স্বামীকে বশ করার জন্য অনেক স্ত্রীই মায়ের কথায় তাবিজ কবজ করে থাকেন। কিন্তু তন্ত্র-মন্ত্র ও তাবিজের মাধ্যমে সত্যিকার্থে স্বামীকে কতদিন বশে রাখা যায়? সত্যি কি এতে সংসারে সুখ শান্তি আসে? স্বামী বশিকরণ আসল তাবিজ লেখক তাঁর গল্প মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। তাই, এই শিক্ষণীয় গল্পটি অবশ্যই পড়ুন।
স্বামী বশীকরণ তাবিজ (শিক্ষণীয় গল্প)
ফকীর বাবা মূলত চাইতে আসেননি। তিনি এসেছিলেন এই পাড়ারই একজন লোকের সাথে দেখা করতে। সে লোক তখন বাড়িতে ছিল না। তার স্ত্রী মরিয়ম বেগমও আমাদের সাথে গল্পে মেতে উঠেছিলেন। ফকীর বাবা তার স্বামীকে তালাশ করতেই তিনি তাকে সঙ্গে করে বাড়ীর পথ ধরলেন।
আমরা যারা গল্পের আসরে শরীক হয়েছিলাম, কৌতূহলবশতঃ আমরাও ফকীর বাবার পিছু নিলাম। আমাদের উদ্দেশ্য হলো, এই সুযোগে ফকীর বাবাকে কিছু প্রশ্ন করা। কথায় কথায় জানা গেল, ফকীর বাবার নাকি কিছু মন্ত্র-তন্ত্রও জানা আছে। তিনি মানুষকে তাবিজ – কবজ দেন। ঝাড়-ফুঁক দেন। তার তাবিজে নাকি জ্বীন-ভূত পলায়ন করে। যাদুমন্ত্রের ক্রিয়া নষ্ট হয় এবং কঠিন কঠিন অনেক রোগও আরোগ্য হয়।
এসব জানতে পেরে আমাদেরই একজন ফকীর বাবাকে লক্ষ্য করে বলে ওঠলেন-ফকীর বাবা! আপনি অনুমতি দিলে আপনাকে একটি প্রশ্ন করতাম।
কথা শুনে ফকীর বাবা মৃদু হাসলেন। বললেন-নির্ভয়ে বলুন।
ফকীর বাবাকে যিনি প্রশ্ন করতে চাচ্ছেন তার নাম আয়েশা। আমরা তাকে আয়েশা খালা বলে ডাকতাম। ফকীর বাবার সম্মতি পেয়ে তিনি বললেন, আমার একটি মেয়ে আছে। গত কয়েক বছর আগে তার বিয়ে হয়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, তার স্বামীর সাথে বনিবনা হয়নি। ফলে সামান্য কারণে দু’জনের মধ্যে মনোমালিন্য হতো, এমনকি অনেক সময় তুমুল ঝগড়াও বেঁধে যেত। এভাবে কিছুদিন চলার পর একদিন আমার মেয়ে রাগ করে শ্বশুর বাড়ী থেকে আমার বাড়ী থেকে চলে আসে। এই ঘটনা বছর খানেক আগের। কিন্তু এর মধ্যে আমার জামাত একবারও তাকে নিতে আসেনি। এমনকি আমার মেয়ের কোনো খোঁজ-খবরও নেয়নি। ক’দিন আগে শুনলাম, শ্বশুর বাড়ীর লোকজন নাকি তাদের ছেলের দ্বিতীয় বিয়ের চিন্তা করছে।
আয়েশা খালাকে তার কথার মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে ফকীর বাবা বলে ওঠলেন-এ ব্যাপারে আমার কী করার আছে?
খালা বললেন, আপনি সাধু পুরুষ। তন্ত্রে-মন্ত্রে সিব্ধহস্ত। আমার বিশ্বাস, আপনি ইচ্ছা করলেই আমাকে এমন একটি তাবিজ দিতে পারেন যার ওসীলায় জামাতা এসে আমার মেয়েটিকে নিয়ে যাবে এবং আজীবন তার অনুগত হয়ে থাকবে। দয়া করে আপনি আমার জন্য একটি তাবিজ লিখে দিন।আমি চিরদিন আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।
আয়েশা খালার করুণ আকুতি শুনে আমাদের মনও বিগলিত হয়ে গেল।ফলে আমরাও মনে মনে চাইলাম, ফকীর বাবা যেন এমন কোনো তাবিজের ব্যবস্থা করে দেন যাতে আয়েশা খালা ও তার মেয়ের ভাগ্য খুলে যায়। তাদের দুঃখ-কষ্ট ও অশান্তির অবসান ঘটে।
কিন্তু আয়েশা খালার আবেদনে ফকীর বাবা এমন একটি কথা বললেন যার ফলে আমরা দারুণ আশ্চর্য হলাম।
ফকীর বাবা বললেন-বোন! তন্ত্র-মন্ত্রের কথা ভুলে যাও। মানুষ অনেক কিছু জানে সত্য, কিন্তু সে অনুযায়ী আমল করে না। মনে রেখো, আমল ছাড়া শুধু তাবিজে কোনো কাজ হয় না। স্বামীর ভালোবাসা লাভের জন্য তার সঙ্গে যেমন আচরণ করা দরকার তা না করে শুধু তাবিজ দ্বারা কি স্বামীকে বশ করা যায়? যাও, বাসায় গিয়ে কন্যাকে বলো, সে যেন তার স্বামীকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসে, হৃদয়- মন উজাড় করে তার খেদমত করে এবং নির্ভেজাল ও খাঁটী প্রেমের জালে তাকে জড়িয়ে ফেলে।
তিনি আরও বললেন-তোমার মেয়েকে কালই শ্বশুরবাড়ী পাঠিয়ে দাও।
