প্রিয় পাঠক পাঠিকা, আমরা লেখকের তিনটি শিক্ষণীয় গল্প একসাথে এখানে তুলে ধরেছি। যাতে আপনাদের পড়ার সুবিধা হয়।
২০. এক জায়গার ক্ষোভ অন্য জায়গায় মেটাবেন না।
আপনি স্বামী। কোনো কাজে বাইরে গেছেন। সেখানে কারো সাথে ঝগরা করেছেন। কথা কাটাকাটি করেছেন। কিংবা কোথাও অপমানিত হয়েছেন। এতে আপনার গোটা অন্তরটা তুষের আগুনের মতো জ্বলছে। এমতাবস্থায় আপনি বাসায় ফিরেই সামান্য একটি কারণকে উপলক্ষ্য করে স্ত্রীর উপর সেই ক্ষোভ, ঝাল মিটাতে শুরু করলেন। তাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল থেকে শুরু করে মারধর পর্যন্ত করলেন। আচ্ছা আপনিই বলুন তো, আপনি যা করলেন তা কি ঠিক করলেন? না, একাজটি মোটেই আপনার ঠিক হয়নি। এমনটি করা আপনার জন্য সম্পূর্ণ অনুচিত হয়েছে। মনে রাখবেন, বাইরের কোনো ঘটনা – দুর্ঘটনা কিংবা বিপর্যস্তার জন্য স্ত্রী কোনো ভাবেই দ্বায়ী নয়। এতে তার কোনো হাতেও নেই।
তা তার সৃষ্টিও নয়, তার কারণেও নয়, তার প্রতিকারেও তার কোনো ক্ষমতা নেই। সুতরাং কোনো অবস্থাতেই অন্যের ক্ষোভ স্ত্রীর উপরে দেখানো কোনো আদর্শ স্বামীর কাজ হতে পারে না। একজন আদর্শ স্বামী থেকে এ ধরণের আচরণ কোনো ভাবেই কাম্য নয়। অতএব, প্রিয় ভাইটি আমার। অন্যের প্রতিঘাত, অশোভন আচরণের ক্ষোভ ও ঝাল আপনার অর্ধাঙ্গীনি ও দ্বীনের পোশাক স্ত্রীর উপরে মিটাবেন না।
২১. হাদীসের আলোকে ভদ্র ও অভদ্র স্বামীর পরিচয়।
তাফসীরে রুহুল মাআনীতে উল্লেখিত এক হাদীসে প্রিয় নবী (সাঃ) ভদ্র ও অভদ্র স্বামীর পরিচয় স্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন। ভদ্র স্বামীর পরিচয় দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন- ভদ্র স্বামীদের উপর তাদের স্ত্রীরা জয়ী হয়ে থাকেন । অর্থাৎ মেয়েদের স্বভাবই এমন যে, স্বামী যদি ভদ্র হয়, সচ্চরিত্রবান হয়, সদাচারী হয়, প্রতিশোধ গ্রহনকারী না হয়, দুর্ব্যবহারের স্থলে সুন্দর ব্যবহার করে, ডাণ্ডা মারার স্থলে আণ্ডা খাওয়ায়-এমন ভদ্র স্বামীদের উপর স্ত্রীরা জয়ী হয়ে থাকে। কেননা তারা জানে যে, আমার স্বামী খুবই নম্র, ভদ্র ও উদার মনের অধিকারী। আমি তাকে যা-ই বলি না কেন, তিনি কোনো প্রতিশোধ নিবেন না, গালাগাল করবেন না, রাগ করবেন না, ধমক দিবেন না, মারধর করবেন না, কটু কথা বলবেন না । ফলে তারা সাহসী হয়ে যায় এবং এই সাহস বলে তারা স্বামীদের সাথে ঝাঁঝালো শব্দে কথা বলে। তাদের কথার আওয়াজে একটু তেজ এসে যায়।
আর অভদ্র স্বামীর পরিচয় দিতে গিয়ে নবীজি (সাঃ) বলেছেন, অভদ্র ও নীচু স্বভাবের স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের উপর জয়ী হয়ে থাকে। অর্থাৎ অভদ্র স্বামীরা তাদের বদ-মেজাজের দরুণ স্ত্রীদের উপর বল প্রয়োগ করে এবং সামান্য কারণেই তাদের উপর চড়াও হয়। তারা পান থেকে চুল খসতেই স্ত্রীদেরকে বকাঝকা, হুমকি-ধামকি, রক্তচক্ষু প্রদর্শন ও মারপিট করার মাধ্যমে স্বীয় শক্তিমত্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে থাকে।
