটনা নিম্নরূপঃ
বিয়ের পর এক অপরিসীম দুঃখের মধ্য দিয়ে আমি নতুন জীবন প্রবেশ করলাম। কারণ আমি কয়েকদিন যেতে না যেতেই বুঝতে পারলাম, আমাকে আমার স্বামীর মোটেও পছন্দ হয়নি।
আমাকে পছন্দ হয়নি বলে বিয়ের প্রথম দিকেই তিনি আমার সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরিবারের লোকজন বুঝিয়ে সুঝিয়ে তাকে এই কাজ থেকে বিরত রাখে। এতে তালাকের হাত থেকে আমি বেঁচে গেলাম সত্য কিন্তু কপালে আমার সুখ জুটল না। দাম্পত্য জীবনের আনন্দ আমার কাছে সুদূর পরাহত মনে হতে লাগল।
অশান্তির এই দিনগুলোতে আমি যখন অন্য কোনো দম্পতির সুখ দেখতাম, তাদের অকৃত্রিম ভালোবাসা ও মুহাব্বতের কথা শুনতাম তখন সঙ্গত কারণেই আমার দুঃখ যন্ত্রণা কয়েক গুণ বেড়ে যেত।
আমার স্বামী আমাকে এতটাই অপছন্দ করতেন যে, আমার সাথে কোনো আমার সাথে কোনো কথাবার্তা বলতেন না। এমনকি আমার হাতের এক গ্লাস পানিও পান করতে ঘৃণা বোধ করতেন। তিনি বরাবরই আমাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতেন। সীমাহীন পর্যায়ের অবহেলা করতেন। রাতে বিছানায় যাওয়ার পর কী এক অজ্ঞাত কারণে আমার দিকে ফিরেও তাকাতেন না।আমিও অভিমান করে তার কাছে যেতাম না। এমনকি তাকে কোনোদিন জিজ্ঞেসও করতাম না যে, কেন আপনি আমার সাথে এমন করছেন?
এদিকে আমার শ্বশুর-শাশুড়ী ছিলেন ফিরিশ্তার সমতুল্য মানুষ। পুত্রের এহেন আচরণ দেখে তারা যারপরনাই দুঃখবোধ করতেন এবং তাকে বারবার বুঝাতেন। কিন্তু তাদের কোনো কথাই ছেলের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আনতে পারেন্নি। তারা আমাকে সান্ত্বনা দিতেন এবং মনের মধ্যে সাহস সঞ্চয় করে ধৈর্যধারণ করার উপদেশ দিতেন।
আমার দাম্পত্য জীবন এভাবে অতিবাহিত হচ্ছিল। এরই মধ্যে আল্লাহ পাকের রহমতে একটি বই আমার হস্তগত হয়। ঐ বইয়ে আমার মতো কিছু হতভাগিনীর হৃদয়বিদারক কিছু কাহিনী লিপিবদ্ধ ভহিল। এসব কাহিনী পড়ে মনে হলো এ যেন আমারই কাহিনী। এ যেন আমারই জীবনের প্রতিচ্ছবি। কেননা তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনাবলীর সাথে আমার জীবনের খুব একটা তফাৎ ছিল না।
এ বইতে ছিল-‘একজন নারী তার স্বামীকে কিভাবে সন্তুষ্ট করতে পারে’-এই শিরোনামে একটি মূল্যবান লেখা। এই লেখাটি আমি মনোযোগ সহকারে পড়লাম। বারবার পড়লাম। এতে আমার মনে নিভু নিভু হয়ে যাওয়া আশার প্রদীপ আবার জ্বলে ওঠল। তাই সঙ্গে সঙ্গে আমি এই সংকল্প করলাম যে, অত্র পুস্তকে প্রদত্ত পরামর্শ অনুযায়ী আমল করে আমি আমার স্বামীর হৃদয় জয় করে নিব। তারপর দেখা যাক কী হয়।
সেদিন থেকে আমি আমার নিজের আচরণের প্রতি গভীর দৃষ্টি দিলাম। সেই সাথে স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জনকে নিজের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য স্থির করে হাঁটিহাঁটি পা পা করে সামনে অগ্রসর হতে লাগলাম।