তাকে বলে দাও, সে যেন তার ভুলের জন্য শ্বশুর-শাশুড়ী ও তার স্বামীর কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চেয়ে বেয়। তারা নিশ্চয় তাকে ক্ষমা করবে। তোমরা যেহেতু মেয়েপক্ষ, তাই এত মান নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। কিছুটা বিনয় অবলম্বন করে যদি উদ্দেশ্য হাসিল করা যায়, তাতে অসুবিধার কী আছে। স্বামীর সঙ্গে তো রাগারাগির প্রশ্নই আসে না। তার সঙ্গে স্ত্রীর সম্পর্ক থাকবে প্রেম ও ভালোবাসার। যে নারী ভালোবাসা দ্বারা স্বামীকে বশ করতে পারে সে-ই প্রকৃত নারী। স্ত্রীর অন্তরঙ্গ ভালোবাসা ও হাসিমাখা মুখ এমনই এক মূল্যবান জিনিস, যার ওসীলায় রাগী, বদমেজাজী ও ঘরবিমুখ স্বামীও একেবারে বাধ্য হয়ে যায়। স্বামীকে বশ করার জন্য তোমার জন্য তোমার মেয়ের পক্ষে এর চাইতে কার্যকর আর কোনো তাবিজ নেই।
ফকীর বাবা যখন কথা শুরু করেছিলেন তখন ঐ মেয়েটিও এখানে এসে হাজির হয়েছিল যাকে নিয়ে এই ঘটনার অবতারণা।
যা হোক, ফকীর কথাগুলো আমাদের সকলের ন্যায় মেয়েটিরও পছন্দ হলো। তার ঘুমন্ত বিবেক জাগ্রত হলো। তাই সে সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠল-ফকীর বাবা! আপনি যথার্থই বলেছেন। স্বামীর সাথে ঝগড়া বাধার পিছনে মূল ক্রটি আমারই ছিল। আমি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে তার সাথে বেশ কর্কশ ও রুঢ় আচরণ করতাম। মনে যা আসত তাই বলতাম। তিনি যে আমার স্বামী, তিনি যে আমার পরম শ্রদ্ধার পাত্র এবং মাথার তাজ সমতুল্য সেদিকে আমি মোটেও ভ্রুক্ষেপ করতাম না। তার সাথে কথায় কথায় মেজাজ দেখিয়ে কথা বলতাম, কিছু হতে না হতেই অমার্জিত ভাষায় তার চৌদ্দগোষ্ঠিকে গালিগালাজ করতাম। আর তিনি নীরবে তা সহ্য করতেন। কখনোবা চোখের পানি ফেলে ঘর থেকে আস্তে করে বেরিয়ে যেতেন।
আসলে এসব কর্মকান্ড আমার নির্বুদ্ধিতারই প্রমাণ। যা হোক ফকীর বাবা! আজকে আপনি আমার চোখ দুটো খুলে দিয়েছেন। স্বামী ও স্বামী-সংসার নিয়ে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছেন। আপনার পরামর্শ মোতাবেক আগামীকালই আমি স্বামীর কাছে চলে যাব। তার হাতে-পায়ে ধরে কায়মনোবাক্যে ক্ষমা চাইবো। আমার বিশ্বাস, তিনি আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। কারণ, নারীর জন্য স্বামীর চাইতে বড় আপন আর কে আছে? আর হ্যাঁ, আমি আমার শ্বশুর-শাশুড়ীর কাছেও ক্ষমা প্রার্থনা করব।
কেননা তাদেরকেও আমি বিভিন্ন কথা বলে কষ্ট দিয়েছি। মনে আঘাত দিয়েছি। আশা করি, নিজের মেয়ে মনে করে তারাও আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।
পরদিন মেয়েটি স্বামীর বাড়ি গেল এবং স্বামীর পায়ে মাথা রেখে নিজের ভুল স্বীকার করে অনুশোচনা প্রকাশ করল। সেই সাথে অতীত ভুল-ক্রটির জন্য স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ীর কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইল।
মেয়েটির অনুনয় বিনয় ও ক্ষমা প্রার্থনার ফলে শ্বশুর বাড়ীর সবাই তার পিছনের সব ভুলক্রটি ভুলে তাকে বুকে তুলে নিল।
সেদিন থেকে মেয়েটি তার স্বামী ও স্বামী সংসারে সুখের জীবন কাটাতে লাগল। সে এখন স্বামীর সাথে মেজাজ দেখায় না। ঝগড়া করে না। বরং কীভাবে স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখা যায়, সেই চিন্তায়ই সর্বক্ষণ বিভোর থাকে।
ফলে এখন ঐ মেয়ের স্বামী এতটাই বশ হয়ে গিয়েছে যে, স্ত্রীর ছাড়া সে এখন আর কিছুই বুঝে না। তাকে ছাড়া গোটা দুনিয়াটা যেন তার সামনে অন্ধকার!!
প্রিয় মা ও বোনেরা! আপনারা যারা নিজ নিজ স্বামীকে বশে আনতে চান তারা উপরে বর্ণিত এই অব্যর্থ পদ্ধতিটি আজ থেকেই অবলম্বন করতে শুরু করুণ। আমার বিশ্বাস, এতে ইনশাআল্লাহ দারুণ কাজ হবে। দাম্পত্য জীবনে ফিরে আসবে অনাবিল শান্তি। আর আমরা তো এতাই চাই। আল্লাহ পাক আপনাদের তাওফীক দান করুণ।
লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম। (আদর্শ স্বামী স্ত্রী ২)
এরপর পড়ুন : এক বর পাগল নারীর শিক্ষণীয় গল্প
For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.