এই হাদীসের শেষ অংশে নবীজি (সাঃ)-বলেছেন- আমি কিন্তু ভদ্র-সভ্য হয়েই থাকতে চাই। যদিও এজন্য আমাকে স্ত্রীর কাছে পরাজিত ও দুর্বল হয়েই থাকতে হয়। অর্থাৎ আমার ভদ্র স্বভাবের কারণে তাদের আওয়াজে যদি একটু তেজও এসে যায়, যাক। তাতে আমার কোনো পরওয়া নেই। কিন্তু তারপরেও আমার উন্নত চরিত্রে যেন কোনো দাগ না পড়ে, আমার নম্র ও ভদ্রোচিত সদগুণাবলী যেন অক্ষুণ্ন থাকে। আমি নিজেই চরিত্র নষ্ট করে , মুখের দ্বারা খারাপ কথা বলে, দুরাচারী –কটুভাষী হয়ে তাদের উপর বিজয়ী হতে চাই না। সুবহানাল্লাহ! কেমন হৃদয়স্পর্শী কথা বলেছেন আমাদের প্রাণাধিক প্রিয় নবীজি (সাঃ)।
প্রিয় ভাইগণ! আমরা নবীজিরই উম্মত। তার জীবনাদর্শ অনুসরণ করার মধ্যেই আমাদের কল্যাণ ও কামিয়াবী নিহিত। তাই আসুন , আমরা ভদ্র স্বামী হয়ে স্ত্রীর কাছে পরাজিত হয়েই থাকি। অভদ্র স্বামী হয়ে স্ত্রীর উপর বিজয়ী হওয়ার চেষ্টা না করি। আল্লাহ পাক আমাদেরকে নবীজি (সাঃ) এর পরিপূর্ণ অনুসরণ-অনুকরণ করার তাওফীক দান করুণ। আমীন।
২২. স্ত্রীর মুখে মিষ্টি তুলে দিন।
আমি আগেই বলেছি যে, অভিমান করা স্ত্রীদের কোন দোষ নয়, বরং এটা তাদের সৌন্দর্য । শুধু তাই নয়, এটা তাদের শরীয়ত প্রদত্ত অধিকারও বটে। যেমন এক হাদীসে আছে-নবী করীম (সাঃ) আম্মাজান হযরত আয়েশা (রাঃ) কে লক্ষ্য করে বলেন- হে আয়েশা! যখন তুমি আমার উপর অসন্তুষ্ট হও তখন তা আমি অনুভব করতে পারি। আম্মাজান জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল ! আমার পিতা-মাতা আপনার উপর কুরবান হউক, আপনি এটা কিভাবে অনুভব করতে পারেন যে, আমি আপনার অসন্তুষ্ট বা রাগান্বিত হয়ে আছি? হুজুর (সাঃ) বললেন, যখন তুমি আমার উপর কোনো কারণে অসন্তুষ্ট থাক তখন ( কোনো বিষয়ে শপথ করার প্রয়োজন পড়লে) তুমি বল যে, হযরত ইব্রাহীমের প্রতিপালকের কসম। অর্থাৎ তখন তুমি আমার নাম উচ্চারণ করো না। আর যখন আমার উপর সন্তুষ্ট থাক তখন বল, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)- এর প্রতিপালকের কসম। একথা শুনে আম্মাজান হযরত আয়েশা (রাঃ) হেসে দিলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি একদম ঠিক কথা বলেছেন।
আরও পড়ুন : রাসূলের স্ত্রীদের নাম অর্থসহ
বর্ণিত এ হাদীস দ্বারা একথা পরিস্কার ভাবে প্রমাণিত হলো যে, স্ত্রীদের কিছুটা রাগ-অভিমান করারও অধিকার আছে। যদি তাদের এ অধিকার না থাকত তাহলে নবী করীম (সাঃ) হযরত আয়েশা (রাঃ) কে অবশ্যই তা থেকে বারণ করতেন।
তাই ভাইজান! আপনার স্ত্রী যদি আপনার উপর কোনো কারণে রাগ করে মুখ ভার করে বসে থাকে, সেজন্য তাকে মারধর করবেন না, এমনকি ধমক কিংবা কটু কথাও বলেবন না। বরং আল্লাহর বান্দী মনে করে তাকে ক্ষমা করে দিয়ে যে কোনো উপায়ে খুশি করার চেষ্টা করবেন। যেমন – সোহাগ করে কাছে টানুন এবং বাসায় মিষ্টি, মিষ্টি জাতীয় কোনো দ্রব্য কিংবা ফল- ফলাদি থাকলে তা তার মুখে তুলে দিন। এতে এক ঢিলে দুই পাখি মারা হবে। অর্থাৎ মুখে খাবার তুলে দেওয়ার সুন্নতটিও আদায় হবে।
লেখক : মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম
বই : আদর্শ স্বামী স্ত্রী ২।
এরপর পড়ুন : স্ত্রীর মুখে হাসি ফুটাতে সচেষ্ট হোন
For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.