আমি চিন্তা করলাম, আমার স্বামী আমাকে পছন্দ করেন ঠিক। কিন্তু তিনি অন্য নারীদেরকে যেসব গুণের কারণে পছন্দ করেন আমি যদি সেসব গুণাবলী আমার নিজের মধ্যে সৃষ্টি করতে পারি তাহলে নিশ্চয় তিনি আমাকে পছন্দ করবেন। এ চিন্তাটুকু মাথায় আসার পর আমি অন্য নারীদের গুণাবলির প্রতি গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। আমি খেয়াল করতে লাগলাম, আমার স্বামী নারীর কোন কোন গুণাবলী পছন্দ করেন। এভাবে আমি কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করার পর আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে স্বামীর মেজাজ ও তার পছন্দের বিষয় গুলো জেনে নিতে সক্ষম হলাম। আলহামদুলিল্লাহ্।
এরপর থেকে আমি আমার জীবন যাত্রার অমূল পরিবর্তন আনলাম। স্বামী যেমন পছন্দ করেন আমি ধীরে ধীরে তেমন হতে চেষ্টা করলাম। তার পছন্দের সাজসজ্জা ও আচার-অভ্যাস রপ্ত করতে লাগলাম। তিনি যেসব খাবার পছন্দ করেন সেগুলো নিজ হাতে মনের সকল মাধুরী মিশিয়ে প্রস্তুত করে তার সামনে পেশ করতে থাকলাম। বিশেষ করে প্রতিদিন রাতে বিছানায় যাওয়ার পূর্বে নববধূর ন্যায় সাজগোজ করে তার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ার অভ্যাস করলাম। কারণ অপরূপ সাজে সজ্জিতা নারীকে তিনি খুব পছন্দ করেন সেকথা তার কথাবার্তা ও আচার আচরণ দ্বারা আগেই আমি বুঝে নিয়েছিলাম।
তার পছন্দের তালিকায় আরো কিছু বিষয় ছিল। যেমন, ঘরে ঢুকার সাথে সাথে হাসিমুখে সালাম দিয়ে তাকে স্বাগত জানানো। যে কোনো সময় তার মনের ঐকান্তিক ইচ্ছা পূরণ করা, কোমল ও নরম সুরে কথা বলা, তার অনুমতি ব্যতিত অন্য পুরুষদের সাথে কথাবার্তা না বলা, ক্রোধান্বিত না হয়ে কোনো কথা বুঝিয়ে বলা, তার শোয়ার কক্ষটি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি করে রাখা, গম্ভীর হয়ে না থাকা ইত্যাদি।
সত্যি বলতে কি, ইতোপূর্বে আমি এসব কাজ একটিও করতাম না। যে কাপড়ে সারাদিন থাকতাম সে কাপড়ে নিয়েই বিছানায় যেতাম। সজগোজ করা কিংবা পরিপাটি হয়ে থাকার কোনো অভ্যাস আমার ছিল না। আমার দ্বারা ঘর-দোর সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখার কাজটিও হতো না। সারাদিন গুমরামুখী হয়ে থাকতাম। কারো সাথে তেমন কথাবার্তা বলতাম না। বিছানায় যাওয়ার পর স্বামীর যেমন আমার কাছে আসতেন না, আমিও অভিমান করে তার দিকে ফিরে তাকাতাম না। মূলত এসব কারণেই আমাদের দাম্পত্য সম্পর্ক তিক্ততর হয়ে ওঠেছিল।
কিন্তু এখন? হ্যাঁ, এখন আমি স্বামীর ইচ্ছার বাইরে কোনো কাজ করি না। তার ইচ্ছাকেই নিজের ইচ্ছা বলে মনে করি। তার বাসনাকেই পূরণ করার চেষ্টা করি। সর্বোপরি তিনি যেমন চান তেমন হয়ে থাকার মধ্যে নারোত্বের গৌরব অনুভব করি।
আমার জীবন ধারা, চাল-চলন আচর-আচরণ ইত্যাদি পাল্টে ফেলার পর আমাকে বেশীদিন অপেক্ষা করতে হলো না। খুব দ্রুতই যাদুর মতো এর ফল পেলাম।
আমার নাম রাবেয়া। কিন্তু স্বামী আমাকে কোনোদিন এই নামে ডাকেননি। ডাকবেনই বা কেন? তিনি তো আমার সাথে কথাই বলেন না। কিন্তু আজ?
হ্যাঁ, আজ আমাকে নাম ধরে ডাকলেন। বললেন, রাবেয়া! তুমি তো দেখছি দিনদিন খুব রূপবতী হয়ে ওঠছ!
উত্তরে আমি মুখে কিছুই বললাম না। শুধু মুচকি হাসলাম। বুঝলাম, তীর সঠিক লক্ষ্যেই আঘাত হেনেছে! এতে আমার অন্তরে আনন্দের বান ডাকল এবং আশার আলো দ্বিগুণ মাত্রায় জ্বলে উঠল।
আরেকদিন আমাকে আরো মমতার সুরে ডাকলেন। বললেন, বেগম!
আজকাল তোমাকে এত আকর্ষণীয় মনে হচ্ছে কেন?
এবার আমি জবাব দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলাম। তাই প্রাণোচ্ছল হাসিতে মুখ উজ্জ্বল করে বললাম, আমি তো আমার দৃষ্টিতে বরাবরই সুন্দরী ছিলাম। কিন্তু আপনার দৃষ্টিতে সুন্দরী না হলে এই সুন্দরের কী-ই বা মূল্য আছে! এটুকু বলে আমি তার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকালাম।
তীর লক্ষ্য ভেদ করল। বুঝতে অসুবিধা হলো না যে, শিকার আমার জালে আটকা পড়েছে। স্বামী মধুমাখা কন্ঠে বললেন- না রাবেয়া! সত্যি আজকাল তোমাকে খুব ভালো লাগছে। এতদিন অন্যায় ভাবে আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। তোমার দিকে আজ পর্যন্ত পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাইনি। তোমার সাথে কোনো কথা বলিনি। কিন্তু গত কিছুদিনের আচার-আচরণ দ্বারা তুমি আমার হৃদয় হরণ করে নিয়ছ। তাই তোমাকে কথা দিলাম, তুমি যদি এভাবে চলতে পারো, এভাবে সাজসজ্জা করতে পারো, তাহলে মুহূর্তের জন্য তোমাকে দৃষ্টির আড়াল হতে দেব না।
একথা শুনার পর আমার মনে হলো। আমি যেন আজ বিশ্ব জয় করেছি। আমি যেন আনন্দের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি। আমার মতো সুখী মেয়ে মাটির এ পৃথিবীতে যেন আর একটিও নেই!
সেদিন থেকে শুরু হলো আমার নতুন জীবন। লাভ করতে লাগলাম দাম্পত্য জীবনের পরম সুখ। স্বামীর আদর-সোহাগ ও প্রেম-ভালবাসা পেয়ে আমি এখন ধন্য। ধন্য আমার নারী জীবন। এতদিন যে স্বামী আমার হাতে একগ্লাস পানি পান করতেও ঘৃণাবোধ করতেন, আজ সেই তিনিই আমার হাতে রান্না খাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকেন। আমার রান্না ছাড়া অন্য কারো রান্না নাকি তার ভালোই লাগেনা। তিনি এখন সংসারের সকল কাজ আমাকে জিজ্ঞেস করে করেন। আমাকে ছাড়া এখন তার দিন কাটেনা। রাত পোহায় না। আমিই তার মধ্যমণি। আমিই তার সব। আমি ব্যতীত তার জীবন যেন অসার ও মূল্যহীন। আমার সন্তুষ্টিই এখন তার কাম্য।
পরিশেষে আমি স্বামী-সোহাগ বঞ্চিতা সকল নারীকে অনুরোধ করে বলতে চাই, আমি যে কৌশল অবলম্বন করে স্বামীকে নিজের মরায়ত্তে এনেছি, তার-হৃদয়-মন জয় করেছি, তার ভালোবাসা লাভ করেছি, আপনারাও সেই কৌশল গুলো অবলম্বন করুণ। আপনারা সেই অস্ত্র প্রয়োগ করুণ। আমার বিশ্বাস, এতে আপনারা আমার মতো অতি অল্পদিনের মধ্যেই দাম্পত্য জীবনের প্রকৃত সুখ লাভ করতে পারবেন। জয় করতে পারবেন স্বামীর মন ও হৃদয়রাজ্য। আল্লাহ পাক আপনাদেরকে তাওফীক দান করুণ।
লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম। (আদর্শ স্বামী স্ত্রী ২)
এরপর পড়ুন : অবাধ্য স্ত্রীর ভুল ভাঙ্গল যেভাবে
প্রিয় পাঠক পাঠিকা, লেখকের স্বামীর মন জয় করার মর্মস্পর্শী কাহিনী গল্পটি পড়ে ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। এবং আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করুন।
For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.